Ajker Patrika

সময়োপযোগী চাকরির প্রস্তুতি যেভাবে

মো. হারুনুর রশিদ 
সময়োপযোগী চাকরির প্রস্তুতি যেভাবে

একটি আপ্তবাক্য মনে রাখতে হবে, সেটা হলো ‘কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে’। পরিশ্রম ছাড়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখা সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে হলে শিখতে হবে নিয়মিত, অভ্যস্ত হতে হবে অধ্যবসায়ের। আর বিষয়টি যদি চাকরির প্রস্তুতি হয়, তাহলে তো কথায়ই নেই। কারণ, নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে প্রার্থীদের কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একজন প্রার্থী যেভাবে সময়োপযোগী চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারেন, চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক।

ভাষা শেখা

যোগাযোগ-দক্ষতার মূলে আছে ভাষা শিক্ষা। সর্বাগ্রে নিজের মাতৃভাষা বাংলা শুদ্ধভাবে বলা, শোনা, পড়া ও লেখার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজির চারটি মৌলিক দক্ষতায় (লিসনিং, স্পিকিং, রিডিং, রাইটিং) যত বেশি পারদর্শী হবেন, প্রতিযোগিতায় আপনি তত এগিয়ে থাকবেন। নিয়োগদাতাদের অভিযোগ, চাকরিপ্রার্থীরা বাংলা ভাষায়ও দক্ষ নয়। তাই নিজের মাতৃভাষা ও ইংরেজি–দুই ভাষাতেই পারদর্শিতা এখন জরুরি।

দ্রুত বুঝে নেওয়ার দক্ষতা

পড়া বিষয় দ্রুত বোঝার ক্ষমতা একান্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, এটাই মানুষ বনাম মেশিনের দ্বন্দ্বে মানুষকে বিজয়ী করতে পারে। শুধু মুখস্থ নয়, বিষয়টি বিশ্লেষণ করে বুঝে নেওয়ার ক্ষমতাই আপনাকে প্রকৃত জ্ঞানী করে তুলবে। বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা থাকলে আপনি যেকোনো তথ্য বা সমস্যাকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।

ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং ও ইনস্ট্যান্ট থিংকিং

‘ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং স্কিল’ মানে হলো যেকোনো বিষয়ে তৎক্ষণাৎ লেখার দক্ষতা। পরীক্ষায় বা চাকরির লিখিত অংশে এটি আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। এ ছাড়া প্রয়োজন ‘ইনস্ট্যান্ট থিংকিং’ বা উপস্থিত বুদ্ধি। এর জন্য চাই বিশ্লেষণাত্মক মনোভাব, যা গড়ে ওঠে পড়াশোনা, চিন্তা ও ধ্যানের অভ্যাসে। সব সময় জানার আগ্রহ আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।

ডিজিটাল লিটারেসি

বর্তমান যুগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মৌলিক জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিশেষ করে জানতে হবে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল ব্যবহার, ডাউনলোড ইত্যাদি। এসব না জানলে আপনি অজান্তেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও চাকরি পাওয়ার জন্য ডিজিটাল লিটারেসি অপরিহার্য।

টেকনিক্যাল জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে ভালো চাকরি-নির্ভর করছে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর, সার্টিফিকেট বা সিজিপিএ নয়। যেকোনো ক্ষেত্রে (হার্ড বা সফট) বিশেষায়িত টেকনিক্যাল জ্ঞান আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। এর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সংযোগ জোরদার করা দরকার। যাতে বাস্তব অনুশীলনের সুযোগ বাড়ে।

অভিযোজন ক্ষমতা

মানবজাতি টিকে আছে অভিযোজন ক্ষমতার কারণে। একইভাবে ব্যক্তিজীবনে অহেতুক অহংবোধ ও পুরোনো ধ্যানধারণা ছেড়ে পরিবর্তনের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে মানিয়ে নিতে হবে। নতুন দক্ষতা যত দ্রুত শিখতে পারবেন, তত দ্রুতই পরিস্থিতি আপনাকে মূল্যবান করে তুলবেন। যাঁর অভিযোজন ক্ষমতা যত বেশি, তাঁর প্রাসঙ্গিক থাকার সম্ভাবনাও তত বেশি।

সুনাগরিক হওয়া

একজন সুনাগরিকের গুণাবলি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা, দেশপ্রেম, সহনশীলতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধ। এই গুণাবলি আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক এই সময়েও একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবে প্রাসঙ্গিক রাখবে।

চাকরির প্রস্তুতি মানে শুধু সনদ নয়, এটি নিরবচ্ছিন্ন শেখা, মানিয়ে নেওয়া ও নিজেকে উন্নত করার এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ভাষা, প্রযুক্তি, বিশ্লেষণক্ষমতা, উপস্থিত বুদ্ধি ও মানবিক গুণাবলির সমন্বয়েই আপনি হয়ে উঠবেন সময়োপযোগী, দক্ষ ও প্রাসঙ্গিক এক পেশাজীবী।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...