Ajker Patrika

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড ছাড়াই জলাতঙ্কের টিকা ব্যবহার

  • আমদানি করা টিকা ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রি-কোয়ালিফায়েড
  • দেশীয় টিকা কেনায় এমন বাধ্যবাধকতার শর্ত নেই
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড আগে পেতে হয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ১০: ৫৯
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

দেশে দেড় দশক ধরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে বিনা মূল্যে টিকা দিচ্ছে সরকার। শুরুর প্রায় পাঁচ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রি-কোয়ালিফায়েড টিকা আমদানি করে দেওয়া হয়েছে। এক দশক ধরে দেওয়া হচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকা।

জানা গেছে, এক দশক ধরে দেশীয় ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তৈরি র‍্যাবিক্স-ভিসি টিকা কিনছে সরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবদেহে প্রয়োগ করা টিকার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, জলাতঙ্কের বর্তমান টিকার প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকলেও এটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত।

অবশ্য ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস বলেছে, কোনো দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকলে ডব্লিউএইচও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে এই সনদ দেয় না। তাদের এই টিকা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ আসেনি।

দেশে জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের জন্য ২০১০ সালে ‘জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি’ নেয় সরকার। পরের বছর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগ যুক্ত হয়। সেই থেকে দেশে বিনা মূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে টিকা দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি)। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জুনোটিক ডিজিজ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্র জানায়, কুকুর, বিড়াল, বেজি, বানর, খ্যাঁকশিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর কামড়, আঁচড়ের কারণে র‍্যাবিস ভাইরাসের (জলাতঙ্ক) সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে তিন থেকে চার ডোজ র‍্যাবিস টিকা দিতে হয়। প্রাণীর আক্রমণে রক্তাক্ত আহতদের অতিরিক্ত হিসেবে র‍্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) দেওয়া হয়। এক ভায়াল টিকার দাম স্থানীয় বাজারে ৫০০ টাকা। আরআইজির দাম ১ হাজার টাকা। সারা দেশে উপজেলা, জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর চার শতাধিক টিকাকেন্দ্রে প্রাণীর আক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে এই টিকা দেওয়া হয়।

সরকারের হিসাবে, গত বছর কুকুরসহ প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে আসে সোয়া ৫ লাখ মানুষ। গত বছর জলাতঙ্কের কারণে মারা যায় ৫৬ জন।

সূত্র জানায়, ২০১২ সালে এক লাখ রোগীকে এআরভি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে এই টিকা নিতে হয়েছে ছয় লাখের বেশি রোগীকে। স্বাস্থ্যের কৌশলগত পরিকল্পনা বা অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) মাধ্যমে জলাতঙ্কের টিকা দিত অধিদপ্তর। ওপির মাধ্যমে সিডিসি সরাসরি টিকা কিনত। গত জুনে ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) শেষ হলেও পঞ্চম এইচপিএনএসপি বা ওপি অনুমোদন হয়নি। ফলে ওপি না থাকায় সরকারের বিশেষ বরাদ্দে এই টিকা কিনছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। গত ফেব্রুয়ারিতে সিএমএসডি সোয়া এক লাখ টিকা কেনে। সেই টিকা শেষের পথে। এখন প্রায় তিন লাখ টিকা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। সরকার এখন আরআইজি কিনছে না।

শুরুতে দেওয়া হয় বিদেশি টিকা

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির শুরুতে আমদানি করা রাবিপুর ও ভেরোরাভ টিকা দেওয়া হতো। ভেরোরাভ টিকা ফ্রান্সের সানোফি এসএর এবং রাবিপুর ভারতের চিরন বেহরিং ভ্যাকসিন প্রাইভেট লিমিটেডের তৈরি। এই দুই টিকাই ডব্লিউএইচওর প্রি-কোয়ালিফায়েড। গত দেড় দশকে দেশে প্রায় ৪০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রাবিপুর ও ভেরোরাভ টিকা দেওয়া হয় পৌনে ৯ লাখ।

২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) ছিলেন অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। জাতীয় টিকাদান-সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির সাবেক এই সদস্য জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সময় র‍্যাবিসের টিকা হিসেবে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন (এনটিভি) পেটে দেওয়া হতো। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে সেই টিকা প্রয়োগ বন্ধ করে আরও কার্যকর ও নিরাপদ টিস্যু কালচারভিত্তিক ভ্যাকসিন (টিসিভি) প্রয়োগের পরামর্শ দেয় ডব্লিউএইচও।

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, টিকাগুলো যেন ডব্লিউএইচওর প্রি-কোয়ালিফায়েড হয়, সে জন্য প্রকিউরমেন্টের স্পেসিফিকেশনে (ক্রয়সংক্রান্ত উপকরণের বিবরণ) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জলাতঙ্ক নির্মূলের জাতীয় কমিটি তা নির্ধারণ করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আমরা সে অনুযায়ী টিকা কিনি। দরপত্রে ইনসেপ্‌টাও অংশ নিলেও প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকায় তাদের টিকা আমরা নিইনি। কেননা, প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকায় এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সাল থেকে ইনসেপ্‌টার ‘র‍্যাবিক্স-ভিসি’ টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। তবে সে সময় এই টিকা প্রয়োগের জন্য জাতীয় কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ক্রয় বিবরণ থেকে ‘প্রি-কোয়ালিফিকেশন’ শর্ত তুলে নেওয়া হয়।

ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, ভেরোরাব ২০০৫ সালের জুনে প্রি-কোয়ালিফিকেশনের তালিকায় স্থান পায়। কয়েক বছর ধরে রাবিপুর টিকা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। টিকাটি বর্তমানে চিরোরাভ নামে বিশ্ববাজারে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন বলছে, ডব্লিউএইচওর টিকার প্রি-কোয়ালিফিকেশন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনপ্রক্রিয়া, পরীক্ষাগার, গবেষণা, টিকা প্রস্তুতের সব পর্যায়ের সূক্ষ্ম নিরাপত্তাসহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো কোম্পানি টিকা তৈরির আগে ডব্লিউএইচওকে জানায়। তারা তখন উৎপাদনপ্রক্রিয়ার সব ধাপ পর্যালোচনা করে। বিশ্বের সব ওষুধ কোম্পানি টিকা তৈরি করে না। বাংলাদেশে যেসব টিকা তৈরি হয়, তা মূলত আমদানি করা তৈরি পণ্য (ফিনিশড প্রোডাক্ট) বোতলজাতকরণের মাধ্যমে। ভারত সবচেয়ে বেশি টিকা উৎপাদন করে।

ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান টিকার প্রি-কোয়ালিফিকেশন না পাওয়ার কারণ জাতীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এনআরএ) প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকা। অর্থাৎ একটি দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগারকে প্রথমে এই মানদণ্ডে উন্নীত হতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি (এনডিসিএল) ওষুধের প্রি-কোয়ালিফিকেশন অর্জন করেছে, তবে টিকার জন্য হয়নি। এনআরএ মানদণ্ডে উন্নীত না হলে কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রি-কোয়ালিফিকেশন দেয় না ডব্লিউএইচও।’

সূত্র বলেছে, সরকার এক দশক ধরে র‍্যাবিক্স-ভিসি টিকা কিনছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কেনা হয় ওপির মাধ্যমে। বর্তমানে সরকারের বিশেষ বরাদ্দে কিনছে সিএমএসডি। র‍্যাবিক্স-ভিসি ব্র্যান্ড নামে র‍্যাবিসের এই টিকা ২০১১ সালের নভেম্বরে দেশের বাজারে আনে ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্‌টা ভ্যাকসিন লিমিটেড।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) সূত্র জানায়, ডিজিডিএর অনুমোদন পেতে হলে ডব্লিউএইচওর প্রি-কোয়ালিফায়েড হওয়ার শর্ত নেই। ইপিআইয়ের টিকাগুলো দেয় জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। তারা প্রি-কোয়ালিফায়েড টিকা সংগ্রহ করে। স্থানীয় টিকা উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বিদেশ থেকে আমদানিতে ডিজিডিএর অনুমোদন লাগে।

দেড় দশক ধরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন এমন একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান টিকা প্রি-কোয়ালিফায়েড নয়, এটি ডিজিডিএ অনুমোদিত। তবে প্রি-কোয়ালিফায়েড টিকার নিরাপত্তা সর্বোচ্চ।

অবশ্য ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস বলছে, দেশের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের টিকার প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকলে ডব্লিউএইচও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে দেয় না। তাদের এই টিকা বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ নেই।

ইনসেপ্‌টার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে ওষুধ বা টিকা উৎপাদন ও বাজারজাতের বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করে। প্রি-কোয়ালিফিকেশন ঔষধ প্রশাসনকে আগে নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যদি ডব্লিউএইচওর ম্যাচিউরিটি লেভেল-৩ অর্জন করে, তবে অধিদপ্তর যাদের টিকার অনুমোদন দিয়েছে, তাদেরকেও প্রি-কোয়ালিফিকেশনের জন্য বিবেচনা করবে তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা গোড়া থেকে ডব্লিউএইচওর নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু বানিয়েছি। ওষুধের জন্য আমাদের প্রি-কোয়ালিফিকেশন রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর টিকার জন্য এমএল-৩ অর্জন করলে আমরাও প্রি-কোয়ালিফিকেশনের অনুমোদন পাব। টিকা আমদানির ক্ষেত্রে প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাগে, দেশীয় টিকার ক্ষেত্রে লাগে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) ডা. মো. হালিমুর রশিদ বলেন, ‘যেকোনো প্রি-কোয়ালিফায়েড টিকাই ভালো। কিন্তু দরপত্র আহ্বান করা হলে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেয় না। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের রায় আছে, যে টিকা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়, সেই টিকা আমদানি করা যাবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইনসেপ্‌টার টিকার প্রি-কোয়ালিফিকেশন নেই। টিকাটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত। ইউনিসেফ প্রি-কোয়ালিফায়েড টিকা কেনার শর্ত দিয়েছিল। তবে শর্ত ছাড়াই এই টিকা অনেক বছর ধরে কেনা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়েছি। এই টিকা পরীক্ষার জন্য নমুনা বিদেশে পাঠানো হয়েছে, এমন একটি চিঠি তারা আমাদের দিয়েছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ চাই—জলবায়ু সমাবেশে ধনী দেশগুলোকে বক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার আয়োজিত সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার আয়োজিত সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর জবাবদিহি, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায্যতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, ঋণ নয়, অনুদান ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমেই জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে ধনী দেশগুলোকে।

রাজধানীতে শুরু হওয়া তৃতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ-২০২৫-এ বক্তারা এ আহ্বান জানান। আজ শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের উদ্বোধন করা হয়।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সরকারি প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক জলবায়ু আন্দোলনের কর্মী, গবেষক ও জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ প্রায় দুই হাজার মানুষ অংশ নেন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। সঞ্চালনা করেন ধরার সদস্যসচিব শরীফ জামিল। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ধনী দেশগুলোর গড়িমসির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব পদক্ষেপের মধ্যকার ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে বলে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সমাবেশের উদ্বোধনকালে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের দায় খুবই কম হলেও দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় ভুক্তভোগী।

তিনি বলেন, ‘আমরা ধনী দেশগুলোর কাছে ঋণী নই, বরং তারা আমাদের কাছে ঋণী। জলবায়ু ন্যায্যতা এখন জবাবদিহি ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রশ্ন।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনকে কেবল প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। জলবায়ু ন্যায্যতা মানে ন্যায়, টিকে থাকা এবং জবাবদিহি।’

জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা অব্যাহত রাখার সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখনো বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। গ্লোবাল নর্থ প্রায়ই ন্যায়বিচারের বদলে ঋণ চাপিয়ে দেয়।

ধরার সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, ‘জলবায়ু ন্যায্যতা বাংলাদেশের জন্য কেবল একটি দাবির বিষয় নয়, এটি দেশের টিকে থাকার প্রশ্ন। আমরা যদি নিজেদের ঘর থেকে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায্যতার দাবি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে।’

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও ধনী দেশগুলোর জলবায়ু অর্থায়ন নীতির সমালোচনা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০০
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য এবং ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে কোর কমিটি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে এত দিন শুধু সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যু করা হতো। তিনি বলেন, এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চাইবেন, তাঁদেরও লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাঁর নিরাপত্তায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে—এ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সরকার তারেক রহমানের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং তাঁর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০১
আজ শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির জরুরি বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: পিআইডি
আজ শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির জরুরি বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: পিআইডি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারী আততায়ীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা জুলাই যোদ্ধাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

আজ শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্তর্বর্তী সরকার গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। এই বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব। এই হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমরা জনগণের সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে বিশ্বাস করি। হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার সকল চেষ্টা সরকার দমন করবে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার চলমান। ডেভিল হান্ট ফেস-২ অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সালকে ধরিয়ে দিতে সরকার ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যমুনায় বৈঠক

জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র রুখতে সর্বাত্মক ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দলগুলোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪১
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক। ছবি: প্রেস উইং
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক। ছবি: প্রেস উইং

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করার সব অপচেষ্টা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকার জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে মতৈক্য প্রকাশ করেন।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।

তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এই আক্রমণটি খুবই সিম্বলিক (প্রতীকী)। তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়। এগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে।’

যমুনায় শরিফ ওসমান হাদির পরিবারকে সান্ত্বনা দেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ছবি: প্রেস উইং
যমুনায় শরিফ ওসমান হাদির পরিবারকে সান্ত্বনা দেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ছবি: প্রেস উইং

তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। কোনো ধরনের অপশক্তিকে আমরা বরদাশত করব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যতই রাজনৈতিক বক্তব্যের বিরোধিতা থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে।’

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন সালাহউদ্দিন।

জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। আমাদের পূর্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে এমন কথা আমরা কেন বলব? সব দলকে তাদের কমিটমেন্ট ঠিক করতে হবে।’

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই কিছু লোক এই অভ্যুত্থানকে খাটো করার জন্য নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘সুসংগঠিতভাবে জুলাইয়ের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চলছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের নানা স্তরে এই কাজ হচ্ছে। নির্বাচনের পর যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাও এর ভুক্তভোগী হবে। কেউই একা সরকার চালাতে পারবে না।’

নাহিদ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টকশোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের বিশেষ কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। আমরা এটা নেব না। জুলাইকে সবাই মিলে ওউন করতে হবে। জুলাইকে কে কী বলবে—এই টানাপোড়েনে আমরা জুলাইকে শেষ করে দিচ্ছি। ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অনৈক্যকে আমাদের পরাজয় হিসেবে দেখছে। তারা ভারতে বসে যা ইচ্ছা তা-ই করছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছি না।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী বেশে, সাংস্কৃতিক কর্মী বেশে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারীদের থামাতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এ সময় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারলে কোনো নিরাপত্তাই আমাদের কাজে আসবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের চিন্তা করতে হবে—ভবিষ্যতের জন্য আমরা কী করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘শুধু সরকার নয়, সবাইকে শক্ত থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে।’

‘নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে, ’ দলগুলোর প্রতি এই পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।’

রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের শুধু দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত