Ajker Patrika

আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে বেওয়ারিশ কুকুর, কমেছে জলাতঙ্কের টিকাদান

সুলতান মাহমুদ
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২: ২৪
Thumbnail image

চলতি বছরের ৯ আগস্ট ময়মনসিংহে একটি বেওয়ারিশ কুকুর এক দিনে ৪০ জনকে কামড়ে আহত করে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে। শহরের এস কে (সূর্য কান্ত) হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার প্রজ্ঞানন্দ নাথ জানান, সম্প্রতি কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। কুকুরের কামড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্ত স্থান কাপড় ধোয়ার সাবান দিয়ে ধুয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। 

শুধু ময়মনসিংহে নয়, ইদানীং সারা দেশেই কুকুরের আচরণ অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোতে কুকুর বন্ধ্যাকরণ বা স্থানান্তরের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে পশু অধিকারকর্মীদের বিরোধিতার মুখে সে উদ্যোগ স্থগিত রয়েছে।

জলাতঙ্ক রোগে এখনো বিশ্বে প্রতিবছর ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে জলাতঙ্কে প্রতিবছর ২ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতো। টিকা কার্যক্রম শুরুর ফলে ধারাবাহিকভাবে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত জলাতঙ্কে মারা গেছে ২৭ জন। 

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যই বলছে, কুকুরের আক্রমণের শিকার মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত আড়াই বছরে দেশে ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৩২২ জন মানুষ কুকুরের কামড়ে জখম হয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারা দেশে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে জলাতঙ্কের টিকা নিয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪ জন, ২০২১ সালে টিকা নেয় ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৩ জন, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৮৯৮ এবং চলতি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ মাসে টিকা নিয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮০১ জন। 

 উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পর থেকে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমলেও ২০২০ সালের পর থেকে দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক। সেই সঙ্গে দুই বছর ধরে কুকুরকে টিকা দেওয়ার সংখ্যাও কমছে। 

রাজধানী ঢাকা থেকে বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রম শুরু করলে তা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রাণিকল্যাণ সংগঠন ‘অভয়ারণ্য’র সভাপতি রুবাইয়া আহমেদ, পিপলস ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল ও অভিনেত্রী জয়া আহসানের পক্ষে ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব এই রিট করেন। 

পরে ওই বছরের ১২ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের চলমান আলোচনা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কুকুর অপসারণ বন্ধ রাখতে বলেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়। একই সঙ্গে রিট আবেদনের শুনানি এক মাসের জন্য মুলতবি রাখেন আদালত। 

রিটের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কুকুর নিধন বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে মৌখিকভাবে একটি আশ্বাস দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়। এরপর রিটটি কার্যতালিকার বাইরে রাখা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি (মেয়র) আর কোনো জবাব দেননি। রিটটি বর্তমানে ওই অবস্থায়ই আছে। হাইকোর্টের মৌখিক নির্দেশের পর এখন পর্যন্ত কুকুর স্থানান্তর বন্ধ আছে।’ 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৭ লাখ কুকুর রয়েছে। ২০১১ সালে স্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কার্যক্রম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কুকুরকে প্রতিবছর জলাতঙ্ক টিকা দিতে হয়। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের পর থেকে টিকাপ্রাপ্ত কুকুরের সংখ্যা কমছে। ফলে জলাতঙ্কে মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে। 

ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে বাইরে লোকালয়ে কুকুর স্থানান্তরের কথা বলা হলেও কুকুরে কামড়ানোর ঘটনা এখন গ্রামেই বেশি ঘটছে। গণমাধ্যমে প্রায়ই এক কুকুরে একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ানোর খবর আসছে। দেশে বেওয়ারিশ কুকুর কেন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা নেই। এ নিয়ে কোনো গবেষণাও হয়নি। 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমারী খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কুকুর মূলত জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে মানুষকে কামড় দেয়। এ ছাড়া গর্ভধারণ করলেও কামড়ায়।’ 

২৮ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব দিবস। এটি একটি মরণব্যাধি। কুকুরের কামড় বা আঁচড় ছাড়াও বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর, বাদুড়ের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে। এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যু অনিবার্য। তবে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা তথা টিকা গ্রহণ করলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজি ও শিয়ালের কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষারযুক্ত সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধুতে হবে। এরপর যথাসময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

 (প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ইলিয়াস আহমেদ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত