Ajker Patrika

মৌখিক নির্দেশনায় সব দূতাবাস-মিশন থেকে সরানো হচ্ছে রাষ্ট্রপতির ছবি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ৩৯
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলো থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন চারটি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত।

গতকাল শনিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ছবি নামানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বিভিন্ন অঞ্চলে তুলনামূলক সিনিয়র মিশন প্রধানের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। অন্য অঞ্চলে একজন রাষ্ট্রদূত একই নির্দেশনা পেয়েছেন।’

অন্য তিনটি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতেরা জানান, তাঁরা গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একইরকম নির্দেশনা পেয়েছেন।

তিনটি দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্দেশনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ছবি নামানো হয়েছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলার কথা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা পাইনি।’

কিছুদিন আগে একটি মিশনে যোগ দেওয়া মিশন প্রধান জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই অনেক মিশন থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলা হয়। সাবধানতা হিসেবে কোনো কোনো মিশন রাষ্ট্রপতির ছবিও নামিয়ে ফেলে।

এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, যেসব দেশে অনেক বাংলাদেশি থাকেন, সেখান ‘মব’ হামলার শিকার হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ছবিগুলো নামানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের প্রত্যাখ্যানের আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের নির্বাচিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতিবাজ নেতাদের আপনারা (ভোটার) প্রত্যাখ্যান করলে দেশে দুর্নীতি অনেকটাই কমে যাবে। তখন দুদকের প্রয়োজনও পড়বে না।’

আজ মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতে পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ওড়ানো হয়। পরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে দুর্নীতি বিরোধী সচেতনতামূলক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় সমাজে দুর্নীতি এখন দুরারোগ্য ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। এই অবক্ষয় দূর করতে হলে তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরাই পারে আমাদের আগামী বাংলাদেশকে বদলে দিতে।’

শুধু একটি দিবস পালন করলেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের লাগাম টানতে একদিনের উৎসব যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ধারাবাহিক উদ্যোগ ও সামাজিক প্রতিরোধ।’

দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার মিঞা মুহাম্মাদ আলী আকবর আজিজী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ, দুদকের মহাপরিচালকেরা, দুর্নীতি বিরোধী সাংবাদিক সংগঠন রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশন (র‍্যাক)-এর সভাপতি আলাউদ্দিন আরিফ ও সাধারণ সম্পাদক তাবারুল হকসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিজয় দিবসে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং, বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রত্যয়

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪১
স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্‌যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাইডাইভিং করবেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্‌যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাইডাইভিং করবেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিজয় দিবসে সর্বাধিক পতাকা উড়িয়ে প্যারাস্যুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রস্তুতি চলছে। যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি এবার গিনেস বুকে নাম লেখাতে চায় বাংলাদেশ।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী এই উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্‌যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাইডাইভিং করবেন। এটিই হবে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে।

গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক সভায় এসব কথা জানানো হয়। সভায় অংশগ্রহণকারীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক আকারে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচির প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, বিজয় দিবসের দিন বেলা ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরোনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে। চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড শো। বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্‌যাপনে পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। জনসাধারণের জন্য এই বিশেষ আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে।

এ ছাড়া দেশের অন্যান্য শহরেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে। সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, আনসার বাহিনী ব্যান্ড শোর আয়োজন করবে। প্রতিটি আয়োজন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত বছরের মতো এবারও দেশের সব জেলা-উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিশুদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

অপর দিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা ৩টায় অ্যাক্রোবেটিক শো ও সন্ধ্যা ৬টায় যাত্রাপালা ‘জেনারেল ওসমানী’ অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ ডিসেম্বর বেলা ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবেশিত হবে বিজয় দিবসের গান। পাশাপাশি সারা দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা।

দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়। বিধি অনুযায়ী, এদিন সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন, বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও ৩১ বার তোপধ্বনি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠান, জেলা-উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর; ঢাকার সদরঘাট, পাগলা এবং বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড একক বা যৌথভাবে জাহাজসমূহ সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখবে।

ঢাকাসহ সারা দেশের সিনেমা হলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং মিলনায়তন ও উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।

সরকারি ও বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জাদুঘরগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা টিকিটে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিনোদনমূলক স্থান শিশুদের জন্য সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা ও বিনা টিকিটে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে।

সারা দেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, ডে কেয়ার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রীতিভোজের আয়োজন থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানের সমর্থনে রওনা হলো মার্কিন সপ্তম নৌবহর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৯
পাকিস্তানের সমর্থনে রওনা হলো মার্কিন সপ্তম নৌবহর

বাংলাদেশ ও ভারতের মিলিত বাহিনীর অগ্রাভিযানের মুখে ৯-১০ ডিসেম্বর নাগাদ পাকিস্তানি বাহিনী দ্রুত পশ্চাদ-পসরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যশোর, ফেনী ও কুড়িগ্রামের পতনের পর একের পর এক এলাকা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে থাকে। ৯ ডিসেম্বর চাঁদপুর ও দাউদকান্দি থেকে পাকিস্তানি সেনাদের দখলের অবসান ঘটে। এতে মেঘনার পুরো পূর্বাঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়। ৯-১০ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্দশ ও ষোড়শ ডিভিশন যথাক্রমে কুমিল্লা ও উত্তরবঙ্গ থেকে পিছু হটতে থাকে।

এদিকে সিআইএর কাছ থেকে পাকিস্তানি ভূখণ্ড দখলের ভারতীয় অভিসন্ধির অভিযোগ পেয়ে তা ঠেকানোর কথা বলে ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার নির্দেশ দেন। আসলে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বাত্মক পতন ঠেকানোই ছিল সপ্তম নৌবহরের প্রকৃত উদ্দেশ্য। বিশ্লেষকদের এ যুক্তির পেছনের অন্যতম কারণ, সিআইএ কথিত ভারতীয় পরিকল্পনা উদঘাটিত করার প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় সপ্তম নৌবহরের এখতিয়ার বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে মার্কিন নৌবহরের জন্য বঙ্গোপসাগর ছিল ৪-৫ দিনের যাত্রাপথ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। হেনরি কিসিঞ্জার তখন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। পরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। ‘কট্টর বাংলাদেশবিদ্বেষী’ হিসেবে পরিচিত কিসিঞ্জার তাঁর একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, সিআইএর নির্ভরযোগ্য সূত্র খবর দিয়েছিল, ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সংঘাতের সুবাদে ‘আজাদ কাশ্মীর’ দখলের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিমান ও সাঁজোয়া বাহিনী ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেই পাকিস্তানকে সহায়তা করে যাচ্ছিল। সিআইএর এ খবরের পর সপ্তম নৌবহর পাঠানোর পক্ষে সাফাই গাওয়া নিক্সন প্রশাসনের জন্য সহজ হয়।

এদিকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ৯ ডিসেম্বর নাগাদ ঢাকায় পাকিস্তানের তাঁবেদার গভর্নর মালেক সেনাবাহিনীসহ পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঢাকার গভর্নর হাউস থেকে পাঠানো এক গোপনীয় বার্তায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি বাহিনীর সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। তিনি রাজনৈতিক সমাধানসহ কোনো একটি মীমাংসায় পৌঁছানোর জন্যও গভর্নর মালেককে উদ্যোগ নিতে বলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আগের সতর্কবাণীর জবাবে ৯ ডিসেম্বরেই সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ নিক্সনকে বলেন, উপমহাদেশের সমস্যা সমাধানের জন্য আসলে প্রয়োজন ইয়াহিয়াকে পূর্বাঞ্চল থেকে পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহারে রাজি করানো। ইয়াহিয়া এতে প্রথমে সম্মত হলেও সপ্তম নৌবহর যাত্রা শুরু করার খবর পেয়ে মার্কিন পরামর্শে পরদিনই মত বদলে ফেলেন।

৯ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা এবং উপদেষ্টা কমিটির যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক অধিকৃত মুক্ত এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন শুরু করা, খাদ্য, চিকিৎসা এবং পুনর্গঠন ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি জাতিসংঘে কয়েকটি পরাশক্তির কূটকৌশলের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিন লন্ডন থেকে বিবিসি রেডিও প্রচার করে, পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল নিয়াজী পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে পালিয়ে গেছেন। তবে পরদিনই নিয়াজী ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আকস্মিক বিবিসির সাংবাদিকের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘আমি পালাইনি, আপনার সামনেই আছি!’

রাজধানী ঢাকায় যুদ্ধের শেষ পর্যায়ের অনিশ্চয়তার কারণে লোকজন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে শুরু করে। পলায়নপর পাকিস্তানিরা ব্যাংকে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে বা টাকা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেতে পারে—জনমনে এই আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। অনেকেই ব্যাংকে গিয়ে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স সার্টিফিকেট’ও (সঞ্চয়পত্র) ভেঙে ফেলতে শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারা বাড়িতে তল্লাশি চালালে দেখে ফেলবে সে ভয়ে নগদ টাকা লুকিয়ে রাখা হয় গর্তে বা চালের বস্তায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অর্ধেক আসামিই খালাস পাচ্ছে দুদকের মামলায়

  • ১১ মাসে দায়ের ৫১২টি মামলা
  • দেশে সম্পদ ক্রোক ৩,৩৬১ কোটি টাকার
  • জরিমানা আদায় ৫,০৫৩ কোটি টাকা
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৬
অর্ধেক আসামিই খালাস পাচ্ছে দুদকের মামলায়

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর প্রায় অর্ধেকেই আসামিরা শেষ পর্যন্ত খালাস পাচ্ছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যেসব মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, তার পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে মোট ২২৮টি মামলার রায় হয়েছে। ১০৩টি মামলাতেই আসামিরা খালাস পেয়েছেন। সেই হিসাবে ৪৯ শতাংশ মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। একই সময়ে আসামির সাজা হয়েছে ১২২টি মামলায়। সাজার হার মামলার ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া নিষ্পত্তি হয়েছে ১০টি মামলা ও প্রত্যাহার করা হয়েছে একটি মামলা। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এই হার অনেকটাই কম।

দুদকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১১ মাসে সংস্থাটি মোট ৫১২টি মামলা করেছে। এ সময়ে দুদকে জমা পড়া ১১ হাজার ৬৩০টি অভিযোগের মধ্যে ৯৬০টি আমলে নেওয়া হয়। অভিযোগ আমলে নেওয়ার হার ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই বেশি।

দুদকের আবেদনে এই সময়ের মধ্যে দেশে ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ২৯ লাখ টাকার সম্পদ এবং বিদেশে ৯৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।

১১ মাসে দুদক মোট ৩১৫টি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অপর দিকে ৭৩টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এই সময়ে দণ্ডিত আসামিদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকার জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে; যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য।

দেশের বিভিন্ন আদালতে দুদকের ৩ হাজার ৪৫১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭টি মামলা বিচারাধীন এবং ৪০৪টি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত। ঢাকায় বিচারাধীন ৮৭৪টি এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ১৭৩টি মামলার বিচার চলছে।

দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, দুদক অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগের মেরিট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এখানে রাজনৈতিক বা সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

তবে সাজার হার কমে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন দুদকের লিগ্যাল শাখার সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুদক সব সময় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে। এটা দুদকের বড় দুর্বলতা।’

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ

আজ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে দুদক কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসন পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা: গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, মানববন্ধনসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। সকালে রাজধানীতে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা ও দুদকের পতাকা উত্তোলন, ফেস্টুন-বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত