Ajker Patrika

মানবতাবিরোধী অপরাধ

নিউরোসায়েন্সেসে ভর্তি ১৬৭ জনের বেশির ভাগের খুলি ছিল না

  • শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষ্যে এক চিকিৎসক।
  • এ নিয়ে এই মামলায় গতকাল চারজনসহ ১৬ জন সাক্ষ্য দিলেন।
  • কান্নার কারণে কথা আটকে যাচ্ছিল নিহত জুনায়েদের মায়ের।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০১: ১৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত ১৬৭ জনের মধ্যে বেশির ভাগের মাথার খুলি ছিল না বলে জানিয়েছেন সেখানকার সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দিতে তিনি এই তথ্য দেন।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী ডা. মাহফুজুর রহমান।

গতকাল এই মামলায় তিনিসহ চারজন সাক্ষ্য দেন। অপর তিনজন হলেন ওই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে নিহত শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল এবং ইবনে সিনা হাসপাতালের চিকিৎসক মো. হাসানুল বান্না।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৪ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়। এ নিয়ে এই মামলায় ১৬ জন সাক্ষ্য দিলেন।

এই মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গতকাল কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। চার সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে তাঁদের জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

ডা. মাহফুজুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই থেকে হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ রোগী আসতে থাকে। রোগীদের মাথায়, হাতে, পায়ে, পিঠে, মুখে, গলায় গুলি ও পিলেট (ছররা গুলি) বিদ্ধ ছিল। ৪-৫ আগস্ট আসা রোগীদের অধিকাংশের মাথায়, বুকে, মুখে গলায় গুলিবিদ্ধ ছিল। তাঁদের হাসপাতালে ৫৭৫ জন গুলি ও পিলেটবিদ্ধ রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সিট না থাকায় এবং গুরুতর আহত রোগীর চাপ বেশি থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত ১৬৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগেরই মাথার খুলি ছিল না। তাঁদের মধ্যে চারজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। ২৯ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।

ডা. মাহফুজ বলেন, ১৯ জুলাই রোগীর সংখ্যা বাড়লে ডিবির লোকেরা এসে নতুন গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের ভর্তি না করার জন্য তাঁকে চাপ দেন। ওপরের নির্দেশ আছে জানিয়ে যাদের ভর্তি করা হয়েছে, তাদের রিলিজ না করতে বলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন তাঁরা কৌশলে ভর্তি রেজিস্টারে রোগীদের জখমের ধরন পরিবর্তন করে গুলিবিদ্ধের স্থলে সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণ লিপিবদ্ধ করেন। আহত রোগীদের বয়স ছিল ১৩ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাদের অধিকাংশই ছিল শিক্ষার্থী। তিনি প্রায় ৩৩টি অস্ত্রোপচার করেন এবং অনেক বুলেট ও পিলেট আহত আন্দোলনকারীদের শরীর থেকে বের করেন। অনেক গুলি ও পিলেট রোগীরা চেয়ে নিয়ে যান। তিনি বলেন, এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশ কার্যকরকারী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত এবং যারা নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়ে নিহত ও আহত করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি দাবি করেন এই চিকিৎসক।

চানখাঁরপুলে ৫ আগস্ট নিহত শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল জবানবন্দি দিতে গিয়ে একাধিকবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নার কারণে তাঁর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে গেন্ডারিয়া উইল পাওয়ার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বয়স ছিল ১৪ বছর। আমার সন্তান তো কোনো দোষ করেনি, তাকে কেন গুলি করে মারা হলো?’ তিনি জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

সোনিয়া জামাল জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে জুনায়েদ তার বন্ধু সিয়ামকে নিয়ে আন্দোলনে যায়। তিনি মেয়ে নাফিসা নাওয়ালকে নিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আন্দোলনে যোগ দেন। সেখানে ছোট ভাই আসিফের ফোন পেয়ে বাসায় গিয়ে তাঁর ভাশুরের ঘরে ঢুকে জুনায়েদকে বিছানায় শোয়ানো দেখেন। জানতে পারেন, বার্ন ইনস্টিটিউটের অপর পাশের ফুটপাতে জুনায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জেনেছেন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার, এডিসি আক্তারুল ইসলামের নির্দেশে চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুল বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়ে জুনায়েদ, শাহরিয়ার খান আনাস, ইয়াকুব, রাকিব হাওলাদার, ইমতিয়াজ ও মানিককে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, আবদুল্লাহ আল-মামুন।

ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হাসানুল বান্না জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই দুপুরের পর থেকে তাঁদের হাসপাতালে অসংখ্য আহত ব্যক্তি এলে তাঁরা চিকিৎসা শুরু করেন। অনেকের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ১৮ জুলাই সন্ধ্যার পর পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসায় বাধা দেয় এবং রোগী ভর্তি করতে নিষেধ করে। তারা রোগীর ভর্তি রেজিস্টার চেক করে এবং রোগীদের তালিকা নিয়ে যায়। ১৯ জুলাই সকাল থেকে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের ফটক অবরোধ করে চেয়ার নিয়ে সারা দিন বসে ছিল। তারা কোনো রোগীকে ঢুকতে, হাসপাতালে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে বা বের হতে দেয়নি। ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই এবং ২, ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বর্ণের কারিগরসহ দুই ব্যক্তি নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত