Ajker Patrika

এএফপির প্রতিবেদন /রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি, ফেরাতে মস্কো দূতাবাসে অন্তত ১২ পরিবারের আবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ১৭
রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ডজনখানেক পরিবার তাদের সন্তানকে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দেশে ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করেছে। ছবি: এএফপি
রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ডজনখানেক পরিবার তাদের সন্তানকে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দেশে ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করেছে। ছবি: এএফপি

বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজনকে চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়ায়। পরে তাদের পাঠানো হয় ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে। এরই মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় ডজন খানেক বাংলাদেশি পরিবার মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোয় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, প্রায় এক ডজন পরিবার তাদের ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ করেছে। পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাদের ছেলেদের ভুল বুঝিয়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়েছে।

মোহাম্মদ আকরাম হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ও তাঁর শ্যালক একটি নিয়োগকারী সংস্থায় নাম লিখিয়েছিলেন। তাদের প্রথমে সাইপ্রাসে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, পরে রাশিয়ায় কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁরা রাজি হলে রাশিয়ায় নিয়ে তাদের যোগ দেওয়ানো হয় রুশ সেনাবাহিনীতে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে পৌঁছাব।’

সম্প্রতি দেশে ফেরা ২৬ বছর বয়সী আকরাম এএফপিকে বলেন, ‘নিয়োগকারী সংস্থা বলেছিল যে, কেবল রাশিয়ার ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া যাচ্ছে এবং আমরা তাতেই রাজি হয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমরা কখনোই ভাবিনি যে, আমাদের এভাবে এমন অবস্থায় ফেলা হবে।’

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। তবে বিগত সরকারের ব্যাপক লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতির অবস্থা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই খারাপ ছিল। সর্বশেষ গত বছর, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসানের পর দেশের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভুক্তভোগী একটি পরিবারের সদস্য মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ (২২)। তিনি গত ২৭ মার্চ রুশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় নিহত হন বলে খবর আসে। এর পর থেকে ইয়াসিনের উদ্বিগ্ন স্বজনেরা মস্কোয় বাংলাদেশি কূটনীতিকদের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছেন। ইয়াসিনের চাচা আবুল হাশেম জানান, ঈদের সময় ইয়াসিনের এক বন্ধু তাদের ফোন করে এই খবর জানান।

আবুল হাশেম এএফপিকে বলেন, ‘ইয়াসিনের বন্ধু নিজেও রুশ পক্ষে যুদ্ধ করছে। সেও বাংলাদেশি। ঈদের দিন সে আমাদের ফোন করে জানায় যে, ইয়াসিন মারা গেছে। পরে, আমরা এক রুশ কমান্ডারের কাছ থেকে ফোন পাই একই বিষয়ে।’

ইয়াসিন শেখের পরিবারের ভাষ্য, তারা তাদের ছেলেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ছাড়ার সময় টাকা দিয়েছিলেন। এক দালাল তাঁকে রাশিয়ায় একটি চীনা কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ তাঁকে দেওয়া হয়নি। পরে সে বছরের ডিসেম্বরে ইয়াসিনকে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হয়।

আবুল হাশেম বলেন, ‘তাঁকে (বিদেশে) পাঠানোর জন্য আমরা অনেক টাকা খরচ করেছি এবং এখন আমরা তাঁর মৃতদেহের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছি, যাতে তাঁর মা শেষবারের মতো তাঁকে বিদায় জানাতে পারেন—সেই ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করে।’

এএফপি এই পরিবারের দাবি যাচাই করতে পারেনি। তবে মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফারহাদ হোসেন জানান, দূতাবাস এই মৃত্যুর খবর সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক দিন আগে ইয়াসিন শেখের বিষয়ে জানতে পেরেছি এবং বিষয়টি নিয়ে রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, দূতাবাস ইয়াসিনের মৃত্যু বা অন্য কোনো বাংলাদেশি হতাহতের খবর নিশ্চিত করতে পারেনি এবং মস্কোর কাছ থেকে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে, অন্য বাংলাদেশিরা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের কাছ থেকে তাদের ছেলেদের সম্পর্কে জানতে চেয়ে অনুরোধ পাচ্ছি এবং এ পর্যন্ত আমরা প্রায় এক ডজন অনুরোধের জবাব দিয়েছি।’

ইউক্রেন যুদ্ধ রুশ সেনাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে এবং মস্কো যুদ্ধের জন্য আরও সেনা সংগ্রহের জন্য বিশ্বব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই জানায়নি যে, তাদের সেনাবাহিনীতে কতজন বিদেশি নাগরিক কর্মরত আছেন বা তারা কতজনকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরে রেখেছে।

ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো কয়েকটি দক্ষিণ এশীয় দেশ থেকে আসা সৈন্যদের রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার খবর ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। তাদেরও কাজের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। এই বিষয়ে ফরহাদ হোসেন এএফপিকে বলেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, মস্কোর পক্ষে যারা যুদ্ধ করছেন তারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, বেতন পাচ্ছেন এবং যুদ্ধের নিয়মকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছেন।’

কতজন বাংলাদেশি রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে, তা ফরহাদ হোসেন নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও একটি বাংলাদেশি সংবাদপত্র নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, এই সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মানবপাচারের অভিযোগে এক বাংলাদেশি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

রুশ সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসার দাবি করা আকরাম মোহাম্মদ আকরাম হোসেনই প্রথম ব্যক্তি যিনি তাঁকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া পাচারকারী চক্র সম্পর্কে বাংলাদেশি পুলিশকে সতর্ক করেন। তিনি জানান, তিনি ১০ জন বাংলাদেশির একটি দলের সঙ্গে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব যান।

আকরাম হোসেন বলেন, ‘সেখানে কয়েক সপ্তাহ থাকার পর আমরা রাশিয়ায় যাই।’ তিনি জানান, এরপর তাঁকে রাশিয়ায় একটি চুক্তিপত্র দেওয়া হয়। তবে তিনি বুঝতে না পারলেও, অর্থের সংকট থাকায় তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে আমাদের বাসে করে একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই আমরা রাত কাটাই। পর দিন, তারা আমাদের কয়েকজনকে সামরিক পোশাক দেয় এবং প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যায়।’

আকরাম হোসেন আরও জানান, লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার আগেই তিনি সেনেগালের একদল লোকের সঙ্গে পালিয়ে যান এবং দেশে ফিরতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘কয়েক হাজার ডলার হারানোর পর আমি ফিরে এসেছি।’ তিনি আরও জানান, তাঁর শ্যালক এখনো রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সে নিয়মিত বাড়িতে ফোন করে, তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের কাছে আকুতি জানাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বিকেলে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ও রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খেলা করার সময় পানিতে পড়ে ছয় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন ও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নে ঘটনা দুটি ঘটে। এতে ওইসব এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ বিকেলে অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগর এলাকায় বাড়িসংলগ্ন বিলের পাশে খেলা করছিল মিশকাত (৫), মাহিন (৬) ও সাত্তার তানিল মিয়া (৫)। হঠাৎ সবার অজান্তে তিন শিশু বিলে পড়ে ডুবে যায়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিল থেকে মিশকাত ও মাহিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপর শিশু তানিলের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মাহিনের চাচা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিন শিশু খেলাধুলা করছিল। কিন্তু কখন যে বিলের পানিতে ডুবে গেল, কেউ বোঝেনি। পরে তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পানিতে প্রথমে দুজন, পরে অন্যজনকে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুঃখজনক খবর, একই বাড়ির তিনটা শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে একই দিন বিকেলে উত্তর পারুয়া গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। তারা হলো সুমাইয়া আক্তার (৫), হাবীবা আক্তার (৬) ও জান্নাত আক্তার (৫)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে খেলার ছলে তারা তিনজনই বাড়ির পাশে পুকুরে যায়। কিছুক্ষণ পর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘তিনটি নিষ্পাপ শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অভিমুখী চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের পদযাত্রায় আবারও পুলিশের বাধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা, স্বতন্ত্র কোটা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজও তাঁদের পদযাত্রা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ বেলা ৩টার দিকে ‘চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে থালাবাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করেন প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শাহবাগ থানার সামনে মিছিলটি পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের ভাষ্য, শিক্ষিত, যোগ্য ও কর্মক্ষম যুব প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে এখনো কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধী কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যসচিব আলিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার শাহবাগে অবস্থান করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। সেদিন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এরপর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি জানানো হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করি, কিন্তু পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে।’

আলিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আজও শাহবাগ থানার সামনে আমাদের পদযাত্রা আটকে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পুলিশ মারধরও করেছে।’

‎‎এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ করা নিষেধ। তাই চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বেকার, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে।

‎‎ ২. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

‎ ৩. দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পছন্দমতো শ্রুতিলেখক (বিকল্প সহকারী) মনোনয়নের স্বাধীনতা পাবেন—এমনভাবে নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।

৪. সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পদসংখ্যায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।

‎৫. প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ হলে তা ৩৭ বছর করতে হবে।

‎‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে নিরাপদ থাকবে যে দেশগুলো

পুলিশ কর্মকর্তা ৪ বার ধর্ষণ করেছে—মহারাষ্ট্রে নারী চিকিৎসকের হাতে লেখা সুইসাইড নোট

সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ‘অনুশোচনা’ নেই অ্যানিস্টনের

ভারতে ১৪ শিশুর চোখ কেড়ে নিল দিওয়ালির নতুন খেলনা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত