Ajker Patrika

গর্বভাষা নিয়ে হীনম্মন্যতায় আমরা কি গর্বিত

জাহাঙ্গীর আলম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান শহীদ দিবস, একই সঙ্গে এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ তম বার্ষিকী উদ্‌যাপিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের এই দিন মাতৃভাষার মর্যাদার রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। এই আত্মত্যাগের বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে এই দিনটি এখন ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মাতৃভাষাকে উন্নীত করার জন্য প্রতি বছর উদ্‌যাপন করা হয়।

কিন্তু শিগগিরই মাতৃভাষার ধারণা গিয়ে ঠেকেছে তথাকথিত শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলায়। শিক্ষিত বাবা–মায়েরা শৈশব থেকেই সন্তানদের ভাষাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য মুখ থেকে যেকোনো প্রকারের গ্রাম্যতা দূর করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। করুণ বাস্তবতা হচ্ছে, ছোটকালে এই প্রমিতকরণের পাল্লায় পড়ে আমাদের ঠোঁটের প্রতিটি শব্দই অস্বাভাবিক মনে হয়। স্কুলের পরীক্ষার খাতায় লিখিত প্রাতিষ্ঠানিক বাংলা, জাতে ওঠার জন্য শেখা ইংরেজি, দাদা–দাদি নানা–নানির ‘উপভাষায়’ বলা স্থানীয় শব্দ ঠোঁটে ঝুলে থাকে, গলার অর্ধেক পথে আটকে যায় কিন্তু মুখে প্রকাশ পায় না। গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রতিটি শিশুরই এমন অভিজ্ঞতা হয়।

আমাদের শহরগুলোতে এখন ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বাণিজ্যের রমরমা। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাবা–মায়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সন্তানের সঙ্গে ঘরেও ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলা বলার ক্ষেত্রে অনেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।

এভাবে, আমরা সর্বশক্তিমান প্রমিত ও ইংরেজির কাছে নতজানু হয়ে পড়ছি। ব্যাকরণের নিয়ম আত্মস্থ করে ভদ্রস্থ বাংলা এবং বাজার অর্থনীতির যুগে জাতের ওঠার উচ্চাভিলাষের ফাঁদে বাংলাকে উপেক্ষা করছি। আমাদের শ্রম, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করছি তথাকথিত কেজো ভাষা শিক্ষায়!

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলার যে বেহাল দশা তার একটি চিত্র এখানে স্পষ্ট। ২০২৪ সালের মার্চে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) একটি সমীক্ষা প্রকাশ পায়। তাতে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ৭৬ শতাংশ ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঠিকমতো বাংলা পড়তে পারে না। তৃতীয় শ্রেণির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বর্ণ (অক্ষর) ও শব্দ ঠিকঠাক চিনতে পারে না। চতুর্থ শ্রেণির ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শব্দ চিনতে পারে না। আর পড়ার (রিডিং) ক্ষেত্রেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঘাম ছুটে যায়!

১৮৩৫ সালে লর্ড ম্যাকলে তাঁর শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবে একটি শ্রেণি তৈরি করার যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন যারা দোভাষী হতে পারে...যারা রক্তে এবং বর্ণে ভারতীয় কিন্তু রুচি, মতামত, নৈতিকতা এবং বুদ্ধিতে হবে ইংরেজ। আমরা আমাদের মুখের ভাষা, সংস্কৃতি ও স্থানীয় জ্ঞানকে পশ্চিমা বিশ্বের শ্রম ও ভোক্তা বাজারে পরিণত করার জন্য বিনিময় করেছি। আমাদের স্থানীয় ভাষাগুলো নিকৃষ্ট, অলিখিত (যদি কথ্য হয়) এবং যেকোনো গুরুতর জ্ঞান সৃষ্টি বা প্রচার প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার জন্য অক্ষম থেকে গেছে। আধুনিককালে ইংরেজির দাপটে আমরা দিশেহারা হয়ে তাকেই আলিঙ্গন করেছি।

বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রথম এ দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এই শিক্ষানীতি ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনাপত্রে এ বিষয়টির উল্লেখ বেশ আগে থেকেই লক্ষ করা গেছে। কিন্তু এখনো সব ভাষায় শিশুদের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সম্ভব হয়নি। আর আঞ্চলিক ভাষা তো বরাবরই উপেক্ষিত। এমনকি জনপরিসরে আঞ্চলিক ভাষায় ভাব বিনিময়ও রীতিমতো লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলত শহুরে ও গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং আঞ্চলিক ও নৃগোষ্ঠীর ভাষা এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবিচল বিভেদ তৈরি হয়ে রয়েছে।

এ ছাড়া সরকারি শিক্ষানীতির বাইরে রয়ে গেছে দেশের ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালোরিয়েট (আইবি) এবং কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (আইজিসিএসই)–এর সঙ্গে যুক্ত স্কুলগুলো। আবার এমন স্কুল রয়েছে যেগুলোর আসলে এ ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেই। এই স্কুলগুলো স্থানীয় ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা দমিয়ে রাখে।

ইদানীং শিক্ষার্থীদের একটি নতুন প্রজন্ম দেখা যাচ্ছে। এরা সংকর ভাষায় কথা বলে। কিন্তু তাদের ডিএনএ–তে সে অর্থে বাংলা ভাষা নেই। এমনকি হিন্দিতে বোল ফুটছে ভালোই, কিন্তু বাংলা বলতে গিয়ে আটক যাচ্ছে। এমন অনেক শিশু আছে যারা ইংরেজিতে কথা বলে, বাংলায় একটি শব্দও বোঝে না।

বাবা–মায়েরা নিজেদের ভাষা হীনমন্যতায় গর্বিত! ‘আমার বাচ্চা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে’, এই গর্ব ক্রমে ‘আমার বাচ্চা তো বাংলা বলতেই না’ এই এ পর্যায়ে পর্যবসিত হয়। অভিভাবকদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, বাংলা আর শ্রম বা মর্যাদার বাজারে বিপণনযোগ্য নয়, সুতরাং এ ভাষা সন্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখানোর প্রয়োজন নেই, কাজ চালানোর মতো হলেই হবে!

এই প্রবণতা নাগরিকদের একটি নতুন শ্রেণির জন্মকে চিহ্নিত করছে। তারা সে অর্থে ম্যাকলের দোভাষী শ্রেণি নয়; বরং, নিজস্ব পরিচয় স্পষ্ট করতে তাদের আরও আরও সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের কথিত বৈশ্বিকতা তাদের স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্তির বিচ্ছেদের দিকে ঝোঁক তৈরি করছে।

আন্তর্জাতিক বোর্ডের (ইংরেজি মাধ্যম) শহুরে শিশুরা জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করা গ্রামীণ শিশুদের কিছুই বুঝবে না—এই দুই শ্রেণির মধ্যে কোনো সংযোগকারী কোনো ভাষা নেই। দেশীয় ভাষায় সাহিত্য এবং জ্ঞান নিয়ে আলোচনা তো আরও দূরের কথা। প্রমিত বাংলা ও ইংরেজির দাপটে আঞ্চলিক ভাষার বাগধারাগুলো আমাদের দৈনন্দিন ভাষা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, এতে বাংলার মধ্যে ইংরেজি শব্দ প্রক্ষিপ্ত হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।

অবশ্য এর জন্য শুধু গ্লোবালাইজেশন, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আর বাজার অর্থনীতির পাশাপাশি অভিভাবকদের হীনম্মন্যতাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। মূলত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে থাকতেই অভিভাবকদের ক্রমেই ইংরেজিপ্রীতি ও বাংলার প্রতি অবহেলা বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলার ব্যাপক ব্যবহার ও উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তি পর্যায়েও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ইন্টারনেটের এই যুগে শিশুরা ফিডার ধরতে শেখার আগে মোবাইল হাতে পায়। ইন্টারনেটে শিশুদের উপযোগী বাংলায় ভালো কোনো কনটেন্ট নেই, যেগুলো তারা আনন্দের সঙ্গে দেখবে। ফলে কথা বলতে শেখার আগেই হাতের মুঠোয় পাচ্ছে হিন্দি অথবা ইংরেজি কনটেন্ট। বাংলা শেখার আগেই শিশু ইংরেজিতে গড়গড় করে কথা বলা শিখছে, সেটি অভিভাবকদের জন্য আনন্দের বিষয়ই তো বটে!

বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২১ ফেব্রুয়ারি। ২০০২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটিকে স্বাগত জানানো হয়।

ভাষাগত বৈচিত্র্যের মর্যাদা রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং শিশুদের মাতৃভাষায় শেখার অধিকারকে সমর্থন করার জন্য এই দিবসটি গৃহীত হয়। যাতে শিশুরা আরও ভালো বোঝাপড়া, সম্পৃক্ততা এবং চিন্তার দক্ষতা অর্জন করতে পারে—এটিই ছিল উদ্দেশ্য। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়নি এমন স্থানে টিকে থাকা ভাষাগুলো কত স্তরের দমন সহ্য করছে, সেটিরও একটি অনুস্মারক এটি। আধুনিক শিক্ষা ধারণায় মায়েদের এবং মাতৃভাষাগুলোকে সন্তানদের যথাযথভাবে শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে অক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এভাবেই তাদের প্রান্তিক করে রাখা হয়।

লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আগামী নির্বাচনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে হবে: ইউএনওদের প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪১
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আগামী নির্বাচনকে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।

রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে আজ বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন দেশের সব জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রধান উপদেষ্টা ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের নতুন করে একটি সুযোগ দিয়েছে। অন্য জেনারেশন এই সুযোগ পাবে না। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব। আর যদি না পারি, তাহলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এর আগেও আমরা নির্বাচন দেখেছি। বিগত আমলে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, যেকোনো সুস্থ মানুষ বলবে—এটা নির্বাচন নয়, প্রতারণা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অন্যান্য দায়িত্বের মতো নয়; বরং একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। আমরা যদি ভালোভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচনের দিনটি জনগণের জন্যও ঐতিহাসিক হবে।’

ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে সরকার তার দায়িত্বটি সফলভাবে পালন করতে সক্ষম হবে।’

আগামী সংসদ নির্বাচন ও গণভোট দুটিই জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য আর গণভোট শত বছরের জন্য। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশটাকে স্থায়ীভাবে পাল্টে দিতে পারি। যে নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করতে চাই, তার ভিতটা এর মাধ্যমে গড়তে পারি।’

এ সময় সদ্য যোগদান করা ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন করা।’

প্রধান উপদেষ্টা ইউএনওদের নিজ নিজ এলাকার সব পোলিং স্টেশন পরিদর্শনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, এলাকাবাসী ও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।

গণভোট বিষয়ে ভোটারদের সচেতন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের বোঝাতে হবে, আপনারা মন ঠিক করে আসুন—“হ্যাঁ”-তে দেবেন নাকি “না”-তে ভোট দেবেন। মন ঠিক করে আসুন।’

কর্মকর্তাদের ধাত্রীর সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধাত্রী ভালো হলে জন্ম নেওয়া শিশুও ভালো হয়।

তিনি কর্মকর্তাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীরা যেন ঠিকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিগগির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন, কীভাবে, কোন কাজটি করবেন—তার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখন থেকেই নিন।’

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের ৪টি আসন বহাল, ফিরল না গাজীপুর ৬

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাগেরহাটের ৪টি আসন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে এ আদেশ দেন।

এর ফলে বহাল থাকল বাগেরহাটের চারটি আসন। বাদ পড়েছে গাজীপুর-৬ আসনটিও।

এর আগে বাগেরহাটের আসন একটি কমিয়ে তিনটি করা এবং গাজীপুরে একটি বাড়ানো-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।

হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং গাজীপুর-৬ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ড. হাফিজুর রহমান ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহ উদ্দিন সরকার আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ড. হাফিজুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।

বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বঙ্গভবনে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।

এর আগে ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত), তাহমিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

বাসস, ঢাকা  
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।

বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।

নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত