অনলাইন ডেস্ক
বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত উৎপাদনের গবেষণা চালাচ্ছেন, যাতে রক্তের ঘাটতি মোকাবিলা করা এবং নিরাপদ ট্রান্সফিউশন অর্থাৎ রক্ত দান নিশ্চিত করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর লাখো মানুষ রক্তের অভাবে মারা যায়। রক্ত শরীরের জন্য অক্সিজেন পরিবহন ও বর্জ্য অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।
কৃত্রিম রক্ত তৈরির ক্ষেত্রে ২০২২ সালে এক বড় অগ্রগতি অর্জিত হয়। সে বছর বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে তৈরি রক্ত প্রথমবারের মতো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যবহার করেন। বিশেষ করে, বিরল রক্তের গ্রুপের রোগীদের জন্য এই ট্রায়াল চালানো হয়। গবেষকেরা জরুরি চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার এবং ট্রান্সফিউশনের জন্য কৃত্রিম রক্ত তৈরির কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃত্রিম রক্ত দুই ধরনের—‘ল্যাব-গ্রোথ ব্লাড’ ও ‘সিনথেটিক ব্লাড’। সিনথেটিক ব্লাড সম্পূর্ণভাবে মানুষের কোষবিহীন অর্থাৎ এটি মানব শরীরের কোনো কোষের মতো নয় এবং এটি অক্সিজেন পরিবহনের মাধ্যমে রক্তকণিকার ভূমিকা অনুকরণ করে। এটি মূলত জরুরি চিকিৎসা ও সামরিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে, যেখানে রক্তের ধরন মেলানো কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ‘এরিথ্রোমার’ নামক এক বিশ্বজনীন সামঞ্জস্যপূর্ণ ‘সিনথেটিক ব্লাড’ প্রকল্পে ৪৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই সিনথেটিক ব্লাড শীতলীকরণ ছাড়াই স্থিতিশীল থাকে। তবে এই বিষয়ে গবেষণা এখনো শেষ হয়নি। সিনথেটিক ব্লাডের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গবেষণা এখনো চলমান।
অন্যদিকে, ল্যাব-গ্রোথ ব্লাড হলো—নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মানুষের শরীরের কোষ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের অধ্যাপক সেড্রিক গেভার্ট বলেন, ‘একবার বাজারে আসরে, পরীক্ষাগারে তৈরি রক্তকোষ নির্দিষ্ট কিছু রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।’ উদাহরণ হিসেবে সেড্রিক গেভার্ট বলেন, ল্যাব-গ্রোথ প্লাটিলেট শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের রক্তপাত বন্ধ করতে কার্যকর হতে পারে।
এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয় হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেলে। এটি লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লাটিলেট তৈরি করে। এই স্টেম সেলগুলো অস্থিমজ্জা বা দাতার রক্ত থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং ল্যাবে কোষ বিকাশে সহায়ক উপাদানের সংস্পর্শে আনা হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো পরিপক্ব লোহিত রক্তকণিকায় পরিণত হয় এবং স্বাভাবিক রক্তকণিকার মতো কাজ করে।
বিজ্ঞানীরা স্টেম সেলে ‘জিন এডিট’ করে অর্থাৎ, জিনে পরিবর্তন এনে রক্ত উৎপাদন বাড়াতে এবং রক্তের গ্রুপ নির্ধারক চিহ্ন মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। এটি ভবিষ্যতে সর্বজনীন রক্তদাতার রক্ত তৈরির পথ সুগম করতে পারে। তবে ল্যাব-গ্রোথ ও সিনথেটিক ব্লাড এখনো গবেষণা ও উন্নয়ন পর্যায়ে আছে। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ল্যাব-গ্রোথ লোহিত রক্তকণিকা মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা হয়। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
কৃত্রিম রক্ত তৈরিতে অন্যতম বড় বাধা খরচ। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডারপা) জানায়, এক ইউনিট ল্যাব-গ্রোথ রক্ত উৎপাদনে ৯০ হাজার ডলারের বেশি খরচ হয়। উন্নত প্রযুক্তির ফলে এই ব্যয় কমে এখন প্রতি ইউনিট ৫ হাজার ডলারের নিচে এসেছে। কিন্তু তাও অনেক বেশি। কারণ, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে যারা এক ইউনিট করে লোহিত রক্তকণিকা দান করেছেন তাদের গড়ে ২১৫ ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল।
২০২২ সালে জাপানে এক গবেষণায় ‘হিমোগ্লোবিন ভেসিকল’ বা ‘হিমোগ্লোবিন থলি’ পরীক্ষা করা হয়। এটি কৃত্রিম রক্তকণিকার মতো অক্সিজেন বহন করে। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১২ জন সুস্থ পুরুষকে বিভিন্ন মাত্রার ইনজেকশন দেওয়া হয়। কয়েকজনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন জ্বর ও চর্মরোগ দেখা দিলেও তা দ্রুত সেরে যায়। তবে রক্তচাপসহ গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা যায়নি।
বাণিজ্যিক উৎপাদনেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—বৃহৎ পরিসরে নিরাপদ ও কার্যকর উৎপাদন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার শ্রেণিবিভাগ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। গেভার্ট বলেন, ‘এটি যেকোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য এক নতুন ধরনের পণ্য, অর্থাৎ আমরা অজানা ক্ষেত্রে প্রবেশ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, ল্যাব-গ্রোথ রক্তকে কোন শ্রেণিতে ফেলা হবে—‘সেল থেরাপি’ নাকি ‘ওষুধ’ হিসেবে। সিদ্ধান্ত যাই হোক না কে, বিষয়টি এই রক্তের অনুমোদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে।
ল্যাব-গ্রোথ রক্ত বিরল ব্লাড গ্রুপের জন্য পরিবর্তন করে নেওয়া যায়। সিনথেটিক রক্তে যেহেতু কোনো কোষ নেই ফলে এটি বিশেষ কোনো ব্লাড গ্রুপের ওপর নির্ভর করে না। আর তাই এটি সম্ভাব্যভাবে সর্বজনীন ট্রান্সফিউশনের বিকল্প হতে পারে। এ, বি এবং ও গ্রুপ এবং রেসাস ব্লাড গ্রুপের বাইরেও বিজ্ঞানীরা ৩৬টি ভিন্ন ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম চিহ্নিত করেছেন, যেখানে ৬ শতাধিক অনন্য অ্যান্টিজেন আছে। বিরল ব্লাড গ্রুপের ক্ষেত্রে সাধারণ অ্যান্টিজেন অনুপস্থিত থাকে বা বিশেষ অ্যান্টিজেন থাকে, যা দাতার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন করে তোলে।
বিরল রক্তের ধরন অঞ্চল ও জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘Bombay blood’ যা ‘ও’ ব্লাড গ্রুপের একটি বিরল উপপ্রকরণ। এটি বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে মাত্র এক বা তারও কম মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে এটি ভারত, ইরান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তুলনামূলক বেশি।
বিশ্বজুড়ে রক্তের ঘাটতি মেটাতে কৃত্রিম রক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর গড়ে ১১ দশমিক ৮৫ কোটি ইউনিট দান করা রক্ত রক্তদান সংগ্রহ করা হয়, যার ৪০ শতাংশই আসে উচ্চ আয়ের দেশগুলো থেকে, যদিও এসব দেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৬ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য গড়ে ২ হাজার ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। তবে সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও ওশেনিয়ায় চরম ঘাটতি আছে রক্ত প্রাপ্যতার।
রক্ত প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকাগুলো বিশেষভাবে পিছিয়ে, যেখানে ৭৫ শতাংশ রোগী রক্ত পায় না। এটি মূলত মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থার সমস্যা, সরবরাহের নয়। অনেক অঞ্চলে ব্লাড ব্যাংক কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে থাকায় চিকিৎসকদের জীবন রক্ষাকারী অস্ত্রোপচার স্থগিত বা বাতিল করতে হয়।
গেভার্ট কৃত্রিম রক্তের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, ‘ল্যাবে উৎপাদিত রক্তের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এর মূল্য সংকটময় পরিস্থিতিতে, যেমন—মহামারি, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যখন হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যায় তখন।’ যাই হোক, গবেষণায় অগ্রগতি হলেও কৃত্রিম রক্ত এখনো উন্নয়নের পর্যায়েই আছে। বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হতে গবেষণা, ব্যয় হ্রাস ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা
বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত উৎপাদনের গবেষণা চালাচ্ছেন, যাতে রক্তের ঘাটতি মোকাবিলা করা এবং নিরাপদ ট্রান্সফিউশন অর্থাৎ রক্ত দান নিশ্চিত করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর লাখো মানুষ রক্তের অভাবে মারা যায়। রক্ত শরীরের জন্য অক্সিজেন পরিবহন ও বর্জ্য অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।
কৃত্রিম রক্ত তৈরির ক্ষেত্রে ২০২২ সালে এক বড় অগ্রগতি অর্জিত হয়। সে বছর বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে তৈরি রক্ত প্রথমবারের মতো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যবহার করেন। বিশেষ করে, বিরল রক্তের গ্রুপের রোগীদের জন্য এই ট্রায়াল চালানো হয়। গবেষকেরা জরুরি চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার এবং ট্রান্সফিউশনের জন্য কৃত্রিম রক্ত তৈরির কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃত্রিম রক্ত দুই ধরনের—‘ল্যাব-গ্রোথ ব্লাড’ ও ‘সিনথেটিক ব্লাড’। সিনথেটিক ব্লাড সম্পূর্ণভাবে মানুষের কোষবিহীন অর্থাৎ এটি মানব শরীরের কোনো কোষের মতো নয় এবং এটি অক্সিজেন পরিবহনের মাধ্যমে রক্তকণিকার ভূমিকা অনুকরণ করে। এটি মূলত জরুরি চিকিৎসা ও সামরিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে, যেখানে রক্তের ধরন মেলানো কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ‘এরিথ্রোমার’ নামক এক বিশ্বজনীন সামঞ্জস্যপূর্ণ ‘সিনথেটিক ব্লাড’ প্রকল্পে ৪৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই সিনথেটিক ব্লাড শীতলীকরণ ছাড়াই স্থিতিশীল থাকে। তবে এই বিষয়ে গবেষণা এখনো শেষ হয়নি। সিনথেটিক ব্লাডের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গবেষণা এখনো চলমান।
অন্যদিকে, ল্যাব-গ্রোথ ব্লাড হলো—নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মানুষের শরীরের কোষ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের অধ্যাপক সেড্রিক গেভার্ট বলেন, ‘একবার বাজারে আসরে, পরীক্ষাগারে তৈরি রক্তকোষ নির্দিষ্ট কিছু রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।’ উদাহরণ হিসেবে সেড্রিক গেভার্ট বলেন, ল্যাব-গ্রোথ প্লাটিলেট শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের রক্তপাত বন্ধ করতে কার্যকর হতে পারে।
এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয় হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেলে। এটি লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লাটিলেট তৈরি করে। এই স্টেম সেলগুলো অস্থিমজ্জা বা দাতার রক্ত থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং ল্যাবে কোষ বিকাশে সহায়ক উপাদানের সংস্পর্শে আনা হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো পরিপক্ব লোহিত রক্তকণিকায় পরিণত হয় এবং স্বাভাবিক রক্তকণিকার মতো কাজ করে।
বিজ্ঞানীরা স্টেম সেলে ‘জিন এডিট’ করে অর্থাৎ, জিনে পরিবর্তন এনে রক্ত উৎপাদন বাড়াতে এবং রক্তের গ্রুপ নির্ধারক চিহ্ন মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। এটি ভবিষ্যতে সর্বজনীন রক্তদাতার রক্ত তৈরির পথ সুগম করতে পারে। তবে ল্যাব-গ্রোথ ও সিনথেটিক ব্লাড এখনো গবেষণা ও উন্নয়ন পর্যায়ে আছে। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ল্যাব-গ্রোথ লোহিত রক্তকণিকা মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা হয়। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
কৃত্রিম রক্ত তৈরিতে অন্যতম বড় বাধা খরচ। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডারপা) জানায়, এক ইউনিট ল্যাব-গ্রোথ রক্ত উৎপাদনে ৯০ হাজার ডলারের বেশি খরচ হয়। উন্নত প্রযুক্তির ফলে এই ব্যয় কমে এখন প্রতি ইউনিট ৫ হাজার ডলারের নিচে এসেছে। কিন্তু তাও অনেক বেশি। কারণ, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে যারা এক ইউনিট করে লোহিত রক্তকণিকা দান করেছেন তাদের গড়ে ২১৫ ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল।
২০২২ সালে জাপানে এক গবেষণায় ‘হিমোগ্লোবিন ভেসিকল’ বা ‘হিমোগ্লোবিন থলি’ পরীক্ষা করা হয়। এটি কৃত্রিম রক্তকণিকার মতো অক্সিজেন বহন করে। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১২ জন সুস্থ পুরুষকে বিভিন্ন মাত্রার ইনজেকশন দেওয়া হয়। কয়েকজনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন জ্বর ও চর্মরোগ দেখা দিলেও তা দ্রুত সেরে যায়। তবে রক্তচাপসহ গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা যায়নি।
বাণিজ্যিক উৎপাদনেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—বৃহৎ পরিসরে নিরাপদ ও কার্যকর উৎপাদন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার শ্রেণিবিভাগ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। গেভার্ট বলেন, ‘এটি যেকোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য এক নতুন ধরনের পণ্য, অর্থাৎ আমরা অজানা ক্ষেত্রে প্রবেশ করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, ল্যাব-গ্রোথ রক্তকে কোন শ্রেণিতে ফেলা হবে—‘সেল থেরাপি’ নাকি ‘ওষুধ’ হিসেবে। সিদ্ধান্ত যাই হোক না কে, বিষয়টি এই রক্তের অনুমোদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে।
ল্যাব-গ্রোথ রক্ত বিরল ব্লাড গ্রুপের জন্য পরিবর্তন করে নেওয়া যায়। সিনথেটিক রক্তে যেহেতু কোনো কোষ নেই ফলে এটি বিশেষ কোনো ব্লাড গ্রুপের ওপর নির্ভর করে না। আর তাই এটি সম্ভাব্যভাবে সর্বজনীন ট্রান্সফিউশনের বিকল্প হতে পারে। এ, বি এবং ও গ্রুপ এবং রেসাস ব্লাড গ্রুপের বাইরেও বিজ্ঞানীরা ৩৬টি ভিন্ন ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম চিহ্নিত করেছেন, যেখানে ৬ শতাধিক অনন্য অ্যান্টিজেন আছে। বিরল ব্লাড গ্রুপের ক্ষেত্রে সাধারণ অ্যান্টিজেন অনুপস্থিত থাকে বা বিশেষ অ্যান্টিজেন থাকে, যা দাতার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন করে তোলে।
বিরল রক্তের ধরন অঞ্চল ও জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘Bombay blood’ যা ‘ও’ ব্লাড গ্রুপের একটি বিরল উপপ্রকরণ। এটি বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে মাত্র এক বা তারও কম মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে এটি ভারত, ইরান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তুলনামূলক বেশি।
বিশ্বজুড়ে রক্তের ঘাটতি মেটাতে কৃত্রিম রক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর গড়ে ১১ দশমিক ৮৫ কোটি ইউনিট দান করা রক্ত রক্তদান সংগ্রহ করা হয়, যার ৪০ শতাংশই আসে উচ্চ আয়ের দেশগুলো থেকে, যদিও এসব দেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৬ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য গড়ে ২ হাজার ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। তবে সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও ওশেনিয়ায় চরম ঘাটতি আছে রক্ত প্রাপ্যতার।
রক্ত প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকাগুলো বিশেষভাবে পিছিয়ে, যেখানে ৭৫ শতাংশ রোগী রক্ত পায় না। এটি মূলত মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থার সমস্যা, সরবরাহের নয়। অনেক অঞ্চলে ব্লাড ব্যাংক কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে থাকায় চিকিৎসকদের জীবন রক্ষাকারী অস্ত্রোপচার স্থগিত বা বাতিল করতে হয়।
গেভার্ট কৃত্রিম রক্তের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, ‘ল্যাবে উৎপাদিত রক্তের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এর মূল্য সংকটময় পরিস্থিতিতে, যেমন—মহামারি, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যখন হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যায় তখন।’ যাই হোক, গবেষণায় অগ্রগতি হলেও কৃত্রিম রক্ত এখনো উন্নয়নের পর্যায়েই আছে। বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হতে গবেষণা, ব্যয় হ্রাস ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা
আলো ছাড়া অক্সিজেন তৈরি অসম্ভব বলে মনে করা হয়। তবে পৃথিবীর গভীর সমুদ্রতলে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না, সেখানে অক্সিজেন তৈরি হতে পারে বলে কিছু গবেষক দাবি করেছেন। এই চমকপ্রদ ধারণাটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
১ ঘণ্টা আগেপ্রাণীদের মধ্যে শুধু মানুষই কথা বলতে পারে। অথচ আমাদের নিকটবর্তী পূর্বপুরুষ নিয়ান্ডারথালরাও এত সূক্ষ্মভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতেন পারত না। এসব প্রশ্নের উত্তর দীর্ঘ সময় ধরে খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় এই রহস্যের উদ্ঘাটন হয়েছে। এই গবেষণায় আধুনিক মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ জেনেটিক...
৬ ঘণ্টা আগেনাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী ক্যাডি কোলম্যান জানিয়েছেন, নভোচারীদের অতিরিক্ত কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেই। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মচারী হিসেবে স্বাভাবিক বেতনের আওতায় থাকেন। মহাকাশে থাকাকালে তাঁদের খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য প্রয়োজন...
১৯ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকে পড়া দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন ইলন মাস্কের ফ্যালকন ৯ রকেট। এই দুই মহাকাশচারী প্রায় ৩০০ দিন ধরে আইএসএস-এ অবস্থান করছেন। তাই তাদের ফিরিয়ে আনতে শনিবার সকালে মহাকাশের...
২ দিন আগে