প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেছেন। তখনো কিছুটা অন্ধকার এবং আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা। এর মধ্যে পাখিদের কিচিরমিচির আপনার কানে ভেসে আসছে। এরা শুধু উচ্চ স্বরে চেঁচামেচি করছে এমন নয়, একটু মনোযোগ দিলেই বোঝা যায়, দিন রাতের অন্য সময়ে তুলনায় এদের কণ্ঠে বেশ উচ্ছ্বাস ও সুরেলা আওয়াজ। এই ধরনের আচরণ কিন্তু দিনের অন্য সময়ে তুলনামূলক কম শোনা যায়।
পাখিদের এই কিচিরমিচিরকে বলে ‘ভোরের কোরাস’। এটি পূর্ণ সূর্যোদয়ের আগে শোনা যায়। ভোরবেলা কিচিরমিচির করা বেশির ভাগ পাখিই কিন্তু পুরুষ!
সকালে পাখিদের কিচিরমিচির করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি তাদের প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। পুরুষ পাখিরা গান গেয়ে স্ত্রী পাখিদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে এবং নিজের এলাকার সীমানা চিহ্নিত করে। সকালে গান গাওয়ার মাধ্যমে এরা শক্তি ও সুস্বাস্থ্যের প্রদর্শন করে, এভাবে স্ত্রী পাখিদের নজর কাড়তে চায়।
এ ছাড়া সকালে গান গাওয়া পাখিদের এক ধরনের সামাজিক আচরণও বটে। নির্দিষ্ট এলাকায় আধিপত্য সম্পর্কে অন্য পাখিদের জানান দিতেও এরা সমস্বরে কিচিরমিচির করে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক শান্ত পরিবেশে গান গাওয়া এদের জন্য সহজ। কারণ সূর্য উঠে গেলে মানুষ ও অন্যান্য পশুপাখির কর্ম তৎপরতা বেড়ে যায়, তখন পরিবেশে বিভিন্ন আওয়াজ থাকে। এমন আওয়াজের মধ্যে পাখিদের কণ্ঠকে আড়াল হয়ে যায়।
সব মিলিয়ে পাখিরা সকালে গান গেয়ে এদের প্রজনন, সামাজিকীকরণ এবং এলাকা চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করে।
পাখিরা ভোরবেলা কেন এত উৎসাহের সঙ্গে গান গায়, এ বিষয়ে কিছু তত্ত্ব রয়েছে। অনেক বছর ধরে সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি ছিল যে, সকালবেলা বাতাস সাধারণত ঠান্ডা ও শুষ্ক থাকে। এই পরিস্থিতিতে পাখির গান অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা এদের কণ্ঠস্বরের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। এতে করে এরা অন্য পুরুষ পাখিদের জানান দিতে পারে যে, সেই এলাকা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
এ ছাড়া এই তত্ত্ব দাবি করে যে, পুরুষ পাখির গান স্ত্রী পাখিদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। ভোরে নিস্তব্ধ পরিবেশে দূরে অবস্থান করা স্ত্রী পাখিও পানিগ্রাহী পুরুষ পাখিটির গানের সুর শুনতে পারে। এভাবে সঙ্গীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও এলাকার সীমানা চিহ্নিত করতে ভোরবেলার গান পাখিদের জীবনযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই তত্ত্বে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে, যা ১৯৯০–এর দশকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন। ভোরবেলা গান গায় এমন দুই প্রকারের চড়ুই প্রজাতির পাখির গান বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। তাঁরা দেখতে পান, চড়ুই পাখির গান ভোরবেলার তুলনায় দুপুরবেলা আরও বেশি বা সমান দূরত্বে পৌঁছায়। এই গবেষণা বনভূমি ও তৃণভূমিতে বসবাসকারী দুই ধরনের চড়ুই প্রজাতির পাখির ওপর পরিচালনা করে প্রতিবারই একই ফলাফল পাওয়া গেছে।
তবে বিজ্ঞানীরা আরও দেখলেন যে, চড়ুই পাখির গান ভোরবেলার সময় অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও স্পষ্ট এবং সুসংগত হয়। তাই কোনো পুরুষ পাখি সম্ভাব্য সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে বা এলাকা চিহ্নিত করতে চাইলে এটির মূল লক্ষ্য থাকে—বন্ধু বা প্রতিপক্ষদের জানানো যে, এই গানটি তারই। গায়ক পাখিটি কত দূরে রয়েছে তার চেয়ে, বড় কথা এই বার্তাটি অপরপক্ষের কাছে পৌঁছানো।
আরেকটি ভিন্ন তত্ত্ব হলো—‘ভোরের কোরাস’ তাপমাত্র, আর্দ্রতা বা বাতাসের প্রভাব নয়, বরং পুরুষ পাখির শক্তিমত্তা প্রমাণ করার সঙ্গে সম্পর্কিত। পাখির জগতে স্ত্রী পাখিদের মুগ্ধ করার এবং প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য পুরুষ পাখিদের নিজেকে শক্তিশালী ও বলবান দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন তত্ত্ব অনুযায়ী, দিনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়ে অর্থাৎ ভোরবেলা পুরুষ পাখি সবচেয়ে ভালো গান গাইতে পারলে সেটি আরও ভালো সঙ্গী পাবে এবং বলবান প্রতিযোগী বিবেচিত হবে। কারণ ভোরবেলা দেহ পূর্ণরূপে জাগ্রত হয় না। আর কোনো কিছু খাওয়ার আগেই এই গান গাওয়া হয়। তাই এর মাধ্যমে পুরুষ পাখিটির সক্ষমতা প্রকাশ পায়। এই সক্ষমতার প্রদর্শন স্ত্রী পাখির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং প্রতিপক্ষকে কঠোর বার্তা দিতে সহায়তা করে।
তথ্যসূত্র: ওয়াইল্ড বার্ডস আনলিমিটেড
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেছেন। তখনো কিছুটা অন্ধকার এবং আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা। এর মধ্যে পাখিদের কিচিরমিচির আপনার কানে ভেসে আসছে। এরা শুধু উচ্চ স্বরে চেঁচামেচি করছে এমন নয়, একটু মনোযোগ দিলেই বোঝা যায়, দিন রাতের অন্য সময়ে তুলনায় এদের কণ্ঠে বেশ উচ্ছ্বাস ও সুরেলা আওয়াজ। এই ধরনের আচরণ কিন্তু দিনের অন্য সময়ে তুলনামূলক কম শোনা যায়।
পাখিদের এই কিচিরমিচিরকে বলে ‘ভোরের কোরাস’। এটি পূর্ণ সূর্যোদয়ের আগে শোনা যায়। ভোরবেলা কিচিরমিচির করা বেশির ভাগ পাখিই কিন্তু পুরুষ!
সকালে পাখিদের কিচিরমিচির করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি তাদের প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। পুরুষ পাখিরা গান গেয়ে স্ত্রী পাখিদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে এবং নিজের এলাকার সীমানা চিহ্নিত করে। সকালে গান গাওয়ার মাধ্যমে এরা শক্তি ও সুস্বাস্থ্যের প্রদর্শন করে, এভাবে স্ত্রী পাখিদের নজর কাড়তে চায়।
এ ছাড়া সকালে গান গাওয়া পাখিদের এক ধরনের সামাজিক আচরণও বটে। নির্দিষ্ট এলাকায় আধিপত্য সম্পর্কে অন্য পাখিদের জানান দিতেও এরা সমস্বরে কিচিরমিচির করে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক শান্ত পরিবেশে গান গাওয়া এদের জন্য সহজ। কারণ সূর্য উঠে গেলে মানুষ ও অন্যান্য পশুপাখির কর্ম তৎপরতা বেড়ে যায়, তখন পরিবেশে বিভিন্ন আওয়াজ থাকে। এমন আওয়াজের মধ্যে পাখিদের কণ্ঠকে আড়াল হয়ে যায়।
সব মিলিয়ে পাখিরা সকালে গান গেয়ে এদের প্রজনন, সামাজিকীকরণ এবং এলাকা চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ করে।
পাখিরা ভোরবেলা কেন এত উৎসাহের সঙ্গে গান গায়, এ বিষয়ে কিছু তত্ত্ব রয়েছে। অনেক বছর ধরে সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি ছিল যে, সকালবেলা বাতাস সাধারণত ঠান্ডা ও শুষ্ক থাকে। এই পরিস্থিতিতে পাখির গান অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা এদের কণ্ঠস্বরের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। এতে করে এরা অন্য পুরুষ পাখিদের জানান দিতে পারে যে, সেই এলাকা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
এ ছাড়া এই তত্ত্ব দাবি করে যে, পুরুষ পাখির গান স্ত্রী পাখিদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। ভোরে নিস্তব্ধ পরিবেশে দূরে অবস্থান করা স্ত্রী পাখিও পানিগ্রাহী পুরুষ পাখিটির গানের সুর শুনতে পারে। এভাবে সঙ্গীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও এলাকার সীমানা চিহ্নিত করতে ভোরবেলার গান পাখিদের জীবনযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই তত্ত্বে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে, যা ১৯৯০–এর দশকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন। ভোরবেলা গান গায় এমন দুই প্রকারের চড়ুই প্রজাতির পাখির গান বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। তাঁরা দেখতে পান, চড়ুই পাখির গান ভোরবেলার তুলনায় দুপুরবেলা আরও বেশি বা সমান দূরত্বে পৌঁছায়। এই গবেষণা বনভূমি ও তৃণভূমিতে বসবাসকারী দুই ধরনের চড়ুই প্রজাতির পাখির ওপর পরিচালনা করে প্রতিবারই একই ফলাফল পাওয়া গেছে।
তবে বিজ্ঞানীরা আরও দেখলেন যে, চড়ুই পাখির গান ভোরবেলার সময় অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও স্পষ্ট এবং সুসংগত হয়। তাই কোনো পুরুষ পাখি সম্ভাব্য সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে বা এলাকা চিহ্নিত করতে চাইলে এটির মূল লক্ষ্য থাকে—বন্ধু বা প্রতিপক্ষদের জানানো যে, এই গানটি তারই। গায়ক পাখিটি কত দূরে রয়েছে তার চেয়ে, বড় কথা এই বার্তাটি অপরপক্ষের কাছে পৌঁছানো।
আরেকটি ভিন্ন তত্ত্ব হলো—‘ভোরের কোরাস’ তাপমাত্র, আর্দ্রতা বা বাতাসের প্রভাব নয়, বরং পুরুষ পাখির শক্তিমত্তা প্রমাণ করার সঙ্গে সম্পর্কিত। পাখির জগতে স্ত্রী পাখিদের মুগ্ধ করার এবং প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য পুরুষ পাখিদের নিজেকে শক্তিশালী ও বলবান দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন তত্ত্ব অনুযায়ী, দিনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়ে অর্থাৎ ভোরবেলা পুরুষ পাখি সবচেয়ে ভালো গান গাইতে পারলে সেটি আরও ভালো সঙ্গী পাবে এবং বলবান প্রতিযোগী বিবেচিত হবে। কারণ ভোরবেলা দেহ পূর্ণরূপে জাগ্রত হয় না। আর কোনো কিছু খাওয়ার আগেই এই গান গাওয়া হয়। তাই এর মাধ্যমে পুরুষ পাখিটির সক্ষমতা প্রকাশ পায়। এই সক্ষমতার প্রদর্শন স্ত্রী পাখির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং প্রতিপক্ষকে কঠোর বার্তা দিতে সহায়তা করে।
তথ্যসূত্র: ওয়াইল্ড বার্ডস আনলিমিটেড
আমাদের গ্রহের অভ্যন্তরে ঘটছে অসংখ্য জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে অনেক বেশি রহস্যময়। ভূপৃষ্ঠের পাতলা স্তর এবং উত্তপ্ত কেন্দ্রের মাঝখানে অবস্থিত ম্যান্টল অঞ্চলটি প্রায় ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত।
৫ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) প্রায় সাত মাস ধরে আটকে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার কারণে সুনিতা এখন বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি ভুলে গেছেন কীভাবে হাঁটতে হয়! এই চ্যালেঞ্জটি তাঁর শরীরের ওপর দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানের প্র
৭ ঘণ্টা আগেমহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়া নভোচারী বাচ উইলমোর এবং সুনি উইলিয়ামসকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে ইলন মাস্ককে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এ তথ্য জানান মাস্ক। তবে এই ঘোষণার ফলে নাসার...
১ দিন আগেচাঁদে গিয়ে অক্সিজেনের সংকটে পড়েন নভোচারীরা। এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যায় কীভাবে, সেই উদ্যোগ নিয়েছেন একদল প্রকৌশলী। তাঁরা চাইছেন, সেখানে যে অক্সিজেন পাওয়া যায়, এ জন্য একটি যন্ত্রের নকশা তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়েরা স্পেসের প্রকৌশলীরা। তাঁরা আশা করছেন
৩ দিন আগে