Ajker Patrika

১২ অবৈধ পথে ইউরোপযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ৫২
Thumbnail image

বাংলাদেশ থেকে ১২টি অবৈধ পথে ইউরোপে যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এসব অবৈধ পথের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা থেকে আকাশপথে দোহা-মিসর হয়ে লিবিয়া এবং পরে সাগরপথে মূল গন্তব্য ইতালি। ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী এই পথ ব্যবহার করেন।

অনিয়মিত অভিবাসীদের ওপর করা এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপে পছন্দের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ইতালি, জার্মানি, গ্রিস, সাইপ্রাস, অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্স। ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবছর কয়েক হাজার বাংলাদেশি অবৈধ পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অভিবাসীবাহী নৌযান মাঝেমধ্যে ডুবে যায়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে ২ হাজার ২৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে ইতালিগামী নৌকা ডুবে ৬১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আজ ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস।

গবেষণাটি করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক ড. সেলিম রেজা। গবেষণার তথ্য গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘বিশ্বায়িত বিশ্বে অভিবাসন, গতিশীলতা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি। ড. সেলিম রেজা জানান, ১০০ জন অনিয়মিত অভিবাসীর ওপর করা এই গবেষণায় সময় লেগেছে এক বছর। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ৪৫ জন ইউরোপে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই, ৩০ জন গন্তব্যে পৌঁছে কাজ না পেয়ে আটক হয়ে এবং বাকি ২৫ জন চাকরি পাওয়ার পর আটক হয়ে দেশে ফিরেছেন। অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগেরই বৈধ কোনো কাগজপত্র থাকে না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডেপুটি হেড অব মিশন ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা রোজানা রশীদ প্রমুখ।

সেলিম রেজা জানান, এই ১০০ জনের মধ্যে ১০ জনের গন্তব্য ছিল ঢাকা থেকে দুবাই-সুদান অথবা ইথিওপিয়া-লিবিয়া হয়ে ইতালি। তাঁরা আকাশপথ, স্থল ও সাগরপথ ব্যবহার করেন। অন্য ১০ শতাংশ ঢাকা-দুবাই-সুদান অথবা ইথিওপিয়া-তিউনিসিয়া-ইতালি পথ ব্যবহার করেন। তাঁরাও আকাশপথ, স্থল ও সাগরপথ ব্যবহার করেন।

অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বেশি ব্যবহৃত অন্য পথগুলো হলো ঢাকা-তুরস্ক-গ্রিস-আলবেনিয়া-কসোভো-সার্বিয়া-হাঙ্গেরি-অস্ট্রিয়া; ঢাকা-তুরস্ক-গ্রিস-আলবেনিয়া-কসোভো-সার্বিয়া-ক্রোয়েশিয়া-হাঙ্গেরি-অস্ট্রিয়া-জার্মানি এবং ঢাকা-তুরস্ক-গ্রিস-আলবেনিয়া-কসোভো-সার্বিয়া-ক্রোয়েশিয়া-হাঙ্গেরি-অস্ট্রিয়া-ইতালি। গবেষণাটির ক্ষেত্র ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নরসিংদী ও শরীয়তপুর।

গবেষণায় বলা হয়, অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ২২ শতাংশের মতে, ইউরোপে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। ৩৩ শতাংশ বলেন, শিক্ষা অনুযায়ী প্রত্যাশিত চাকরি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় তাঁরা ঝুঁকি জেনেও অবৈধ পথে ইউরোপমুখী হয়েছেন। এ ছাড়া দেশে কর্মসংস্থানের কম সুযোগ, চাকরিতে স্বল্প বেতন, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অসন্তুষ্টি তাঁদের অনিয়মিত অভিবাসী হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ৫৮ শতাংশ অভিবাসীপ্রত্যাশী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে প্রভাবিত হয়েছেন। ৯২ শতাংশ অবিবাহিত হওয়ায় তাঁদের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া ৬২ শতাংশ পরিবারের প্রবাসী সদস্যের চাপে এ পথ বেছে নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, অনিয়মিত অভিবাসীদের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশযাত্রা বন্ধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর বাইরে একাডেমিকভাবেও তাঁদের নিয়ে আরও কাজ করে বিষয়গুলো জানানো উচিত।

ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার বলেন, যাঁরা এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ভুল ধারণা ছড়ানো হচ্ছে। যাঁরা এভাবে যাচ্ছেন, তাঁরা প্রতারিত হয়ে ফিরে আসছেন। দক্ষতা ও ন্যূনতম শিক্ষা থাকা ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য নিয়ে যাওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত