মনজুরুল ইসলাম ঢাকা

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
গত এক মাসে উড়াল দেওয়ার আগে-পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্তত ৯টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তবে আশার কথা হলো, কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে অলৌকিকভাবে। যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদ থাকেলেও ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই আকাশ পরিবহন সংস্থার নিরাপত্তার মান ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তথ্য বলছে, গত ৩০ দিনে ঢাকাসহ আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর রুটের একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে মাঝ আকাশে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হয়ে ফেরত আসতে হয়েছে, কোথাও ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে। কিছু ফ্লাইট যাত্রা শুরু করার পরই মিয়ানমার বা ভারতের আকাশ থেকে ফিরে আসে, আবার কিছু ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে রানওয়েতে আটকে যায়। এর ফলে শত শত যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে, অনেকের সংযোগ ফ্লাইট মিস হয়েছে, কেউ কেউ গন্তব্যে যেতে পারেননি।
এই অবস্থায় অভিযোগ উঠেছে, বিমানের হ্যাঙ্গারে কর্মরত প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে দায়সারা কাজ করছেন। একাধিক সূত্র জানায়, নির্ধারিত ‘চেক’ ও ‘সার্ভিসিং’ সঠিকভাবে না হওয়া, অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর ঘাটতি এবং যন্ত্রাংশের অভাবে ত্রুটি বেড়ে চলছে।
একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় চলতি মাসে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে যেকোনো উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার (১০ আগস্ট) বিমানের প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন এয়ারলাইনসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু এসব বৈঠক ও জরুরি নির্দেশনা কোনো কাজে আসছে না। উল্টো রোববার উড়োজাহাজের ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটির কারণে রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে ‘গ্রাউন্ডেড’ করতে হয় বিমানের একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার।
প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজটির ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটি শনাক্ত করেন, যা উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। লন্ডন থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাঠানোর পর মেরামত করে একই উড়োজাহাজে যাত্রীদের দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকল্প কোনো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে না পেরে ২৬২ যাত্রীকে বিমানের খরচে হোটেলে রাখা হয়। অন্যদিকে রোম বিমানবন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য বিমানকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
এই ঘটনার পরদিন গতকাল সোমবার ড্যাস-৮ মডেলের একটি উড়োজাহাজের কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে চট্টগ্রামগামী একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। পরে যাত্রীদের অন্য একটি উড়োজাহাজে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।
অতি সাম্প্রতিক এ দুটি ঘটনা ছাড়াও চলতি আগস্ট মাসে আরও তিনটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে বিমান। ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী একটি বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কম্পন অনুভূত হওয়ায় মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসে। ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী একটি বোয়িং তিনটি টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হওয়ায় ১ ঘণ্টা উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে। ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একটি বোয়িংয়ে সমস্যা দেখা দিলে তা সারিয়ে ২ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় ফেরানো হয়।
বিমানের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য বলছে, ৬ আগস্ট মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসা ব্যাংককগামী বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি প্রায় আট মাস হ্যাঙ্গারে রেখে মেরামত করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, মেরামতের পর যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা ছাড়া সেটিকে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করা হয় এবং আকাশে ওঠার পরই নতুন করে ত্রুটি দেখা দেয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিমানের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়; বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রক্ষণাবেক্ষণ-ব্যবস্থার প্রতিফলন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বহরের উড়োজাহাজগুলো নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যবেক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার আওতায় না আসায় ছোটখাটো কারিগরি সমস্যা সময়মতো ধরা পড়ছে না। ফলে এসব ত্রুটি ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে উড্ডয়ন-নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, যাত্রীদের জীবনহানির ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনা বিমানের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাজারে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম পুনর্গঠনের প্রয়োজন, সেখানে বারবার এই বিপত্তি যাত্রীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। যদিও বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি ত্রুটি সমাধানের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিমানের বহরের বেশির ভাগ উড়োজাহাজ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বয়সজনিত কারণে নানা ধরনের ত্রুটি ও প্রযুক্তিগত বিচ্যুতি নিয়মিতভাবে দেখা দিচ্ছে। এর ফলে যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হচ্ছে।
গত জুলাই মাসেও বিমানের উড়োজাহাজে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ১৬ জুলাই দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘চাকায় ত্রুটি’র কারণে একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার গ্রাউন্ডেড হয়, যা মেরামতের পর ৩০ ঘণ্টা বিলম্বে দেশে ফেরে। ২৪ জুলাই দুবাই থেকে আসা আরেকটি ড্রিমলাইনারের ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়ায় সেটি চট্টগ্রামে ফিরে আসে এবং ত্রুটি সারিয়ে ২ ঘণ্টা পর আবার ঢাকায় যায়। ২৮ জুলাই দাম্মামগামী একটি বোয়িং ৭৭৭-ইআর কেবিন প্রেশারের ত্রুটির সংকেত পেয়ে ঢাকায় ফিরে আসে, পরে যাত্রীদের অন্য উড়োজাহাজে পাঠানো হয়। ৩০ জুলাই শারজা বিমানবন্দরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি বোয়িং ৭৩৭ ছয় ঘণ্টা আটকে থাকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম রওশন কবীর বলেন, যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালিত হচ্ছে। কোনো উড়োজাহাজে সামান্যতম ত্রুটি শনাক্ত হলে তা শতভাগ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি আকাশে ওড়ানো হয় না। তিনি আরও বলেন, বিমানের দক্ষ মেইনটেন্যান্স টিম দ্রুত যেকোনো কারিগরি সমস্যা মেরামত করে থাকে এবং বিলম্ব হলে যাত্রীদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, খাবার সরবরাহসহ নিয়মিত সেবা নিশ্চিত করা হয়।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি বোয়িং। এগুলোর মধ্যে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং ছয়টি ন্যারোবডি বোয়িং ৭৩৭। এ ছাড়া স্বল্প দূরত্বের রুটে চলাচলের জন্য বহরে পাঁচটি ড্যাশ-৮০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। তবে এসব উড়োজাহাজের বড় একটি অংশ প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে থাকে, যা সরাসরি ফ্লাইট শিডিউলে বিঘ্ন ঘটায় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ায়।
বহর প্রসঙ্গে বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের এই ভোগান্তি কমাতে দুটি নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং আরও কয়েকটি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। লিজ নেওয়া উড়োজাহাজগুলো দ্রুতই বহরে যুক্ত হবে; তবে ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাঁর মতে, নতুন উড়োজাহাজ সংযোজন করা হলে বহরের সক্ষমতা বাড়বে এবং ফ্লাইট শিডিউল বিঘ্নিত হওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
প্রসঙ্গত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে। ওই বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি ফকার এফ-২৭ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েকবার অবতরণের চেষ্টার পর রানওয়ের ৫০০ মিটার আগে মুখ থুবড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৪৯ জন। এটাই বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইটের একমাত্র বড় ধরনের দুর্ঘটনা, যেখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
গত এক মাসে উড়াল দেওয়ার আগে-পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্তত ৯টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তবে আশার কথা হলো, কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে অলৌকিকভাবে। যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদ থাকেলেও ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই আকাশ পরিবহন সংস্থার নিরাপত্তার মান ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তথ্য বলছে, গত ৩০ দিনে ঢাকাসহ আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর রুটের একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে মাঝ আকাশে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হয়ে ফেরত আসতে হয়েছে, কোথাও ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে। কিছু ফ্লাইট যাত্রা শুরু করার পরই মিয়ানমার বা ভারতের আকাশ থেকে ফিরে আসে, আবার কিছু ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে রানওয়েতে আটকে যায়। এর ফলে শত শত যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে, অনেকের সংযোগ ফ্লাইট মিস হয়েছে, কেউ কেউ গন্তব্যে যেতে পারেননি।
এই অবস্থায় অভিযোগ উঠেছে, বিমানের হ্যাঙ্গারে কর্মরত প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে দায়সারা কাজ করছেন। একাধিক সূত্র জানায়, নির্ধারিত ‘চেক’ ও ‘সার্ভিসিং’ সঠিকভাবে না হওয়া, অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর ঘাটতি এবং যন্ত্রাংশের অভাবে ত্রুটি বেড়ে চলছে।
একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় চলতি মাসে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে যেকোনো উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার (১০ আগস্ট) বিমানের প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন এয়ারলাইনসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু এসব বৈঠক ও জরুরি নির্দেশনা কোনো কাজে আসছে না। উল্টো রোববার উড়োজাহাজের ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটির কারণে রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে ‘গ্রাউন্ডেড’ করতে হয় বিমানের একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার।
প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজটির ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটি শনাক্ত করেন, যা উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। লন্ডন থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাঠানোর পর মেরামত করে একই উড়োজাহাজে যাত্রীদের দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকল্প কোনো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে না পেরে ২৬২ যাত্রীকে বিমানের খরচে হোটেলে রাখা হয়। অন্যদিকে রোম বিমানবন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য বিমানকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
এই ঘটনার পরদিন গতকাল সোমবার ড্যাস-৮ মডেলের একটি উড়োজাহাজের কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে চট্টগ্রামগামী একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। পরে যাত্রীদের অন্য একটি উড়োজাহাজে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।
অতি সাম্প্রতিক এ দুটি ঘটনা ছাড়াও চলতি আগস্ট মাসে আরও তিনটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে বিমান। ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী একটি বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কম্পন অনুভূত হওয়ায় মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসে। ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী একটি বোয়িং তিনটি টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হওয়ায় ১ ঘণ্টা উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে। ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একটি বোয়িংয়ে সমস্যা দেখা দিলে তা সারিয়ে ২ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় ফেরানো হয়।
বিমানের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য বলছে, ৬ আগস্ট মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসা ব্যাংককগামী বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি প্রায় আট মাস হ্যাঙ্গারে রেখে মেরামত করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, মেরামতের পর যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা ছাড়া সেটিকে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করা হয় এবং আকাশে ওঠার পরই নতুন করে ত্রুটি দেখা দেয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিমানের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়; বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রক্ষণাবেক্ষণ-ব্যবস্থার প্রতিফলন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বহরের উড়োজাহাজগুলো নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যবেক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার আওতায় না আসায় ছোটখাটো কারিগরি সমস্যা সময়মতো ধরা পড়ছে না। ফলে এসব ত্রুটি ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে উড্ডয়ন-নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, যাত্রীদের জীবনহানির ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনা বিমানের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাজারে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম পুনর্গঠনের প্রয়োজন, সেখানে বারবার এই বিপত্তি যাত্রীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। যদিও বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি ত্রুটি সমাধানের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিমানের বহরের বেশির ভাগ উড়োজাহাজ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বয়সজনিত কারণে নানা ধরনের ত্রুটি ও প্রযুক্তিগত বিচ্যুতি নিয়মিতভাবে দেখা দিচ্ছে। এর ফলে যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হচ্ছে।
গত জুলাই মাসেও বিমানের উড়োজাহাজে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ১৬ জুলাই দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘চাকায় ত্রুটি’র কারণে একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার গ্রাউন্ডেড হয়, যা মেরামতের পর ৩০ ঘণ্টা বিলম্বে দেশে ফেরে। ২৪ জুলাই দুবাই থেকে আসা আরেকটি ড্রিমলাইনারের ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়ায় সেটি চট্টগ্রামে ফিরে আসে এবং ত্রুটি সারিয়ে ২ ঘণ্টা পর আবার ঢাকায় যায়। ২৮ জুলাই দাম্মামগামী একটি বোয়িং ৭৭৭-ইআর কেবিন প্রেশারের ত্রুটির সংকেত পেয়ে ঢাকায় ফিরে আসে, পরে যাত্রীদের অন্য উড়োজাহাজে পাঠানো হয়। ৩০ জুলাই শারজা বিমানবন্দরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি বোয়িং ৭৩৭ ছয় ঘণ্টা আটকে থাকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম রওশন কবীর বলেন, যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালিত হচ্ছে। কোনো উড়োজাহাজে সামান্যতম ত্রুটি শনাক্ত হলে তা শতভাগ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি আকাশে ওড়ানো হয় না। তিনি আরও বলেন, বিমানের দক্ষ মেইনটেন্যান্স টিম দ্রুত যেকোনো কারিগরি সমস্যা মেরামত করে থাকে এবং বিলম্ব হলে যাত্রীদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, খাবার সরবরাহসহ নিয়মিত সেবা নিশ্চিত করা হয়।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি বোয়িং। এগুলোর মধ্যে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং ছয়টি ন্যারোবডি বোয়িং ৭৩৭। এ ছাড়া স্বল্প দূরত্বের রুটে চলাচলের জন্য বহরে পাঁচটি ড্যাশ-৮০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। তবে এসব উড়োজাহাজের বড় একটি অংশ প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে থাকে, যা সরাসরি ফ্লাইট শিডিউলে বিঘ্ন ঘটায় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ায়।
বহর প্রসঙ্গে বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের এই ভোগান্তি কমাতে দুটি নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং আরও কয়েকটি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। লিজ নেওয়া উড়োজাহাজগুলো দ্রুতই বহরে যুক্ত হবে; তবে ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাঁর মতে, নতুন উড়োজাহাজ সংযোজন করা হলে বহরের সক্ষমতা বাড়বে এবং ফ্লাইট শিডিউল বিঘ্নিত হওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
প্রসঙ্গত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে। ওই বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি ফকার এফ-২৭ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েকবার অবতরণের চেষ্টার পর রানওয়ের ৫০০ মিটার আগে মুখ থুবড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৪৯ জন। এটাই বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইটের একমাত্র বড় ধরনের দুর্ঘটনা, যেখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
মনজুরুল ইসলাম ঢাকা

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
গত এক মাসে উড়াল দেওয়ার আগে-পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্তত ৯টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তবে আশার কথা হলো, কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে অলৌকিকভাবে। যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদ থাকেলেও ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই আকাশ পরিবহন সংস্থার নিরাপত্তার মান ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তথ্য বলছে, গত ৩০ দিনে ঢাকাসহ আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর রুটের একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে মাঝ আকাশে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হয়ে ফেরত আসতে হয়েছে, কোথাও ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে। কিছু ফ্লাইট যাত্রা শুরু করার পরই মিয়ানমার বা ভারতের আকাশ থেকে ফিরে আসে, আবার কিছু ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে রানওয়েতে আটকে যায়। এর ফলে শত শত যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে, অনেকের সংযোগ ফ্লাইট মিস হয়েছে, কেউ কেউ গন্তব্যে যেতে পারেননি।
এই অবস্থায় অভিযোগ উঠেছে, বিমানের হ্যাঙ্গারে কর্মরত প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে দায়সারা কাজ করছেন। একাধিক সূত্র জানায়, নির্ধারিত ‘চেক’ ও ‘সার্ভিসিং’ সঠিকভাবে না হওয়া, অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর ঘাটতি এবং যন্ত্রাংশের অভাবে ত্রুটি বেড়ে চলছে।
একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় চলতি মাসে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে যেকোনো উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার (১০ আগস্ট) বিমানের প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন এয়ারলাইনসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু এসব বৈঠক ও জরুরি নির্দেশনা কোনো কাজে আসছে না। উল্টো রোববার উড়োজাহাজের ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটির কারণে রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে ‘গ্রাউন্ডেড’ করতে হয় বিমানের একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার।
প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজটির ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটি শনাক্ত করেন, যা উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। লন্ডন থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাঠানোর পর মেরামত করে একই উড়োজাহাজে যাত্রীদের দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকল্প কোনো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে না পেরে ২৬২ যাত্রীকে বিমানের খরচে হোটেলে রাখা হয়। অন্যদিকে রোম বিমানবন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য বিমানকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
এই ঘটনার পরদিন গতকাল সোমবার ড্যাস-৮ মডেলের একটি উড়োজাহাজের কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে চট্টগ্রামগামী একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। পরে যাত্রীদের অন্য একটি উড়োজাহাজে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।
অতি সাম্প্রতিক এ দুটি ঘটনা ছাড়াও চলতি আগস্ট মাসে আরও তিনটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে বিমান। ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী একটি বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কম্পন অনুভূত হওয়ায় মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসে। ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী একটি বোয়িং তিনটি টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হওয়ায় ১ ঘণ্টা উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে। ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একটি বোয়িংয়ে সমস্যা দেখা দিলে তা সারিয়ে ২ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় ফেরানো হয়।
বিমানের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য বলছে, ৬ আগস্ট মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসা ব্যাংককগামী বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি প্রায় আট মাস হ্যাঙ্গারে রেখে মেরামত করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, মেরামতের পর যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা ছাড়া সেটিকে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করা হয় এবং আকাশে ওঠার পরই নতুন করে ত্রুটি দেখা দেয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিমানের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়; বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রক্ষণাবেক্ষণ-ব্যবস্থার প্রতিফলন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বহরের উড়োজাহাজগুলো নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যবেক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার আওতায় না আসায় ছোটখাটো কারিগরি সমস্যা সময়মতো ধরা পড়ছে না। ফলে এসব ত্রুটি ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে উড্ডয়ন-নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, যাত্রীদের জীবনহানির ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনা বিমানের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাজারে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম পুনর্গঠনের প্রয়োজন, সেখানে বারবার এই বিপত্তি যাত্রীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। যদিও বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি ত্রুটি সমাধানের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিমানের বহরের বেশির ভাগ উড়োজাহাজ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বয়সজনিত কারণে নানা ধরনের ত্রুটি ও প্রযুক্তিগত বিচ্যুতি নিয়মিতভাবে দেখা দিচ্ছে। এর ফলে যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হচ্ছে।
গত জুলাই মাসেও বিমানের উড়োজাহাজে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ১৬ জুলাই দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘চাকায় ত্রুটি’র কারণে একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার গ্রাউন্ডেড হয়, যা মেরামতের পর ৩০ ঘণ্টা বিলম্বে দেশে ফেরে। ২৪ জুলাই দুবাই থেকে আসা আরেকটি ড্রিমলাইনারের ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়ায় সেটি চট্টগ্রামে ফিরে আসে এবং ত্রুটি সারিয়ে ২ ঘণ্টা পর আবার ঢাকায় যায়। ২৮ জুলাই দাম্মামগামী একটি বোয়িং ৭৭৭-ইআর কেবিন প্রেশারের ত্রুটির সংকেত পেয়ে ঢাকায় ফিরে আসে, পরে যাত্রীদের অন্য উড়োজাহাজে পাঠানো হয়। ৩০ জুলাই শারজা বিমানবন্দরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি বোয়িং ৭৩৭ ছয় ঘণ্টা আটকে থাকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম রওশন কবীর বলেন, যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালিত হচ্ছে। কোনো উড়োজাহাজে সামান্যতম ত্রুটি শনাক্ত হলে তা শতভাগ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি আকাশে ওড়ানো হয় না। তিনি আরও বলেন, বিমানের দক্ষ মেইনটেন্যান্স টিম দ্রুত যেকোনো কারিগরি সমস্যা মেরামত করে থাকে এবং বিলম্ব হলে যাত্রীদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, খাবার সরবরাহসহ নিয়মিত সেবা নিশ্চিত করা হয়।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি বোয়িং। এগুলোর মধ্যে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং ছয়টি ন্যারোবডি বোয়িং ৭৩৭। এ ছাড়া স্বল্প দূরত্বের রুটে চলাচলের জন্য বহরে পাঁচটি ড্যাশ-৮০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। তবে এসব উড়োজাহাজের বড় একটি অংশ প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে থাকে, যা সরাসরি ফ্লাইট শিডিউলে বিঘ্ন ঘটায় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ায়।
বহর প্রসঙ্গে বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের এই ভোগান্তি কমাতে দুটি নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং আরও কয়েকটি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। লিজ নেওয়া উড়োজাহাজগুলো দ্রুতই বহরে যুক্ত হবে; তবে ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাঁর মতে, নতুন উড়োজাহাজ সংযোজন করা হলে বহরের সক্ষমতা বাড়বে এবং ফ্লাইট শিডিউল বিঘ্নিত হওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
প্রসঙ্গত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে। ওই বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি ফকার এফ-২৭ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েকবার অবতরণের চেষ্টার পর রানওয়ের ৫০০ মিটার আগে মুখ থুবড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৪৯ জন। এটাই বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইটের একমাত্র বড় ধরনের দুর্ঘটনা, যেখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
গত এক মাসে উড়াল দেওয়ার আগে-পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অন্তত ৯টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তবে আশার কথা হলো, কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে অলৌকিকভাবে। যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদ থাকেলেও ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই আকাশ পরিবহন সংস্থার নিরাপত্তার মান ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের তথ্য বলছে, গত ৩০ দিনে ঢাকাসহ আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুর রুটের একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে মাঝ আকাশে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হয়ে ফেরত আসতে হয়েছে, কোথাও ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে। কিছু ফ্লাইট যাত্রা শুরু করার পরই মিয়ানমার বা ভারতের আকাশ থেকে ফিরে আসে, আবার কিছু ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে রানওয়েতে আটকে যায়। এর ফলে শত শত যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে, অনেকের সংযোগ ফ্লাইট মিস হয়েছে, কেউ কেউ গন্তব্যে যেতে পারেননি।
এই অবস্থায় অভিযোগ উঠেছে, বিমানের হ্যাঙ্গারে কর্মরত প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে দায়সারা কাজ করছেন। একাধিক সূত্র জানায়, নির্ধারিত ‘চেক’ ও ‘সার্ভিসিং’ সঠিকভাবে না হওয়া, অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর ঘাটতি এবং যন্ত্রাংশের অভাবে ত্রুটি বেড়ে চলছে।
একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় চলতি মাসে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে যেকোনো উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার (১০ আগস্ট) বিমানের প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন এয়ারলাইনসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু এসব বৈঠক ও জরুরি নির্দেশনা কোনো কাজে আসছে না। উল্টো রোববার উড়োজাহাজের ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটির কারণে রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে ‘গ্রাউন্ডেড’ করতে হয় বিমানের একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার।
প্রকৌশলীরা উড়োজাহাজটির ডানার ফ্ল্যাপে ত্রুটি শনাক্ত করেন, যা উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। লন্ডন থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পাঠানোর পর মেরামত করে একই উড়োজাহাজে যাত্রীদের দেশে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকল্প কোনো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে না পেরে ২৬২ যাত্রীকে বিমানের খরচে হোটেলে রাখা হয়। অন্যদিকে রোম বিমানবন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য বিমানকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
এই ঘটনার পরদিন গতকাল সোমবার ড্যাস-৮ মডেলের একটি উড়োজাহাজের কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে চট্টগ্রামগামী একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। পরে যাত্রীদের অন্য একটি উড়োজাহাজে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।
অতি সাম্প্রতিক এ দুটি ঘটনা ছাড়াও চলতি আগস্ট মাসে আরও তিনটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে বিমান। ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী একটি বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কম্পন অনুভূত হওয়ায় মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসে। ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী একটি বোয়িং তিনটি টয়লেটের ফ্লাশ বিকল হওয়ায় ১ ঘণ্টা উড়ে ঢাকায় ফিরে আসে। ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর একটি বোয়িংয়ে সমস্যা দেখা দিলে তা সারিয়ে ২ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকায় ফেরানো হয়।
বিমানের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য বলছে, ৬ আগস্ট মিয়ানমারের আকাশ থেকে ফিরে আসা ব্যাংককগামী বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি প্রায় আট মাস হ্যাঙ্গারে রেখে মেরামত করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, মেরামতের পর যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা ছাড়া সেটিকে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করা হয় এবং আকাশে ওঠার পরই নতুন করে ত্রুটি দেখা দেয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিমানের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়; বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রক্ষণাবেক্ষণ-ব্যবস্থার প্রতিফলন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বহরের উড়োজাহাজগুলো নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যবেক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার আওতায় না আসায় ছোটখাটো কারিগরি সমস্যা সময়মতো ধরা পড়ছে না। ফলে এসব ত্রুটি ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে উড্ডয়ন-নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, যা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, যাত্রীদের জীবনহানির ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধারাবাহিক যান্ত্রিক ত্রুটির এসব ঘটনা বিমানের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাজারে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম পুনর্গঠনের প্রয়োজন, সেখানে বারবার এই বিপত্তি যাত্রীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। যদিও বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি ত্রুটি সমাধানের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিমানের বহরের বেশির ভাগ উড়োজাহাজ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বয়সজনিত কারণে নানা ধরনের ত্রুটি ও প্রযুক্তিগত বিচ্যুতি নিয়মিতভাবে দেখা দিচ্ছে। এর ফলে যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হচ্ছে।
গত জুলাই মাসেও বিমানের উড়োজাহাজে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ১৬ জুলাই দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘চাকায় ত্রুটি’র কারণে একটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার গ্রাউন্ডেড হয়, যা মেরামতের পর ৩০ ঘণ্টা বিলম্বে দেশে ফেরে। ২৪ জুলাই দুবাই থেকে আসা আরেকটি ড্রিমলাইনারের ল্যান্ডিং গিয়ারের দরজা ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়ায় সেটি চট্টগ্রামে ফিরে আসে এবং ত্রুটি সারিয়ে ২ ঘণ্টা পর আবার ঢাকায় যায়। ২৮ জুলাই দাম্মামগামী একটি বোয়িং ৭৭৭-ইআর কেবিন প্রেশারের ত্রুটির সংকেত পেয়ে ঢাকায় ফিরে আসে, পরে যাত্রীদের অন্য উড়োজাহাজে পাঠানো হয়। ৩০ জুলাই শারজা বিমানবন্দরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি বোয়িং ৭৩৭ ছয় ঘণ্টা আটকে থাকে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম রওশন কবীর বলেন, যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালিত হচ্ছে। কোনো উড়োজাহাজে সামান্যতম ত্রুটি শনাক্ত হলে তা শতভাগ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি আকাশে ওড়ানো হয় না। তিনি আরও বলেন, বিমানের দক্ষ মেইনটেন্যান্স টিম দ্রুত যেকোনো কারিগরি সমস্যা মেরামত করে থাকে এবং বিলম্ব হলে যাত্রীদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, খাবার সরবরাহসহ নিয়মিত সেবা নিশ্চিত করা হয়।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি বোয়িং। এগুলোর মধ্যে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং ছয়টি ন্যারোবডি বোয়িং ৭৩৭। এ ছাড়া স্বল্প দূরত্বের রুটে চলাচলের জন্য বহরে পাঁচটি ড্যাশ-৮০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। তবে এসব উড়োজাহাজের বড় একটি অংশ প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে থাকে, যা সরাসরি ফ্লাইট শিডিউলে বিঘ্ন ঘটায় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ায়।
বহর প্রসঙ্গে বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের এই ভোগান্তি কমাতে দুটি নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং আরও কয়েকটি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। লিজ নেওয়া উড়োজাহাজগুলো দ্রুতই বহরে যুক্ত হবে; তবে ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাঁর মতে, নতুন উড়োজাহাজ সংযোজন করা হলে বহরের সক্ষমতা বাড়বে এবং ফ্লাইট শিডিউল বিঘ্নিত হওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
প্রসঙ্গত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালে। ওই বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি ফকার এফ-২৭ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েকবার অবতরণের চেষ্টার পর রানওয়ের ৫০০ মিটার আগে মুখ থুবড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৪৯ জন। এটাই বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইটের একমাত্র বড় ধরনের দুর্ঘটনা, যেখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন। বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।
২৯ মিনিট আগে
টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ।
২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।
বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বঙ্গভবনে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।
এর আগে, ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত), তাহমিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তফসিল সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।
বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বঙ্গভবনে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।
এর আগে, ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত), তাহমিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তফসিল সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
১২ আগস্ট ২০২৫
টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ।
২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।
৩ ঘণ্টা আগেবাসস, ঢাকা

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।
সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’
এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।
বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।
নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।
সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’
এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।
বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।
নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
১২ আগস্ট ২০২৫
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন। বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।
২৯ মিনিট আগে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ।
২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সমসাময়িক বিষয়ে আজ বুধবার বেলা ৩টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আসিফ মাহমুদের সংবাদ সম্মেলন হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
সমসাময়িক কোন বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন, মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।
আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ভাষণের রেকর্ড করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও আজ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
উপদেষ্টার পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা না থাকলেও তফসিল ঘোষণার আগে সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। তাঁদের আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ওই বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন আসিফ মাহমুদ।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সমসাময়িক বিষয়ে আজ বুধবার বেলা ৩টায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আসিফ মাহমুদের সংবাদ সম্মেলন হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
সমসাময়িক কোন বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন, মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।
আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ভাষণের রেকর্ড করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও আজ পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
উপদেষ্টার পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা না থাকলেও তফসিল ঘোষণার আগে সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। তাঁদের আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ওই বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন আসিফ মাহমুদ।

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
১২ আগস্ট ২০২৫
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন। বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।
২৯ মিনিট আগে
টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগে
মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।
সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রায়পুরা অঞ্চলে ১৪টি হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ তখনকার বিশাল, প্রশস্ত মেঘনা পার হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শত শত নৌকার সাহায্যে অবশিষ্ট সেনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করে।
প্রচণ্ড চাপে পড়ে আগের দিন ঢাকায় পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও গভর্নর মালেক সৈন্যসহ পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন দাউদকান্দির পতনের পর তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, ঢাকাই যৌথ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য। পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্ণ অনুমোদন লাভ করে।
সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর রায়পুরায় অবতরণের পর প্রায় ৩ ঘণ্টা ঢাকার পাকিস্তানি সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর বিমান হামলা চলে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা, গণহত্যার অন্যতম সহযোগী রাও ফরমান আলী ঢাকায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরিকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আয়োজন করার আবেদন জানান। বাঙালিদের ওপর ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চলার পর এত দিনে এসে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং এই অঞ্চলে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এ প্রস্তাব জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।
নিরাপত্তা পরিষদে রাও ফরমান আলীর এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ চলার সময় হঠাৎ খবর আসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। ঘটনা হচ্ছে, খবরটি ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার ইয়াহিয়াকে জানান, পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হয়েছে। এ কারণেই ইয়াহিয়ার মত বদলে যায়। পাকিস্তান নিজে থেকে ‘সম্মানজনকভাবে’ সেনা প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগী হলেও সেই উদ্যোগকে সমর্থন না করে মার্কিন সরকার বরং তা রদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তার ওপর ভারতকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করানোর তাগিদ দিয়ে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে দুই দফা বার্তা পাঠান। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে ভারতকে সম্মত করতে ব্রেজনেভের ওপর চাপের মাত্রা বাড়ানো হয়। তাঁকে জানানো হয়, ভারত যদি এরপরও সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
উপমহাদেশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে পারে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালো করেই জানা ছিল। সোভিয়েত সরকার তাদের নৌবাহিনীকে সতর্ক রাখে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের যাত্রারম্ভের আগেই সোভিয়েতরা তাদের ভারত মহাসাগরীয় নৌবহরের শক্তি বৃদ্ধি শুরু করে।
১০ ডিসেম্বর মার্কিন সপ্তম নৌবহর চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযোগকারী পাঁচ শ’ মাইল দীর্ঘ মালাক্কা প্রণালির ওপারে ছিল। ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের সমাবেশ তখন সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় জানা যায়, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি জানার জন্যই সোভিয়েত সরকার কসমস নামের নজরদারি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।
এদিকে চূড়ান্ত পর্বের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের আশঙ্কায় ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকেন অনেক সাধারণ মানুষ। আগের দিন সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই হবে বলে মুক্তিযোদ্ধারা লোকজনকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। অনেক লোককে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন, পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে রিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে (সিএনজি অটোর আগের সংস্করণ) করে শহর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ লটবহর মাথায় নিয়ে হেঁটেই চলেছেন। এ যেন ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ঢাকা ছাড়ার যে ঢল নেমেছিল কিছুটা প্রতিচ্ছবি।

মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক অবস্থানের পতনে মুক্ত হচ্ছিল বাংলাদেশের একেকটি অঞ্চল। এগিয়ে আসছিল স্বাধীনতার মুহূর্তটি। যদিও ঠিক কখন, কীভাবে সেদিনটি আসবে, তখনো তা স্পষ্ট নয় সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সবাই অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছিল।
সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর রায়পুরা অঞ্চলে ১৪টি হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ তখনকার বিশাল, প্রশস্ত মেঘনা পার হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শত শত নৌকার সাহায্যে অবশিষ্ট সেনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম পরিবহনে সহায়তা করে।
প্রচণ্ড চাপে পড়ে আগের দিন ঢাকায় পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও গভর্নর মালেক সৈন্যসহ পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেদিন দাউদকান্দির পতনের পর তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, ঢাকাই যৌথ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য। পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পূর্ণ অনুমোদন লাভ করে।
সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর রায়পুরায় অবতরণের পর প্রায় ৩ ঘণ্টা ঢাকার পাকিস্তানি সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর বিমান হামলা চলে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা, গণহত্যার অন্যতম সহযোগী রাও ফরমান আলী ঢাকায় অবস্থানকারী জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরিকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আয়োজন করার আবেদন জানান। বাঙালিদের ওপর ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চলার পর এত দিনে এসে তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং এই অঞ্চলে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এ প্রস্তাব জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন।
নিরাপত্তা পরিষদে রাও ফরমান আলীর এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ চলার সময় হঠাৎ খবর আসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। ঘটনা হচ্ছে, খবরটি ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার ইয়াহিয়াকে জানান, পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হয়েছে। এ কারণেই ইয়াহিয়ার মত বদলে যায়। পাকিস্তান নিজে থেকে ‘সম্মানজনকভাবে’ সেনা প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগী হলেও সেই উদ্যোগকে সমর্থন না করে মার্কিন সরকার বরং তা রদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তার ওপর ভারতকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করানোর তাগিদ দিয়ে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভকে দুই দফা বার্তা পাঠান। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে ভারতকে সম্মত করতে ব্রেজনেভের ওপর চাপের মাত্রা বাড়ানো হয়। তাঁকে জানানো হয়, ভারত যদি এরপরও সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজে এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
উপমহাদেশের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ‘শক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে পারে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালো করেই জানা ছিল। সোভিয়েত সরকার তাদের নৌবাহিনীকে সতর্ক রাখে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের যাত্রারম্ভের আগেই সোভিয়েতরা তাদের ভারত মহাসাগরীয় নৌবহরের শক্তি বৃদ্ধি শুরু করে।
১০ ডিসেম্বর মার্কিন সপ্তম নৌবহর চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরকে সংযোগকারী পাঁচ শ’ মাইল দীর্ঘ মালাক্কা প্রণালির ওপারে ছিল। ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের সমাবেশ তখন সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় জানা যায়, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি জানার জন্যই সোভিয়েত সরকার কসমস নামের নজরদারি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে।
এদিকে চূড়ান্ত পর্বের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের আশঙ্কায় ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে থাকেন অনেক সাধারণ মানুষ। আগের দিন সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই হবে বলে মুক্তিযোদ্ধারা লোকজনকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। অনেক লোককে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন, পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে রিকশা বা বেবিট্যাক্সিতে (সিএনজি অটোর আগের সংস্করণ) করে শহর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ লটবহর মাথায় নিয়ে হেঁটেই চলেছেন। এ যেন ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ঢাকা ছাড়ার যে ঢল নেমেছিল কিছুটা প্রতিচ্ছবি।

আকাশে যেন দুর্যোগের মেঘ। বিপদ হেঁটে চলেছে পাশ ঘেঁষে, আর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে বিমান। উড়ন্ত উড়োজাহাজে যেভাবে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
১২ আগস্ট ২০২৫
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন। বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।
২৯ মিনিট আগে
টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ।
২ ঘণ্টা আগে