Ajker Patrika

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়: প্রধানমন্ত্রী 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়: প্রধানমন্ত্রী 

করোনা মহামারিতে বিশ্বের যে গুটিকয়েক দেশ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের স্বচ্ছ লক্ষ্য, বিচক্ষণ পরিকল্পনা, সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কঠোর পরিশ্রমী মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং উদ্যমী উদ্যোক্তাদের কারণে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।   

আজ বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের চেম্বার্স অব কমার্স এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে দুই দেশের মধ্যে যৌথ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে সমঝোতা স্মারক সই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। আবুধাবির সফরকালীন আবাসস্থল থেকে দুবাই প্রদর্শনী কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। 

দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে এফবিসিসিআই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্স একটি সমঝোতা স্মারক সই করেন। সমঝোতা স্মারকে সই করেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরোই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, বাংলাদেশকে আপনার ব্যবসার গন্তব্য বানান। আমি আপনাদের সকলকে আশ্বস্ত করছি, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার স্থান।’ 

বাংলাদেশে বিশ্বের সেরা বিনিয়োগ অবকাঠামোগত সহায়তা নিশ্চিত প্রস্তুত বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশে বিশ্বের সেরা গন্তব্য হিসেবে খুঁজে পান তার জন্য বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের নীতিগত এবং অবকাঠামোগত সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।’  

ব্যবসায় বাংলাদেশের দুর্দান্ত ভূ-কৌশলগত অবস্থান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন রুটের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এছাড়াও জনবহুল এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে রয়েছে।’  

বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এ অঞ্চলের আশপাশের বাজারগুলোতে উন্মুক্ত প্রবেশ সুবিধা রয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য এবং ভবিষ্যতের উৎপাদন এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ ১৬৮ মিলিয়নের বেশি মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজার অফার করছে। এই মানুষগুলো তরুণ, উদ্যমী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’ 

সাশ্রয়ী মূল্যে শ্রমিক পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের শ্রমশক্তি কঠোর পরিশ্রমী, এ শ্রমশক্তি সাশ্রয়ী এবং তারা দ্রুত শিখতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। চামড়া, পরিবেশবান্ধব পাট-পাটজাত পণ্য, খাদ্য এবং সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদানেও বাংলাদেশ ভালো করছে।’ সারা দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার সঙ্গে বাংলাদেশের সাড়ে ৬ লাখের বেশি পুরোপুরি দক্ষ ফ্রিলান্সার ডেভেলপার্স থাকার কথা উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
 
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলো বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। কৃষি খাতে উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, উৎপাদনশীলতা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’
 
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়ণ, শিল্পায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার-উদ্ভাবন-বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে জনগণের প্রযুক্তিগত কানেকটিভিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আমাদের উৎপাদনগুলোকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে আরও মসৃণভাবে সংযুক্ত করা।
 
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এখানে আপনাদের উষ্ণ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আসুন আমাদের স্বপ্ন এবং লক্ষ্যপূরণের যাত্রায় সঙ্গী হোন। 

সেন্টার পর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) ধারণা মতে ২০৩৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘উন্নয়ন মডেল’ এর দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর ওপর ভর করে আরও উন্নয়ন করা যায়। বাংলাদেশ তার ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে শিগগিরই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে।’ 

দুবাই প্রান্তে থেকে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জেইয়োদি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরোই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত