Ajker Patrika

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার পথে আইবিএম-নাসা

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯: ৪৭
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার পথে আইবিএম-নাসা

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে নাটকীয় উন্নয়ন হয়েছে। এখনকার ৬ দিনের পূর্বাভাস ১০ বছর আগের ৫ দিনের পূর্বাভাসের মতোই সঠিক। ৪০ বছর আগে ২৪ ঘণ্টা পূর্বে ঘূর্ণিঝড়ের যে পূর্বাভাস পাওয়া যেত, এখন তিন দিন আগেই আরও নির্ভুল তথ্য জানা যায়। গত কয়েক দশকে আবহাওয়া ও সামুদ্রিক ডেটা প্রসেসিংয়ে কম্পিউটারের দক্ষতা বৃদ্ধির ফলেই আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই অসাধারণ অগ্রগতি। এরই ধারাবাহিকতায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রায় নবজাগরণ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসা ও প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএম।

কম্পিউটার সিমুলেশনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মডেলগুলো আধুনিক হলেও এসবের কার্যকর প্রয়োগে বেশ সময় ও শক্তির প্রয়োজন হয়। কারণ, পদার্থবিদ্যাভিত্তিক সমীকরণ এবং বাতাস, বায়ুচাপ, তাপমাত্রার মতো আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে এই মডেলগুলোকে কাজ করতে হয়। 

এর চেয়ে কম সময় ও শক্তি ব্যয় করে কীভাবে আরও দ্রুত আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়, তার জন্য আইবিএমের তৈরি এআইভিত্তিক ভূ-স্থানিক ‘ফাউন্ডেশনাল মডেল’ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। নাসার আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত ডেটার ভান্ডার ব্যবহার করে এই মডেলকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহার করা হবে। এক বছর আগে নাসা ও আইবিএম যৌথভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য মডেলটি তৈরির কাজ শুরু করে। ওপেনসোর্স এআই প্ল্যাটফর্ম ‘হাগিং ফেসে’ পাওয়া যাচ্ছে। 

এর মধ্যেই এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটি বিজ্ঞানীদের বন্যা ও দাবানলের পরিমাণ অনুমানে সাহায্য করে। কেনিয়ার কৃত্রিম জলাধার ঘিরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পর্যবেক্ষণে মডেলটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো পানি ঘাটতির সমস্যা সমাধান করা এবং কেনিয়ায় বনায়ন বাড়ানো। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্তপ্ত দ্বীপগুলোর আবহাওয়া বিশ্লেষণেও এই মডেল ব্যবহার হচ্ছে।

এসব প্রকল্পের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে আইবিএম ও নাসা মডেলটিকে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত অ্যাপগুলোতে এই ফাউন্ডেশনাল মডেল ব্যবহার করে আরও দ্রুত ও নির্ভুল তথ্য কীভাবে পাওয়া যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে। মডেলটি উন্নত হলে যেসব সক্ষমতা তৈরি হবে, সেগুলোর মধ্যে আছে আবহাওয়াসংক্রান্ত ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করা, জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের স্বল্প রেজল্যুশনের ডেটা থেকে উচ্চ রেজল্যুশনের ডেটা অনুমান, দাবানলপ্রবণ এলাকা বা পরিস্থিতি শনাক্ত করা এবং ঘূর্ণিঝড়, খরা ও অন্যান্য ঘটনাগুলোর পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করা। 

ফাউন্ডেশন মডেলগুলো যত জটিলই হোক না কেন, কোড লেখা, অনুবাদ ও যেকোনো টেক্সটের সারাংশ তৈরির জন্য অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠছে। তাই আবহাওয়া ও জলবায়ুর পূর্বাভাসের জন্যও এই মডেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

পর্যাপ্ত ডেটা পেলে মডেলগুলো জটিল সিস্টেমের অন্তর্নিহিত কাঠামোকে একত্র করতে পারে। এই ডেটা কোড, ভাষা বা পদার্থের অণুসহ বিভিন্ন বিষয়ের হতে পারে। এসব ডেটা নিয়ে ফাউন্ডেশনাল মডেল অনেক কাজ সম্পাদন করতে পারে। মানুষের কাছ থেকে সীমিত নির্দেশনা পেলেও বিভিন্ন বিষয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতার আছে এই মডেলের। 

এর মধ্যেই পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে নতুন আরেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। গত বছর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নতুন এক পদ্ধতি চালু হয়েছে। সেটা হলো এআই এমুলেটর নামে বেশ কিছু ‘ডিপ লার্নিং মডেল’ ব্যবহার করা শুরু করেছে ইউরোপীয় সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিং (ইসিএমডাব্লুএফ)। এগুলো আবহাওয়ার ঐতিহাসিক ধরনের ওপর ভিত্তি করে পূর্বাভাস তৈরি করে। পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান স্পষ্টভাবে এনকোড করা না হলেও এআই এমুলেটর ডেটা থেকে আবহাওয়া অনুমান করতে পারে। এই পদ্ধতিতে কয়েক ঘণ্টার জায়গায় কয়েক মিনিটের মধ্যে ডেস্কটপ কম্পিউটার থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বের করা যায়।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে গুগল ডিপ মাইন্ড দাবি করেছে, তাদের তৈরি গ্রাফকাস্ট এমুলেটর প্রথাগত মডেলের চেয়ে দ্রুততার সঙ্গে সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারে। এটি ১০ দিনের পূর্বাভাস দিতে পারে। ঘূর্ণিঝড় লি ৯ দিনের মধ্যে নোভা স্কশিয়ায় আঘাত হানবে বলে গত সেপ্টেম্বরে নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল গ্রাফকাস্ট। এটা আগের মডেলের চেয়ে তিন দিন কম ছিল। 
 
কারিগরি দিক থেকে, এআই ইমুলেটর ফাউন্ডেশনাল মডেলের মতো নয়। ফাউন্ডেশনাল মডেল হলো প্রযুক্তির ভিত্তি, যা জেনারেটিভ এআই অ্যাপকে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে এআই ইমুলেটর কিছু ডেটার ওপর ভিত্তি করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। তবে এগুলোর নিজস্ব কোনো অ্যাপ নেই এবং এগুলো আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা বুঝতে পারে না। 
 
এআই এমুলেটরকে একটি ডেটা সেটে একটিমাত্র কাজ সম্পাদন করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং এগুলোতে নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এমুলেটরগুলো ফাউন্ডেশনাল মডেল তৈরির অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে এবং নতুন মডেলের মাধ্যমে যেসব সুবিধা মিলবে, তার ইঙ্গিত দেয়। 

ফাউন্ডেশনাল মডেল অন্যান্য জলবায়ু অ্যাপের জন্যও নির্ভুল পূর্বাভাস দিতে পারে। পৃথিবীর জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করছে। যত তাড়াতাড়ি একটি বিপর্যয় শনাক্ত করা যায় জীবন ও অর্থ বাঁচানোর সম্ভাবনা তত বেশি হয়।

 এখনকার এআই মডেলগুলো তীব্র বা চরম ঘটনাগুলো ধরতে পারে না। এই সমস্যা এআইয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ। কারণ, এআই মডেলকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে এগুলো ব্যতিক্রমী বিষয় উপেক্ষা করে। ফলে মডেলগুলো চরম ঘটনাগুলো বুঝতে পারে না। এ জন্য ছোট মডেলগুলোতে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। নাসা ও আইবিএমের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো বড় ফাউন্ডেশনাল মডেলেও এই পদ্ধতি যুক্ত করা।

এআই মডেলের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের আরেকটি সমস্যা হলো পরিবর্তনশীল জলবায়ুর অতীত দিয়ে ভবিষ্যৎকে অনুমান করা যায় না। বিশেষ করে যখন পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন গরম হচ্ছে। যেমন ২০২৪ সালের একটি ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি ১৯৩৩ সালের চেয়ে বেশি হতে পারে। তাই ঐতিহাসিক ডেটার ওপর ভিত্তি করে এআই মডেলের পূর্বাভাসের মাধ্যমে আবহাওয়াবিদেরা এই ধরনের ঘটনা অনুমান করতে পারবেন না। তবে পরিস্থিতি পরিবর্তন ও নতুন ডেটার সঙ্গে এআই মডেলগুলোও প্রতিনিয়ত আপডেট হতে পারে। 

আইবিএম ও নাসার লক্ষ্য হলো, আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য মাল্টিমোডাল ফাউন্ডেশন মডেল তৈরি করা, যা কমসংখ্যক জিপিইউ ব্যবহার করে কাজ করতে পারবে। আবহাওয়াবিদ ও নাসার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আইবিএমের এআই বিশেষজ্ঞ সাতটি অ্যাপে এআই মডেলটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই করবে। সেই সঙ্গে ১০ থেকে ১৪ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ধূলিঝড় ও বিমান চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ নিয়ে কাজ করবে।
 
মডেলটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে এটি ওপেনসোর্স এআই প্ল্যাটফর্ম ‘হাগিং ফেসে’ পাওয়া যাবে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকেরা আবহাওয়া ও জলবায়ুর মডেলটি ব্যবহার করতে পারবেন। আইবিএম ও নাসার ফাউন্ডেশন মডেলের উন্নয়নে এটি একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এর মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবর্তনশীল জলবায়ু ও পরিবেশ সম্পর্কে জরুরি কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে ঈশ্বরের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যম হয়ে উঠছে এআই চ্যাটবট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের ঈশ্বরের অবতার হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত চ্যাটবট। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ভারতের ঈশ্বরের অবতার হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত চ্যাটবট। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বিশ্বজুড়ে বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ এখন ধর্মীয় উপাসনা ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) শরণাপন্ন হচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতে এই প্রবণতা ব্যাপক। আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুরোহিত বা গুরুদের বদলে রোবট বা চ্যাটবট যখন নতুন আধ্যাত্মিক মধ্যস্থতাকারী হয়ে উঠছে, তখন এর ফলাফল কী হতে পারে—এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।

সম্প্রতি ভারতে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এআই চ্যাটবটের ব্যবহার নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ভারতের রাজস্থানের ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী বিজয় মিল জীবনের কঠিন সময়ে বরাবর ভগবানের আশীর্বাদের দিকেই হাত বাড়ান। আগে তিনি আধ্যাত্মিক গুরুদের পরামর্শ নিতেন, তবে ইদানীং ভরসা রাখেন ‘গীতাজিপিটি’ নামের একটি এআই অ্যাপের ওপর!

এই এআই চ্যাটবটটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ভগবদগীতার ৭০০টি শ্লোক ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত। এটি ব্যবহার করলে বন্ধুর সঙ্গে টেক্সট মেসেজে আদান-প্রদানের মতোই মনে হয়। তবে এআই ব্যবহারকারীকে জানায়, ‘আপনি ভগবানের সঙ্গেই কথা বলছেন!’

বিজয় মিল জানান, ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষাগুলোতে সাফল্য না পেয়ে তিনি যখন হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তখন গীতাজিপিটি-তে সংকটের কথা লিখে পরামর্শ চান। উত্তরে চ্যাটবটটি বলে, ‘ফলের চিন্তা ত্যাগ করে তোমার কাজের ওপর মনোনিবেশ করো।’ বিজয় মিলের কথায়, এই উপদেশ তাঁকে নতুন করে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি আবার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তাঁর জন্য এখন গীতাজিপিটি বন্ধুর মতো, যার সঙ্গে তিনি সপ্তাহে একবার বা দুবার চ্যাট করেন।

ধর্ম ও প্রযুক্তির মিলনক্ষেত্র ভারত

এআই কাজ, শেখা এবং এমনকি আবেগীয় অনুভূতিকেও প্রভাবিত করছে। এখন তো এটি প্রার্থনা করার পদ্ধতিও পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোর অনুসারীরা চ্যাটবট নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন। তবে হিন্দু ধর্ম, যে ধর্মে দেবতা বা মূর্তির শারীরিক বা দৃশ্যমান উপস্থাপনার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, সেখানে এই প্রযুক্তি ও ধর্মবিশ্বাসের মিলন গবেষণাগার দারুণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলেসলি কলেজের নৃবিজ্ঞানী হলি ওয়াল্টার্স বলেন, ‘মানুষ এখন সমাজ, অগ্রজ এবং উপাসনালয় থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করছে। অনেকের জন্য, এআই-এর সঙ্গে ঈশ্বরের বিষয়ে কথা বলা কেবল আধ্যাত্মিকতা নয়, বরং এক ধরনের অংশীদারত্ব বা আত্মিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার উপায়।’

ওয়াল্টার্সের মতে, ভারতে এই প্রবণতা বাড়ছে, কারণ সেখানকার প্রাচীন রীতিতে ‘মূর্তি’ (দেবতার পবিত্র প্রতিমা) এবং ‘দর্শন’ (ঈশ্বরের দর্শন লাভ)-এর মতো প্রথাগুলো প্রযুক্তিকে ঈশ্বরের দৈনন্দিন উপস্থিতির অন্য একটি মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে।

তবে গত কয়েক বছরে ধর্মীয় ক্ষেত্রে এআই-এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে: মুসলিম পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ‘কোরআনজিপিটি’ অ্যাপটি লঞ্চ হওয়ার একদিনের মধ্যেই বিপুল ট্র্যাফিকের কারণে ক্র্যাশ করেছিল। তবে টেক্সট উইথ জেসাস নামের অ্যাপটি যিশু ও বাইবেলের চরিত্রগুলোর সঙ্গে চ্যাটিং করার সুযোগ দিলেও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছিল।

হিন্দু ধর্মের বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন ‘গীতাজিপিটি’ চ্যাটবট তৈরি করেছেন। রাজস্থানের ব্যবসায় বিভাগের ছাত্র বিকাশ সাহু নিজের তৈরি গীতাজিপিটি মাত্র কয়েক দিনে ১ লাখ ব্যবহারকারী পেয়েছে। তিনি বর্তমানে এমবিএ ছেড়ে এই প্রকল্পের জন্য তহবিল জোগাড়ের চেষ্টা করছেন।

এ ছাড়া, ভারতে আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এআই গ্রহণ করছে: জনপ্রিয় সদগুরু-এর ইশা ফাউন্ডেশন-এর ‘মিরাকল অব মাইন্ড’ মেডিটেশন অ্যাপ লঞ্চের মাত্র ১৫ ঘণ্টার মধ্যে ১০ লাখ ডাউনলোড অতিক্রম করেছে। তারা ‘প্রাচীন জ্ঞান’কে সমসাময়িক উপায়ে পৌঁছে দিতে এআই ব্যবহার করে।

২০২৫ সালের মহা কুম্ভ মেলাতেও এআই ব্যবহৃত হয়েছে। ‘Kumbh Sah’AI’yak’ নামক একটি বহুভাষী চ্যাটবট ভ্রমণ ও সেখানে থাকার বিষয়ে সহায়তা করেছিল। এ ছাড়া, ‘ডিজিটাল দর্শন’-এর মাধ্যমে ভক্তরা দূর থেকে প্রতীকীভাবে ত্রিবেণি সঙ্গমের পবিত্র জলে স্নান করতে পেরেছিলেন।

এমনকি, ভারতে উপাসনার জন্য রোবটও ব্যবহার করা হচ্ছে। কেরালার একটি মন্দিরে ‘ইরিঞ্জাডাপিলি রমন’ নামে একটি রোবটিক হাতি রয়েছে, যা আচার-অনুষ্ঠান করে এবং আশীর্বাদ দেয়। ওয়াল্টার্স বলেন, ‘এই রোবটিক দেবতারা কথা বলে এবং নড়াচড়া করে। এটা অদ্ভুত লাগলেও অনেকের কাছে এটাই ঈশ্বর।’

তবে অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ধর্মীয় এআই-এর কিছু ঝুঁকিও আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যান্য এআই-এর মতো ধর্মীয় চ্যাটবটগুলোও তথ্যের ‘হ্যালুসিনেশন’ (মিথ্যা বা ভুল তথ্য তৈরি) এবং ত্রুটি প্রদর্শন করে।

যেমন, একবার গীতাজিপিটি (কৃষ্ণের কণ্ঠে) দাবি করেছিল, ‘ধর্ম রক্ষার জন্য হত্যা ন্যায়সংগত।’ এই ধরনের মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার জন্ম দেওয়ায় বিকাশ সাহুকে দ্রুত এআইটির কিছু সমন্বয় করে এই ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলোর জন্য সুরক্ষাবলয় তৈরি করতে হয়েছিল।

এ ছাড়া, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতাত্ত্বিক নৈতিকতা গবেষক রেভারেন্ড লিন্ডন ড্রেক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, চ্যাটবটগুলো প্রায়শই নিরপেক্ষতার আড়ালে তাদের নির্মাতাদের পক্ষপাতকে প্রতিফলিত করে। ভারতে যেখানে প্রযুক্তির সাক্ষরতা কম, সেখানে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে। ওয়াল্টার্স সতর্ক করে বলেন, ‘বিপদ এটাই—যখন এই সরঞ্জামগুলোকে ঐশ্বরিক কণ্ঠস্বর হিসেবে মনে করা হয়, তখন তাদের কথার গুরুত্ব প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়।’

তবে বিজয় মিলের মতো ব্যবহারকারীরা মনে করেন, এই বটগুলো মন্দিরে পুরোহিতের সঙ্গে গভীর কথোপকথন করার যে অভাব, তা পূরণ করে এবং শাস্ত্র-ভিত্তিক নির্দেশনা হাতের নাগালে এনে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রোমকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ওয়েব ব্রাউজার আনল ওপেনএআই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই এবার বাজারে এনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ওয়েব ব্রাউজার। নাম দিয়েছে ‘চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস’। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গুগল ক্রোমসহ অন্য প্রতিযোগীদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

কোম্পানির সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, এই নতুন ব্রাউজারটি সম্পূর্ণরূপে চ্যাটজিপিটিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অ্যাপলের ম্যাকওএস অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহারকারীদের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি প্রচলিত ওয়েব ব্রাউজারগুলোর অ্যাড্রেস বার এতে নেই।

ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারী এবং এআই-এ বিপুল বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে নতুন উপায়ে আয় বাড়াতে চাচ্ছে ওপেনএআই। সেই লক্ষ্যেই এই ব্রাউজার আনল তারা।

ওপেনএআই জানিয়েছে, অ্যাটলাসে একটি পেইড ‘এজেন্ট মোড’ থাকবে। এই ফিচারের মাধ্যমে চ্যাটবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্চ বা অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। এই এজেন্ট মোড শুধু পেইড চ্যাটজিপিটি সাবস্ক্রাইবারদের জন্য। এই ফিচার ব্রাউজিংয়ের প্রেক্ষাপট বুঝে ব্রাউজারকে আরও দ্রুত ও উপযোগী করে তুলবে।

ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে ওপেনএআই বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ই-কমার্স সাইট ইটসি (Etsy) ও শপিফাই (Shopify) এবং বুকিং পরিষেবা ইপিডিয়া (Expedia) ও বুকিং ডটকম (Booking. com)-এর সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি করেছে। সাম্প্রতিক ডেভডে ইভেন্টে অল্টম্যান ঘোষণা করেন, চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৮০ কোটি।

অনেক বিশেষজ্ঞ এই নতুন ব্রাউজারটি নিয়ে উৎসাহিত, তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন অনেকে। মুর ইনসাইটস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজির সিইও এবং প্রধান বিশ্লেষক প্যাট মুরহেড মনে করেন, অ্যাটলাস হয়তো মূল ধারার ব্যবহারকারী, করপোরেট বা নতুনদের জন্য গুগল ক্রোম বা মাইক্রোসফট এজ-এর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে না। কারণ, জনপ্রিয় ব্রাউজারগুলোও দ্রুত এই ধরনের সক্ষমতা নিয়ে আসবে। তিনি উল্লেখ করেন, মাইক্রোসফট এজ ইতিমধ্যে একই ধরনের অনেক ফিচার বিনা মূল্যে দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, গুগলকে অনলাইন সার্চে বেআইনি একচেটিয়া আধিপত্যকারী ঘোষণার এক বছর পর ওপেনএআই এই ব্রাউজার নিয়ে এল।

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও পরামর্শের জন্য চ্যাটজিপিটির মতো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। ডেটোস নামের এক গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাস পর্যন্ত ডেস্কটপ ব্রাউজারে প্রায় ৬ শতাংশ অনুসন্ধান এলএলএমের মাধ্যমে করা হয়েছে, যা এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। গুগলও এআই-এ বিপুল বিনিয়োগ করছে। গত বছর থেকে তারা সার্চ রেজাল্টে এআই-জেনারেটেড উত্তরকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবৈধ মোবাইল বন্ধে চলতি বছরই এনইআইআর চালু

অর্চি হক, ঢাকা
ছবি: এআই
ছবি: এআই

দেশে অবৈধভাবে আমদানি করা, নকল ও চোরাই মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধে নতুন করে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্মিলিতভাবে এই ব্যবস্থা চালু করতে কাজ করছে। ২৯ অক্টোবর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে যাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা জাতীয় পর্যায়ে এনইআইআর চালু করতে যাচ্ছি। নভেম্বরের পর যেকোনো সময় এটা চালু হয়ে যাবে। এখানে একটা ডেটের আগে সব নাম্বার (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি-আইএমইআই) গ্রে থাকবে। এরপরের নম্বরগুলো ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট হবে।’

দ্রুত সময়ের মধ্যে এনইআইআর চালু এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন খরচ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি)। বিটিআরসি এতে রাজি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এনইআইআর চালুর বিষয়ে বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভায় এসব আলোচনা হয়। বিটিআরসির সেই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘এমআইওবির কিছু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে কম দামে হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও বিক্রয় এবং হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য এনইআইআর সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ এবং যথাসময়ে চালুর লক্ষ্যে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাট/ট্যাক্সসহ স্বেচ্ছায় শর্তহীনভাবে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার ক্রয় এবং প্রযোজ্য খাতসমূহের ব্যয় নির্বাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে মর্মে জানিয়েছে।’

প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য ১৫ সংখ্যার একটি আলাদা আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর থাকে। এই সুনির্দিষ্ট নম্বর দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্কে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট মোবাইলের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব। বাংলাদেশে আইএমইআই নকল করে অবৈধ ফোন ব্যবহারের প্রবণতা অনেক। ২০২৪ সালের জুনে রবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা একটি আইএমইআই নম্বরের নিবন্ধন দিয়েই দেড় লাখের বেশি মোবাইল ফোনের খোঁজ পেয়েছে। অর্থাৎ এসব ফোনই নকল। এনইআইআর চালু হলে ডুপ্লিকেট আইএমইআই অর্থাৎ নকল ফোনের বেচাকেনা বন্ধ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে দেদার অবৈধ মোবাইল বিক্রি হচ্ছে। এসব অবৈধ ফোন ব্যবহার করে অপরাধের প্রবণতা রয়েছে। এমআইওবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার ৩৫-৪০ শতাংশ। অবৈধ ও চোরাই হ্যান্ডসেটের কারণে দেশে ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা ১৭ মোবাইল হ্যান্ডসেট কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈধভাবে আমদানিকারকেরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। শুল্ক হারাচ্ছে সরকার।

অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধে ২০২১ সালের ১ জুলাই প্রথমবারের মতো এনইআইআর ব্যবস্থা চালু করে সরকার। সে সময় অনেক মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধনও করা হয়। কিন্তু এরপর তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৪ সালে আবারও এনইআইআর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছর ১৮ জানুয়ারি বিটিআরসি ঘোষণা দেয়, ‘অতি শিগগির অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক হতে বিচ্ছিন্ন করা হবে।’ কিন্তু তখনো তা কার্যকর হয়নি।

এনইআইআর চালু হলে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী বলেন, ‘একটা সিম ফেলে দেওয়া যায়, কারণ সেটা কম দামি। কিন্তু ফোন ফেলে দেওয়া যায় না। এনইআইআর চালু হলে যেটা হবে, একটা মোবাইলের মধ্যে যে সিমটা আছে, সেটাও যদি বদল করে, একটা রিরেজিস্ট্রেশনের (পুনঃ পরিবর্তন) দরকার হবে। অর্থাৎ আমাদের একটা অটোমেটিক প্রসেস অব রিরেজিস্ট্রেশনের (স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় পুনর্নিবন্ধন) মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে এআই বদলে দিল বিশ্বের চেহারা

পল্লব শাহরিয়ার
২০২৫ সালে এআই বদলে দিল বিশ্বের চেহারা

প্রযুক্তি দুনিয়াকে বদলে দিচ্ছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলতে থাকলেও ২০২৫ সালকে ভিন্নভাবে মনে রাখবে বিশ্ব। কারণ, এ বছর এআই নিয়ে যেসব পদক্ষেপ ও উদ্ভাবন হয়েছে, সেগুলো এ ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিয়েছে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এআই জীবনে প্রতিদিনের অংশ হয়ে উঠেছে। চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা, গণমাধ্যম—প্রায় সব খাতে এই প্রযুক্তি এখন মানুষের সহকর্মী।

এআই এজেন্ট

একসময় এআই মানে ছিল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি, অ্যালেক্সা বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, যারা প্রশ্নের উত্তর দিত, গান চালাত বা অ্যালার্ম দিত। কিন্তু এ বছর এআই নতুন রূপ নিয়েছে এআই এজেন্ট নামে। এটি এখন শুধু নির্দেশ পালন করে না, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়, পরিকল্পনা করে, এমনকি মানুষের মতো সহযোগিতাও করতে পারে। তারা কাজ শেখে, অভিজ্ঞতা থেকে উন্নত হয় এবং জটিল সমস্যার সমাধানে একা বা দলগতভাবে কাজ করতে পারে।

  • অফিসে ডিজিটাল সহকারী: এখন অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত অফিসের মেইল বাছাই, ফাইল তৈরি, রিপোর্ট লেখা থেকে শুরু করে সময়সূচি সাজানো পর্যন্ত সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যাচ্ছে এআই এজেন্ট দিয়ে। সকালে ম্যানেজার কম্পিউটার চালু করলেই এআই জানিয়ে দিচ্ছে দিনের মিটিং, জরুরি ই-মেইল এবং অসম্পূর্ণ প্রজেক্টের কথা। এতে কর্মীদের সময় বাঁচছে, মনোযোগ বাড়ছে পরিকল্পনা ও সৃজনশীল কাজে।
  • ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে এআই: ভিয়েতনামের এফপিটির ‘এজেন্ট ফ্যাক্টরি’ কয়েক মিনিটে তৈরি করে কাস্টম এআই এজেন্ট। এটি বিক্রির ডেটা বিশ্লেষণ করে কিছু সময়েই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

গ্রাহকসেবায় বুদ্ধিমান সহকারী: ব্যাংক, টেলিকম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন কথোপকথনভিত্তিক এআই এজেন্ট দিয়ে ২৪ ঘণ্টা গ্রাহকসেবা দিচ্ছে। এরা গ্রাহকের প্রশ্ন বুঝে উত্তর দেয়, অভিযোগ রেকর্ড করে এমনকি কার্ড ব্লক করাসহ জরুরি কাজও সম্পন্ন করে। এতে গ্রাহকসেবা দ্রুত, সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হয়েছে।

জেনারেটিভ এআই মডেলের অগ্রগতি

২০২৫ সালে জেনারেটিভ এআই শুধু লেখা বা ছবি তৈরি করতে পারছে, এমনটা নয়। এটি বহু মাধ্যমে সৃজনশীল ও জটিল কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। নতুন প্রজন্মের মডেলগুলো টেক্সট, ছবি, ভিডিও ও অডিও একসঙ্গে বিশ্লেষণ এবং তৈরি করতে পারে। ফলে শিক্ষাবিদ, শিল্পী, গবেষক ও ব্যবসায়ীরা একাধিক তথ্যসূত্র একসঙ্গে ব্যবহার করে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন।

  • লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এলএলএম ৩.০: এখনকার এলএলএম ৩.০ মডেল শুধু লেখাই বোঝে না, এর সঙ্গে যুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারে। যেমন জিপিটি-৫ বা ক্লোড-৩ মডেল নতুন ধারণা তৈরি করতে এবং ব্যবসা, চিকিৎসা বা গবেষণার জন্য কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম।
  • মাল্টিমোডাল সক্ষমতা: মাল্টিমোডাল এআই এখন একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ইনপুট বুঝতে এবং প্রক্রিয়া করতে পারে। যেমন ওপেনএআই জিপিটি-৫ ব্যবহার করে ছবি থেকে গল্প লেখা, ভিডিও বিশ্লেষণ করা কিংবা অডিও থেকে তথ্য সংকলন করতে পারে। চিকিৎসা খাতে এটি একাধিক রোগীর ডেটা, জিনগত তথ্য এবং রোগনির্ণয়-সংক্রান্ত চিত্র একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে দ্রুত এবং নির্ভুল ফল দিতে সক্ষম। শিক্ষার ক্ষেত্রেও মাল্টিমোডাল এআই শিক্ষার্থীর শেখার ধরন অনুযায়ী পাঠ্য, ভিডিও ও অডিও কনটেন্ট একত্র করে ব্যক্তিগত শিক্ষা দিচ্ছে।
  • হালকা মডেল: স্মল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলস ও সুপার টিনি ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলস এখন স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ এবং এলওটি ডিভাইসে চালানো যায়। এগুলো ডেটা ক্লাউডে পাঠানোর প্রয়োজন ছাড়াই স্থানীয়ভাবে কাজ করে। ফলে গোপনীয়তা রক্ষা হয়, প্রক্রিয়াকরণ দ্রুত হয় এবং শক্তিও কম ব্যয় হয়। যেমন গুগল জেমিনি ন্যানো বা অন ডিভাইস সিরি এখন ব্যবহারকারীর ডিভাইসেই জটিল সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সে এআইয়ের বিস্ময়

এ বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সে এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। রোগনির্ণয়, ঝুঁকি পূর্বাভাস, থেরাপি পরিকল্পনা—সব ক্ষেত্রে এআই এখন দ্রুত, নির্ভুল ও কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম। ফলে চিকিৎসাজগতে আগের চেয়ে দ্রুত এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসার পথ তৈরি হয়েছে।

  • চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত: গুগলের গবেষণা সংস্থা ডিপমাইন্ড এ বছর এমন একটি এআই মডেল তৈরি করেছে, যা ক্যানসার কোষের আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারে। আগে গবেষকদের মাসের পর মাস সময় লাগত কোষ কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা বোঝার জন্য। এখন এআই তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে করতে পারে।
  • নির্ণয়ের উন্নতি: চিকিৎসায় রোগনির্ণয় হলো গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ বছর এমন এআই টুল ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ইকোকার্ডিওগ্রাফি কিংবা অন্যান্য মেডিকেল ইমেজ থেকে প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে। আগে যেখানে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রিপোর্ট বিশ্লেষণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিতে হতো, এখন এআই তা কয়েক সেকেন্ডে করে দিচ্ছে।
  • ঝুঁকির পূর্বাভাস: গবেষকেরা তৈরি করেছেন ডেলফি-টুএম নামের একটি এআই মডেল। এটি রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস, বয়স, জীবনধারা ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পূর্বাভাস দেয়।

শ্রেণিকক্ষে এআই

চলতি বছর শিক্ষা খাতে এআই টিউটর ৩৬০ এবং খানমিগো ২.০ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলো শিক্ষার্থীর শেখার ধরন ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে পাঠ্য বিষয়কে সহজ করে শেখায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও এখন অনেকে এআই-নির্ভর শিক্ষা অ্যাপ ব্যবহার করছে, বিশেষ করে ভাষা ও গণিত শেখার জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত