
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র–জনতার সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর ওপর জোর দেওয়া হবে।
আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা এমন প্রস্তাব দেন।
‘সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন, কোন পথে হবে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন?’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। সিজিএসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘৭১–এর প্রত্যাশা এবং ২০২৪–এর প্রত্যাশা অভিন্ন নয়। ১৯৭১–এর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিধায় ২০২৪–এর এই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, তাকে সমুন্নত রাখার জন্যই দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের প্রয়োজন। ১৯৭১–এর পর সংবিধান রচনায় যে ধরনের আলোচনা হয়েছিল, তা থেকে আমরা দিক নির্দেশনা পেতে পারি।’
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সংবিধান জীবিত ডকুমেন্ট, এটিকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব। গোঁজামিল দিয়ে সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে বারবার, তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব ধরনের মতামতকে সঙ্গে নিয়েই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। সরকার সিদ্ধান্ত দেবে না, সিদ্ধান্ত দেবে ছাত্র–জনতা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রায় একই সুরে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘জনগণের মতের প্রতিফলন’ ঘটানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তরুণ এই রাষ্ট্রচিন্তক।
মাহফুজ বলেন, ‘১৯৭১–এর প্রেক্ষাপট থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংবিধানে নতুনত্ব আনতে হবে। ধারাবাহিকভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজন বলা হচ্ছে, কিন্তু জনগণের মতের প্রতিফলন আদৌ হচ্ছে কিনা এটাও দেখা প্রয়োজন। আদর্শিক ও রাজনৈতিক দিকগুলোর চেয়ে জনগণের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে ধ্বংস করে গেছে যে, ব্যক্তি পর্যায়েও স্বৈরাচারিতা চলে গেছে, এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংবিধান এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে যে তাতে ব্যক্তিস্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ব্যক্তির হাতে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে অবাধ ক্ষমতা থাকায় দলীয়, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া এই ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। সাংবিধানিক পদগুলোতে কেন, কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তা আমাদের অজানা নয়। এমনকি রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ছিল, ক্ষমতার অপব্যবহারের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে!’
ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণের সমাধান হিসেবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন নাকি নতুন করে পুনর্লিখন প্রয়োজন তা বিতর্কের বিষয়। কে পুনর্লিখন করবে? কে সংশোধন করবে? এই দায়িত্ব কোনো নির্দিষ্ট সরকারের নয়, এই দায়িত্ব জনগণের। সরকারের দায়িত্ব সব স্তরের জনগণকে পথ তৈরি করে দিতে হবে সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবার জন্য।’
কোনো দল ক্ষমতায় এসে যাতে সংবিধানে নিজেদের মতো পরিবর্তন না আনতে পারে তা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কারের বদলে পুনর্লিখনের প্রস্তাব দেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘নতুনভাবে সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সংখ্যাগুরুর অত্যাচার বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান ১৯৭১–এর পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। যে আইন ছিল শাসক শ্রেণির শোষণের জন্য সেই আইন এখনো কীভাবে বিদ্যমান থাকে? ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে যদি কিনে ফেলা যায়, তাহলে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? সংবিধান বাতিলের মধ্যে গেলে, দশ–বিশ বছর পরে তা আবারও বাতিল হবে।’
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘সংসদের কাজ হলো সংবিধান বাস্তবায়ন করা, একই সংসদ সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জড়িত থাকলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। একটা দেশের সংবিধান সেই দেশের রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত। সার্বভৌমত্ব জনগণের জন্য হওয়া প্রয়োজন ছিল, যার প্রতিফলন দেখা যায়নি। মৌলিক অধিকার, সমতার কথা আছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের কথা নেই সংবিধানে। প্রত্যক্ষ প্রতিবিম্ব থাকা প্রয়োজন সংসদীয় আলোচনায়। নানা রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা তুলে আনতে হবে। সংবিধানের সংশোধনের নামে দলীয়করণ করেছে প্রতিটি সরকার। সব ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে স্বৈরাচার তৈরি হবেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা সসীম, জনগণের ক্ষমতা অসীম।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘বৈষম্য এখনো চলমান। সংবিধান সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে নতুন করে লেখা বেশ কঠিন। নতুন বাংলাদেশে নতুন সংবিধানে মৃত্যুদণ্ডকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক অধিকারের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকেই। সংবিধান সংশোধনের জন্য ভিন্ন মত, ধর্মের সবার অংশগ্রহণের প্রয়োজন।’
অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, চাকমা সার্কেলের প্রধান ও আইনজীবী রাজা দেবাশীষ রায়, সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান আলোচনায় অংশ নেন।
দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণ ও সব জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বর্তমান সংবিধান নিয়ে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার চলতে পারে না। বাংলাদেশ যে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা উত্তরণের জন্য দরকার সংবিধান পুনর্লিখন। সংবিধান প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের আমাদের দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কোনো ব্যক্তিকেই ভরসা করতে পারেন না, তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রজন্মের মানুষ ক্ষমতা পেলেই লুটপাট করবে। বাংলাদেশের সমাজের যে ভঙ্গুর অবস্থা, তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ যদি সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধনে এগিয়ে আসে তাঁদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে কাজ করা।’
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সবার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখনের ভিত্তিটা কী? যে আন্দোলন হয়েছে তা ছিল প্রথমত কোটা বিরোধী আন্দোলন, সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন নয়। পরিবর্তন সবাই চায়, পরিবর্তন হওয়া উচিত। গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করতে পারছে বিশাল জনগোষ্ঠী। শ্রেণি বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে, গণতন্ত্রের ফল আস্বাদন করতে হলে। বেআইনি কাজকর্মকে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। আইন প্রণয়ন হয়েছে সচিবালয়ে।’
মুনিরা খান বলেন, ‘আমরা গণ আন্দোলনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছি। সংবিধান সংশোধনে সদিচ্ছার প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ আসবে তা যেন জনগণের মতের প্রতিফলন সংবিধানে নিয়ে আসে। সংবিধানের সংশোধন না করে একনায়কত্বকে প্রতিরোধ করা যাবে না। সংবিধান লিখনের দায়িত্ব সবাইকেই নিতে হবে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে সংবিধানের পুনর্লিখন বা সংশোধনের। সংবিধানের যে এক–তৃতীয়াংশ সংশোধনযোগ্য নয়, তা কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নয়। মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন না করেই সংবিধান সংশোধনযোগ্য করা সম্ভব। পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিত করে সংবিধানকে পুনরায় সংশোধন সম্ভব। তরুণ প্রজন্ম, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক দলের সুপারিশগুলো নিয়ে এই সরকারের কাজ করা প্রয়োজন।’ সংবিধানপ্রণেতা কমিটিতে সবার অংশগ্রহণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় জানান তিনি।
রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘সংবিধানে সংখ্যা যাই হোক, প্রধান বিষয় হোক মৌলিক অধিকারের। ভবিষ্যৎ সংবিধান কী হবে? তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। নতুন সংবিধানে সমতলের আদিবাসী, পাহাড়ি আদিবাসী, ধর্মীয় বিভিন্ন গোত্রের জনগোষ্ঠী সবারই অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের সংবিধান থেকে শিক্ষা নিয়ে সব জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্গঠন সম্ভব। বর্তমান সংবিধানে জাতিগত নিরপেক্ষতা নেই, যা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য বর্তমান সরকার। না হলে এই সরকারও ১/১১–এর সরকার হয়ে যাবে। সংবিধান সংশোধনে দুটি উপায় অবলম্বন করা যায়: এক. জাতীয় সংবিধান প্রণেতা কমিটি গঠন, দুই. জাতীয় অধিবেশনের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করে আগাতে হবে। স্বৈরাচারী সরকার থেকে বিচারিকতন্ত্রে যেন আমরা না চলে যাই।’
হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। বিচারকদের সীমাবদ্ধতা থাকায়, শপথ দ্বারা বাধিত হওয়ায় সংবিধানের ব্যাখ্যা দেওয়া ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোনো ভূমিকা থাকে না। গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সর্বদাই প্রশ্নের সম্মুখীন। সারা বিশ্বের বিচার বিভাগ নাগরিকদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান, আর বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অধিকার হরণের প্রতিষ্ঠান!’
বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করে সংবিধানকে হাতিয়ার বানানো হয়েছে। সংবিধানের এক–তৃতীয়াংশ যেহেতু সংশোধনের কোনো উপায় নেই, তাই সংবিধান পুনর্লিখন প্রশ্নের বিষয়। আদালত সংবিধান সংশোধন করতে পারে না, ব্যাখ্যা দিতে পারে। আইনজীবীরা কেউ চ্যালেঞ্জ না করায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংবিধান বারংবার সংশোধিত হয়ে এসেছে। সংসদের কাজ হবে সংবিধানের সংশোধনের। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলে পরবর্তীতে অন্য সংশোধনীগুলোও আদালত বাতিল করে দেবে। আদালতের হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া যাবে না।’
মনজুর হাসান বলেন, ‘১৯৭২–এর সংবিধান অনেক বেশি প্রগতিশীল ছিল। এমনভাবে সংবিধানকে পরিবর্তন করা হয়েছে যে, এখন আর এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করে না, একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পাই। সংবিধান পুনর্লিখন করা প্রয়োজন, তবে একদম শূন্য অবস্থান থেকে নয়। রাজনীতি, সুশাসন, আইনের শাসন আনতে হলে ভবিষ্যতে সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন।’
অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কাছে সংবিধান কুক্ষিগত ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ক্ষমতাগুলো পেয়েছেন তা সাংবিধানিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত। কোনো কিছু করতে গেলেই সংবিধানবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। সাংবিধানিক জুজুর ভয় নাগরিকদের কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন।’
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সিজিএস গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব সংলাপে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের বক্তব্য তুলে আনার প্রচেষ্টা থাকবে। প্রতিটি সংলাপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হবে। শুধু সংস্কার নয় গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশ গঠন করতে হবে।’

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র–জনতার সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর ওপর জোর দেওয়া হবে।
আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা এমন প্রস্তাব দেন।
‘সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন, কোন পথে হবে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন?’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। সিজিএসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘৭১–এর প্রত্যাশা এবং ২০২৪–এর প্রত্যাশা অভিন্ন নয়। ১৯৭১–এর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিধায় ২০২৪–এর এই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, তাকে সমুন্নত রাখার জন্যই দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের প্রয়োজন। ১৯৭১–এর পর সংবিধান রচনায় যে ধরনের আলোচনা হয়েছিল, তা থেকে আমরা দিক নির্দেশনা পেতে পারি।’
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সংবিধান জীবিত ডকুমেন্ট, এটিকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব। গোঁজামিল দিয়ে সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে বারবার, তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব ধরনের মতামতকে সঙ্গে নিয়েই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। সরকার সিদ্ধান্ত দেবে না, সিদ্ধান্ত দেবে ছাত্র–জনতা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রায় একই সুরে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘জনগণের মতের প্রতিফলন’ ঘটানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তরুণ এই রাষ্ট্রচিন্তক।
মাহফুজ বলেন, ‘১৯৭১–এর প্রেক্ষাপট থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংবিধানে নতুনত্ব আনতে হবে। ধারাবাহিকভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজন বলা হচ্ছে, কিন্তু জনগণের মতের প্রতিফলন আদৌ হচ্ছে কিনা এটাও দেখা প্রয়োজন। আদর্শিক ও রাজনৈতিক দিকগুলোর চেয়ে জনগণের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে ধ্বংস করে গেছে যে, ব্যক্তি পর্যায়েও স্বৈরাচারিতা চলে গেছে, এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংবিধান এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে যে তাতে ব্যক্তিস্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ব্যক্তির হাতে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে অবাধ ক্ষমতা থাকায় দলীয়, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া এই ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। সাংবিধানিক পদগুলোতে কেন, কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তা আমাদের অজানা নয়। এমনকি রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ছিল, ক্ষমতার অপব্যবহারের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে!’
ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণের সমাধান হিসেবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন নাকি নতুন করে পুনর্লিখন প্রয়োজন তা বিতর্কের বিষয়। কে পুনর্লিখন করবে? কে সংশোধন করবে? এই দায়িত্ব কোনো নির্দিষ্ট সরকারের নয়, এই দায়িত্ব জনগণের। সরকারের দায়িত্ব সব স্তরের জনগণকে পথ তৈরি করে দিতে হবে সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবার জন্য।’
কোনো দল ক্ষমতায় এসে যাতে সংবিধানে নিজেদের মতো পরিবর্তন না আনতে পারে তা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কারের বদলে পুনর্লিখনের প্রস্তাব দেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘নতুনভাবে সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সংখ্যাগুরুর অত্যাচার বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান ১৯৭১–এর পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। যে আইন ছিল শাসক শ্রেণির শোষণের জন্য সেই আইন এখনো কীভাবে বিদ্যমান থাকে? ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে যদি কিনে ফেলা যায়, তাহলে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? সংবিধান বাতিলের মধ্যে গেলে, দশ–বিশ বছর পরে তা আবারও বাতিল হবে।’
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘সংসদের কাজ হলো সংবিধান বাস্তবায়ন করা, একই সংসদ সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জড়িত থাকলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। একটা দেশের সংবিধান সেই দেশের রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত। সার্বভৌমত্ব জনগণের জন্য হওয়া প্রয়োজন ছিল, যার প্রতিফলন দেখা যায়নি। মৌলিক অধিকার, সমতার কথা আছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের কথা নেই সংবিধানে। প্রত্যক্ষ প্রতিবিম্ব থাকা প্রয়োজন সংসদীয় আলোচনায়। নানা রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা তুলে আনতে হবে। সংবিধানের সংশোধনের নামে দলীয়করণ করেছে প্রতিটি সরকার। সব ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে স্বৈরাচার তৈরি হবেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা সসীম, জনগণের ক্ষমতা অসীম।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘বৈষম্য এখনো চলমান। সংবিধান সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে নতুন করে লেখা বেশ কঠিন। নতুন বাংলাদেশে নতুন সংবিধানে মৃত্যুদণ্ডকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক অধিকারের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকেই। সংবিধান সংশোধনের জন্য ভিন্ন মত, ধর্মের সবার অংশগ্রহণের প্রয়োজন।’
অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, চাকমা সার্কেলের প্রধান ও আইনজীবী রাজা দেবাশীষ রায়, সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান আলোচনায় অংশ নেন।
দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণ ও সব জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বর্তমান সংবিধান নিয়ে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার চলতে পারে না। বাংলাদেশ যে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা উত্তরণের জন্য দরকার সংবিধান পুনর্লিখন। সংবিধান প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের আমাদের দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কোনো ব্যক্তিকেই ভরসা করতে পারেন না, তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রজন্মের মানুষ ক্ষমতা পেলেই লুটপাট করবে। বাংলাদেশের সমাজের যে ভঙ্গুর অবস্থা, তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ যদি সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধনে এগিয়ে আসে তাঁদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে কাজ করা।’
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সবার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখনের ভিত্তিটা কী? যে আন্দোলন হয়েছে তা ছিল প্রথমত কোটা বিরোধী আন্দোলন, সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন নয়। পরিবর্তন সবাই চায়, পরিবর্তন হওয়া উচিত। গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করতে পারছে বিশাল জনগোষ্ঠী। শ্রেণি বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে, গণতন্ত্রের ফল আস্বাদন করতে হলে। বেআইনি কাজকর্মকে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। আইন প্রণয়ন হয়েছে সচিবালয়ে।’
মুনিরা খান বলেন, ‘আমরা গণ আন্দোলনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছি। সংবিধান সংশোধনে সদিচ্ছার প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ আসবে তা যেন জনগণের মতের প্রতিফলন সংবিধানে নিয়ে আসে। সংবিধানের সংশোধন না করে একনায়কত্বকে প্রতিরোধ করা যাবে না। সংবিধান লিখনের দায়িত্ব সবাইকেই নিতে হবে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে সংবিধানের পুনর্লিখন বা সংশোধনের। সংবিধানের যে এক–তৃতীয়াংশ সংশোধনযোগ্য নয়, তা কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নয়। মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন না করেই সংবিধান সংশোধনযোগ্য করা সম্ভব। পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিত করে সংবিধানকে পুনরায় সংশোধন সম্ভব। তরুণ প্রজন্ম, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক দলের সুপারিশগুলো নিয়ে এই সরকারের কাজ করা প্রয়োজন।’ সংবিধানপ্রণেতা কমিটিতে সবার অংশগ্রহণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় জানান তিনি।
রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘সংবিধানে সংখ্যা যাই হোক, প্রধান বিষয় হোক মৌলিক অধিকারের। ভবিষ্যৎ সংবিধান কী হবে? তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। নতুন সংবিধানে সমতলের আদিবাসী, পাহাড়ি আদিবাসী, ধর্মীয় বিভিন্ন গোত্রের জনগোষ্ঠী সবারই অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের সংবিধান থেকে শিক্ষা নিয়ে সব জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্গঠন সম্ভব। বর্তমান সংবিধানে জাতিগত নিরপেক্ষতা নেই, যা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য বর্তমান সরকার। না হলে এই সরকারও ১/১১–এর সরকার হয়ে যাবে। সংবিধান সংশোধনে দুটি উপায় অবলম্বন করা যায়: এক. জাতীয় সংবিধান প্রণেতা কমিটি গঠন, দুই. জাতীয় অধিবেশনের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করে আগাতে হবে। স্বৈরাচারী সরকার থেকে বিচারিকতন্ত্রে যেন আমরা না চলে যাই।’
হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। বিচারকদের সীমাবদ্ধতা থাকায়, শপথ দ্বারা বাধিত হওয়ায় সংবিধানের ব্যাখ্যা দেওয়া ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোনো ভূমিকা থাকে না। গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সর্বদাই প্রশ্নের সম্মুখীন। সারা বিশ্বের বিচার বিভাগ নাগরিকদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান, আর বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অধিকার হরণের প্রতিষ্ঠান!’
বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করে সংবিধানকে হাতিয়ার বানানো হয়েছে। সংবিধানের এক–তৃতীয়াংশ যেহেতু সংশোধনের কোনো উপায় নেই, তাই সংবিধান পুনর্লিখন প্রশ্নের বিষয়। আদালত সংবিধান সংশোধন করতে পারে না, ব্যাখ্যা দিতে পারে। আইনজীবীরা কেউ চ্যালেঞ্জ না করায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংবিধান বারংবার সংশোধিত হয়ে এসেছে। সংসদের কাজ হবে সংবিধানের সংশোধনের। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলে পরবর্তীতে অন্য সংশোধনীগুলোও আদালত বাতিল করে দেবে। আদালতের হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া যাবে না।’
মনজুর হাসান বলেন, ‘১৯৭২–এর সংবিধান অনেক বেশি প্রগতিশীল ছিল। এমনভাবে সংবিধানকে পরিবর্তন করা হয়েছে যে, এখন আর এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করে না, একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পাই। সংবিধান পুনর্লিখন করা প্রয়োজন, তবে একদম শূন্য অবস্থান থেকে নয়। রাজনীতি, সুশাসন, আইনের শাসন আনতে হলে ভবিষ্যতে সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন।’
অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কাছে সংবিধান কুক্ষিগত ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ক্ষমতাগুলো পেয়েছেন তা সাংবিধানিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত। কোনো কিছু করতে গেলেই সংবিধানবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। সাংবিধানিক জুজুর ভয় নাগরিকদের কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন।’
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সিজিএস গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব সংলাপে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের বক্তব্য তুলে আনার প্রচেষ্টা থাকবে। প্রতিটি সংলাপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হবে। শুধু সংস্কার নয় গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশ গঠন করতে হবে।’

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র–জনতার সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর ওপর জোর দেওয়া হবে।
আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা এমন প্রস্তাব দেন।
‘সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন, কোন পথে হবে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন?’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। সিজিএসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘৭১–এর প্রত্যাশা এবং ২০২৪–এর প্রত্যাশা অভিন্ন নয়। ১৯৭১–এর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিধায় ২০২৪–এর এই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, তাকে সমুন্নত রাখার জন্যই দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের প্রয়োজন। ১৯৭১–এর পর সংবিধান রচনায় যে ধরনের আলোচনা হয়েছিল, তা থেকে আমরা দিক নির্দেশনা পেতে পারি।’
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সংবিধান জীবিত ডকুমেন্ট, এটিকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব। গোঁজামিল দিয়ে সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে বারবার, তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব ধরনের মতামতকে সঙ্গে নিয়েই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। সরকার সিদ্ধান্ত দেবে না, সিদ্ধান্ত দেবে ছাত্র–জনতা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রায় একই সুরে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘জনগণের মতের প্রতিফলন’ ঘটানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তরুণ এই রাষ্ট্রচিন্তক।
মাহফুজ বলেন, ‘১৯৭১–এর প্রেক্ষাপট থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংবিধানে নতুনত্ব আনতে হবে। ধারাবাহিকভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজন বলা হচ্ছে, কিন্তু জনগণের মতের প্রতিফলন আদৌ হচ্ছে কিনা এটাও দেখা প্রয়োজন। আদর্শিক ও রাজনৈতিক দিকগুলোর চেয়ে জনগণের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে ধ্বংস করে গেছে যে, ব্যক্তি পর্যায়েও স্বৈরাচারিতা চলে গেছে, এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংবিধান এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে যে তাতে ব্যক্তিস্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ব্যক্তির হাতে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে অবাধ ক্ষমতা থাকায় দলীয়, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া এই ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। সাংবিধানিক পদগুলোতে কেন, কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তা আমাদের অজানা নয়। এমনকি রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ছিল, ক্ষমতার অপব্যবহারের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে!’
ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণের সমাধান হিসেবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন নাকি নতুন করে পুনর্লিখন প্রয়োজন তা বিতর্কের বিষয়। কে পুনর্লিখন করবে? কে সংশোধন করবে? এই দায়িত্ব কোনো নির্দিষ্ট সরকারের নয়, এই দায়িত্ব জনগণের। সরকারের দায়িত্ব সব স্তরের জনগণকে পথ তৈরি করে দিতে হবে সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবার জন্য।’
কোনো দল ক্ষমতায় এসে যাতে সংবিধানে নিজেদের মতো পরিবর্তন না আনতে পারে তা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কারের বদলে পুনর্লিখনের প্রস্তাব দেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘নতুনভাবে সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সংখ্যাগুরুর অত্যাচার বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান ১৯৭১–এর পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। যে আইন ছিল শাসক শ্রেণির শোষণের জন্য সেই আইন এখনো কীভাবে বিদ্যমান থাকে? ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে যদি কিনে ফেলা যায়, তাহলে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? সংবিধান বাতিলের মধ্যে গেলে, দশ–বিশ বছর পরে তা আবারও বাতিল হবে।’
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘সংসদের কাজ হলো সংবিধান বাস্তবায়ন করা, একই সংসদ সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জড়িত থাকলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। একটা দেশের সংবিধান সেই দেশের রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত। সার্বভৌমত্ব জনগণের জন্য হওয়া প্রয়োজন ছিল, যার প্রতিফলন দেখা যায়নি। মৌলিক অধিকার, সমতার কথা আছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের কথা নেই সংবিধানে। প্রত্যক্ষ প্রতিবিম্ব থাকা প্রয়োজন সংসদীয় আলোচনায়। নানা রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা তুলে আনতে হবে। সংবিধানের সংশোধনের নামে দলীয়করণ করেছে প্রতিটি সরকার। সব ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে স্বৈরাচার তৈরি হবেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা সসীম, জনগণের ক্ষমতা অসীম।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘বৈষম্য এখনো চলমান। সংবিধান সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে নতুন করে লেখা বেশ কঠিন। নতুন বাংলাদেশে নতুন সংবিধানে মৃত্যুদণ্ডকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক অধিকারের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকেই। সংবিধান সংশোধনের জন্য ভিন্ন মত, ধর্মের সবার অংশগ্রহণের প্রয়োজন।’
অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, চাকমা সার্কেলের প্রধান ও আইনজীবী রাজা দেবাশীষ রায়, সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান আলোচনায় অংশ নেন।
দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণ ও সব জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বর্তমান সংবিধান নিয়ে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার চলতে পারে না। বাংলাদেশ যে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা উত্তরণের জন্য দরকার সংবিধান পুনর্লিখন। সংবিধান প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের আমাদের দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কোনো ব্যক্তিকেই ভরসা করতে পারেন না, তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রজন্মের মানুষ ক্ষমতা পেলেই লুটপাট করবে। বাংলাদেশের সমাজের যে ভঙ্গুর অবস্থা, তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ যদি সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধনে এগিয়ে আসে তাঁদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে কাজ করা।’
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সবার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখনের ভিত্তিটা কী? যে আন্দোলন হয়েছে তা ছিল প্রথমত কোটা বিরোধী আন্দোলন, সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন নয়। পরিবর্তন সবাই চায়, পরিবর্তন হওয়া উচিত। গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করতে পারছে বিশাল জনগোষ্ঠী। শ্রেণি বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে, গণতন্ত্রের ফল আস্বাদন করতে হলে। বেআইনি কাজকর্মকে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। আইন প্রণয়ন হয়েছে সচিবালয়ে।’
মুনিরা খান বলেন, ‘আমরা গণ আন্দোলনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছি। সংবিধান সংশোধনে সদিচ্ছার প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ আসবে তা যেন জনগণের মতের প্রতিফলন সংবিধানে নিয়ে আসে। সংবিধানের সংশোধন না করে একনায়কত্বকে প্রতিরোধ করা যাবে না। সংবিধান লিখনের দায়িত্ব সবাইকেই নিতে হবে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে সংবিধানের পুনর্লিখন বা সংশোধনের। সংবিধানের যে এক–তৃতীয়াংশ সংশোধনযোগ্য নয়, তা কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নয়। মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন না করেই সংবিধান সংশোধনযোগ্য করা সম্ভব। পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিত করে সংবিধানকে পুনরায় সংশোধন সম্ভব। তরুণ প্রজন্ম, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক দলের সুপারিশগুলো নিয়ে এই সরকারের কাজ করা প্রয়োজন।’ সংবিধানপ্রণেতা কমিটিতে সবার অংশগ্রহণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় জানান তিনি।
রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘সংবিধানে সংখ্যা যাই হোক, প্রধান বিষয় হোক মৌলিক অধিকারের। ভবিষ্যৎ সংবিধান কী হবে? তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। নতুন সংবিধানে সমতলের আদিবাসী, পাহাড়ি আদিবাসী, ধর্মীয় বিভিন্ন গোত্রের জনগোষ্ঠী সবারই অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের সংবিধান থেকে শিক্ষা নিয়ে সব জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্গঠন সম্ভব। বর্তমান সংবিধানে জাতিগত নিরপেক্ষতা নেই, যা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য বর্তমান সরকার। না হলে এই সরকারও ১/১১–এর সরকার হয়ে যাবে। সংবিধান সংশোধনে দুটি উপায় অবলম্বন করা যায়: এক. জাতীয় সংবিধান প্রণেতা কমিটি গঠন, দুই. জাতীয় অধিবেশনের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করে আগাতে হবে। স্বৈরাচারী সরকার থেকে বিচারিকতন্ত্রে যেন আমরা না চলে যাই।’
হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। বিচারকদের সীমাবদ্ধতা থাকায়, শপথ দ্বারা বাধিত হওয়ায় সংবিধানের ব্যাখ্যা দেওয়া ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোনো ভূমিকা থাকে না। গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সর্বদাই প্রশ্নের সম্মুখীন। সারা বিশ্বের বিচার বিভাগ নাগরিকদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান, আর বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অধিকার হরণের প্রতিষ্ঠান!’
বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করে সংবিধানকে হাতিয়ার বানানো হয়েছে। সংবিধানের এক–তৃতীয়াংশ যেহেতু সংশোধনের কোনো উপায় নেই, তাই সংবিধান পুনর্লিখন প্রশ্নের বিষয়। আদালত সংবিধান সংশোধন করতে পারে না, ব্যাখ্যা দিতে পারে। আইনজীবীরা কেউ চ্যালেঞ্জ না করায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংবিধান বারংবার সংশোধিত হয়ে এসেছে। সংসদের কাজ হবে সংবিধানের সংশোধনের। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলে পরবর্তীতে অন্য সংশোধনীগুলোও আদালত বাতিল করে দেবে। আদালতের হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া যাবে না।’
মনজুর হাসান বলেন, ‘১৯৭২–এর সংবিধান অনেক বেশি প্রগতিশীল ছিল। এমনভাবে সংবিধানকে পরিবর্তন করা হয়েছে যে, এখন আর এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করে না, একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পাই। সংবিধান পুনর্লিখন করা প্রয়োজন, তবে একদম শূন্য অবস্থান থেকে নয়। রাজনীতি, সুশাসন, আইনের শাসন আনতে হলে ভবিষ্যতে সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন।’
অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কাছে সংবিধান কুক্ষিগত ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ক্ষমতাগুলো পেয়েছেন তা সাংবিধানিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত। কোনো কিছু করতে গেলেই সংবিধানবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। সাংবিধানিক জুজুর ভয় নাগরিকদের কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন।’
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সিজিএস গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব সংলাপে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের বক্তব্য তুলে আনার প্রচেষ্টা থাকবে। প্রতিটি সংলাপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হবে। শুধু সংস্কার নয় গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশ গঠন করতে হবে।’

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র–জনতার সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর ওপর জোর দেওয়া হবে।
আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তা এমন প্রস্তাব দেন।
‘সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন, কোন পথে হবে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন?’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। সিজিএসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘৭১–এর প্রত্যাশা এবং ২০২৪–এর প্রত্যাশা অভিন্ন নয়। ১৯৭১–এর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিধায় ২০২৪–এর এই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, তাকে সমুন্নত রাখার জন্যই দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের প্রয়োজন। ১৯৭১–এর পর সংবিধান রচনায় যে ধরনের আলোচনা হয়েছিল, তা থেকে আমরা দিক নির্দেশনা পেতে পারি।’
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সংবিধান জীবিত ডকুমেন্ট, এটিকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব। গোঁজামিল দিয়ে সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে বারবার, তা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব ধরনের মতামতকে সঙ্গে নিয়েই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। সরকার সিদ্ধান্ত দেবে না, সিদ্ধান্ত দেবে ছাত্র–জনতা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রায় একই সুরে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘জনগণের মতের প্রতিফলন’ ঘটানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তরুণ এই রাষ্ট্রচিন্তক।
মাহফুজ বলেন, ‘১৯৭১–এর প্রেক্ষাপট থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংবিধানে নতুনত্ব আনতে হবে। ধারাবাহিকভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজন বলা হচ্ছে, কিন্তু জনগণের মতের প্রতিফলন আদৌ হচ্ছে কিনা এটাও দেখা প্রয়োজন। আদর্শিক ও রাজনৈতিক দিকগুলোর চেয়ে জনগণের সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে ধ্বংস করে গেছে যে, ব্যক্তি পর্যায়েও স্বৈরাচারিতা চলে গেছে, এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) উপদেষ্টা ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংবিধান এমনভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে যে তাতে ব্যক্তিস্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ব্যক্তির হাতে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে অবাধ ক্ষমতা থাকায় দলীয়, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া এই ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। সাংবিধানিক পদগুলোতে কেন, কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তা আমাদের অজানা নয়। এমনকি রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ছিল, ক্ষমতার অপব্যবহারের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে!’
ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণের সমাধান হিসেবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন নাকি নতুন করে পুনর্লিখন প্রয়োজন তা বিতর্কের বিষয়। কে পুনর্লিখন করবে? কে সংশোধন করবে? এই দায়িত্ব কোনো নির্দিষ্ট সরকারের নয়, এই দায়িত্ব জনগণের। সরকারের দায়িত্ব সব স্তরের জনগণকে পথ তৈরি করে দিতে হবে সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করবার জন্য।’
কোনো দল ক্ষমতায় এসে যাতে সংবিধানে নিজেদের মতো পরিবর্তন না আনতে পারে তা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংস্কারের বদলে পুনর্লিখনের প্রস্তাব দেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘নতুনভাবে সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সংখ্যাগুরুর অত্যাচার বন্ধের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান ১৯৭১–এর পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। যে আইন ছিল শাসক শ্রেণির শোষণের জন্য সেই আইন এখনো কীভাবে বিদ্যমান থাকে? ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে যদি কিনে ফেলা যায়, তাহলে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? সংবিধান বাতিলের মধ্যে গেলে, দশ–বিশ বছর পরে তা আবারও বাতিল হবে।’
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘সংসদের কাজ হলো সংবিধান বাস্তবায়ন করা, একই সংসদ সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জড়িত থাকলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। একটা দেশের সংবিধান সেই দেশের রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত। সার্বভৌমত্ব জনগণের জন্য হওয়া প্রয়োজন ছিল, যার প্রতিফলন দেখা যায়নি। মৌলিক অধিকার, সমতার কথা আছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের কথা নেই সংবিধানে। প্রত্যক্ষ প্রতিবিম্ব থাকা প্রয়োজন সংসদীয় আলোচনায়। নানা রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা তুলে আনতে হবে। সংবিধানের সংশোধনের নামে দলীয়করণ করেছে প্রতিটি সরকার। সব ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে স্বৈরাচার তৈরি হবেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা সসীম, জনগণের ক্ষমতা অসীম।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘বৈষম্য এখনো চলমান। সংবিধান সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে নতুন করে লেখা বেশ কঠিন। নতুন বাংলাদেশে নতুন সংবিধানে মৃত্যুদণ্ডকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক অধিকারের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকেই। সংবিধান সংশোধনের জন্য ভিন্ন মত, ধর্মের সবার অংশগ্রহণের প্রয়োজন।’
অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, চাকমা সার্কেলের প্রধান ও আইনজীবী রাজা দেবাশীষ রায়, সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান আলোচনায় অংশ নেন।
দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণ ও সব জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বর্তমান সংবিধান নিয়ে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার চলতে পারে না। বাংলাদেশ যে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা উত্তরণের জন্য দরকার সংবিধান পুনর্লিখন। সংবিধান প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের আমাদের দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কোনো ব্যক্তিকেই ভরসা করতে পারেন না, তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রজন্মের মানুষ ক্ষমতা পেলেই লুটপাট করবে। বাংলাদেশের সমাজের যে ভঙ্গুর অবস্থা, তা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ যদি সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধনে এগিয়ে আসে তাঁদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে কাজ করা।’
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সবার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখনের ভিত্তিটা কী? যে আন্দোলন হয়েছে তা ছিল প্রথমত কোটা বিরোধী আন্দোলন, সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন নয়। পরিবর্তন সবাই চায়, পরিবর্তন হওয়া উচিত। গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করতে পারছে বিশাল জনগোষ্ঠী। শ্রেণি বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে, গণতন্ত্রের ফল আস্বাদন করতে হলে। বেআইনি কাজকর্মকে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। আইন প্রণয়ন হয়েছে সচিবালয়ে।’
মুনিরা খান বলেন, ‘আমরা গণ আন্দোলনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছি। সংবিধান সংশোধনে সদিচ্ছার প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ আসবে তা যেন জনগণের মতের প্রতিফলন সংবিধানে নিয়ে আসে। সংবিধানের সংশোধন না করে একনায়কত্বকে প্রতিরোধ করা যাবে না। সংবিধান লিখনের দায়িত্ব সবাইকেই নিতে হবে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে সংবিধানের পুনর্লিখন বা সংশোধনের। সংবিধানের যে এক–তৃতীয়াংশ সংশোধনযোগ্য নয়, তা কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নয়। মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন না করেই সংবিধান সংশোধনযোগ্য করা সম্ভব। পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিত করে সংবিধানকে পুনরায় সংশোধন সম্ভব। তরুণ প্রজন্ম, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক দলের সুপারিশগুলো নিয়ে এই সরকারের কাজ করা প্রয়োজন।’ সংবিধানপ্রণেতা কমিটিতে সবার অংশগ্রহণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় জানান তিনি।
রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘সংবিধানে সংখ্যা যাই হোক, প্রধান বিষয় হোক মৌলিক অধিকারের। ভবিষ্যৎ সংবিধান কী হবে? তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। নতুন সংবিধানে সমতলের আদিবাসী, পাহাড়ি আদিবাসী, ধর্মীয় বিভিন্ন গোত্রের জনগোষ্ঠী সবারই অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের সংবিধান থেকে শিক্ষা নিয়ে সব জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্গঠন সম্ভব। বর্তমান সংবিধানে জাতিগত নিরপেক্ষতা নেই, যা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য বর্তমান সরকার। না হলে এই সরকারও ১/১১–এর সরকার হয়ে যাবে। সংবিধান সংশোধনে দুটি উপায় অবলম্বন করা যায়: এক. জাতীয় সংবিধান প্রণেতা কমিটি গঠন, দুই. জাতীয় অধিবেশনের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করে আগাতে হবে। স্বৈরাচারী সরকার থেকে বিচারিকতন্ত্রে যেন আমরা না চলে যাই।’
হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। বিচারকদের সীমাবদ্ধতা থাকায়, শপথ দ্বারা বাধিত হওয়ায় সংবিধানের ব্যাখ্যা দেওয়া ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোনো ভূমিকা থাকে না। গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সর্বদাই প্রশ্নের সম্মুখীন। সারা বিশ্বের বিচার বিভাগ নাগরিকদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান, আর বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অধিকার হরণের প্রতিষ্ঠান!’
বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করে সংবিধানকে হাতিয়ার বানানো হয়েছে। সংবিধানের এক–তৃতীয়াংশ যেহেতু সংশোধনের কোনো উপায় নেই, তাই সংবিধান পুনর্লিখন প্রশ্নের বিষয়। আদালত সংবিধান সংশোধন করতে পারে না, ব্যাখ্যা দিতে পারে। আইনজীবীরা কেউ চ্যালেঞ্জ না করায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে সংবিধান বারংবার সংশোধিত হয়ে এসেছে। সংসদের কাজ হবে সংবিধানের সংশোধনের। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করলে পরবর্তীতে অন্য সংশোধনীগুলোও আদালত বাতিল করে দেবে। আদালতের হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া যাবে না।’
মনজুর হাসান বলেন, ‘১৯৭২–এর সংবিধান অনেক বেশি প্রগতিশীল ছিল। এমনভাবে সংবিধানকে পরিবর্তন করা হয়েছে যে, এখন আর এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করে না, একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পাই। সংবিধান পুনর্লিখন করা প্রয়োজন, তবে একদম শূন্য অবস্থান থেকে নয়। রাজনীতি, সুশাসন, আইনের শাসন আনতে হলে ভবিষ্যতে সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন।’
অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কাছে সংবিধান কুক্ষিগত ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ক্ষমতাগুলো পেয়েছেন তা সাংবিধানিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত। কোনো কিছু করতে গেলেই সংবিধানবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। সাংবিধানিক জুজুর ভয় নাগরিকদের কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন।’
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সিজিএস গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব সংলাপে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের বক্তব্য তুলে আনার প্রচেষ্টা থাকবে। প্রতিটি সংলাপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হবে। শুধু সংস্কার নয় গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশ গঠন করতে হবে।’

রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
১০ ঘণ্টা আগে
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
১৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ ঘণ্টা আগেতানিম আহমেদ, ঢাকা

রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। নতুন সংসদ নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়েও একটি বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশের খসড়া তৈরির কাজ গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে নতুন সংসদ সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে করণীয় কী হবে, তা গতকাল রাত বা আজ (সোমবার) সকালের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। আজ সকালে কমিশনের আবার বৈঠকের মাধ্যমে সুপারিশ চূড়ান্ত করে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
সনদ বাস্তবায়নে কমিশন সুপারিশের যে রূপরেখা ঠিক করেছে, তাতে প্রথমে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে করা হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে।
কমিশন সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের এই পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিকভাবে এবং কিছু কিছু বিষয় পরবর্তী সময়ে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের সর্বসম্মত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের উল্লেখ থাকবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছি। কমিশন আশা করছে, আগামীকালের (আজ সোমবার) মধ্যে সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হবে।’
দ্বিকক্ষের সংসদ নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত আছে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ সংলাপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ দল পিআর ভোটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের দাবি জানিয়েছে। আবার জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দল উভয় কক্ষেই পিআরের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি পিআরে উচ্চকক্ষ মানলে নিম্নকক্ষের পিআরের দাবি থেকে দলগুলো সরে যাবে। বিষয়টি আদেশে আলাদা করে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৈঠক সূত্র জানায়, গণভোটে যদি সনদ বেশি ‘হ্যাঁ’ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়, তাহলে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন বাধ্যতামূলক হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আদেশে আলাদা করে লেখা থাকবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদেও সংস্কার প্রস্তাব পাস হলে এর পরের ১৫ দিনের মধ্যে দলগুলো তাদের উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।
আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়ে কমিশন নানা বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে। গতকাল বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, গণভোটে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পাস হলে আগামী সংসদে সেগুলো বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক হবে। কমিশন এটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এর বাইরে কোনো নিশ্চয়তা বিধান করা যায় কি না, তা-ও কমিশনের বিবেচনায় আছে।
সংসদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জুলাই সনদ যেহেতু রাজনৈতিক দলিল, তাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজনীতিকদের ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে।’
কমিশনের পক্ষ থেকে আদেশের সঙ্গে বিকল্প একটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। কমিশন সরকারকে গণভোট নিয়ে একটি আইন তৈরি করতে বলার কথা ভেবেছে। এতে সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো থাকবে। সে ক্ষেত্রে সব প্রস্তাবের সমন্বয়ে একটি আইন বানাতে হবে। গণভোটে এটা উঠবে। সমন্বিত আইনটি পাস হয়ে গেলে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান পরিষদ পুরো বাস্তবায়ন না করতে পারলেও আইনটি সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবে বিশেষজ্ঞদের সায় নেই বলে জানা গেছে।
এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কমিশনের বিকল্প প্রস্তাবে বিষয়টি থাকবে। তবে আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আমরা এটা সমর্থন করিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না’ এবং ‘সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান কি না’—গণভোটে এ রকম প্রশ্ন রাখার কথা বিবেচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই বাস্তবায়িত হবে। এখানে কোনো দলের ভিন্নমত গুরুত্ব পাবে না।
গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে মতবিরোধ আছে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গণভোটের দিন-তারিখ কবে হবে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ রাষ্ট্রপতি, নাকি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গতকাল তাদের সংসদ ভবনের কার্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। নতুন সংসদ নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়েও একটি বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশের খসড়া তৈরির কাজ গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে নতুন সংসদ সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে করণীয় কী হবে, তা গতকাল রাত বা আজ (সোমবার) সকালের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। আজ সকালে কমিশনের আবার বৈঠকের মাধ্যমে সুপারিশ চূড়ান্ত করে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
সনদ বাস্তবায়নে কমিশন সুপারিশের যে রূপরেখা ঠিক করেছে, তাতে প্রথমে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে করা হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে।
কমিশন সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের এই পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিকভাবে এবং কিছু কিছু বিষয় পরবর্তী সময়ে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের সর্বসম্মত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের উল্লেখ থাকবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছি। কমিশন আশা করছে, আগামীকালের (আজ সোমবার) মধ্যে সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া সম্ভব হবে।’
দ্বিকক্ষের সংসদ নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত আছে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ সংলাপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ দল পিআর ভোটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের দাবি জানিয়েছে। আবার জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দল উভয় কক্ষেই পিআরের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি পিআরে উচ্চকক্ষ মানলে নিম্নকক্ষের পিআরের দাবি থেকে দলগুলো সরে যাবে। বিষয়টি আদেশে আলাদা করে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৈঠক সূত্র জানায়, গণভোটে যদি সনদ বেশি ‘হ্যাঁ’ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়, তাহলে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন বাধ্যতামূলক হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আদেশে আলাদা করে লেখা থাকবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদেও সংস্কার প্রস্তাব পাস হলে এর পরের ১৫ দিনের মধ্যে দলগুলো তাদের উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।
আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, সে বিষয়ে কমিশন নানা বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে। গতকাল বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, গণভোটে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পাস হলে আগামী সংসদে সেগুলো বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক হবে। কমিশন এটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এর বাইরে কোনো নিশ্চয়তা বিধান করা যায় কি না, তা-ও কমিশনের বিবেচনায় আছে।
সংসদ বাস্তবায়ন না করলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘জুলাই সনদ যেহেতু রাজনৈতিক দলিল, তাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজনীতিকদের ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে।’
কমিশনের পক্ষ থেকে আদেশের সঙ্গে বিকল্প একটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। কমিশন সরকারকে গণভোট নিয়ে একটি আইন তৈরি করতে বলার কথা ভেবেছে। এতে সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো থাকবে। সে ক্ষেত্রে সব প্রস্তাবের সমন্বয়ে একটি আইন বানাতে হবে। গণভোটে এটা উঠবে। সমন্বিত আইনটি পাস হয়ে গেলে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান পরিষদ পুরো বাস্তবায়ন না করতে পারলেও আইনটি সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবে বিশেষজ্ঞদের সায় নেই বলে জানা গেছে।
এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কমিশনের বিকল্প প্রস্তাবে বিষয়টি থাকবে। তবে আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আমরা এটা সমর্থন করিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না’ এবং ‘সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান কি না’—গণভোটে এ রকম প্রশ্ন রাখার কথা বিবেচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই বাস্তবায়িত হবে। এখানে কোনো দলের ভিন্নমত গুরুত্ব পাবে না।
গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে মতবিরোধ আছে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গণভোটের দিন-তারিখ কবে হবে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ রাষ্ট্রপতি, নাকি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গতকাল তাদের সংসদ ভবনের কার্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন। আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র-জনতাসহ জনগণের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর উপর জোর দিতে হবে। আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের
৩১ আগস্ট ২০২৪
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
১৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সম্প্রতি আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) উপজেলা বা থানা বা সমমান ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরীফ আল রায়হানকে মহাসচিব করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে আরও যাঁরা যাঁরা আছেন—

সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সম্প্রতি আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) উপজেলা বা থানা বা সমমান ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরীফ আল রায়হানকে মহাসচিব করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে আরও যাঁরা যাঁরা আছেন—

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র-জনতাসহ জনগণের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর উপর জোর দিতে হবে। আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের
৩১ আগস্ট ২০২৪
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
১০ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
১৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ ঘণ্টা আগেআইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে পারেন। ৩০ অক্টোবরের পর একটি এনআইডির বিপরীতে সিম নিবন্ধনের সংখ্যা ১০টিতে নামিয়ে আনা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, কোনো ঘটনা ঘটার পর দেখা যায়, সিমটি সেই ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা নয়। একজনের নামের সিম কার্ড অন্যজন ব্যবহার করে অপরাধ করে। এতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ জন্য নির্বাচনের আগে ব্যক্তিপর্যায়ে নিবন্ধন করা সিম কার্ড কমিয়ে আনা হবে।
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আপত্তি আসেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভালোভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এ বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে। দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের কর্মকাণ্ড রোধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলার রেকর্ড, তদন্ত অগ্রগতি, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া মাদকের অপব্যবহার রোধ, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনপরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা রোধ, পোশাক কারখানা–ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা রোধ, অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান, সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে পারেন। ৩০ অক্টোবরের পর একটি এনআইডির বিপরীতে সিম নিবন্ধনের সংখ্যা ১০টিতে নামিয়ে আনা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, কোনো ঘটনা ঘটার পর দেখা যায়, সিমটি সেই ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা নয়। একজনের নামের সিম কার্ড অন্যজন ব্যবহার করে অপরাধ করে। এতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ জন্য নির্বাচনের আগে ব্যক্তিপর্যায়ে নিবন্ধন করা সিম কার্ড কমিয়ে আনা হবে।
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আপত্তি আসেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভালোভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এ বৈঠকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে। দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের কর্মকাণ্ড রোধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলার রেকর্ড, তদন্ত অগ্রগতি, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া মাদকের অপব্যবহার রোধ, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনপরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা রোধ, পোশাক কারখানা–ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা রোধ, অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান, সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র-জনতাসহ জনগণের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর উপর জোর দিতে হবে। আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের
৩১ আগস্ট ২০২৪
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
১০ ঘণ্টা আগে
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো সভার চিঠি থেকে জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন।
চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির চিঠি অনুযায়ী, অন্তত ৩১ জন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—মন্ত্রিপরিষদসচিব; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, নৌপরিবহন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব; পররাষ্ট্র, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার), অর্থ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবেরা। এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবকেও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে সভায় পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডাক অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস), ঢাকাকেও সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০ অক্টোবর ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেছে।
কমিশন গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে ২৮ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয় এবং একই দিন শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা করে ইসি। সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গেও আরও সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভা ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো সভার চিঠি থেকে জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন।
চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির চিঠি অনুযায়ী, অন্তত ৩১ জন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—মন্ত্রিপরিষদসচিব; স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, নৌপরিবহন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব; পররাষ্ট্র, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার), অর্থ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবেরা। এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবকেও বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে সভায় পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডাক অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস), ঢাকাকেও সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০ অক্টোবর ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেছে।
কমিশন গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে ২৮ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয় এবং একই দিন শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা করে ইসি। সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গেও আরও সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত সংবিধানের মৌলিক দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার পক্ষে অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ ক্ষেত্রে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র-জনতাসহ জনগণের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর উপর জোর দিতে হবে। আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টাসহ সরকারের
৩১ আগস্ট ২০২৪
রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গণভোটের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে বাস্তবায়ন আদেশ পাস হয়ে গেলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্
১০ ঘণ্টা আগে
সহকারী উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সহকারী উপজেলা ও থানা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিম কার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার দুপুরে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে ত্রয়োদশ
১৫ ঘণ্টা আগে