
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।


২৭০ পঞ্জিকা দিবস পর গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে— এটি অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। সংসদে পাস বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই আইনে পরিণত হয়। সংবিধানে স্বয়ংক্রিয় অন্তর্ভুক্তির কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
১২ ঘণ্টা আগে
সরকারি-বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান
১৪ ঘণ্টা আগে
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে যে আট মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চলল, এরপরে সংস্কার এখন কোথায় আছে? আমি যদি বলি—এটা যে লাউ, সেই কদু—কোনো পরিবর্তন হয়নি; যে ঐকমত্যের কথা বলা হয়েছে, সেই ঐকমত্যের কিছুই হয়নি।’
১৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যেমন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা ও ভূরাজনীতি
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদে নতুন করে ‘মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব’ চাপিয়ে দেওয়া হলে তা জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া জানান।
দীর্ঘ লিখিত বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল জুলাই সনদের অনেক অংশে ঐকমত্য পোষণ করেছে। কিন্তু যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল, তা উপেক্ষা করে এবং নতুন ‘অপ্রাসঙ্গিক বিষয়’ সংযোজন করে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদে উল্লিখিত যে সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আইন, বিধিবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করা দরকার, সরকার তা অধ্যাদেশ জারি ও বিধিবিধান/সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং যে সকল সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো অবিলম্বে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে আমরাসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছি। এ ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য আমরা গণভোটেও সম্মত হয়েছি।’
‘কিন্তু যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং যেসব প্রসঙ্গ দীর্ঘ আলোচনায় আসেনি, তা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ ‘‘অগ্রহণযোগ্য’’ বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, এই সকল সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনা হয়।
রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে বিএনপি এর আগেই ২০২৩ সালে ৩১ দফা, ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং ২০১৭ সালে ভিশন–২০৩০ ঘোষণা করেছিল বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অতএব, রাষ্ট্রকাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোকে বিএনপি স্বাগত জানায় এবং সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দেয়। ছয়টি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বিএনপির ধারাবাহিক আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের সময় চূড়ান্ত কপি রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরে মুদ্রিত কপিতে দেখা যায়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া কয়েকটি দফা অগোচরে পরিবর্তন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অফিসে টাঙানোর বিধান বিলুপ্তির বিষয়ে প্রায় সব দল সম্মত হয়েছিল, কিন্তু তা বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ ও সংশ্লিষ্ট তফসিলসমূহ বিলুপ্তির বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারকে যে সুপারিশ পাঠিয়েছে, তাতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারি করার প্রস্তাব রয়েছে। সরকারের এমন আদেশ জারির এখতিয়ার নেই। সংবিধান অনুযায়ী ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত, তাই তা জারি করার ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রপতির।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি দফা গণভোটে তোলা হবে। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এভাবে একপেশে প্রস্তাব জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে তা হবে জবরদস্তিমূলক, যা দীর্ঘ আলোচনাকে অর্থহীন প্রমাণ করবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি, কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবে নির্বাচনের আগে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন সময়সাপেক্ষ, অযৌক্তিক ও ব্যয়সাপেক্ষ। একই আয়োজনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ায় ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাবকেও ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের দায়িত্ব তার নয়। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাতেও বিষয়টি ছিল না।
ফখরুল আরও বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ না করলে প্রস্তাবিত বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ‘হাস্যকর ও অগণতান্ত্রিক’। সংসদের অনুমোদন ও রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারে বিএনপি সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এবারও দলটি সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সব আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি অতীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভিশন–২০৩০ এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে সংস্কারের আন্তরিকতা প্রমাণ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, জাতির প্রত্যাশা পূরণে এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী এবং যারা দীর্ঘ এই সংগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব; প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা আমাদের সকলের কাম্য এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে জাতির অভিপ্রায় অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে—সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং উক্ত জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।’
ফখরুল বলেন, ‘গত প্রায় এক বছর ধরে আমাদের দল ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিগণ অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশন এবং অতপর ঐকমত্য কমিশনের সকল সভা, আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমাদের দলের পক্ষ থেকে অনেক বিষয়েই ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবেই চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের অবস্থান গ্রহণ ও প্রকাশে আমরা দায়বদ্ধ।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদে নতুন করে ‘মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব’ চাপিয়ে দেওয়া হলে তা জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া জানান।
দীর্ঘ লিখিত বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল জুলাই সনদের অনেক অংশে ঐকমত্য পোষণ করেছে। কিন্তু যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল, তা উপেক্ষা করে এবং নতুন ‘অপ্রাসঙ্গিক বিষয়’ সংযোজন করে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদে উল্লিখিত যে সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আইন, বিধিবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করা দরকার, সরকার তা অধ্যাদেশ জারি ও বিধিবিধান/সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং যে সকল সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো অবিলম্বে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে আমরাসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছি। এ ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য আমরা গণভোটেও সম্মত হয়েছি।’
‘কিন্তু যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং যেসব প্রসঙ্গ দীর্ঘ আলোচনায় আসেনি, তা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ ‘‘অগ্রহণযোগ্য’’ বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, এই সকল সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনা হয়।
রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে বিএনপি এর আগেই ২০২৩ সালে ৩১ দফা, ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং ২০১৭ সালে ভিশন–২০৩০ ঘোষণা করেছিল বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অতএব, রাষ্ট্রকাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোকে বিএনপি স্বাগত জানায় এবং সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দেয়। ছয়টি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বিএনপির ধারাবাহিক আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের সময় চূড়ান্ত কপি রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরে মুদ্রিত কপিতে দেখা যায়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া কয়েকটি দফা অগোচরে পরিবর্তন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অফিসে টাঙানোর বিধান বিলুপ্তির বিষয়ে প্রায় সব দল সম্মত হয়েছিল, কিন্তু তা বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ ও সংশ্লিষ্ট তফসিলসমূহ বিলুপ্তির বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারকে যে সুপারিশ পাঠিয়েছে, তাতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারি করার প্রস্তাব রয়েছে। সরকারের এমন আদেশ জারির এখতিয়ার নেই। সংবিধান অনুযায়ী ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত, তাই তা জারি করার ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রপতির।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি দফা গণভোটে তোলা হবে। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এভাবে একপেশে প্রস্তাব জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে তা হবে জবরদস্তিমূলক, যা দীর্ঘ আলোচনাকে অর্থহীন প্রমাণ করবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি, কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবে নির্বাচনের আগে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন সময়সাপেক্ষ, অযৌক্তিক ও ব্যয়সাপেক্ষ। একই আয়োজনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ায় ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাবকেও ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের দায়িত্ব তার নয়। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাতেও বিষয়টি ছিল না।
ফখরুল আরও বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ না করলে প্রস্তাবিত বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ‘হাস্যকর ও অগণতান্ত্রিক’। সংসদের অনুমোদন ও রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারে বিএনপি সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এবারও দলটি সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সব আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি অতীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভিশন–২০৩০ এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে সংস্কারের আন্তরিকতা প্রমাণ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, জাতির প্রত্যাশা পূরণে এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী এবং যারা দীর্ঘ এই সংগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব; প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা আমাদের সকলের কাম্য এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে জাতির অভিপ্রায় অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে—সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং উক্ত জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।’
ফখরুল বলেন, ‘গত প্রায় এক বছর ধরে আমাদের দল ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিগণ অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশন এবং অতপর ঐকমত্য কমিশনের সকল সভা, আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমাদের দলের পক্ষ থেকে অনেক বিষয়েই ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবেই চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের অবস্থান গ্রহণ ও প্রকাশে আমরা দায়বদ্ধ।’


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
সরকারি-বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান
১৪ ঘণ্টা আগে
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে যে আট মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চলল, এরপরে সংস্কার এখন কোথায় আছে? আমি যদি বলি—এটা যে লাউ, সেই কদু—কোনো পরিবর্তন হয়নি; যে ঐকমত্যের কথা বলা হয়েছে, সেই ঐকমত্যের কিছুই হয়নি।’
১৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যেমন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা ও ভূরাজনীতি
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সরকারি-বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি হাতে পাওয়ার পর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা আমাদের অগোচরে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে।’
‘যেমন—
ক. মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি অফিসে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান [অনুচ্ছেদ ৪ (ক)] বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও প্রায় সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে সম্মতিপত্র দিয়েছে।
খ. সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তফসিল) পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করলেও অগোচরে সেটি চূড়ান্ত সনদে সংশোধনী আনা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) জুলাই সনদ গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। গৃহীত সনদে নোট অব ডিসেন্টের অংশে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ‘ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে’।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সকল অনুষ্ঠান বিটিভিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে, যা সমস্ত জাতি দেখেছে। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত’ সনদের অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্ত উক্ত দিনে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি সামনে উপস্থাপন করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি-বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি হাতে পাওয়ার পর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা আমাদের অগোচরে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে।’
‘যেমন—
ক. মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি অফিসে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান [অনুচ্ছেদ ৪ (ক)] বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও প্রায় সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে সম্মতিপত্র দিয়েছে।
খ. সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তফসিল) পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করলেও অগোচরে সেটি চূড়ান্ত সনদে সংশোধনী আনা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) জুলাই সনদ গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। গৃহীত সনদে নোট অব ডিসেন্টের অংশে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ‘ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে’।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সকল অনুষ্ঠান বিটিভিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে, যা সমস্ত জাতি দেখেছে। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত’ সনদের অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্ত উক্ত দিনে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি সামনে উপস্থাপন করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
২৭০ পঞ্জিকা দিবস পর গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে— এটি অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। সংসদে পাস বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই আইনে পরিণত হয়। সংবিধানে স্বয়ংক্রিয় অন্তর্ভুক্তির কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
১২ ঘণ্টা আগে
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে যে আট মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চলল, এরপরে সংস্কার এখন কোথায় আছে? আমি যদি বলি—এটা যে লাউ, সেই কদু—কোনো পরিবর্তন হয়নি; যে ঐকমত্যের কথা বলা হয়েছে, সেই ঐকমত্যের কিছুই হয়নি।’
১৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যেমন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা ও ভূরাজনীতি
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ড. ইউনূস দুনিয়াব্যাপী পরিচিত। তিনি ভালো একজন পারফরমার। কিন্তু বাংলাদেশে এসে দেখা গেল, তিনি কিছুই করতে পারলেন না। পুরো দেশ এখন জটিলতার মধ্যে গেছে। মনে হচ্ছে, একটা অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। কয়েক দিন আগে বিএনপি বলেছে, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। আবার এনসিপিও বলেছে, সরকার নাকি তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। একটা প্রতারণার (জন্য বিচারের) কাঠগড়ায় এই সরকার দাঁড়িয়ে গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘রাজনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক ঐক্য এই সভার আয়োজন করে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে যে আট মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চলল, এরপরে সংস্কার এখন কোথায় আছে? আমি যদি বলি—এটা যে লাউ, সেই কদ—কোনো পরিবর্তন হয়নি; যে ঐকমত্যের কথা বলা হয়েছে, সেই ঐকমত্যের কিছুই হয়নি।’
সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমি আশা করব, সরকার কোনো একটি বিশেষ দলের দিকে ঝুঁকে পড়বে না। গতকাল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে গেলে অসুবিধা নেই। তাদের গণভোট আগে হতেই হবে। কিন্তু গণভোট আগে হওয়া আর গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে একই দিনে হওয়ার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্যগত পার্থক্য নেই। আমরা গণভোটের মধ্যে যা কিছু অর্জন করতে চাচ্ছি, সেটা আগে হলে যা অর্জন করব, জাতীয় নির্বাচনের দিনে হলেও একই জিনিস অর্জন করব।’
তিনি বলেন, ‘“কেবল আমার রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হলো, আমরা যা বললাম তা-ই হলো”—এ রকম একটি অবস্থান থেকে গণভোটের বিষয় নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, এটা করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এটা যাঁরা করছেন, বোঝা যাচ্ছে, মূল বিষয়টা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে—হয় নির্বাচন পেছাতে হবে অথবা এখানে পরিস্থিতির মধ্যে যে জটিলতা, সেটাকে আরও গভীর করতে হবে। অথবা বার্গেনিং করতে হবে।’
সভায় বিএনপি প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপির জন্ম হয়েছিল “হ্যাঁ” ভোটের মাধ্যমে। এবার “না” ভোটে স্ট্রিক্ট থাকলে দলটির মৃত্যু হবে “না” ভোটের মধ্য দিয়ে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। তাই আমরা বলব, “না” ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের কবর রচনা করবেন না।’
আলোচনা সভায় এক বছর ধরে তরুণদের ‘ছোট করে দেখার প্রবণতা চলছে’ বলে অভিযোগ করেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ ২৫ বছরের নিচে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে আমরা যদি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা হবে। আমাদের সামনে খুব সুন্দর একটা সুযোগ এসেছে—যেখানে তরুণরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তাঁরা চিন্তা করছেন—দেশের জন্য কীভাবে তাঁরা অবদান রাখবেন, কীভাবে তাঁরা দেশের হয়ে কাজ করবেন।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ড. ইউনূস দুনিয়াব্যাপী পরিচিত। তিনি ভালো একজন পারফরমার। কিন্তু বাংলাদেশে এসে দেখা গেল, তিনি কিছুই করতে পারলেন না। পুরো দেশ এখন জটিলতার মধ্যে গেছে। মনে হচ্ছে, একটা অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। কয়েক দিন আগে বিএনপি বলেছে, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। আবার এনসিপিও বলেছে, সরকার নাকি তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। একটা প্রতারণার (জন্য বিচারের) কাঠগড়ায় এই সরকার দাঁড়িয়ে গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘রাজনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক ঐক্য এই সভার আয়োজন করে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে যে আট মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চলল, এরপরে সংস্কার এখন কোথায় আছে? আমি যদি বলি—এটা যে লাউ, সেই কদ—কোনো পরিবর্তন হয়নি; যে ঐকমত্যের কথা বলা হয়েছে, সেই ঐকমত্যের কিছুই হয়নি।’
সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমি আশা করব, সরকার কোনো একটি বিশেষ দলের দিকে ঝুঁকে পড়বে না। গতকাল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে গেলে অসুবিধা নেই। তাদের গণভোট আগে হতেই হবে। কিন্তু গণভোট আগে হওয়া আর গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে একই দিনে হওয়ার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্যগত পার্থক্য নেই। আমরা গণভোটের মধ্যে যা কিছু অর্জন করতে চাচ্ছি, সেটা আগে হলে যা অর্জন করব, জাতীয় নির্বাচনের দিনে হলেও একই জিনিস অর্জন করব।’
তিনি বলেন, ‘“কেবল আমার রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হলো, আমরা যা বললাম তা-ই হলো”—এ রকম একটি অবস্থান থেকে গণভোটের বিষয় নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, এটা করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এটা যাঁরা করছেন, বোঝা যাচ্ছে, মূল বিষয়টা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে—হয় নির্বাচন পেছাতে হবে অথবা এখানে পরিস্থিতির মধ্যে যে জটিলতা, সেটাকে আরও গভীর করতে হবে। অথবা বার্গেনিং করতে হবে।’
সভায় বিএনপি প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপির জন্ম হয়েছিল “হ্যাঁ” ভোটের মাধ্যমে। এবার “না” ভোটে স্ট্রিক্ট থাকলে দলটির মৃত্যু হবে “না” ভোটের মধ্য দিয়ে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। তাই আমরা বলব, “না” ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের কবর রচনা করবেন না।’
আলোচনা সভায় এক বছর ধরে তরুণদের ‘ছোট করে দেখার প্রবণতা চলছে’ বলে অভিযোগ করেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ ২৫ বছরের নিচে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে আমরা যদি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা হবে। আমাদের সামনে খুব সুন্দর একটা সুযোগ এসেছে—যেখানে তরুণরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তাঁরা চিন্তা করছেন—দেশের জন্য কীভাবে তাঁরা অবদান রাখবেন, কীভাবে তাঁরা দেশের হয়ে কাজ করবেন।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
২৭০ পঞ্জিকা দিবস পর গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে— এটি অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। সংসদে পাস বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই আইনে পরিণত হয়। সংবিধানে স্বয়ংক্রিয় অন্তর্ভুক্তির কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
১২ ঘণ্টা আগে
সরকারি-বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান
১৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যেমন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা ও ভূরাজনীতি
১৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যেমন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা ও ভূরাজনীতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগে ‘লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ’ ব্যানারে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তামজিদ হায়দার। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এ প্রতিবাদের আয়োজন করে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেন, ‘ডক্টর ইউনূসের সরকার জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তিনি মার্কিন দালালি করছেন এবং আমেরিকার কথায় দেশ চালাতে চান। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনো সরকারই বাংলাদেশে টিকে থাকতে পারেনি, আপনি পারবেন না। জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দিনও আপস করব না।’
তামজিদ হায়দার বলেন, ‘দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশেরই জনবলের মাধ্যমে এই বন্দরকে পরিচালনা ও উন্নত করতে হবে। জনগণনির্ভর অর্থনীতি তৈরির জন্য জাতীয় পুঁজির বিকাশ ঘটাতে হবে। অথচ ড. ইউনূস এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করতে চাইছেন; যেখানে বলা হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব খাতে যুক্ত হবে, যা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।’
ইউনূসের সরকার ব্যর্থ উল্লেখ করে তামজিদ হায়দার বলেন, ‘এই সরকার দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, মব থামাতে পারেনি ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে মদদ দিয়েছে। এমন ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না।’ এ সময় দেশকে বিশৃঙ্খলা থেকে রেহাই দিতে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক অন্তু অরিন্দম বলেন, বিদেশিদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দরকে ইজারা মূলত কাগজপত্রে থাকে, কিন্তু মূল বিষয় থাকে দাসত্ব। সাম্রাজ্যবাদ নীতিতে শ্রম ও মেধা বিক্রির পাঁয়তারা করছে এই সরকার।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অর্নি আঞ্জুম, ঢাকা মহানগর নেতা তিলোত্তমা ইতি প্রমুখ।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যেমন চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা ও ভূরাজনীতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগে ‘লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ’ ব্যানারে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তামজিদ হায়দার। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এ প্রতিবাদের আয়োজন করে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার বলেন, ‘ডক্টর ইউনূসের সরকার জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তিনি মার্কিন দালালি করছেন এবং আমেরিকার কথায় দেশ চালাতে চান। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনো সরকারই বাংলাদেশে টিকে থাকতে পারেনি, আপনি পারবেন না। জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক দিনও আপস করব না।’
তামজিদ হায়দার বলেন, ‘দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশেরই জনবলের মাধ্যমে এই বন্দরকে পরিচালনা ও উন্নত করতে হবে। জনগণনির্ভর অর্থনীতি তৈরির জন্য জাতীয় পুঁজির বিকাশ ঘটাতে হবে। অথচ ড. ইউনূস এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করতে চাইছেন; যেখানে বলা হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব খাতে যুক্ত হবে, যা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।’
ইউনূসের সরকার ব্যর্থ উল্লেখ করে তামজিদ হায়দার বলেন, ‘এই সরকার দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, মব থামাতে পারেনি ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে মদদ দিয়েছে। এমন ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না।’ এ সময় দেশকে বিশৃঙ্খলা থেকে রেহাই দিতে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক অন্তু অরিন্দম বলেন, বিদেশিদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দরকে ইজারা মূলত কাগজপত্রে থাকে, কিন্তু মূল বিষয় থাকে দাসত্ব। সাম্রাজ্যবাদ নীতিতে শ্রম ও মেধা বিক্রির পাঁয়তারা করছে এই সরকার।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অর্নি আঞ্জুম, ঢাকা মহানগর নেতা তিলোত্তমা ইতি প্রমুখ।


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
২৭০ পঞ্জিকা দিবস পর গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে— এটি অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। সংসদে পাস বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই আইনে পরিণত হয়। সংবিধানে স্বয়ংক্রিয় অন্তর্ভুক্তির কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
১২ ঘণ্টা আগে
সরকারি-বেসরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান
১৪ ঘণ্টা আগে
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে যে আট মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চলল, এরপরে সংস্কার এখন কোথায় আছে? আমি যদি বলি—এটা যে লাউ, সেই কদু—কোনো পরিবর্তন হয়নি; যে ঐকমত্যের কথা বলা হয়েছে, সেই ঐকমত্যের কিছুই হয়নি।’
১৪ ঘণ্টা আগে