Ajker Patrika

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন ও গণপরিষদ নির্বাচনের বিপক্ষে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩: ৪৭
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংবিধান সংস্কার কমিশনের রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন ও গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। তারা মনে করে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা সমীচীন নয় এবং রাষ্ট্রের বিদ্যমান নাম পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। আজ রোববার দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে এ মতামত জানানো হয়েছে।

পরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) বর্তমান প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে নাগরিকতন্ত্র বা জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ করতে চাচ্ছে। সেটার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিসের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাম মেনে নিয়েছে। এটা নিয়ে কতটুকু অর্জন হবে, তা প্রশ্নের দাবি রাখে। এ বিষয়ে বিএনপি একমত নয়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রস্তাবনা। সেটি পুরোপুরি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনেকটা পুনর্লিখনের মতো। সেখানে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা হয়েছে। বিএনপি এটা সমুচিত বলে মনে করে না। এটাকে অন্য জায়গায় রাখা বা সংবিধানের তফসিল অংশে রাখার বিভিন্ন রকম সুযোগ আছে। বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় যে প্রস্তাবনা ছিল, সেটির পক্ষে।’

এনআইডি ও সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখতে মতামত দিয়েছে বিএনপি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও একই মত দেওয়া হয়েছিল।

দুদক নিয়ে ২০টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১টিতে বিএনপি সম্পূর্ণ একমত। এ ছাড়া সাত-আটটিতে মন্তব্যসহ নীতিগতভাবে একমত এবং ১টিতে মন্তব্যসহ ভিন্নমত জানিয়েছে দলটি। এ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আইন সংশোধন করার প্রয়োজন হওয়ায় এতে একমত নই আমরা।

প্রশাসন সংস্কার কমিশনের দেওয়া ২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে বিএনপি ১৩টিতে একমত। বাকিগুলোয় বিস্তারিত আলোচনা করে এক জায়গায় আসা যাবে বলে জানিয়েছে দলটি। সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসএসবি বাতিল করে মন্ত্রিপরিষদ কমিটির কাছে ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবে দ্বিমত করেছে বিএনপি। কারণ হিসেবে সালাহউদ্দিন বলেন, এতে প্রশাসনে রাজনীতিকরণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ২৭টি প্রস্তাবের মধ্যে অধিকাংশ সংবিধান সংশোধন-সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। কয়েকটি প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে বলে মনে করে বিএনপি। এনআইডি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা উচিত বলে মনে করে তারা। নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতাও ইসির কাছে থাকা উচিত বলে মনে করে বিএনপি। একই দাবিতে সংস্কার কমিশনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও।

সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘তারা পুরোপুরি লেজিটিমেট। তারপরও এটা নিয়ে যদি লেজিটিমেসির অভাব দেখা দেয়, সংশোধনের সময় সেটা যুক্ত করা যাবে।’

সংবিধান সংশোধনে গণপরিষদ দরকার আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা নতুন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সংবিধান রচনা করতে গণপরিষদ গঠিত হয়। আমাদের তো ৫৩ বছরের পুরোনো রাষ্ট্র এবং একটি সংবিধান রয়েছে। সেটাকে আমরা ব্যাপক সংশোধন করলেই হয়ে যাচ্ছে। তাই নতুন করে আর গণপরিষদ করার প্রয়োজন নেই।

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার বিষয়ে আমরা আগেই ৩১ দফার প্রস্তাব দিয়েছি। এটা সবাই গ্রহণ করেছে। উচ্চকক্ষের সদস্যসংখ্যা আমরা ১০০ করার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে তারা কীভাবে মনোনীত হবেন, সেটা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে নির্ধারণ করা যাবে।

এ ছাড়া নারীদের আরও বেশি ক্ষমতায়নের জন্য তাঁদের যে ৫০টি আসন রয়েছে, সেটাকে আমরা ১০০ করার প্রস্তাব করেছি। সেটা বিদ্যমান দলীয় মনোনয়ন পদ্ধতিতে করার প্রস্তাব বিএনপি করেছে বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত