Ajker Patrika

চলমান সংঘাত বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাসস
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৫: ৩৭
Thumbnail image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংঘাতের অবসান ঘটাতে বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জাতিগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই যুদ্ধরত দেশগুলো এবং জড়িত আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা জরুরি। 

প্রধানমন্ত্রী আজ শুক্রবার সকালে ঢাকায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এ অংশ নিয়ে এক ভাষণে এ কথা বলেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ১২৫টি দেশের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। 

তিনি বলেন, আজকের শীর্ষ সম্মেলনের থিম, সবার সঙ্গে সবার প্রবৃদ্ধির জন্য সবার বিশ্বাসের সঙ্গে সবচেয়ে সময়োপযোগী কারণ, আমাদের বিশ্ব আজ যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা হলো ‘বিশ্বাসের ঘাটতি’। তিনি আরও বলেন, ‘যেমনটা আছে আমাদের বিশ্বের অসহনীয় দারিদ্র্য, অবাঞ্ছিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়মূলক হুমকি।’ 

এ ছাড়া শেখ হাসিনা বলেন, গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগ হিসেবে এখন নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, এই সংকটময় মুহূর্তে বিশ্বকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রত্যেকের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী নির্মম হত্যাযজ্ঞের মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক, অমানবিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ‘এখন সময় আমাদের সবার এক বিশ্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘাতের অবসান দাবি করার।’ বলেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৩’ আহ্বান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন। 

তিনি বলেন, ‘জি-২০ প্রেসিডেন্সির মাধ্যমে ক্রমাগত গ্লোবাল সাউথের আওয়াজ তুলে ধরার জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।’ 

সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এটাই সময় গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে বৃহত্তর বৈশ্বিক মঙ্গলের জন্য এক পরিবার, এক ভবিষ্যতের জন্য এক সুরে কথা বলতে হবে। আমাদের একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে ‘পাঁচটি সি’-এর পথপ্রদর্শক নীতি নিয়ে। যেগুলো হচ্ছে—সমাবর্তন, সহযোগিতা, যোগাযোগ, সৃজনশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।’ 

শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘাতে বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে হামলার নিন্দা জানান। 

মোদি আরও বলেন, ভারত ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, গ্লোবাল সাউথ আমাদের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। 

তিনি বলেন, ‘তবে আমরা প্রায়শই বিভিন্ন আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জের ঝুঁকিতে থাকি।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, প্রত্যেকের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আরও ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব তৈরি করতে গ্লোবাল সাউথের জন্য আরও জায়গা ও বলার অনুমতি দিয়ে এগুলো সমাধান করা দরকার। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনা মূল্যে আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু অভিযোজন অর্জনের বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।’ 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল সাউথ ও বিশ্বের উন্নতির জন্য পাঁচটি সুপারিশ করেছেন। সুপারিশগুলো হলো— 

এক: শান্তি প্রচারের প্রবল সমর্থক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি মানবতার সার্বিক কল্যাণের জন্য বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। গ্লোবাল সাউথকে অবশ্যই একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট বজায় রাখতে হবে। 

দুই: নারী বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক হিসেবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রাণবন্ত সমাজ গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী নারী নেত্রী হিসেবে আমি নিশ্চিতভাবে জানি যে নারীর ক্ষমতায়ন একটি উজ্জ্বল এবং আরও ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত প্রয়োজন। 

তিন: বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা অত্যাবশ্যক। গ্লোবাল সাউথে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বর্ধিত অর্থায়ন এবং প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তি স্থানান্তর অপরিহার্য। 

চার: প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গ্লোবাল সাউথের উচিত সবার জন্য উন্নত জীবন প্রদানের জন্য এবং আয়োজক ও স্বদেশ উভয় দেশেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অভিবাসনকে প্রবাহিত করা। 

পাঁচ: স্বল্পোন্নত দেশগুলো কোভিড-১৯ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সংঘাতের ফলে বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিশেষে আমি বিশ্ব মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য সাউথ-সাউথ ও ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছি। আমি উন্নয়ন অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং স্টেকহোল্ডারদের উদারভাবে একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য গ্লোবাল সাউথকে সমর্থন করার আহ্বান জানাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত