Ajker Patrika

চীনের ডিপসিকের কারণে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য হারাল এনভিডিয়া

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩৪
Thumbnail image
বিশেষ করে ডিপসেকের প্রভাবে এনভিডিয়ার শেয়ার দর কমেছে ১৭ শতাংশ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে চীনের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের চমকপ্রদ সাফল্য। এর ফলে গতকাল সোমবার মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলোর মধ্যে এনভিডিয়া কোম্পানি প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য হারিয়েছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে নতুন এআই মডেল আর ১-এর প্রকাশ করেছে ডিপসিক। এই মডেলের কার্যক্ষমতা ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির মতো হলেও এটি পরিচালনার খরচ অনেক কম। ডিপসিক দাবি করেছে, তাদের এআই মডেল তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, যা তুলনামূলকভাবে ওপেনএআই, গুগল বা মেটার মডেলগুলোর তুলনায় অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা।

ডিপসিক মডেলের এই সফলতা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গত সোমবার নাসডেকের সূচক ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমে যায় এবং এস অ্যান্ড পি ৫০০-এর সূচকও ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যায়। বিশেষ করে এআই চিপ নির্মাতা এনভিডিয়ার শেয়ার দর ১৭ শতাংশ কমার জন্য কোম্পানিটির বাজারমূল্য প্রায় ৫৮৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।

এনভিডিয়া গত সোমবার যে পরিমাণ বাজারমূল্য হারিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানির এক দিনে হারানো সবচেয়ে বড় পরিমাণ। এটি মোটামুটিভাবে ১৩টি কোম্পানির মোট বাজারমূল্যের চেয়েও বেশি। গতকাল দিনের শুরুতে বাজারের সবচেয়ে মূল্যবান পাবলিক কোম্পানি ছিল, যার বাজারমূল্য ছিল ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। কারণ গত দুই বছরে এর শেয়ার মূল্য দুই গুণ বেড়েছিল। কিন্তু দিনের শেষে এটি অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের পরে তৃতীয় স্থানে নেমে যায়।

গত সপ্তাহে মেটা ঘোষণা করেছে যে, তারা এ বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নের জন্য ৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করবে। ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান গত বছর বলেছেন যে, এআই শিল্পকে সমর্থন করতে এবং ডেটা সেন্টার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিপ তৈরির জন্য এই খাতে ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের একজন মার্ক অ্যান্ড্রিসন বলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এবং চিত্তাকর্ষক সাফল্যগুলোর মধ্যে একটি হলো ডিপসিক।’

ডিপসিকের এই সাফল্য পুরো বিশ্বকে অবাক করেছে। কারণ জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা বলে কয়েক বছর ধরে চীনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এআই চিপের সরবরাহ সীমিত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ, কম ক্ষমতাসম্পন্ন এআই চিপ ব্যবহার করেই নতুন মডেলটি তৈরি করেছে ডিপসিক।

মেটা এবং গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের বাজারমূল্যও অনেক কমেছে। সেই সঙ্গে এনভিডিয়ার প্রতিযোগী মারভেল, ব্রডকম, মাইক্রন এবং টিএসএমসির বাজারমূল্যও অনেকে কমেছে। একইভাবে ওরাকল, ভারটিভ, কনস্টেলেশন, নিউস্কেলসহ অন্যান্য ডেটা সেন্টার কোম্পানির বাজারমূল্যও ব্যাপকভাবে কমেছে।

এ ঘটনা সার্বিক শেয়ার বাজারকে নিচে টেনে নিয়ে গেছে। কারণ প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারগুলো বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করে।

কয়েক দিনের মধ্যে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। তাই কোম্পানিগুলোর ওপর ডিপসিকের প্রভাব শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ওঠানামা তৈরি করতে পারে। এদিকে, এখন চীনের এআই কোম্পানিগুলোর দিকে আরও মনোযোগ দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ার এখন কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কারণ বিশ্বজুড়ে তাদের প্রতি এক ধরনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ আছে, যার কারণে তাদের বাজারমূল্য কমে গেছে।

সম্প্রতি, এআই ডেটা সেন্টার চালানোর জন্য বিশাল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা থাকায় জ্বালানি কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্যও বেড়েছিল। তবে সোমবার সেগুলোর শেয়ারদর ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

এআই ডেটা সেন্টার পরিচালনার জন্য ‘থ্রি মাইল আইল্যান্ডে’ নামের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা করছে কনস্টেলেশন এনার্জি। তবে এই কোম্পানির শেয়ারদর ২১ শতাংশ কমে গেছে।

এ ছাড়া, বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর দামও কমে গেছে।

এদিকে কোম্পানিগুলোর আধিপত্য টেকসই থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। বিশেষ করে যখন চীনের কোম্পানি কম খরচে শক্তিশালী এআই মডেল তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে।

নতুন ওপেন সোর্স রিজনিং মডেল চালুর মাধ্যমে ওপেনএআই ও গুগলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করল চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক। এই মডেলটির আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো—এটি তৈরিতে এবং প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক কমসংখ্যক চিপ ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজেদের সর্বশেষ এআই প্রযুক্তিতে ৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে মেটা। অপরদিকে ডিপসিক এই মাইলফলক অর্জন করেছে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলারের কম্পিউটিং শক্তির মাধ্যমে। এই কম খরচে এআই মডেল তৈরির প্রযুক্তিটি ডেভেলপারদের উদ্ভাবনের ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।

ডিপসিকের এপিআইয়ের মূল্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক কম। এর ফলে ছোট ব্যবসা ও ডেভেলপারদের জন্য এর মডেলগুলো ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ: ডিপসিক-আর ১-এর প্রতি মিলিয়ন ইনপুট টোকেনের জন্য মাত্র দশমিক ৫৫ ডলার এবং প্রতি মিলিয়ন আউটপুট টোকেনের জন্য ২ দশমিক ১৯ ডলার খরচ করতে হয়। অন্যদিকে ওপেনএআইয়ের প্রতি মিলিয়ন ইনপুট টোকেনের জন্য ১৫ ডলার এবং আউটপুট টোকেনের জন্য ৬০ ডলার খরচ করতে হয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত