Ajker Patrika

করোনার চেয়ে ক্যানসারে দৈনিক মৃত্যু বেশি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ১৭
করোনার চেয়ে ক্যানসারে দৈনিক মৃত্যু বেশি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

‘বাংলাদেশের ৬৭ পার্সেন্ট লোক নন-কমিউনিকেবল ডিজিসে মারা যায়। তার মধ্যে ক্যানসার উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে ২০ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত। বছর শেষে আরও প্রায় এক থেকে দেড় লাখ ক্যানসার রোগী যুক্ত হয় এই তালিকায়। মৃত্যু হয় লাখের কাছাকাছি। অর্থাৎ আমাদের দেশে যদি ১ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে বছরে, তাহলে প্রতিদিন মারা যায় ২৭৩ জন। যদি দেড় লাখ লোক মারা যায়, তাহলে দিন শেষে সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০০-এর মতো। অথচ আমরা করোনার মৃত্যুটাকেই দেখে থাকি। রোজ করোনার মৃত্যুসংখ্যাটা জানানো হচ্ছে বিধায় আমরা জানতে পারি। কিন্তু ক্যানসারে কত লোক মারা যায়, এই হিসাব কেউ খুব একটা রাখে না।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল মিলনায়তনে আয়োজিত ক্যানসার দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

ক্যানসারের মতো এমন রোগ কেন বাড়ছে, এর পেছনের কারণটা কী, এটা খুঁজে বের করার তাগিদ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর। আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধটা ক্যানসারের জন্য খুবই জরুরি। আমরা যে বাতাস গ্রহণ করি, সেগুলোর ভেতরে অনেক ধরনের জীবাণু রয়েছে। ঢাকার বাতাস অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব একটা ভালো না। যার ফলে আমাদের এখানকার মানুষদের ফুসফুস ও গলায় ক্যানসার হয়। নদী-নালায় শিল্পের বর্জ্য ফেলা হয়, ওই সমস্ত পানি ব্যবহার করলে নানা ধরনের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভেজাল খাবার এবং তামাক সেবন করলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশে ক্যানসার আক্রান্তদের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যানসারের আধিক্য বেশি। আবাদি খাদ্যশস্যে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ক্যানসারমুক্ত থাকার সব থেকে সহজ ও সুন্দর পদ্ধতি হলো দ্রুত ক্যানসার শনাক্ত করে ভালো চিকিৎসা দেওয়া। দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে সেটি ছড়িয়ে পড়ে না।’ 

ক্যানসারে আক্রান্ত হলে শুধু ঢাকার মানুষ কিংবা বিত্তশালী মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবে—এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার আশাবাদও ব্যক্ত করেন জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি ক্যানসার চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে। এই ইনস্টিটিউটে (জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল) মাত্র ৫০ বেড ছিল। এখন সেটা ৫০০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। এখানকার সেবার মান বাড়াতে আমরা আরও নতুন নতুন মেশিন দেব। একটি উন্নত ক্যানসার চিকিৎসা ইনস্টিটিউট করতে যা যা দরকার, তার সবই করা হবে। এটার পাশাপাশি দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর যে ক্যানসার ইউনিট আছে, সেগুলো আপগ্রেড করা হবে। ক্যানসার যেহেতু বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে দেশের আট বিভাগে আটটি ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে ১৮০টি করে বেড ক্যানসার রোগীদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। অর্থাৎ, আটটি হাসপাতালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ বেড নতুন যুক্ত হবে। ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ের এসব বেড চালু হয়ে গেলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হবে না। নিজ এলাকায় চিকিৎসা নিয়ে অনেকের জীবন বেঁচে যাবে।’ 

দেশের মানুষকে করোনা ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৷

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ মুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...