Ajker Patrika

পদ্মায় সেতু নির্মাণ বিপুল চ্যালেঞ্জ জয়

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী
আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ১০: ৪১
পদ্মায় সেতু নির্মাণ বিপুল চ্যালেঞ্জ জয়

প্রশ্ন: পদ্মা নদীর কী কী বৈশিষ্ট্য সেতু নির্মাণের সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল?
বসুনিয়া: প্রথম বিবেচনায় ছিল নদী যেখানে অতিক্রম করতে চাই, সেখানে রাস্তাঘাট আগে থেকেই আছে কি না। থাকলে পুরোপুরি নতুন অ্যালাইনমেন্টে 
যেতে হয় না। খরচও কম পড়ে। এ ছাড়া, নদীর বৈশিষ্ট্য কেমন। ভাঙে কেমন। 

গতিপথ বদলায় কি না। সেতু যে স্থানে হবে, সেখানকার মাটি কেমন। ভূমিকম্পের প্রবণতা কেমন। এসব করতে করতে শুরুতে দুটি স্থান ঠিক করা হয়েছিল। তবে মাওয়া প্রান্তে বর্তমান স্থানে মাটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় এখানেই সেতু নির্মিত হলো। 

প্রশ্ন: প্রকৌশলগত দিক থেকে পদ্মা সেতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী কী? 
বসুনিয়া: পদ্মা খুবই খরস্রোতা নদী। বেশ গভীর। নদীর তলদেশ ও গভীরে মাটির অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সেতুতে স্প্যান লম্বা দিতে হয়। স্প্যান ছোট দিলে ‘পিয়ার’ (কলাম, যা সাধারণভাবে পিলার হিসেবে পরিচিত) কাছাকাছি দিতে হয়। এতে পানির ঘূর্ণনে নিচে মাটি সরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এসব বিবেচনায় প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার করা হয়েছে, যা ৫০০ ফুটের বেশি। সেতুতে এ রকম ৪১টি স্প্যান আছে। সব মিলিয়ে সেতুটি ৬ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ। 
সাধারণ সেতুতে প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট স্প্যান দেওয়া হয়। যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর স্প্যান প্রি-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার করে করে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পদ্মার বর্তমান স্থানে ১৫০ মিটার দীর্ঘ একই ধরনের স্প্যান দিলে ঝামেলা হতো। শুরু থেকেই রেলের ব্যবস্থা এবং মাঝখানে মিডিয়ানসহ চার লেনের প্রশস্ত সেতু নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় ছিল। শেষ পর্যন্ত সেতুটি ওপরের অংশে ৭২ ফুট চওড়া হয়ে গেছে। এ ছাড়া এখানে দুই ধরনের স্টিল, রিইনফোর্সড কংক্রিট ও প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিটের সমন্বয়ে স্প্যানগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেতুর ভিত্তি মজবুত করার জন্য নদীর তলদেশে কমপক্ষে ১২০ মিটার গভীর পাইল করতে হয়েছে। পাইলের অনেক স্থানে বাঁকা করে করতে হয়েছে, যা বেশ ঝামেলার ছিল। 

প্রশ্ন: যমুনার ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে পদ্মা সেতু কীভাবে আলাদা? 
বসুনিয়া: বঙ্গবন্ধু সেতু শুরুতে শুধু সড়ক সেতু হিসেবে নির্মাণ আরম্ভ হয়। পরে একপাশে রেললাইন যুক্ত হয়; কিছুটা ঝুলন্ত অবস্থায়। এটা নিরাপদ। কিন্তু সড়কের পাশাপাশি রেল বসাতে গিয়ে লেনগুলো ছোট হয়ে গেছে। বাস যখন যায়, মনে হয় গায়ে গায়ে লেগে যাচ্ছে। পাঁচ কিলোমিটার লম্বা একটি সেতুতে এটা মানানসই ব্যবস্থা নয়। পদ্মা সেতুতে তা হবে না। এটি যথেষ্ট প্রশস্ত সেতু। 

প্রশ্ন: পদ্মা সেতুতে কিছু কি নতুন করা হয়েছে, যা পৃথিবীর খুব কম সেতুতেই আছে বা আদৌ নেই? 
বসুনিয়া: পদ্মা সেতুর মতো এত গভীরতায় আর কোনো সেতুতে পাইল দেওয়া হয়নি। প্রতিটি পিয়ারের নিচে ছয়টি করে পাইল আছে। সবগুলো পাইল আড়াই ইঞ্চি পুরু স্টিল দিয়ে ১০ ফুট ব্যাসে তৈরি এবং বাঁকা। এর মধ্যে কয়েকটি পিয়ারের নিচে পাইল করার সময় গভীরে কাদামাটি পাওয়া গেল। সেখানে মাটির মান উন্নত করতে তীব্র চাপে রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করানো হলো। পরে লোড পরীক্ষা করে দেখা গেছে পাইল অনেক শক্তিশালী হয় গেছে।

প্রশ্ন: সেতু কি দেখতে ইংরেজি ‘এস’ আকৃতির? 
বসুনিয়া: ঠিক ‘এস’ নয়। সেতুটি বাঁকানো রেখার মতো। দীর্ঘ সেতু সাধারণত সোজা করে নির্মিত হয় না। যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুও একটু বাঁকা। এর একটি কারণ হলো, কলামের ওপর যেসব বিয়ারিং সেতুর ওজন বহন করে, তার ছয়-সাতটি মিলে একেকটি মডিউল হয়। একেকটি মডিউল শেষে যেখানে নতুন মডিউল শুরু হয়েছে, সেখানেই বাঁক দিতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সেতুর একটি মনস্তাত্ত্বিক সমীক্ষা থাকে। সেই সমীক্ষায় বলা হয়, সেতু যদি সোজা হয়, তাহলে গাড়িচালকের একঘেয়েমি আসে। সেতুতে বাঁক থাকলে চালকেরা সতর্ক থাকে। এ ছাড়া, সেতু সোজা থাকলে উল্টো দিকের হেডলাইট থেকে আসা আলোয় চালকের বেশ অসুবিধা হয়। চতুর্থ কারণ হলো, বাঁকা সেতুতে আলো জ্বালানো হলে নান্দনিকতা বেড়ে যায়। 

প্রশ্ন: কেন সেতুটি দ্বিতল করতে হলো?
বসুনিয়া: নিচে রেল আর ওপরে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সেতুটি দ্বিতল করতে হয়েছে। পাশাপাশি উভয় সুবিধা নিতে গেলে আরও চওড়া করতে হতো সেতুটি। 

প্রশ্ন: সেতু নির্মাণে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে?
বসুনিয়া: প্রথম চ্যালেঞ্জ এল বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকে। তারা অর্থায়ন বন্ধ করল; একই সঙ্গে অন্য বিদেশিরাও। শেষ পর্যন্ত নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করতে গেলে ডলারের সংস্থান। মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে যেটুকু কেনাকাটা স্থানীয়ভাবে হয়েছে, তা টাকায় পরিশোধ করা হয়েছে। আর যা বিদেশ থেকে আনতে হয়েছে, তা ডলারে পরিশোধ করা হয়েছে। সরকার তো আর ডলার ছাপায় না। তাই বিদেশ থেকে শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাবদ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় যে ডলার আসে, তা খরচ করার ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করল। সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় ডলার এসব ব্যাংক থেকে নেওয়া হলো। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ঋণ পাওয়া গেলে সুদ দিতে হতো হয়তো ১ শতাংশ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দিতে হয়েছে কয়েক গুণ বেশি। 

প্রশ্ন: ২৬ জুন যানবাহন চালুর পর রেললাইন পাতার ক্ষেত্রে কি কোনো সমস্যা হতে পারে?
বসুনিয়া: মূল সেতু নির্মাণের সময়ই উভয় পাশে রেলসেতুর জন্য প্রয়োজনীয় ঢালসহ ৭০ ফুট পর্যন্ত উঁচু ভায়াডাক্ট এবং মূল সেতুর নিচের অংশে স্টিলের কাজ করে দেওয়া হয়েছে। এখন রেলের স্লিপার যাতে সমানভাবে বসে, সে জন্য কংক্রিটের আড়াই ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে কমপেনসেটিং স্ল্যাব করে নিতে হবে। এর ওপর স্লিপার বসিয়ে তার ওপর রেললাইন পাতা হবে। কমপেনসেটিং স্ল্যাব ঢালাইয়ের সময় গাড়ি চললে কিছু ঝামেলা হতে পারে। তবে সেতুর লোড নেওয়ার যে ব্যবস্থা আছে, তাতে খুব বেশি কম্পন হওয়ার কথা নয়। তার পরও দরকার হলে রাতে সেতুতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে ঢালাই দেওয়া যেতে পারে। 

প্রশ্ন: এই সেতু নির্মাণ থেকে এখানকার তরুণ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিকর্মীরা কি কিছু শিখলেন?
বসুনিয়া: পদ্মা সেতুর কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণে এখানে ও চীনে বাংলাদেশের অনেক প্রকৌশলী যুক্ত ছিলেন। অনেক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কাজ করেছেন। যেমন কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত ঝালাই করা এবং ঠিকমতো ঝালাই হলো কি না, তা এক্স-রে দিয়ে পরীক্ষা করা এবং নদীশাসনের কাজ, সবই তো বাঙালিরাই করেছে। তাঁদের অনেকেই বেশ অভিজ্ঞ হয়ে গেছেন। বিশ্বের বহু নির্মাণ সংস্থায় একই ধরনের কাজে তাঁদের অনেকেই সুযোগ পাবেন। 

প্রশ্ন: সেতু চালুর পর কী কী বিষয়ে নজর রাখা দরকার হতে পারে?
বসুনিয়া: পদ্মা নদীর তীব্র স্রোত ফেরি ও লঞ্চ চলাচলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। দুটি পিয়ারের (কলাম) মাঝখানে ৪৫০ ফুট জায়গা আছে। ফেরিগুলো মাত্র ৫০ ফুট চওড়া। সেতু অতিক্রম করে ভাটির দিকে যাওয়ার সময় সাবধানে চললে সেতুতে লাগার কোনো কারণ নেই। দুর্ঘটনা এড়াতে নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষকে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন 

প্রশ্ন: পদ্মা সেতুতে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সেতুর বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে ব্যয় কি এর চেয়ে কমানো যেত?
বসুনিয়া: বাংলাদেশে নির্মাণ ব্যয় শুরু ও শেষের হিসাবে পার্থক্য হয়ে যায়, কারণ শুরুতে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রফর্মা) ঠিকমতো করা হয় না। জমি অধিগ্রহণে ব্যয়ও এখানে বেশি। এর বাইরে পদ্মা সেতুতে খরচ বেশি হওয়ার বড় কারণ নদীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্মাণকাজ করা। তীব্র স্রোত এবং নদীর তলদেশ ও গভীরে মাটির অবস্থা বিবেচনায় সেতুর ভিত্তি মজবুত করার জন্য কমপক্ষে ১২০ মিটার গভীর পাইল করতে হয়েছে। পাইলের অনেক স্থানে বাঁকা করে করতে হয়েছে, যা বেশ ঝামেলার ছিল। সেতুতে স্থাপন করা একেকটি স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ১৫০ টন। চীনে নির্মিত এসব স্প্যান আনতে এবং তীব্র স্রোতের নদীতে স্থির থেকে কলামের ওপর স্থাপনে যথাক্রমে শক্তিশালী জাহাজ ও ক্রেন ব্যবহার করতে হলো। এ ধরনের জটিল কাজে অনুমানের বাইরেও বহু ঘটনা ঘটে। যত গভীরে যাবে, কাজে যত অনিশ্চয়তা ও জটিলতা থাকবে, খরচ তত বাড়বে।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের যে ব্যাখ্যা দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না বিধায় এটি বাতিল করা হয়েছে মর্মে জানানো হয়।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এমনটি জানানো হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে।

সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ ক্লাস্টারে সমসংখ্যক শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি সচিব কমিটির সুপারিশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

সচিব কমিটি মনে করে, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই প্রস্তাবিত নিয়োগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ক্লাস্টারভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে একই শিক্ষককে ২০টির বেশি বিদ্যালয়ে যুগপৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ফলে তাঁর পক্ষে কর্মঘণ্টা ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না বলে সচিব কমিটি মনে করে।

পরে অর্থের সংস্থান সাপেক্ষে সব স্কুলে এ রকম নতুন বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃজন ও সেসব পদে নিয়োগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে কমিটি অভিমত ব্যক্ত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত হাজারের বেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সারা দেশের অধস্তন আদালতের হাজারের বেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্ত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির অংশগ্রহণে ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় তাঁদের পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্ত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য প্যানেলে ছিলেন– অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদের জন্য ৩৪৫ জন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে ২০৭ এবং সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫৫১ জন। সব মিলিয়ে পদোন্নতির প্যানেলে ১ হাজার ১০৩ জন বিচারিক কর্মকর্তার নাম থাকলেও নানা কারণে বেশ কয়েকজনের নাম অনুমোদন হয়নি।

২০২৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডারও ফুল কোর্ট সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তবে সরকারি ক্যালেন্ডার এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় তা অনুমোদিত হয়নি।

সম্প্রতি ১ হাজার ১০৩ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পদোন্নতির প্যানেলে ছিল কয়েকজন বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নাম, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান।

বিচারকদের পদোন্নতি যেভাবে হয়

সব মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির জন্য ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) থাকে। ওই কমিটি পদোন্নতির প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এক দিনেই প্যানেলের সবার পদোন্নতির জিও জারি করা হয়।

তবে বিচারকদের ক্ষেত্রে প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ওঠে। সভায় অনুমোদন পাওয়ার পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে ওই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত থাকে এবং পদ খালি হওয়ার পর সময়ে সময়ে জিও জারি করা হয়।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী জজদের এই পদে চার বছর দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করতে হয়। সিনিয়র সহকারী জজদের যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছরের শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয় না। অনেকেই বছরের পর বছর প্যানেলভুক্ত হয়ে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ: নিজাম হাজারীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ০২
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে ৪৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ও ৪৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার দুদকের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদক মহাপরিচালক বলেন, অভিযুক্ত নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সন্দেহজনক লেনদেনের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, নুরজাহান বেগম দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সম্পদের ঘোষণা দেন। তবে যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যায়, তাঁর আয় ও পারিবারিক ব্যয়ের তুলনায় ৪৫ কোটি ৩৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৫১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মেলে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নুরজাহান বেগমের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের একটি হিসাবে ৪৩ কোটি ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ৮০৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করেছে দুদক।

এ তথ্য আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এর আগেও অবৈধ সম্পদ অর্জন, ফেনী ও ঢাকায় নামে-বেনামে জমি ও ভবন ক্রয় এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে একাধিক তদন্ত চলছে।

সূত্রটি আরও জানায়, দুদকে পাঠানো সম্পদ বিবরণীতে ঘোষিত তথ্য ও বাস্তব সম্পদের মধ্যে বিশাল অমিল পাওয়া যায়। এর ধারাবাহিকতায় নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফেনী-২ আসন থেকে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দখলদারত্বের অভিযোগ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১০১ জন। সব মিলিয়ে এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯২৩ জনে। তাদের মধ্যে ২৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে মশাবাহিত এ রোগে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডেঙ্গুবিষয়ক হালনাগাদ করা তথ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে তিনজন।

এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় একজন মারা গেছে। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে সর্বোচ্চ ২৪১ জন ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৭৫ জন, রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ২০৮, বরিশালে ১৫১, খুলনায় ৫৯, চট্টগ্রামে ১২৫, রাজশাহীতে ৪৫, ময়মনসিংহে ৭৫, রংপুরে ১৯ ও সিলেটে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

গত অক্টোবর মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২২ হাজার ৫২০ জন, যা এই বছরের এক মাসে সর্বোচ্চ। একই সময়ে ৮০ জন মারা গেছে, যা এ বছরে একক মাসের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ১৫ হাজার ৮৬৬ জন ভর্তি হয়েছিল এবং ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে সাত, মে মাসে তিন, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১ ও আগস্টে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্চ মাসে কোনো মৃত্যু হয়নি।

চলতি মাসের চার দিনে ৪ হাজার ৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে আর মারা গেছে ১৪ জন চিকিৎসাধীন রোগী।

দেশে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আর মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন।

২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন, ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২, ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯, ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত