Ajker Patrika

নিজস্ব এআই চিপ তৈরি করছে মেটা

অনলাইন ডেস্ক
২০২৬ সালের মধ্যে এআই প্রশিক্ষণের জন্য নিজস্ব চিপ ব্যবহার শুরু করতে চায় মেটা। ছবি: সংগৃহীত
২০২৬ সালের মধ্যে এআই প্রশিক্ষণের জন্য নিজস্ব চিপ ব্যবহার শুরু করতে চায় মেটা। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব চিপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে ফেসবুকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেটা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সিস্টেম প্রশিক্ষণের জন্য চিপটি ডিজাইন করা হয়েছে। এটি মেটার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নিজস্ব কাস্টম সিলিকন ডিজাইন করার মাধ্যমে বিদ্যমান সাপ্লায়ার যেমন: এনভিডিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে কোম্পানিটি। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিটি এখন একটি ছোট পরিসরে এই চিপের পরীক্ষা চালাচ্ছে। পরীক্ষা সফল হলে চিপটির উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই ইন-হাউস চিপ ডিজাইন করার প্রচেষ্টা মেটার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। এর মাধ্যমে বিশাল পরিমাণে অবকাঠামো খরচ কমানো যাবে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি তার ব্যবসা বাড়ানোর জন্য এআই-ভিত্তিক পণ্য ও টুলসের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

২০২৫ সালের জন্য মেটার মোট ব্যয় ১১৪ বিলিয়ন থেকে ১১৯ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার মূলধন ব্যয় মূলত এআই অবকাঠামোতে খরচ করা হবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মেটার নতুন চিপে একটি ডেডিকেটেড অ্যাক্সিলারেট রয়েছে। অর্থাৎ, এটি শুধু এআই সম্পর্কিত কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এ জন্য সাধারণত ব্যবহৃত গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিটের (জিপিইউ) তুলনায় বেশি কার্যকরী হতে পারে এটি।

চিপটি তৈরিতে তাইওয়ান-ভিত্তিক চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি টিএসএমসির সঙ্গে কাজ করছে মেটা।

ইএটি কোম্পানিটির ‘মেটা ট্রেনিং অ্যান্ড নফারেন্স অ্যাক্সিলারেটর (এমটিআইএ)’ সিরিজের সর্বশেষ চিপ। বেশ কিছু বছর ধরে ধীরগতিতে চলেছে এই প্রোগ্রাম এবং একসময় একটি চিপ পরীক্ষার পর বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে, মেটা গত বছর একটি এমটিআইএ চিপ ব্যবহার শুরু করেছে, যা ইনফারেন্স (এআই সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ইন্টারঅ্যাকশন করার প্রক্রিয়া) পরিচালনা করে। এই চিপ বর্তমানে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের রিকমেন্ডেশন সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা নির্ধারণ করে কোন কনটেন্ট নিউজ ফিডে দেখাবে।

মেটার নির্বাহীরা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এআই প্রশিক্ষণের জন্য তাদের নিজস্ব চিপ ব্যবহার শুরু করতে চায়। প্রথমে রিকমেন্ডেশন সিস্টেমের জন্য এবং পরবর্তীতে জেনারেটিভ এআই প্রোডাক্টস যেমন—চ্যাটবট ‘মেটা এআই’-এর জন্য এই চিপ ব্যবহৃত হবে।

মেটার প্রধান পণ্য কর্মকর্তা ক্রিস কক্স বলেছেন, ‘আমরা এখন রিকমেন্ডেশন সিস্টেমের জন্য এবং ভবিষ্যতে জেনারেটিভ এআইয়ের জন্য ট্রেনিং ও ইনফারেন্স কীভাবে করতে পারি, তা নিয়ে কাজ করছি।’

২০২২ সালে ইন-হাউস কাস্টম ইনফারেন্স চিপ একটি ছোট পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যর্থ হয়েছিল মেটা। এরপর এনভিডিয়ার জিপিইউর জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করে কোম্পানিটি।

মেটা এখনো এনভিডিয়ার অন্যতম বড় গ্রাহক হিসেবে রয়ে গেছে। এনভিডিয়ার জিপিইউগুলো মেটা এআই মডেলগুলো প্রশিক্ষণ ও ইনফারেন্সের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রিকমেন্ডেশন, বিজ্ঞাপন সিস্টেম ও এললামা ফাউন্ডেশন মডেল সিরিজ অন্তর্ভুক্ত। এই জিপিইউ ইউনিটগুলো প্রতিদিন ৩ বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীকে সেবা দেয়।

এ বছর এআই গবেষকেরা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোর পারফরম্যান্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে ডেটা ও কম্পিউটিং শক্তি বাড়িয়ে মডেলগুলো ‘বড়’ করার মাধ্যমে আর কতটা অগ্রগতি সম্ভব তা নিয়ে। এই সন্দেহ আরও জোরালো হয় গত জানুয়ারির শেষ দিকে চীনা স্টার্টআপ ডিপসিকের কম খরচের মডেলগুলো বাজারে আসার পর। এই মডেলগুলো সাধারণত ব্যবহৃত মডেলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ‘ইনফারেন্স’ (প্রশিক্ষিত মডেল দিয়ে পূর্বানুমান বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া) ব্যবহার করে কম্পিউটেশনাল দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।

এই মডেল বিশ্বব্যাপী এআই শেয়ারবাজারে মন্দা সৃষ্টি করে। এর ফলে একসময় এনভিডিয়া শেয়ারের মূল্যও প্রায় ২০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তবে, পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারগুলো তার অধিকাংশ মূল্য পুনরুদ্ধার করেছে এবং বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন যে, এনভিডিয়ার চিপগুলো এখনো শিল্পে মানদণ্ড হিসেবে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত