Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

বারবার ব্যর্থ হওয়া রকিবুলের মুখে হাসি

বারবার ব্যর্থ হওয়া রকিবুলের মুখে হাসি
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৪০

রাজশাহীর সন্তান মো. রকিবুল হক। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এরপর বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক মিলিয়ে ২৪টি সরকারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু সফলতা ধরা দেয়নি। সবশেষে ৪৩তম বিসিএসে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (মেধাক্রম-১৫)। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জেলি খাতুন

প্রশ্ন: বারবার ব্যর্থ হয়েও ৪৩তম বিসিএসে সফল, কেমন লাগছে? 
উত্তর: সত্যি বলতে, ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। স্বপ্নের মতো মনে হয়। কদিন আগেও সরকারি চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ৪৩তম বিসিএসে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে সম্মানিত বোধ করছি। এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই।

প্রশ্ন: আপনার পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাই!
উত্তর: রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে আমার জন্ম। বাবা আমাকে হাফেজ বানাতে চেয়েছিলেন। মাদ্রাসায় ভর্তিও করানো হয়েছিল। কিন্তু সম্পন্ন করিনি। পরে ভবানীগঞ্জ শিশু ও শিল্পকলা একাডেমি এবং ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েছিলাম। ক্লাস নাইনে ভর্তি হই মচমইল উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০১১ সালে এসএসসি এবং ২০১৩ সালে ভবানীগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করি। তখন আইসিসিআর বৃত্তি পেয়ে মুম্বাইয়ের আইআইটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। তবে বিসিএসের প্রস্তুতি এবং আইআইটিতে পড়া চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। তাই এক সেমিস্টার পড়েই আইআইটি ছেড়ে দেই।

প্রশ্ন: কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল কি? 
উত্তর: সবার জন্যই স্নাতকের পর থেকে চাকরি পাওয়ার আগপর্যন্ত সময়টা কঠিন। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ছিল না। ২০১৯ সালের নভেম্বরে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে বাধ্য হয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাই। এরপর গ্রামে থেকেই চাকরির প্রস্তুতি নিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক মিলিয়ে ২৪টি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু সফল হতে পারিনি। একটা সময় ধরেই নিয়েছিলাম, আমি হয়তো সরকারি চাকরি পাব না। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে বেসরকারি কোনো কোম্পানিতে যোগ দেব ভেবেছিলাম। এর মধ্যে ৪৩তম বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়। আমি অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। 

প্রশ্ন: এ পর্যন্ত আসতে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন কে? 
উত্তর: আমার মা-বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তাঁরা মাঝেমধ্যেই অফিসারদের নিয়ে গল্প করতেন। আমি শুনে অবাক হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতাম, আমার মা-বাবার থেকেও বড় অফিসার আছে নাকি! আমি যখন হাফেজ হতে ব্যর্থ হলাম, তখন আমার বাবা জানতে চেয়েছিলেন, আমি বড় হয়ে কী হতে চাই? আমি সেদিন না বুঝেই বলেছিলাম, বড় অফিসার হতে চাই। আমার পড়াশোনার পেছনে মা-বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। তাঁরাই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। আমার স্ত্রী আফসানা ইয়াসমিন মিম আর আমার পাশে থাকা অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী, সবাই অনুপ্রেরণা দিয়েছে আমাকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যতটা উপকার করে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। কিছু বিসিএস-সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ থেকে উপকৃত হয়েছি। তবে এর চেয়ে বেশি সময় নষ্ট হয়েছে। যদি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে উপকৃত হবেন। যদি এই নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে এসব মাধ্যম বন্ধ রাখাই ভালো।

প্রশ্ন: বিসিএসের শুরুটা কীভাবে করেছিলেন?
উত্তর: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে ইচ্ছা ছিল, ক্যাডার অফিসার হয়ে একদিন সবাইকে চমকে দেব। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার চাপে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া তো দূরের কথা, মাথাতেই আনতে পারিনি। স্নাতক শেষ করে ২০১৯ সালের নভেম্বরে সিলেট থেকে ঢাকায় গিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাস প্রিলিমিনারির জন্য প্রস্তুতি নিই। এই সময়টায় এতই পরিশ্রম করেছিলাম, এমন পরিশ্রম আগে কখনো করিনি। প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা পড়াশোনার রুটিন করলেও কোচিং লেকচার ভিডিও দেখা মিলিয়ে মোট ১৫ ঘণ্টার বেশি পড়াশোনা করেছি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা মহামারির প্রকোপ শুরু হলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। পড়াশোনার গতিও কমে যায়। ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি সহজে পার করলেও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির ঘাটতি হাড়ে হাড়ে টের পাই। ফলে তখন শূন্য হাতে ফিরতে হয়। ৪৩তম বিসিএসে সেই ভুল করিনি। নিখুঁতভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করেছি। সৃষ্টিকর্তা এবার নিরাশ করেননি। 

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কেমন উপকৃত হয়েছেন?
উত্তর: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যতটা উপকার করে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। কিছু কিছু ফেসবুক গ্রুপ, বিসিএস-সম্পর্কিত পেজ থেকে উপকৃত হয়েছি। তবে এর চেয়ে বেশি সময় নষ্ট হয়েছে। যদি নিজের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে উপকৃত হবেন। যদি এই নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে এসব মাধ্যম বন্ধ রাখাই ভালো।

প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? নতুনদের উদ্দেশে পরামর্শ কী? 
উত্তর: এই মুহূর্তে পরিকল্পনা হলো, আমার ওপর সরকারের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা। নতুনদের উদ্দেশে কয়েকটা কথা বলার আছে। আমরা মানুষ। আমরা আমাদের ভাগ্য লিখতে পারি না। আমাদের ভাগ্য লেখেন সৃষ্টিকর্তা। আমরা যা করতে পারি তা হলো, পরিশ্রম আর তার কাছে দোয়া। এ দুটির সঙ্গে যদি ধৈর্য যোগ করা যায়, তবে তার সফলতা আসবেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত