Ajker Patrika

প্রতিদিন একটির বেশি ওষুধ কারখানা অনুমোদন, অর্ধেকের বেশি হার্বাল

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ১৩: ২৫
প্রতিদিন একটির বেশি ওষুধ কারখানা অনুমোদন, অর্ধেকের বেশি হার্বাল

২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাসে ১২০টি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এই ছয় মাসের মধ্যে মোট কর্মদিবস ছিল ১০৩টি। সেই হিসাবে দিনে গড়ে একটির বেশি কারখানা অনুমোদন পেয়েছে, যার বড় অংশই ইউনানি, হারবাল ও আয়ুর্বেদিক।

হঠাৎ এত বেশি ওষুধ কারখানা অনুমোদন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। দীর্ঘদিন ধরে এ খাতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, কিছু মানুষ কালোটাকা বিনিয়োগ এবং ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নেওয়ার জন্যই কারখানার অনুমোদন নিয়ে থাকতে পারেন। কেউ হয়তো গ্রামাঞ্চলে তৈরি হওয়া বাজার ধরতে নতুন কারখানা গড়ছেন, আবার অনেকে প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার দেখে বাংলাদেশও আয়ুর্বেদিক ওষুধের বড় বাজার হবে বলে মনে করছেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঔষধ ও কসমেটিকস আইন পাস হওয়ার পর অনেকে নতুন প্রকল্প নিচ্ছেন। অনেকের ওষুধের ব্যবসা রয়েছে। তাঁরা নতুন করে ইউনানি, হারবাল ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এ কারণে নতুন প্রকল্প বেশি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

দেশে বর্তমানে সব ধরনের ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে হাজারখানেক। অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানিগুলোর মধ্যেও ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠান চাহিদার মান ঠিক রেখে চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে। অন্যগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক; বিশেষ করে বিকল্প ওষুধের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এগুলোর গুণমান ও দাম—কোনোটিই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ওষুধশিল্পের মালিক ও বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম সফিউজ্জামান বলেন, নতুন প্রকল্প অনুমোদনের সময় অনেকে জমি ভাড়া নিয়ে নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। দেশে এত ওষুধ কারখানা অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

ওষুধের মান খারাপ হলেও পার পেয়ে যাওয়া এবং কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ওষুধ কারখানা অনুমোদন নেওয়ার হিড়িক পড়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মনীর উদ্দিন আহমেদ। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দেশে অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী কালোটাকার মালিকেরা নতুনভাবে ওষুধে বিনিয়োগ করছেন। ওষুধের মান খারাপ দিলে সাধারণ মানুষ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। ওষুধ কোম্পানিগুলো দেশের মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে। তারা আগ্রাসী বিনিয়োগ করছে এবং কমিশন-বাণিজ্যের মাধ্যমে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা চিকিৎসকদের পকেটে দিচ্ছে।

মনীর উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, দেশে মোট ওষুধের ৯২-৯৫ শতাংশ উৎপাদন করছে ৩০-৪০টি কোম্পানি। অবশিষ্ট ওষুধ তৈরি করছে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। দেশে বর্তমানে ৯৮ শতাংশ ওষুধ তৈরি হচ্ছে। নতুন করে আর কোম্পানির দরকার নেই।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গত ৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওষুধ কারখানার অনুমোদন পেয়েছে গত নভেম্বর থেকে এপ্রিলে। অধিদপ্তর ২০২০ সালে ২০টি, ২০২১ সালে ২৪টি, ২০২২ সালে ২৯টি, ২০২৩ সালে ৭৫টি এবং ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০টি কারখানার অনুমোদন দেয়।

 ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রকল্প অনুমোদন কমিটির ১১৩তম সভায় ৬৫টি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল ১১৪তম সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় ৫৫টি নতুন কারখানার। এসব নতুন কারখানার মধ্যে ২৫টি অ্যালোপ্যাথিক, ৬৫টি হারবাল, ১৩টি ইউনানি, হোমিওপ্যাথি ৪টি, আয়ুর্বেদিক ৭টি, মেডিকেল ডিভাইস ২টি, কসমেটিকস ২টি ও ১টি ফিড কারখানা রয়েছে।

সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলায়। ঢাকায় ১৪টি হারবাল, ২টি অ্যালোপ্যাথিক, ১টি ইউনানি, ২টি হোমিওসহ মোট ১৯টি কারখানার অনুমোদন পেয়েছে এ সময়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারখানা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বগুড়ায়। সেখানে হারবাল ৮টি, আয়ুর্বেদিক ৩টি, ইউনানি ৩টি ও অ্যালোপ্যাথিক ২টিসহ মোট ১৬টি কারখানা অনুমোদন পায়। এ ছাড়া গাজীপুরে ৫টি হারবাল ও ৬টি অ্যালোপ্যাথিক মিলিয়ে মোট ১১টি, নারায়ণগঞ্জে ১টি আয়ুর্বেদিক, ২টি হারবাল এবং ১টি করে অ্যালোপ্যাথিক ও ইউনানি কারখানা অনুমোদন পেয়েছে।

বগুড়ায় এক ওষুধ ব্যবসায়ী নিজের এবং আত্মীয়স্বজনের নামে ৮টি কারখানা অনুমোদন নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে। জেলাটিতে নতুনভাবে অনুমোদন পাওয়া একটি আয়ুর্বেদিক কোম্পানির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্ত। ওষুধ প্রশাসন থেকে প্রকল্প অনুমোদন দেখিয়ে আমরা চাইলে ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ নিতে পারব।’

রাজশাহীতে অনুমোদন পাওয়া মেসার্স এভালন হারবাল অ্যান্ড নিউট্রাসিউটিক্যালস কারখানায় গত বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচতলা ভবনের সামনে ‘মুসলিম মেডিল্যাব’ নামে রাঙাপরি গ্রুপের একটি ওষুধ কোম্পানির সাইনবোর্ড। এভালন হারবাল অ্যান্ড নিউট্রাসিউটিক্যালসের লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মাসুম সরকার বলেন, চালু কারখানায় বাড়তি দেড় থেকে আড়াই হাজার বর্গফুট জায়গা থাকলে হারবালের লাইসেন্স নেওয়া যায়। ঔষধ প্রশাসন প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পেলেও সবাই উৎপাদনে আসতে পারে না।

হারবাল প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনসি দারুল ইসলাম বলেন, দেশে ওষুধে আগ্রাসী বিনিয়োগ হচ্ছে। চাহিদা ও উৎপাদনের সঙ্গে কোনো মিল নেই। প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে ব্যাংকঋণ নেবে। ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধ উৎপাদনকারী মার্কেটিং করে না। সেখানে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে। দেশে এটি করা হলে দুর্বল কোম্পানিগুলো সবল হতো।

ঔষধ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কারখানা রয়েছে ৩১৫টি। এগুলোর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৬৪টি। ইউনানি ২৮৭টির মধ্যে বন্ধ ১৯টি। আয়ুর্বেদিক ২০৫টির মধ্যে ১৬টি, হারবাল ৪৪টির মধ্যে ৩টি এবং হোমিও ৭১টির মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১৭টি। অর্থাৎ ৯২২টি কারখানার মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১১৯টি। এসব কারখানা দেখভাল করার মতো পর্যাপ্ত জনবল অধিদপ্তরের নেই।

ছয় মাসে ১২০টি নতুন কারখানা অনুমোদন দেওয়াকে লুটপাট বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ হেলথ কনজ্যুমারস রাইট ফোরাম। সংগঠনের সদস্যসচিব ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, সরকারের দুর্বলতায় ঔষধ প্রশাসনে লুটপাট চলছে, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এসব অনিয়ম জনগণের সামনে তুলে ধরার অনুরোধ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, দেশে বর্তমানে ওষুধের চাহিদা কী পরিমাণ রয়েছে, কত উৎপাদিত হচ্ছে, তার একটি মূল্যায়ন করে নতুন কারখানা অনুমোদন দেওয়া দরকার। চাহিদার তুলনায় বেশি ওষুধ তৈরি হলে আগ্রাসী বাণিজ্য এবং পুশ সেল বাড়বে।

ঔষধ প্রশাসনের অনিয়ম নিয়ে ২০১৫ সালে গবেষণা চালায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রকল্প স্থানান্তর বা হস্তান্তরের সময় ১৫ লাখ, ছাড়পত্রে ৫-১০ লাখ, লাইসেন্স নবায়নে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ, রেসিপি অনুমোদন ৪-৫ হাজার, ওষুধ নিবন্ধন ১ থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত ঘুষ লেনদেনের তথ্য উঠে আসে এতে।

নতুন ওষুধ কারখানা অনুমোদনের ক্ষেত্রেও এমন অর্থ লেনদেন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ওষুধের মান খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাদেরকে তড়িঘড়ি ওষুধ তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাদের সে সক্ষমতা আছে কি না, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না, বিষয়টি ক্ষতি দেখতে হবে। ওষুধের মান দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। তারা যদি রক্ষকের জায়গায় ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে এবং তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আগামী নির্বাচনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে হবে: ইউএনওদের প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪১
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আগামী নির্বাচনকে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।

রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে আজ বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন দেশের সব জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রধান উপদেষ্টা ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের নতুন করে একটি সুযোগ দিয়েছে। অন্য জেনারেশন এই সুযোগ পাবে না। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব। আর যদি না পারি, তাহলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এর আগেও আমরা নির্বাচন দেখেছি। বিগত আমলে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, যেকোনো সুস্থ মানুষ বলবে—এটা নির্বাচন নয়, প্রতারণা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অন্যান্য দায়িত্বের মতো নয়; বরং একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। আমরা যদি ভালোভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচনের দিনটি জনগণের জন্যও ঐতিহাসিক হবে।’

ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে সরকার তার দায়িত্বটি সফলভাবে পালন করতে সক্ষম হবে।’

আগামী সংসদ নির্বাচন ও গণভোট দুটিই জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য আর গণভোট শত বছরের জন্য। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশটাকে স্থায়ীভাবে পাল্টে দিতে পারি। যে নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করতে চাই, তার ভিতটা এর মাধ্যমে গড়তে পারি।’

এ সময় সদ্য যোগদান করা ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন করা।’

প্রধান উপদেষ্টা ইউএনওদের নিজ নিজ এলাকার সব পোলিং স্টেশন পরিদর্শনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, এলাকাবাসী ও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।

গণভোট বিষয়ে ভোটারদের সচেতন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের বোঝাতে হবে, আপনারা মন ঠিক করে আসুন—“হ্যাঁ”-তে দেবেন নাকি “না”-তে ভোট দেবেন। মন ঠিক করে আসুন।’

কর্মকর্তাদের ধাত্রীর সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধাত্রী ভালো হলে জন্ম নেওয়া শিশুও ভালো হয়।

তিনি কর্মকর্তাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীরা যেন ঠিকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিগগির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন, কীভাবে, কোন কাজটি করবেন—তার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখন থেকেই নিন।’

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের ৪টি আসন বহাল, ফিরল না গাজীপুর ৬

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাগেরহাটের ৪টি আসন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে এ আদেশ দেন।

এর ফলে বহাল থাকল বাগেরহাটের চারটি আসন। বাদ পড়েছে গাজীপুর-৬ আসনটিও।

এর আগে বাগেরহাটের আসন একটি কমিয়ে তিনটি করা এবং গাজীপুরে একটি বাড়ানো-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।

হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং গাজীপুর-৬ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ড. হাফিজুর রহমান ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহ উদ্দিন সরকার আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ড. হাফিজুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।

বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বঙ্গভবনে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।

এর আগে ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত), তাহমিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

বাসস, ঢাকা  
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।

বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।

নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত