অনলাইন ডেস্ক
১৯৮৩ সালের একটি বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনিতে একজন ভারতীয় জ্যোতির্পদার্থবিদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ২০৫০ সালের স্কুলগুলো কেমন দেখতে হবে। জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকার সেই জ্যোতির্পদার্থবিদ— যিনি এমন একটি দৃশ্যের কল্পনা করেছিলেন, যেখানে ভিনগ্রহের একজন বাসিন্দা স্ক্রিনের সামনে বসে স্কুলের বাচ্চাদের অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছে। এটি ছিল জ্যোতির্পদার্থবিদ নার্লিকার কল্পনা। তবে ভিনগ্রহীরা আবির্ভূত না হলেও, ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তব হয়ে উঠেছে।
নার্লিকার শুধু কল্পনা প্রবণই ছিলেন না, ছিলেন সাহসীও। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ‘হয়েল-নার্লিকার তত্ত্ব’। এই তত্ত্বে বলা হয়, মহাবিশ্ব চিরন্তন, এবং তাতে নিয়মিত নতুন পদার্থের সৃষ্টি হচ্ছে, একে বলা হয় কোয়াসি স্টেডি-স্টেট থিওরি।
গত মঙ্গলবার (২১ মে) প্রয়াত হন ভারতের অন্যতম প্রখ্যাত এই জ্যোতির্পদার্থবিদ। জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের থেকেও অনেক এগিয়ে থাকা একজন মানুষ, যিনি বিজ্ঞান শিক্ষায় ভারতীয় গবেষকদের পুরো একটা প্রজন্মকে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্বনামধন্য বিজ্ঞানী, তাঁর বাড়ির পরিচারকসহ শত শত মানুষ।
১৯৩৮ সালের ১৯ জুলাই মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কোলহাপুরে জন্মগ্রহণকারী নার্লিকার বেড়ে উঠেছিলেন একটি অন্যরকম পরিবেশে। তাঁর বাবা, বিষ্ণু নার্লিকার ছিলেন অধ্যাপক ও গণিতবিদ। আর মা সুমতি ছিলেন সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত। বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ ভি. এস. হুজুরবাজার ছিলেন সম্পর্কে জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকারের মামা।
জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকারের বিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্কুল ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়ে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ১৯৫৭ সালে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে উত্তীর্ণ হন নার্লিকার। এরপর বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, মেধাবী নারলিকার উচ্চশিক্ষার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, যেখানে তিনি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ গাণিতিক কোর্সে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। সেখানে তিনি জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ও কসমোলজিতেও তাঁর আগ্রহ গড়ে তোলেন। ১৯৫৯ সালে তিনি এই কলেজ থেকে ম্যাথমেটিক্স ট্রাইপোজে ‘সিনিয়র র্যাঙ্গলার’ (Senior Wranglar) পদক অর্জন করেন যা তৎকালীন সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ‘বৌদ্ধিক কৃতিত্ব’ হিসেবে স্বীকৃত হতো।
তবে কেমব্রিজে তাঁর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল পিএইচডি গাইড হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানী স্যার ফ্রেড হয়েলের সঙ্গে সম্পর্ক। ফ্রেড তখন স্টেডি-স্টেট থিওরি নিয়ে মত্ত। সেই ভাবনার শরিক হন নার্লিকারও। তাঁদেরই যৌথ গবেষণার ফসল ‘হয়েল-নারলিকার তত্ত্ব’, যা সেই সময়ে বিজ্ঞানীমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এটি ‘কোয়াসি স্টেডি-স্টেট কসমোলজি তত্ত্ব’ বা ‘কনফর্মাল গ্রাভিটি তত্ত্ব’ নামেও পরিচিত। এই থিওরি মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের জন্য একটি বিকল্প ব্যাখ্যার প্রস্তাব দেয়, যা সেই সময়ের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে (এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট শুরু ও শেষ রয়েছে) রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে। এই তত্ত্বের মতে, মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানে ক্রমাগত নতুন নতুন পদার্থ তৈরি হচ্ছে।
১৯৬২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মিথস্ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন নার্লিকার। ১৯৬৩ সালে বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েলের তত্ত্বাবধানে নার্লিকার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এরপরে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজের কিংস কলেজে ‘বেরি র্যামসে ফেলো’ (Berry Ramsey Fellow) হিসেবে যুক্ত থাকেন এবং ১৯৬৪ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েল কেমব্রিজে ‘ইনস্টিটিউট অব থিয়োরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি’ স্থাপন করলে নার্লিকার সেখানে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য (Founder Stuff) পদে যোগ দেন।
নার্লিকার ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কিংস কলেজের একজন ফেলো এবং ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। জ্যোতির্পদার্থবিদদের মহলে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করলে ভারতের বিজ্ঞান মহলে তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তিনি ১৯৭২ সালে ভারতে ফিরে আসেন এবং টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের তাত্ত্বিক জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যেখানে তিনি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দেন।
তবে ভারতে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল অত্যাধুনিক গবেষণা ও বিজ্ঞানের গণতন্ত্রীকরণের জন্য নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। এই স্বপ্নটি ১৯৮৮ সালে বাস্তবে পরিণত হয়, যখন নার্লিকার অন্যান্য বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের সঙ্গে, পশ্চিম ভারতের পুনেতে ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস (আইইউসিএএ) প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০ বর্গফুটের একটি সাধারণ কক্ষ থেকে এই আইইউসিএএ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। নার্লিকার ২০০৩ সাল পর্যন্ত এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবেও সেখানে কাজ চালিয়ে যান।
নার্লিকার আইইউসিএএ-তে শিশু ও সাধারণ মানুষের জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার নানা কার্যক্রম চালু করেন। বিজ্ঞান কর্মশালা, বক্তৃতা, স্কুল ক্যাম্প— সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নার্লিকারের ভাবনা। বিজ্ঞান শিক্ষাবিদ অরবিন্দ গুপ্ত বলেন, ‘নার্লিকার বলেছিলেন, পিএইচডি ছাত্ররা আকাশ থেকে পড়ে না, তাদের ছোটবেলা থেকেই খুঁজে আনতে হয়।’
নার্লিকার প্রায় ৩০০-এর বেশি গবেষণাপত্র ছাড়াও বহু জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞান রচনা করেছেন, যেগুলোর অনেকগুলোই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ‘ভাইরাস’ গল্পে তিনি বিশ্বব্যাপী মহামারির চিত্র তুলে ধরেন, যা বাস্তবে ঘটে কয়েক বছরের মধ্যেই (কোভিড-১৯)। ১৯৮৬ সালের বই ‘Waman Parat Na Ala’-তে (মারাঠি ভাষায় রচিত) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক জটিলতাও তুলে ধরেছিলেন তিনি।
নার্লিকার শুধু বিজ্ঞানেই থেমে থাকেননি, কুসংস্কার ও ছদ্মবিজ্ঞানের (অপবিজ্ঞান) বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন। ২০০৮ সালে একটি পরিসংখ্যানভিত্তিক গবেষণাপত্রে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোমক রায় চৌধুরীর ভাষায়, ‘তাঁর যুক্তির মূল ভিত্তি ছিল, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তাকে প্রশ্ন করতে হবে।’
১৯৮৩ সালের একটি বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনিতে একজন ভারতীয় জ্যোতির্পদার্থবিদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ২০৫০ সালের স্কুলগুলো কেমন দেখতে হবে। জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকার সেই জ্যোতির্পদার্থবিদ— যিনি এমন একটি দৃশ্যের কল্পনা করেছিলেন, যেখানে ভিনগ্রহের একজন বাসিন্দা স্ক্রিনের সামনে বসে স্কুলের বাচ্চাদের অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছে। এটি ছিল জ্যোতির্পদার্থবিদ নার্লিকার কল্পনা। তবে ভিনগ্রহীরা আবির্ভূত না হলেও, ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তব হয়ে উঠেছে।
নার্লিকার শুধু কল্পনা প্রবণই ছিলেন না, ছিলেন সাহসীও। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ‘হয়েল-নার্লিকার তত্ত্ব’। এই তত্ত্বে বলা হয়, মহাবিশ্ব চিরন্তন, এবং তাতে নিয়মিত নতুন পদার্থের সৃষ্টি হচ্ছে, একে বলা হয় কোয়াসি স্টেডি-স্টেট থিওরি।
গত মঙ্গলবার (২১ মে) প্রয়াত হন ভারতের অন্যতম প্রখ্যাত এই জ্যোতির্পদার্থবিদ। জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের থেকেও অনেক এগিয়ে থাকা একজন মানুষ, যিনি বিজ্ঞান শিক্ষায় ভারতীয় গবেষকদের পুরো একটা প্রজন্মকে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্বনামধন্য বিজ্ঞানী, তাঁর বাড়ির পরিচারকসহ শত শত মানুষ।
১৯৩৮ সালের ১৯ জুলাই মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কোলহাপুরে জন্মগ্রহণকারী নার্লিকার বেড়ে উঠেছিলেন একটি অন্যরকম পরিবেশে। তাঁর বাবা, বিষ্ণু নার্লিকার ছিলেন অধ্যাপক ও গণিতবিদ। আর মা সুমতি ছিলেন সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত। বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ ভি. এস. হুজুরবাজার ছিলেন সম্পর্কে জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকারের মামা।
জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকারের বিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্কুল ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়ে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ১৯৫৭ সালে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে উত্তীর্ণ হন নার্লিকার। এরপর বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, মেধাবী নারলিকার উচ্চশিক্ষার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, যেখানে তিনি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ গাণিতিক কোর্সে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। সেখানে তিনি জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ও কসমোলজিতেও তাঁর আগ্রহ গড়ে তোলেন। ১৯৫৯ সালে তিনি এই কলেজ থেকে ম্যাথমেটিক্স ট্রাইপোজে ‘সিনিয়র র্যাঙ্গলার’ (Senior Wranglar) পদক অর্জন করেন যা তৎকালীন সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ‘বৌদ্ধিক কৃতিত্ব’ হিসেবে স্বীকৃত হতো।
তবে কেমব্রিজে তাঁর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল পিএইচডি গাইড হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানী স্যার ফ্রেড হয়েলের সঙ্গে সম্পর্ক। ফ্রেড তখন স্টেডি-স্টেট থিওরি নিয়ে মত্ত। সেই ভাবনার শরিক হন নার্লিকারও। তাঁদেরই যৌথ গবেষণার ফসল ‘হয়েল-নারলিকার তত্ত্ব’, যা সেই সময়ে বিজ্ঞানীমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এটি ‘কোয়াসি স্টেডি-স্টেট কসমোলজি তত্ত্ব’ বা ‘কনফর্মাল গ্রাভিটি তত্ত্ব’ নামেও পরিচিত। এই থিওরি মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের জন্য একটি বিকল্প ব্যাখ্যার প্রস্তাব দেয়, যা সেই সময়ের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে (এই তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট শুরু ও শেষ রয়েছে) রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে। এই তত্ত্বের মতে, মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানে ক্রমাগত নতুন নতুন পদার্থ তৈরি হচ্ছে।
১৯৬২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মিথস্ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন নার্লিকার। ১৯৬৩ সালে বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েলের তত্ত্বাবধানে নার্লিকার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এরপরে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজের কিংস কলেজে ‘বেরি র্যামসে ফেলো’ (Berry Ramsey Fellow) হিসেবে যুক্ত থাকেন এবং ১৯৬৪ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েল কেমব্রিজে ‘ইনস্টিটিউট অব থিয়োরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি’ স্থাপন করলে নার্লিকার সেখানে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য (Founder Stuff) পদে যোগ দেন।
নার্লিকার ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কিংস কলেজের একজন ফেলো এবং ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। জ্যোতির্পদার্থবিদদের মহলে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করলে ভারতের বিজ্ঞান মহলে তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তিনি ১৯৭২ সালে ভারতে ফিরে আসেন এবং টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের তাত্ত্বিক জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যেখানে তিনি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দেন।
তবে ভারতে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল অত্যাধুনিক গবেষণা ও বিজ্ঞানের গণতন্ত্রীকরণের জন্য নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। এই স্বপ্নটি ১৯৮৮ সালে বাস্তবে পরিণত হয়, যখন নার্লিকার অন্যান্য বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের সঙ্গে, পশ্চিম ভারতের পুনেতে ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস (আইইউসিএএ) প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০ বর্গফুটের একটি সাধারণ কক্ষ থেকে এই আইইউসিএএ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। নার্লিকার ২০০৩ সাল পর্যন্ত এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবেও সেখানে কাজ চালিয়ে যান।
নার্লিকার আইইউসিএএ-তে শিশু ও সাধারণ মানুষের জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার নানা কার্যক্রম চালু করেন। বিজ্ঞান কর্মশালা, বক্তৃতা, স্কুল ক্যাম্প— সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নার্লিকারের ভাবনা। বিজ্ঞান শিক্ষাবিদ অরবিন্দ গুপ্ত বলেন, ‘নার্লিকার বলেছিলেন, পিএইচডি ছাত্ররা আকাশ থেকে পড়ে না, তাদের ছোটবেলা থেকেই খুঁজে আনতে হয়।’
নার্লিকার প্রায় ৩০০-এর বেশি গবেষণাপত্র ছাড়াও বহু জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞান রচনা করেছেন, যেগুলোর অনেকগুলোই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ‘ভাইরাস’ গল্পে তিনি বিশ্বব্যাপী মহামারির চিত্র তুলে ধরেন, যা বাস্তবে ঘটে কয়েক বছরের মধ্যেই (কোভিড-১৯)। ১৯৮৬ সালের বই ‘Waman Parat Na Ala’-তে (মারাঠি ভাষায় রচিত) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক জটিলতাও তুলে ধরেছিলেন তিনি।
নার্লিকার শুধু বিজ্ঞানেই থেমে থাকেননি, কুসংস্কার ও ছদ্মবিজ্ঞানের (অপবিজ্ঞান) বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন। ২০০৮ সালে একটি পরিসংখ্যানভিত্তিক গবেষণাপত্রে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোমক রায় চৌধুরীর ভাষায়, ‘তাঁর যুক্তির মূল ভিত্তি ছিল, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তাকে প্রশ্ন করতে হবে।’
আমাদের আকাশগঙ্গায় ১৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে রহস্যময় বস্তুর সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। বস্তুটি প্রতি ৪৪ মিনিটে একই সঙ্গে রেডিও তরঙ্গ ও এক্স-রশ্মি বিকিরণের মাধ্যমে একবার করে জ্বলে ওঠে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
১৫ ঘণ্টা আগেচীন তাদের মহাকাশ গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু করেছে। দেশটি এবার মহাকাশে পাঠিয়েছে ‘তিয়ানওয়েন-২’ নামের একটি মহাকাশযান। এই মিশনে তারা দুটি এমন মহাজাগতিক বস্তু অনুসন্ধানে যাবে, যেখানে আগে কোনো মহাকাশযান পৌঁছায়নি।
৩ দিন আগেভবিষ্যতের কথা ভাবলেই কি তা সত্যি হয়ে যায়? এই প্রশ্ন অনেকের মনে এলেও উত্তরটা মোটেও জাদুবিদ্যার মতো নয়—বলেছেন নিউরোসায়েন্টিস্ট সাবিনা ব্রেনান। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর বই ‘দ্য নিউরোসায়েন্স অব ম্যানিফেস্টিং’-এ তিনি জানিয়েছেন, ‘ম্যানিফেস্টেশন’ বা মনে মনে ভবিষ্যতের ছবি কল্পনা করার অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কে
৩ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের স্টারবেস থেকে বুধবার সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হলো বিশ্বের বৃহত্তম রকেট, স্পেসএক্সের স্টারশিপ। তবে প্রাথমিকভাবে সফল এই যাত্রা মাঝপথে গিয়েই কিছু বড় বাঁধার সম্মুখীন হয়, যা ইলন মাস্কের বহুল প্রচারিত মঙ্গলে অভিযানের প্রকল্পের জন্য নতুন করে কিছু প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
৪ দিন আগে