Ajker Patrika

নারীপ্রধান পরিবার বাড়ছে, কমছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার: বিবিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নারীপ্রধান পরিবার বাড়ছে, কমছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার: বিবিএস

২০২২ সালের তুলনায় দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়েনি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মানুষের গড় আয়ু স্থিতিশীল রয়েছে। ২০২২ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। যা ২০২৩ সালেও একই অবস্থায় আছে। এ ছাড়া দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমলেও জন্মহার ধারাবাহিকভাবে কমছে। পাশাপাশি দেশে নারীপ্রধান পরিবার বাড়ছে।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩–এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। 

মো. আলমগীর হোসেন জানান, ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অপরিবর্তিত রয়েছে। গত বছর এটি ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর, যা এ বছর অপরিবর্তিত রয়েছে। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। 

এ ছাড়া, দেশে নির্ভরশীলতার অনুপাত ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ। পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ২৪ দশমিক ২ বছর এবং নারীদের ১৮ দশমিক ৪ বছর। 

প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লিতে আগমনের হার ২০ দশমিক ৪ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩ দশমিক ৪। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিগমন প্রতি হাজারে ৬ দশমিক ৬১ জন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ জন। আগমন/বহিরাগমন প্রতি হাজারে ২ দশমিক ৯৭ থেকে কমে হয়েছে ২ দশমিক ৩৭ জন। 

মূল প্রবন্ধে মো. আলমগীর হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ১৭১ জন মানুষের বাস। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯ হাজার ৪ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালের ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ। বিপরীতে অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে প্রসবের হার ২০২২ সালের ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ। 

এ ছাড়া, প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন। 

মৃত্যুর শীর্ষ দশ কারণের প্রথম কারণ, হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ০২ শতাংশ এবং দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। 

এদিকে জন্মহার কিছুটা কমলেও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা কমে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২ দশমিক ১ শতাংশ। জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা (সন্তান নিতে চায় না বা দেরিতে সন্তান নিতে চায় কিন্তু কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে না) ২০২২ সালের (১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ) তুলনায় কমে ২০২৩ সালে ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ হয়েছে। 

এক বছরের ব্যবধানে খানার আকারও (পরিবারের সদস্য সংখ্যা) অপরিবর্তিত রয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৪ দশমিক ২ জন। তবে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নারী খানাপ্রধানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে, পুরুষ খানাপ্রধান ২০২২ সালে ছিল ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৩ কমে হয়েছে ৮১ দশমিক ১ শতাংশ। 

 ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। 

সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। 

এ ছাড়া, বেকার (শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন) তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে। 

 ৫ বছরের বেশি বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে, ১৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ ৷ ২০২৩ সালে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০ দশমিক ১ শতাংশ। 

মো. আলমগীর হোসেন আরও জানান, ২০২৩ সালে বিদেশে যাওয়া অথবা আন্তর্জাতিক অভিগমনের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আগমনের হার কমেছে। 

বিবিএস জানায়, ২০১৯ সালের পর থেকে কোভিডকালীন প্রবাসে যাওয়ার হার কমলেও এরপর প্রতি বছরই বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৬
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।

বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

বাসস, ঢাকা  
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।

বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।

নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৪
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সমসাময়িক বিষয়ে আজ বুধবার বেলা ৩টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আসিফ মাহমুদের সংবাদ সম্মেলন হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সমসাময়িক কোন বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন, মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ভাষণের রেকর্ড করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও আজ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

উপদেষ্টার পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা না থাকলেও তফসিল ঘোষণার আগে সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। তাঁদের আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ওই বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন আসিফ মাহমুদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১৮
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।

সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রায়পুরা অঞ্চলে ১৪টি হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ তখনকার বিশাল, প্রশস্ত মেঘনা পার হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শত শত নৌকার সাহায্যে অবশিষ্ট সেনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করে।

প্রচণ্ড চাপে পড়ে আগের দিন ঢাকায় পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও গভর্নর মালেক সৈন্যসহ পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন দাউদকান্দির পতনের পর তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, ঢাকাই যৌথ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য। পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্ণ অনুমোদন লাভ করে।

সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর রায়পুরায় অবতরণের পর প্রায় ৩ ঘণ্টা ঢাকার পাকিস্তানি সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর বিমান হামলা চলে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা, গণহত্যার অন্যতম সহযোগী রাও ফরমান আলী ঢাকায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরিকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আয়োজন করার আবেদন জানান। বাঙালিদের ওপর ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চলার পর এত দিনে এসে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং এই অঞ্চলে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এ প্রস্তাব জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।

নিরাপত্তা পরিষদে রাও ফরমান আলীর এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ চলার সময় হঠাৎ খবর আসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। ঘটনা হচ্ছে, খবরটি ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার ইয়াহিয়াকে জানান, পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হয়েছে। এ কারণেই ইয়াহিয়ার মত বদলে যায়। পাকিস্তান নিজে থেকে ‘সম্মানজনকভাবে’ সেনা প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগী হলেও সেই উদ্যোগকে সমর্থন না করে মার্কিন সরকার বরং তা রদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তার ওপর ভারতকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করানোর তাগিদ দিয়ে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে দুই দফা বার্তা পাঠান। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে ভারতকে সম্মত করতে ব্রেজনেভের ওপর চাপের মাত্রা বাড়ানো হয়। তাঁকে জানানো হয়, ভারত যদি এরপরও সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।

উপমহাদেশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে পারে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালো করেই জানা ছিল। সোভিয়েত সরকার তাদের নৌবাহিনীকে সতর্ক রাখে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের যাত্রারম্ভের আগেই সোভিয়েতরা তাদের ভারত মহাসাগরীয় নৌবহরের শক্তি বৃদ্ধি শুরু করে।

১০ ডিসেম্বর মার্কিন সপ্তম নৌবহর চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযোগকারী পাঁচ শ’ মাইল দীর্ঘ মালাক্কা প্রণালির ওপারে ছিল। ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের সমাবেশ তখন সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় জানা যায়, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি জানার জন্যই সোভিয়েত সরকার কসমস নামের নজরদারি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।

এদিকে চূড়ান্ত পর্বের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের আশঙ্কায় ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকেন অনেক সাধারণ মানুষ। আগের দিন সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই হবে বলে মুক্তিযোদ্ধারা লোকজনকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। অনেক লোককে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন, পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে রিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে (সিএনজি অটোর আগের সংস্করণ) করে শহর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ লটবহর মাথায় নিয়ে হেঁটেই চলেছেন। এ যেন ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ঢাকা ছাড়ার যে ঢল নেমেছিল কিছুটা প্রতিচ্ছবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত