Ajker Patrika

গুলি কখন করা যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৪, ২২: ৫৮
গুলি কখন করা যায়

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সহিংসতায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। হতাহতদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। অনেকে নিজের বাসায় বা ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। হতাহতদের অনেকেরই গুলি লেগেছে চোখে, মাথায়, ঘাড়ে ও পেটে। অনেকে গুলির কারণে পঙ্গু হয়ে গেছেন, অনেকে চিরতরে হারিয়েছেন চোখের আলো।

এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা হচ্ছে। এতে দেশের আইন ও সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।

কখন, কীভাবে গুলি করতে হবে এ বিষয়ে আইনে স্পষ্ট বলা আছে।

পুলিশ প্রবিধানমালার ১৫৩ ধারায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে বলা আছে:

 (ক) শুধু নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে—
 (১) ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য (দণ্ডবিধির ৯৬–১০৬ ধারার বিধান অনুযায়ী) 
 (২) বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য (ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭-১২৮ ধারা অনুযায়ী) 
 (৩) কোনো কোনো পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার কার্যকর করার জন্য (ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬ ধারা অনুযায়ী)। 

(খ) ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার: 
এটি খুবই প্রয়োজন যেসব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা ও সম্পত্তি রক্ষার অধিকার সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করবেন। নিজেদের এবং সরকারি সম্পত্তি, যেমন অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, মোটরযান, যানবাহন প্রভৃতি আক্রমণের হাত থেকে তাঁরা আইনানুগভাবে রক্ষা করার অধিকারী। এ ধরনের হামলা মোকাবিলার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার জন্য যতটুকু শক্তি প্রয়োজন তার বেশি প্রয়োগ করা যাবে না। 

কেবল ব্যক্তিগত আত্মরক্ষায় জরুরি প্রয়োগের প্রয়োজনের যথার্থতা ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে গুলি চালানো নিষিদ্ধ। ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার মতো জরুরি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল কিনা তা প্রমাণের দায়িত্ব গুলি বর্ষণকারীর অথবা গুলি বর্ষণের নির্দেশ প্রদানকারী কর্মকর্তার ওপর বর্তায়। 

 (গ) বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার: 
 (১) জনতার ওপর গুলি বর্ষণের আদেশ একটি চরম ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এ পদক্ষেপ গৃহীত হবে সব ব্যবস্থা শেষে যখন জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য তা একান্তভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়ে বা যখন একজন ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা এ ধরনের কর্মকর্তার উচ্চ পদ মর্যাদার কর্মকর্তা বিবেচনা করেন যে, অন্য কোনোভাবে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা সম্ভব নয়। কেবল তখনই ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি বর্ষণের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। 

 (২) জনতার ওপর গুলি বর্ষণের আদেশ দেওয়ার আগে ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা কোনো ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকলে পুলিশ দলের অধিনায়ক পুলিশ কর্মকর্তা দাঙ্গাকারীদের পূর্ণাঙ্গ এবং অনেকবার সতর্ক বাণী প্রদান করবেন যে, তাঁরা যদি অবিলম্বে ছত্রভঙ্গ না হন, তবে তাঁদের ওপর গুলি বর্ষণ করা হবে। 

 (৩) দাঙ্গা দমনে অথবা দাঙ্গাকারী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার কাজে নিয়োজিত সব পদ মর্যাদার পুলিশ সদস্য গুলি বর্ষণের আগে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা তাঁর থেকে ঊর্ধ্বতন পদ মর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার আদেশের জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করবেন। 

পুলিশ প্রবিধানের ১৫৪ ধারায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ নিয়মাবলি সম্পর্কে বলা হয়েছে:
 (ক) একজন পুলিশ কর্মকর্তা গুলি বর্ষণের আগে বা গুলির আদেশ দেওয়ার আগে যেভাবেই সম্ভব তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্কবাণী দেবেন।
 (খ) গুলি সব সময়ে নিয়ন্ত্রিত হবে ও নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুর প্রতি পরিচালিত হতে হবে। 
 (গ) একেবারে অপরিহার্য ক্ষেত্র ছাড়া কোনো বড় রকমের ক্ষতি সাধন করা যাবে না। 
 (ঘ) উদ্দেশ্য সাধিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলি বর্ষণ বন্ধ করতে হবে। 

পুলিশ প্রবিধানের ১৫৫ ধারায় গুলি বর্ষণের নির্দেশ ও গুলি বর্ষণের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বলা হয়েছে:

 (ক) প্রবিধান ১৫১ (৩)–এর অধীনে অধিনায়ক পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে অথবা ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকলে নিজে যখন প্রয়োজন মনে করেন তখন শক্তি প্রয়োগ বা গুলি বর্ষণের নির্দেশ দেবেন। 
 (খ) তিনি এমনভাবে গুলি বর্ষণ করবেন যেন ন্যূনতম ক্ষতি সাধন করে তাৎক্ষণিক ফল অর্জন করা যায়। অবৈধ জনতা ছাড়া মাথার ওপর দিয়ে অথবা অন্য কোনো লক্ষ্যাভিমুখে গুলি বর্ষণের ওপর কঠোর বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কেননা এতে দূরবর্তী নিরপরাধ লোক জখম হওয়ার ঘটনা এবং দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ক্ষতি না দেখে বেআইনি জনতার উৎসাহ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার আগে তিনি দূরত্ব, লক্ষ্যবস্তু ও গুলির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেবেন। 

(গ) পরিস্থিতি অনুযায়ী যা প্রয়োজন তা অপেক্ষা অতিরিক্ত গুলি যাতে বর্ষণ করা না হয় তার জন্য তিনি দায়ী থাকবেন। তিনি সাধারণত, গুলি চালানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষকে অথবা নির্ধারিত দলকে নির্দেশ দেবেন। যদি উচ্ছৃঙ্খল জনতার মনোভাব কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা অথবা অন্যদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে অনিবার্য করে তোলে, তাহলে অর্ধেকের বেশি সদস্য যাতে একসঙ্গে গুলি বর্ষণ না করে সে জন্য তিনি নির্দেশ দেবেন। 

(ঘ) দাঙ্গাকারী জনতা সরে যাওয়ার বা ছত্রভঙ্গ হওয়ার সামান্যতম লক্ষণ দেখামাত্র তিনি গুলি বর্ষণ বন্ধের নির্দেশ দেবেন। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট যদি উপস্থিত থাকেন তবে পুলিশকে আদেশ দেওয়ার এমন ক্ষমতা তাঁর আছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের অনেক স্থানে পুলিশের অনেকে হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকাপুলিশ প্রবিধানের ১৫৬ ধারায় বলা আছে, পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের পর যে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে:
 (ক) অধিনায়ক পুলিশ কর্মকর্তা যত শিগগির সম্ভব মৃত দেহগুলো (যদি থাকে) শবাগারে এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠাবেন।
 (খ) তিনি গুলির খোসাগুলো সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করবেন ও ইস্যুকৃত রাউন্ডের সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দেখবেন। 
 (গ) যদি ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকেন তবে তিনি এবং অধিনায়ক পুলিশ কর্মকর্তা— 
 (১) ঘটনা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ নিখুঁত প্রতিবেদন এবং এরপর
 (২) ব্যবহৃত ও ইস্যুকৃত গুলির সংখ্যাসহ ঘটনার সব প্রাসঙ্গিক বিষয়ের একটি নিখুঁত ও বিস্তারিত বিবরণ প্রস্তুত করবেন। 

 (ঘ) সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি জরুরি টেলিগ্রাম যোগে ও বিস্তারিত বিবরণ টেলিগ্রাম ছাড়া অন্য কোনো দ্রুত মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাঠাতে হবে—
 (১) যদি একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকেন তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে, পুলিশ সুপারকে, কমিশনারকে এবং মুখ্য সচিবকে অনুরূপ প্রতিবেদন পাঠাবেন এবং
 (২) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং ইন্সপেক্টর জেনারেলকে অধিনায়ক পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিবেদন পাঠানো হবে। 

 ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৯৬–১০৬ ধারায় আত্মরক্ষার অধিকার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, আঘাত যতটুকু, প্রতিকারও ঠিক ততটুকু করতে পারবে। প্রতিঘাত আঘাতের বেশি হতে পারবে না। 

 ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো বেআইনি সমাবেশ বা সর্ব সাধারণের শান্তি বিনষ্ট হওয়ার কারণ ঘটাতে পারে এরূপ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হতে আদেশ দিতে পারেন। ১২৮ ধারায় বলা হয়েছে, আদেশ পাওয়ার পরও কোনো সমাবেশ যদি ছত্রভঙ্গ না হয় তাহলে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলপ্রয়োগ করে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য অগ্রসর হতে পারবেন। একই সঙ্গে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্রবাহিনীর সাহায্য দাবি করতে পারেন এবং সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারবেন। 

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। 

সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। আর ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা–নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বিকেলে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ও রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খেলা করার সময় পানিতে পড়ে ছয় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন ও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নে ঘটনা দুটি ঘটে। এতে ওইসব এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ বিকেলে অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগর এলাকায় বাড়িসংলগ্ন বিলের পাশে খেলা করছিল মিশকাত (৫), মাহিন (৬) ও সাত্তার তানিল মিয়া (৫)। হঠাৎ সবার অজান্তে তিন শিশু বিলে পড়ে ডুবে যায়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিল থেকে মিশকাত ও মাহিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপর শিশু তানিলের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মাহিনের চাচা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিন শিশু খেলাধুলা করছিল। কিন্তু কখন যে বিলের পানিতে ডুবে গেল, কেউ বোঝেনি। পরে তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পানিতে প্রথমে দুজন, পরে অন্যজনকে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুঃখজনক খবর, একই বাড়ির তিনটা শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে একই দিন বিকেলে উত্তর পারুয়া গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। তারা হলো সুমাইয়া আক্তার (৫), হাবীবা আক্তার (৬) ও জান্নাত আক্তার (৫)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে খেলার ছলে তারা তিনজনই বাড়ির পাশে পুকুরে যায়। কিছুক্ষণ পর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘তিনটি নিষ্পাপ শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অভিমুখী চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের পদযাত্রায় আবারও পুলিশের বাধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা, স্বতন্ত্র কোটা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজও তাঁদের পদযাত্রা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ বেলা ৩টার দিকে ‘চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে থালাবাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করেন প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শাহবাগ থানার সামনে মিছিলটি পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের ভাষ্য, শিক্ষিত, যোগ্য ও কর্মক্ষম যুব প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে এখনো কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধী কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যসচিব আলিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার শাহবাগে অবস্থান করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। সেদিন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এরপর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি জানানো হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করি, কিন্তু পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে।’

আলিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আজও শাহবাগ থানার সামনে আমাদের পদযাত্রা আটকে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পুলিশ মারধরও করেছে।’

‎‎এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ করা নিষেধ। তাই চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বেকার, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে।

‎‎ ২. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

‎ ৩. দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পছন্দমতো শ্রুতিলেখক (বিকল্প সহকারী) মনোনয়নের স্বাধীনতা পাবেন—এমনভাবে নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।

৪. সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পদসংখ্যায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।

‎৫. প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ হলে তা ৩৭ বছর করতে হবে।

‎‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত