Ajker Patrika

সরকারি চাকরি

বারবার যাচাইয়ে নিয়োগ জটিলতা

  • একদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার আলোচনা, অন্যদিকে নিয়োগ আটকে দেওয়া।
  • ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ২৩০ জন।
  • সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নিয়োগের দাবি বাদ পড়া প্রার্থীদের।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ২৯
৪৩তম বিসিএসে একবার গেজেটভুক্ত হয়েও পরবর্তী সময়ে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন ১৬৮ জন চাকরিপ্রার্থী। নিয়োগের দাবিতে এই প্রার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল সচিবালয়ের সামনে। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
৪৩তম বিসিএসে একবার গেজেটভুক্ত হয়েও পরবর্তী সময়ে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন ১৬৮ জন চাকরিপ্রার্থী। নিয়োগের দাবিতে এই প্রার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল সচিবালয়ের সামনে। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও গোয়েন্দা সংস্থার যাচাইয়ের পর রাজনৈতিক কারণে সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশের পরও নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে অনেক চাকরিপ্রার্থীর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর গঠিত সংস্কার কমিশন পুলিশ ভেরিফিকেশনের এই নিয়ম বাতিলের সুপারিশের কথা ভাবছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো সেই আগের পথেই হাঁটছে। সরকারি চাকরির নিয়োগে দলীয় সরকারের থেকেও কঠোর অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার। বারবার যাচাইয়ে এই চক্করে ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন ২৩০ জন।

নিয়োগবঞ্চিতদের দাবি, বেশির ভাগেরই নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টার কারণে। নিয়োগের দাবিতে তাঁরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছেন। অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, ৪৩তম বিসিএসের গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রার্থীদের আবেদন পর্যালোচনা করা হবে। নতুন করে অনেকে গেজেটভুক্ত হতে পারেন।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। তাঁদের মধ্যে ক্যাডার পদে ২ হাজার ১৬৩ জন নিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। গত ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে গেজেটভুক্ত করে সরকার। সুপারিশের পরেও বাদ পড়েন ৯৯ জন। আগের গেজেট স্থগিত করে গত ৩০ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮৯৬ জন নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। এই দফায় বাদ পড়েন ১৬৮ জন। প্রথম দফায় বাদ পড়া ৯৯ জনের মধ্যে ৩৭ জন দ্বিতীয় দফায় গেজেটভুক্ত হয়েছেন। ফলে ৪৩তম বিসিএসে মোট বাদ পড়েছেন ২৩০ জন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দফায় যে ৯৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্যে ৫৪ জন বাদ পড়েছিলেন। তাঁদের অনেকের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট এসেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

দ্বিতীয় দফার গেজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু সাধারণ ক্যাডার থেকেই বাদ পড়েছেন ৬৬ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৯ জন, করে ১০ জন, পুলিশে ৯ জন; পররাষ্ট্র, শুল্ক ও আবগারি, সমবায় ও খাদ্যে ৩ জন করে; নিরীক্ষা ও হিসাব এবং তথ্যে ২ জন করে এবং রেলওয়ে ও পরিসংখ্যান ক্যাডারে একজন করে বাদ পড়েছেন।

বাদ পড়া প্রার্থীরা গত মঙ্গল ও বুধবার সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদনও দিয়েছেন তাঁরা।

দ্বিতীয় দফায় বাদ পড়া অন্তত অর্ধেক প্রার্থীর দাবি, রাজনৈতিক কারণে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়নি। কারণ তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কেউ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এসব প্রার্থী বাদ পড়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।

রাজনৈতিক কারণে বাদ পড়েছেন বলে ধারণা করছেন ৫০-৬০ জন প্রার্থী। তাঁদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রথম গেজেটের মাধ্যমে তাঁরা গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন। তখনো তো গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়েই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বাইরে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিরোধী অবস্থান থাকার কারণেও কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে বেশির ভাগ প্রার্থী বাদ পড়েছেন বলে ওই সূত্র দাবি করে।

৪৩তম বিসিএসে গেজেটভুক্তদের দ্বিতীয় দফায় চারটি এজেন্সির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। চারটি সংস্থার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২৮ থেকে ৪২তম ১৫টি বিসিএসে বাদ পড়া ২৫৯ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে গত ১৪ আগস্ট নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত সরকারের সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছিল।

ভেরিফিকেশনে কী কী যাচাই করা হয়

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক্-যাচাই ফরমে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হয়। সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তিনি কোনো মামলায় গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্যও চাওয়া হয়। উত্তীর্ণ হওয়ার পর এসব যাচাই করে প্রতিবেদন দেয় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য যাচাইয়ের কথা না থাকলেও বছরের পর বছর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করছে। যদিও ফৌজদারি অপরাধ করে না থাকলে কাউকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগবঞ্চিত করা যায় না।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গঠন হওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সব জায়গা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছিল। কমিশনগুলো এখনো সুপারিশ চূড়ান্ত না করলেও সরকার সেই পথে হাঁটছে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান দলীয় সরকারের চেয়ে কঠোর, যদিও তাদের দলীয় কোনো পরিচয় নেই।

৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়া প্রার্থীরা আবেদন করেও নিয়োগ না পেলে বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইবেন। সরকার নিজ থেকে সেই কারণ না জানালে কেউ কেউ মামলার প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।

বাদ পড়া একজন প্রার্থী বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শত শত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি এমন করা হয়, এর থেকে বড় বৈষম্য আর হতে পারে না। বাবা, চাচা, মামা কে কোন দল করেছে, সেটি দেখে কাউকে নিয়োগ না দেওয়া অন্যায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে ভেরিফিকেশনের সময় চাকরি নিশ্চিত করতে অনেকেই নিজেদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু অভ্যুত্থানে সরকার পতনে এখন তা তাঁদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুর রহমান গতকাল বুধবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাদ পড়া প্রার্থীদের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যালোচনা করা হবে। চারটি সংস্থার তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার আলোকেই গেজেট করা হয়েছে। আবেদন যৌক্তিক হলে আমরা বিবেচনা করব, আগেও এমন নজির আছে। এক প্রশ্নে এপিডি বলেন, প্রার্থীদের শুধু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, সার্বিক বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আনা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার কথা বললেও এর মাধ্যমে বিসিএসের চাকরি আটকে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ‘এটা অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত’ বলেছেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের একটি সংস্কার কমিশন বলেছিল পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া হবে। কারণ এর মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া অনেককে বঞ্চিত করা হয়। এখন তারা এটি করছে, এটা তো বঞ্চনার পর্যায়ে চলে গেল। নৈতিকভাবে এটাকে সমর্থন করা যায় না। কী ধরনের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে, সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, কোনো অপরাধের খবর আছে কি না, এগুলো তো পরিষ্কার করতে হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এটা করা হয়েছে, অন্যায় হয়েছে; এটি সংবিধানের সঙ্গে যায় না।’

শহীদ খান আরও বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে এদের নিয়োগ না দিলে কী কারণে নিয়োগ দেওয়া হয়নি; শুধু প্রার্থীদের না, নাগরিকদেরও জানান অধিকার আছে। এটা হতে পারে না, এটা অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, সংবিধান ও আইনের লংঘন এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।

বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বঙ্গভবনে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।

এর আগে ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত), তাহমিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

বাসস, ঢাকা  
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।

বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।

নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৪
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি
ভারতকে হারানোর পর ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।ছবি: ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সমসাময়িক বিষয়ে আজ বুধবার বেলা ৩টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আসিফ মাহমুদের সংবাদ সম্মেলন হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সমসাময়িক কোন বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন, মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ভাষণের রেকর্ড করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও আজ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

উপদেষ্টার পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা না থাকলেও তফসিল ঘোষণার আগে সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। তাঁদের আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ওই বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন আসিফ মাহমুদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১৮
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।

সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রায়পুরা অঞ্চলে ১৪টি হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ তখনকার বিশাল, প্রশস্ত মেঘনা পার হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শত শত নৌকার সাহায্যে অবশিষ্ট সেনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করে।

প্রচণ্ড চাপে পড়ে আগের দিন ঢাকায় পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও গভর্নর মালেক সৈন্যসহ পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন দাউদকান্দির পতনের পর তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, ঢাকাই যৌথ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য। পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্ণ অনুমোদন লাভ করে।

সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর রায়পুরায় অবতরণের পর প্রায় ৩ ঘণ্টা ঢাকার পাকিস্তানি সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর বিমান হামলা চলে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা, গণহত্যার অন্যতম সহযোগী রাও ফরমান আলী ঢাকায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরিকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আয়োজন করার আবেদন জানান। বাঙালিদের ওপর ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চলার পর এত দিনে এসে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং এই অঞ্চলে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এ প্রস্তাব জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।

নিরাপত্তা পরিষদে রাও ফরমান আলীর এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ চলার সময় হঠাৎ খবর আসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। ঘটনা হচ্ছে, খবরটি ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার ইয়াহিয়াকে জানান, পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হয়েছে। এ কারণেই ইয়াহিয়ার মত বদলে যায়। পাকিস্তান নিজে থেকে ‘সম্মানজনকভাবে’ সেনা প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগী হলেও সেই উদ্যোগকে সমর্থন না করে মার্কিন সরকার বরং তা রদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তার ওপর ভারতকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করানোর তাগিদ দিয়ে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে দুই দফা বার্তা পাঠান। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে ভারতকে সম্মত করতে ব্রেজনেভের ওপর চাপের মাত্রা বাড়ানো হয়। তাঁকে জানানো হয়, ভারত যদি এরপরও সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।

উপমহাদেশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে পারে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালো করেই জানা ছিল। সোভিয়েত সরকার তাদের নৌবাহিনীকে সতর্ক রাখে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের যাত্রারম্ভের আগেই সোভিয়েতরা তাদের ভারত মহাসাগরীয় নৌবহরের শক্তি বৃদ্ধি শুরু করে।

১০ ডিসেম্বর মার্কিন সপ্তম নৌবহর চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযোগকারী পাঁচ শ’ মাইল দীর্ঘ মালাক্কা প্রণালির ওপারে ছিল। ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের সমাবেশ তখন সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় জানা যায়, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি জানার জন্যই সোভিয়েত সরকার কসমস নামের নজরদারি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।

এদিকে চূড়ান্ত পর্বের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের আশঙ্কায় ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকেন অনেক সাধারণ মানুষ। আগের দিন সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই হবে বলে মুক্তিযোদ্ধারা লোকজনকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। অনেক লোককে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন, পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে রিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে (সিএনজি অটোর আগের সংস্করণ) করে শহর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ লটবহর মাথায় নিয়ে হেঁটেই চলেছেন। এ যেন ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ঢাকা ছাড়ার যে ঢল নেমেছিল কিছুটা প্রতিচ্ছবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত