Ajker Patrika

অর্থনৈতিক অনাচারের চক্র ভাঙার সুযোগ তৈরি হয়েছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ৩৬
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) বৈঠকে কথা বলছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) বৈঠকে কথা বলছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: আজকের পত্রিকা

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশের চলমান অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা ও সংকটের মূলে আছে স্বেচ্ছাচারী রাজনীতি ও অনাচারী অর্থনীতি। বিগত সরকারের সময়ে অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাচারী অর্থনীতি সৃষ্টি করা হয়েছিল।’

আজ বৃহস্পতিবার প্ল্যানিং কমিশনে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সুপারিশ বৈঠকে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অনাচারের যে চক্র তৈরি হয়েছে, তা ভাঙার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মূলে—রাজনৈতিক বিবেচনায় পক্ষপাতদুষ্ট মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মেগা চুরি। যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে। এটার বিপরীতে উন্নয়নের একটি বয়ান সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাচারী রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে অনাচারের যে চক্রাকার আবহ সৃষ্টি হয়েছিল, তা ভাঙার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘শেষ বিচারে, রাজনৈতিক সংস্কার ঠিক না হলে, আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, কর্মদক্ষতা এবং সুশাসনের পথে বাধা সৃষ্টি হবে। আমরা বর্তমান যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি, ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে—তা নির্ধারণ করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কতটা স্বস্তি দিচ্ছে তার ওপর। অর্থাৎ, এ সংস্কারগুলোর পরিধি, ধারাবাহিকতা এবং গতি কী হবে, তা নির্ধারিত হবে সরকার বর্তমান অর্থনীতিতে কতখানি আশ্বস্ত থাকে এবং জনগণ কতখানি স্বস্তিতে থাকে তা দিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলমান। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইতিবাচক সংস্কার পদ্ধতি ও কার্যক্রম আমরা লক্ষ করছি। একই সঙ্গে, রাজনৈতিক বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আসছে। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি বা দলের ওপর আমরা যখন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করি, তখন তার অর্থনৈতিক তাৎপর্য থাকে। সে ক্ষেত্রে, আমরা তাদের রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভূমিকাকেও সংকুচিত করার পথ সৃষ্টি করি। সেহেতু, এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে। এসব বিষয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’

বৈঠকে ইএফআরের সাংবাদিক নেতারা অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে নানা সংস্কার সুপারিশ তুলে ধরেন। বিশেষ করে, স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশাল অনিয়ম রোধে করণীয় তুলে ধরতে কমিটিকে অনুরোধ জানান। মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির পরিমাণ নির্ধারণে পদ্ধতিগত সংস্কার, রাষ্ট্রের ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য প্রবাহের পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং ডেটার সহজলভ্যতার ক্ষেত্র প্রণয়নসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হাসান বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য কিছু বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু ব্যাপকতা ও গভীরতা বলে একটা বিষয় আছে। এখন আমরা ব্যাপকতার চাইতে গভীরতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। রেলপথ, পানিপথ, সড়কপথ ছাড়াও অদৃশ্য কিছু পথ রয়েছে, এখন এসব পথের গভীরতা বিবেচনায় সংস্কার অগ্রগতি পরিচালনা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের মাটির কাছাকাছি থাকতে হবে। খুব বেশি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা করা উচিত হবে না। তবে জবাবদিহির পদ্ধতিগত সংস্কারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই ব্যাপারে প্রণয়ন কমিটি একটি দৃশ্যমান পদ্ধতি প্রণয়নে কাজ করছে।’

কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘দেশের সার্বিক সংকটের সমস্যাটা মোটা দাগে চিহ্নিত করলে দেখা যাবে, এটা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৪ সালের একটি অগণতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে। তখন থেকেই উন্নয়নের বয়ানে ক্রোনিক্যাপিটালিজম বা চামচা পুঁজিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রকল্পভিত্তিক দুর্নীতি, ব্যয়ভিত্তিক দুর্নীতির মাধ্যমে হরিলুট হয়েছে।’

সেলিম রায়হান আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক অর্থনীতির যে আবহও সৃষ্টি হয়েছে, তা রাজনীতিক আমলা ও ব্যবসায়ীরা একটি অ্যালায়েন্স তৈরি করে করেছে। তারাই মূলত এই উন্নয়নের বয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার প্রয়োজন ছিল, তারা তাদের স্বার্থের কারণে এই সংস্কারগুলোকে কখনোই সামনে আসতে দেয়নি। কারণ, এই সংস্কারগুলো তাদের স্বার্থে বিঘ্ন ঘটাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত