Ajker Patrika

জঙ্গি সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীরের’ ৬ সদস্যের সন্ধান চায় এটিইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৯: ৫০
জঙ্গি সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীরের’ ৬ সদস্যের সন্ধান চায় এটিইউ

দেশে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’ ছয় সদস্যের তথ্যের জন্য ছবি প্রকাশ করেছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউনিটের মিডিয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসলাম খান।

ছয় সদস্য হলেন মো. আবু জায়িদ (৩৫ থেকে ৪০ বছর), শিবলি আহম্মেদ (৪০ থেকে ৪৫ বছর), মো. ইমাদুল আমিন (৪০ থেকে ৪৩ বছর), মো. ফয়সাল (২২ থেকে ২৬ বছর), আব্দুর রহমান (২৫ থেকে ৩০ বছর), হাফিজ আল রাজি (৩০ থেকে ৩৫ বছর)। তবে তাঁদের ঠিকানা ও বাবা-মায়ের নাম-পরিচয় অজ্ঞাত।

মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, ‘দেশে বেশ কিছু উগ্রবাদী ও জঙ্গিসংশ্লিষ্ট সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে ‘হিযবুত তাহরীর’ একটি। ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সরকার। সংগঠনটির কিছু সক্রিয় সদস্য ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে অনলাইনে একটি সমাবেশ করেন। এই সমাবেশে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন এই ছয়জন।’

‘অনলাইন সমাবেশে কোরআন তিলাওয়াত করেন ফয়সাল। একই বছরের ১৬ অক্টোবর বেলা ৩টার দিকে আবারও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেই সমাবেশে মো. আবু জায়িদ ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন। আব্দুর রহমান প্রায় ৩৩ মিনিট বক্তব্য দেন। মো. ইমাদুল আমিন প্রায় ২৩ মিনিট আলোচনা করেন। সর্বশেষ হাফিজ আল রাজি আবারও অনলাইন সমাবেশে কোরআন তিলাওয়াত করেন।’

এসপি আসলাম খান আরও বলেন, ‘নিখোঁজ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের মার্চের ২ তারিখ ডিএমপির গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। একই বছরে দ্বিতীয়বার অনলাইনে সমাবেশ করার পরে এই দুই ধারায় আরও দুটি মামলা করা হয়। এই মামলার পর থেকেই তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান।’

নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনটির সদস্যরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, ভীতি ও দেশে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা করে আসছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহার করে উগ্রবাদী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তাই তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলার তদন্ত ও পরিচয় শনাক্তে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনটির ছয় সদস্যের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। একই দিনে হবে গণভোটও। তার আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণার পথরেখা বেঁধে দিল নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণা করে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রার্থী ও দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তাঁর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল ভোট উৎসবের ক্ষণগণনা।

তফসিল ঘোষণা করায় ইসিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেছেন, এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করল। বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) রাজনৈতিক দলগুলোও ইসিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলগুলো।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়েরের শেষ সময় ১১ জানুয়ারি, আপলি নিষ্পত্তি ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।

জাতির উদ্দেশে ১২ মিনিটের ভাষণে সিইসি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া কামনা করেন।

জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল মালিকানা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে মানসম্মত নির্বাচনের অনুপস্থিতি প্রায়ই আমাদের ঐতিহ্য এবং সামষ্টিক প্রত্যাশাকে ম্লান করেছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। আমাদের ভাইবোন সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে অঙ্গীকার হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান। যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং বিশ্বদরবারে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা একই প্রত্যাশা ধারণ করেন এবং একই অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

ভোটারদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘ভোট আপনার শুধু নাগরিক অধিকারই নয়, বরং পবিত্র আমানত ও দায়িত্ব। এই দায়িত্ব সচেতনভাবে আপনারা পালন করবেন, এ আমার বিশ্বাস। যেকোনো ভয়ভীতি, প্রলোভন, প্রবঞ্চনা এবং সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে নিঃসংকোচে আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। আপনাদের নিরাপদ ও উৎসবমুখর অংশগ্রহণকল্পে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও বাহিনী কাজ করবে।’

ধর্ম, গোত্র, গোষ্ঠী, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই এই আনন্দ আয়োজনে অংশগ্রহণ করবে প্রত্যাশা জানিয়ে সিইসি বলেন, পরিবারের প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও সন্তানসম্ভবা মাসহ সবাইকে নিয়ে ভোট দিতে আসুন। আমি আশা করি, আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটের অনুষ্ঠান উৎসবে রূপ নেবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা তথ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে সিইসি বলেন, বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অসত্য তথ্য ও অপতথ্যের বিস্তার দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। প্রতিপক্ষ দল ও প্রার্থীকে হেয় করার পাশাপাশি নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা আমাদের ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করে এবং নির্বাচনকে কলুষিত করে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এসব রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী এবং দলসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আসুন আমরা আচরণবিধি মেনে একটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা নিশ্চিত করে ভোটারদের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনই হোক আপনাদের লক্ষ্য।’

নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। কমিশনের অংশ হিসেবে আপনারা নির্ভয়ে সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। মনে রাখবেন, এ ব্যাপারে কোনো শিথিলতা বা গাফিলতি সহ্য করা হবে না।

তফসিলের পর থেকে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীর সহায়তা কামনা করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ ভোটারদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও সক্রিয়তা কামনা করছি। সবার প্রতি আমার আহ্বান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফল করে আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখুন।’

ব্যানার-পোস্টার সরানোর নির্দেশ

ইসি থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেট, তোরণ, ঘের, প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা এবং সব ধরনের নির্বাচনী ক্যাম্প ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দায়িত্বে অপসারণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত

গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে ভোট গ্রহণের দুই দিন পর পর্যন্ত সময়ের জন্য প্রতি উপজেলা ও থানায় কমপক্ষে দুজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ইসি। প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আচরণবিধি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য এসব ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে।

ইসির ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আদালত অভিযোগ গ্রহণ করায় ইসির ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করা হয়। আর গাজীপুরে একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়। বাগেরহাটের আসন পূর্বের মতো চেয়ে আদালতে মামলা করেন সংক্ষুব্ধরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গণভোটের তফসিলে যা আছে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ফাইল ছবি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের বিষয়ে গণভোট আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হবে।

এই নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে, কিন্তু পৃথক ব্যালট পেপারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৭:৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪:৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে।

গণভোটের তফসিলের মূল বিষয়বস্তু

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’-এর ওপর গণভোট অধ্যাদেশ জারির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এই গণভোটের আয়োজন করছে। গণভোটে জনগণের কাছে নিম্নলিখিত সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর ওপর সম্মতি (হ্যাঁ/না-এর মাধ্যমে) চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো—

(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হইবে।

(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হইবে দুই কক্ষবিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হইবে এবং সংবিধান সংশোধন করিতে হইলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হইবে।

(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হইতে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হইয়াছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকিবে।

(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হইবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর পাল্টাপাল্টি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর পাল্টাপাল্টি

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনারা মেঘনা নদীর পূর্ব পারে আশুগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। পিছিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী মেঘনার ওপর রেলসেতুটি বিধ্বস্ত করে দেয়। এ কারণে ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ হেলিকপ্টারের সাহায্যে অস্ত্র-সরঞ্জাম নিয়ে মেঘনা পার হয়। স্থানীয় হাজারো গ্রামবাসীও শত শত নৌকা নিয়ে এতে সহায়তা করে। ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে যৌথ বাহিনীর ৪ ডিভিশন সেনা বেশ কিছু অস্ত্র-সরঞ্জামসহ নদী পার হতে সক্ষম হয়। নরসিংদী-ডেমরা অক্ষে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর যাত্রা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন তখন রীতিমতো ঘটনাবহুল। মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ১১ ডিসেম্বর (উপমহাদেশে ১২ তারিখ পড়ে গেছে) সোভিয়েত কর্মকর্তাদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, মিত্র ভারতকে তারা অবশ্যই যেন পরদিন মধ্যাহ্নের আগে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মার্কিন হুমকিতে দমে না গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করতে ঢাকা অভিমুখে সামরিক অভিযানের গতি বৃদ্ধি করেন। ১১ ডিসেম্বরই দূত ডি.পি.ধরকে চুক্তি অনুযায়ী সহায়তা চেয়ে মস্কো পাঠিয়েছিলেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর যুগ্ম কমান্ডব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের মোকাবিলায় সোভিয়েত ইউনিয়নও ভারত মহাসাগরে তার নিজের নৌবহর জোরদার করে। এ ছাড়া চীনকে পাকিস্তানের সাহায্যে সরাসরি এগিয়ে আসা থেকে ঠেকাতে সিংকিয়াং সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়ায়।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার নির্ধারিত সময়সীমার মাত্র দুঘণ্টা আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার চরমপত্রের উত্তরে জানায়, পশ্চিম পাকিস্তানে ভারতের কোনো আক্রমণাত্মক অভিপ্রায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশ, অর্থাৎ পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় ভারতকে বাধ্য করার প্রশ্নে মস্কো নীরব থাকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১২ ডিসেম্বর বিকেলে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আয়োজনের ডাক দেন। সেই সঙ্গে তিনি আরও কঠোর ভাষায় পারমাণবিক বোমার ইঙ্গিত দিয়ে ক্রেমলিনে ‘গুরুতর পরিণতির’ সাবধানবাণী পাঠান। ঠিক এই সময়ে তখনকার মিত্র চীনের অবস্থান ওয়াশিংটনকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়। মার্কিন ভাবনা ছিল চীন পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে এলে সোভিয়েতরা বসে থাকবে না। আর তখনই যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার অবকাশ পাবে। কিন্তু জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি হুয়াং হুয়া নিউইয়র্কে ১২ ডিসেম্বর মার্কিন কর্তৃপক্ষকে জানান, চীন শুধু নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আরেক-দফা আলোচনার ব্যাপারেই আগ্রহী। উপমহাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে নয়। চীনের এই ‘অপ্রত্যাশিত’ ভূমিকার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ওলট-পালট হয়ে যায়। বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার পথের দূরত্বে থাকা অবস্থায় সপ্তম নৌবহরকে থামিয়ে ফেলা হয়।

উত্তরে ময়মনসিংহ থেকে পাকিস্তানের একটি ব্রিগেড ঢাকা আসার সময় প্রথমে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে ভারতীয় প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের আক্রমণের শিকার হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানি ব্রিগেড ঢাকা ফিরে আসে। পশ্চাদপসরণে ব্যস্ত পাকিস্তানি সেনাদের অনেকের লক্ষ্যস্থল ছিল দক্ষিণের উপকূলবর্তী অঞ্চল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাহাজে অন্য দেশের পতাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে সচেষ্ট হতে দেখা যায় তাঁদের অনেককে।

এদিকে ঢাকার পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে ঘরে ঘরে তল্লাশি শুরু করে। সম্ভবত এই সময়েই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল বাঙালি পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের আটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাকিস্তানিদের চূড়ান্ত পরাজয়ের প্রাক্কালে তাঁদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

১১ ডিসেম্বর হঠাৎ ঢাকায় বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ। নানা কাজে বাইরে বের হওয়া অনেকে না জেনে বিপদে পড়ে যান। জানার পর শুরু হয় ছোটাছুটি করে ঘরে ফেরা।

রোজনামচাভিত্তিক বই ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমির মা লেখিকা জাহানারা ইমাম এ বর্ণনা দিয়েছেন। হঠাৎ কারফিউর সময়সূচি পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেছেন, ‘এদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ কারণ, এর কয়েক দিন আগেই কারফিউ বলবৎ থাকত বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত।

১২ ডিসেম্বর সকালে নরসিংদীর ওপর পাকিস্তানি সেনাদের দখলের অবসান ঘটে। ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর এই তিন দিনে ভারতীয় বাহিনীর মোট পাঁচটি ব্যাটালিয়ন, দুটি গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ও ৫৭ ডিভিশনের ট্যাকটিক্যাল হেডকোয়ার্টার মেঘনা অতিক্রমে সমর্থ হয়। ট্যাংক রেজিমেন্টের মেঘনা পার হওয়ার প্রচেষ্টা তখনো সফল হয়নি। ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার আগে জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হয়। এটি ছিল ঢাকা অভিযানের পথে বড় অগ্রগতি।

মিত্রবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা মেঘনা পার হওয়ার পর সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ঢাকার পতন ঘটবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাংলাদেশ বাহিনীর সেনারা ফেনী নদী পার হয়ে এবং অন্যান্য দিক থেকে সদরের দিকে এগোতে থাকে। শুরুর দিকে মিরসরাই পাকিস্তানি সেনামুক্ত হয়। এর পরের লক্ষ্য ছিল সীতাকুণ্ড।

১২ ডিসেম্বর রোববার ঢাকায় সারা দিনই কারফিউ ছিল। রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তেজগাঁও বিমানবন্দরে কয়েকটি বিমান অনেক চেষ্টার পর অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এগুলো জাতিসংঘের কর্মীদের সরিয়ে নিতে এসেছিল। পরে তাঁদের নিয়ে বিমানগুলো উড়ে যাওয়ার কিছু পরই ভারতীয় যুদ্ধবিমান রানওয়েতে আবার কয়েকটা বোমা ফেলে। কারফিউর মধ্যে নির্জন রাজপথে দেখা যায় বেশ কিছু মাইক্রোবাস চলতে। গাড়িগুলো বেসামরিক বলে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগায়।

তথ্যসূত্র: ১. লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে: আ টেল অব মিলিয়নস, লেখক–মেজর রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম); ২. মূলধারা ৭১, লেখক–মঈদুল হাসান; ৩. একাত্তরের দিনগুলি, লেখক–জাহানারা ইমাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবারের মতো ইসির তিন কর্মকর্তা পেলেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার ইসির নিজস্ব তিন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।

ইসি কর্মকর্তা জানান, ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ঢাকা-১৩ ও ১৫ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম-১১ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। আর খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা-৩ আসনে।

এ ছাড়া ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারসহ ৬৪ জেলার ডিসিরাও দায়িত্ব পালন করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে।

এবার মোট ৬৯ রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়েরের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি আরও নিষ্পত্তি ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্বারা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আর ভোট গ্রহণ করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত