জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো ধরনের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চোয়াল শক্ত করে তারা এগিয়ে চলল। নিকষ কালো অন্ধকার দূর হয়ে গেল অস্ত্রের ঝলকানিতে। আকাশে ছুড়ে দেওয়া বিচ্ছুরিত আলোয় পথরেখা তৈরি করে একটানা গুলিবর্ষণ চলল। সে রাত ছিল দানবীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসতার উৎসব। সে রাত ছিল যুক্তিহীন নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বাস্তব দলিল।
এটাই অপারেশন সার্চলাইট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার এই নির্মম পরিকল্পনার মাধ্যমেই পাকিস্তান সরকারের নৃশংসতার শুরু। এই দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দুই ডানার পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনা ঘটে চলে তার নিজস্ব পথে। জেনোসাইডের মাধ্যমে পোড়া মাটি নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে দুরভিসন্ধি ছিল ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো গংদের, সেটা পরবর্তীকালে আর পূর্ণতা পায়নি। সে ইতিহাস ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমরা স্থিত হব ২৫ মার্চের দিনটিতে।
২২ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বরফ গলছে। একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২৪ মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেবেন, এ রকম ঘোষণা হয়েছিল।
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভেবেছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। এদিন ভুট্টো বলেছিলেন, আমাদের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি ঘটনাও ঘটল। সংকট নিরসনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের যে নেতারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই ঢাকা ত্যাগ করতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল ওয়ালী খান, খান আবদুল কাইয়ুম খান, সর্দার শওকত হায়াত খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, মওলানা মুফতি মাহমুদ প্রমুখ।
২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। বঙ্গবন্ধু ওই দিন ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেন। সেদিনও ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক হয়। অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত ততক্ষণে হয়ে গেছে, কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়া তাঁদের ছদ্ম রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবের চার দফার ব্যাপারে তাঁর দলের নীতিগত আপত্তি নেই।
ইয়াহিয়া খান কাউকে না জানিয়ে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায়। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল নাটক সাজিয়ে। ইয়াহিয়ার খালি গাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে যখন ফিরেছিল, তখনো তাতে পতাকা উড়ছিল, শুধু প্রেসিডেন্টের জায়গায় অন্য এক সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে ফিরেছিল গাড়িটি। সেনা হামলা হতে পারে—শেখ মুজিবের কাছে এই তথ্য নানা মাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু কবে, কখন এই আক্রমণ শুরু হবে, সেটা জানা ছিল না তাঁর।
ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিক করে রেখেছিল, জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলাকে নির্মূল করার জন্য ২৫ মার্চকে বেছে নেওয়া হবে। পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর যখন আসবে রাত ১টা, তখন হবে আক্রমণ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। এবং হত্যাকাণ্ড যখন ঘটতে থাকবে, তখন শেখ মুজিবকে দায়ী করে দেবেন বেতার ভাষণ।
এবার আসা যাক, সেই অপারেশন সার্চলাইটের কাছে। আক্রমণটা ছিল অতর্কিত, কিন্তু তার পেছনে ভাবনাটা ছিল বহুদিনের এবং সুদূরপ্রসারী। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য দল আনা হতে থাকবে আর তলে তলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ২৫ মার্চ সংশোধিত সময় রাত সাড়ে ১১টায় যখন সেনানিবাস থেকে বের হয়ে এল সশস্ত্র সামরিক যানগুলো, তখন তারা ওপরের মহলের অনুমতি ছাড়াই হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করল। আসলে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রত্যেকেই জানতেন, বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হিংস্রতা নিয়েই শুরু হয়েছে অভিযান। জানতেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোও।
এ অভিযান মোটেই শুধু ভয় দেখানোর জন্য পরিচালিত হয়নি। এ অভিযান সুনির্দিষ্টভাবে ছিল জেনোসাইড। হ্যাঁ, এটা নিছক গণহত্যা ছিল না। একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল সে অভিযান।
অপারেশন সার্চলাইটের দিকে দৃষ্টি রাখলেই দেখা যাবে, অতর্কিতে আক্রমণ করা হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, হিন্দু জনগোষ্ঠী, এমনকি বস্তিবাসী দরিদ্রজন। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি অন্তত তিনটি পত্রিকা অফিস, যাদের তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের পত্রিকা বলে মনে করত। এগুলো হলো দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও ইংরেজি দৈনিক পিপল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তার নির্দেশনামা পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, ফলে এখন সে ব্যাপারে কিছুটা আঁচ করা যায়। আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় পাকিস্তানেরই দুই নাগরিকের কাছ থেকে। সিদ্দিক সালিকের ‘এ উইটনেস টু সারেন্ডার’ এবং জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজার ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ নামের দুটি বইয়ে। আমরা সব সূত্র থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি।
সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে শহরগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট। তবে মূলত ঢাকা শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন মূল লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করে ফেলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইন কিংবা পিলখানাকে রাখা হলেও কেন অন্য সব লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা সাধারণভাবে বোধগম্য হয় না। কিন্তু জেনোসাইড ঘটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে বিষয়টিকে বিচার করলেই নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, পলাশীসহ নিরীহ মানুষের আবাসস্থল আক্রমণের কারণ বোঝা যায়।
হামলার বেশ কিছুদিন আগেই অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যেকোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হবে—এ রকমটাই ছিল নির্দেশ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নয়, যাঁরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক, তাঁদেরও শত্রু বলে ধরে নিতে হবে। লক্ষণীয়, একাত্তরের মার্চ মাসে যে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছিল, তা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমান নিয়মতান্ত্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এবং আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছিলেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহের অভিযোগও আনেনি।
কেন ২৫ মার্চ রাতে চালানো অপারেশন সার্চলাইটকে আমরা জেনোসাইড বলছি, তা বুঝতে হলে মাথায় রাখতে হবে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তার অনুসারী সবাইকে শত্রুপক্ষ ঘোষণা করে হত্যা করার মধ্যে রয়েছে জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা করার অনুমোদন।
এই পরিকল্পনার একটা দিক ছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্টের চলাচলের ওপর পর্যবেক্ষণ। বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যেন আলাপ চালিয়ে যাওয়ার ভণিতা করতে থাকেন। ভুট্টো রাজি না থাকলেও প্রেসিডেন্ট যেন ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন, এ রকম চালাকি করে রাখা হয়েছিল।
কীভাবে এই অপারেশন চালানো হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে এভাবে, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে, ছাত্র ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পুরান ঢাকার হিন্দুবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করা হয়েছিল দুটো কমান্ডে বিভক্ত হয়ে। ঢাকা শহরের অপারেশনের মূল দায়িত্ব ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ওপর। তাঁর অধীনে ছিল ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড। খাদিম হুসেইন রাজার ওপর দায়িত্ব ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া।
২৫ মার্চ সকাল ৮টায় অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে ঢাকার বাইরের সব গ্যারিসনকে টেলিফোনে গোপন সংকেতের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ও ২৫ মার্চ অপারেশনের কপি গোপনীয়তার মধ্যে বিভিন্ন সেনানিবাস ও গ্যারিসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২৪ মার্চ হেলিকপ্টারে করে রাও ফরমান আলী গেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ব্রিগেডিয়ার দুরদানির কাছে, খাদিম হাসান রাজা গেছেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি ও কর্নেল ফাতেমির কাছে।
পিলখানায় ছিল আড়াই হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য, পুলিশলাইনে ছিল এক হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য। তাঁদের নিরস্ত্র করার দায়িত্বে ছিল ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ, ৩২ পাঞ্জাবের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলকে তারা দোজখে পরিণত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ৩৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিসি দেব, আতাউর রহমান খান খাদিম, এ এন এম মুনিরুজ্জামান, ফজলুর রহমান খান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আবদুল মুক্তাদির, শরাফত আলী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ ১১ জন শিক্ষক এই আক্রমণে নিহত হন। ২৬ মার্চ বিকেল থেকে পুরান ঢাকায় শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার, গোয়ালনগর, ইংলিশ রোড এলাকায় চলে জেনোসাইড।
৫৭ ব্রিগেডের জাহানজেব আরবাবের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের আক্রমণগুলো পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ডো অফিসারদের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। কমান্ডো অফিসার জেড এ খান ছিলেন নেতৃত্বে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তারা প্রতিরোধ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার বাইরে আক্রমণে নেতৃত্ব দেন খাদেম হুসেইন রাজা। রংপুরে আসে সৈয়দপুর থেকে ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের পথে ভোর তিনটায় বের হয়ে যায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে ৫৩ ব্রিগেড। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ সহজ ছিল না। তারা দিনাজপুরের ইপিআরের সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে সমুচিত জবাব পায়। তিন দিন ধরে এ এলাকায় সংঘর্ষ চলে। চট্টগ্রামেও আক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কুমিরায় যে প্রতিরোধযুদ্ধ হয়, তা ছিল প্রতিরোধযুদ্ধের এক মাইলফলক।
জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চ, তা পৃথিবীর বুকে ঘটা বর্বরোচিত জেনোসাইডের বড় একটি উদাহরণ। ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার সূচনা হয়েছিল এই দিনটিতে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই হত্যার সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কে জানে?

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো ধরনের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চোয়াল শক্ত করে তারা এগিয়ে চলল। নিকষ কালো অন্ধকার দূর হয়ে গেল অস্ত্রের ঝলকানিতে। আকাশে ছুড়ে দেওয়া বিচ্ছুরিত আলোয় পথরেখা তৈরি করে একটানা গুলিবর্ষণ চলল। সে রাত ছিল দানবীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসতার উৎসব। সে রাত ছিল যুক্তিহীন নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বাস্তব দলিল।
এটাই অপারেশন সার্চলাইট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার এই নির্মম পরিকল্পনার মাধ্যমেই পাকিস্তান সরকারের নৃশংসতার শুরু। এই দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দুই ডানার পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনা ঘটে চলে তার নিজস্ব পথে। জেনোসাইডের মাধ্যমে পোড়া মাটি নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে দুরভিসন্ধি ছিল ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো গংদের, সেটা পরবর্তীকালে আর পূর্ণতা পায়নি। সে ইতিহাস ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমরা স্থিত হব ২৫ মার্চের দিনটিতে।
২২ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বরফ গলছে। একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২৪ মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেবেন, এ রকম ঘোষণা হয়েছিল।
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভেবেছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। এদিন ভুট্টো বলেছিলেন, আমাদের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি ঘটনাও ঘটল। সংকট নিরসনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের যে নেতারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই ঢাকা ত্যাগ করতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল ওয়ালী খান, খান আবদুল কাইয়ুম খান, সর্দার শওকত হায়াত খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, মওলানা মুফতি মাহমুদ প্রমুখ।
২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। বঙ্গবন্ধু ওই দিন ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেন। সেদিনও ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক হয়। অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত ততক্ষণে হয়ে গেছে, কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়া তাঁদের ছদ্ম রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবের চার দফার ব্যাপারে তাঁর দলের নীতিগত আপত্তি নেই।
ইয়াহিয়া খান কাউকে না জানিয়ে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায়। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল নাটক সাজিয়ে। ইয়াহিয়ার খালি গাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে যখন ফিরেছিল, তখনো তাতে পতাকা উড়ছিল, শুধু প্রেসিডেন্টের জায়গায় অন্য এক সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে ফিরেছিল গাড়িটি। সেনা হামলা হতে পারে—শেখ মুজিবের কাছে এই তথ্য নানা মাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু কবে, কখন এই আক্রমণ শুরু হবে, সেটা জানা ছিল না তাঁর।
ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিক করে রেখেছিল, জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলাকে নির্মূল করার জন্য ২৫ মার্চকে বেছে নেওয়া হবে। পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর যখন আসবে রাত ১টা, তখন হবে আক্রমণ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। এবং হত্যাকাণ্ড যখন ঘটতে থাকবে, তখন শেখ মুজিবকে দায়ী করে দেবেন বেতার ভাষণ।
এবার আসা যাক, সেই অপারেশন সার্চলাইটের কাছে। আক্রমণটা ছিল অতর্কিত, কিন্তু তার পেছনে ভাবনাটা ছিল বহুদিনের এবং সুদূরপ্রসারী। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য দল আনা হতে থাকবে আর তলে তলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ২৫ মার্চ সংশোধিত সময় রাত সাড়ে ১১টায় যখন সেনানিবাস থেকে বের হয়ে এল সশস্ত্র সামরিক যানগুলো, তখন তারা ওপরের মহলের অনুমতি ছাড়াই হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করল। আসলে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রত্যেকেই জানতেন, বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হিংস্রতা নিয়েই শুরু হয়েছে অভিযান। জানতেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোও।
এ অভিযান মোটেই শুধু ভয় দেখানোর জন্য পরিচালিত হয়নি। এ অভিযান সুনির্দিষ্টভাবে ছিল জেনোসাইড। হ্যাঁ, এটা নিছক গণহত্যা ছিল না। একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল সে অভিযান।
অপারেশন সার্চলাইটের দিকে দৃষ্টি রাখলেই দেখা যাবে, অতর্কিতে আক্রমণ করা হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, হিন্দু জনগোষ্ঠী, এমনকি বস্তিবাসী দরিদ্রজন। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি অন্তত তিনটি পত্রিকা অফিস, যাদের তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের পত্রিকা বলে মনে করত। এগুলো হলো দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও ইংরেজি দৈনিক পিপল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তার নির্দেশনামা পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, ফলে এখন সে ব্যাপারে কিছুটা আঁচ করা যায়। আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় পাকিস্তানেরই দুই নাগরিকের কাছ থেকে। সিদ্দিক সালিকের ‘এ উইটনেস টু সারেন্ডার’ এবং জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজার ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ নামের দুটি বইয়ে। আমরা সব সূত্র থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি।
সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে শহরগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট। তবে মূলত ঢাকা শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন মূল লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করে ফেলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইন কিংবা পিলখানাকে রাখা হলেও কেন অন্য সব লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা সাধারণভাবে বোধগম্য হয় না। কিন্তু জেনোসাইড ঘটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে বিষয়টিকে বিচার করলেই নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, পলাশীসহ নিরীহ মানুষের আবাসস্থল আক্রমণের কারণ বোঝা যায়।
হামলার বেশ কিছুদিন আগেই অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যেকোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হবে—এ রকমটাই ছিল নির্দেশ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নয়, যাঁরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক, তাঁদেরও শত্রু বলে ধরে নিতে হবে। লক্ষণীয়, একাত্তরের মার্চ মাসে যে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছিল, তা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমান নিয়মতান্ত্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এবং আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছিলেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহের অভিযোগও আনেনি।
কেন ২৫ মার্চ রাতে চালানো অপারেশন সার্চলাইটকে আমরা জেনোসাইড বলছি, তা বুঝতে হলে মাথায় রাখতে হবে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তার অনুসারী সবাইকে শত্রুপক্ষ ঘোষণা করে হত্যা করার মধ্যে রয়েছে জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা করার অনুমোদন।
এই পরিকল্পনার একটা দিক ছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্টের চলাচলের ওপর পর্যবেক্ষণ। বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যেন আলাপ চালিয়ে যাওয়ার ভণিতা করতে থাকেন। ভুট্টো রাজি না থাকলেও প্রেসিডেন্ট যেন ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন, এ রকম চালাকি করে রাখা হয়েছিল।
কীভাবে এই অপারেশন চালানো হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে এভাবে, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে, ছাত্র ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পুরান ঢাকার হিন্দুবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করা হয়েছিল দুটো কমান্ডে বিভক্ত হয়ে। ঢাকা শহরের অপারেশনের মূল দায়িত্ব ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ওপর। তাঁর অধীনে ছিল ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড। খাদিম হুসেইন রাজার ওপর দায়িত্ব ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া।
২৫ মার্চ সকাল ৮টায় অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে ঢাকার বাইরের সব গ্যারিসনকে টেলিফোনে গোপন সংকেতের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ও ২৫ মার্চ অপারেশনের কপি গোপনীয়তার মধ্যে বিভিন্ন সেনানিবাস ও গ্যারিসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২৪ মার্চ হেলিকপ্টারে করে রাও ফরমান আলী গেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ব্রিগেডিয়ার দুরদানির কাছে, খাদিম হাসান রাজা গেছেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি ও কর্নেল ফাতেমির কাছে।
পিলখানায় ছিল আড়াই হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য, পুলিশলাইনে ছিল এক হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য। তাঁদের নিরস্ত্র করার দায়িত্বে ছিল ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ, ৩২ পাঞ্জাবের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলকে তারা দোজখে পরিণত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ৩৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিসি দেব, আতাউর রহমান খান খাদিম, এ এন এম মুনিরুজ্জামান, ফজলুর রহমান খান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আবদুল মুক্তাদির, শরাফত আলী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ ১১ জন শিক্ষক এই আক্রমণে নিহত হন। ২৬ মার্চ বিকেল থেকে পুরান ঢাকায় শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার, গোয়ালনগর, ইংলিশ রোড এলাকায় চলে জেনোসাইড।
৫৭ ব্রিগেডের জাহানজেব আরবাবের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের আক্রমণগুলো পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ডো অফিসারদের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। কমান্ডো অফিসার জেড এ খান ছিলেন নেতৃত্বে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তারা প্রতিরোধ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার বাইরে আক্রমণে নেতৃত্ব দেন খাদেম হুসেইন রাজা। রংপুরে আসে সৈয়দপুর থেকে ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের পথে ভোর তিনটায় বের হয়ে যায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে ৫৩ ব্রিগেড। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ সহজ ছিল না। তারা দিনাজপুরের ইপিআরের সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে সমুচিত জবাব পায়। তিন দিন ধরে এ এলাকায় সংঘর্ষ চলে। চট্টগ্রামেও আক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কুমিরায় যে প্রতিরোধযুদ্ধ হয়, তা ছিল প্রতিরোধযুদ্ধের এক মাইলফলক।
জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চ, তা পৃথিবীর বুকে ঘটা বর্বরোচিত জেনোসাইডের বড় একটি উদাহরণ। ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার সূচনা হয়েছিল এই দিনটিতে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই হত্যার সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কে জানে?
জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো ধরনের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চোয়াল শক্ত করে তারা এগিয়ে চলল। নিকষ কালো অন্ধকার দূর হয়ে গেল অস্ত্রের ঝলকানিতে। আকাশে ছুড়ে দেওয়া বিচ্ছুরিত আলোয় পথরেখা তৈরি করে একটানা গুলিবর্ষণ চলল। সে রাত ছিল দানবীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসতার উৎসব। সে রাত ছিল যুক্তিহীন নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বাস্তব দলিল।
এটাই অপারেশন সার্চলাইট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার এই নির্মম পরিকল্পনার মাধ্যমেই পাকিস্তান সরকারের নৃশংসতার শুরু। এই দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দুই ডানার পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনা ঘটে চলে তার নিজস্ব পথে। জেনোসাইডের মাধ্যমে পোড়া মাটি নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে দুরভিসন্ধি ছিল ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো গংদের, সেটা পরবর্তীকালে আর পূর্ণতা পায়নি। সে ইতিহাস ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমরা স্থিত হব ২৫ মার্চের দিনটিতে।
২২ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বরফ গলছে। একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২৪ মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেবেন, এ রকম ঘোষণা হয়েছিল।
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভেবেছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। এদিন ভুট্টো বলেছিলেন, আমাদের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি ঘটনাও ঘটল। সংকট নিরসনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের যে নেতারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই ঢাকা ত্যাগ করতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল ওয়ালী খান, খান আবদুল কাইয়ুম খান, সর্দার শওকত হায়াত খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, মওলানা মুফতি মাহমুদ প্রমুখ।
২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। বঙ্গবন্ধু ওই দিন ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেন। সেদিনও ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক হয়। অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত ততক্ষণে হয়ে গেছে, কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়া তাঁদের ছদ্ম রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবের চার দফার ব্যাপারে তাঁর দলের নীতিগত আপত্তি নেই।
ইয়াহিয়া খান কাউকে না জানিয়ে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায়। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল নাটক সাজিয়ে। ইয়াহিয়ার খালি গাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে যখন ফিরেছিল, তখনো তাতে পতাকা উড়ছিল, শুধু প্রেসিডেন্টের জায়গায় অন্য এক সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে ফিরেছিল গাড়িটি। সেনা হামলা হতে পারে—শেখ মুজিবের কাছে এই তথ্য নানা মাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু কবে, কখন এই আক্রমণ শুরু হবে, সেটা জানা ছিল না তাঁর।
ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিক করে রেখেছিল, জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলাকে নির্মূল করার জন্য ২৫ মার্চকে বেছে নেওয়া হবে। পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর যখন আসবে রাত ১টা, তখন হবে আক্রমণ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। এবং হত্যাকাণ্ড যখন ঘটতে থাকবে, তখন শেখ মুজিবকে দায়ী করে দেবেন বেতার ভাষণ।
এবার আসা যাক, সেই অপারেশন সার্চলাইটের কাছে। আক্রমণটা ছিল অতর্কিত, কিন্তু তার পেছনে ভাবনাটা ছিল বহুদিনের এবং সুদূরপ্রসারী। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য দল আনা হতে থাকবে আর তলে তলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ২৫ মার্চ সংশোধিত সময় রাত সাড়ে ১১টায় যখন সেনানিবাস থেকে বের হয়ে এল সশস্ত্র সামরিক যানগুলো, তখন তারা ওপরের মহলের অনুমতি ছাড়াই হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করল। আসলে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রত্যেকেই জানতেন, বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হিংস্রতা নিয়েই শুরু হয়েছে অভিযান। জানতেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোও।
এ অভিযান মোটেই শুধু ভয় দেখানোর জন্য পরিচালিত হয়নি। এ অভিযান সুনির্দিষ্টভাবে ছিল জেনোসাইড। হ্যাঁ, এটা নিছক গণহত্যা ছিল না। একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল সে অভিযান।
অপারেশন সার্চলাইটের দিকে দৃষ্টি রাখলেই দেখা যাবে, অতর্কিতে আক্রমণ করা হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, হিন্দু জনগোষ্ঠী, এমনকি বস্তিবাসী দরিদ্রজন। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি অন্তত তিনটি পত্রিকা অফিস, যাদের তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের পত্রিকা বলে মনে করত। এগুলো হলো দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও ইংরেজি দৈনিক পিপল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তার নির্দেশনামা পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, ফলে এখন সে ব্যাপারে কিছুটা আঁচ করা যায়। আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় পাকিস্তানেরই দুই নাগরিকের কাছ থেকে। সিদ্দিক সালিকের ‘এ উইটনেস টু সারেন্ডার’ এবং জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজার ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ নামের দুটি বইয়ে। আমরা সব সূত্র থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি।
সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে শহরগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট। তবে মূলত ঢাকা শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন মূল লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করে ফেলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইন কিংবা পিলখানাকে রাখা হলেও কেন অন্য সব লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা সাধারণভাবে বোধগম্য হয় না। কিন্তু জেনোসাইড ঘটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে বিষয়টিকে বিচার করলেই নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, পলাশীসহ নিরীহ মানুষের আবাসস্থল আক্রমণের কারণ বোঝা যায়।
হামলার বেশ কিছুদিন আগেই অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যেকোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হবে—এ রকমটাই ছিল নির্দেশ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নয়, যাঁরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক, তাঁদেরও শত্রু বলে ধরে নিতে হবে। লক্ষণীয়, একাত্তরের মার্চ মাসে যে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছিল, তা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমান নিয়মতান্ত্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এবং আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছিলেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহের অভিযোগও আনেনি।
কেন ২৫ মার্চ রাতে চালানো অপারেশন সার্চলাইটকে আমরা জেনোসাইড বলছি, তা বুঝতে হলে মাথায় রাখতে হবে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তার অনুসারী সবাইকে শত্রুপক্ষ ঘোষণা করে হত্যা করার মধ্যে রয়েছে জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা করার অনুমোদন।
এই পরিকল্পনার একটা দিক ছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্টের চলাচলের ওপর পর্যবেক্ষণ। বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যেন আলাপ চালিয়ে যাওয়ার ভণিতা করতে থাকেন। ভুট্টো রাজি না থাকলেও প্রেসিডেন্ট যেন ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন, এ রকম চালাকি করে রাখা হয়েছিল।
কীভাবে এই অপারেশন চালানো হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে এভাবে, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে, ছাত্র ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পুরান ঢাকার হিন্দুবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করা হয়েছিল দুটো কমান্ডে বিভক্ত হয়ে। ঢাকা শহরের অপারেশনের মূল দায়িত্ব ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ওপর। তাঁর অধীনে ছিল ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড। খাদিম হুসেইন রাজার ওপর দায়িত্ব ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া।
২৫ মার্চ সকাল ৮টায় অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে ঢাকার বাইরের সব গ্যারিসনকে টেলিফোনে গোপন সংকেতের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ও ২৫ মার্চ অপারেশনের কপি গোপনীয়তার মধ্যে বিভিন্ন সেনানিবাস ও গ্যারিসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২৪ মার্চ হেলিকপ্টারে করে রাও ফরমান আলী গেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ব্রিগেডিয়ার দুরদানির কাছে, খাদিম হাসান রাজা গেছেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি ও কর্নেল ফাতেমির কাছে।
পিলখানায় ছিল আড়াই হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য, পুলিশলাইনে ছিল এক হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য। তাঁদের নিরস্ত্র করার দায়িত্বে ছিল ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ, ৩২ পাঞ্জাবের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলকে তারা দোজখে পরিণত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ৩৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিসি দেব, আতাউর রহমান খান খাদিম, এ এন এম মুনিরুজ্জামান, ফজলুর রহমান খান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আবদুল মুক্তাদির, শরাফত আলী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ ১১ জন শিক্ষক এই আক্রমণে নিহত হন। ২৬ মার্চ বিকেল থেকে পুরান ঢাকায় শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার, গোয়ালনগর, ইংলিশ রোড এলাকায় চলে জেনোসাইড।
৫৭ ব্রিগেডের জাহানজেব আরবাবের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের আক্রমণগুলো পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ডো অফিসারদের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। কমান্ডো অফিসার জেড এ খান ছিলেন নেতৃত্বে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তারা প্রতিরোধ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার বাইরে আক্রমণে নেতৃত্ব দেন খাদেম হুসেইন রাজা। রংপুরে আসে সৈয়দপুর থেকে ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের পথে ভোর তিনটায় বের হয়ে যায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে ৫৩ ব্রিগেড। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ সহজ ছিল না। তারা দিনাজপুরের ইপিআরের সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে সমুচিত জবাব পায়। তিন দিন ধরে এ এলাকায় সংঘর্ষ চলে। চট্টগ্রামেও আক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কুমিরায় যে প্রতিরোধযুদ্ধ হয়, তা ছিল প্রতিরোধযুদ্ধের এক মাইলফলক।
জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চ, তা পৃথিবীর বুকে ঘটা বর্বরোচিত জেনোসাইডের বড় একটি উদাহরণ। ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার সূচনা হয়েছিল এই দিনটিতে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই হত্যার সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কে জানে?

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো ধরনের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চোয়াল শক্ত করে তারা এগিয়ে চলল। নিকষ কালো অন্ধকার দূর হয়ে গেল অস্ত্রের ঝলকানিতে। আকাশে ছুড়ে দেওয়া বিচ্ছুরিত আলোয় পথরেখা তৈরি করে একটানা গুলিবর্ষণ চলল। সে রাত ছিল দানবীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসতার উৎসব। সে রাত ছিল যুক্তিহীন নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের বাস্তব দলিল।
এটাই অপারেশন সার্চলাইট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার এই নির্মম পরিকল্পনার মাধ্যমেই পাকিস্তান সরকারের নৃশংসতার শুরু। এই দিনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দুই ডানার পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনা ঘটে চলে তার নিজস্ব পথে। জেনোসাইডের মাধ্যমে পোড়া মাটি নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে দুরভিসন্ধি ছিল ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো গংদের, সেটা পরবর্তীকালে আর পূর্ণতা পায়নি। সে ইতিহাস ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমরা স্থিত হব ২৫ মার্চের দিনটিতে।
২২ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে বৈঠক হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বরফ গলছে। একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ। ২৪ মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেবেন, এ রকম ঘোষণা হয়েছিল।
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভেবেছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। এদিন ভুট্টো বলেছিলেন, আমাদের আলোচনায় কিছু অগ্রগতি আছে। কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি ঘটনাও ঘটল। সংকট নিরসনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের যে নেতারা ঢাকায় এসেছিলেন, তাঁরা হঠাৎ করেই ঢাকা ত্যাগ করতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল ওয়ালী খান, খান আবদুল কাইয়ুম খান, সর্দার শওকত হায়াত খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, মওলানা মুফতি মাহমুদ প্রমুখ।
২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকা ছিল মিছিলের শহর। বঙ্গবন্ধু ওই দিন ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেন। সেদিনও ভুট্টো-ইয়াহিয়ার বৈঠক হয়। অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত ততক্ষণে হয়ে গেছে, কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়া তাঁদের ছদ্ম রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবের চার দফার ব্যাপারে তাঁর দলের নীতিগত আপত্তি নেই।
ইয়াহিয়া খান কাউকে না জানিয়ে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায়। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল নাটক সাজিয়ে। ইয়াহিয়ার খালি গাড়ি এয়ারপোর্ট থেকে যখন ফিরেছিল, তখনো তাতে পতাকা উড়ছিল, শুধু প্রেসিডেন্টের জায়গায় অন্য এক সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে ফিরেছিল গাড়িটি। সেনা হামলা হতে পারে—শেখ মুজিবের কাছে এই তথ্য নানা মাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু কবে, কখন এই আক্রমণ শুরু হবে, সেটা জানা ছিল না তাঁর।
ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিক করে রেখেছিল, জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলাকে নির্মূল করার জন্য ২৫ মার্চকে বেছে নেওয়া হবে। পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর যখন আসবে রাত ১টা, তখন হবে আক্রমণ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া। এবং হত্যাকাণ্ড যখন ঘটতে থাকবে, তখন শেখ মুজিবকে দায়ী করে দেবেন বেতার ভাষণ।
এবার আসা যাক, সেই অপারেশন সার্চলাইটের কাছে। আক্রমণটা ছিল অতর্কিত, কিন্তু তার পেছনে ভাবনাটা ছিল বহুদিনের এবং সুদূরপ্রসারী। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য দল আনা হতে থাকবে আর তলে তলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ২৫ মার্চ সংশোধিত সময় রাত সাড়ে ১১টায় যখন সেনানিবাস থেকে বের হয়ে এল সশস্ত্র সামরিক যানগুলো, তখন তারা ওপরের মহলের অনুমতি ছাড়াই হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করল। আসলে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রত্যেকেই জানতেন, বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হিংস্রতা নিয়েই শুরু হয়েছে অভিযান। জানতেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোও।
এ অভিযান মোটেই শুধু ভয় দেখানোর জন্য পরিচালিত হয়নি। এ অভিযান সুনির্দিষ্টভাবে ছিল জেনোসাইড। হ্যাঁ, এটা নিছক গণহত্যা ছিল না। একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল সে অভিযান।
অপারেশন সার্চলাইটের দিকে দৃষ্টি রাখলেই দেখা যাবে, অতর্কিতে আক্রমণ করা হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, হিন্দু জনগোষ্ঠী, এমনকি বস্তিবাসী দরিদ্রজন। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, তাদের এই হামলা থেকে রক্ষা পায়নি অন্তত তিনটি পত্রিকা অফিস, যাদের তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের পত্রিকা বলে মনে করত। এগুলো হলো দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ ও ইংরেজি দৈনিক পিপল।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তার নির্দেশনামা পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, ফলে এখন সে ব্যাপারে কিছুটা আঁচ করা যায়। আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় পাকিস্তানেরই দুই নাগরিকের কাছ থেকে। সিদ্দিক সালিকের ‘এ উইটনেস টু সারেন্ডার’ এবং জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজার ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ নামের দুটি বইয়ে। আমরা সব সূত্র থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি।
সেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে শহরগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট। তবে মূলত ঢাকা শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন মূল লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করে ফেলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইন কিংবা পিলখানাকে রাখা হলেও কেন অন্য সব লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটা সাধারণভাবে বোধগম্য হয় না। কিন্তু জেনোসাইড ঘটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে বিষয়টিকে বিচার করলেই নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, পলাশীসহ নিরীহ মানুষের আবাসস্থল আক্রমণের কারণ বোঝা যায়।
হামলার বেশ কিছুদিন আগেই অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যেকোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হবে—এ রকমটাই ছিল নির্দেশ। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নয়, যাঁরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক, তাঁদেরও শত্রু বলে ধরে নিতে হবে। লক্ষণীয়, একাত্তরের মার্চ মাসে যে অসহযোগ আন্দোলন হচ্ছিল, তা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমান নিয়মতান্ত্রিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এবং আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছিলেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহের অভিযোগও আনেনি।
কেন ২৫ মার্চ রাতে চালানো অপারেশন সার্চলাইটকে আমরা জেনোসাইড বলছি, তা বুঝতে হলে মাথায় রাখতে হবে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তার অনুসারী সবাইকে শত্রুপক্ষ ঘোষণা করে হত্যা করার মধ্যে রয়েছে জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা করার অনুমোদন।
এই পরিকল্পনার একটা দিক ছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্টের চলাচলের ওপর পর্যবেক্ষণ। বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যেন আলাপ চালিয়ে যাওয়ার ভণিতা করতে থাকেন। ভুট্টো রাজি না থাকলেও প্রেসিডেন্ট যেন ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন, এ রকম চালাকি করে রাখা হয়েছিল।
কীভাবে এই অপারেশন চালানো হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে এভাবে, সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে, ছাত্র ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পুরান ঢাকার হিন্দুবাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে। শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করা হয়েছিল দুটো কমান্ডে বিভক্ত হয়ে। ঢাকা শহরের অপারেশনের মূল দায়িত্ব ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ওপর। তাঁর অধীনে ছিল ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড। খাদিম হুসেইন রাজার ওপর দায়িত্ব ছিল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া।
২৫ মার্চ সকাল ৮টায় অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে ঢাকার বাইরের সব গ্যারিসনকে টেলিফোনে গোপন সংকেতের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ও ২৫ মার্চ অপারেশনের কপি গোপনীয়তার মধ্যে বিভিন্ন সেনানিবাস ও গ্যারিসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২৪ মার্চ হেলিকপ্টারে করে রাও ফরমান আলী গেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ব্রিগেডিয়ার দুরদানির কাছে, খাদিম হাসান রাজা গেছেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি ও কর্নেল ফাতেমির কাছে।
পিলখানায় ছিল আড়াই হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য, পুলিশলাইনে ছিল এক হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য। তাঁদের নিরস্ত্র করার দায়িত্বে ছিল ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। ১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ, ৩২ পাঞ্জাবের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলকে তারা দোজখে পরিণত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ৩৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিসি দেব, আতাউর রহমান খান খাদিম, এ এন এম মুনিরুজ্জামান, ফজলুর রহমান খান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহম্মদ আবদুল মুক্তাদির, শরাফত আলী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ ১১ জন শিক্ষক এই আক্রমণে নিহত হন। ২৬ মার্চ বিকেল থেকে পুরান ঢাকায় শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার, গোয়ালনগর, ইংলিশ রোড এলাকায় চলে জেনোসাইড।
৫৭ ব্রিগেডের জাহানজেব আরবাবের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের আক্রমণগুলো পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ডো অফিসারদের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। কমান্ডো অফিসার জেড এ খান ছিলেন নেতৃত্বে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তারা প্রতিরোধ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার বাইরে আক্রমণে নেতৃত্ব দেন খাদেম হুসেইন রাজা। রংপুরে আসে সৈয়দপুর থেকে ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট। কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের পথে ভোর তিনটায় বের হয়ে যায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে ৫৩ ব্রিগেড। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও রংপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ সহজ ছিল না। তারা দিনাজপুরের ইপিআরের সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে সমুচিত জবাব পায়। তিন দিন ধরে এ এলাকায় সংঘর্ষ চলে। চট্টগ্রামেও আক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কুমিরায় যে প্রতিরোধযুদ্ধ হয়, তা ছিল প্রতিরোধযুদ্ধের এক মাইলফলক।
জাতিগতভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চ, তা পৃথিবীর বুকে ঘটা বর্বরোচিত জেনোসাইডের বড় একটি উদাহরণ। ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার সূচনা হয়েছিল এই দিনটিতে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই হত্যার সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কে জানে?

অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহিনুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে চাকরিচ্যুতির আগেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০ মিনিট আগে
সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ পেশ করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ...
২ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ওই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহিনুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে চাকরিচ্যুতির আগেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগারগাঁও বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক শাহিনুর রহমানকে গত বছরের ৩০ মে গোপালগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বদলি করা হয়। বদলি আদেশের পর কর্মস্থলে যোগদানের জন্য গত বছরের ৮ জুলাই আগের কর্মস্থল থেকে রিলিজ লেটার বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
পরে তিনি ৯ জুলাই চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর হওয়ার আগেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। এ জন্য ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর হতে গত বছরের ৩ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নোটিশের জবাব দেননি। এরপর কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ১৪১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, শাহিনুর রহমান বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে কর্মরত থাকাকালে নিজ পেশা ‘সরকারি চাকরি’ গোপন করে ‘শিক্ষক’ পেশা উল্লেখ করে নিজেই নিজের পাসপোর্টের আবেদন করেন। পরে তা নিজেই গ্রহণ করেন। তাঁর এই আচরণ ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘অসদাচরণ’ এবং ৩(গ) বিধি মোতাবেক ‘পলায়ন’-এর শামিল। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি অভিযোগনামা দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগনামার জবাব দেননি এবং ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করেননি।
গত ২৭ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী ‘চাকরি হতে বরখাস্তকরণ’-এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে পাঠানো হলে সেখান থেকে তাঁকে ‘বরখাস্তকরণ’-এর বিষয়ে একমত পোষণ করে গুরুদণ্ডের পরামর্শ দেওয়া হয়।

অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহিনুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে চাকরিচ্যুতির আগেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগারগাঁও বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক শাহিনুর রহমানকে গত বছরের ৩০ মে গোপালগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বদলি করা হয়। বদলি আদেশের পর কর্মস্থলে যোগদানের জন্য গত বছরের ৮ জুলাই আগের কর্মস্থল থেকে রিলিজ লেটার বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
পরে তিনি ৯ জুলাই চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর হওয়ার আগেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। এ জন্য ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর হতে গত বছরের ৩ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নোটিশের জবাব দেননি। এরপর কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ১৪১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, শাহিনুর রহমান বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে কর্মরত থাকাকালে নিজ পেশা ‘সরকারি চাকরি’ গোপন করে ‘শিক্ষক’ পেশা উল্লেখ করে নিজেই নিজের পাসপোর্টের আবেদন করেন। পরে তা নিজেই গ্রহণ করেন। তাঁর এই আচরণ ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘অসদাচরণ’ এবং ৩(গ) বিধি মোতাবেক ‘পলায়ন’-এর শামিল। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি অভিযোগনামা দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগনামার জবাব দেননি এবং ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করেননি।
গত ২৭ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী ‘চাকরি হতে বরখাস্তকরণ’-এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে পাঠানো হলে সেখান থেকে তাঁকে ‘বরখাস্তকরণ’-এর বিষয়ে একমত পোষণ করে গুরুদণ্ডের পরামর্শ দেওয়া হয়।

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো
২৫ মার্চ ২০২২
সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ পেশ করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ...
২ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ওই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ পেশ করা হবে।
আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সব ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সবার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে, সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে—সব ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে, সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায় তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এ দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
এ সময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সমাপনী বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।
‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে’ উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
কমিশনের সহসভাপতি আরও বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘চব্বিশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। কাল আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করব।’
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। গণ-অভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো—এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়। এ সুযোগ যেন না হারাই।’
কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল একই রকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।’
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য সফর রাজ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এ ধরনের সৌহার্দ্য থাকে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘যতগুলো শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাঁরা প্রত্যেকে আমাদের জানিয়েছেন সংস্কার নিশ্চিত করা না হলে তাঁদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে বলে তাঁরা মনে করেন। যারা জুলাইয়ে জীবন দিল তারাই এর মূল ভিত্তি।’
আগামীকাল দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ পেশ করা হবে।
আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সব ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সবার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে, সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে—সব ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে, সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায় তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এ দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
এ সময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সমাপনী বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।
‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে’ উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
কমিশনের সহসভাপতি আরও বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘চব্বিশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। কাল আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করব।’
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। গণ-অভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো—এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়। এ সুযোগ যেন না হারাই।’
কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল একই রকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।’
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য সফর রাজ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এ ধরনের সৌহার্দ্য থাকে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘যতগুলো শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাঁরা প্রত্যেকে আমাদের জানিয়েছেন সংস্কার নিশ্চিত করা না হলে তাঁদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে বলে তাঁরা মনে করেন। যারা জুলাইয়ে জীবন দিল তারাই এর মূল ভিত্তি।’
আগামীকাল দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো
২৫ মার্চ ২০২২
অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহিনুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে চাকরিচ্যুতির আগেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০ মিনিট আগে
জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ...
২ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ওই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার।’
আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমাপনী বৈঠকে এসব কথা বলেন কমিশন সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্ব করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের কাছে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ জমা দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন; যেখানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও ও ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে, সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে—সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে, সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায়, তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্টস থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
এ সময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সমাপনী বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে—উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে।’
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘চব্বিশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরেও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। গণ-অভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো—এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়, এই সুযোগ যেন না হারাই।’
বিচারপতি মো. এমদাদুল হক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, একই রকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।
সফর রাজ হোসেন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এ ধরনের সৌহার্দ্য থাকে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘যতগুলো শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে আমাদের জানিয়েছে, সংস্কার নিশ্চিত করা না হলে তাদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে বলে তারা মনে করে। যারা জুলাইয়ে জীবন দিল, তারাই এর মূল ভিত্তি।’

জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার।’
আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমাপনী বৈঠকে এসব কথা বলেন কমিশন সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্ব করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের কাছে আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ জমা দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন; যেখানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও ও ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে, সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে—সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে, সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কারণ, এগুলো হবে ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায়, তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্টস থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
এ সময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সমাপনী বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে—উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে।’
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘চব্বিশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরেও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। গণ-অভ্যুত্থানে এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এত মানুষ আহত হলো—এটা স্মরণে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার যাতে নিশ্চিত হয়, এই সুযোগ যেন না হারাই।’
বিচারপতি মো. এমদাদুল হক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, একই রকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক।
সফর রাজ হোসেন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এ ধরনের সৌহার্দ্য থাকে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘যতগুলো শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে আমাদের জানিয়েছে, সংস্কার নিশ্চিত করা না হলে তাদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে বলে তারা মনে করে। যারা জুলাইয়ে জীবন দিল, তারাই এর মূল ভিত্তি।’

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো
২৫ মার্চ ২০২২
অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহিনুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে চাকরিচ্যুতির আগেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০ মিনিট আগে
সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ পেশ করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ওই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ওই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সেবিকা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮ সালে জারি করা একটি রিট পিটিশন মামলার ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের রায়, সিভিল রিভিউ পিটিশন মামলার ২০২৫ সালের ১৩ মার্চের রায় এবং অর্থ বিভাগের ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবরের মতামতের আলোকে ওই ৪৫ জন রিট পিটিশনকারী প্রধান শিক্ষকের বিদ্যমান বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী ১১ থেকে দশম গ্রেডে গেজেটেড পদমর্যাদাসহ উন্নীত করা হলো।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবর দেওয়া অর্থ বিভাগের মতামত অনুযায়ী রায়ের তারিখ ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক দশম গ্রেডের সুবিধা প্রাপ্য হবেন বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিল।
এরপর ওই দিনই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও পরে মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১তম ও অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেডে বেতন ঠিক করে দেয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতিসহ প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছিল।
পরে ১১তম ও ১২তম গ্রেড নির্ধারণের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ৪ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ সংক্ষুব্ধ ৪৫ শিক্ষক।
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই রায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেড পদমর্যাদায় ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে সরকারের করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিল খারিজ করে দিয়ে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের ওই রায় দীর্ঘ তিন মাসেও কার্যকর না করায় প্রধান শিক্ষকেরা আদালত অবমাননার মামলা করেন। ওই রায় কার্যকর না করায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এর কারণ দর্শাতে একই বছরের ২৭ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিবাদীদের এক মাসের সময় দেন। পরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে সিভিল রিভিউ পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে চলতি বছরের ১৩ মার্চ রায় দেন। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তা বাস্তবায়ন হলো।
এদিকে গত ২৮ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকার দেশের ৬৫ হাজার ৫০২ প্রধান শিক্ষক পদের বেতন স্কেল বিদ্যমান ১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম গ্রেড (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে দশম গ্রেডে উন্নীতকরণে সম্মতি দিয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করা হলো। এই উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তাঁদের সামাজিক মর্যাদা সুসংহত করবে। ফলে তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও সৃজনশীল ও উদ্দীপ্ত ভূমিকা পালন করবেন। এতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নত ও গতিশীল শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও সম্মান প্রদর্শন করছে। এ পদক্ষেপ প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রধান শিক্ষকেরা অন্য শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবক ও সব স্তরের অংশীজনের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করবেন, এটি সরকারের প্রত্যাশা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ বলেন, ‘দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে অবশেষে প্রধান শিক্ষকদের প্রাণের দাবি বাস্তবায়ন করায় সরকারের সব পক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’

দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ওই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সেবিকা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮ সালে জারি করা একটি রিট পিটিশন মামলার ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের রায়, সিভিল রিভিউ পিটিশন মামলার ২০২৫ সালের ১৩ মার্চের রায় এবং অর্থ বিভাগের ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবরের মতামতের আলোকে ওই ৪৫ জন রিট পিটিশনকারী প্রধান শিক্ষকের বিদ্যমান বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী ১১ থেকে দশম গ্রেডে গেজেটেড পদমর্যাদাসহ উন্নীত করা হলো।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবর দেওয়া অর্থ বিভাগের মতামত অনুযায়ী রায়ের তারিখ ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক দশম গ্রেডের সুবিধা প্রাপ্য হবেন বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিল।
এরপর ওই দিনই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও পরে মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১তম ও অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেডে বেতন ঠিক করে দেয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতিসহ প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছিল।
পরে ১১তম ও ১২তম গ্রেড নির্ধারণের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ৪ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ সংক্ষুব্ধ ৪৫ শিক্ষক।
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই রায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেড পদমর্যাদায় ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে সরকারের করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিল খারিজ করে দিয়ে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের ওই রায় দীর্ঘ তিন মাসেও কার্যকর না করায় প্রধান শিক্ষকেরা আদালত অবমাননার মামলা করেন। ওই রায় কার্যকর না করায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এর কারণ দর্শাতে একই বছরের ২৭ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিবাদীদের এক মাসের সময় দেন। পরে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে সিভিল রিভিউ পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে চলতি বছরের ১৩ মার্চ রায় দেন। আজ সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তা বাস্তবায়ন হলো।
এদিকে গত ২৮ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকার দেশের ৬৫ হাজার ৫০২ প্রধান শিক্ষক পদের বেতন স্কেল বিদ্যমান ১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম গ্রেড (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে দশম গ্রেডে উন্নীতকরণে সম্মতি দিয়েছে। এর ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করা হলো। এই উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তাঁদের সামাজিক মর্যাদা সুসংহত করবে। ফলে তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও সৃজনশীল ও উদ্দীপ্ত ভূমিকা পালন করবেন। এতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নত ও গতিশীল শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও সম্মান প্রদর্শন করছে। এ পদক্ষেপ প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রধান শিক্ষকেরা অন্য শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবক ও সব স্তরের অংশীজনের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করবেন, এটি সরকারের প্রত্যাশা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ বলেন, ‘দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে অবশেষে প্রধান শিক্ষকদের প্রাণের দাবি বাস্তবায়ন করায় সরকারের সব পক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’

হঠাৎ করে গর্জে উঠল ভারী কামান। ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলো দানবের মতো ছুটে চলল ঢাকা শহরের রাস্তাজুড়ে। শুধু কি ঢাকা? সামরিক যান আক্রমণ চালাল চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর। যেকোনো
২৫ মার্চ ২০২২
অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহিনুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে চাকরিচ্যুতির আগেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
২০ মিনিট আগে
সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ পেশ করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘ...
২ ঘণ্টা আগে