অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে কোল্ডপ্লে-এর একটি কনসার্টে সহকর্মীকে জড়িয়ে ধরে দুলছিলেন মার্কিন কোম্পানি অ্যাস্টোনমার-এর সিইও। বিশাল স্ক্রিনে সেই দৃশ্য দেখেছে হাজার হাজার দর্শক। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে সেই ভিডিও। সিইও যে নারীকে জড়িয়ে ধরে দুলছিলেন তিনি সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে অ্যাস্ট্রোনমার। সিইওকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অ্যাস্ট্রোনমার প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি আমাদের পথ দেখিয়েছে, আমরা তার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের নেতাদের কাছ থেকে আচরণ ও জবাবদিহির সর্বোচ্চ মান আশা করা হয়।’
সিইও-এর এমন আচরণের বিষয়ে তদন্ত করছে অ্যাস্টোনমার। তাঁর চাকরিও যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের সম্পর্কের জেরে চাকরি হারানো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, এখানে তাঁর অপরাধ কী? এখানে তো জবরদস্তির কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই ধরনের সম্পর্কগুলো করপোরেট জগতে কেন এত নেতিবাচকভাবে দেখা হয়?
প্রকৃতপক্ষে কর্মক্ষেত্র শুধু পেশাদারির জায়গা নয়, এটি ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও একটি ক্ষেত্র। সহকর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু করপোরেট পরিবেশে এমন সম্পর্ক প্রায়শই নিরুৎসাহিত বা এমনকি নিষিদ্ধ করা হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে নজর রাখলেই স্পষ্টত বোঝা যাবে, কোল্ডপ্লে কনসার্টে অ্যাস্টোনমার সিইও-কে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কের ঝুঁকি
কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বিশেষ করে যখন এ ধরনের সম্পর্ক উচ্চপদস্থ বা তত্ত্বাবধায়ক এবং অধীনস্থের মধ্যে হয়, তখন সেটি কেবল ব্যক্তিগত বিষয় থাকে না, বরং সংস্থা এবং অন্যান্য কর্মীর ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। এমন সম্পর্ক সব সময় অবৈধ নয়—এই সত্য মানলেও জড়িত ব্যক্তি এবং সংস্থার জন্য এ ধরনের সম্পর্ক একটি চ্যালেঞ্জিং কর্মপরিবেশ তৈরি করতে পারে।
এই ধরনের সম্পর্কে যে ঝুঁকিগুলো থাকতে পারে:
১. স্বার্থের সংঘাত
কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক, বিশেষ করে যখন একজন বস এবং অধস্তন কর্মীর মধ্যে হয়, তখন সরাসরি স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে। যেমন:
পক্ষপাতিত্ব: এমন সম্পর্ক পক্ষপাতিত্বের জন্ম দিতে পারে। বাস্তবে পক্ষপাতের কোনো উদাহরণ দেখা না গেলেও বাকি কর্মীদের মধ্যে ওই ধরনের একটি অনুভূতি বা ধারণা তৈরি করতে পারে। এর ফলে টিম স্পিরিট বা কর্মীদের কর্মস্পৃহা ব্যাহত হতে পারে এবং কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন বস তাঁর প্রেমিক/প্রেমিকাকে অন্যায়ভাবে পদোন্নতি বা সুবিধা দিতে পারেন। এমনটি ঘটলে অন্য কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব: এমনকি আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক না হলেও, সমপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যেও এ ধরনের সম্পর্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অন্যায্য আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। যেমন, একজন কর্মী তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর ভুল এড়িয়ে যেতে পারেন।
২. উৎপাদনশীলতা হ্রাস
অফিস রোমান্স কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে। অন্যদের জন্য অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। এটি এক সময় চাপা ক্ষোভ থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হতে পারে।
মনোযোগে বিঘ্ন: অফিসে দুই সহকর্মীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা, গুজব এবং জল্পনা বাকি কর্মীদের মনোযোগ কাজের বাইরে সরিয়ে নিতে পারে। এর ফলে কাজের প্রতি তাঁদের মনোযোগ কমে যায়। এমনকি যারা সম্পর্কে আছেন তাঁদের মধ্যেও সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ, গুজব ও জল্পনার প্রভাব পড়তে পারে।
বিরূপ পরিবেশ: সম্পর্কে থাকা দুজনের মধ্যে সংঘাত বা বিচ্ছেদের পরে কর্মক্ষেত্রে একটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এটি সামগ্রিক কাজের প্রবাহকে ব্যাহত করে।
কর্মদক্ষতা হ্রাস: প্রেমের সম্পর্কের নাটক বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে বাকি কর্মীরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। ফলে তাঁদের কর্মদক্ষতা কমে যায়। সম্পর্কে থাকা দুজনের জন্যও এটি প্রযোজ্য।
৩. আইনি ঝুঁকি
কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক সংস্থাগুলোর জন্য গুরুতর আইনি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই কারণে দেখা যায়, অফিস রোমান্সের তথ্য ফাঁস হলে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় অনেক প্রতিষ্ঠান। এমনকি বিষয়টি গোপনে সমঝোতার চেষ্টাও কখনো কখনো হয়। সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ বাইরে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার ঝুঁকিও থাকে। ফলে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও পরবর্তীতে আইনি ঝুঁকি থেকে যায়।
যৌন হয়রানি: সম্পর্ক যদি সম্মতিমূলক না হয় বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি পক্ষ চাপ অনুভব করেন, তাহলে সেটি যৌন হয়রানির অভিযোগের কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে, ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা প্রায়শই সম্মতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ক্ষমতার অপব্যবহার: বিশেষ করে ইমিডিয়েট বস, তত্ত্বাবধায়ক বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে অধস্তন কর্মীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাঁর প্রভাব খাটিয়ে সম্মতি উৎপাদনের চেষ্টা করে থাকতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং অস্বস্তি সত্ত্বেও সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
বৈষম্য ও প্রতিশোধ: সম্পর্ক যদি খুব বাজেভাবে ভেঙে যায়, তখন এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বৈষম্য বা প্রতিশোধের অভিযোগ আনতে পারে। যেমন, পদোন্নতি বা কর্মদক্ষতা মূল্যায়নে অন্যায্য আচরণের অভিযোগ উঠতে পারে। যদিও অভিযোগ সত্য নাও হতে পারে।
নীতি লঙ্ঘন: অনেক সংস্থার অফিস রোমান্স সম্পর্কে নির্দিষ্ট নিয়ম বা নীতিমালা থাকে, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক এবং অধীনস্থদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নীতিমালা মেনে চলা হয়। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, এমনকি চাকরিচ্যুতির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
৪. কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের অবনতি
ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে গুজব এবং জল্পনা অন্য কর্মীদের জন্য একটি নেতিবাচক এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। কর্মীরা ভাবতে পারেন যে, সম্পর্কের কারণে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এমন ধারণা তাঁদের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিভেদ তৈরি করে। একটি সম্পর্ক যখন ভেঙে যায়, তখন সেই পরিস্থিতি কর্মক্ষেত্রে অস্বস্তি, উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য সংঘাতের কারণ হতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে কর্মীদের মনোবলকে প্রভাবিত করে।
৫. গোপনীয়তার উদ্বেগ
প্রেমের সম্পর্ক সাধারণত একটি ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের সম্পর্ক গোপন রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এ ছাড়া এমন সম্পর্ক কাজ ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা আরও জটিল করে তুলতে পারে। অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে।
গুজব: কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের প্রবণতা সম্পর্কে থাকা ব্যক্তিদের গোপনীয়তা বজায় রাখা কঠিন করে তোলে। এমনকি সম্পর্ক গোপন রাখার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই অত্যন্ত বিচক্ষণ হলেও এটি গোপন থাকে না।
ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাদারির মিশ্রণ: কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাদারির সীমারেখাকে ধূসর করে দেয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
করপোরেট নীতিমালা
মূলত ওপরে বর্ণিত ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করেই, অনেক সংস্থা কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ করার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রাখে। বিশেষ করে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা রয়েছে এমন সম্পর্কে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। করপোরেট চর্চায় মনে করা হয়, এই নীতিমালা কর্মীদের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং একটি সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
সুতরাং বলা যায়, কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক সব সময় অবৈধ না হলেও, এটি জড়িত ব্যক্তি এবং সংস্থার জন্য সম্ভাব্য সমস্যার একটি জটিল জাল তৈরি করতে পারে। এ কারণেই প্রতিটি সংস্থা সাধারণত এ বিষয়ে লিখিত বা অলিখিত নীতিমালা অনুসরণ করে। কর্মীদের পেশাদারি বজায় রাখা এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে কোল্ডপ্লে-এর একটি কনসার্টে সহকর্মীকে জড়িয়ে ধরে দুলছিলেন মার্কিন কোম্পানি অ্যাস্টোনমার-এর সিইও। বিশাল স্ক্রিনে সেই দৃশ্য দেখেছে হাজার হাজার দর্শক। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে সেই ভিডিও। সিইও যে নারীকে জড়িয়ে ধরে দুলছিলেন তিনি সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে অ্যাস্ট্রোনমার। সিইওকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অ্যাস্ট্রোনমার প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি আমাদের পথ দেখিয়েছে, আমরা তার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের নেতাদের কাছ থেকে আচরণ ও জবাবদিহির সর্বোচ্চ মান আশা করা হয়।’
সিইও-এর এমন আচরণের বিষয়ে তদন্ত করছে অ্যাস্টোনমার। তাঁর চাকরিও যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের সম্পর্কের জেরে চাকরি হারানো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, এখানে তাঁর অপরাধ কী? এখানে তো জবরদস্তির কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই ধরনের সম্পর্কগুলো করপোরেট জগতে কেন এত নেতিবাচকভাবে দেখা হয়?
প্রকৃতপক্ষে কর্মক্ষেত্র শুধু পেশাদারির জায়গা নয়, এটি ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও একটি ক্ষেত্র। সহকর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু করপোরেট পরিবেশে এমন সম্পর্ক প্রায়শই নিরুৎসাহিত বা এমনকি নিষিদ্ধ করা হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে নজর রাখলেই স্পষ্টত বোঝা যাবে, কোল্ডপ্লে কনসার্টে অ্যাস্টোনমার সিইও-কে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে সম্পর্কের ঝুঁকি
কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বিশেষ করে যখন এ ধরনের সম্পর্ক উচ্চপদস্থ বা তত্ত্বাবধায়ক এবং অধীনস্থের মধ্যে হয়, তখন সেটি কেবল ব্যক্তিগত বিষয় থাকে না, বরং সংস্থা এবং অন্যান্য কর্মীর ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। এমন সম্পর্ক সব সময় অবৈধ নয়—এই সত্য মানলেও জড়িত ব্যক্তি এবং সংস্থার জন্য এ ধরনের সম্পর্ক একটি চ্যালেঞ্জিং কর্মপরিবেশ তৈরি করতে পারে।
এই ধরনের সম্পর্কে যে ঝুঁকিগুলো থাকতে পারে:
১. স্বার্থের সংঘাত
কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক, বিশেষ করে যখন একজন বস এবং অধস্তন কর্মীর মধ্যে হয়, তখন সরাসরি স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে। যেমন:
পক্ষপাতিত্ব: এমন সম্পর্ক পক্ষপাতিত্বের জন্ম দিতে পারে। বাস্তবে পক্ষপাতের কোনো উদাহরণ দেখা না গেলেও বাকি কর্মীদের মধ্যে ওই ধরনের একটি অনুভূতি বা ধারণা তৈরি করতে পারে। এর ফলে টিম স্পিরিট বা কর্মীদের কর্মস্পৃহা ব্যাহত হতে পারে এবং কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন বস তাঁর প্রেমিক/প্রেমিকাকে অন্যায়ভাবে পদোন্নতি বা সুবিধা দিতে পারেন। এমনটি ঘটলে অন্য কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব: এমনকি আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক না হলেও, সমপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যেও এ ধরনের সম্পর্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অন্যায্য আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। যেমন, একজন কর্মী তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর ভুল এড়িয়ে যেতে পারেন।
২. উৎপাদনশীলতা হ্রাস
অফিস রোমান্স কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে। অন্যদের জন্য অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। এটি এক সময় চাপা ক্ষোভ থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হতে পারে।
মনোযোগে বিঘ্ন: অফিসে দুই সহকর্মীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা, গুজব এবং জল্পনা বাকি কর্মীদের মনোযোগ কাজের বাইরে সরিয়ে নিতে পারে। এর ফলে কাজের প্রতি তাঁদের মনোযোগ কমে যায়। এমনকি যারা সম্পর্কে আছেন তাঁদের মধ্যেও সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ, গুজব ও জল্পনার প্রভাব পড়তে পারে।
বিরূপ পরিবেশ: সম্পর্কে থাকা দুজনের মধ্যে সংঘাত বা বিচ্ছেদের পরে কর্মক্ষেত্রে একটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এটি সামগ্রিক কাজের প্রবাহকে ব্যাহত করে।
কর্মদক্ষতা হ্রাস: প্রেমের সম্পর্কের নাটক বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে বাকি কর্মীরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। ফলে তাঁদের কর্মদক্ষতা কমে যায়। সম্পর্কে থাকা দুজনের জন্যও এটি প্রযোজ্য।
৩. আইনি ঝুঁকি
কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক সংস্থাগুলোর জন্য গুরুতর আইনি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই কারণে দেখা যায়, অফিস রোমান্সের তথ্য ফাঁস হলে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় অনেক প্রতিষ্ঠান। এমনকি বিষয়টি গোপনে সমঝোতার চেষ্টাও কখনো কখনো হয়। সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ বাইরে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার ঝুঁকিও থাকে। ফলে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও পরবর্তীতে আইনি ঝুঁকি থেকে যায়।
যৌন হয়রানি: সম্পর্ক যদি সম্মতিমূলক না হয় বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি পক্ষ চাপ অনুভব করেন, তাহলে সেটি যৌন হয়রানির অভিযোগের কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে, ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা প্রায়শই সম্মতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ক্ষমতার অপব্যবহার: বিশেষ করে ইমিডিয়েট বস, তত্ত্বাবধায়ক বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে অধস্তন কর্মীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাঁর প্রভাব খাটিয়ে সম্মতি উৎপাদনের চেষ্টা করে থাকতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং অস্বস্তি সত্ত্বেও সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
বৈষম্য ও প্রতিশোধ: সম্পর্ক যদি খুব বাজেভাবে ভেঙে যায়, তখন এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বৈষম্য বা প্রতিশোধের অভিযোগ আনতে পারে। যেমন, পদোন্নতি বা কর্মদক্ষতা মূল্যায়নে অন্যায্য আচরণের অভিযোগ উঠতে পারে। যদিও অভিযোগ সত্য নাও হতে পারে।
নীতি লঙ্ঘন: অনেক সংস্থার অফিস রোমান্স সম্পর্কে নির্দিষ্ট নিয়ম বা নীতিমালা থাকে, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক এবং অধীনস্থদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নীতিমালা মেনে চলা হয়। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, এমনকি চাকরিচ্যুতির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
৪. কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের অবনতি
ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে গুজব এবং জল্পনা অন্য কর্মীদের জন্য একটি নেতিবাচক এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। কর্মীরা ভাবতে পারেন যে, সম্পর্কের কারণে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এমন ধারণা তাঁদের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিভেদ তৈরি করে। একটি সম্পর্ক যখন ভেঙে যায়, তখন সেই পরিস্থিতি কর্মক্ষেত্রে অস্বস্তি, উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য সংঘাতের কারণ হতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে কর্মীদের মনোবলকে প্রভাবিত করে।
৫. গোপনীয়তার উদ্বেগ
প্রেমের সম্পর্ক সাধারণত একটি ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের সম্পর্ক গোপন রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এ ছাড়া এমন সম্পর্ক কাজ ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা আরও জটিল করে তুলতে পারে। অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে।
গুজব: কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের প্রবণতা সম্পর্কে থাকা ব্যক্তিদের গোপনীয়তা বজায় রাখা কঠিন করে তোলে। এমনকি সম্পর্ক গোপন রাখার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই অত্যন্ত বিচক্ষণ হলেও এটি গোপন থাকে না।
ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাদারির মিশ্রণ: কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাদারির সীমারেখাকে ধূসর করে দেয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
করপোরেট নীতিমালা
মূলত ওপরে বর্ণিত ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করেই, অনেক সংস্থা কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ করার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রাখে। বিশেষ করে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা রয়েছে এমন সম্পর্কে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। করপোরেট চর্চায় মনে করা হয়, এই নীতিমালা কর্মীদের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং একটি সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
সুতরাং বলা যায়, কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক সব সময় অবৈধ না হলেও, এটি জড়িত ব্যক্তি এবং সংস্থার জন্য সম্ভাব্য সমস্যার একটি জটিল জাল তৈরি করতে পারে। এ কারণেই প্রতিটি সংস্থা সাধারণত এ বিষয়ে লিখিত বা অলিখিত নীতিমালা অনুসরণ করে। কর্মীদের পেশাদারি বজায় রাখা এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে (এনজিও) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের শূন্য পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। গত ১৭ জুলাই এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
৪ ঘণ্টা আগেএনআরবি ব্যাংক লিমিটেডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাংকটিতে ‘ট্রেইনি অফিসার (আইটি)’ পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। গত ১৭ জুলাই এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
৪ ঘণ্টা আগেমৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রোগ্রামার’ (৬ষ্ঠ গ্রেড) এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইন্সট্রাক্টরের (কম্পিউটার সায়েন্স)’ (৯ম গ্রেড) নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। প্রোগ্রামার পদে ১ জন ও ইন্সট্রাক্টর পদে ৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
৫ ঘণ্টা আগেরাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৭ ধরনের শূন্য পদে মোট ১২৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সম্প্রতি এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে