Ajker Patrika

অত্যন্ত সফল ব্যক্তিদের ১১টি ছোট অভ্যাস, মনোবিজ্ঞানীর গবেষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

স্কুলে মেধাবী শিক্ষার্থী, ক্রীড়াক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রতিভাধর খেলোয়াড় আর সংগীতে অসাধারণ শিশু প্রতিভাদের প্রশংসা করি। তবে সফলতার জন্য জন্মগত মেধা বা জিনিয়াস হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। বরং যাঁরা প্রতিদিন ছোট ছোট ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলেন, নিয়মিত চেষ্টা করেন, তাঁরাই শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছান।

এ ধরনের সফল ব্যক্তিদের নিয়ে গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুলের অধ্যাপক ও সাংগঠনিক মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম গ্রান্ট। তিনি তাঁর গবেষণায় দেখতে পান, শেখার প্রক্রিয়া তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন কেউ অর্জিত জ্ঞানকে নিজেদের জীবনে নিয়মিত প্রয়োগ করেন। তাঁর গবেষণায় সফল ব্যক্তিদের ১১টি অভ্যাস দেখতে পান, যেগুলো তাঁকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে।

১. তাঁরা অস্বস্তিকে খুঁজে নেন

শুধু শেখার চেষ্টা না করে, বরং নিজেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে হবে। । কারণ, অস্বস্তির মধ্যেই দ্রুত শেখার পথ লুকিয়ে থাকে। আপনি যদি সত্যিই কিছু ঠিকভাবে শিখতে চান, তাহলে শুরুতে সেটি ভুল বা অস্বস্তিকর বলেই মনে হবে–সেটাই স্বাভাবিক।

২. তাঁরা ভুলের বাজেট নির্ধারণ করেন

সফল ব্যক্তিরা মনে মনে প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে ন্যূনতম কতটি ভুল করবেন তা ঠিক করে নিন। যখন আপনি আগে থেকেই জানেন যে ভুল হবে, তখন তা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা কমে যায়। ফলে আপনি আরও দ্রুত শেখেন ও উন্নতি করেন।

৩. তাঁরা প্রশংসার চেয়ে পরামর্শ চান

তারা প্রশংসা বা সমালোচনার চেয়ে পরামর্শ পেতে আগ্রহী। ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া সাধারণত অতীতনির্ভর। এর মাধ্যমে নিজের প্রশংসা বা সমালোচনা শুনতে পারবেন। তবে পরামর্শ ভবিষ্যৎমুখী—এটি মানুষকে গঠনমূলকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে সহায়তা করে। আপনার সমালোচক বা প্রশংসাকারীদের কোচে পরিণত করতে পারেন শুধু একটি প্রশ্ন করে—‘পরেরবার আমি কীভাবে আরও ভালো করতে পারি?’

৪. কোন উৎসের তথ্য বিশ্বাস করবেন তা নির্ধারণ করেন

সব তথ্যকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি নয়, বরং কোনটা গ্রহণযোগ্য আর কোনটা এড়িয়ে চলা উচিত, তা বেছে নেওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস করার মতো তথ্য নির্ধারণের সময় তাঁরা তিনটি জিনিস বিবেচনা করুন—

১. তথ্যদাতা কতটা অভিজ্ঞ

২. তারা আপনাকে কতটা চেনে

৩. তারা আপনার কল্যাণ চায় কি না।

৫. নিখুঁত হওয়ার চেয়ে উচ্চমান ধরে রাখার চেষ্টা

প্রগতি আসে উচ্চ মান ধরে রাখার মাধ্যমে, প্রতিটি ত্রুটি মুছে ফেলার মাধ্যমে নয়। সবকিছুতে নিখুঁত হতে চাইলে কাজ থেমে যায়, শেখার গতি কমে। বরং কোন কোন ত্রুটি মেনে নেওয়া যায়, সেটি ঠিক করুন। ভেবে দেখুন, কোথায় সত্যিই সর্বোচ্চ মান দরকার আর কোথায় ‘ভালো’ হলেই চলবে।

৬. নিজেই নিজের চূড়ান্ত বিচারক

অন্যকে খুশি করার চেয়ে নিজেকে খুশি করা বেশি জরুরি। নিজের কাজ সবার সামনে প্রকাশ করার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—‘এটাই যদি আমার একমাত্র কাজ হয়, আমি কি গর্ববোধ করব?’

৭. দৈনন্দিন কাজকে আনন্দে পরিণত করেন

দীর্ঘমেয়াদি আগ্রহ ধরে রাখতে, চর্চাকে শুধুই কষ্টকর কাজ না বানিয়ে খেলাধুলার মতো আনন্দদায়ক করে তুলুন। মজা করে শেখার জন্য তৈরি করুন কিছু চ্যালেঞ্জ, যেমন—একজন লেখক প্রতিদিনে ৩০ মিনিটে ৫০০ শব্দ লেখার লক্ষ্য ঠিক করা বা একজন ভাষা শিখছেন, তাঁর নতুন শব্দগুলো দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সহজ হাসির গল্প তৈরি করা।

৮. নতুন পথ খুঁজে নেন

কখনো কখনো সামনে না গিয়ে পেছনে ফিরে নতুন পথ খুঁজে নেওয়াই এগিয়ে যাওয়ার উপায়। যখন কোনো পথে পৌঁছে গেলে রাস্তা বন্ধ মনে হয়, তখন পিছিয়ে এসে অন্য কোনো নতুন পথ খোঁজাই ভালো বিকল্প। মনে হতে পারে পিছিয়ে পড়ছেন, তবে এটি আসলে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।

৯. অন্যদের শেখানো

কোনো বিষয় ভালোভাবে শেখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেটা অন্যকে শেখানো। যখন আপনি কোনো জিনিস বোঝাতে যান, তখন সেটি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন—আর মনে রাখতেও সুবিধা হয়। এটি দলগতভাবে আরও বেশি কার্যকর, যেখানে প্রত্যেক সদস্য আলাদা আলাদা দক্ষতা বা তথ্য শেয়ার করেন।

১০. পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করেন

শুধুমাত্র মেধাবী ছাত্রছাত্রী বা সম্ভাবনাময় কর্মীদের জন্য নয়, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করেন। একটি ভালো ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যা পিছিয়ে থাকা বা দেরিতে সাফল্য অর্জনকারী ব্যক্তিদের নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করার সুযোগ দেয়।

১১. মানসিক টাইম ট্রাভেল

নিজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে কষ্ট হলে ভাবুন, ‘পাঁচ বছর আগের আপনি আজকের আপনাকে দেখে কতটা গর্বিত হতেন।’

১১. অতীতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন

যখন নিজের অগ্রগতি ভালোভাবে দেখতে বা মূল্যায়ন করতে কষ্ট হয়, তখন ভাবেন—পাঁচ বছর আগের আপনি আজকের অর্জনগুলো দেখে কতটা গর্বিত হতেন! অতীতের নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সফলতাকে বোঝার এই অভ্যাস আপনাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।

তথ্যসূত্র: সিএনবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত