Ajker Patrika

পুলিশের অস্ত্র-গোলাবারুদ

লুট হওয়া ১,৩৬৩ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি এক বছরেও

  • ৫ আগস্ট পুলিশের ৫ হাজার ৭৫৩ অস্ত্র লুট হয়, উদ্ধার হয়েছে ৪ হাজার ৩৯০টি।
  • লুট হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২ গোলাবারুদ, এখনো উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি।
  • লাইসেন্স স্থগিত করা আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর বেশির ভাগই থানায় জমা হয়নি।
রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০: ৫০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশের বিভিন্ন থানা ও পুলিশের স্থাপনা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪০০ অস্ত্র ও আড়াই লাখের মতো গোলাবারুদ এক বছরেও উদ্ধার হয়নি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তি নেই মানুষের মনে।

পুলিশের লুণ্ঠিত সব অস্ত্র-গুলি উদ্ধার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঝুঁকি দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির স্বার্থে দ্রুত এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের তাগিদ দিয়েছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা দেশের বিভিন্ন থানা ও পুলিশের স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রে জানা যায়, সে সময় বিভিন্ন থানা ও পুলিশের স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫৩ আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখ ৭ হাজার ২৬২টি গুলি লুট হয়। পাশাপাশি ৩২ হাজার ৫টি টিয়ার গ্যাসের শেল, ১ হাজার ৪৫৫ টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড, ৪ হাজার ৬৯২ সাউন্ড গ্রেনেড, ২৯০ স্মোক গ্রেনেড, ৫৫ স্টান গ্রেনেড, ৮৯৩ মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড এবং ১৭৭টি টিয়ার গ্যাস স্প্রে লুট হয়।

১২ আগস্ট থেকে পুলিশ সদর দপ্তর একাধিকবার লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার আহ্বান জানায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর এগুলো জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়।

সেপ্টেম্বর থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী যৌথ অভিযান চালায় অন্তর্বর্তী সরকার। সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেন। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে এখনো ১ হাজার ৩৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। লুণ্ঠিত ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২ গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি। গত ৩১ জুলাই এই তথ্য পাওয়া যায়।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, লুণ্ঠিত সব আগ্নেয়াস্ত্র এখনো ফেরত আসেনি বা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য এটি আরও বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলায় একটি বড় ধরনের ঝুঁকি চলে আসে।

এদিকে গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, অর্থাৎ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকদের দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। নির্ধারিত সময়ে জমা না দেওয়া অস্ত্রগুলো এখন অবৈধ। এসব অস্ত্রের মালিকদের কারও কারও বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে বেসামরিক নাগরিকদের অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল প্রায় ৫০ হাজার।

এদিকে রাজধানীতে গত সাত মাসে খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা চার শতাধিক। ডাকাতির ঘটনাও রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন অপরাধ ঘটছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শুধু রাজধানী ঢাকায় ১৫৪টি খুন, ৩৩ ডাকাতি, ২৪৮ ছিনতাই এবং ১ হাজার ৬৮টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ না করায় ছিনতাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

সূত্র জানায়, লুট হওয়া সব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়া এবং বিগত সরকারের আমলে দেওয়া লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা অস্ত্রগুলো জমা না পড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে চিন্তিত পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষ সতর্কবার্তাও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুরুত্বসহ দেখছে। সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি খুন, ছিনতাইয়ে অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অস্ত্র ব্যবহার আমাদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। লুট হওয়া অস্ত্র বা যেকোনো অবৈধ অস্ত্র বা বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার যেন না হয়, এসব বিষয় আমাদের নজরে আছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অর্ধেক আসামিই খালাস পাচ্ছে দুদকের মামলায়

  • ১১ মাসে দায়ের ৫১২টি মামলা
  • দেশে সম্পদ ক্রোক ৩,৩৬১ কোটি টাকার
  • জরিমানা আদায় ৫,০৫৩ কোটি টাকা
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
অর্ধেক আসামিই খালাস পাচ্ছে দুদকের মামলায়

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর প্রায় অর্ধেকেই আসামিরা শেষ পর্যন্ত খালাস পাচ্ছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যেসব মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, তার পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে মোট ২২৮টি মামলার রায় হয়েছে। ১০৩টি মামলাতেই আসামিরা খালাস পেয়েছেন। সেই হিসাবে ৪৯ শতাংশ মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। একই সময়ে আসামির সাজা হয়েছে ১২২টি মামলায়। সাজার হার মামলার ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া নিষ্পত্তি হয়েছে ১০টি মামলা ও প্রত্যাহার করা হয়েছে একটি মামলা। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এই হার অনেকটাই কম।

দুদকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১১ মাসে সংস্থাটি মোট ৫১২টি মামলা করেছে। এ সময়ে দুদকে জমা পড়া ১১ হাজার ৬৩০টি অভিযোগের মধ্যে ৯৬০টি আমলে নেওয়া হয়। অভিযোগ আমলে নেওয়ার হার ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই বেশি।

দুদকের আবেদনে এই সময়ের মধ্যে দেশে ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ২৯ লাখ টাকার সম্পদ এবং বিদেশে ৯৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।

১১ মাসে দুদক মোট ৩১৫টি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অপর দিকে ৭৩টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এই সময়ে দণ্ডিত আসামিদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকার জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে; যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য।

দেশের বিভিন্ন আদালতে দুদকের ৩ হাজার ৪৫১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭টি মামলা বিচারাধীন এবং ৪০৪টি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত। ঢাকায় বিচারাধীন ৮৭৪টি এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ১৭৩টি মামলার বিচার চলছে।

দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, দুদক অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগের মেরিট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এখানে রাজনৈতিক বা সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

তবে সাজার হার কমে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন দুদকের লিগ্যাল শাখার সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুদক সব সময় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে। এটা দুদকের বড় দুর্বলতা।’

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ

আজ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে দুদক কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসন পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা: গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, মানববন্ধনসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। সকালে রাজধানীতে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা ও দুদকের পতাকা উত্তোলন, ফেস্টুন-বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেল প্রকল্প: অর্থায়ন নিশ্চিত হয়নি বেড়েছে অধিগ্রহণ ব্যয়

  • জমি অধিগ্রহণে ডিপিপির প্রাক্কলন থেকে ব্যয় বেড়েছে ৩২৩ কোটি টাকা।
  • ডিপিপিতে জমির পরিমাণ ছিল ৯৬০ একর, এখন লাগবে ৯০১.৭৭ একর।
  • ভারতীয় এলওসি বাতিল, নতুন অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে এআইআইবি।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অর্থায়ন এখনো নিশ্চিত না হলেও বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় বেড়েছে ৩২৩ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এখন সমীক্ষা শেষে জমির পরিমাণ কমে ৯০১.৭৭ একর হলেও অধিগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ঋণের অর্থছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় অর্থায়ন বাতিল করে। ফলে এই প্রকল্পের জন্য নতুন অর্থায়নকারীর খোঁজ চলছে। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) প্রকল্পটিতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আফজাল হোসেন।

২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন (সিরাজগঞ্জ) পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের আওতায় এমব্যাংকমেন্টসহ ৮৬.৫০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন এবং ৩৭ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ লুপ ও ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। এই রেললাইন নির্মিত হলে ঢাকা থেকে রেলপথে বগুড়ার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে যাবে। সময় বাঁচবে কয়েক ঘণ্টা।

রেলওয়ের অন্যতম বড় এই প্রকল্পের মেয়াদ প্রথমে নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

২০১৮ সালে এলওসির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়ার কথা ছিল ভারতের। বাকি অর্থায়ন করার কথা ছিল বাংলাদেশ সরকারের। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় অর্থায়ন বাতিল করে।

এদিকে ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদনে দেখে গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের দামের ভিত্তিতে। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীসহ সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় ২০২৫ সালের হালনাগাদ ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ডিপিপিতে ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (অ্যালাইনমেন্ট) পথরেখা চূড়ান্ত করে এবং ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করার পর প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৯০১.৭৭ একর। সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার জেলা প্রশাসকেরা জমি অধিগ্রহণে চূড়ান্ত ব্যয় প্রাক্কলন দেওয়ায় তা দাঁড়ায় ২ হাজার ২৪৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে খরচ বেড়েছে ৩২৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ব্যয়বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৬.৮২ শতাংশ।

এই ব্যয় বাড়ায় গত নভেম্বরে রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে বিশেষ সংশোধন প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর ২৩ নভেম্বর রেলসচিবের সভাপতিত্বে বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভায় জমি অধিগ্রহণে বাড়তি টাকার প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়ে সবাই একমত হন। বিশেষ সংশোধনীর বিষয়েও সহমত জানানো হয় সভায়।

জানতে চাইলে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ নতুন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আবু জাফর মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসকেরা তাঁদের নিজ নিজ এলএ (ভূমি অধিগ্রহণ) পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয়ের চূড়ান্ত প্রাক্কলন দিয়েছেন। এতে আগের অনুমান থেকে ৩২৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি লাগছে। ডিপিপিতে এই অতিরিক্ত ব্যয়ের সুযোগ না থাকায় বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হলে মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে এই প্রকল্পের জন্য অর্থায়নকারী খুঁজছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কাছে অর্থায়ন নিশ্চিতের জন্য প্রকল্প দপ্তর থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এই প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।

এআইআইবির অর্থায়নের আগ্রহের বিষয়ে ইআরডি সূত্রেও জানা গেছে।

সূত্র বলেছে, প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ০.৩০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ০.০৭ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণের ব্যয় হচ্ছে জিওবি থেকে। এই প্রকল্পে অগ্রগতি না হওয়ার প্রধান কারণ ভারতীয় ঋণের জটিলতা।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, নতুন অর্থায়নকারী পাওয়ার পরে কাজ শেষ করতে আরও তিন-চার বছর লাগবে। অর্থ পাওয়া গেলে ঠিকাদার নিয়োগসহ দরপত্রের কাজ শুরু হবে। তবে কবে তা সম্ভব হবে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

প্রকল্পের আওতায় রেলপথ নির্মাণ ছাড়াও করতোয়া ও ইছামতী নদীর ওপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণসহ ছোট-বড় সেতুসহ মোট প্রায় ৬৭৮ মিটার সেতুর কাজ হবে। এ ছাড়া একটি সড়ক ওভারপাস এবং একটি রেল ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে আরও রয়েছে ২৬টি বড় সেতু, ৮৩টি ছোট সেতু (আরসিসি বক্স কালভার্ট) এবং ৮টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও ৩টি স্টেশন সংস্কার করা হবে।

বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ না থাকায় এই অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে বর্তমানে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে অতিরিক্ত পথ ঘুরে চলতে হয়। এতে ভাড়া ও সময়—দুটিই বেশি লাগছে। বিদ্যমান রেললাইনে ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব প্রায় ৩২৪ কিলোমিটার। প্রকল্প সূত্র বলছে, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ সংযোগ রেললাইন নির্মিত হলে এই দূরত্ব কমে যাবে ১১২ কিলোমিটার। ফলে যাত্রীদের ভাড়া ও সময় কমে যাবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অর্থায়ন ঝুলে থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বাড়ার পেছনে বাজারদর বৃদ্ধি, নীতিমালার দুর্বলতা এবং মধ্যস্থতাকারীদের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে ডিজিটাল ও স্বচ্ছ মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা, মধ্যস্থতা কমানো এবং নীতিমালা সংস্কার করা হলে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত করা সম্ভব।

অবশ্য প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী রেলওয়ের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘যেহেতু জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে, তাই প্রকল্প নিয়ে আমরা আশা রাখছি। সরকার যেকোনোভাবে এটা শেষ করতে চায়। এটা আমাদের অগ্রাধিকারের একটা প্রকল্প।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হত্যা বন্ধের কোনো ম্যাজিক নেই, মন্তব্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফাইল ছবি
উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফাইল ছবি

হত্যা বন্ধে কোনো ম্যাজিক বা সুইচ অন-অফের মতো কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়ার কোনো নিশ্চয়তাও দেননি তিনি।

সচিবালয়ে গতকাল সোমবার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুরে এক পুলিশ সদস্যের মা-বাবাকে হত্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রংপুরে যে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের এক সন্তান পুলিশে, আরেকজন র‍্যাবে কর্মরত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনের আগে এসব হত্যার ঘটনা ঘটছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। তখন তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে না, এ ধরনের ঘটনা তো ঘটছে, আমি তো অস্বীকার করি না। আর নির্বাচনের আগে যে এগুলোর সব বন্ধ হয়ে যাবে, তা-ও আমি বলতে পারি না। যদি আমার কাছে কোনো ম্যাজিক থাকত বা লাইট অন-অফের মতো কোনো সুইচ থাকত, তাহলে আমি করে দিতাম; লাইট অফ, এখন আর কোনো কিলিং-টিলিং কোনো কিছু হবে না। আমার কাছে তো ও রকম কোনো ম্যাজিক নেই।’

নির্বাচনের প্রস্তুতি খুবই ভালো জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সব বাহিনী তাদের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ কেমন হচ্ছে, তা দেখার জন্য আমরা যাব। আশা করছি, জানুয়ারির মধ্যে প্রশিক্ষণ শেষ হবে। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যত ধরনের প্রস্তুতি দরকার, সবকিছুই নিচ্ছি। নির্বাচনের জন্য বডি ক্যামেরা কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে বডি ক্যামেরা থাকবে।’

প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বেড়েছে। সূর্যের আলোর পরেও ভোট গ্রহণ করতে হবে। যে এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, সেখানে কী ব্যবস্থা করা যায়; যেখানে বিদ্যুৎ আছে, সেখানে যেন বিদ্যুৎ থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় পার্টিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামতে দিচ্ছে না জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (প্রতিযোগিতার সমান সুযোগ) সবার জন্য নিশ্চিত করা হবে কি না; জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কে মাঠে নামতে দিচ্ছে না? সবাই মাঠেই তো। পুরো মাঠ তো তারাই গরম করে রেখেছে। সবাই আছে। কে কী বলে, তা তো না। অনেকে আছে ঘর থেকে বের হতেই চায় না। বলে, আমি বের হতে পারছি না, কিন্তু তার শরীরের অবস্থা এ রকম যে বের হলেই ঠান্ডা লাগবে। সে এ জন্য বের হতে চায় না। তাদের (জাতীয় পার্টি) কার্যালয় নিয়েই তো তাদের ঝামেলা। সেটা তো আপনারাও জানেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আগে আমরা এর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলাপ করেছি, যাতে দর্শনার্থীরা নিরাপদে জাদুঘরে আসা-যাওয়া করতে পারে। লুট হওয়া অস্ত্র প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৭
আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ৩১ বাংলাদেশি। ছবি: সংগৃহীত
আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ৩১ বাংলাদেশি। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান এই ৩১ বাংলাদেশি। এরপর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের ব্র্যাকের পরিবহন ও জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়।

ফেরত আসা এই ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশ নোয়াখালীর। এ ছাড়া সিলেট, ফেনী, শরিয়তপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা রয়েছেন।

ফেরত আসা এই বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে প্রায় ৬০ ঘণ্টা হাতে হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে দেশে আনা হয়। ঢাকা বিমানবন্দরে এনে তাঁদের শিকলমুক্ত করা হয়। এর আগে চলতি বছরে ২২৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। তাঁদের বেশির ভাগকে একইভাবে হাতকড়া ও শিকল পরানো হয়েছিল।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, ‘দেশে ফেরত আসা এই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, এই ৩১ জনের মধ্যে অন্তত সাতজন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে ব্রাজিল গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য আবেদন করলে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নথিপত্রহীন কাউকে ফেরত পাঠানোটা হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে রাখার ঘটনা অমানবিক।’

শরিফুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, ব্রাজিলে যাঁদের কাজের নামে পাঠানো হচ্ছে, তাঁদের অধিকাংশ ব্রাজিল থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। এ জন্য একেকজন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করছেন, কিন্তু ফিরছেন শূন্য হাতে। যে এজেন্সি তাঁদের পাঠিয়েছিল এবং যাঁরা এই অনুমোদনপ্রক্রিয়ায় ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। নতুন করে ব্রাজিলে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারের সতর্ক হওয়া জরুরি।’

এদিকে, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও জোরদার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

এর আগে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৩৯ জন ও ৮ জুন আরেকটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। তারও আগে চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ২২০ ছাড়িয়েছে।

মার্কিন অভিবাসন আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত