Ajker Patrika

উপসচিব পুলে কোনো কোটা নয়, শতভাগ চায় প্রশাসন ক্যাডার

  • উপসচিব পুলে কোনো কোটাই মানবে না প্রশাসন ক্যাডার।
  • ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংস্কার কমিশনের প্রধানের অপসারণ দাবি।
  • প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের বৈঠক আজ।
  • আজ ১ ঘণ্টা মানববন্ধন করবেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৪
Thumbnail image
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির যৌথ প্রতিবাদ সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারদের দ্বন্দ্ব আরেক ধাপ বাড়ল। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, উপসচিব পুলে কোনো কোটা তাঁরা মানবেন না। এই কোটা তুলে দিয়ে সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত শতভাগ পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে।

একই সঙ্গে এত দিন ২৫ শতাংশ কোটা নিয়ে উপসচিব পুলে অন্য ক্যাডারের যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে প্রশাসন ক্যাডার। আর দাবি জানানো হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান মুয়ীদ চৌধুরীকে অপসারণের।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি যৌথ প্রতিবাদ সভায় এসব দাবি তুলেছেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে গতকাল বুধবার ওই সভা হয়। চার ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সভায় প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান ২৪ জন কর্মকর্তা বক্তব্য দেন। ডিসি ও ইউএনওরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই সভায় যুক্ত ছিলেন।

বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। প্রশাসন ছাড়া অন্য ক্যাডার থেকে উপসচিব পুলে ঢুকতে হলে সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করতে হয়।

তবে ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তাঁরা। আর উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

সংস্কার কমিশনের ওই মনোভাব প্রকাশের পর প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারদের দ্বন্দ্ব আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার সব অফিসে এক ঘণ্টা কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, উপসচিব পুলে কোটা তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে। দাবি আদায়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিজ নিজ কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধন করবেন তাঁরা। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও গত রোববার সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এখন তাঁরাও মাঠের কর্মসূচি ঘোষণার কথা ভাবছেন।

এই অবস্থায় গতকালের সভায় যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের প্রায় সবার কণ্ঠে ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নিয়ে ক্ষোভ। প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর আমরা কোনো কোটা মানি না, কোনো কোটা মানব না। কারণ, এই কোটার জন্য ছাত্ররা জীবন দিয়েছে। আমাদের এখন দাবি আদায় করার সময় হয়েছে। অতীতে কোনো রিপোর্ট বাস্তবায়িত হয়নি, এই সব ভুয়া রিপোর্ট বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই।’

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রায় সব সদস্য বিতর্কিত দাবি করে মশিউর রহমান বলেন, ‘এখানে কাস্টমস ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে এখনো দুর্নীতির মামলা চলছে। এমন দুর্নীতিবাজ লোককে কীভাবে এই কমিশনের সদস্য করা হলো? এই কমিশনের আরও একজন সদস্য রয়েছেন, যিনি মুয়ীদ চৌধুরীর খুবই কাছের লোক, তাঁকে দিয়ে এই বয়সেও অনেক অনৈতিক কাজ করানো হয়। কাজেই আমরা এক কমিশনের পদত্যাগ চাচ্ছি। এই কমিশনের রিপোর্ট আর দরকার নেই।’

সংস্কার কমিশনকে আরও সরাসরি আক্রমণ করেন বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের আন্দোলন শুরু। ষড়যন্ত্র ঠেকানোর জন্য দুটি বিষদাঁত তুলে ফেলতে হবে। একটা বিষদাঁত হলো মুয়ীদ ভাই। উনি ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে একজন কলঙ্কিত ব্যক্তি। চাকরিজীবী হিসেবে, সুবিধাভোগী হিসেবে উনি বিতর্কিত একজন কর্মকর্তা। আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর অপসারণ চাই। সরকার যদি অপসারণ না করে, কীভাবে অপসারণ করতে হয়, সেই টুলস আমাদের জানা আছে।’

প্রয়োজন হলে কালো ব্যাজ ধারণ, কলমবিরতি, অনশন এবং ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশও করা হতে পারে বলে জানান আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ক্যাডারের অস্তিত্ব দেখতে চাই না। আমরা চাই সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত প্রশাসনের সব পদকে সংযুক্ত করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস করতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলবে।’

উপসচিবের পদ কীভাবে প্রশাসনের ক্যাডারের হয়েছে, বিধিবিধানের আলোকে তা ব্যাখ্যা করেন ঢাকার ডিসি তানভির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্য যখনই যাঁরা তৎপর হয়েছেন, তাঁদের প্রথম কাজই হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারকে দুর্বল করা। গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্রের অংশ আমরা না, ষড়যন্ত্রের অংশ অন্যরা।’

তানভির আরও বলেন, ‘গোয়েন্দা বাহিনীর সর্বনিম্ন পর্যায়ের লোকের রিপোর্টের ওপর আমার পদোন্নতি নির্ভর করে। সংস্কার এই জায়গায় করতে হবে। আমরা সহকারী সচিব পদ থেকে সচিব পর্যন্ত শতভাগ পদ নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস চাই।’

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের উদ্দেশে ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘আপনি তো পরীক্ষা দিয়ে পদোন্নতি নেননি। আপনি কেন আমার সন্তানদের ওপর পরীক্ষা চাপিয়ে দিচ্ছেন? যেহেতু আপনি এই কাজ করেছেন, এখানে (সংস্কার কমিশনে) থাকার অধিকার আপনি হারিয়ে ফেলেছেন। আপনি অবিলম্বে সংস্কার কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এই কমিটির আমরা পুনর্গঠন চাই। আরেকটা আন্দোলন করতে হবে, ২৫ শতাংশ আমার আঙিনায় ঢুকে গেছে, ওই আঙিনাটা পরিষ্কার করতে হবে। শতভাগ আমাদের থাকবে।’

সবার বক্তব্য শুনে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমরা এক আছি এক থাকব। প্রশাসন ক্যাডারের ওপর সার্জারি করতে দেব না। কমিশন অযাচিত সুপারিশ করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমি সাবধান করতে চাই, প্রশাসনের কোনো পর্যায়ে অন্ধভাবে বহিরাগত কাউকে এনে বসানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত