Ajker Patrika

সব কাজ করবে এআই, নিয়োগ বন্ধ করল ৩৫০০ কর্মীর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

অনলাইন ডেস্ক    
Thumbnail image
কোম্পানির এখন প্রায় সমস্ত কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। ছবি: হর্টন ম্যানেজমেন্ট ল

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার করতে শুরু করছে। তবে এই প্রযুক্তি মানুষের কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই আশঙ্কা ছিল। সম্প্রতি এই উদ্বেগকে আরও জোরালো করলো ক্লার্না নামের এক স্বনামধন্য প্রযুক্তি কোম্পানি। গত এক বছর ধরে নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে এটি এবং মানব কর্মীদের কাজগুলো করে দিচ্ছে এআই।

ক্লার্না একটি সুইডিশ ফিনটেক (ফিনান্সিয়াল টেকনোলজি) কোম্পানি, যা মূলত ‘বাই নাও, পে লেটার’সেবা প্রদান করে। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের অনলাইন কেনাকাটার জন্য পূর্ণ মূল্য পরিশোধ না করে, পরে কিস্তিতে বা নির্দিষ্ট সময় পরে পেমেন্ট করতে পারেন।

ক্লার্নার–এর সিইও সেবাস্তিয়ান সিয়েমিয়াটকোভস্কি বলেন, এখন প্রায় সমস্ত কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), যা আগে মানব কর্মীর মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ক্লার্না প্রায় এক বছর আগে নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিল, যার ফলে ধীরে ধীরে কোম্পানির কর্মী সংখ্যা কমে গেছে। আগে ৪ হাজার ৫০০ কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করত, এখন তার সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০।

সিইও–এর এই দাবি বড় উদ্বেগের বিষয় এবং মানব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করে। ব্লুমবার্গ টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিয়েমিয়াটকোভস্কি বলেন, এআই এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এটি একটি কোম্পানির অনেক দায়িত্ব পরিচালনা করতে সক্ষম।

তবে সিইও বলছে, কর্মী কমার বিষয়টি প্রযুক্তি খাতে সাধারণ ২০ শতাংশ বার্ষিক অ্যাট্রিশন হারের (কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস বা তাদের চাকরি ছাড়ার হার) কারণে স্বাভাবিকভাবেই ঘটেছে। প্রযুক্তি খাতে নতুন কর্মী নিয়োগ না করার মাধ্যমে কর্মী সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ক্লার্না। এর ফলে কোম্পানিটিতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বেশি হয়।

সেবাস্তিয়ান সিয়েমিয়াটকোভস্কি বলেন, ‘প্রতিটি প্রযুক্তি কোম্পানির মতো আমাদেরও একটি প্রাকৃতিক অ্যাট্রিশন রয়েছে। মানুষ সাধারণত পাঁচ বছর ধরে থাকে, তাই প্রতি বছর ২০ শতাংশ কর্মী স্বাভাবিকভাবে চলে যায়। নতুন কর্মী না নিয়োগ দেওয়ায় আমাদের কর্মী সংখ্যা কমছে।’

এই পরিবর্তন হলেও কোম্পানিটির বর্তমান কর্মীদের বেতনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে আশ্বস্ত করেন সিইও। কর্মী সংখ্যা কমায় কোম্পানির অনেক বেতন দেওয়ার খরচ বেঁচে যাচ্ছে। এই বাঁচানো অর্থ বাকি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী এআই-এর কর্মসংস্থান প্রভাব নিয়ে আলোচনা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২৩ সালে ম্যাককিন্সি অ্যান্ড কোম্পানির একটি প্রতিবেদনে বলেছে, এআই আরও উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে লাখ লাখ কর্মীকে নতুন ধরনের কাজ করতে হতে পারে। ক্লার্নার নতুন কর্মী নিয়োগ না করার সিদ্ধান্তটি একটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, এআই ইতিমধ্যেই আধুনিক কর্মস্থলকে পুনর্গঠন করছে।

ক্লার্নার ওয়েবসাইটে এখনো কিছু চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। তবে কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে না বরং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পদে, বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে তাদের কর্মী কৌশল পরিবর্তন করছে, কারণ এআই তাদের কার্যক্রমে আরও বেশি বেশি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

গত বছর এআই এবং অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি) –কে সমর্থন কোম্পানির সিইও অরবিন্দ কৃষ্ণা। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কিছু চাকরি এআই–এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হতে পারে। মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের মতো কিছু পদেও এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। আমি সহজেই অনুমান করতে পারি যে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৩০ শতাংশ কাজ এআই এবং অটোমেশনের মাধ্যমে দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত