Ajker Patrika

জাহাজেই নামাজ পড়লেন জিম্মি নাবিকেরা, কথা হয়েছে পরিবারের সঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ৫৯
Thumbnail image

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকেরা জাহাজেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। আজ বুধবার সোমালিয়ার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে নাবিকেরা নামাজ আদায় করেন। এ সময় জলদস্যুদের সশস্ত্র পাহারায় ছিল। নামাজ আদায়ের পর মুহূর্তেই তাঁদের আবার আলাদা করে ফেলা হয়। 

ঈদের নামাজ আদায়ের পর নাবিকেরা একসঙ্গে একটি ছবিও তোলেন। ছবিতে ২২ নাবিককে দেখা যায়। ২৩ নম্বর নাবিক মোবাইল ফোন হাতে ছবি তোলার কারণে ছবিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নাবিকদের কথোপকথন ও ছবি বিনিময়ের তথ্য জানা গেছে নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে।

জাহাজ মালিকপক্ষের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলামও নাবিকদের নামাজ আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, নাবিকেরা ভালো ও নিরাপদে আছেন। তাঁদের উদ্ধার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। শুধু ফিরে আসাটা বাকি।

এদিকে মুসলিমপ্রধান দেশ সোমালিয়ায় আজ বুধবার (১০ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার নটিক্যাল মাইলেরও বেশি দূরে সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হাতে আটকে থাকা বাংলাদেশি নাবিকেরা এদিন জাহাজের ব্রিজে উঠে নামাজ আদায় করেন। এরপর নাবিকদের কয়েকজন জলদস্যুদের নজর এড়িয়ে ফোনকলে দেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

জিম্মি এক নাবিকের স্ত্রী নাম প্রকাশ না করে জানান, আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি স্বামীর ফোনকল পান। স্বামী জানান, ঈদের নামাজ পড়ার বিষয়ে প্রথমে জলদস্যুরা তাঁদের ১০ জন করে ঈদের নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু ঈদের কথা বিবেচনা করে তাঁদের একসঙ্গে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করলে জলদস্যুরা প্রায় এক ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর অনুমতি দেয়। তবে নামাজের পুরো সময় সশস্ত্র প্রহরায় ছিল। 

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নামাজ আদায়ের ছড়িয়ে পড়া ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চিফ অফিসার সাহেব ওনার ব্যক্তিগত ক্যামেরায় একটা ছবি তুলে হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়েছেন। জাস্ট একটা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। আমরা যাতে নিশ্চিত হই যে ওনারা ঈদের নামাজটা অন্তত পড়েছেন, সে জন্য পাঠিয়েছেন। সেটাও জলদস্যুদের অনেক অনুরোধ করে তুলেছেন।’ 

জিম্মি আরেক নাবিকের মা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে আমার ছেলে ফোন করেছিল। সবাই একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছে বলে জানিয়েছে। এরপর সামান্য একটু মিষ্টিজাতীয় কিছু সবাই মুখে দিয়েছে। তবে আমার ছেলে জানিয়েছে, সে খায়নি। আমাদের শরীরটা এখানে আছে, মনটা পড়ে আছে জাহাজে থাকা ছেলের কাছে। যত দ্রুত সম্ভব অক্ষত অবস্থায় যেন জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পান এবং পরিবারের কাছে ফিরতে পারেন, নাবিকেরা সেই প্রার্থনা করেছেন বলে জানান ওই মা।’ 

এমভি আবদুল্লাহ নামে জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন কয়লা। 

কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিকেরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তাঁরা ভালো আছেন। নাবিকদের মুক্ত করার বিষয়ে আমাদের আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের পরই আমরা নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে পারব।’ 

এদিকে ঈদের নামাজ আদায় করার পর তোলা ছবিতে দেখা যায়, নাবিকেরা জাহাজের হ্যাচের ওপর ত্রিপল বিছিয়ে নামাজ আদায় করছেন। নাবিকদের বেশির ভাগই পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরা। উপকূলের দিক থেকে সাগরমুখী হয়ে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবিতে নাবিকদের পেছনে নীল সাগর দেখা যায়। হ্যাচের ওপর জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজে ব্যবহৃত ক্রেনের বডি, হুক ও গ্র্যাব দেখা গেছে। 

নাবিকদের পরিবারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সপ্তাহে দুই দিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয় জাহাজে। পানির সংকট থাকায় এ অবস্থা। নাবিকেরা দুই দিন পর আজ বুধবার ঈদ উপলক্ষে গোসল করার সুযোগ পেয়েছেন। নামাজ শেষে সামান্য খাওয়াদাওয়া করেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত