Ajker Patrika

গোপন তথ্যের ডিজিটাল হাট: অবাধে বিক্রি এনআইডি ও মোবাইল ফোনের ডেটা 

আপডেট : ২২ মে ২০২৪, ১৫: ৫৯
গোপন তথ্যের ডিজিটাল হাট: অবাধে বিক্রি এনআইডি ও মোবাইল ফোনের ডেটা 

দেশের মানুষের ব্যক্তিগত গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য কেনাবেচা হচ্ছে দেদার। এর জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে উঠেছে ১ হাজারের মতো অবৈধ ডিজিটাল হাট। এসব গোপন হাটে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য (এনআইডি) ও মোবাইল ফোনের কথোপকথনের (কল ডেটা রেকর্ড–সিডিআর) যাবতীয় রেকর্ড লেনদেন করা হচ্ছে। এমনকি ফোন ব্যবহারকারী কখন-কোথায় আসছেন-যাচ্ছেন, সে রকম ‘জীবন্ত’ তথ্যেরও হাতবদল হচ্ছে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তদন্তে এসব শনাক্ত হয়েছে।

এনটিএমসির কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ এনটিএমসি থেকে তথ্য পাওয়া ৪২টি সংস্থার কেউ কেউ নাগরিকদের এসব স্পর্শকাতর তথ্য গোপন ডিজিটাল বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব কাজে দুটি সংস্থার সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ওই দুই সংস্থায় একজন পুলিশ সুপারসহ চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একটি সংস্থা দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।

জানতে চাইলে এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পন্থায় তথ্য হস্তান্তরের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে গোপন তথ্য কেনাবেচার গ্রুপগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এসব নিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে বৈঠকও করেছে এনটিএমসি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো নাগরিকের তথ্য বেহাত হওয়ার কারণে তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। কেউ তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের নথিপত্র হাতিয়েও নিতে পারে। এমনকি এসব নিয়ে পারিবারিকভাবে অশান্তিও হতে পারে। 

দেশের সব মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টেলিফোনে যোগাযোগের যাবতীয় তথ্যের ভান্ডার হলো ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসি। সব আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্ত সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এনটিএমসি থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে থাকে। এসব তথ্য সরবরাহের জন্য ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম বা এনআইপি’ নামের একটি প্ল্যাটফরম রয়েছে। প্রতিটি সংস্থা তাদের নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সেই প্ল্যাটফরমে ঢুকে তথ্য নিয়ে থাকে। তবে কোন সংস্থা কোন তথ্য নিচ্ছে, তার ‘লগ’ থেকে যায় এনটিএমসিতে। এতে করে কোন সংস্থা কার তথ্য নিচ্ছে, তা সহজে জানতে পারে এনটিএমসি। 

এনটিএমসির পক্ষ থেকে গত ২৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, এনটিএমসির সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), মোবাইল নম্বরের সিডিআরসহ গোপনীয় তথ্য টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। 

সূত্র জানায়, এই অনুসন্ধানে নেমে এনটিএমসি জানতে পারে, টেলিগ্রাম অ্যাপের ৪৯টি গ্রুপে এনআইডি ও মোবাইলের তথ্য কেনাবেচা হচ্ছে। এসব গ্রুপে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া ২২টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে ৫ হাজার সদস্য। সবচেয়ে বেশি সদস্য ফেসবুকের ৭২৫টি গ্রুপে। এতে ৩২ লাখ সদস্য রয়েছে। এসব গ্রুপে টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও এনআইডির তথ্য কেনাবেচা হয়। অনলাইনে এসব চক্রের পরিচিত নাম ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’ গ্রুপ। যে কেউ চাইলে তাদের মাধ্যমে এসব গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক গতকাল আজকের পত্রিকাকে জানান, কিছুদিন আগে তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাঁর ভাইয়ের মোবাইল ফোনের দুই মাসের কললিস্ট সংগ্রহ করেন। ওই যুবক বলেন, চাইলে যে কারও কললিস্ট ও এসএমএসের তথ্য পাওয়া যায়। 

এনটিএমসির চিঠিতে বলা হয়, টেলিগ্রাম অ্যাপের তথ্য কেনাবেচার খোঁজ করতে গিয়ে তারা জানতে পারে, দুটি আইডি থেকে গত ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল—এক মাসে অনেক তথ্য হাতানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। এই দুটি আইডির একটি ব্যবহার করেন অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বা এটিইউর পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন, অন্যটি র‍্যাব-৬-এর কর্মকর্তা তারেক আমান বান্না। এনটিএমসির পক্ষ থেকে তাঁদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এই দুটি সংস্থার তথ্য নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। 

এনটিএমসির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে এটিইউর পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিনকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। 

 তবে এটিইউর প্রধান, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংবেদনশীল ও গোপনীয় এসব তথ্য হস্তান্তরে কোনোভাবেই ফারহানা ইয়াসমিন জড়িত নন। তারপরও তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। জানার চেষ্টা চলছে, কীভাবে কী হয়েছে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। 

অন্যদিকে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৬-এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তদন্তের পরই সব পরিষ্কার হবে।’ 

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। 

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তথ্য নেওয়ার জন্য এনটিএমসি থেকে কর্মকর্তাদের নামে আইডি তৈরি করা হলেও তাঁরা সেটা ব্যবহার করেন না। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আইডি কর্মকর্তারা তুলে দেন অধীনস্থ কনস্টেবলদের হাতে। তাঁরাই টাকা নিয়ে তথ্য কেনাবেচা করেন। 

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান (জোহা) এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে বলেন, তুলনামূলক ছোট কর্মকর্তাদের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং থাকে না। অর্থের লোভে তাঁরা ব্যক্তিগত এসব তথ্য বাইরে বিক্রি করে দিতে পারেন। 

এর সমাধান হিসেবে এই প্রযুক্তিবিদ মনে করেন, এনটিএমসি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে পারে। যেখানে সব তথ্য থাকবে। শুধু ইউনিটের প্রধানদেরই এই সফটওয়্যারে প্রবেশাধিকার থাকবে। 

এনটিএমসির কর্মকর্তারা জানান, তথ্য ফাঁস নিয়ে তাঁরা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে ১৩ মে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে এনটিএমসির পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো, এনআইডির সব তথ্য একটি সার্ভারে রাখা, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আইডি বাতিল করে নতুন আইডি করা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয় এমন ক্ষেত্রে সব তথ্য না দেওয়া এবং টেলিফোনের সব তথ্য শুধু এনটিএমসি থেকে সংগ্রহ করার সুযোগ থাকা। সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এনটিএমসিকে ‘একক দায়িত্বে’ রাখার কথাও বলা হয়। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এভাবে নাগরিকের সব তথ্য বাইরে চলে গেলে মানুষের নাগরিক ও ব্যক্তিজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

এই অধ্যাপক আরও বলেন, নিজেদের খেয়ালখুশিমতো কেউ তথ্য নিতে পারবেন না। তদন্তের প্রয়োজনেই কেবল এই তথ্য দেওয়ার কথা। সেটা কড়াকড়ি করলেই কেবল এর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 

(পত্রিকায় ছাপা র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৬-এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্নার মন্তব্যটি অনলাইন সংস্করণে সংশোধন করা হয়েছে।)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বিকেলে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ও রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খেলা করার সময় পানিতে পড়ে ছয় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন ও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নে ঘটনা দুটি ঘটে। এতে ওইসব এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ বিকেলে অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগর এলাকায় বাড়িসংলগ্ন বিলের পাশে খেলা করছিল মিশকাত (৫), মাহিন (৬) ও সাত্তার তানিল মিয়া (৫)। হঠাৎ সবার অজান্তে তিন শিশু বিলে পড়ে ডুবে যায়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিল থেকে মিশকাত ও মাহিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপর শিশু তানিলের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মাহিনের চাচা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিন শিশু খেলাধুলা করছিল। কিন্তু কখন যে বিলের পানিতে ডুবে গেল, কেউ বোঝেনি। পরে তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পানিতে প্রথমে দুজন, পরে অন্যজনকে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুঃখজনক খবর, একই বাড়ির তিনটা শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে একই দিন বিকেলে উত্তর পারুয়া গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। তারা হলো সুমাইয়া আক্তার (৫), হাবীবা আক্তার (৬) ও জান্নাত আক্তার (৫)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে খেলার ছলে তারা তিনজনই বাড়ির পাশে পুকুরে যায়। কিছুক্ষণ পর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘তিনটি নিষ্পাপ শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অভিমুখী চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের পদযাত্রায় আবারও পুলিশের বাধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা, স্বতন্ত্র কোটা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজও তাঁদের পদযাত্রা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ বেলা ৩টার দিকে ‘চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে থালাবাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করেন প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শাহবাগ থানার সামনে মিছিলটি পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের ভাষ্য, শিক্ষিত, যোগ্য ও কর্মক্ষম যুব প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে এখনো কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধী কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যসচিব আলিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার শাহবাগে অবস্থান করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। সেদিন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এরপর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি জানানো হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করি, কিন্তু পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে।’

আলিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আজও শাহবাগ থানার সামনে আমাদের পদযাত্রা আটকে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পুলিশ মারধরও করেছে।’

‎‎এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ করা নিষেধ। তাই চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বেকার, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে।

‎‎ ২. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

‎ ৩. দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পছন্দমতো শ্রুতিলেখক (বিকল্প সহকারী) মনোনয়নের স্বাধীনতা পাবেন—এমনভাবে নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।

৪. সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পদসংখ্যায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।

‎৫. প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ হলে তা ৩৭ বছর করতে হবে।

‎‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত