শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সক্রিয় পাঁচজন আন্দোলনকারী সাত দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিখোঁজ রয়েছেন দু-একজন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও বেশ কয়েকজনকে নিয়মিত হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তদন্তে এখনো ভিন্ন কিছু নিশ্চিত না হওয়ায় পুলিশ বলছে, আপাতভাবে সংঘটিত খুনগুলো সাধারণ হত্যার ঘটনার মতোই। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তা মানতে চাইছে না। তাঁরা বলছেন, হত্যার ধরন এবং শিকারদের অভিন্ন পরিচয়ের কারণে তাঁদের সন্দেহ, কোনো একটি বিশেষ চক্রের হাতেই তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন।
সাম্প্রতিক এই আলোচিত শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনার মধ্যে কোনোটি অভ্যুত্থানে যুক্ত থাকার কারণেই হয়েছে বলে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে আন্দোলনকারী কেউ কেউ হত্যার হুমকি পাওয়া ও কয়েকটি ‘গুপ্তহত্যা’ ঘটার কথা বলেছে পুলিশ। এ কথা উঠে এসেছে পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়মিত অপরাধের তথ্য-উপাত্তে। পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিদিনের অপরাধ পর্যালোচনার তথ্যে বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ কলে হত্যার হুমকি দেওয়া ব্যক্তিরা ছাত্রদের গুপ্তহত্যার ঘটনায় জড়িত থাকতেও পারে।
পুলিশ, পরিবার ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ১২ ডিসেম্বর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাজবীর হোসেন শিহানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন নারায়ণগঞ্জে এআইইউবির শিক্ষার্থী মো. ওয়াজেদ সীমান্তকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে একটি লেক থেকে সুজানা আক্তার নামের এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে পরে সুজানার বন্ধু সাইনুর রশিদ ওরফে কাব্যের লাশও উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মৃত্যুর কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা হতে পারে মনে করা হলেও এ পর্যন্ত বিষয়টি ধোঁয়াশে। ১৮ ডিসেম্বরই চট্টগ্রামে জসিম উদ্দিন নামের এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
জুলাই-আগস্টে কোটাবিরোধী ও হাসিনা সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে নিজ নিজ এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওপরের ওই পাঁচ শিক্ষার্থী। এ কারণে তাঁদের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘গুপ্তহত্যা’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি ও সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীকেও বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এতে উল্লেখ করেন, ‘জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্র-জনতার ওপর ফ্যাসিবাদের দোসররা কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে এবং ফোনকলে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে এবং এটি ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাহস জোগাচ্ছে।’
১৭ ডিসেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলের একটি লেকের পানিতে ভেসে ওঠে ভাসানটেক সরকারি কলেজের ছাত্রী সুজানার লাশ। পাশেই পাওয়া যায় একটি হেলমেট। তার সূত্র ধরে সন্ধান মেলে সুজানার সঙ্গে থাকা বন্ধু কাব্যের লাশ। তাঁরা দুজনই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। বিজয় দিবসের রাতে তাঁরা নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পরদিন সুজানার লাশ উদ্ধার করা হয়। লেক থেকেই মোটরসাইকেলসহ কাব্যের লাশ উদ্ধার হয় তার এক দিন পর। সুজানার ভাই আতিয়ার বলেন, ‘আমাদের হিসাব কোনোভাবেই মিলছে না। আমরা নিশ্চিত, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
তবে পুলিশ এ ঘটনাকে নিছক সড়ক দুর্ঘটনা বলেছে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, রাতে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে বাইকের চালক রাস্তা দেখতে না পেয়ে লেকে পড়ে যান।
১২ ডিসেম্বর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজবীর হোসেন শিহান (২৬) বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ছুরিকাঘাতে খুন হন। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে শিহানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছয় ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আমিনুল ইসলাম বলেন, হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা একটি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য।
তবে পুলিশের ভাষ্য নিয়ে সন্দিহান শিহানের বাবা তানভীর রহমান বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা ঘটনা ঘটিয়ে সবার সামনে দিয়ে চলে গেল। কেউ বাধা দিল না। শুধু ছিনতাইয়ের জন্য কুপিয়ে মারা কী করে সম্ভব! আমি মনে করি, এর পেছনে অন্য কোনো চক্র রয়েছে।’
শিহানকে হত্যার দিনই নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকায় ছুরি মেরে হত্যা করা হয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থী মো. ওয়াজেদ সীমান্তকে (২০)। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও স্বজনেরা তা মানছেন না। তাঁরা বলছেন, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সীমান্ত। তাঁর পরিবারও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সীমান্তের বাবা আলম পারভেজ বলেন, ‘আসলে বুঝতে পারছি না কী থেকে কী হয়েছে।’ নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশের এসপি প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘সীমান্ত হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি ছিনতাইকারী চক্রের কাজ।’
১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বন্দর থানার ময়লার ডিপো টিসি কলোনি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জসিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুদিনের মাথায় জসিম হত্যার ‘মূল হোতা’সহ দুজনকে গ্রেপ্তারের দাবি করে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, ময়লা ফেলা নিয়ে বিরোধের জেরে জসিমকে খুন করা হয়। তবে তাঁর চাচা বশির উদ্দিন বলেন, ‘শুধু এ কারণে এভাবে কেউ কাউকে হত্যা করে না। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় এসব কর্মকাণ্ড ঘটছে।’
তালিকায় নিখোঁজ ও হুমকিও
সহসমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান ২০ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ থাকার পর গত মঙ্গলবার হলে ফিরে আসেন। অসুস্থ থাকায় তাঁকে সেদিন রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে বিশদ জানানো হয়নি। খালিদের বাবা লুৎফর রহমান বলেছেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি খালিদকে ফোনে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করা আশিকুর রহমান নামের এক সমন্বয়ককেও ১৫ ডিসেম্বর ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশিকুর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি বলেন, অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাঁকে ‘আলাপ অ্যাপস’ থেকে কল করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় তিনি ও পরিবারের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়মিত অপরাধবিষয়ক তথ্যে ১৭ ডিসেম্বর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শাবাব হোসাইন মেহেরকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী খুন হওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মাত্র ৬ দিনের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। কোনো হত্যাকাণ্ডই আমাদের কাছে স্বাভাবিক লাগছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিটি হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সক্রিয় পাঁচজন আন্দোলনকারী সাত দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিখোঁজ রয়েছেন দু-একজন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও বেশ কয়েকজনকে নিয়মিত হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তদন্তে এখনো ভিন্ন কিছু নিশ্চিত না হওয়ায় পুলিশ বলছে, আপাতভাবে সংঘটিত খুনগুলো সাধারণ হত্যার ঘটনার মতোই। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তা মানতে চাইছে না। তাঁরা বলছেন, হত্যার ধরন এবং শিকারদের অভিন্ন পরিচয়ের কারণে তাঁদের সন্দেহ, কোনো একটি বিশেষ চক্রের হাতেই তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন।
সাম্প্রতিক এই আলোচিত শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনার মধ্যে কোনোটি অভ্যুত্থানে যুক্ত থাকার কারণেই হয়েছে বলে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে আন্দোলনকারী কেউ কেউ হত্যার হুমকি পাওয়া ও কয়েকটি ‘গুপ্তহত্যা’ ঘটার কথা বলেছে পুলিশ। এ কথা উঠে এসেছে পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়মিত অপরাধের তথ্য-উপাত্তে। পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিদিনের অপরাধ পর্যালোচনার তথ্যে বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ কলে হত্যার হুমকি দেওয়া ব্যক্তিরা ছাত্রদের গুপ্তহত্যার ঘটনায় জড়িত থাকতেও পারে।
পুলিশ, পরিবার ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ১২ ডিসেম্বর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাজবীর হোসেন শিহানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন নারায়ণগঞ্জে এআইইউবির শিক্ষার্থী মো. ওয়াজেদ সীমান্তকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে একটি লেক থেকে সুজানা আক্তার নামের এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে পরে সুজানার বন্ধু সাইনুর রশিদ ওরফে কাব্যের লাশও উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মৃত্যুর কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা হতে পারে মনে করা হলেও এ পর্যন্ত বিষয়টি ধোঁয়াশে। ১৮ ডিসেম্বরই চট্টগ্রামে জসিম উদ্দিন নামের এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
জুলাই-আগস্টে কোটাবিরোধী ও হাসিনা সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে নিজ নিজ এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওপরের ওই পাঁচ শিক্ষার্থী। এ কারণে তাঁদের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘গুপ্তহত্যা’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি ও সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীকেও বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এতে উল্লেখ করেন, ‘জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্র-জনতার ওপর ফ্যাসিবাদের দোসররা কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে এবং ফোনকলে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে এবং এটি ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাহস জোগাচ্ছে।’
১৭ ডিসেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলের একটি লেকের পানিতে ভেসে ওঠে ভাসানটেক সরকারি কলেজের ছাত্রী সুজানার লাশ। পাশেই পাওয়া যায় একটি হেলমেট। তার সূত্র ধরে সন্ধান মেলে সুজানার সঙ্গে থাকা বন্ধু কাব্যের লাশ। তাঁরা দুজনই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। বিজয় দিবসের রাতে তাঁরা নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পরদিন সুজানার লাশ উদ্ধার করা হয়। লেক থেকেই মোটরসাইকেলসহ কাব্যের লাশ উদ্ধার হয় তার এক দিন পর। সুজানার ভাই আতিয়ার বলেন, ‘আমাদের হিসাব কোনোভাবেই মিলছে না। আমরা নিশ্চিত, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
তবে পুলিশ এ ঘটনাকে নিছক সড়ক দুর্ঘটনা বলেছে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, রাতে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে বাইকের চালক রাস্তা দেখতে না পেয়ে লেকে পড়ে যান।
১২ ডিসেম্বর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজবীর হোসেন শিহান (২৬) বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ছুরিকাঘাতে খুন হন। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে শিহানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছয় ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আমিনুল ইসলাম বলেন, হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা একটি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য।
তবে পুলিশের ভাষ্য নিয়ে সন্দিহান শিহানের বাবা তানভীর রহমান বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা ঘটনা ঘটিয়ে সবার সামনে দিয়ে চলে গেল। কেউ বাধা দিল না। শুধু ছিনতাইয়ের জন্য কুপিয়ে মারা কী করে সম্ভব! আমি মনে করি, এর পেছনে অন্য কোনো চক্র রয়েছে।’
শিহানকে হত্যার দিনই নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকায় ছুরি মেরে হত্যা করা হয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থী মো. ওয়াজেদ সীমান্তকে (২০)। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও স্বজনেরা তা মানছেন না। তাঁরা বলছেন, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সীমান্ত। তাঁর পরিবারও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সীমান্তের বাবা আলম পারভেজ বলেন, ‘আসলে বুঝতে পারছি না কী থেকে কী হয়েছে।’ নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশের এসপি প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘সীমান্ত হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি ছিনতাইকারী চক্রের কাজ।’
১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বন্দর থানার ময়লার ডিপো টিসি কলোনি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জসিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুদিনের মাথায় জসিম হত্যার ‘মূল হোতা’সহ দুজনকে গ্রেপ্তারের দাবি করে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, ময়লা ফেলা নিয়ে বিরোধের জেরে জসিমকে খুন করা হয়। তবে তাঁর চাচা বশির উদ্দিন বলেন, ‘শুধু এ কারণে এভাবে কেউ কাউকে হত্যা করে না। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় এসব কর্মকাণ্ড ঘটছে।’
তালিকায় নিখোঁজ ও হুমকিও
সহসমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান ২০ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ থাকার পর গত মঙ্গলবার হলে ফিরে আসেন। অসুস্থ থাকায় তাঁকে সেদিন রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে বিশদ জানানো হয়নি। খালিদের বাবা লুৎফর রহমান বলেছেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি খালিদকে ফোনে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করা আশিকুর রহমান নামের এক সমন্বয়ককেও ১৫ ডিসেম্বর ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশিকুর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি বলেন, অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাঁকে ‘আলাপ অ্যাপস’ থেকে কল করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় তিনি ও পরিবারের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়মিত অপরাধবিষয়ক তথ্যে ১৭ ডিসেম্বর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শাবাব হোসাইন মেহেরকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী খুন হওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মাত্র ৬ দিনের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। কোনো হত্যাকাণ্ডই আমাদের কাছে স্বাভাবিক লাগছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক এনামুল হক সাগর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিটি হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
জ্বালানি তেলের দাম লিটারে এক টাকা বেড়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার ১ টাকা বেড়ে ১০৫ টাকা, কেরোসিন ১০৪ টাকা থেকে ১০৫ টাকা এবং অকটেন ১২৬ টাকা ও পেট্রল ১২২ টাকায় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে...
৩ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনের বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; এটি শুধুই একটি বলিউডি রোমান্টিক কমেডি। আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস ফেসবুকে তাদের ভেরিফায়েড..
৩ ঘণ্টা আগেমজুরি বৈষম্য দূরীকরণ, চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিজেদের অধিকার আদায় করতে শুধু সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যথেষ্ট নয়, বরং আন্দোলন–সংগ্রামও চালিয়ে যেতে হবে—এমনটাই বলেছেন খোদ সরকারের শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।
৫ ঘণ্টা আগেচাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে পরপর দুই দিন সড়ক অবরোধ করেছেন। এরপর আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে দেখা করেছেন। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত এসব পুলিশ সদস্যের আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য ডিআইজি পদ
৫ ঘণ্টা আগে