Ajker Patrika

বিএনপি কীভাবে প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করল, ইসির কাছে জানতে চান কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪৬
বিএনপি কীভাবে প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করল, ইসির কাছে জানতে চান কাদের

গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে রাজধানীর প্রেসক্লাবসহ সারা দেশে মানববন্ধন করে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররমে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন (ইসি) অনুমতি না দেওয়ায় দলটি কর্মসূচি থেকে সরে আসে। বিএনপি কীভাবে সেদিন মানববন্ধন করল, এটি ন্যায়বিচার হলো কি না ইসির কাছে জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এ যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিশাল সমাবেশ আয়োজন করতে চিঠি দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধ রক্ষা করেছি। সমাবেশ করেনি আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচন পণ্ড করার জন্য, নাশকতা করার চেষ্টা করছে তাদের কীভাবে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার অনুমতি দিল? নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন, এটা কি ন্যায়বিচার হলো?’ 

২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ সরকার দল পণ্ড করেছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কলাম প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘এসব বুদ্ধিজীবী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে এত বড় ডাহা মিথ্যা কথা লিখতে পারে! পুলিশের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলার কথা দেখলাম না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এসব আঁতেলরা বিদেশিদের ভুল পথে পরিচালিত করে। কিসের বিনিময়ে বাস্তব অবস্থা আড়াল করে জানি না। তারা আজকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের নিবন্ধ কীভাবে ছাপা হয় জানি না।’ 

নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেন কাদের। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, সেই ব্যাপারে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের অবদান রাখতে হবে। আপনাদেরকেও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চ্যালেঞ্জিং সময়, এই সময় আমাদের অতিক্রম করতে হবে। স্বাধীনতার আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সংগ্রামের বিকল্প নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সবাই মনোনয়ন পাননি। এটার তো একটা সংখ্যা আছে, তার বাইরে দেওয়া যায় না। এতে অনেকের মনে দুঃখ আছে। তারপরও আমাদের নেত্রী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিযোগিতা করার একটা সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগের অপব্যবহারটা যেন কেউ না করেন। এখানে জোর-জবরদস্তি করবেন, নৌকার সঙ্গে মল্ল যুদ্ধ করবেন, সেটা হবে না। শৃঙ্খলার সঙ্গে থাকতে হবে। প্রতিযোগী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পায়—এমন কোনো কাজ করবেন না, করতে পারবেন না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, কেউ গায়ের জোর খাটাবেন না। আমরা এটা সহ্য করব না। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে, জনগণ যা চায় তা-ই হবে।’ 

নির্বাচন নিয়ে বদনামের ভাগীদার হতে চাই না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এমন একটা নির্বাচন করব, সারা বিশ্ব যার প্রশংসা করবে। সে রকম নির্বাচন করতে চাই। অতীতে অনেক কথা, অনেকেই বলেছেন। নির্বাচন গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা, কোথাও ত্রুটিমুক্ত নয়। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এবার আরও ভালো একটা নির্বাচন করব, উপহার দেব। এটাই আমাদের শপথ, অঙ্গীকার।’

আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, অবশ্যই বিজয়ী হবে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘যাঁরা নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগে মূল্যায়ন আছে। আমরা নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করি। অন্তত শেখ হাসিনা যত দিন আছে, তিনি খুঁজে খুঁজে কর্মীদের খবর নেন, বঞ্চিতদের সময়মতো মূল্যায়ন করেন। হা-হুতাশ করার কোনো দরকার নেই। দলের সঙ্গে লেগে থাকুন, মূল্যায়ন হবে।’ 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হামলা করলে মামলা হবে। মামলা হলে গ্রেপ্তার হবে, সাজা হবে। ছাড়াছাড়ি নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে না আসে। তাহলে তো জোর করে আর নির্বাচনে আনা যায় না। পৃথিবীর কোথায় আছে যে ইনকাম্বেন্ট সরকার হঠাৎ ত্যাগ করে নির্বাচন দেয়? আমাদের দেশে কেন হবে? তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়। তারা মৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। সারা বিশ্বে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, এখানেও সেই একই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। ২০০৯ সালের পরে শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছেন। এখন যদি তারা নির্বাচনে না আসে, তাহলে আমরা কী করতে পারি?’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে দলে দলে বৈঠক করব। এখন কি জনসভা ডাক দিয়ে আমরা এগুলো করব? আলোচনার জন্য একটি পরিবেশ লাগে। এই সব আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। এটা তো জনসভা ডেকে হবে না, গণমাধ্যম ডেকে হবে না। আলোচনা এভাবেই হয়, অতীতেও হয়েছে। আলোচনা হয়েছে, ১৪ দল হয়েছে, মহাজট হয়েছে এবং আসন সমঝোতাও হয়েছে। প্রক্রিয়াটা এমনই। আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে সব সমাধান হয়ে যাবে। এটা তো আর ঢাকঢোল পিটিয়ে হবে না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনবিরোধী শক্তি বিএনপির নেতৃত্বে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, জনগণকে নিয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে। আমরা সতর্ক থাকব। কারণ, এই নির্বাচনটা আমাদের সংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড: স্বল্পমূল্যের পণ্যবঞ্চিত দেড় কোটির বেশি দরিদ্র মানুষ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতারা দয়া করে জাতীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না: মির্জা ফখরুল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

একটি মহল আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহলটির উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেছেন, তারা ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, এখন জনগণ যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়, তারা যেন সেই নির্বাচনের বিরোধিতা না করে।

আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলছি যে, আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই এবং আমরা ২০২৬ সালের যে ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা নির্বাচন চাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই নির্বাচনকে বিলম্বিত করবার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিন গণভোট হবে সে কথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। সেখানে দুটো ব্যালট থাকবে একটি গণভোটের জন্য আরেকটি হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। সুতরাং এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত কেউ থাকবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে যারা এই নিয়ে গোলমাল করছেন, রাস্তায় নেমেছেন তাদেরকে অনুরোধ করব, দয়া করে জনগণকে অনেক বিভ্রান্ত করে অনেক কিছু করেছেন। সেগুলো আমি বলতে চাই না। এক সময় আপনারা এই দেশের সকল মানুষের চাহিদা ছিল পাকিস্তান স্বাধীন.... আপনারা সেটা বিরোধিতা করেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। আজকে দয়া করে জনগণ যে নির্বাচন চায়, সে নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এ দেশের মানুষ যা বিট্রেয়ার, তাদের ক্ষমা করে না, তারা ক্ষমা পায় না, সুতরাং এখান থেকে সরে আসুন, নির্বাচন করুন। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই আমরা সকলে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড: স্বল্পমূল্যের পণ্যবঞ্চিত দেড় কোটির বেশি দরিদ্র মানুষ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে, বিএনপির হুঁশিয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৪৪
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদে নতুন করে ‘মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব’ চাপিয়ে দেওয়া হলে তা জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া জানান।

দীর্ঘ লিখিত বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল জুলাই সনদের অনেক অংশে ঐকমত্য পোষণ করেছে। কিন্তু যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল, তা উপেক্ষা করে এবং নতুন ‘অপ্রাসঙ্গিক বিষয়’ সংযোজন করে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদে উল্লিখিত যে সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আইন, বিধিবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করা দরকার, সরকার তা অধ্যাদেশ জারি ও বিধিবিধান/সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং যে সকল সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো অবিলম্বে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে আমরাসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছি। এ ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য আমরা গণভোটেও সম্মত হয়েছি।’

‘কিন্তু যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং যেসব প্রসঙ্গ দীর্ঘ আলোচনায় আসেনি, তা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ ‘‘অগ্রহণযোগ্য’’ বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, এই সকল সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনা হয়।

রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে বিএনপি এর আগেই ২০২৩ সালে ৩১ দফা, ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং ২০১৭ সালে ভিশন–২০৩০ ঘোষণা করেছিল বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অতএব, রাষ্ট্রকাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোকে বিএনপি স্বাগত জানায় এবং সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দেয়। ছয়টি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বিএনপির ধারাবাহিক আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের সময় চূড়ান্ত কপি রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরে মুদ্রিত কপিতে দেখা যায়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া কয়েকটি দফা অগোচরে পরিবর্তন করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অফিসে টাঙানোর বিধান বিলুপ্তির বিষয়ে প্রায় সব দল সম্মত হয়েছিল, কিন্তু তা বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ ও সংশ্লিষ্ট তফসিলসমূহ বিলুপ্তির বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারকে যে সুপারিশ পাঠিয়েছে, তাতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারি করার প্রস্তাব রয়েছে। সরকারের এমন আদেশ জারির এখতিয়ার নেই। সংবিধান অনুযায়ী ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত, তাই তা জারি করার ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রপতির।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি দফা গণভোটে তোলা হবে। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এভাবে একপেশে প্রস্তাব জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে তা হবে জবরদস্তিমূলক, যা দীর্ঘ আলোচনাকে অর্থহীন প্রমাণ করবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি, কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবে নির্বাচনের আগে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন সময়সাপেক্ষ, অযৌক্তিক ও ব্যয়সাপেক্ষ। একই আয়োজনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়াই যুক্তিযুক্ত।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ায় ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাবকেও ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের দায়িত্ব তার নয়। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাতেও বিষয়টি ছিল না।

ফখরুল আরও বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ না করলে প্রস্তাবিত বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ‘হাস্যকর ও অগণতান্ত্রিক’। সংসদের অনুমোদন ও রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারে বিএনপি সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এবারও দলটি সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সব আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি অতীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভিশন–২০৩০ এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে সংস্কারের আন্তরিকতা প্রমাণ করেছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, জাতির প্রত্যাশা পূরণে এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী এবং যারা দীর্ঘ এই সংগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব; প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা আমাদের সকলের কাম্য এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে জাতির অভিপ্রায় অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে—সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং উক্ত জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।’

ফখরুল বলেন, ‘গত প্রায় এক বছর ধরে আমাদের দল ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিগণ অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশন এবং অতপর ঐকমত্য কমিশনের সকল সভা, আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমাদের দলের পক্ষ থেকে অনেক বিষয়েই ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবেই চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের অবস্থান গ্রহণ ও প্রকাশে আমরা দায়বদ্ধ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড: স্বল্পমূল্যের পণ্যবঞ্চিত দেড় কোটির বেশি দরিদ্র মানুষ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ মুজিবের ছবি টাঙানোর বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব নেই জুলাই সনদে, ক্ষোভ বিএনপির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শেখ মুজিবের ছবি টাঙানোর বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব নেই জুলাই সনদে, ক্ষোভ বিএনপির

সরকারি-বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি হাতে পাওয়ার পর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা আমাদের অগোচরে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে।’

‘যেমন—

ক. মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি অফিসে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান [অনুচ্ছেদ ৪ (ক)] বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও প্রায় সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে সম্মতিপত্র দিয়েছে।

খ. সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তফসিল) পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করলেও অগোচরে সেটি চূড়ান্ত সনদে সংশোধনী আনা হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) জুলাই সনদ গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। গৃহীত সনদে নোট অব ডিসেন্টের অংশে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ‘ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে’।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সকল অনুষ্ঠান বিটিভিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে, যা সমস্ত জাতি দেখেছে। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত’ সনদের অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্ত উক্ত দিনে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি সামনে উপস্থাপন করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড: স্বল্পমূল্যের পণ্যবঞ্চিত দেড় কোটির বেশি দরিদ্র মানুষ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রতারণার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে এই সরকার: মান্না

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ২১
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ড. ইউনূস দুনিয়াব্যাপী পরিচিত। তিনি ভালো একজন পারফরমার। কিন্তু বাংলাদেশে এসে দেখা গেল, তিনি কিছুই করতে পারলেন না। পুরো দেশ এখন জটিলতার মধ্যে গেছে। মনে হচ্ছে, একটা অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। কয়েক দিন আগে বিএনপি বলেছে, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। আবার এনসিপিও বলেছে, সরকার নাকি তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। একটা প্রতারণার (জন্য বিচারের) কাঠগড়ায় এই সরকার দাঁড়িয়ে গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘রাজনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক ঐক্য এই সভার আয়োজন করে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে যে আট মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চলল, এরপরে সংস্কার এখন কোথায় আছে? আমি যদি বলি—এটা যে লাউ, সেই কদ—কোনো পরিবর্তন হয়নি; যে ঐকমত্যের কথা বলা হয়েছে, সেই ঐকমত্যের কিছুই হয়নি।’

সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমি আশা করব, সরকার কোনো একটি বিশেষ দলের দিকে ঝুঁকে পড়বে না। গতকাল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে গেলে অসুবিধা নেই। তাদের গণভোট আগে হতেই হবে। কিন্তু গণভোট আগে হওয়া আর গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে একই দিনে হওয়ার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্যগত পার্থক্য নেই। আমরা গণভোটের মধ্যে যা কিছু অর্জন করতে চাচ্ছি, সেটা আগে হলে যা অর্জন করব, জাতীয় নির্বাচনের দিনে হলেও একই জিনিস অর্জন করব।’

তিনি বলেন, ‘“কেবল আমার রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হলো, আমরা যা বললাম তা-ই হলো”—এ রকম একটি অবস্থান থেকে গণভোটের বিষয় নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, এটা করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এটা যাঁরা করছেন, বোঝা যাচ্ছে, মূল বিষয়টা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে—হয় নির্বাচন পেছাতে হবে অথবা এখানে পরিস্থিতির মধ্যে যে জটিলতা, সেটাকে আরও গভীর করতে হবে। অথবা বার্গেনিং করতে হবে।’

সভায় বিএনপি প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপির জন্ম হয়েছিল “হ্যাঁ” ভোটের মাধ্যমে। এবার “না” ভোটে স্ট্রিক্ট থাকলে দলটির মৃত্যু হবে “না” ভোটের মধ্য দিয়ে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। তাই আমরা বলব, “না” ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের কবর রচনা করবেন না।’

আলোচনা সভায় এক বছর ধরে তরুণদের ‘ছোট করে দেখার প্রবণতা চলছে’ বলে অভিযোগ করেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ ২৫ বছরের নিচে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে আমরা যদি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা হবে। আমাদের সামনে খুব সুন্দর একটা সুযোগ এসেছে—যেখানে তরুণরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তাঁরা চিন্তা করছেন—দেশের জন্য কীভাবে তাঁরা অবদান রাখবেন, কীভাবে তাঁরা দেশের হয়ে কাজ করবেন।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড: স্বল্পমূল্যের পণ্যবঞ্চিত দেড় কোটির বেশি দরিদ্র মানুষ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত