Ajker Patrika

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে তোপের মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৭: ৪৪
দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে তোপের মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় সাংসদদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আজ মঙ্গলবার সংসদে বাণিজ্য সংগঠন বিল পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধীদলীয় সাংসদেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।’ 

বিলের ওপর আলোচনাকালে গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খান বলেন, ‘বাজারে গেলে দেখা যায়, বাজারের ওপরে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। পুরো বাজারটাই সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দরিদ্রের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্তরা টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়াচ্ছে।’ 

মন্ত্রীরা ব্যর্থতার দায় শিকার না করে অকাট্য, হাস্যকর যুক্তি তুলে ধরছেন বলে দাবি করেন মোকাব্বির খান। বলেন, ‘দেশের মানুষ এগুলো প্রত্যাশা করে না। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলার চিত্র এটা হওয়ার কথা ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, কিন্তু কবে যে সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত হবে, সেটা আল্লাহ জানেন।’
 
বিএনপির সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা বলেন, ‘তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হইচই হলো। ১৫ দিনে সিন্ডিকেট এক হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেট হলো সরকার। সরকার আর সিন্ডিকেটের মধ্যে পার্থক্য নেই।’ 

দ্রব্যমূল্য নিয়ে মন্ত্রীরা জাতির সঙ্গে উপহাস করছে বলে দাবি করে হারুনুর রশিদ। বলেন, ‘তারেক রহমান নাকি লন্ডনে বসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। বিএনপি নাকি দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। এই সব বক্তব্য যখন দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের জায়গা থেকে আসে। তখন এগুলোর কী উত্তর দেব।’
 
হারুন বলেন, ‘আজকে গ্যাসের কারণে ঢাকায় হাহাকার চলছে। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। রমজান মাসে মানুষ কীভাবে তাদের জীবন-জীবিকা চালাবে? গ্যাস ও তেলের দাম বাড়াচ্ছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে সরকার যে ব্যর্থ। কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু পণ্যের ওপর ট্যাক্স ও শুল্ক কমিয়েছেন। সেটা ঠিক আছে। টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এগুলোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।’
 
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ক্ষমতার বলয়ে থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।’
 
জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের দাম শুধু বৈশ্বিক কারণে বাড়েনি। গরুর মাংসের দাম বাড়ছে, এটা তো রাশিয়া থেকে আসে না। যুদ্ধের কারণে না। এই দেশের গরুর মাংসের দাম হঠাৎ করে কেন বাড়ল। বাড়ে এই কারণে, সেটা হলো সিন্ডিকেট। গরু আনতে গেলে প্রতিটি জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। মার্কেট বসলে চাঁদা দিতে হয়, নানা রকমের উৎপাতের সামনে ব্যবসা করতে হয়। চাঁদা ছাড়া ফুটপাতে চা-দোকান করতে পারে না।সিন্ডিকেট করে একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। রমজান মাসে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।’ 

জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এফেকটেড হচ্ছে। তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে না।’ 

মুজিবুল হক বলেন, বলা হয় যুদ্ধের কারণে দাম বেড়েছে। যেসব পণ্য আমদানি করা হয় সেগুলোর দাম বাড়তে পারে। যেগুলো যুদ্ধের আগে আমদানি করা হয়েছে এবং যেগুলো দেশি পণ্য সেগুলোর কেন দাম বাড়বে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবি জানান তিনি। 

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন পুষ্টিমানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে যে লেবু ২ টাকা সেটা ঢাকায় ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীকে আবার যুদ্ধ করতে হবে।’
 
পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘আজকে সংবাদপত্রে এসেছে তিনি (বাণিজ্যমন্ত্রী) গতকাল বাজারে গিয়েছেন এবং তিনি ২৮ টাকা কেজিতে ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। এখন মাননীয় মন্ত্রী যদি ঘোষণা দিয়ে একটু কাঁচাবাজার, সবজি বাজারসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যেতেন মানুষও ওই বাজারে যেতে পারত এবং মন্ত্রীর মতো কম দামে জিনিস কিনতে পারত। কারণ, উনি যতই ভ্যাট কমিয়ে মূল্য কমানোর চেষ্টা করছেন, প্রকৃতপক্ষে বাজারে পণ্যের দাম অত কমে নাই।’
 
পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী সজ্জন মানুষ। কিন্তু তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। যে কারণে প্রায় সময় সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মন্ত্রী একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী কিন্তু কেন তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সত্য স্বীকার করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সিন্ডিকেট করে তেলের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।’
 
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘এ্যাপোলো (এভারকেয়ার) হাসপাতালে গেলে লক্ষাধিক টাকা বিল এলে, বাজারে গেলে বেশি দাম দেখে বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা মনে পড়ে।’
 
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘সরকার ধরলে দাম কমে আবার যখন সরকার শিথিলতা দেখায় তখন আবার দাম বাড়ে। একটার দাম কমলে আরেকটার দাম বাড়ে এটা একটা লুকোচুরি খেলার মতো।’
 
বিরোধী এমপিদের বক্তব্যের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, এটা তিনি কখনো বলেননি। প্রতি মাসে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। এখন বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে।’
 
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কোথাও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে না। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে। যে কেউ চাইলে তেল আমদানি করতে পারে। সরকার সিন্ডিকেট এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘একটি টিসিবির ট্রাক থেকে আড়াই শ মানুষকে পণ্য দেওয়া হয়। ছবি দেখানো হয় পণ্যের জন্য মানুষ দৌড়াচ্ছে। ৩০০ জন লাইনে দাঁড়ালে ৫০ জন পাবেন না। বাকি ২৫০ জন যে পণ্য পেয়েছেন, সেটা দেখানো হয় না।’ 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিন্ডিকেট বলে যাঁদের কথা বলা হচ্ছে তাঁরা কেউ রাজনীতি করেন না, তাঁরা কেউ এমপি নন। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত ফলোআপ করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত