Ajker Patrika

বাজার তোলপাড় করা ডিপসিক কি হারিয়ে গেল

অনলাইন ডেস্ক
ঘটনার ছয় মাস পার হলেও ডিপসিক পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। ছবি: সংগৃহীত
ঘটনার ছয় মাস পার হলেও ডিপসিক পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। ছবি: সংগৃহীত

এক রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপলের ফ্রি অ্যাপ তালিকার শীর্ষে উঠে আসে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি চ্যাটবট ডিপসিক আর১। অ্যাপটি যেন ঝড় তোলে প্রযুক্তি বিশ্বে। কোম্পানিটি দাবি করে, এ চ্যাটবট ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তা তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে সামান্য অর্থ।

এই দাবির পর ও অ্যাপটির জনপ্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে তৈরি হয় বড়ধরনের আলোড়ন। চিপ নির্মাতা জায়ান্ট এনভিডিয়ার বাজারমূল্য থেকে এক দিনে উবে যায় ৬০০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি ডলার (প্রায় ৪৪৬ বিলিয়ন পাউন্ড), যা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এককভাবে কোনো কোম্পানির সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

এনভিডিয়ার পাশাপাশি এআইনির্ভর অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারের দামও পড়ে যায়।

ডিপসিকের উত্থান অনেকের মনে প্রশ্ন তোলে—যুক্তরাষ্ট্র এআই দৌড়ে পেছনে পড়ে গেল কি না। এত দিন চীনকে এ খাতে পিছিয়ে মনে করা হলেও ‘ডিপসিক আর১’ যেন প্রমাণ করে দিল—চীনও শীর্ষে উঠে আসতে পারে।

ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মার্ক আন্দ্রেসেন ডিপসিকের উত্থানকে বলছেন ‘এআইয়ের স্পুটনিক মুহূর্ত’, যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইট ‘স্পুটনিক’ আমেরিকার সঙ্গে মহাকাশ দৌড়ের সূচনা করেছিল।

ঘটনার ছয় মাস পার হলেও ডিপসিক পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই এখনো ব্যবহার করছেন অ্যাপটি।

এটি এমন একটি ধারণাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, যা এত দিন ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানসহ মার্কিন প্রযুক্তি নেতারা প্রচার করে আসছিলেন—বড় মডেলই ভালো মডেল।

তবে চিপ স্টার্টআপ ‘ডি ম্যাট্রিক্স’-এর সিইও সিড শেঠ বলেন, স্মার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং থাকলে কম খরচে শক্তিশালী মডেল তৈরি সম্ভব। ডিপসিক সেটিই প্রমাণ করেছে।

জানুয়ারির এক ছুটির দিনে হঠাৎই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অ্যাপটি। কোম্পানিগুলোর আইটি বিভাগ সচেতন হওয়ার আগেই বহু কর্মী অ্যাপটি ব্যবহার শুরু করেন। এরপর সোমবার অফিস খুললে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের অ্যাপটি ব্যবহার করতে নিষেধ করে, নিরাপত্তাঝুঁকির আশঙ্কায়।

তবে আমেরিকায় এখনো কেউ কেউ অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। অনেক স্টার্টআপ খরচ কমাতে মার্কিন এআই মডেলের বদলে ডিপসিক বেছে নিচ্ছে।

অনলাইনে বিভিন্ন ফোরামে ব্যবহারকারীরা জানাচ্ছেন কীভাবে ডিপসিক-আর১ নিজস্ব ডিভাইসে চালাতে হয়, যাতে চীনা সার্ভারে ডেটা পাঠানো না হয়। মিল পন্ড রিসার্চের সিইও ক্রিস্টোফার কেয়েন বলেন, এভাবে ব্যবহার করলে মডেলটি চীনে কিছু পাঠাচ্ছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ কমে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এআই প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা ডিপসিকের উত্থান যুক্তরাষ্ট্র-চীন এআই প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

মেরাকেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিসের নীতি বিশ্লেষক ওয়েন্ডি চ্যাং বলেন, চীন এত দিন পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হলেও পশ্চিমা দেশের সেরা মডেলগুলোর তুলনায় পিছিয়ে ছিল। ডিপসিক সেই ধারণা বদলে দিয়েছে।

তাদের দাবি, ওপেনএআই যেখানে ২০২৪ সালে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, সেখানে ডিপসিক তাদের মডেল তৈরি করেছে মাত্র ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে—মানে ১০০০ গুণ কম খরচে। তাও আবার ওপেনএআইয়ের ও১ মডেলকে বিভিন্ন পরীক্ষায় পেছনে ফেলে।

চ্যাং বলেন, ডিপসিক চীনের এআই খাতের প্রতিযোগিতা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে।

এর ফলে আমেরিকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে নিজেদের উদ্যোগগুলোকে প্রচার করতে শুরু করে চীনকে ঠেকানোর প্রয়াস হিসেবে।

ট্রাম্পের এআইবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ডেভিড স্যাকস বলেন, এআই প্রযুক্তির প্রভাব শুধু অর্থনীতিতে নয়, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গভীর হবে।

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ডিপসিকের মূল সমস্যা এখনো থেকেই গেছে—তাদের চীনা পরিচয়। মার্কিন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সরকার ডিপসিকের সঙ্গে বেইজিংয়ের সংযোগ নিয়ে তদন্ত করছে।

একজন সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিক বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, ডিপসিক চীনের সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।’

ডিপসিক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তাদের গোপনীয়তার নীতিতে লেখা রয়েছে—ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চীনের সার্ভারে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়া করা হতে পারে।

পরিবর্তনের পরেও পুরোনো পথে ফেরার প্রবণতা

ওপেনএআই আবার আলোচনায় আসে চলতি এই সপ্তাহেই। পাঁচ বছর পর তারা প্রথমবারের মতো দুটি ফ্রি ও ওপেনএআই মডেল প্রকাশ করে—যা ডাউনলোড ও পরিবর্তন করা যাবে।

ডি ম্যাটিক্রের সিড শেঠ বলেন, ডিপসিকের পথ দেখানো থেকে এই পরিবর্তন এসেছে। এটি দেখিয়েছে, ছোট ও কার্যকর মডেলও পারফর্ম করতে পারে।

তবে একই সঙ্গে ওপেনএআই তাদের অত্যাধুনিক জিপিটি–৪ মডেলও ঘোষণা করে, যার জন্য তারা কম্পিউটিং শক্তি ও ডেটা সেন্টারে বড় বিনিয়োগ করেছে।

মেটাপ্রধান মার্ক জাকারবার্গ কোটি কোটি ডলার খরচ করছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে কর্মী টানতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের অফার দিচ্ছেন।

এনভিডিয়ার শেয়ারও আবার ঊর্ধ্বমুখী এবং তারা এখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি।

মিল পন্ড রিসার্চের কেয়েন বলেন, প্রাথমিকভাবে ডিপসিককে ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা এখন মনে হয় বিভ্রান্তিকর ছিল।

ডিপসিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

ডিপসিক এখন নিজের গতি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বলে মনে করছেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির সহযোগী অধ্যাপক মারিনা ঝ্যাং।

তাঁর মতে, নতুন মডেল ডিপসিক আর২ আসার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে—কারণ, কোম্পানিটি উচ্চমানের চিপের ঘাটতিতে ভুগছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

এনসিপি নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, চিরকুটে লেখা—‘প্রস্তুত হ রাজাকার’

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ দেখালেন মৎস্যচাষি

যাচ্ছিলেন বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে, গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন জামাই-শ্বশুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত