Ajker Patrika

নানা ইস্যুতে শেষ দিকে আদালতে ছিল বাড়তি উত্তাপ

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ১৮
নানা ইস্যুতে শেষ দিকে আদালতে ছিল বাড়তি উত্তাপ

করোনার কারণে দেশের আদালত বছরের প্রথম দিকেই বন্ধ হয়। কিছুদিন ভার্চুয়ালি শুনানির ব্যবস্থা থাকলেও স্থগিত থাকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার কার্যক্রম। বছরের শেষ দিকে; অর্থাৎ, আগস্ট থেকে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। শুরু হয় গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি। ফলে বছরের শেষ দিকে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার নিষ্পত্তি নিম্ন আদালতে হয়। আবার চিত্রনায়িকা পরীমণিসহ বেশ কয়েকজন মডেল ইস্যুতে আদালত পাড়ায় বাড়তি উত্তাপও ছিল এ সময়।

এ বছরেই দেশের ইতিহাসে সাবেক কোনো প্রধান বিচারপতিকে শাস্তি দেওয়া হয় কোনো অপরাধের দায়ে। দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে (এস কে সিনহা) অর্থপাচার ও দুর্নীতির দায়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ফারমার্স ব্যাংক থেকে অন্যের নামে বেআইনিভাবে ঋণ নিয়ে তা নিজের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগে করা মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এস কে সিনহাসহ মোট নয়জনকে কারাদণ্ড দেন। এদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যাংক কর্মকর্তারাও আছেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ ছাত্রকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয় গত ৮ ডিসেম্বর। একই মামলায় আরও পাঁচ ছাত্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আলোচিত এই মামলার বিচার হবে কি হবে না, তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা ছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, অভিযুক্তরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সব সময়ই বলা হয়েছিল, অপরাধী যে-ই হোক, তার বিচার হবে। এই মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়। ট্রাইব্যুনাল রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্যই দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হলো।

সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামে ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে ডাকাত সাজিয়ে ছয় ছাত্রকে স্থানীয়রা খুন করে। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার ১০ বছরেরও বেশি সময় পর সম্পন্ন হয়। ২ ডিসেম্বর ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ১৯ জনকে দেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ২৫ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রায়ের পর আদালত পড়ায় খালাসপ্রাপ্তরা যেমন উল্লাস করেন, সাজাপ্রাপ্তরা ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে তেমনি দেখা যায় শোকের ছায়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল হত্যা মামলায় ১৩ জনের ফাঁসির আদেশ ও ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ও হয়েছে এ বছর। একজনকে হত্যায় ২১ জনকে শাস্তি দেওয়া এই রায় ঘোষণা হয় গত ২৬ ডিসেম্বর। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় শুনতে সেদিন আদালতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েক শ লোক হাজির ছিল।

ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা ইস্যুতে বছরের শেষভাগে আদালতপাড়ায় বাড়তি উত্তাপ ছড়ায় পরীমণি ইস্যু। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করে আলোচনায় আসেন পরীমণি। এই আলোচনার রেশ কমতে না কমতেই তিনি গ্রেপ্তার হন মাদক মামলায়। গ্রেপ্তারের পর তিনি জামিনও পান। তবে তার আগে তাঁকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। বারবার রিমান্ড মঞ্জুরের কারণে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে হাইকোর্টে গিয়ে ক্ষমাও চাইতে হয়। কখনো আসামি হিসেবে আবার কখনো বাদী হিসেবে বেশ কয়েকবার তিনি আদালতে হাজির হন। তাঁকে ঘিরে আদালতপাড়াসহ দেশব্যাপী নানা আলোচনা উত্তাপ ছড়ায়।

পরীমণির পাশাপাশি তাঁকে আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রাখা প্রযোজক-অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজের নামও আলোচনায় আসে। একই দিন তিনি গ্রেপ্তার হন। এখনো তিনি কারাগারে আছেন। তথ্যপ্রযুক্তি আইন, পর্নোগ্রাফি আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা হয়।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় আপন জুয়েলার্সেও মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে গত ১১ নভেম্বর। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোসাম্মাত কামরুন্নাহার সবাইকে খালাস দেন। আসামিরা খালাস পাওয়ার বিষয়টি যেমন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, তার চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল বিচারক রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দেন, তা নিয়ে। রায়ে ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের মামলা না নিতে পুলিশকে পরামর্শ দেওয়ায় বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেন সুপ্রিম কোর্ট। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল থেকেও সংশ্লিষ্ট বিচারককে প্রত্যাহার করা হয়।

পরীমণিকে গ্রেপ্তারের পরপর আরও দুই মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ ও ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকেও মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। তাঁদের জামিন ও রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও সরগরম থাকে আদালত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে থাকবেন সশস্ত্র আনসার সদস্য: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
খিলগাঁওয়ে আনসার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি : আজকের পত্রিকা
খিলগাঁওয়ে আনসার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি : আজকের পত্রিকা

আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সবচেয়ে বেশি নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আনসার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে আনসারদের অবদান সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে মোট ১৩ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এই ১৩ জনের মধ্যে তিনজন থাকবে অস্ত্রসহ আর বাকি ১০ জন থাকবে অস্ত্র ছাড়া। অস্ত্রবিহীন ১০ জনের মধ্যে ৬ জন থাকবে পুরুষ আর ৪ জন থাকবে নারী। তা ছাড়া এবারই প্রথম প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে অস্ত্রসহ একজন আনসার সদস্য থাকবে।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে মোট ৯ দিন আনসার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আনসার সদস্যরা।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি বাহিনী দেশের নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি পর্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিজেদের জীবন ও স্বার্থের পরোয়া না করে তারা নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমের সঙ্গে জাতির সেবায় নিয়োজিত থাকে। তাই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের কর্মজীবনের মানোন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের অংশ। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আনসার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নিজস্ব অর্থায়নে মোট ৩১টি যানবাহন কেনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৯টি ট্রুপস ক্যারিয়ার, ১৪টি কাভার্ড ভ্যান, ৪২ আসনবিশিষ্ট ৪টি বড় বাস, ২৪ আসনবিশিষ্ট ২টি মিনিবাস এবং ২টি অ্যাম্বুলেন্স।

দেশের সর্ববৃহৎ এ বাহিনীর সদস্যদের ছুটি, বিনোদন ভ্রমণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রায়ই নানা ধরনের যাতায়াতজনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাঁদের এই ভোগান্তি লাঘব ও সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই আজকের এই ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

উপদেষ্টা এ সময় ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসটি সর্বোচ্চ পেশাদারি ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হবে এবং বাহিনীর বৈধ পরিচয়পত্রধারী সব সদস্যের জন্য নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাইরে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, প্রতিদিনই অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। গত পরশুদিনও আটটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তিনি বলেন, এ রকম উদ্ধার হতেই থাকবে এবং নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে অস্ত্র উদ্ধার আরও বাড়তে থাকবে এবং একসময় দেখবেন যে বাইরে আর কোনো অস্ত্র বা হাতিয়ার নেই।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ককটেল বিস্ফোরণের পর আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ভবন ঘিরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ মঙ্গলবার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সহিদ আব্দুস ছালাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশের এক চিঠি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর (শনিবার) রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে কিছু দুষ্কৃতকারী নির্বাচন ভবনের সামনের ভাস্কর্যের সামনে ‘ককটেল’ বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় ভবনটির নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন ভবনের চারপাশে অফিস সময়ের পর ও ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান থাকায় নিরাপত্তা হুমকি আরও বাড়ছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নির্বাচন-চিঠি

এ অবস্থায় ভবনের আশপাশের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ রাখা এবং নির্বাচন ভবনের সামনে ও আশপাশে পুলিশের টহল বাড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের গম আমদানিতে ‘অতিরিক্ত দাম’ ও অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন: মন্ত্রণালয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম, অতিরিক্ত মূল্য বা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই প্রক্রিয়া নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে আজ মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় প্রতিবাদ জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের অধীনে জিটুজি পদ্ধতিতে এই আমদানি কার্যক্রম চলছে। প্রথম পর্যায়ে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম প্রতি টন ৩০২ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলারে এবং দ্বিতীয় ধাপে একই পরিমাণ গম প্রতি টন ৩০৮ ডলারে ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের গমের মূল্যের সঙ্গে রাশিয়ার গমের মূল্যের তুলনা করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ। খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যায় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের গমের দামে চট্টগ্রাম ও মোংলা খাদ্য অধিদপ্তরের সাইলো পর্যন্ত পরিবহন ব্যয়, বিমা, আনলোডিং ও বন্দরভিত্তিকসহ সব খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। অন্যদিকে রাশিয়ার গমের মূল্যে শুধু দেশটির বন্দর পর্যন্ত (এফওবি) খরচ হিসাব করা হয়।

মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ার গমের মূল্য প্রতি টন প্রায় ২৩০ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম প্রায় ২৩২ ডলার। অর্থাৎ পার্থক্য মাত্র ২ ডলার।

এ ছাড়া বর্তমানে প্রতি টন রাশিয়ার গমের দাম ২ লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম ৩ লাখ ৮ হাজার ৩১০ ডলার (সম্ভাব্য চূড়ান্ত মূল্য) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে, মানের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গম বেশি উন্নত। রাশিয়ার গমে গড়ে ১১ শতাংশ প্রোটিন (আমিষ) থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে প্রোটিনের পরিমাণ ১৩.৫ শতাংশ, যা পুষ্টিগুণ ও মানের দিক থেকে উন্নত। এই উন্নত মান, উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যয় বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম সামান্য বেশি হওয়া যুক্তিসংগত এবং বাজারসম্মত।

মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে গম আমদানির পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা বজায় রেখে, প্রতিযোগিতামূলক উপায়ে এবং সরকার অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই জাতীয় সনদ: ৩ ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৬
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক। ফাইল ছবি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক। ফাইল ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন।

ঐকমত্য কমিশন আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশ জমা দেবে। আগামী সংসদ সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে কী হবে, তা নিয়ে কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও সুপারিশ করবে। সেখানে থাকবে বিশেষ আদেশ জারির পর সংবিধানসংক্রান্ত সব প্রস্তাব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিল তৈরি, পরে বিলের প্রশ্নে গণভোট এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের মেয়াদে বাস্তবায়িত না হলে বিলে থাকা বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।

গতকাল সোমবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. ‍মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের প্রস্তুত করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তুত করা সুপারিশের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিশনের প্রধানকে সুপারিশগুলো আমরা অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।’

কমিশন সূত্র জানায়, চূড়ান্ত সুপারিশ অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। এর অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিক এবং কিছু কিছু বিষয় পরে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। তবে সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। শুধু কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব/সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি প্রস্তাব সংবিধানসম্পর্কিত। মূলত এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। এই প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত আছে। এগুলোর মধ্যে ৭টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বিএনপির।

কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ থাকবে না। সনদের ওপরই গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়িত হবে। ‘গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদে পাস হলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠন করার সুপারিশ করা হতে পারে’; যা আদেশে আলাদা করে উল্লেখ থাকতে পারে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সমাধানে বাধ্যবাধকতা রাখতে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব কমিশন দেবে বলে সূত্র জানায়। বিকল্প সুপারিশে বলা হতে পারে, সংবিধানসংক্রান্ত সব সুপারিশ বিল আকারে আগামী চার মাসের মধ্যে সরকারকে তৈরি করতে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে বিলটি দেওয়া হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদ আলোচনার মাধ্যমে বিলের শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করতে পারবে, তবে স্পিরিট বা মূলভাব পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে বিষয়গুলোর সমাধান না হলে ২৭১তম দিনে বিলগুলো সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে প্রশ্ন হতে পারে—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং গণভোট বিলের প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।

গণভোটের সময় এবং আদেশ জারির সিদ্ধান্ত দেবে সরকার

গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা নেওয়ার প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতবিরোধ আছে। কমিশন সূত্র জানায়, গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।

জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। বিএনপি আদেশ জারির পক্ষে নয়। এই অবস্থায় আদেশটি রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারও সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত