Ajker Patrika

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

ব্যয়বহুল চিকিৎসায় স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা দেবে সরকার

  • শুরুতে চার রোগের চিকিৎসায় বিমা-সুবিধার প্রস্তাব থাকছে প্রতিবেদনে
  • ক্যানসার, ডায়ালাইসিস, কার্ডিয়াক সার্জারি, পক্ষাঘাতের চিকিৎসায় ব্যয় বেশি
  • বাংলায় প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে জমা হবে
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় স্বাস্থ্য তহবিল ছাড়া বিমা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৫৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেক মানুষ দরিদ্রতার মধ্যে পড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় ব্যয়বহুল চিকিৎসায় স্বাস্থ্যবিমা চালুর পক্ষে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার কমিশন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ প্রস্তাব দিয়ে শুরুতে চার থেকে পাঁচটি ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য বিমা-সুবিধা দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দেবে কমিশন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যানসার, ডায়ালাইসিস, কার্ডিয়াক সার্জারি ও পক্ষাঘাত।

সংস্কার কমিশন বলেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকারের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বাইরে ব্যয়বহুল চিকিৎসাগুলোকেও অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। সংস্কার কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্যবিমার প্রস্তাবকে ভালো বললেও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এটি বাস্তবায়নের উপায়ও কমিশনকে বলতে হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য তহবিল ছাড়া সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানকে। প্রতিবেদন দিতে কমিশনকে প্রথমে ৯০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় ৩০ মার্চ পর্যন্ত এবং মার্চের শেষে দ্বিতীয় দফায় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

কমিশনের অন্তত তিন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁদের মাঠপর্যায়ের সব কার্যক্রম মার্চের মধ্যেই শেষ হয়েছে। জেলা, বিভাগ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চিকিৎসা শিক্ষা, ওষুধ, জনস্বাস্থ্য, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের বিষয়সহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করা হয়েছে।

মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মতামত, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনও আমলে নিয়েছে কমিশন। ইংরেজি ভাষায় তৈরি করা প্রতিবেদনটি বর্তমানে বাংলা ভাষায় চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

সূত্র বলেছে, কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার) বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। নিজস্ব ব্যয়ে চিকিৎসা করাতে বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে পড়ছে মানুষ। বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত। তবে প্রাথমিক সেবার বাইরেও ব্যয়বহুল চিকিৎসাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব থাকছে প্রতিবেদনে।

সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট বলছে, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ৬৭ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশে এই ব্যয় ৭৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সূত্র বলছে, চিকিৎসার উচ্চব্যয়ের কারণে দেশের ১৮ শতাংশ পরিবার বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের মধ্যে পড়েছে। ২০২২ সালে বিপর্যয়কর স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে ৬১ লাখের বেশি মানুষ দরিদ্র হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নের বিষয়টিতে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে গুরুত্ব দিতে সরকারকে প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষকে দরিদ্রতা থেকে বাঁচাতে কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ধনীরা চিকিৎসার জন্য কোটি টাকা ব্যয় করলেও বিপর্যয়ের মুখে পড়েন না। তবে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ দরিদ্র হন। কেউ কেউ সর্বস্ব হারান। অনেক সময় অর্থের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষণার তথ্য ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে এমন চার থেকে পাঁচটি জটিল স্বাস্থ্য অবস্থা ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা শনাক্ত করা হয়েছে। যেগুলোর ব্যয় বিমা থেকে বহন করতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে।

যেসব চিকিৎসা বিমার আওতায় আনার প্রস্তাব থাকছে

দেশে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই মারা যান অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি কয়েকটি রোগে। এর মধ্যে হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসার শীর্ষে। এ ছাড়া পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও কিডনি বিকল রোগীদের ডায়ালাইসিস ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী।

কমিশন সূত্র বলছে, ব্যয় বিবেচনায় কমিশন শুরুতে ডায়ালাইসিস, পক্ষাঘাত, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং বা বাইপাস সার্জারি, ক্যানসারের চিকিৎসাকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার প্রস্তাব দেবে।

কমিশনের দুজন সদস্য বলেন, তাঁরা চার থেকে পাঁচটি অবস্থা নির্ণয় করেছেন। সরকার এগুলোর দু-তিনটি নিয়ে শুরু করতে পারে। পক্ষাঘাত, ডায়ালাইসিসের জন্য পুরো পরিবার মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে। ক্যানসারের চিকিৎসা, কার্ডিয়াক সার্জারি ব্যয়বহুল। যেসব খরচ একজন মানুষকে দারিদ্র্যসীমায় ঠেলে দিচ্ছে, তা নিয়ে সরকারের বিমা শুরু করা উচিত। এসব বিমার আওতায় এলে প্রতারণার সুযোগ থাকবে না। কারণ, কার্ডিয়াক সার্জারি, ক্যানসার বা ডায়ালাইসিস প্রয়োজন না হলে কোনো প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে প্রতারণা করতে পারবে না। শুরুতে সাধারণ রোগগুলোকে বিমায় রাখলে তা কার্যকর করা কঠিন। ধীরে ধীরে সব ধরনের চিকিৎসা স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা যাবে।

তবে দেশে এসব রোগের চিকিৎসা-সুবিধা অপ্রতুল। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক গবেষণার তথ্য বলছে, দেশে কার্ডিয়াক সার্জারির সুবিধা থাকা প্রতিষ্ঠান আছে ৩২টি।

জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট বলছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র আছে ১৩০টি, ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে ৬৫০টি। অথচ দেশে ২ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে বছরে অন্তত ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি রোগ শেষ পর্যায়ে (পঞ্চম স্তর) পৌঁছায়। অর্থাৎ তাঁদের কিডনি প্রতিস্থাপনের বিকল্প নেই। প্রতিস্থাপন পর্যন্ত তাঁদের ডায়ালাইসিস করতে হবে। কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধা রয়েছে ১০টি প্রতিষ্ঠানে। ডায়ালাইসিস প্রয়োজন—এমন রোগীদের মাত্র ২৫ শতাংশ এই সুবিধার আওতায় আসছে। একইভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা-সুবিধাও অপ্রতুল।

চিকিৎসা-সুবিধার অপ্রতুলতায় কীভাবে স্বাস্থ্যবিমা বাস্তবায়ন হবে—এমন প্রশ্নে কমিশনের একজন সদস্য জানান, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়াতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে। সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম (কিস্তি) নেওয়া হতে পারে। সামাজিক বিনিয়োগ, সোশ্যাল বিজনেসের (সামাজিক ব্যবসা) জন্য বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করা হতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিজ উদ্যোগে কাজ করত। সে ক্ষেত্রে সরকারের কোষাগারে তারা লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ জমা দেবে। তা থেকে জটিল চিকিৎসায় ব্যয় হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, একটি দেশের স্বাস্থ্য-ব্যয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সেবাগ্রহীতার নিজের পকেট থেকে যেতে পারে। স্বাস্থ্যের জন্য সরকারের ব্যয় জিডিপির ৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। ডব্লিউএইচওর সর্বশেষ হিসাব বলছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে সংস্কার কমিশনের চিন্তাকে ইতিবাচক বলছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা। তবে বিমা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, সরকার একটি জাতীয় স্বাস্থ্য তহবিল গঠন করতে পারে। যেখানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সবার কাছ থেকে দৈনিক এক টাকা বা তার কম কেটে নেবে। অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার, তামাক পণ্যসহ অতি বিলাসী পণ্য থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের বিশেষ কর আদায় করে ওই তহবিলে রাখা উচিত। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার চিকিৎসাবিমায় খরচ করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কীভাবে স্বাস্থ্যবিমা বাস্তবায়ন হবে, তার স্পষ্ট উল্লেখ কমিশনের প্রতিবেদনে থাকতে হবে। রোগের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে কম, তাতে সমস্যা নেই। দেশে স্বাস্থ্যবিমা চালু করা কঠিন। কেননা, মাত্র ১২-১৩ শতাংশ কর্মজীবী মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। বাকিরা আয় করেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাঁদের কাছ থেকে কীভাবে বিমার প্রিমিয়াম নেওয়া হবে? এসব বহনের সক্ষমতা সরকারের নেই। কেউ প্রিমিয়াম দিয়ে বিমার সুবিধা নিলে তেমন বিমা তো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। তিনি বলেন, বিমার সুবিধায় স্বাস্থ্যসেবা কোন প্রতিষ্ঠান, কীভাবে দেবে, তার উপায় থাকা উচিত। জাতীয় স্বাস্থ্য তহবিল ছাড়া সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

বাসস, ঢাকা  
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।

বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।

নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সমসাময়িক বিষয়ে আজ বুধবার দুপুর ৩টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আসিফ মাহমুদের সংবাদ সম্মেলন হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সমসাময়িক কোন বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণপত্রে তা জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে উপদেষ্টার পর থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ভাষণের রেকর্ড করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই তফসিল ঘোষণা করা হবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

উপদেষ্টার পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা না থাকলেও তফসিল ঘোষণার আগে সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। তাদের আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ওই বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন আসিফ মাহমুদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১৮
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।

সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রায়পুরা অঞ্চলে ১৪টি হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ তখনকার বিশাল, প্রশস্ত মেঘনা পার হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শত শত নৌকার সাহায্যে অবশিষ্ট সেনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করে।

প্রচণ্ড চাপে পড়ে আগের দিন ঢাকায় পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও গভর্নর মালেক সৈন্যসহ পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন দাউদকান্দির পতনের পর তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, ঢাকাই যৌথ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য। পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্ণ অনুমোদন লাভ করে।

সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর রায়পুরায় অবতরণের পর প্রায় ৩ ঘণ্টা ঢাকার পাকিস্তানি সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর বিমান হামলা চলে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা, গণহত্যার অন্যতম সহযোগী রাও ফরমান আলী ঢাকায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরিকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আয়োজন করার আবেদন জানান। বাঙালিদের ওপর ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চলার পর এত দিনে এসে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং এই অঞ্চলে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এ প্রস্তাব জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।

নিরাপত্তা পরিষদে রাও ফরমান আলীর এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ চলার সময় হঠাৎ খবর আসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। ঘটনা হচ্ছে, খবরটি ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার ইয়াহিয়াকে জানান, পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হয়েছে। এ কারণেই ইয়াহিয়ার মত বদলে যায়। পাকিস্তান নিজে থেকে ‘সম্মানজনকভাবে’ সেনা প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগী হলেও সেই উদ্যোগকে সমর্থন না করে মার্কিন সরকার বরং তা রদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তার ওপর ভারতকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করানোর তাগিদ দিয়ে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে দুই দফা বার্তা পাঠান। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে ভারতকে সম্মত করতে ব্রেজনেভের ওপর চাপের মাত্রা বাড়ানো হয়। তাঁকে জানানো হয়, ভারত যদি এরপরও সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।

উপমহাদেশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে পারে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালো করেই জানা ছিল। সোভিয়েত সরকার তাদের নৌবাহিনীকে সতর্ক রাখে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের যাত্রারম্ভের আগেই সোভিয়েতরা তাদের ভারত মহাসাগরীয় নৌবহরের শক্তি বৃদ্ধি শুরু করে।

১০ ডিসেম্বর মার্কিন সপ্তম নৌবহর চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযোগকারী পাঁচ শ’ মাইল দীর্ঘ মালাক্কা প্রণালির ওপারে ছিল। ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের সমাবেশ তখন সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় জানা যায়, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি জানার জন্যই সোভিয়েত সরকার কসমস নামের নজরদারি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।

এদিকে চূড়ান্ত পর্বের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের আশঙ্কায় ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকেন অনেক সাধারণ মানুষ। আগের দিন সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই হবে বলে মুক্তিযোদ্ধারা লোকজনকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। অনেক লোককে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন, পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে রিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে (সিএনজি অটোর আগের সংস্করণ) করে শহর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ লটবহর মাথায় নিয়ে হেঁটেই চলেছেন। এ যেন ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ঢাকা ছাড়ার যে ঢল নেমেছিল কিছুটা প্রতিচ্ছবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি

  • তফসিল ঘোষণা হতে পারে আজ অথবা আগামীকাল।
  • সিইসির ভাষণ রেকর্ড ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ আজ।
  • প্রথমবারের মতো ভোটের আগের দিনও ছুটি থাকতে পারে।
  • তফসিলের পর বেআইনি সমাবেশ, আন্দোলন কঠোরভাবে দমন।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবে কমিশন। এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের ভাষণ রেকর্ড করা হবে। তিনি আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন। সব ঠিক থাকলে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে ১২ ফেব্রুয়ারি।

আগামী ৫, ৮ ও ১২ ফেব্রুয়ারির যেকোনো দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে কমিশন জানায়, ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট হবে। এর মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করার বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়েছিল ইসি। সেখান থেকে সরে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দিনটি বৃহস্পতিবার। ভোট গ্রহণের পর ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। ভোটের পরের দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় তাঁরা সেই সুযোগ পাবেন। এ জন্য ১২ ফেব্রুয়ারিকে ভোটের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলে আসছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ঈদ উৎসবের মতো। ফলে এবারই প্রথম ভোটের আগের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে। ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকবে। পরের দুই দিন ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্র, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি তফসিল ঘোষণা করবেন। আজ সেই ভাষণ রেকর্ড করা হবে। আর নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, তফসিল ঘোষণায় ভাষণের সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আজ সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে।

সূত্র জানায়, সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিটিভির একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়েছিল। আজ দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে কমিশন। এরপর সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে আজ বিকেলেও তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। বিভিন্ন বিষয়ে ২০টির মতো পরিপত্র জারি করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নিয়োগ, মনিটরিং সেল এবং আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক সেল গঠনের সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর ধারাবাহিকভাবে এগুলো জারি করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন। জাতীয় সংসদ ভোটের সঙ্গে গণভোটের ঘোষণা আসায় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানো এবং বাজেট বাড়ানোর বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়েছে কমিশনকে। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আইনবিধি সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, অধিকাংশ ছাপার কাজ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সব বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও হয়েছে।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় ভোট দিতে একজন ভোটারের কত সময় লাগবে, সেই ধারণা নিতে গত ২৯ নভেম্বর ভোটের মহড়া করে ইসি। এই অভিজ্ঞতা থেকে ভোটের সময় ১ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এবার সকাল সাড়ে ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ হবে। আগের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, আচরণবিধি প্রতিপালনে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে প্রতিটি উপজেলায় দুজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এরপর ভোটের পাঁচ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো হবে। তফসিল ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে পোস্টার সরাতে। এ সময়ের মধ্যে পোস্টার না সরালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি ও আধা সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নেওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের এসব পদে দায়িত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

একই দিন সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এবং গতকাল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি। রেওয়াজ অনুযায়ী, আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসির তফসিল ঘোষণার ভাষণ রেকর্ড করা হবে।

তফসিলের পর বেআইনি জনসমাবেশ করলে কঠোরভাবে দমন

তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর হয়—এটিই সরকারের মূল লক্ষ্য। এ কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাঁরা বেআইনিভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নেবেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাচনমুখী সময়ে আছি। এ কারণে, সবার যা কিছু দাবিদাওয়া আছে, তা নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। আশা করব, এ সময়ের মধ্যে কেউ দাবিদাওয়া নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি বা স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত