Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৪০, গণপিটুনিতে মৃত্যু ১৫৩

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৩৪
অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৪০, গণপিটুনিতে মৃত্যু ১৫৩

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৪০ জন। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ (Odhikar) জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৪ মাস অতিক্রম করলেও, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মোট ৪০টি। এর মধ্যে নির্যাতনে মৃত্যু ১৪, গুলিতে নিহত ১৯ এবং পিটিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন সাতজন।

অধিকার বলেছে, ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ১১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন পুলিশের হাতে, একজন সেনাবাহিনীর হাতে এবং সাতজন যৌথ বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজনকে নির্যাতনে, ছয়জনকে গুলিতে এবং দুজন পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্টের ৯ তারিখের পর ওই মাসে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। সেপ্টেম্বরে ৯ জনের পর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে একজন করে এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মারা যান পাঁচজন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন। মার্চ ও এপ্রিল মাসে মারা যান একজন করে দুজন। এরপর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডের শিকারের সংখ্যা যথাক্রমে ৪, ৩, ৬, ৩ ও ২।

অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ২৪২টি। এর মধ্যে আহত হয়েছেন ১২৯ জন, নিহত ১, লাঞ্ছিত ৪৩, আক্রমণ ৫, হুমকির শিকার ৩১ এবং মামলার শিকার ৩৩ জন।

অধিকারের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ১ জন নিহত, ৩৪ জন আহত, ১১ জন লাঞ্ছিত, ৯ জন হুমকির শিকার ও ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এ ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে নিহত ২৮১, আহত ৭ হাজার ৬৯৮ জন। এ ছাড়া চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৬ জন নিহত এবং ১ হাজার ৫৩৭ জন আহত হয়েছেন। এই তিন মাসে বিএনপির ৮২টি ও আওয়ামী লীগের একটি অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আটজন নিহত ও ৭৪০ জন আহত এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে এ বছরের মার্চে, ৯৪৪টি। ৮৬২টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। গত বছরের আগস্টে (৯–৩১ আগস্ট) সংখ্যাটি ছিল ৫০০। ৭৯৮টি ঘটনা ঘটে এ বছরের এপ্রিলে। গত জুন, জুলাই ও আগস্টে সংখ্যাটি ছিল যথাক্রমে ৪৮৯, ৫৭৯ ও ৬৫৮। গত সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটি নেমে দাঁড়ায় ৩০০-তে।

১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন ২৮১ জন। সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি নিহত হন এ বছরের মার্চে ৪৪ জন, এরপর এক মাসে বেশি নিহত হন গত বছরের আগস্টের ২৩ দিনে ৩৩ জন।

১৪ মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ১৫৩ জনের। এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে, ১৮টি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ ঘটনা ছিল ১৭টি। গত তিন মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ৪৫।

গত তিন মাসে ১৮৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭৭ জন নারী এবং ১১১ জন মেয়েশিশু। ওই ৭৭ জন নারীর মধ্যে ১৮ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং দুজন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন। ১১১ জন কন্যাশিশুর মধ্যে ১৩ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৬ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আটজন নারী ও মেয়েশিশু যৌন হয়রানির (উত্ত্যক্তকরণ) শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুজন পুরুষ আহত হয়েছেন এবং তিনজন নারী নিহত হয়েছেন।

গত তিন মাসে মোট ১২ জন নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন নারীকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে, পাঁচজন বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার এবং একজন আত্মহত্যা করেছেন।

উল্লেখিত, এক বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ৩৫ জন বাংলাদেশি, আহত হয়েছেন ৩৪ জন এবং পুশ ইন করা হয়েছে ২ হাজার ৩৩৩ জনকে। অবশ্য পুশ ইনের ঘটনাগুলো ঘটেছে চলতি বছরের মে মাস থেকে।

এ ছাড়া চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ১০ বাংলাদেশি নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন। নিহত ১০ জনের মধ্যে সাতজনকে গুলি করে হত্যা এবং তিনজনকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০ জনকে গুলি করে এবং চারজনকে নির্যাতন করে আহত করা হয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকার মানবাধিকারকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ ৫৪৪ জনকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে নারী

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ