রজত কান্তি রায়
প্রথমে আপনার সৌন্দর্য চর্চার বিষয়ে জানতে চাই।
মারিয়া: ত্বকের চর্চা করার খুব একটা সময় হয় না। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারপরও ত্বকের চর্চা করা খুব জরুরি। নয়তো এত মেকআপ নেওয়ার পর, এত লাইটের মধ্যে কাজ করে সবকিছু ডিজাস্টার হয়ে যায়। প্রতিদিন আমি প্রচুর পানি পান করি। অনেক বেশি লিকুইড; অর্থাৎ, তরল খাবার খাই। রোজ ফল খাই। বিশেষ করে যে ফলগুলো শরীরকে বিষমুক্ত করে, সেসব ফল বেশি খাই। যেমন, কলার মধ্যে অনেক পটাশিয়াম থাকে। এটা শরীরকে বিষমুক্ত করতে সাহায্য করে। ত্বককে উজ্জ্বল করে। অ্যাভোকাডো খাই। এটি শরীরের টক্সিক উপাদানগুলো কমায়। এ ছাড়া তৈলাক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কারণ, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে শরীরে ফ্যাট জমা হয়, স্কিনের লেয়ারে তেল জমতে থাকে।
তবে যেহেতু আমি বাঙালি, কিছু খাবার খেতে তো ভালো লাগেই। যেমন, মেজবানি মাংস, কালা ভুনা, তেহারি, বিরিয়ানি—এসব কে না পছন্দ করে। এগুলো আমি খাই। তবে লিমিটেড খাই।
ত্বক চর্চার বিষয়ে আমি, মুখ সব সময় পরিষ্কার রাখা, বারবার মুখ ধোয়া, মেকআপের পর ভালো করে মেকআপ রিমুভ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মেনে চলি। মেকআপ রিমুভ করতে আমি h2o ব্যবহার করি। এটা বায়োডার্মার পণ্য। এতে মিনারেলস আছে। এটি স্কিনের পোরস রিমুভ করে। এর পর ভিটামিন সিযুক্ত ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ওয়াশ করি। তারপর টোনার ব্যবহার করি। মুখ পরিষ্কার করার পর একটা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি। তারপর ঘুমাতে চলে যাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠেও একইভাবে ত্বক চর্চা করি। মুখ ধোয়ার পর টোনার, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি এবং সানব্লক ক্রিম লাগাই। ঘর থেকে বের হলেই যে সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, তা নয়। ঘরে থাকলেও সানব্লক ব্যবহার করা যায়। কারণ আমরা ঘরে যে লাইটগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো থেকেও অনেক রশ্মি আসে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
চুলের জন্য কী করেন?
মারিয়া: চুলে আমি অ্যালোভেরা লাগাই। আমার চুল সারা বছরই ডাই করা থাকে। ডাই করলে চুল অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। বাজারে যে অ্যালোভেরা জেল পাওয়া যায়, ওটা নয়; অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে চুলে লাগাই। আমার ছাদে অনেক অ্যালোভেরা গাছ আছে। অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে অলিভ ওয়েল ও ক্যাস্টর ওয়েল মিশিয়ে চুলে লাগাই। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলি।
দু-চার মাস পরপর চুল ট্রিম করি। কারণ, চুল ফেটে যায়। তাই ট্রিমিংটা নিয়মিত করি। যখন চুল ডাই করি, তখন চুলে তেল দিতে হয়। স্পা করতে হয়। দুই মাস অন্তর অন্তর স্যালুনে গিয়ে হেয়ার স্পা করার চেষ্টা করি।
আরেকটা বিষয় জানতে চাই তা হলো, আপনি ঠোঁটের যত্নে কিছু করেন কিনা?
মারিয়া: ঠোঁটের যত্নে স্পেশাল কিছু করা হয়ে ওঠে না। আমার ঠোঁট অনেক ডার্ক। বিভিন্ন কারণে ডার্ক হয়ে যায়। তাই চিনি ও এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল মিশিয়ে পাঁচ মিনিট হালকা করে স্ক্রাব করি। এতে ঠোঁটের কালো দাগ অনেকটাই কমে আসে।
ত্বকের জন্য বেকিং সোডাও খুব কার্যকরী। অনেকের স্কিন খুব সেনসিটিভ। তারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁরা যদি বেকিং সোডা দিয়ে রূপচর্চা করেন, তাহলে এটা বেশ ভালো কাজ করে। বেশি মেকআপ ব্যবহার ও সূর্যের আলোর কারণে অনেকের ত্বকের পোরস অনেক বড় হয়ে যায়। পোরস থেকে গভীরভাবে মেকআপ রিমুভ করা কষ্টকর হয়ে যায়। তাদের জন্য পরামর্শ হলো, একটা মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা। মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপের সঙ্গে অল্প একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে ত্বকে ৩০-৩২ সেকেন্ড ম্যাসাজ করলে পোরসগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়।
ফিটনেসের জন্য কী করেন?
মারিয়া: ফিটনেসের জন্য তেমন কিছুই করা হয় না। তবে আমার মেইন বিষয়টা হলো মেটাবলিক সিস্টেম। আমার মেটাবলিক সিস্টেম খুব ভালো। ছোট থেকে মিশনারি স্কুলে আমাকে শেখানো হয়েছে যার যার মেটাবলিক সিস্টেম জেনে খাবার গ্রহণ করা উচিত। আমি সেভাবেই খাবার খাই।
চিকিৎসকেরা বলেন, চর্বি ঝরানো এবং ফিটনেস বজায় রাখা ৮০ শতাংশ নির্ভর করে খাবারের ওপর। বাকি ২০ শতাংশ নির্ভর করে ওয়ার্ক আউটের ওপর। আমি খাবারটা সেভাবেই গ্রহণ করি। সকালের নাশতায় আমি টোস্ট, সুগার ছাড়া হরলিক্স ইত্যাদি খাই।
মডেলিং জগতে আপনার আগমন ও বিচরণ সম্পর্কে জানতে চাই।
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি ফ্যাশন টিভি সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফ্যাশন টিভির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তাদের সঙ্গে সাড়ে চার বছর কাজ করেছি। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ডিজাইনারদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। গুচি, আরমানি, ডিএনজি, ডিজি—এসব ব্র্যান্ডের সঙ্গে আমার কাজ করা হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে যখন এলাম, র্যাম্প নিয়ে কাজ বেশি হয়েছে। র্যাম্প নিয়ে কাজ করতে থাকলাম।
একটা পর্যায়ে আর ভালো লাগছিল না। অনেকের মনের কলুষতা নিতে পারছিলাম না। আমি যেতে চাই। কিন্তু কেন যেন পারছি না। আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছিলাম।
তারপর দুঃখজনকভাবে আমার বিয়ে হলো। তারপরের খবরে আমি জানতে পারলাম—আমি মা হতে যাচ্ছি। দ্যটস দ্য সিগনাল, যে আমি আর কাজ করব না। তখন কাজ থেকে নিজেকে আমি সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিয়েছি। বিশেষ করে র্যাম্প থেকে। ২০০৯-এর পর থেকে ২০১০-১৪ পর্যন্ত র্যাম্প থেকে দূরে ছিলাম। ২০১৫ সালে আমি আবার এসে জয়েন করেছি। ওই পাঁচ বছর আমি সিডনিতে ছিলাম। তারপর দেশে ফিরে আসছি। কাজ শুরু করেছি। আমি ভেবেছিলাম অন্য জব করব। কিন্তু তা হয়নি। মডেল আজরা মাহমুদ আমাকে ফোন দিলেন ইয়েলোর একটা শোয়ের জন্য। জানান, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল মডেল দুজন আসছে। ইউকে থেকে একজন এবং পাকিস্তান থেকে একজন। আজরা বললেন, ‘আমি চাই তুই বাংলাদেশকে প্রেজেন্ট কর। প্লিজ না বলবি না আমাকে।’ আমি আজরা মাহমুদকে না করতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম ওই একটা শো করে আবার গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু তা আর হলো না।
২০০২ সালের ২৬ নভেম্বরে র্যাম্পে প্রথমবার শো করেছিলাম। সেটায় শাবনূর, পপি, ফেরদৌসসহ আরও অনেক নায়ক-নায়িকা হেঁটেছেন আমাদের সঙ্গে। সেই স্টেজে আমার প্রথম র্যাম্পে পা রাখা হয়েছিল। সেখানে আমি প্রথম পেয়ার হিসেবে দাঁড়াই ওয়ান অ্যান্ড ওনলি লিজেন্ডারি মডেল নোবেল ভাইয়ের সঙ্গে। যাকে ছোটবেলা থেকে টিভিতে দেখেছি, সেই মানুষটাকে প্রথমবারের মতো স্টেজে দেখছি, তাঁর সঙ্গে স্টেজে পা রাখছি র্যাম্প মডেল হিসেবে—এটা আমার জন্য অনেক বড় অ্যাচিভমেন্ট ছিল। তখন বেছে নিয়েছিলাম র্যাম্প হলো আমার প্ল্যাটফর্ম। এর আগে আমি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছি। তারপর চ্যানেল আইয়ের একটা প্রোগ্রামে আমাকে হোস্ট হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ৭-৮ মাসের মধ্যে আমাকে নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হলো। আমার হাইটটা ভালো ছিল। দেখতে অন্যরকম ছিলাম। এ কারণে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। র্যাম্পে হেঁটে এত ভালো লেগেছিল, অন্য কোনো কাজে সেটা লাগেনি। আমি মনে করেছিলাম ওটাই আমার প্ল্যাটফর্ম।
২০১৫ সালে ইয়েলোর শোয়ের জন্য আজরা যখন ডাকলেন, আমি ভেবেছিলাম, একটা শো করে গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু পরে আর পারিনি। হাঁটতেই থাকলাম। এখনো হাঁটি, কম।
ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ শুরু করলেন কবে থেকে?
মারিয়া: ২০১৯ সাল থেকে কাজ করা কমিয়ে দিয়েছি। আমার মনে হলো ১৯-২০ বছর তো হয়ে গেল। আর কত? এখন আমরা যদি না সরি, তাহলে নিউ জেনারেশন জায়গা পাবে না। একটা সময় থাকে মডেলিংয়ের। এবং সেই সময়টা আমি পার করে এসেছি। ২০১৯ সালে এসে মনে হলো আমার এখন কাজ কমানো উচিত। ডিরেকশনে যাওয়া উচিত। আমি একটি বিজ্ঞাপন বানাই। ক্যামেরার পেছনে কাজ করি আমি। স্টোরি আমার লেখা ছিল। প্রডিউস করেছি আমি। টিভিসি করলাম। তারপর একটা ফ্যাশন ফিল্ম করলাম। তখন মজাটা পেয়ে গেলাম। ভাবলাম ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করব।
গত বছরের নভেম্বরে আমি গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গ্রুমিং করাতাম। একটু একটু করে সময় দিয়ে, সবকিছু দিতে পারি না স্টুডেন্টদের। তাই নভেম্বর থেকে গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এখন সেকেন্ড ব্যাচ চলছে। করোনা মহামারির জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে আমাদের। যেখানে একটা ব্যাচে ২০ জন স্টুডেন্ট থাকে, সেখানে পেয়েছি ১৬ জন স্টুডেন্ট। এর মধ্যে চারজন এই ব্যাচে করবে না। আর দুজনের সার্জারি হয়েছে। তারা পরের ব্যাচে জয়েন করবে। তবে আমি আশাবাদী। মানুষের যে বিশ্বাস অর্জন করছি, সে জায়গাটা তৈরি করার চেষ্টা করছি। এই জায়গা থেকে যে টাকা আসবে, তা দিয়ে ব্যবসা করার প্রয়োজন নেই। যেই টাকাটা আমি চার্জ করছি, তা যথেষ্ট নয়। বাট আমার ইচ্ছা হলো আমার লিগ্যাসি ধরে রাখা। ২০টা বছর মডেলিং করে কী পেলাম! অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। অনেকগুলো সম্মাননা স্মারক পেয়েছি।
এই মাইলস্টোনগুলো সম্পর্কে শুনি...
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি বিউটি কন্টেস্টে আমি পার্টিসিপেট করেছিলাম ২০০৫ সালে। ৩৯টি দেশের মধ্যে আমি বিজয়ী হয়েছিলাম। তারপর ফ্যাশন টিভির জন্য কাজ করেছি। আমি ডিজেলের জন্য কাজ করেছি। ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল টপ ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেছি। বাংলাদেশের ডিজাইনারদের নাম না নিলে তো হয়ই না। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ—এরাই টপ ডিজাইনার। বিবি রাসেলের সঙ্গে আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা কাজ হয়েছিল। বিবি আপার সঙ্গে আমার একটু ভুল বোঝাবুঝির কারণে কাজ করা হয়নি আর। তবে ভবিষ্যতে আমি কাজ করব তাঁর সঙ্গে। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ, বিপ্লব সাহা, শৈবাল সাহা, শারুখ আমিন—দেশের যত প্রমিনেন্ট ডিজাইনার আছেন, সবার সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। শারুখ আমিন আমাকে প্রথম র্যাম্পে হাঁটিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে যখন প্রথম ফ্যাশন টিভি এসেছিল, তখন বাংলাদেশকে আমি প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। সবগুলো মডেল ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, স্পেন থেকে। ওসব দেশ থেকে ২৫ জন মডেল এসেছিল। আমি একমাত্র বাঙালি মেয়ে ছিলাম। ওটা আমার জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার ছিল। এমন ছোট ছোট অনেক মাইলস্টোন পার করে গিয়েছি। আমি সরওয়ার ফারুকি, অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করেছি। টিভিসির কাজ করেছি, টেলিফিল্মের কাজ করেছি, অভিনয় করেছি। ইন্টারন্যাশনালি কোনো কাজ হলেই আমাকে ডাকত। অমিতাভ রেজা আমাকে বলতেন, এ দেশের বিদেশি নায়িকা। ক্রিকেটের সঙ্গে আমি বেশ অনেক দিন জড়িত ছিলাম। খুব প্রশংসা পেয়েছি।
কেন উত্তরসূরি তৈরি করার আগ্রহ?
মারিয়া: একজন মানুষ কত দিনই-বা বাঁচতে পারে! ১০০ বছর! ১২০ বছর! এর থেকে বেশি না। কিন্তু মানুষ চিরঞ্জীব হয় তার কর্ম দিয়ে। তার কাজ এবং সমাজে সে কী অবদান রেখেছে, সেই অবদানের ওপর ভিত্তি করে তার উত্তরসূরি সৃষ্টি হয়। তার অমরত্বটা থেকে যায়। আমি অমর হতে চাই। আমি চাই আমার স্টুডেন্টরা কাজ করবে। আমি মারিয়া যদি মরেও যাই, তারপরেও যেন মানুষ বলে জেনেসিস মারিয়া। কিংবা এই মডেল জেনেসিসের স্টুডেন্ট। মারিয়ার স্টুডেন্ট আজকে বিশ্বজয় করেছে। হতেও তো পারে। আমি আমার ইনস্টিটিউট থেকে পাঠাতেও তো পারি।
এই যে এতগুলো বছর পার করে দিয়েছি, আমার নাম নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে কেউ যদি বড় কোনো জায়গায় ক্রস ওভার করতে পারে, তাহলে তো আমার নাম হবে। তাই না? তখন তাকেও কেউ জিজ্ঞেস করবে, তোমার মেন্টর কে ছিল? তখন সে আমার নামটা নেবে। এভাবে আমি বেঁচে থাকব।
আপনি একেবারে ছোটবেলা থেকেই বাইরে। সচরাচর যারা বাইরে যান তাঁরা ফিরে আসেন না। আপনি কেন ফিরলেন?
মারিয়া: বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। ডিজাইনাররা আমাকে নিয়েছেন। ভালোবেসেছেন। আমি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে দেখলাম, দেশটা আমার। এই দেশের মানুষগুলো আমার। এই দেশের ভালো ও মন্দটাও আমার। বিদেশের তো সবই আছে। এত সুন্দর সুন্দর মডেল আছে। এক হাজারটা মারিয়া ওদের হাতের মুঠোয় আছে। বাংলাদেশে কয়টা মারিয়া আছে? সো আমার মনে হয়েছিল আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য হলো আমার দেশকে কিছু দেওয়া। আমি যদি আমার দেশকে পথ না দেখাই, তাহলে অন্য কেউ তো এসে পথ দেখাবে না। আমার কর্তব্য এটা। আমার সুযোগ থাকলে আমি দেশকে গ্লোবালি নিয়ে যাব। আমার দেশ সোনার বাংলাদেশ। গুহার মধ্যে লুকিয়ে রাখলে এ দেশকে আলোকিত করা যাবে না। এটা সবাই বলে—নিজের ব্যাপারে চিন্তা না করে, সেলফিশ না হয়ে চলে আসছ! ৮০ শতাংশ লোক সেলফিশ, ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস। ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস না হলে দেশটা তো টিকে থাকত না। তাই না? সো আমার মতো মারিয়া আরও অনেক কর্নারেই আছে। যারা দেশের জন্য কিছু করতে চায়। দেশপ্রেমের কারণে বারবার দেশে ফিরে আসে। আমাকে যদি এখানে থাকতে দেওয়া না হয়, অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি, আমি নিজ দেশের জন্য কাজ করব। কারণ আমার শেকড় এখানে।
কেমন লাগছে ২০ বছর আগের ও ২০ বছর পরের অবস্থা? এখনকার জেনারেশন, ইন্ডাস্ট্রি—সবকিছু কেমন দেখছেন?
মারিয়া: ১০ বছর আগেও যেমন ছিল, এখনো যদি এমন থাকতাম, তাহলে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। অধঃপতন, অবনতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। অসম্মান তো আছেই। ১০ বছর আগেও মডেল হিসেবে পরিচয় দিলে ভ্রু কুঁচকে তাকাত লোকজন। অপমানজনক নজর দিত। আজও যখন নিজেকে মডেল বলি, কিছু কিছু মানুষের কাছে অসম্মানিত হতে হয়। কিছু কিছু মানুষ জায়গাটাকে নোংরা করে ফেলেছেন। এ কারণে বাদবাকি যারা পরিষ্কার মানুষ আছেন, তাঁদের গায়েও নোংরা লেগে যাচ্ছে। এখনকার দিনে অসংখ্য মানুষ মডেলিং, অ্যাক্টিং এসবে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু তাদের আর্ট, কাজ ইত্যাদি পছন্দ না। ফ্যামিলির সঙ্গে যুদ্ধ করে মিডিয়াতে কাজ করেছি। যুদ্ধ করে চলেছি। একা একা চলেছি। কখনো খারাপ পথে যাইনি। বাবা-মায়ের শেখানো নীতিতে চলেছি। অনেক স্ট্রাগল করেছি। প্যাশন ছিল আমার, আর্ট ছিল। এখনকার সবার টাকার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। তারা কাজ শিখতে চায় না। ভালোমতো কাজ করতে চায় না। কয়েকটা ম্যাগাজিন, টিভিতে চেহারা দেখাবে, স্টেজে কয়েকবার উঠবে এবং ছবিগুলো নিয়ে অনেক টাকা আদায় করবে। এই যে কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো আসলেই ডিসটার্বিং। যারা কাজ করতে চাচ্ছেন, তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। যাদের কাজ করার ইচ্ছা নেই, তারা চেহারা দেখিয়ে, ঘুরে বেড়িয়ে অন্যদের থেকে টাকা আয় করার সোর্স বানানোর ইচ্ছা যাদের, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে প্রায়োরিটি। এসবের কারণে ইন্ডাস্ট্রিটা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচুর মানুষ আসছেন, কিন্তু কাজের মানুষ তো আমি দেখি না।
আমাদের এখনো মানুষ বলে, তোমাদের ফার্স্ট ব্যাচটা অনেক কিছু দেখিয়ে গেছে। সেকেন্ড ব্যাচ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কামড়ে ধরে আছে। এখনো পর্যন্ত তোমাদের মতো মডেল দেখি না। আরেকটা সেকেন্ড মারিয়া, ইমি, রুমা, আজরা দেখি না। আমি এখন উল্লেখযোগ্য কাউকে দেখি না। প্রত্যেকটা মানুষের একটা সিংহাসন আছে। আমার একটা আছে। আমি যে সিংহাসন থেকে নেমে অন্যকে ওঠার সুযোগ দেব, আমার সিংহাসনে কাউকে বসতে হবে তো। কাউকে তো এসে জায়গাটা দখল করতে হবে। গত পাঁচ বছর ধরে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি।
সম্প্রতি আমরা কিছু মডেল দেখছি, যারা ইন্টারন্যাশনালি কাজ করছেন। অনেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছেন। সেটা দেখে তো আরেকটা ইমপ্রেশন তৈরি হয়।
মারিয়া: একসময় ‘ফেস অব এশিয়া’ নামে কনটেস্ট হতো। সেখানে যাওয়ার জন্য প্রসেসটা করে দেওয়া হতো। সেখানে ব্যক্তিগত কিছু খরচ হতো। সেখানে আজাদ ফারহানা মিলি নামের একজন মডেল গেছেন। অবনি নামের একজনও গিয়েছেন। সেখানে তাঁরা বিজয়ী হয়েছিলেন। এ রকম কয়েকজন আছেন যারা ‘ফেস অব এশিয়া’ থেকে ক্রাউনগুলো পেয়েছেন। বাদবাকি ইন্টারন্যাশনাল কনটেস্টে কে গিয়েছেন? কোনো জায়গায় যেতে পারেনি তো এখন পর্যন্ত। সিলেক্টেডও হয়নি যাওয়ার জন্য। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের খেলাটা তো দেখলেন আপনারা, গত বছর (২০২০) কী হলো?
ব্যাঙের ছাতার মতো একাডেমি, গ্রুমিং স্কুল হচ্ছে। ঠিক সেরকম মাশরুমের মতো অনেকগুলো কনটেস্ট ওপেন হচ্ছে। সেই কন্টেস্টে যে পটেনশিয়াল ক্যানডিডেট থাকেন, তাঁর মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাঁকে দাম দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে সামনে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রপার ওয়েতে রান করা হচ্ছে না।
প্রপার ওয়েতে রান কেন হচ্ছে না? ইন্ডাস্ট্রির বয়স তো খুব কম নয়। আপনারা তো কাজ করছেন। সময় তো অনেক গেল। আমরা অনেক কিছুই দেখলাম। অনেকগুলো জেনারেশন দেখলাম। এখন কেন বলছেন যে প্রপার ওয়েতে হচ্ছে না?
মারিয়া: প্রবলেমটা হচ্ছে নিউ মানি। নিউ পিপল হু হ্যাজ নিউ মানি ইন দিস স্টেজ। হি হ্যাজ নো এডুকেশন, নো ক্লাস, নো নলেজ। দিস ইজ দ্য প্রবলেম। এখন একটা হ্যাচারির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, ট্রাক সমিতির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, তারপর এসে ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে ইনভেস্ট করতে চান, তাঁর কিন্তু রুচিটা ওইরকমই থাকবে। তাঁর মনে হবে তিনি নায়িকা দেখবেন, নায়িকার হাত ধরে বসবেন, গল্প করবেন, মডেলদের নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যাবেন। কারণ, মডেলরা অনেক সেক্সি ক্লথিং পরে, তারা দেখতে হলিউড-বলিউডের হেরোইনের মতো। তো তাঁরা একটু ঘুরবেন ফিরবেন, আর ফ্রেন্ডদেরকে ছবি দেখিয়ে বলবেন ‘আমার গার্লফ্রেন্ড এটা’। একজন অর্ধশিক্ষিত ট্রাক সমিতির সভাপতি বা হ্যাচারি ব্যবসায়ী কী করে বুঝবেন বিউটি কী, নলেজ কী, আর কোয়ালিফিকেশন কী। আমাদের দেশে তো ক্লাসি, এডুকেটেড, এলিট পিপলের সংখ্যা কম। এসব কারণেই ঘটছে অনেক কিছু।
আমিও যেন ওয়ালের মধ্যে ঠেসে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে আমি আবার গা ঝাড়া দিই। ধাক্কা দিই। বলি, এই সরো। জায়গা ছাড়ো। আমার ঘর খালি করো। আমার ঘরে ময়লা এনো না। তোমাদের ঘরে যা করার করো, কিন্তু আমার ঘরে প্রবেশ করো না। আই ডোন্ট লাইক ইট। এটা তো সবাই করতে পারছে না। সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছি আমরা। যারা সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের ইচ্ছাটাও খুব কম। তারা ইচ্ছাটাকে নিয়ে কাজ করতে চায় না।
মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে, বিবি আপার ক্ষমতা ছিল অনেক কিছু করার। কিন্তু বিবি আপা করলেন না। এর পেছনে সম্পূর্ণ বিবি আপার দোষও না। এর পেছনে বাঙালির দোষ। দেশের মানুষের দোষ। বিবি রাসেলের মতো একজন ডিজাইনার, যিনি ইন্টারন্যাশনালি এত সম্মানিত হয়েছেন, তাঁকে বাংলাদেশ কিছুই দিতে পারেনি। কতটুকু সম্মান দিয়েছে তাঁকে? দুই পক্ষই দায়ী। বিবি আপার ইচ্ছেটা কম ছিল। তাঁর ইচ্ছা না থাকার কারণ হলো, বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে প্রায়োরিটি দিচ্ছিল না। তাঁকে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছিল না। জেলাসি থেকে তাঁর আশপাশের অনেক মানুষই তাঁকে পুট ডাউনের চেষ্টা করেছে। অ্যান্ড শি লস্ট হার ইন্টারেস্ট। বড় বড় মানুষেরা যদি এভাবে ছেড়ে চলে যান, তাহলে আমাদের দেশের ভালো কী করে হবে? ভালো কিছু হবে না। খারাপই হবে।
আরেকটা জিনিস, অনেক কিছুর ইনস্টিটিউট হলো, আমাদের ফ্যাশন মডেলিং—এই ইন্ডাস্ট্রির কোনো ইনস্টিটিউট হলো না। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
মারিয়া: আমি শুধু আমারটা বলতে পারি। বাকিদের কথা বলতে পারব না। কেন সরকারিভাবে আমরা স্বীকৃতি পাচ্ছি না, এই প্রশ্ন আমার সব সময় থাকবে। যত দিন পর্যন্ত স্বীকৃতি না পাই। আমাদের কোনো অর্গানাইজেশন কেন নেই, কোনো সোসাইটি কেন নেই, আমাদের নিজের কমিটি নাই, যেখানে আমাদের সঙ্গে হওয়া কোনো অন্যায়ের বিচার হবে, যেখানে আমাদের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন দেওয়া থাকবে।
এখন এমন হচ্ছে কেউ একটু জিন্স পরল, নাচানাচি করল—তারাই মডেল হয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা মারাত্মক। আমার মনে হয় মডেলিংয়ে সবচেয়ে বেশি হিংসেমি কাজ করে। সবাই মিলে খেতে গেলে তো অল্প অল্প ভাগে পড়বে। সবাইকে ফেলে দিয়ে আমি একা যদি খেতে পারি, তাহলে অনেক বেশি খেতে পারব। কমিটি হলে, অর্গানাইজেশন হয়ে গেলে তো সবাই মিলে কাজ করব, একাত্ম থাকতে হবে। তাহলে আমি খুব বেশি এখান থেকে নিতে পারব না। এর জন্য বড় বড় মাথারাও চায় না যে অর্গানাইজেশনটা হোক। বাট আমি স্ট্রংলি চাই অর্গানাইজেশন হোক। চাই সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আমাদের কমিটি হোক। যেখানে আইনটা বাস্তবায়ন করা হবে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ও মডেলদের জন্য নতুন আইন করা হোক। আমি কাজ চালাচ্ছি। সামনে আরও এগিয়ে যাব। আশা করি কিছু একটা করতে পারব।
তাহলে কি পুরো ব্যাপারটা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বলছেন?
মারিয়া: শিক্ষার সাথে অনেক বেশি যুক্ত। আর তারপর তো একটা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আসেই। শিক্ষা, প্রপার গাইডলাইন থাকলে নেক্সট জেনারেশন সুন্দর হয়। হবেও। গুরু যদি না জানে কোনো কিছু, কীভাবে শিষ্যদের শেখাবে?
আপনি তো অনেকগুলো দেশ ঘুরেছেন। বিদেশে থেকেছেন অনেক দিন। সেসব ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বেসিক পার্থক্যটা কী?
মারিয়া: আকাশ আর পাতাল সমান পার্থক্য। একটা ফ্যাশন শো, একটা প্রোজেক্ট করতে গেলে, ছোট্ট থেকে ছোট্টতর কিছু করতে গেলেও তারা অনেক বেশি অর্গানাইজড থাকে। একটা ফটোশুটের জন্য ১৫-২৫ দিন সময় নেয়। ওরা লে-আউট তৈরি করে, মডেলকে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে, মডেলের ম্যাজারমেন্ট নিয়ে রাখবে, ট্রায়ালের জন্য ডাকবে, মডেলের স্কিন টেস্ট করবে, স্কিন কেয়ারের ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে। এর পর প্লেস, ভেন্যু, ব্যাকগ্রাউন্ড কী হবে, ছবির কালার কারেকশন কেমন হবে—সবকিছু তারা ঠিক করে রাখে। পরিকল্পনামাফিক করে। সবকিছু টাইম টু টাইম হবে।
আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সকাল ৮টা মানে ৮টা। তারা সবকিছু মেনে নেয়। কাজের প্রয়োজনে তারা ছোট পোশাকও পরতে পারে, আবার বোরকাও পরতে পারে। তারা পেশাটাকে সিরিয়াসলি নেয়। এবং তারা খুবই সম্মানের সাথে নেয়। নাচতে নেমে তারা ঘোমটা দেওয়ার চেষ্টা করে না। আর বাঙালি হচ্ছে আমি নাচব এবং ঘোমটাও সরতে পারবে না। বাংলাদেশিদের অ্যাপ্রোচ, বিহেভ, প্রেজেন্টেশন দেখলে অনেক দুঃখ লাগে। নতুন মডেলদের সঙ্গে এমন যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা হয়, যা-তা বলা হয়, গালিগালাজও করা হয়। কিন্তু দু-চার-পাঁচ বছর পর সে যখন অনেক বড় মডেল হয়ে যায়, তাকেই ধরে কিন্তু চাটে। নতুন মডেলদের সঙ্গে বিদেশে এমন করা হয় না। বলা হয়, ডোন্ট ডু দিস। আর এ দেশে তো নির্দোষ-চুপচাপ মডেলের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এ জন্যই দু-চার-পাঁচ বছর পর সেই মডেল বেয়াদব হয়ে যায়। অন্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কারণ, সে তো শুরুতে ভালো ব্যবহার পায়নি। ওকে তো শেখায়নি আচরণ কেমন হবে।
আপনি কী মনে করেন, একটা রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট থাকা উচিত? যেমন চারুকলা ইনস্টিটিউট আছে।
মারিয়া: অবশ্যই। প্রত্যেকটা দেশে আছে। পাশের দেশ ইন্ডিয়াতেই আছে। বাংলাদেশে কেন নেই? বাংলাদেশের মাটি, ঋতু সবই ভালো। কী নেই! যাদের ট্যালেন্ট আছে, তারা সাংঘাতিক ট্যালেন্টেড হয়। এত ট্যালেন্ট, রিসোর্সেস নিয়ে আমরা বসে আছি। তারপরও কেন হবে না! আমাদের কেন চিনবে না ইন্টারন্যাশনালি? কেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নাম অন্যান্য দেশ জানবে না? এ বিষয়টা তো খারাপ লাগে!
যারা সিনিয়র আছেন, একসঙ্গে কাজ করেন, তাদের কি বাংলাদেশে বড় প্ল্যাটফর্ম বানানোর ইচ্ছে আছে?
মারিয়া: সবার নেই। আমার ইচ্ছে আছে। আর মডেল আসিফ খানের আছে। আর কারও কাছে এই জিনিসটা পাইনি।
টেলিভিশন আর্টিস্টদের অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। আমাদের মডেলদের নেই। কেন জানি মনে হয় জেলাসি কাজ করে। তারা এক জোট হতে চায় না। একসঙ্গে হলেই তারা ইনফ্যারিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে। তারা ভাবে এখন বুঝি একা চলতে পারব না। এটা আসলে ভুল।
ভবিষ্যৎ কী?
মারিয়া: যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ। সব জায়গায় অন্ধকার। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো ফ্যামিলি থেকে কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে আসবে না। কাজ করবে না। যদি এখন ইন্ডাস্ট্রির মানুষ সোচ্চার হয়, প্রত্যেকের মধ্যে যদি দায়িত্ববোধ কাজ করে, যদি অ্যাকশন নেয়, তাহলে একেকটা সিঙ্গেল অ্যাকশন যথেষ্ট।
আরেকটা জিনিস জানতে চাই, আপনি তো মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন, র্যাম্প করেছেন, অ্যাক্টিং করেছেন। কোনটা বেশি ভালো লেগেছে? কোনটার প্রতি আগ্রহ বেশি?
মারিয়া: অবশ্যই র্যাম্প।
অ্যাক্টিং কেন নয়?
মারিয়া: যারা অ্যাক্টিং করেন, তাঁদের আমি সম্মান জানাই। অভিনয়ে অনেক কষ্ট। অনেক বেশি কষ্ট। ঘরে, বাইরে, বস্তিতে, এখানে-সেখানে অনেক জায়গায় গিয়ে থাকতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। আমার দ্বারা এত কষ্ট সম্ভব না।
অনেক ধন্যবাদ আজকের পত্রিকাকে সময় দেওয়ার জন্য।
মারিয়া: আপনাকে এবং আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
প্রথমে আপনার সৌন্দর্য চর্চার বিষয়ে জানতে চাই।
মারিয়া: ত্বকের চর্চা করার খুব একটা সময় হয় না। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারপরও ত্বকের চর্চা করা খুব জরুরি। নয়তো এত মেকআপ নেওয়ার পর, এত লাইটের মধ্যে কাজ করে সবকিছু ডিজাস্টার হয়ে যায়। প্রতিদিন আমি প্রচুর পানি পান করি। অনেক বেশি লিকুইড; অর্থাৎ, তরল খাবার খাই। রোজ ফল খাই। বিশেষ করে যে ফলগুলো শরীরকে বিষমুক্ত করে, সেসব ফল বেশি খাই। যেমন, কলার মধ্যে অনেক পটাশিয়াম থাকে। এটা শরীরকে বিষমুক্ত করতে সাহায্য করে। ত্বককে উজ্জ্বল করে। অ্যাভোকাডো খাই। এটি শরীরের টক্সিক উপাদানগুলো কমায়। এ ছাড়া তৈলাক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কারণ, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে শরীরে ফ্যাট জমা হয়, স্কিনের লেয়ারে তেল জমতে থাকে।
তবে যেহেতু আমি বাঙালি, কিছু খাবার খেতে তো ভালো লাগেই। যেমন, মেজবানি মাংস, কালা ভুনা, তেহারি, বিরিয়ানি—এসব কে না পছন্দ করে। এগুলো আমি খাই। তবে লিমিটেড খাই।
ত্বক চর্চার বিষয়ে আমি, মুখ সব সময় পরিষ্কার রাখা, বারবার মুখ ধোয়া, মেকআপের পর ভালো করে মেকআপ রিমুভ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মেনে চলি। মেকআপ রিমুভ করতে আমি h2o ব্যবহার করি। এটা বায়োডার্মার পণ্য। এতে মিনারেলস আছে। এটি স্কিনের পোরস রিমুভ করে। এর পর ভিটামিন সিযুক্ত ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ওয়াশ করি। তারপর টোনার ব্যবহার করি। মুখ পরিষ্কার করার পর একটা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি। তারপর ঘুমাতে চলে যাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠেও একইভাবে ত্বক চর্চা করি। মুখ ধোয়ার পর টোনার, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি এবং সানব্লক ক্রিম লাগাই। ঘর থেকে বের হলেই যে সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, তা নয়। ঘরে থাকলেও সানব্লক ব্যবহার করা যায়। কারণ আমরা ঘরে যে লাইটগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো থেকেও অনেক রশ্মি আসে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
চুলের জন্য কী করেন?
মারিয়া: চুলে আমি অ্যালোভেরা লাগাই। আমার চুল সারা বছরই ডাই করা থাকে। ডাই করলে চুল অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। বাজারে যে অ্যালোভেরা জেল পাওয়া যায়, ওটা নয়; অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে চুলে লাগাই। আমার ছাদে অনেক অ্যালোভেরা গাছ আছে। অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে অলিভ ওয়েল ও ক্যাস্টর ওয়েল মিশিয়ে চুলে লাগাই। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলি।
দু-চার মাস পরপর চুল ট্রিম করি। কারণ, চুল ফেটে যায়। তাই ট্রিমিংটা নিয়মিত করি। যখন চুল ডাই করি, তখন চুলে তেল দিতে হয়। স্পা করতে হয়। দুই মাস অন্তর অন্তর স্যালুনে গিয়ে হেয়ার স্পা করার চেষ্টা করি।
আরেকটা বিষয় জানতে চাই তা হলো, আপনি ঠোঁটের যত্নে কিছু করেন কিনা?
মারিয়া: ঠোঁটের যত্নে স্পেশাল কিছু করা হয়ে ওঠে না। আমার ঠোঁট অনেক ডার্ক। বিভিন্ন কারণে ডার্ক হয়ে যায়। তাই চিনি ও এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল মিশিয়ে পাঁচ মিনিট হালকা করে স্ক্রাব করি। এতে ঠোঁটের কালো দাগ অনেকটাই কমে আসে।
ত্বকের জন্য বেকিং সোডাও খুব কার্যকরী। অনেকের স্কিন খুব সেনসিটিভ। তারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁরা যদি বেকিং সোডা দিয়ে রূপচর্চা করেন, তাহলে এটা বেশ ভালো কাজ করে। বেশি মেকআপ ব্যবহার ও সূর্যের আলোর কারণে অনেকের ত্বকের পোরস অনেক বড় হয়ে যায়। পোরস থেকে গভীরভাবে মেকআপ রিমুভ করা কষ্টকর হয়ে যায়। তাদের জন্য পরামর্শ হলো, একটা মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা। মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপের সঙ্গে অল্প একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে ত্বকে ৩০-৩২ সেকেন্ড ম্যাসাজ করলে পোরসগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়।
ফিটনেসের জন্য কী করেন?
মারিয়া: ফিটনেসের জন্য তেমন কিছুই করা হয় না। তবে আমার মেইন বিষয়টা হলো মেটাবলিক সিস্টেম। আমার মেটাবলিক সিস্টেম খুব ভালো। ছোট থেকে মিশনারি স্কুলে আমাকে শেখানো হয়েছে যার যার মেটাবলিক সিস্টেম জেনে খাবার গ্রহণ করা উচিত। আমি সেভাবেই খাবার খাই।
চিকিৎসকেরা বলেন, চর্বি ঝরানো এবং ফিটনেস বজায় রাখা ৮০ শতাংশ নির্ভর করে খাবারের ওপর। বাকি ২০ শতাংশ নির্ভর করে ওয়ার্ক আউটের ওপর। আমি খাবারটা সেভাবেই গ্রহণ করি। সকালের নাশতায় আমি টোস্ট, সুগার ছাড়া হরলিক্স ইত্যাদি খাই।
মডেলিং জগতে আপনার আগমন ও বিচরণ সম্পর্কে জানতে চাই।
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি ফ্যাশন টিভি সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফ্যাশন টিভির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তাদের সঙ্গে সাড়ে চার বছর কাজ করেছি। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ডিজাইনারদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। গুচি, আরমানি, ডিএনজি, ডিজি—এসব ব্র্যান্ডের সঙ্গে আমার কাজ করা হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে যখন এলাম, র্যাম্প নিয়ে কাজ বেশি হয়েছে। র্যাম্প নিয়ে কাজ করতে থাকলাম।
একটা পর্যায়ে আর ভালো লাগছিল না। অনেকের মনের কলুষতা নিতে পারছিলাম না। আমি যেতে চাই। কিন্তু কেন যেন পারছি না। আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছিলাম।
তারপর দুঃখজনকভাবে আমার বিয়ে হলো। তারপরের খবরে আমি জানতে পারলাম—আমি মা হতে যাচ্ছি। দ্যটস দ্য সিগনাল, যে আমি আর কাজ করব না। তখন কাজ থেকে নিজেকে আমি সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিয়েছি। বিশেষ করে র্যাম্প থেকে। ২০০৯-এর পর থেকে ২০১০-১৪ পর্যন্ত র্যাম্প থেকে দূরে ছিলাম। ২০১৫ সালে আমি আবার এসে জয়েন করেছি। ওই পাঁচ বছর আমি সিডনিতে ছিলাম। তারপর দেশে ফিরে আসছি। কাজ শুরু করেছি। আমি ভেবেছিলাম অন্য জব করব। কিন্তু তা হয়নি। মডেল আজরা মাহমুদ আমাকে ফোন দিলেন ইয়েলোর একটা শোয়ের জন্য। জানান, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল মডেল দুজন আসছে। ইউকে থেকে একজন এবং পাকিস্তান থেকে একজন। আজরা বললেন, ‘আমি চাই তুই বাংলাদেশকে প্রেজেন্ট কর। প্লিজ না বলবি না আমাকে।’ আমি আজরা মাহমুদকে না করতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম ওই একটা শো করে আবার গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু তা আর হলো না।
২০০২ সালের ২৬ নভেম্বরে র্যাম্পে প্রথমবার শো করেছিলাম। সেটায় শাবনূর, পপি, ফেরদৌসসহ আরও অনেক নায়ক-নায়িকা হেঁটেছেন আমাদের সঙ্গে। সেই স্টেজে আমার প্রথম র্যাম্পে পা রাখা হয়েছিল। সেখানে আমি প্রথম পেয়ার হিসেবে দাঁড়াই ওয়ান অ্যান্ড ওনলি লিজেন্ডারি মডেল নোবেল ভাইয়ের সঙ্গে। যাকে ছোটবেলা থেকে টিভিতে দেখেছি, সেই মানুষটাকে প্রথমবারের মতো স্টেজে দেখছি, তাঁর সঙ্গে স্টেজে পা রাখছি র্যাম্প মডেল হিসেবে—এটা আমার জন্য অনেক বড় অ্যাচিভমেন্ট ছিল। তখন বেছে নিয়েছিলাম র্যাম্প হলো আমার প্ল্যাটফর্ম। এর আগে আমি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছি। তারপর চ্যানেল আইয়ের একটা প্রোগ্রামে আমাকে হোস্ট হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ৭-৮ মাসের মধ্যে আমাকে নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হলো। আমার হাইটটা ভালো ছিল। দেখতে অন্যরকম ছিলাম। এ কারণে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। র্যাম্পে হেঁটে এত ভালো লেগেছিল, অন্য কোনো কাজে সেটা লাগেনি। আমি মনে করেছিলাম ওটাই আমার প্ল্যাটফর্ম।
২০১৫ সালে ইয়েলোর শোয়ের জন্য আজরা যখন ডাকলেন, আমি ভেবেছিলাম, একটা শো করে গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু পরে আর পারিনি। হাঁটতেই থাকলাম। এখনো হাঁটি, কম।
ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ শুরু করলেন কবে থেকে?
মারিয়া: ২০১৯ সাল থেকে কাজ করা কমিয়ে দিয়েছি। আমার মনে হলো ১৯-২০ বছর তো হয়ে গেল। আর কত? এখন আমরা যদি না সরি, তাহলে নিউ জেনারেশন জায়গা পাবে না। একটা সময় থাকে মডেলিংয়ের। এবং সেই সময়টা আমি পার করে এসেছি। ২০১৯ সালে এসে মনে হলো আমার এখন কাজ কমানো উচিত। ডিরেকশনে যাওয়া উচিত। আমি একটি বিজ্ঞাপন বানাই। ক্যামেরার পেছনে কাজ করি আমি। স্টোরি আমার লেখা ছিল। প্রডিউস করেছি আমি। টিভিসি করলাম। তারপর একটা ফ্যাশন ফিল্ম করলাম। তখন মজাটা পেয়ে গেলাম। ভাবলাম ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করব।
গত বছরের নভেম্বরে আমি গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গ্রুমিং করাতাম। একটু একটু করে সময় দিয়ে, সবকিছু দিতে পারি না স্টুডেন্টদের। তাই নভেম্বর থেকে গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এখন সেকেন্ড ব্যাচ চলছে। করোনা মহামারির জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে আমাদের। যেখানে একটা ব্যাচে ২০ জন স্টুডেন্ট থাকে, সেখানে পেয়েছি ১৬ জন স্টুডেন্ট। এর মধ্যে চারজন এই ব্যাচে করবে না। আর দুজনের সার্জারি হয়েছে। তারা পরের ব্যাচে জয়েন করবে। তবে আমি আশাবাদী। মানুষের যে বিশ্বাস অর্জন করছি, সে জায়গাটা তৈরি করার চেষ্টা করছি। এই জায়গা থেকে যে টাকা আসবে, তা দিয়ে ব্যবসা করার প্রয়োজন নেই। যেই টাকাটা আমি চার্জ করছি, তা যথেষ্ট নয়। বাট আমার ইচ্ছা হলো আমার লিগ্যাসি ধরে রাখা। ২০টা বছর মডেলিং করে কী পেলাম! অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। অনেকগুলো সম্মাননা স্মারক পেয়েছি।
এই মাইলস্টোনগুলো সম্পর্কে শুনি...
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি বিউটি কন্টেস্টে আমি পার্টিসিপেট করেছিলাম ২০০৫ সালে। ৩৯টি দেশের মধ্যে আমি বিজয়ী হয়েছিলাম। তারপর ফ্যাশন টিভির জন্য কাজ করেছি। আমি ডিজেলের জন্য কাজ করেছি। ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল টপ ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেছি। বাংলাদেশের ডিজাইনারদের নাম না নিলে তো হয়ই না। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ—এরাই টপ ডিজাইনার। বিবি রাসেলের সঙ্গে আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা কাজ হয়েছিল। বিবি আপার সঙ্গে আমার একটু ভুল বোঝাবুঝির কারণে কাজ করা হয়নি আর। তবে ভবিষ্যতে আমি কাজ করব তাঁর সঙ্গে। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ, বিপ্লব সাহা, শৈবাল সাহা, শারুখ আমিন—দেশের যত প্রমিনেন্ট ডিজাইনার আছেন, সবার সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। শারুখ আমিন আমাকে প্রথম র্যাম্পে হাঁটিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে যখন প্রথম ফ্যাশন টিভি এসেছিল, তখন বাংলাদেশকে আমি প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। সবগুলো মডেল ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, স্পেন থেকে। ওসব দেশ থেকে ২৫ জন মডেল এসেছিল। আমি একমাত্র বাঙালি মেয়ে ছিলাম। ওটা আমার জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার ছিল। এমন ছোট ছোট অনেক মাইলস্টোন পার করে গিয়েছি। আমি সরওয়ার ফারুকি, অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করেছি। টিভিসির কাজ করেছি, টেলিফিল্মের কাজ করেছি, অভিনয় করেছি। ইন্টারন্যাশনালি কোনো কাজ হলেই আমাকে ডাকত। অমিতাভ রেজা আমাকে বলতেন, এ দেশের বিদেশি নায়িকা। ক্রিকেটের সঙ্গে আমি বেশ অনেক দিন জড়িত ছিলাম। খুব প্রশংসা পেয়েছি।
কেন উত্তরসূরি তৈরি করার আগ্রহ?
মারিয়া: একজন মানুষ কত দিনই-বা বাঁচতে পারে! ১০০ বছর! ১২০ বছর! এর থেকে বেশি না। কিন্তু মানুষ চিরঞ্জীব হয় তার কর্ম দিয়ে। তার কাজ এবং সমাজে সে কী অবদান রেখেছে, সেই অবদানের ওপর ভিত্তি করে তার উত্তরসূরি সৃষ্টি হয়। তার অমরত্বটা থেকে যায়। আমি অমর হতে চাই। আমি চাই আমার স্টুডেন্টরা কাজ করবে। আমি মারিয়া যদি মরেও যাই, তারপরেও যেন মানুষ বলে জেনেসিস মারিয়া। কিংবা এই মডেল জেনেসিসের স্টুডেন্ট। মারিয়ার স্টুডেন্ট আজকে বিশ্বজয় করেছে। হতেও তো পারে। আমি আমার ইনস্টিটিউট থেকে পাঠাতেও তো পারি।
এই যে এতগুলো বছর পার করে দিয়েছি, আমার নাম নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে কেউ যদি বড় কোনো জায়গায় ক্রস ওভার করতে পারে, তাহলে তো আমার নাম হবে। তাই না? তখন তাকেও কেউ জিজ্ঞেস করবে, তোমার মেন্টর কে ছিল? তখন সে আমার নামটা নেবে। এভাবে আমি বেঁচে থাকব।
আপনি একেবারে ছোটবেলা থেকেই বাইরে। সচরাচর যারা বাইরে যান তাঁরা ফিরে আসেন না। আপনি কেন ফিরলেন?
মারিয়া: বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। ডিজাইনাররা আমাকে নিয়েছেন। ভালোবেসেছেন। আমি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে দেখলাম, দেশটা আমার। এই দেশের মানুষগুলো আমার। এই দেশের ভালো ও মন্দটাও আমার। বিদেশের তো সবই আছে। এত সুন্দর সুন্দর মডেল আছে। এক হাজারটা মারিয়া ওদের হাতের মুঠোয় আছে। বাংলাদেশে কয়টা মারিয়া আছে? সো আমার মনে হয়েছিল আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য হলো আমার দেশকে কিছু দেওয়া। আমি যদি আমার দেশকে পথ না দেখাই, তাহলে অন্য কেউ তো এসে পথ দেখাবে না। আমার কর্তব্য এটা। আমার সুযোগ থাকলে আমি দেশকে গ্লোবালি নিয়ে যাব। আমার দেশ সোনার বাংলাদেশ। গুহার মধ্যে লুকিয়ে রাখলে এ দেশকে আলোকিত করা যাবে না। এটা সবাই বলে—নিজের ব্যাপারে চিন্তা না করে, সেলফিশ না হয়ে চলে আসছ! ৮০ শতাংশ লোক সেলফিশ, ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস। ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস না হলে দেশটা তো টিকে থাকত না। তাই না? সো আমার মতো মারিয়া আরও অনেক কর্নারেই আছে। যারা দেশের জন্য কিছু করতে চায়। দেশপ্রেমের কারণে বারবার দেশে ফিরে আসে। আমাকে যদি এখানে থাকতে দেওয়া না হয়, অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি, আমি নিজ দেশের জন্য কাজ করব। কারণ আমার শেকড় এখানে।
কেমন লাগছে ২০ বছর আগের ও ২০ বছর পরের অবস্থা? এখনকার জেনারেশন, ইন্ডাস্ট্রি—সবকিছু কেমন দেখছেন?
মারিয়া: ১০ বছর আগেও যেমন ছিল, এখনো যদি এমন থাকতাম, তাহলে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। অধঃপতন, অবনতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। অসম্মান তো আছেই। ১০ বছর আগেও মডেল হিসেবে পরিচয় দিলে ভ্রু কুঁচকে তাকাত লোকজন। অপমানজনক নজর দিত। আজও যখন নিজেকে মডেল বলি, কিছু কিছু মানুষের কাছে অসম্মানিত হতে হয়। কিছু কিছু মানুষ জায়গাটাকে নোংরা করে ফেলেছেন। এ কারণে বাদবাকি যারা পরিষ্কার মানুষ আছেন, তাঁদের গায়েও নোংরা লেগে যাচ্ছে। এখনকার দিনে অসংখ্য মানুষ মডেলিং, অ্যাক্টিং এসবে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু তাদের আর্ট, কাজ ইত্যাদি পছন্দ না। ফ্যামিলির সঙ্গে যুদ্ধ করে মিডিয়াতে কাজ করেছি। যুদ্ধ করে চলেছি। একা একা চলেছি। কখনো খারাপ পথে যাইনি। বাবা-মায়ের শেখানো নীতিতে চলেছি। অনেক স্ট্রাগল করেছি। প্যাশন ছিল আমার, আর্ট ছিল। এখনকার সবার টাকার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। তারা কাজ শিখতে চায় না। ভালোমতো কাজ করতে চায় না। কয়েকটা ম্যাগাজিন, টিভিতে চেহারা দেখাবে, স্টেজে কয়েকবার উঠবে এবং ছবিগুলো নিয়ে অনেক টাকা আদায় করবে। এই যে কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো আসলেই ডিসটার্বিং। যারা কাজ করতে চাচ্ছেন, তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। যাদের কাজ করার ইচ্ছা নেই, তারা চেহারা দেখিয়ে, ঘুরে বেড়িয়ে অন্যদের থেকে টাকা আয় করার সোর্স বানানোর ইচ্ছা যাদের, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে প্রায়োরিটি। এসবের কারণে ইন্ডাস্ট্রিটা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচুর মানুষ আসছেন, কিন্তু কাজের মানুষ তো আমি দেখি না।
আমাদের এখনো মানুষ বলে, তোমাদের ফার্স্ট ব্যাচটা অনেক কিছু দেখিয়ে গেছে। সেকেন্ড ব্যাচ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কামড়ে ধরে আছে। এখনো পর্যন্ত তোমাদের মতো মডেল দেখি না। আরেকটা সেকেন্ড মারিয়া, ইমি, রুমা, আজরা দেখি না। আমি এখন উল্লেখযোগ্য কাউকে দেখি না। প্রত্যেকটা মানুষের একটা সিংহাসন আছে। আমার একটা আছে। আমি যে সিংহাসন থেকে নেমে অন্যকে ওঠার সুযোগ দেব, আমার সিংহাসনে কাউকে বসতে হবে তো। কাউকে তো এসে জায়গাটা দখল করতে হবে। গত পাঁচ বছর ধরে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি।
সম্প্রতি আমরা কিছু মডেল দেখছি, যারা ইন্টারন্যাশনালি কাজ করছেন। অনেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছেন। সেটা দেখে তো আরেকটা ইমপ্রেশন তৈরি হয়।
মারিয়া: একসময় ‘ফেস অব এশিয়া’ নামে কনটেস্ট হতো। সেখানে যাওয়ার জন্য প্রসেসটা করে দেওয়া হতো। সেখানে ব্যক্তিগত কিছু খরচ হতো। সেখানে আজাদ ফারহানা মিলি নামের একজন মডেল গেছেন। অবনি নামের একজনও গিয়েছেন। সেখানে তাঁরা বিজয়ী হয়েছিলেন। এ রকম কয়েকজন আছেন যারা ‘ফেস অব এশিয়া’ থেকে ক্রাউনগুলো পেয়েছেন। বাদবাকি ইন্টারন্যাশনাল কনটেস্টে কে গিয়েছেন? কোনো জায়গায় যেতে পারেনি তো এখন পর্যন্ত। সিলেক্টেডও হয়নি যাওয়ার জন্য। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের খেলাটা তো দেখলেন আপনারা, গত বছর (২০২০) কী হলো?
ব্যাঙের ছাতার মতো একাডেমি, গ্রুমিং স্কুল হচ্ছে। ঠিক সেরকম মাশরুমের মতো অনেকগুলো কনটেস্ট ওপেন হচ্ছে। সেই কন্টেস্টে যে পটেনশিয়াল ক্যানডিডেট থাকেন, তাঁর মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাঁকে দাম দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে সামনে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রপার ওয়েতে রান করা হচ্ছে না।
প্রপার ওয়েতে রান কেন হচ্ছে না? ইন্ডাস্ট্রির বয়স তো খুব কম নয়। আপনারা তো কাজ করছেন। সময় তো অনেক গেল। আমরা অনেক কিছুই দেখলাম। অনেকগুলো জেনারেশন দেখলাম। এখন কেন বলছেন যে প্রপার ওয়েতে হচ্ছে না?
মারিয়া: প্রবলেমটা হচ্ছে নিউ মানি। নিউ পিপল হু হ্যাজ নিউ মানি ইন দিস স্টেজ। হি হ্যাজ নো এডুকেশন, নো ক্লাস, নো নলেজ। দিস ইজ দ্য প্রবলেম। এখন একটা হ্যাচারির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, ট্রাক সমিতির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, তারপর এসে ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে ইনভেস্ট করতে চান, তাঁর কিন্তু রুচিটা ওইরকমই থাকবে। তাঁর মনে হবে তিনি নায়িকা দেখবেন, নায়িকার হাত ধরে বসবেন, গল্প করবেন, মডেলদের নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যাবেন। কারণ, মডেলরা অনেক সেক্সি ক্লথিং পরে, তারা দেখতে হলিউড-বলিউডের হেরোইনের মতো। তো তাঁরা একটু ঘুরবেন ফিরবেন, আর ফ্রেন্ডদেরকে ছবি দেখিয়ে বলবেন ‘আমার গার্লফ্রেন্ড এটা’। একজন অর্ধশিক্ষিত ট্রাক সমিতির সভাপতি বা হ্যাচারি ব্যবসায়ী কী করে বুঝবেন বিউটি কী, নলেজ কী, আর কোয়ালিফিকেশন কী। আমাদের দেশে তো ক্লাসি, এডুকেটেড, এলিট পিপলের সংখ্যা কম। এসব কারণেই ঘটছে অনেক কিছু।
আমিও যেন ওয়ালের মধ্যে ঠেসে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে আমি আবার গা ঝাড়া দিই। ধাক্কা দিই। বলি, এই সরো। জায়গা ছাড়ো। আমার ঘর খালি করো। আমার ঘরে ময়লা এনো না। তোমাদের ঘরে যা করার করো, কিন্তু আমার ঘরে প্রবেশ করো না। আই ডোন্ট লাইক ইট। এটা তো সবাই করতে পারছে না। সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছি আমরা। যারা সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের ইচ্ছাটাও খুব কম। তারা ইচ্ছাটাকে নিয়ে কাজ করতে চায় না।
মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে, বিবি আপার ক্ষমতা ছিল অনেক কিছু করার। কিন্তু বিবি আপা করলেন না। এর পেছনে সম্পূর্ণ বিবি আপার দোষও না। এর পেছনে বাঙালির দোষ। দেশের মানুষের দোষ। বিবি রাসেলের মতো একজন ডিজাইনার, যিনি ইন্টারন্যাশনালি এত সম্মানিত হয়েছেন, তাঁকে বাংলাদেশ কিছুই দিতে পারেনি। কতটুকু সম্মান দিয়েছে তাঁকে? দুই পক্ষই দায়ী। বিবি আপার ইচ্ছেটা কম ছিল। তাঁর ইচ্ছা না থাকার কারণ হলো, বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে প্রায়োরিটি দিচ্ছিল না। তাঁকে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছিল না। জেলাসি থেকে তাঁর আশপাশের অনেক মানুষই তাঁকে পুট ডাউনের চেষ্টা করেছে। অ্যান্ড শি লস্ট হার ইন্টারেস্ট। বড় বড় মানুষেরা যদি এভাবে ছেড়ে চলে যান, তাহলে আমাদের দেশের ভালো কী করে হবে? ভালো কিছু হবে না। খারাপই হবে।
আরেকটা জিনিস, অনেক কিছুর ইনস্টিটিউট হলো, আমাদের ফ্যাশন মডেলিং—এই ইন্ডাস্ট্রির কোনো ইনস্টিটিউট হলো না। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
মারিয়া: আমি শুধু আমারটা বলতে পারি। বাকিদের কথা বলতে পারব না। কেন সরকারিভাবে আমরা স্বীকৃতি পাচ্ছি না, এই প্রশ্ন আমার সব সময় থাকবে। যত দিন পর্যন্ত স্বীকৃতি না পাই। আমাদের কোনো অর্গানাইজেশন কেন নেই, কোনো সোসাইটি কেন নেই, আমাদের নিজের কমিটি নাই, যেখানে আমাদের সঙ্গে হওয়া কোনো অন্যায়ের বিচার হবে, যেখানে আমাদের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন দেওয়া থাকবে।
এখন এমন হচ্ছে কেউ একটু জিন্স পরল, নাচানাচি করল—তারাই মডেল হয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা মারাত্মক। আমার মনে হয় মডেলিংয়ে সবচেয়ে বেশি হিংসেমি কাজ করে। সবাই মিলে খেতে গেলে তো অল্প অল্প ভাগে পড়বে। সবাইকে ফেলে দিয়ে আমি একা যদি খেতে পারি, তাহলে অনেক বেশি খেতে পারব। কমিটি হলে, অর্গানাইজেশন হয়ে গেলে তো সবাই মিলে কাজ করব, একাত্ম থাকতে হবে। তাহলে আমি খুব বেশি এখান থেকে নিতে পারব না। এর জন্য বড় বড় মাথারাও চায় না যে অর্গানাইজেশনটা হোক। বাট আমি স্ট্রংলি চাই অর্গানাইজেশন হোক। চাই সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আমাদের কমিটি হোক। যেখানে আইনটা বাস্তবায়ন করা হবে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ও মডেলদের জন্য নতুন আইন করা হোক। আমি কাজ চালাচ্ছি। সামনে আরও এগিয়ে যাব। আশা করি কিছু একটা করতে পারব।
তাহলে কি পুরো ব্যাপারটা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বলছেন?
মারিয়া: শিক্ষার সাথে অনেক বেশি যুক্ত। আর তারপর তো একটা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আসেই। শিক্ষা, প্রপার গাইডলাইন থাকলে নেক্সট জেনারেশন সুন্দর হয়। হবেও। গুরু যদি না জানে কোনো কিছু, কীভাবে শিষ্যদের শেখাবে?
আপনি তো অনেকগুলো দেশ ঘুরেছেন। বিদেশে থেকেছেন অনেক দিন। সেসব ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বেসিক পার্থক্যটা কী?
মারিয়া: আকাশ আর পাতাল সমান পার্থক্য। একটা ফ্যাশন শো, একটা প্রোজেক্ট করতে গেলে, ছোট্ট থেকে ছোট্টতর কিছু করতে গেলেও তারা অনেক বেশি অর্গানাইজড থাকে। একটা ফটোশুটের জন্য ১৫-২৫ দিন সময় নেয়। ওরা লে-আউট তৈরি করে, মডেলকে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে, মডেলের ম্যাজারমেন্ট নিয়ে রাখবে, ট্রায়ালের জন্য ডাকবে, মডেলের স্কিন টেস্ট করবে, স্কিন কেয়ারের ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে। এর পর প্লেস, ভেন্যু, ব্যাকগ্রাউন্ড কী হবে, ছবির কালার কারেকশন কেমন হবে—সবকিছু তারা ঠিক করে রাখে। পরিকল্পনামাফিক করে। সবকিছু টাইম টু টাইম হবে।
আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সকাল ৮টা মানে ৮টা। তারা সবকিছু মেনে নেয়। কাজের প্রয়োজনে তারা ছোট পোশাকও পরতে পারে, আবার বোরকাও পরতে পারে। তারা পেশাটাকে সিরিয়াসলি নেয়। এবং তারা খুবই সম্মানের সাথে নেয়। নাচতে নেমে তারা ঘোমটা দেওয়ার চেষ্টা করে না। আর বাঙালি হচ্ছে আমি নাচব এবং ঘোমটাও সরতে পারবে না। বাংলাদেশিদের অ্যাপ্রোচ, বিহেভ, প্রেজেন্টেশন দেখলে অনেক দুঃখ লাগে। নতুন মডেলদের সঙ্গে এমন যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা হয়, যা-তা বলা হয়, গালিগালাজও করা হয়। কিন্তু দু-চার-পাঁচ বছর পর সে যখন অনেক বড় মডেল হয়ে যায়, তাকেই ধরে কিন্তু চাটে। নতুন মডেলদের সঙ্গে বিদেশে এমন করা হয় না। বলা হয়, ডোন্ট ডু দিস। আর এ দেশে তো নির্দোষ-চুপচাপ মডেলের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এ জন্যই দু-চার-পাঁচ বছর পর সেই মডেল বেয়াদব হয়ে যায়। অন্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কারণ, সে তো শুরুতে ভালো ব্যবহার পায়নি। ওকে তো শেখায়নি আচরণ কেমন হবে।
আপনি কী মনে করেন, একটা রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট থাকা উচিত? যেমন চারুকলা ইনস্টিটিউট আছে।
মারিয়া: অবশ্যই। প্রত্যেকটা দেশে আছে। পাশের দেশ ইন্ডিয়াতেই আছে। বাংলাদেশে কেন নেই? বাংলাদেশের মাটি, ঋতু সবই ভালো। কী নেই! যাদের ট্যালেন্ট আছে, তারা সাংঘাতিক ট্যালেন্টেড হয়। এত ট্যালেন্ট, রিসোর্সেস নিয়ে আমরা বসে আছি। তারপরও কেন হবে না! আমাদের কেন চিনবে না ইন্টারন্যাশনালি? কেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নাম অন্যান্য দেশ জানবে না? এ বিষয়টা তো খারাপ লাগে!
যারা সিনিয়র আছেন, একসঙ্গে কাজ করেন, তাদের কি বাংলাদেশে বড় প্ল্যাটফর্ম বানানোর ইচ্ছে আছে?
মারিয়া: সবার নেই। আমার ইচ্ছে আছে। আর মডেল আসিফ খানের আছে। আর কারও কাছে এই জিনিসটা পাইনি।
টেলিভিশন আর্টিস্টদের অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। আমাদের মডেলদের নেই। কেন জানি মনে হয় জেলাসি কাজ করে। তারা এক জোট হতে চায় না। একসঙ্গে হলেই তারা ইনফ্যারিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে। তারা ভাবে এখন বুঝি একা চলতে পারব না। এটা আসলে ভুল।
ভবিষ্যৎ কী?
মারিয়া: যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ। সব জায়গায় অন্ধকার। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো ফ্যামিলি থেকে কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে আসবে না। কাজ করবে না। যদি এখন ইন্ডাস্ট্রির মানুষ সোচ্চার হয়, প্রত্যেকের মধ্যে যদি দায়িত্ববোধ কাজ করে, যদি অ্যাকশন নেয়, তাহলে একেকটা সিঙ্গেল অ্যাকশন যথেষ্ট।
আরেকটা জিনিস জানতে চাই, আপনি তো মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন, র্যাম্প করেছেন, অ্যাক্টিং করেছেন। কোনটা বেশি ভালো লেগেছে? কোনটার প্রতি আগ্রহ বেশি?
মারিয়া: অবশ্যই র্যাম্প।
অ্যাক্টিং কেন নয়?
মারিয়া: যারা অ্যাক্টিং করেন, তাঁদের আমি সম্মান জানাই। অভিনয়ে অনেক কষ্ট। অনেক বেশি কষ্ট। ঘরে, বাইরে, বস্তিতে, এখানে-সেখানে অনেক জায়গায় গিয়ে থাকতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। আমার দ্বারা এত কষ্ট সম্ভব না।
অনেক ধন্যবাদ আজকের পত্রিকাকে সময় দেওয়ার জন্য।
মারিয়া: আপনাকে এবং আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
রজত কান্তি রায়
প্রথমে আপনার সৌন্দর্য চর্চার বিষয়ে জানতে চাই।
মারিয়া: ত্বকের চর্চা করার খুব একটা সময় হয় না। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারপরও ত্বকের চর্চা করা খুব জরুরি। নয়তো এত মেকআপ নেওয়ার পর, এত লাইটের মধ্যে কাজ করে সবকিছু ডিজাস্টার হয়ে যায়। প্রতিদিন আমি প্রচুর পানি পান করি। অনেক বেশি লিকুইড; অর্থাৎ, তরল খাবার খাই। রোজ ফল খাই। বিশেষ করে যে ফলগুলো শরীরকে বিষমুক্ত করে, সেসব ফল বেশি খাই। যেমন, কলার মধ্যে অনেক পটাশিয়াম থাকে। এটা শরীরকে বিষমুক্ত করতে সাহায্য করে। ত্বককে উজ্জ্বল করে। অ্যাভোকাডো খাই। এটি শরীরের টক্সিক উপাদানগুলো কমায়। এ ছাড়া তৈলাক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কারণ, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে শরীরে ফ্যাট জমা হয়, স্কিনের লেয়ারে তেল জমতে থাকে।
তবে যেহেতু আমি বাঙালি, কিছু খাবার খেতে তো ভালো লাগেই। যেমন, মেজবানি মাংস, কালা ভুনা, তেহারি, বিরিয়ানি—এসব কে না পছন্দ করে। এগুলো আমি খাই। তবে লিমিটেড খাই।
ত্বক চর্চার বিষয়ে আমি, মুখ সব সময় পরিষ্কার রাখা, বারবার মুখ ধোয়া, মেকআপের পর ভালো করে মেকআপ রিমুভ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মেনে চলি। মেকআপ রিমুভ করতে আমি h2o ব্যবহার করি। এটা বায়োডার্মার পণ্য। এতে মিনারেলস আছে। এটি স্কিনের পোরস রিমুভ করে। এর পর ভিটামিন সিযুক্ত ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ওয়াশ করি। তারপর টোনার ব্যবহার করি। মুখ পরিষ্কার করার পর একটা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি। তারপর ঘুমাতে চলে যাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠেও একইভাবে ত্বক চর্চা করি। মুখ ধোয়ার পর টোনার, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি এবং সানব্লক ক্রিম লাগাই। ঘর থেকে বের হলেই যে সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, তা নয়। ঘরে থাকলেও সানব্লক ব্যবহার করা যায়। কারণ আমরা ঘরে যে লাইটগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো থেকেও অনেক রশ্মি আসে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
চুলের জন্য কী করেন?
মারিয়া: চুলে আমি অ্যালোভেরা লাগাই। আমার চুল সারা বছরই ডাই করা থাকে। ডাই করলে চুল অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। বাজারে যে অ্যালোভেরা জেল পাওয়া যায়, ওটা নয়; অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে চুলে লাগাই। আমার ছাদে অনেক অ্যালোভেরা গাছ আছে। অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে অলিভ ওয়েল ও ক্যাস্টর ওয়েল মিশিয়ে চুলে লাগাই। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলি।
দু-চার মাস পরপর চুল ট্রিম করি। কারণ, চুল ফেটে যায়। তাই ট্রিমিংটা নিয়মিত করি। যখন চুল ডাই করি, তখন চুলে তেল দিতে হয়। স্পা করতে হয়। দুই মাস অন্তর অন্তর স্যালুনে গিয়ে হেয়ার স্পা করার চেষ্টা করি।
আরেকটা বিষয় জানতে চাই তা হলো, আপনি ঠোঁটের যত্নে কিছু করেন কিনা?
মারিয়া: ঠোঁটের যত্নে স্পেশাল কিছু করা হয়ে ওঠে না। আমার ঠোঁট অনেক ডার্ক। বিভিন্ন কারণে ডার্ক হয়ে যায়। তাই চিনি ও এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল মিশিয়ে পাঁচ মিনিট হালকা করে স্ক্রাব করি। এতে ঠোঁটের কালো দাগ অনেকটাই কমে আসে।
ত্বকের জন্য বেকিং সোডাও খুব কার্যকরী। অনেকের স্কিন খুব সেনসিটিভ। তারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁরা যদি বেকিং সোডা দিয়ে রূপচর্চা করেন, তাহলে এটা বেশ ভালো কাজ করে। বেশি মেকআপ ব্যবহার ও সূর্যের আলোর কারণে অনেকের ত্বকের পোরস অনেক বড় হয়ে যায়। পোরস থেকে গভীরভাবে মেকআপ রিমুভ করা কষ্টকর হয়ে যায়। তাদের জন্য পরামর্শ হলো, একটা মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা। মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপের সঙ্গে অল্প একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে ত্বকে ৩০-৩২ সেকেন্ড ম্যাসাজ করলে পোরসগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়।
ফিটনেসের জন্য কী করেন?
মারিয়া: ফিটনেসের জন্য তেমন কিছুই করা হয় না। তবে আমার মেইন বিষয়টা হলো মেটাবলিক সিস্টেম। আমার মেটাবলিক সিস্টেম খুব ভালো। ছোট থেকে মিশনারি স্কুলে আমাকে শেখানো হয়েছে যার যার মেটাবলিক সিস্টেম জেনে খাবার গ্রহণ করা উচিত। আমি সেভাবেই খাবার খাই।
চিকিৎসকেরা বলেন, চর্বি ঝরানো এবং ফিটনেস বজায় রাখা ৮০ শতাংশ নির্ভর করে খাবারের ওপর। বাকি ২০ শতাংশ নির্ভর করে ওয়ার্ক আউটের ওপর। আমি খাবারটা সেভাবেই গ্রহণ করি। সকালের নাশতায় আমি টোস্ট, সুগার ছাড়া হরলিক্স ইত্যাদি খাই।
মডেলিং জগতে আপনার আগমন ও বিচরণ সম্পর্কে জানতে চাই।
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি ফ্যাশন টিভি সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফ্যাশন টিভির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তাদের সঙ্গে সাড়ে চার বছর কাজ করেছি। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ডিজাইনারদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। গুচি, আরমানি, ডিএনজি, ডিজি—এসব ব্র্যান্ডের সঙ্গে আমার কাজ করা হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে যখন এলাম, র্যাম্প নিয়ে কাজ বেশি হয়েছে। র্যাম্প নিয়ে কাজ করতে থাকলাম।
একটা পর্যায়ে আর ভালো লাগছিল না। অনেকের মনের কলুষতা নিতে পারছিলাম না। আমি যেতে চাই। কিন্তু কেন যেন পারছি না। আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছিলাম।
তারপর দুঃখজনকভাবে আমার বিয়ে হলো। তারপরের খবরে আমি জানতে পারলাম—আমি মা হতে যাচ্ছি। দ্যটস দ্য সিগনাল, যে আমি আর কাজ করব না। তখন কাজ থেকে নিজেকে আমি সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিয়েছি। বিশেষ করে র্যাম্প থেকে। ২০০৯-এর পর থেকে ২০১০-১৪ পর্যন্ত র্যাম্প থেকে দূরে ছিলাম। ২০১৫ সালে আমি আবার এসে জয়েন করেছি। ওই পাঁচ বছর আমি সিডনিতে ছিলাম। তারপর দেশে ফিরে আসছি। কাজ শুরু করেছি। আমি ভেবেছিলাম অন্য জব করব। কিন্তু তা হয়নি। মডেল আজরা মাহমুদ আমাকে ফোন দিলেন ইয়েলোর একটা শোয়ের জন্য। জানান, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল মডেল দুজন আসছে। ইউকে থেকে একজন এবং পাকিস্তান থেকে একজন। আজরা বললেন, ‘আমি চাই তুই বাংলাদেশকে প্রেজেন্ট কর। প্লিজ না বলবি না আমাকে।’ আমি আজরা মাহমুদকে না করতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম ওই একটা শো করে আবার গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু তা আর হলো না।
২০০২ সালের ২৬ নভেম্বরে র্যাম্পে প্রথমবার শো করেছিলাম। সেটায় শাবনূর, পপি, ফেরদৌসসহ আরও অনেক নায়ক-নায়িকা হেঁটেছেন আমাদের সঙ্গে। সেই স্টেজে আমার প্রথম র্যাম্পে পা রাখা হয়েছিল। সেখানে আমি প্রথম পেয়ার হিসেবে দাঁড়াই ওয়ান অ্যান্ড ওনলি লিজেন্ডারি মডেল নোবেল ভাইয়ের সঙ্গে। যাকে ছোটবেলা থেকে টিভিতে দেখেছি, সেই মানুষটাকে প্রথমবারের মতো স্টেজে দেখছি, তাঁর সঙ্গে স্টেজে পা রাখছি র্যাম্প মডেল হিসেবে—এটা আমার জন্য অনেক বড় অ্যাচিভমেন্ট ছিল। তখন বেছে নিয়েছিলাম র্যাম্প হলো আমার প্ল্যাটফর্ম। এর আগে আমি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছি। তারপর চ্যানেল আইয়ের একটা প্রোগ্রামে আমাকে হোস্ট হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ৭-৮ মাসের মধ্যে আমাকে নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হলো। আমার হাইটটা ভালো ছিল। দেখতে অন্যরকম ছিলাম। এ কারণে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। র্যাম্পে হেঁটে এত ভালো লেগেছিল, অন্য কোনো কাজে সেটা লাগেনি। আমি মনে করেছিলাম ওটাই আমার প্ল্যাটফর্ম।
২০১৫ সালে ইয়েলোর শোয়ের জন্য আজরা যখন ডাকলেন, আমি ভেবেছিলাম, একটা শো করে গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু পরে আর পারিনি। হাঁটতেই থাকলাম। এখনো হাঁটি, কম।
ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ শুরু করলেন কবে থেকে?
মারিয়া: ২০১৯ সাল থেকে কাজ করা কমিয়ে দিয়েছি। আমার মনে হলো ১৯-২০ বছর তো হয়ে গেল। আর কত? এখন আমরা যদি না সরি, তাহলে নিউ জেনারেশন জায়গা পাবে না। একটা সময় থাকে মডেলিংয়ের। এবং সেই সময়টা আমি পার করে এসেছি। ২০১৯ সালে এসে মনে হলো আমার এখন কাজ কমানো উচিত। ডিরেকশনে যাওয়া উচিত। আমি একটি বিজ্ঞাপন বানাই। ক্যামেরার পেছনে কাজ করি আমি। স্টোরি আমার লেখা ছিল। প্রডিউস করেছি আমি। টিভিসি করলাম। তারপর একটা ফ্যাশন ফিল্ম করলাম। তখন মজাটা পেয়ে গেলাম। ভাবলাম ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করব।
গত বছরের নভেম্বরে আমি গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গ্রুমিং করাতাম। একটু একটু করে সময় দিয়ে, সবকিছু দিতে পারি না স্টুডেন্টদের। তাই নভেম্বর থেকে গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এখন সেকেন্ড ব্যাচ চলছে। করোনা মহামারির জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে আমাদের। যেখানে একটা ব্যাচে ২০ জন স্টুডেন্ট থাকে, সেখানে পেয়েছি ১৬ জন স্টুডেন্ট। এর মধ্যে চারজন এই ব্যাচে করবে না। আর দুজনের সার্জারি হয়েছে। তারা পরের ব্যাচে জয়েন করবে। তবে আমি আশাবাদী। মানুষের যে বিশ্বাস অর্জন করছি, সে জায়গাটা তৈরি করার চেষ্টা করছি। এই জায়গা থেকে যে টাকা আসবে, তা দিয়ে ব্যবসা করার প্রয়োজন নেই। যেই টাকাটা আমি চার্জ করছি, তা যথেষ্ট নয়। বাট আমার ইচ্ছা হলো আমার লিগ্যাসি ধরে রাখা। ২০টা বছর মডেলিং করে কী পেলাম! অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। অনেকগুলো সম্মাননা স্মারক পেয়েছি।
এই মাইলস্টোনগুলো সম্পর্কে শুনি...
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি বিউটি কন্টেস্টে আমি পার্টিসিপেট করেছিলাম ২০০৫ সালে। ৩৯টি দেশের মধ্যে আমি বিজয়ী হয়েছিলাম। তারপর ফ্যাশন টিভির জন্য কাজ করেছি। আমি ডিজেলের জন্য কাজ করেছি। ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল টপ ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেছি। বাংলাদেশের ডিজাইনারদের নাম না নিলে তো হয়ই না। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ—এরাই টপ ডিজাইনার। বিবি রাসেলের সঙ্গে আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা কাজ হয়েছিল। বিবি আপার সঙ্গে আমার একটু ভুল বোঝাবুঝির কারণে কাজ করা হয়নি আর। তবে ভবিষ্যতে আমি কাজ করব তাঁর সঙ্গে। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ, বিপ্লব সাহা, শৈবাল সাহা, শারুখ আমিন—দেশের যত প্রমিনেন্ট ডিজাইনার আছেন, সবার সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। শারুখ আমিন আমাকে প্রথম র্যাম্পে হাঁটিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে যখন প্রথম ফ্যাশন টিভি এসেছিল, তখন বাংলাদেশকে আমি প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। সবগুলো মডেল ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, স্পেন থেকে। ওসব দেশ থেকে ২৫ জন মডেল এসেছিল। আমি একমাত্র বাঙালি মেয়ে ছিলাম। ওটা আমার জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার ছিল। এমন ছোট ছোট অনেক মাইলস্টোন পার করে গিয়েছি। আমি সরওয়ার ফারুকি, অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করেছি। টিভিসির কাজ করেছি, টেলিফিল্মের কাজ করেছি, অভিনয় করেছি। ইন্টারন্যাশনালি কোনো কাজ হলেই আমাকে ডাকত। অমিতাভ রেজা আমাকে বলতেন, এ দেশের বিদেশি নায়িকা। ক্রিকেটের সঙ্গে আমি বেশ অনেক দিন জড়িত ছিলাম। খুব প্রশংসা পেয়েছি।
কেন উত্তরসূরি তৈরি করার আগ্রহ?
মারিয়া: একজন মানুষ কত দিনই-বা বাঁচতে পারে! ১০০ বছর! ১২০ বছর! এর থেকে বেশি না। কিন্তু মানুষ চিরঞ্জীব হয় তার কর্ম দিয়ে। তার কাজ এবং সমাজে সে কী অবদান রেখেছে, সেই অবদানের ওপর ভিত্তি করে তার উত্তরসূরি সৃষ্টি হয়। তার অমরত্বটা থেকে যায়। আমি অমর হতে চাই। আমি চাই আমার স্টুডেন্টরা কাজ করবে। আমি মারিয়া যদি মরেও যাই, তারপরেও যেন মানুষ বলে জেনেসিস মারিয়া। কিংবা এই মডেল জেনেসিসের স্টুডেন্ট। মারিয়ার স্টুডেন্ট আজকে বিশ্বজয় করেছে। হতেও তো পারে। আমি আমার ইনস্টিটিউট থেকে পাঠাতেও তো পারি।
এই যে এতগুলো বছর পার করে দিয়েছি, আমার নাম নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে কেউ যদি বড় কোনো জায়গায় ক্রস ওভার করতে পারে, তাহলে তো আমার নাম হবে। তাই না? তখন তাকেও কেউ জিজ্ঞেস করবে, তোমার মেন্টর কে ছিল? তখন সে আমার নামটা নেবে। এভাবে আমি বেঁচে থাকব।
আপনি একেবারে ছোটবেলা থেকেই বাইরে। সচরাচর যারা বাইরে যান তাঁরা ফিরে আসেন না। আপনি কেন ফিরলেন?
মারিয়া: বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। ডিজাইনাররা আমাকে নিয়েছেন। ভালোবেসেছেন। আমি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে দেখলাম, দেশটা আমার। এই দেশের মানুষগুলো আমার। এই দেশের ভালো ও মন্দটাও আমার। বিদেশের তো সবই আছে। এত সুন্দর সুন্দর মডেল আছে। এক হাজারটা মারিয়া ওদের হাতের মুঠোয় আছে। বাংলাদেশে কয়টা মারিয়া আছে? সো আমার মনে হয়েছিল আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য হলো আমার দেশকে কিছু দেওয়া। আমি যদি আমার দেশকে পথ না দেখাই, তাহলে অন্য কেউ তো এসে পথ দেখাবে না। আমার কর্তব্য এটা। আমার সুযোগ থাকলে আমি দেশকে গ্লোবালি নিয়ে যাব। আমার দেশ সোনার বাংলাদেশ। গুহার মধ্যে লুকিয়ে রাখলে এ দেশকে আলোকিত করা যাবে না। এটা সবাই বলে—নিজের ব্যাপারে চিন্তা না করে, সেলফিশ না হয়ে চলে আসছ! ৮০ শতাংশ লোক সেলফিশ, ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস। ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস না হলে দেশটা তো টিকে থাকত না। তাই না? সো আমার মতো মারিয়া আরও অনেক কর্নারেই আছে। যারা দেশের জন্য কিছু করতে চায়। দেশপ্রেমের কারণে বারবার দেশে ফিরে আসে। আমাকে যদি এখানে থাকতে দেওয়া না হয়, অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি, আমি নিজ দেশের জন্য কাজ করব। কারণ আমার শেকড় এখানে।
কেমন লাগছে ২০ বছর আগের ও ২০ বছর পরের অবস্থা? এখনকার জেনারেশন, ইন্ডাস্ট্রি—সবকিছু কেমন দেখছেন?
মারিয়া: ১০ বছর আগেও যেমন ছিল, এখনো যদি এমন থাকতাম, তাহলে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। অধঃপতন, অবনতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। অসম্মান তো আছেই। ১০ বছর আগেও মডেল হিসেবে পরিচয় দিলে ভ্রু কুঁচকে তাকাত লোকজন। অপমানজনক নজর দিত। আজও যখন নিজেকে মডেল বলি, কিছু কিছু মানুষের কাছে অসম্মানিত হতে হয়। কিছু কিছু মানুষ জায়গাটাকে নোংরা করে ফেলেছেন। এ কারণে বাদবাকি যারা পরিষ্কার মানুষ আছেন, তাঁদের গায়েও নোংরা লেগে যাচ্ছে। এখনকার দিনে অসংখ্য মানুষ মডেলিং, অ্যাক্টিং এসবে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু তাদের আর্ট, কাজ ইত্যাদি পছন্দ না। ফ্যামিলির সঙ্গে যুদ্ধ করে মিডিয়াতে কাজ করেছি। যুদ্ধ করে চলেছি। একা একা চলেছি। কখনো খারাপ পথে যাইনি। বাবা-মায়ের শেখানো নীতিতে চলেছি। অনেক স্ট্রাগল করেছি। প্যাশন ছিল আমার, আর্ট ছিল। এখনকার সবার টাকার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। তারা কাজ শিখতে চায় না। ভালোমতো কাজ করতে চায় না। কয়েকটা ম্যাগাজিন, টিভিতে চেহারা দেখাবে, স্টেজে কয়েকবার উঠবে এবং ছবিগুলো নিয়ে অনেক টাকা আদায় করবে। এই যে কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো আসলেই ডিসটার্বিং। যারা কাজ করতে চাচ্ছেন, তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। যাদের কাজ করার ইচ্ছা নেই, তারা চেহারা দেখিয়ে, ঘুরে বেড়িয়ে অন্যদের থেকে টাকা আয় করার সোর্স বানানোর ইচ্ছা যাদের, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে প্রায়োরিটি। এসবের কারণে ইন্ডাস্ট্রিটা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচুর মানুষ আসছেন, কিন্তু কাজের মানুষ তো আমি দেখি না।
আমাদের এখনো মানুষ বলে, তোমাদের ফার্স্ট ব্যাচটা অনেক কিছু দেখিয়ে গেছে। সেকেন্ড ব্যাচ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কামড়ে ধরে আছে। এখনো পর্যন্ত তোমাদের মতো মডেল দেখি না। আরেকটা সেকেন্ড মারিয়া, ইমি, রুমা, আজরা দেখি না। আমি এখন উল্লেখযোগ্য কাউকে দেখি না। প্রত্যেকটা মানুষের একটা সিংহাসন আছে। আমার একটা আছে। আমি যে সিংহাসন থেকে নেমে অন্যকে ওঠার সুযোগ দেব, আমার সিংহাসনে কাউকে বসতে হবে তো। কাউকে তো এসে জায়গাটা দখল করতে হবে। গত পাঁচ বছর ধরে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি।
সম্প্রতি আমরা কিছু মডেল দেখছি, যারা ইন্টারন্যাশনালি কাজ করছেন। অনেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছেন। সেটা দেখে তো আরেকটা ইমপ্রেশন তৈরি হয়।
মারিয়া: একসময় ‘ফেস অব এশিয়া’ নামে কনটেস্ট হতো। সেখানে যাওয়ার জন্য প্রসেসটা করে দেওয়া হতো। সেখানে ব্যক্তিগত কিছু খরচ হতো। সেখানে আজাদ ফারহানা মিলি নামের একজন মডেল গেছেন। অবনি নামের একজনও গিয়েছেন। সেখানে তাঁরা বিজয়ী হয়েছিলেন। এ রকম কয়েকজন আছেন যারা ‘ফেস অব এশিয়া’ থেকে ক্রাউনগুলো পেয়েছেন। বাদবাকি ইন্টারন্যাশনাল কনটেস্টে কে গিয়েছেন? কোনো জায়গায় যেতে পারেনি তো এখন পর্যন্ত। সিলেক্টেডও হয়নি যাওয়ার জন্য। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের খেলাটা তো দেখলেন আপনারা, গত বছর (২০২০) কী হলো?
ব্যাঙের ছাতার মতো একাডেমি, গ্রুমিং স্কুল হচ্ছে। ঠিক সেরকম মাশরুমের মতো অনেকগুলো কনটেস্ট ওপেন হচ্ছে। সেই কন্টেস্টে যে পটেনশিয়াল ক্যানডিডেট থাকেন, তাঁর মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাঁকে দাম দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে সামনে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রপার ওয়েতে রান করা হচ্ছে না।
প্রপার ওয়েতে রান কেন হচ্ছে না? ইন্ডাস্ট্রির বয়স তো খুব কম নয়। আপনারা তো কাজ করছেন। সময় তো অনেক গেল। আমরা অনেক কিছুই দেখলাম। অনেকগুলো জেনারেশন দেখলাম। এখন কেন বলছেন যে প্রপার ওয়েতে হচ্ছে না?
মারিয়া: প্রবলেমটা হচ্ছে নিউ মানি। নিউ পিপল হু হ্যাজ নিউ মানি ইন দিস স্টেজ। হি হ্যাজ নো এডুকেশন, নো ক্লাস, নো নলেজ। দিস ইজ দ্য প্রবলেম। এখন একটা হ্যাচারির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, ট্রাক সমিতির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, তারপর এসে ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে ইনভেস্ট করতে চান, তাঁর কিন্তু রুচিটা ওইরকমই থাকবে। তাঁর মনে হবে তিনি নায়িকা দেখবেন, নায়িকার হাত ধরে বসবেন, গল্প করবেন, মডেলদের নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যাবেন। কারণ, মডেলরা অনেক সেক্সি ক্লথিং পরে, তারা দেখতে হলিউড-বলিউডের হেরোইনের মতো। তো তাঁরা একটু ঘুরবেন ফিরবেন, আর ফ্রেন্ডদেরকে ছবি দেখিয়ে বলবেন ‘আমার গার্লফ্রেন্ড এটা’। একজন অর্ধশিক্ষিত ট্রাক সমিতির সভাপতি বা হ্যাচারি ব্যবসায়ী কী করে বুঝবেন বিউটি কী, নলেজ কী, আর কোয়ালিফিকেশন কী। আমাদের দেশে তো ক্লাসি, এডুকেটেড, এলিট পিপলের সংখ্যা কম। এসব কারণেই ঘটছে অনেক কিছু।
আমিও যেন ওয়ালের মধ্যে ঠেসে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে আমি আবার গা ঝাড়া দিই। ধাক্কা দিই। বলি, এই সরো। জায়গা ছাড়ো। আমার ঘর খালি করো। আমার ঘরে ময়লা এনো না। তোমাদের ঘরে যা করার করো, কিন্তু আমার ঘরে প্রবেশ করো না। আই ডোন্ট লাইক ইট। এটা তো সবাই করতে পারছে না। সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছি আমরা। যারা সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের ইচ্ছাটাও খুব কম। তারা ইচ্ছাটাকে নিয়ে কাজ করতে চায় না।
মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে, বিবি আপার ক্ষমতা ছিল অনেক কিছু করার। কিন্তু বিবি আপা করলেন না। এর পেছনে সম্পূর্ণ বিবি আপার দোষও না। এর পেছনে বাঙালির দোষ। দেশের মানুষের দোষ। বিবি রাসেলের মতো একজন ডিজাইনার, যিনি ইন্টারন্যাশনালি এত সম্মানিত হয়েছেন, তাঁকে বাংলাদেশ কিছুই দিতে পারেনি। কতটুকু সম্মান দিয়েছে তাঁকে? দুই পক্ষই দায়ী। বিবি আপার ইচ্ছেটা কম ছিল। তাঁর ইচ্ছা না থাকার কারণ হলো, বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে প্রায়োরিটি দিচ্ছিল না। তাঁকে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছিল না। জেলাসি থেকে তাঁর আশপাশের অনেক মানুষই তাঁকে পুট ডাউনের চেষ্টা করেছে। অ্যান্ড শি লস্ট হার ইন্টারেস্ট। বড় বড় মানুষেরা যদি এভাবে ছেড়ে চলে যান, তাহলে আমাদের দেশের ভালো কী করে হবে? ভালো কিছু হবে না। খারাপই হবে।
আরেকটা জিনিস, অনেক কিছুর ইনস্টিটিউট হলো, আমাদের ফ্যাশন মডেলিং—এই ইন্ডাস্ট্রির কোনো ইনস্টিটিউট হলো না। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
মারিয়া: আমি শুধু আমারটা বলতে পারি। বাকিদের কথা বলতে পারব না। কেন সরকারিভাবে আমরা স্বীকৃতি পাচ্ছি না, এই প্রশ্ন আমার সব সময় থাকবে। যত দিন পর্যন্ত স্বীকৃতি না পাই। আমাদের কোনো অর্গানাইজেশন কেন নেই, কোনো সোসাইটি কেন নেই, আমাদের নিজের কমিটি নাই, যেখানে আমাদের সঙ্গে হওয়া কোনো অন্যায়ের বিচার হবে, যেখানে আমাদের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন দেওয়া থাকবে।
এখন এমন হচ্ছে কেউ একটু জিন্স পরল, নাচানাচি করল—তারাই মডেল হয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা মারাত্মক। আমার মনে হয় মডেলিংয়ে সবচেয়ে বেশি হিংসেমি কাজ করে। সবাই মিলে খেতে গেলে তো অল্প অল্প ভাগে পড়বে। সবাইকে ফেলে দিয়ে আমি একা যদি খেতে পারি, তাহলে অনেক বেশি খেতে পারব। কমিটি হলে, অর্গানাইজেশন হয়ে গেলে তো সবাই মিলে কাজ করব, একাত্ম থাকতে হবে। তাহলে আমি খুব বেশি এখান থেকে নিতে পারব না। এর জন্য বড় বড় মাথারাও চায় না যে অর্গানাইজেশনটা হোক। বাট আমি স্ট্রংলি চাই অর্গানাইজেশন হোক। চাই সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আমাদের কমিটি হোক। যেখানে আইনটা বাস্তবায়ন করা হবে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ও মডেলদের জন্য নতুন আইন করা হোক। আমি কাজ চালাচ্ছি। সামনে আরও এগিয়ে যাব। আশা করি কিছু একটা করতে পারব।
তাহলে কি পুরো ব্যাপারটা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বলছেন?
মারিয়া: শিক্ষার সাথে অনেক বেশি যুক্ত। আর তারপর তো একটা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আসেই। শিক্ষা, প্রপার গাইডলাইন থাকলে নেক্সট জেনারেশন সুন্দর হয়। হবেও। গুরু যদি না জানে কোনো কিছু, কীভাবে শিষ্যদের শেখাবে?
আপনি তো অনেকগুলো দেশ ঘুরেছেন। বিদেশে থেকেছেন অনেক দিন। সেসব ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বেসিক পার্থক্যটা কী?
মারিয়া: আকাশ আর পাতাল সমান পার্থক্য। একটা ফ্যাশন শো, একটা প্রোজেক্ট করতে গেলে, ছোট্ট থেকে ছোট্টতর কিছু করতে গেলেও তারা অনেক বেশি অর্গানাইজড থাকে। একটা ফটোশুটের জন্য ১৫-২৫ দিন সময় নেয়। ওরা লে-আউট তৈরি করে, মডেলকে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে, মডেলের ম্যাজারমেন্ট নিয়ে রাখবে, ট্রায়ালের জন্য ডাকবে, মডেলের স্কিন টেস্ট করবে, স্কিন কেয়ারের ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে। এর পর প্লেস, ভেন্যু, ব্যাকগ্রাউন্ড কী হবে, ছবির কালার কারেকশন কেমন হবে—সবকিছু তারা ঠিক করে রাখে। পরিকল্পনামাফিক করে। সবকিছু টাইম টু টাইম হবে।
আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সকাল ৮টা মানে ৮টা। তারা সবকিছু মেনে নেয়। কাজের প্রয়োজনে তারা ছোট পোশাকও পরতে পারে, আবার বোরকাও পরতে পারে। তারা পেশাটাকে সিরিয়াসলি নেয়। এবং তারা খুবই সম্মানের সাথে নেয়। নাচতে নেমে তারা ঘোমটা দেওয়ার চেষ্টা করে না। আর বাঙালি হচ্ছে আমি নাচব এবং ঘোমটাও সরতে পারবে না। বাংলাদেশিদের অ্যাপ্রোচ, বিহেভ, প্রেজেন্টেশন দেখলে অনেক দুঃখ লাগে। নতুন মডেলদের সঙ্গে এমন যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা হয়, যা-তা বলা হয়, গালিগালাজও করা হয়। কিন্তু দু-চার-পাঁচ বছর পর সে যখন অনেক বড় মডেল হয়ে যায়, তাকেই ধরে কিন্তু চাটে। নতুন মডেলদের সঙ্গে বিদেশে এমন করা হয় না। বলা হয়, ডোন্ট ডু দিস। আর এ দেশে তো নির্দোষ-চুপচাপ মডেলের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এ জন্যই দু-চার-পাঁচ বছর পর সেই মডেল বেয়াদব হয়ে যায়। অন্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কারণ, সে তো শুরুতে ভালো ব্যবহার পায়নি। ওকে তো শেখায়নি আচরণ কেমন হবে।
আপনি কী মনে করেন, একটা রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট থাকা উচিত? যেমন চারুকলা ইনস্টিটিউট আছে।
মারিয়া: অবশ্যই। প্রত্যেকটা দেশে আছে। পাশের দেশ ইন্ডিয়াতেই আছে। বাংলাদেশে কেন নেই? বাংলাদেশের মাটি, ঋতু সবই ভালো। কী নেই! যাদের ট্যালেন্ট আছে, তারা সাংঘাতিক ট্যালেন্টেড হয়। এত ট্যালেন্ট, রিসোর্সেস নিয়ে আমরা বসে আছি। তারপরও কেন হবে না! আমাদের কেন চিনবে না ইন্টারন্যাশনালি? কেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নাম অন্যান্য দেশ জানবে না? এ বিষয়টা তো খারাপ লাগে!
যারা সিনিয়র আছেন, একসঙ্গে কাজ করেন, তাদের কি বাংলাদেশে বড় প্ল্যাটফর্ম বানানোর ইচ্ছে আছে?
মারিয়া: সবার নেই। আমার ইচ্ছে আছে। আর মডেল আসিফ খানের আছে। আর কারও কাছে এই জিনিসটা পাইনি।
টেলিভিশন আর্টিস্টদের অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। আমাদের মডেলদের নেই। কেন জানি মনে হয় জেলাসি কাজ করে। তারা এক জোট হতে চায় না। একসঙ্গে হলেই তারা ইনফ্যারিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে। তারা ভাবে এখন বুঝি একা চলতে পারব না। এটা আসলে ভুল।
ভবিষ্যৎ কী?
মারিয়া: যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ। সব জায়গায় অন্ধকার। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো ফ্যামিলি থেকে কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে আসবে না। কাজ করবে না। যদি এখন ইন্ডাস্ট্রির মানুষ সোচ্চার হয়, প্রত্যেকের মধ্যে যদি দায়িত্ববোধ কাজ করে, যদি অ্যাকশন নেয়, তাহলে একেকটা সিঙ্গেল অ্যাকশন যথেষ্ট।
আরেকটা জিনিস জানতে চাই, আপনি তো মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন, র্যাম্প করেছেন, অ্যাক্টিং করেছেন। কোনটা বেশি ভালো লেগেছে? কোনটার প্রতি আগ্রহ বেশি?
মারিয়া: অবশ্যই র্যাম্প।
অ্যাক্টিং কেন নয়?
মারিয়া: যারা অ্যাক্টিং করেন, তাঁদের আমি সম্মান জানাই। অভিনয়ে অনেক কষ্ট। অনেক বেশি কষ্ট। ঘরে, বাইরে, বস্তিতে, এখানে-সেখানে অনেক জায়গায় গিয়ে থাকতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। আমার দ্বারা এত কষ্ট সম্ভব না।
অনেক ধন্যবাদ আজকের পত্রিকাকে সময় দেওয়ার জন্য।
মারিয়া: আপনাকে এবং আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
প্রথমে আপনার সৌন্দর্য চর্চার বিষয়ে জানতে চাই।
মারিয়া: ত্বকের চর্চা করার খুব একটা সময় হয় না। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারপরও ত্বকের চর্চা করা খুব জরুরি। নয়তো এত মেকআপ নেওয়ার পর, এত লাইটের মধ্যে কাজ করে সবকিছু ডিজাস্টার হয়ে যায়। প্রতিদিন আমি প্রচুর পানি পান করি। অনেক বেশি লিকুইড; অর্থাৎ, তরল খাবার খাই। রোজ ফল খাই। বিশেষ করে যে ফলগুলো শরীরকে বিষমুক্ত করে, সেসব ফল বেশি খাই। যেমন, কলার মধ্যে অনেক পটাশিয়াম থাকে। এটা শরীরকে বিষমুক্ত করতে সাহায্য করে। ত্বককে উজ্জ্বল করে। অ্যাভোকাডো খাই। এটি শরীরের টক্সিক উপাদানগুলো কমায়। এ ছাড়া তৈলাক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কারণ, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে শরীরে ফ্যাট জমা হয়, স্কিনের লেয়ারে তেল জমতে থাকে।
তবে যেহেতু আমি বাঙালি, কিছু খাবার খেতে তো ভালো লাগেই। যেমন, মেজবানি মাংস, কালা ভুনা, তেহারি, বিরিয়ানি—এসব কে না পছন্দ করে। এগুলো আমি খাই। তবে লিমিটেড খাই।
ত্বক চর্চার বিষয়ে আমি, মুখ সব সময় পরিষ্কার রাখা, বারবার মুখ ধোয়া, মেকআপের পর ভালো করে মেকআপ রিমুভ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মেনে চলি। মেকআপ রিমুভ করতে আমি h2o ব্যবহার করি। এটা বায়োডার্মার পণ্য। এতে মিনারেলস আছে। এটি স্কিনের পোরস রিমুভ করে। এর পর ভিটামিন সিযুক্ত ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ওয়াশ করি। তারপর টোনার ব্যবহার করি। মুখ পরিষ্কার করার পর একটা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি। তারপর ঘুমাতে চলে যাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠেও একইভাবে ত্বক চর্চা করি। মুখ ধোয়ার পর টোনার, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি এবং সানব্লক ক্রিম লাগাই। ঘর থেকে বের হলেই যে সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, তা নয়। ঘরে থাকলেও সানব্লক ব্যবহার করা যায়। কারণ আমরা ঘরে যে লাইটগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো থেকেও অনেক রশ্মি আসে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
চুলের জন্য কী করেন?
মারিয়া: চুলে আমি অ্যালোভেরা লাগাই। আমার চুল সারা বছরই ডাই করা থাকে। ডাই করলে চুল অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। বাজারে যে অ্যালোভেরা জেল পাওয়া যায়, ওটা নয়; অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে চুলে লাগাই। আমার ছাদে অনেক অ্যালোভেরা গাছ আছে। অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে অলিভ ওয়েল ও ক্যাস্টর ওয়েল মিশিয়ে চুলে লাগাই। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলি।
দু-চার মাস পরপর চুল ট্রিম করি। কারণ, চুল ফেটে যায়। তাই ট্রিমিংটা নিয়মিত করি। যখন চুল ডাই করি, তখন চুলে তেল দিতে হয়। স্পা করতে হয়। দুই মাস অন্তর অন্তর স্যালুনে গিয়ে হেয়ার স্পা করার চেষ্টা করি।
আরেকটা বিষয় জানতে চাই তা হলো, আপনি ঠোঁটের যত্নে কিছু করেন কিনা?
মারিয়া: ঠোঁটের যত্নে স্পেশাল কিছু করা হয়ে ওঠে না। আমার ঠোঁট অনেক ডার্ক। বিভিন্ন কারণে ডার্ক হয়ে যায়। তাই চিনি ও এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল মিশিয়ে পাঁচ মিনিট হালকা করে স্ক্রাব করি। এতে ঠোঁটের কালো দাগ অনেকটাই কমে আসে।
ত্বকের জন্য বেকিং সোডাও খুব কার্যকরী। অনেকের স্কিন খুব সেনসিটিভ। তারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁরা যদি বেকিং সোডা দিয়ে রূপচর্চা করেন, তাহলে এটা বেশ ভালো কাজ করে। বেশি মেকআপ ব্যবহার ও সূর্যের আলোর কারণে অনেকের ত্বকের পোরস অনেক বড় হয়ে যায়। পোরস থেকে গভীরভাবে মেকআপ রিমুভ করা কষ্টকর হয়ে যায়। তাদের জন্য পরামর্শ হলো, একটা মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা। মাইল্ড ফেইসওয়াশ কিংবা সোপের সঙ্গে অল্প একটু বেকিং সোডা মিশিয়ে ত্বকে ৩০-৩২ সেকেন্ড ম্যাসাজ করলে পোরসগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়।
ফিটনেসের জন্য কী করেন?
মারিয়া: ফিটনেসের জন্য তেমন কিছুই করা হয় না। তবে আমার মেইন বিষয়টা হলো মেটাবলিক সিস্টেম। আমার মেটাবলিক সিস্টেম খুব ভালো। ছোট থেকে মিশনারি স্কুলে আমাকে শেখানো হয়েছে যার যার মেটাবলিক সিস্টেম জেনে খাবার গ্রহণ করা উচিত। আমি সেভাবেই খাবার খাই।
চিকিৎসকেরা বলেন, চর্বি ঝরানো এবং ফিটনেস বজায় রাখা ৮০ শতাংশ নির্ভর করে খাবারের ওপর। বাকি ২০ শতাংশ নির্ভর করে ওয়ার্ক আউটের ওপর। আমি খাবারটা সেভাবেই গ্রহণ করি। সকালের নাশতায় আমি টোস্ট, সুগার ছাড়া হরলিক্স ইত্যাদি খাই।
মডেলিং জগতে আপনার আগমন ও বিচরণ সম্পর্কে জানতে চাই।
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি ফ্যাশন টিভি সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফ্যাশন টিভির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তাদের সঙ্গে সাড়ে চার বছর কাজ করেছি। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ডিজাইনারদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। গুচি, আরমানি, ডিএনজি, ডিজি—এসব ব্র্যান্ডের সঙ্গে আমার কাজ করা হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে যখন এলাম, র্যাম্প নিয়ে কাজ বেশি হয়েছে। র্যাম্প নিয়ে কাজ করতে থাকলাম।
একটা পর্যায়ে আর ভালো লাগছিল না। অনেকের মনের কলুষতা নিতে পারছিলাম না। আমি যেতে চাই। কিন্তু কেন যেন পারছি না। আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছিলাম।
তারপর দুঃখজনকভাবে আমার বিয়ে হলো। তারপরের খবরে আমি জানতে পারলাম—আমি মা হতে যাচ্ছি। দ্যটস দ্য সিগনাল, যে আমি আর কাজ করব না। তখন কাজ থেকে নিজেকে আমি সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিয়েছি। বিশেষ করে র্যাম্প থেকে। ২০০৯-এর পর থেকে ২০১০-১৪ পর্যন্ত র্যাম্প থেকে দূরে ছিলাম। ২০১৫ সালে আমি আবার এসে জয়েন করেছি। ওই পাঁচ বছর আমি সিডনিতে ছিলাম। তারপর দেশে ফিরে আসছি। কাজ শুরু করেছি। আমি ভেবেছিলাম অন্য জব করব। কিন্তু তা হয়নি। মডেল আজরা মাহমুদ আমাকে ফোন দিলেন ইয়েলোর একটা শোয়ের জন্য। জানান, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল মডেল দুজন আসছে। ইউকে থেকে একজন এবং পাকিস্তান থেকে একজন। আজরা বললেন, ‘আমি চাই তুই বাংলাদেশকে প্রেজেন্ট কর। প্লিজ না বলবি না আমাকে।’ আমি আজরা মাহমুদকে না করতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম ওই একটা শো করে আবার গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু তা আর হলো না।
২০০২ সালের ২৬ নভেম্বরে র্যাম্পে প্রথমবার শো করেছিলাম। সেটায় শাবনূর, পপি, ফেরদৌসসহ আরও অনেক নায়ক-নায়িকা হেঁটেছেন আমাদের সঙ্গে। সেই স্টেজে আমার প্রথম র্যাম্পে পা রাখা হয়েছিল। সেখানে আমি প্রথম পেয়ার হিসেবে দাঁড়াই ওয়ান অ্যান্ড ওনলি লিজেন্ডারি মডেল নোবেল ভাইয়ের সঙ্গে। যাকে ছোটবেলা থেকে টিভিতে দেখেছি, সেই মানুষটাকে প্রথমবারের মতো স্টেজে দেখছি, তাঁর সঙ্গে স্টেজে পা রাখছি র্যাম্প মডেল হিসেবে—এটা আমার জন্য অনেক বড় অ্যাচিভমেন্ট ছিল। তখন বেছে নিয়েছিলাম র্যাম্প হলো আমার প্ল্যাটফর্ম। এর আগে আমি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছি। তারপর চ্যানেল আইয়ের একটা প্রোগ্রামে আমাকে হোস্ট হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ৭-৮ মাসের মধ্যে আমাকে নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হলো। আমার হাইটটা ভালো ছিল। দেখতে অন্যরকম ছিলাম। এ কারণে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। র্যাম্পে হেঁটে এত ভালো লেগেছিল, অন্য কোনো কাজে সেটা লাগেনি। আমি মনে করেছিলাম ওটাই আমার প্ল্যাটফর্ম।
২০১৫ সালে ইয়েলোর শোয়ের জন্য আজরা যখন ডাকলেন, আমি ভেবেছিলাম, একটা শো করে গায়েব হয়ে যাব। কিন্তু পরে আর পারিনি। হাঁটতেই থাকলাম। এখনো হাঁটি, কম।
ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ শুরু করলেন কবে থেকে?
মারিয়া: ২০১৯ সাল থেকে কাজ করা কমিয়ে দিয়েছি। আমার মনে হলো ১৯-২০ বছর তো হয়ে গেল। আর কত? এখন আমরা যদি না সরি, তাহলে নিউ জেনারেশন জায়গা পাবে না। একটা সময় থাকে মডেলিংয়ের। এবং সেই সময়টা আমি পার করে এসেছি। ২০১৯ সালে এসে মনে হলো আমার এখন কাজ কমানো উচিত। ডিরেকশনে যাওয়া উচিত। আমি একটি বিজ্ঞাপন বানাই। ক্যামেরার পেছনে কাজ করি আমি। স্টোরি আমার লেখা ছিল। প্রডিউস করেছি আমি। টিভিসি করলাম। তারপর একটা ফ্যাশন ফিল্ম করলাম। তখন মজাটা পেয়ে গেলাম। ভাবলাম ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করব।
গত বছরের নভেম্বরে আমি গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গ্রুমিং করাতাম। একটু একটু করে সময় দিয়ে, সবকিছু দিতে পারি না স্টুডেন্টদের। তাই নভেম্বর থেকে গ্রুমিং একাডেমি জেনেসিস লঞ্চ করলাম। এখন সেকেন্ড ব্যাচ চলছে। করোনা মহামারির জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে আমাদের। যেখানে একটা ব্যাচে ২০ জন স্টুডেন্ট থাকে, সেখানে পেয়েছি ১৬ জন স্টুডেন্ট। এর মধ্যে চারজন এই ব্যাচে করবে না। আর দুজনের সার্জারি হয়েছে। তারা পরের ব্যাচে জয়েন করবে। তবে আমি আশাবাদী। মানুষের যে বিশ্বাস অর্জন করছি, সে জায়গাটা তৈরি করার চেষ্টা করছি। এই জায়গা থেকে যে টাকা আসবে, তা দিয়ে ব্যবসা করার প্রয়োজন নেই। যেই টাকাটা আমি চার্জ করছি, তা যথেষ্ট নয়। বাট আমার ইচ্ছা হলো আমার লিগ্যাসি ধরে রাখা। ২০টা বছর মডেলিং করে কী পেলাম! অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। অনেকগুলো সম্মাননা স্মারক পেয়েছি।
এই মাইলস্টোনগুলো সম্পর্কে শুনি...
মারিয়া: ইন্টারন্যাশনালি বিউটি কন্টেস্টে আমি পার্টিসিপেট করেছিলাম ২০০৫ সালে। ৩৯টি দেশের মধ্যে আমি বিজয়ী হয়েছিলাম। তারপর ফ্যাশন টিভির জন্য কাজ করেছি। আমি ডিজেলের জন্য কাজ করেছি। ইউরোপিয়ান ইন্টারন্যাশনাল টপ ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেছি। বাংলাদেশের ডিজাইনারদের নাম না নিলে তো হয়ই না। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ—এরাই টপ ডিজাইনার। বিবি রাসেলের সঙ্গে আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা কাজ হয়েছিল। বিবি আপার সঙ্গে আমার একটু ভুল বোঝাবুঝির কারণে কাজ করা হয়নি আর। তবে ভবিষ্যতে আমি কাজ করব তাঁর সঙ্গে। রীনা লাতিফ, মাহিন খান, মেহরুজ, বিপ্লব সাহা, শৈবাল সাহা, শারুখ আমিন—দেশের যত প্রমিনেন্ট ডিজাইনার আছেন, সবার সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। শারুখ আমিন আমাকে প্রথম র্যাম্পে হাঁটিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে যখন প্রথম ফ্যাশন টিভি এসেছিল, তখন বাংলাদেশকে আমি প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। সবগুলো মডেল ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, স্পেন থেকে। ওসব দেশ থেকে ২৫ জন মডেল এসেছিল। আমি একমাত্র বাঙালি মেয়ে ছিলাম। ওটা আমার জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার ছিল। এমন ছোট ছোট অনেক মাইলস্টোন পার করে গিয়েছি। আমি সরওয়ার ফারুকি, অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করেছি। টিভিসির কাজ করেছি, টেলিফিল্মের কাজ করেছি, অভিনয় করেছি। ইন্টারন্যাশনালি কোনো কাজ হলেই আমাকে ডাকত। অমিতাভ রেজা আমাকে বলতেন, এ দেশের বিদেশি নায়িকা। ক্রিকেটের সঙ্গে আমি বেশ অনেক দিন জড়িত ছিলাম। খুব প্রশংসা পেয়েছি।
কেন উত্তরসূরি তৈরি করার আগ্রহ?
মারিয়া: একজন মানুষ কত দিনই-বা বাঁচতে পারে! ১০০ বছর! ১২০ বছর! এর থেকে বেশি না। কিন্তু মানুষ চিরঞ্জীব হয় তার কর্ম দিয়ে। তার কাজ এবং সমাজে সে কী অবদান রেখেছে, সেই অবদানের ওপর ভিত্তি করে তার উত্তরসূরি সৃষ্টি হয়। তার অমরত্বটা থেকে যায়। আমি অমর হতে চাই। আমি চাই আমার স্টুডেন্টরা কাজ করবে। আমি মারিয়া যদি মরেও যাই, তারপরেও যেন মানুষ বলে জেনেসিস মারিয়া। কিংবা এই মডেল জেনেসিসের স্টুডেন্ট। মারিয়ার স্টুডেন্ট আজকে বিশ্বজয় করেছে। হতেও তো পারে। আমি আমার ইনস্টিটিউট থেকে পাঠাতেও তো পারি।
এই যে এতগুলো বছর পার করে দিয়েছি, আমার নাম নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে কেউ যদি বড় কোনো জায়গায় ক্রস ওভার করতে পারে, তাহলে তো আমার নাম হবে। তাই না? তখন তাকেও কেউ জিজ্ঞেস করবে, তোমার মেন্টর কে ছিল? তখন সে আমার নামটা নেবে। এভাবে আমি বেঁচে থাকব।
আপনি একেবারে ছোটবেলা থেকেই বাইরে। সচরাচর যারা বাইরে যান তাঁরা ফিরে আসেন না। আপনি কেন ফিরলেন?
মারিয়া: বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। ডিজাইনাররা আমাকে নিয়েছেন। ভালোবেসেছেন। আমি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে দেখলাম, দেশটা আমার। এই দেশের মানুষগুলো আমার। এই দেশের ভালো ও মন্দটাও আমার। বিদেশের তো সবই আছে। এত সুন্দর সুন্দর মডেল আছে। এক হাজারটা মারিয়া ওদের হাতের মুঠোয় আছে। বাংলাদেশে কয়টা মারিয়া আছে? সো আমার মনে হয়েছিল আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য হলো আমার দেশকে কিছু দেওয়া। আমি যদি আমার দেশকে পথ না দেখাই, তাহলে অন্য কেউ তো এসে পথ দেখাবে না। আমার কর্তব্য এটা। আমার সুযোগ থাকলে আমি দেশকে গ্লোবালি নিয়ে যাব। আমার দেশ সোনার বাংলাদেশ। গুহার মধ্যে লুকিয়ে রাখলে এ দেশকে আলোকিত করা যাবে না। এটা সবাই বলে—নিজের ব্যাপারে চিন্তা না করে, সেলফিশ না হয়ে চলে আসছ! ৮০ শতাংশ লোক সেলফিশ, ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস। ২০ শতাংশ লোক সেলফলেস না হলে দেশটা তো টিকে থাকত না। তাই না? সো আমার মতো মারিয়া আরও অনেক কর্নারেই আছে। যারা দেশের জন্য কিছু করতে চায়। দেশপ্রেমের কারণে বারবার দেশে ফিরে আসে। আমাকে যদি এখানে থাকতে দেওয়া না হয়, অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি, আমি নিজ দেশের জন্য কাজ করব। কারণ আমার শেকড় এখানে।
কেমন লাগছে ২০ বছর আগের ও ২০ বছর পরের অবস্থা? এখনকার জেনারেশন, ইন্ডাস্ট্রি—সবকিছু কেমন দেখছেন?
মারিয়া: ১০ বছর আগেও যেমন ছিল, এখনো যদি এমন থাকতাম, তাহলে আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। অধঃপতন, অবনতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। অসম্মান তো আছেই। ১০ বছর আগেও মডেল হিসেবে পরিচয় দিলে ভ্রু কুঁচকে তাকাত লোকজন। অপমানজনক নজর দিত। আজও যখন নিজেকে মডেল বলি, কিছু কিছু মানুষের কাছে অসম্মানিত হতে হয়। কিছু কিছু মানুষ জায়গাটাকে নোংরা করে ফেলেছেন। এ কারণে বাদবাকি যারা পরিষ্কার মানুষ আছেন, তাঁদের গায়েও নোংরা লেগে যাচ্ছে। এখনকার দিনে অসংখ্য মানুষ মডেলিং, অ্যাক্টিং এসবে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু তাদের আর্ট, কাজ ইত্যাদি পছন্দ না। ফ্যামিলির সঙ্গে যুদ্ধ করে মিডিয়াতে কাজ করেছি। যুদ্ধ করে চলেছি। একা একা চলেছি। কখনো খারাপ পথে যাইনি। বাবা-মায়ের শেখানো নীতিতে চলেছি। অনেক স্ট্রাগল করেছি। প্যাশন ছিল আমার, আর্ট ছিল। এখনকার সবার টাকার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। তারা কাজ শিখতে চায় না। ভালোমতো কাজ করতে চায় না। কয়েকটা ম্যাগাজিন, টিভিতে চেহারা দেখাবে, স্টেজে কয়েকবার উঠবে এবং ছবিগুলো নিয়ে অনেক টাকা আদায় করবে। এই যে কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো আসলেই ডিসটার্বিং। যারা কাজ করতে চাচ্ছেন, তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। যাদের কাজ করার ইচ্ছা নেই, তারা চেহারা দেখিয়ে, ঘুরে বেড়িয়ে অন্যদের থেকে টাকা আয় করার সোর্স বানানোর ইচ্ছা যাদের, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে প্রায়োরিটি। এসবের কারণে ইন্ডাস্ট্রিটা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচুর মানুষ আসছেন, কিন্তু কাজের মানুষ তো আমি দেখি না।
আমাদের এখনো মানুষ বলে, তোমাদের ফার্স্ট ব্যাচটা অনেক কিছু দেখিয়ে গেছে। সেকেন্ড ব্যাচ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কামড়ে ধরে আছে। এখনো পর্যন্ত তোমাদের মতো মডেল দেখি না। আরেকটা সেকেন্ড মারিয়া, ইমি, রুমা, আজরা দেখি না। আমি এখন উল্লেখযোগ্য কাউকে দেখি না। প্রত্যেকটা মানুষের একটা সিংহাসন আছে। আমার একটা আছে। আমি যে সিংহাসন থেকে নেমে অন্যকে ওঠার সুযোগ দেব, আমার সিংহাসনে কাউকে বসতে হবে তো। কাউকে তো এসে জায়গাটা দখল করতে হবে। গত পাঁচ বছর ধরে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি।
সম্প্রতি আমরা কিছু মডেল দেখছি, যারা ইন্টারন্যাশনালি কাজ করছেন। অনেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছেন। সেটা দেখে তো আরেকটা ইমপ্রেশন তৈরি হয়।
মারিয়া: একসময় ‘ফেস অব এশিয়া’ নামে কনটেস্ট হতো। সেখানে যাওয়ার জন্য প্রসেসটা করে দেওয়া হতো। সেখানে ব্যক্তিগত কিছু খরচ হতো। সেখানে আজাদ ফারহানা মিলি নামের একজন মডেল গেছেন। অবনি নামের একজনও গিয়েছেন। সেখানে তাঁরা বিজয়ী হয়েছিলেন। এ রকম কয়েকজন আছেন যারা ‘ফেস অব এশিয়া’ থেকে ক্রাউনগুলো পেয়েছেন। বাদবাকি ইন্টারন্যাশনাল কনটেস্টে কে গিয়েছেন? কোনো জায়গায় যেতে পারেনি তো এখন পর্যন্ত। সিলেক্টেডও হয়নি যাওয়ার জন্য। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের খেলাটা তো দেখলেন আপনারা, গত বছর (২০২০) কী হলো?
ব্যাঙের ছাতার মতো একাডেমি, গ্রুমিং স্কুল হচ্ছে। ঠিক সেরকম মাশরুমের মতো অনেকগুলো কনটেস্ট ওপেন হচ্ছে। সেই কন্টেস্টে যে পটেনশিয়াল ক্যানডিডেট থাকেন, তাঁর মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাঁকে দাম দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে সামনে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রপার ওয়েতে রান করা হচ্ছে না।
প্রপার ওয়েতে রান কেন হচ্ছে না? ইন্ডাস্ট্রির বয়স তো খুব কম নয়। আপনারা তো কাজ করছেন। সময় তো অনেক গেল। আমরা অনেক কিছুই দেখলাম। অনেকগুলো জেনারেশন দেখলাম। এখন কেন বলছেন যে প্রপার ওয়েতে হচ্ছে না?
মারিয়া: প্রবলেমটা হচ্ছে নিউ মানি। নিউ পিপল হু হ্যাজ নিউ মানি ইন দিস স্টেজ। হি হ্যাজ নো এডুকেশন, নো ক্লাস, নো নলেজ। দিস ইজ দ্য প্রবলেম। এখন একটা হ্যাচারির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, ট্রাক সমিতির মালিক যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান, তারপর এসে ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে ইনভেস্ট করতে চান, তাঁর কিন্তু রুচিটা ওইরকমই থাকবে। তাঁর মনে হবে তিনি নায়িকা দেখবেন, নায়িকার হাত ধরে বসবেন, গল্প করবেন, মডেলদের নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যাবেন। কারণ, মডেলরা অনেক সেক্সি ক্লথিং পরে, তারা দেখতে হলিউড-বলিউডের হেরোইনের মতো। তো তাঁরা একটু ঘুরবেন ফিরবেন, আর ফ্রেন্ডদেরকে ছবি দেখিয়ে বলবেন ‘আমার গার্লফ্রেন্ড এটা’। একজন অর্ধশিক্ষিত ট্রাক সমিতির সভাপতি বা হ্যাচারি ব্যবসায়ী কী করে বুঝবেন বিউটি কী, নলেজ কী, আর কোয়ালিফিকেশন কী। আমাদের দেশে তো ক্লাসি, এডুকেটেড, এলিট পিপলের সংখ্যা কম। এসব কারণেই ঘটছে অনেক কিছু।
আমিও যেন ওয়ালের মধ্যে ঠেসে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে আমি আবার গা ঝাড়া দিই। ধাক্কা দিই। বলি, এই সরো। জায়গা ছাড়ো। আমার ঘর খালি করো। আমার ঘরে ময়লা এনো না। তোমাদের ঘরে যা করার করো, কিন্তু আমার ঘরে প্রবেশ করো না। আই ডোন্ট লাইক ইট। এটা তো সবাই করতে পারছে না। সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছি আমরা। যারা সংখ্যায় খুব কম হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের ইচ্ছাটাও খুব কম। তারা ইচ্ছাটাকে নিয়ে কাজ করতে চায় না।
মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে, বিবি আপার ক্ষমতা ছিল অনেক কিছু করার। কিন্তু বিবি আপা করলেন না। এর পেছনে সম্পূর্ণ বিবি আপার দোষও না। এর পেছনে বাঙালির দোষ। দেশের মানুষের দোষ। বিবি রাসেলের মতো একজন ডিজাইনার, যিনি ইন্টারন্যাশনালি এত সম্মানিত হয়েছেন, তাঁকে বাংলাদেশ কিছুই দিতে পারেনি। কতটুকু সম্মান দিয়েছে তাঁকে? দুই পক্ষই দায়ী। বিবি আপার ইচ্ছেটা কম ছিল। তাঁর ইচ্ছা না থাকার কারণ হলো, বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে প্রায়োরিটি দিচ্ছিল না। তাঁকে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছিল না। জেলাসি থেকে তাঁর আশপাশের অনেক মানুষই তাঁকে পুট ডাউনের চেষ্টা করেছে। অ্যান্ড শি লস্ট হার ইন্টারেস্ট। বড় বড় মানুষেরা যদি এভাবে ছেড়ে চলে যান, তাহলে আমাদের দেশের ভালো কী করে হবে? ভালো কিছু হবে না। খারাপই হবে।
আরেকটা জিনিস, অনেক কিছুর ইনস্টিটিউট হলো, আমাদের ফ্যাশন মডেলিং—এই ইন্ডাস্ট্রির কোনো ইনস্টিটিউট হলো না। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
মারিয়া: আমি শুধু আমারটা বলতে পারি। বাকিদের কথা বলতে পারব না। কেন সরকারিভাবে আমরা স্বীকৃতি পাচ্ছি না, এই প্রশ্ন আমার সব সময় থাকবে। যত দিন পর্যন্ত স্বীকৃতি না পাই। আমাদের কোনো অর্গানাইজেশন কেন নেই, কোনো সোসাইটি কেন নেই, আমাদের নিজের কমিটি নাই, যেখানে আমাদের সঙ্গে হওয়া কোনো অন্যায়ের বিচার হবে, যেখানে আমাদের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন দেওয়া থাকবে।
এখন এমন হচ্ছে কেউ একটু জিন্স পরল, নাচানাচি করল—তারাই মডেল হয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা মারাত্মক। আমার মনে হয় মডেলিংয়ে সবচেয়ে বেশি হিংসেমি কাজ করে। সবাই মিলে খেতে গেলে তো অল্প অল্প ভাগে পড়বে। সবাইকে ফেলে দিয়ে আমি একা যদি খেতে পারি, তাহলে অনেক বেশি খেতে পারব। কমিটি হলে, অর্গানাইজেশন হয়ে গেলে তো সবাই মিলে কাজ করব, একাত্ম থাকতে হবে। তাহলে আমি খুব বেশি এখান থেকে নিতে পারব না। এর জন্য বড় বড় মাথারাও চায় না যে অর্গানাইজেশনটা হোক। বাট আমি স্ট্রংলি চাই অর্গানাইজেশন হোক। চাই সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আমাদের কমিটি হোক। যেখানে আইনটা বাস্তবায়ন করা হবে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ও মডেলদের জন্য নতুন আইন করা হোক। আমি কাজ চালাচ্ছি। সামনে আরও এগিয়ে যাব। আশা করি কিছু একটা করতে পারব।
তাহলে কি পুরো ব্যাপারটা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বলছেন?
মারিয়া: শিক্ষার সাথে অনেক বেশি যুক্ত। আর তারপর তো একটা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আসেই। শিক্ষা, প্রপার গাইডলাইন থাকলে নেক্সট জেনারেশন সুন্দর হয়। হবেও। গুরু যদি না জানে কোনো কিছু, কীভাবে শিষ্যদের শেখাবে?
আপনি তো অনেকগুলো দেশ ঘুরেছেন। বিদেশে থেকেছেন অনেক দিন। সেসব ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বেসিক পার্থক্যটা কী?
মারিয়া: আকাশ আর পাতাল সমান পার্থক্য। একটা ফ্যাশন শো, একটা প্রোজেক্ট করতে গেলে, ছোট্ট থেকে ছোট্টতর কিছু করতে গেলেও তারা অনেক বেশি অর্গানাইজড থাকে। একটা ফটোশুটের জন্য ১৫-২৫ দিন সময় নেয়। ওরা লে-আউট তৈরি করে, মডেলকে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে, মডেলের ম্যাজারমেন্ট নিয়ে রাখবে, ট্রায়ালের জন্য ডাকবে, মডেলের স্কিন টেস্ট করবে, স্কিন কেয়ারের ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে। এর পর প্লেস, ভেন্যু, ব্যাকগ্রাউন্ড কী হবে, ছবির কালার কারেকশন কেমন হবে—সবকিছু তারা ঠিক করে রাখে। পরিকল্পনামাফিক করে। সবকিছু টাইম টু টাইম হবে।
আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সকাল ৮টা মানে ৮টা। তারা সবকিছু মেনে নেয়। কাজের প্রয়োজনে তারা ছোট পোশাকও পরতে পারে, আবার বোরকাও পরতে পারে। তারা পেশাটাকে সিরিয়াসলি নেয়। এবং তারা খুবই সম্মানের সাথে নেয়। নাচতে নেমে তারা ঘোমটা দেওয়ার চেষ্টা করে না। আর বাঙালি হচ্ছে আমি নাচব এবং ঘোমটাও সরতে পারবে না। বাংলাদেশিদের অ্যাপ্রোচ, বিহেভ, প্রেজেন্টেশন দেখলে অনেক দুঃখ লাগে। নতুন মডেলদের সঙ্গে এমন যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা হয়, যা-তা বলা হয়, গালিগালাজও করা হয়। কিন্তু দু-চার-পাঁচ বছর পর সে যখন অনেক বড় মডেল হয়ে যায়, তাকেই ধরে কিন্তু চাটে। নতুন মডেলদের সঙ্গে বিদেশে এমন করা হয় না। বলা হয়, ডোন্ট ডু দিস। আর এ দেশে তো নির্দোষ-চুপচাপ মডেলের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এ জন্যই দু-চার-পাঁচ বছর পর সেই মডেল বেয়াদব হয়ে যায়। অন্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কারণ, সে তো শুরুতে ভালো ব্যবহার পায়নি। ওকে তো শেখায়নি আচরণ কেমন হবে।
আপনি কী মনে করেন, একটা রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউট থাকা উচিত? যেমন চারুকলা ইনস্টিটিউট আছে।
মারিয়া: অবশ্যই। প্রত্যেকটা দেশে আছে। পাশের দেশ ইন্ডিয়াতেই আছে। বাংলাদেশে কেন নেই? বাংলাদেশের মাটি, ঋতু সবই ভালো। কী নেই! যাদের ট্যালেন্ট আছে, তারা সাংঘাতিক ট্যালেন্টেড হয়। এত ট্যালেন্ট, রিসোর্সেস নিয়ে আমরা বসে আছি। তারপরও কেন হবে না! আমাদের কেন চিনবে না ইন্টারন্যাশনালি? কেন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নাম অন্যান্য দেশ জানবে না? এ বিষয়টা তো খারাপ লাগে!
যারা সিনিয়র আছেন, একসঙ্গে কাজ করেন, তাদের কি বাংলাদেশে বড় প্ল্যাটফর্ম বানানোর ইচ্ছে আছে?
মারিয়া: সবার নেই। আমার ইচ্ছে আছে। আর মডেল আসিফ খানের আছে। আর কারও কাছে এই জিনিসটা পাইনি।
টেলিভিশন আর্টিস্টদের অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। আমাদের মডেলদের নেই। কেন জানি মনে হয় জেলাসি কাজ করে। তারা এক জোট হতে চায় না। একসঙ্গে হলেই তারা ইনফ্যারিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে। তারা ভাবে এখন বুঝি একা চলতে পারব না। এটা আসলে ভুল।
ভবিষ্যৎ কী?
মারিয়া: যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ। সব জায়গায় অন্ধকার। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো ফ্যামিলি থেকে কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে আসবে না। কাজ করবে না। যদি এখন ইন্ডাস্ট্রির মানুষ সোচ্চার হয়, প্রত্যেকের মধ্যে যদি দায়িত্ববোধ কাজ করে, যদি অ্যাকশন নেয়, তাহলে একেকটা সিঙ্গেল অ্যাকশন যথেষ্ট।
আরেকটা জিনিস জানতে চাই, আপনি তো মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন, র্যাম্প করেছেন, অ্যাক্টিং করেছেন। কোনটা বেশি ভালো লেগেছে? কোনটার প্রতি আগ্রহ বেশি?
মারিয়া: অবশ্যই র্যাম্প।
অ্যাক্টিং কেন নয়?
মারিয়া: যারা অ্যাক্টিং করেন, তাঁদের আমি সম্মান জানাই। অভিনয়ে অনেক কষ্ট। অনেক বেশি কষ্ট। ঘরে, বাইরে, বস্তিতে, এখানে-সেখানে অনেক জায়গায় গিয়ে থাকতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। আমার দ্বারা এত কষ্ট সম্ভব না।
অনেক ধন্যবাদ আজকের পত্রিকাকে সময় দেওয়ার জন্য।
মারিয়া: আপনাকে এবং আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে এই কার্যক্রমে যুক্ত। আমরা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মুদারাবা স্কুল স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি, যেখানে অভিভাবকেরা সন্তানদের পক্ষ থেকে হিসাব পরিচালনা করেন। মূল লক্ষ্য হলো শিশু-কিশোরদের সুদমুক্ত অর্থনীতিতে যুক্ত করা এবং ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল...
৯ ঘণ্টা আগেইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) নিয়মিতভাবে স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিশেষ অফারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছে এবং তাদের হিসাব খোলায় উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং জ্ঞান ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি।
৯ ঘণ্টা আগেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগেদীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার...
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
আজকের পত্রিকা: কবে থেকে স্কুল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত ইসলামী ব্যাংক?
ওমর ফারুক খাঁন: ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে এই কার্যক্রমে যুক্ত। আমরা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মুদারাবা স্কুল স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি, যেখানে অভিভাবকেরা সন্তানদের পক্ষ থেকে হিসাব পরিচালনা করেন। মূল লক্ষ্য হলো শিশু-কিশোরদের সুদমুক্ত অর্থনীতিতে যুক্ত করা এবং ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল ব্যাংক গ্রাহক হিসেবে গড়ে তোলা।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ খাতে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান কীভাবে দেখছেন?
ওমর ফারুক খাঁন: বর্তমানে আমাদের ৬ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী হিসাব রয়েছে, যা দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক, গ্রামীণ পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণ এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। মাত্র ১০০ টাকায় হিসাব খোলা যায়, কোনো বার্ষিক চার্জ নেই, শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে ডেবিট কার্ডও পায়। ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের সন্তানেরাও সহজে এই সুযোগ নিতে পারছে।
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিং বিস্তারে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ওমর ফারুক খাঁন: এখন ৬১ ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি এই কার্যক্রমে যুক্ত; যা বলে দেয় ব্যাংকগুলো কতটা সক্রিয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি শাখা অন্তত একটি স্কুলে স্কুল ব্যাংকিং পরিচালনা করছে; পাশাপাশি ব্যাংকগুলো সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সঞ্চয়ের গুরুত্ব এবং ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পায়। আশাব্যঞ্জক দিক হলো, এই হিসাবগুলোর ৫৪ শতাংশই গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের নামে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীরা সাধারণত কোথা থেকে সঞ্চয়ের অর্থ পায়?
ওমর ফারুক খাঁন: বেশির ভাগ টিফিনের টাকা, হাতখরচ, উপহার অথবা বৃত্তির অর্থ থেকে সঞ্চয় করে। কেউ কেউ টিউশন বা ছোটখাটো অনলাইন কাজ থেকে আয় করে জমা রাখে। অভিভাবকেরাও সন্তানদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে নিয়মিত কিছু টাকা জমা দেন। এই ছোট ছোট জমা মিলিয়েই তৈরি হচ্ছে একটি বড় আর্থিক ভিত্তি।
আজকের পত্রিকা: তবে সাম্প্রতিক সময়ে জমার প্রবাহ কিছুটা কমে এসেছে। কেন?
ওমর ফারুক খাঁন: এর পেছনে প্রধান কারণ অর্থনৈতিক চাপ ও সচেতনতার অভাব। অনেক পরিবার আগের মতো সঞ্চয়ের জন্য আলাদা অর্থ রাখতে পারছে না। অন্যদিকে কিছু ব্যাংক করপোরেট খাতে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় এই খাতের উদ্যোগও কিছুটা কমেছে। তবে নীতিগত সহায়তা, ডিজিটাল সুবিধা এবং প্রচার বাড়ানো গেলে দ্রুতই তা ঘুরে দাঁড়াবে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় অর্থনীতিতে খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় কতটা শক্তি জোগাচ্ছে?
ওমর ফারুক খাঁন: এই ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলো একত্রে ব্যাংকের আমানত বাড়াচ্ছে, যা পরে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এতে কর্মসংস্থান বাড়ে, অর্থনীতি সচল হয়। একই সঙ্গে শিশুরা ছোটবেলা থেকে অর্থের মূল্য, সঞ্চয় ও আর্থিক শৃঙ্খলা শেখে। আমার বিশ্বাস, এটি শুধু ব্যাংক উদ্যোগ নয়; এক সামাজিক পরিবর্তনের আন্দোলন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অর্থনৈতিকভাবে সচেতন এবং আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলবে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
আজকের পত্রিকা: কবে থেকে স্কুল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত ইসলামী ব্যাংক?
ওমর ফারুক খাঁন: ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে এই কার্যক্রমে যুক্ত। আমরা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মুদারাবা স্কুল স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি, যেখানে অভিভাবকেরা সন্তানদের পক্ষ থেকে হিসাব পরিচালনা করেন। মূল লক্ষ্য হলো শিশু-কিশোরদের সুদমুক্ত অর্থনীতিতে যুক্ত করা এবং ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল ব্যাংক গ্রাহক হিসেবে গড়ে তোলা।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এ খাতে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান কীভাবে দেখছেন?
ওমর ফারুক খাঁন: বর্তমানে আমাদের ৬ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী হিসাব রয়েছে, যা দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক, গ্রামীণ পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণ এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। মাত্র ১০০ টাকায় হিসাব খোলা যায়, কোনো বার্ষিক চার্জ নেই, শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে ডেবিট কার্ডও পায়। ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের সন্তানেরাও সহজে এই সুযোগ নিতে পারছে।
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিং বিস্তারে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ওমর ফারুক খাঁন: এখন ৬১ ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি এই কার্যক্রমে যুক্ত; যা বলে দেয় ব্যাংকগুলো কতটা সক্রিয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি শাখা অন্তত একটি স্কুলে স্কুল ব্যাংকিং পরিচালনা করছে; পাশাপাশি ব্যাংকগুলো সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সঞ্চয়ের গুরুত্ব এবং ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পায়। আশাব্যঞ্জক দিক হলো, এই হিসাবগুলোর ৫৪ শতাংশই গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের নামে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীরা সাধারণত কোথা থেকে সঞ্চয়ের অর্থ পায়?
ওমর ফারুক খাঁন: বেশির ভাগ টিফিনের টাকা, হাতখরচ, উপহার অথবা বৃত্তির অর্থ থেকে সঞ্চয় করে। কেউ কেউ টিউশন বা ছোটখাটো অনলাইন কাজ থেকে আয় করে জমা রাখে। অভিভাবকেরাও সন্তানদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে নিয়মিত কিছু টাকা জমা দেন। এই ছোট ছোট জমা মিলিয়েই তৈরি হচ্ছে একটি বড় আর্থিক ভিত্তি।
আজকের পত্রিকা: তবে সাম্প্রতিক সময়ে জমার প্রবাহ কিছুটা কমে এসেছে। কেন?
ওমর ফারুক খাঁন: এর পেছনে প্রধান কারণ অর্থনৈতিক চাপ ও সচেতনতার অভাব। অনেক পরিবার আগের মতো সঞ্চয়ের জন্য আলাদা অর্থ রাখতে পারছে না। অন্যদিকে কিছু ব্যাংক করপোরেট খাতে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় এই খাতের উদ্যোগও কিছুটা কমেছে। তবে নীতিগত সহায়তা, ডিজিটাল সুবিধা এবং প্রচার বাড়ানো গেলে দ্রুতই তা ঘুরে দাঁড়াবে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় অর্থনীতিতে খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় কতটা শক্তি জোগাচ্ছে?
ওমর ফারুক খাঁন: এই ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলো একত্রে ব্যাংকের আমানত বাড়াচ্ছে, যা পরে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এতে কর্মসংস্থান বাড়ে, অর্থনীতি সচল হয়। একই সঙ্গে শিশুরা ছোটবেলা থেকে অর্থের মূল্য, সঞ্চয় ও আর্থিক শৃঙ্খলা শেখে। আমার বিশ্বাস, এটি শুধু ব্যাংক উদ্যোগ নয়; এক সামাজিক পরিবর্তনের আন্দোলন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অর্থনৈতিকভাবে সচেতন এবং আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলবে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি।
১৭ অক্টোবর ২০২১ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) নিয়মিতভাবে স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিশেষ অফারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছে এবং তাদের হিসাব খোলায় উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং জ্ঞান ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি।
৯ ঘণ্টা আগেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগেদীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার...
১৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিংয়ের প্রসারে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা কী?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) নিয়মিতভাবে স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিশেষ অফারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছে এবং তাদের হিসাব খোলায় উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং জ্ঞান ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের হিসাব খুলতে কী কী বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলার সুযোগ দিচ্ছে। ন্যূনতম জমা দিয়ে হিসাব খোলা যায়, পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পায় বিনা মূল্যে ডেবিট কার্ডসহ আকর্ষণীয় উপহার।
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিংয়ে ইবিএলের শেয়ার কত?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন স্কুলে অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছি, যাতে আরও বেশি শিক্ষার্থী এই উদ্যোগের আওতায় আসে। বর্তমানে দেশের স্কুল ব্যাংকিং খাতে ইবিএলের উল্লেখযোগ্য শেয়ার রয়েছে, যা আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাংকিং সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতিফলন।
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল বিশ্বাস করে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা দিতে কাজ করছি, যাতে তারা ছোটবেলা থেকেই স্মার্ট ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত হয়।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের হিসাবে বাড়তি কী সুবিধা রয়েছে?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের পাশাপাশি আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি, স্কলারশিপ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের মাধ্যমে উৎসাহিত করে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে বিশেষ ডিজিটাল সুবিধা যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: নতুন কোনো অফার দেবেন কি?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: হ্যাঁ, ইবিএল নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় অফার ও পুরস্কার কার্যক্রম আয়োজন করে। যেমন সেরা সঞ্চয়কারী শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার, আর্থিক সচেতনতা কর্মশালা ইত্যাদি।
উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, হেড অব রিটেইল অ্যান্ড এসএমই ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিংয়ের প্রসারে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা কী?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) নিয়মিতভাবে স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিশেষ অফারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছে এবং তাদের হিসাব খোলায় উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং জ্ঞান ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের হিসাব খুলতে কী কী বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলার সুযোগ দিচ্ছে। ন্যূনতম জমা দিয়ে হিসাব খোলা যায়, পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পায় বিনা মূল্যে ডেবিট কার্ডসহ আকর্ষণীয় উপহার।
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিংয়ে ইবিএলের শেয়ার কত?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন স্কুলে অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছি, যাতে আরও বেশি শিক্ষার্থী এই উদ্যোগের আওতায় আসে। বর্তমানে দেশের স্কুল ব্যাংকিং খাতে ইবিএলের উল্লেখযোগ্য শেয়ার রয়েছে, যা আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাংকিং সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতিফলন।
আজকের পত্রিকা: স্কুল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল বিশ্বাস করে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা দিতে কাজ করছি, যাতে তারা ছোটবেলা থেকেই স্মার্ট ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত হয়।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের হিসাবে বাড়তি কী সুবিধা রয়েছে?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: ইবিএল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের পাশাপাশি আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি, স্কলারশিপ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের মাধ্যমে উৎসাহিত করে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে বিশেষ ডিজিটাল সুবিধা যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: নতুন কোনো অফার দেবেন কি?
এম. খোরশেদ আনোয়ার: হ্যাঁ, ইবিএল নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় অফার ও পুরস্কার কার্যক্রম আয়োজন করে। যেমন সেরা সঞ্চয়কারী শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার, আর্থিক সচেতনতা কর্মশালা ইত্যাদি।
উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, হেড অব রিটেইল অ্যান্ড এসএমই ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি
বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি।
১৭ অক্টোবর ২০২১ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে এই কার্যক্রমে যুক্ত। আমরা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মুদারাবা স্কুল স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি, যেখানে অভিভাবকেরা সন্তানদের পক্ষ থেকে হিসাব পরিচালনা করেন। মূল লক্ষ্য হলো শিশু-কিশোরদের সুদমুক্ত অর্থনীতিতে যুক্ত করা এবং ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল...
৯ ঘণ্টা আগেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগেদীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার...
১৬ দিন আগেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিবিসি বাংলা: এখন বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
তারেক রহমান: বিষয়টি তো রাজনৈতিক। এটি তো কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। আমরা প্রথম থেকে যে কথাটি বলছি, আমরা চাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। অর্থাৎ, অনেক কিছুর মতো বিভিন্ন বিষয় আছে। যেমন—আমরা যদি মূল দুটো বিষয় বলি যে, কিছু সংস্কারের বিষয় আছে, একই সাথে প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বাধীন নির্বাচনের একটি বিষয় আছে।
মূলত কিছু সংস্কারসহ যে সংস্কারগুলো না করলেই নয়, এরকম সংস্কারসহ একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু, স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা প্রত্যাশা করি, ওনারা উনাদের ওপরে যেটা মূল দায়িত্ব, সেটি ওনারা সঠিকভাবে সম্পাদন করবেন। এটাই তো তাঁদের কাছে আমাদের চাওয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে।
আমরা আশা রাখি, প্রত্যাশা করি যে, ওনারা কাজটি সুন্দরভাবে করবেন। স্বাভাবিকভাবে এই কাজের সৌন্দর্য বা কতটুকু ভালো, কতটুকু ভালো বা মন্দভাবে করতে পারছেন, তার ওপরেই মনে হয় সম্পর্কের উষ্ণতা বা শীতলতা যেটাই বলেন, সেটা নির্ভর করবে।
বিবিসি বাংলা: আপনি কয়েক মাস আগে একটি মন্তব্য করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আপনার এই মন্তব্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী? তিনি তখন বলেছিলেন, সন্দেহটা ওনার মনে। অর্থাৎ, আপনার মনে সন্দেহ আছে কি না, সেটা তিনি জানতে চান। আপনার মনে কি সেই সন্দেহ আছে?
তারেক রহমান: দেখুন, আমি যখন কথাটি বলেছিলাম, এই মুহূর্তে আমার যতটুকু মনে পড়ে, সেই সময় পর্যন্ত ওনারা কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক কোনো টাইম ফ্রেম বা কোনো কিছু বলেননি।
রোডম্যাপ বলতে যা বোঝায়, আমরা নরমালি যা বুঝে থাকি, এরকম কিছু বলেননি। এবং সে কারণেই শুধু আমার মনের মধ্যেই নয়, আমরা যদি সেই সময় বিভিন্ন মিডিয়া দেখি, বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দেখি, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে, প্রায় সবার মনের মধ্যেই সন্দেহ ছিল।
আমরা যখন দেখলাম যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ডক্টর ইউনূস, উনি মোটামুটিভাবে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন। এবং পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার উনি ওনার যে সিদ্ধান্ত, সেটির ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারপর থেকেই খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সন্দেহ বহু মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে চলে যেতে ধরেছে।
আমি মনে করি, ওনারা যা বলেছেন, ওনারা যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় থাকবেন, ওনাদের বক্তব্যে, ওনাদের কাজে যত বেশি দৃঢ় থাকবেন, ততই সন্দেহ চলে যাবে আস্তে আস্তে।
বিবিসি বাংলা: সেই সন্দেহ মনে কিছুটা দূরীভূত হয়েছিল লন্ডনে যখন তিনি আপনার সঙ্গে বৈঠক করলেন। তার পরেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা এসেছিল। তো সেই বৈঠকে নির্বাচনের কথা তো হয়েছিল, যেহেতু সেটি পরে এসেছে। এর বাইরে কি আপনাদের মধ্যে আর কোনো কথা হয়েছে? আর কোনো বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা বা সমঝোতা কিছু হয়েছে?
তারেক রহমান: এর বাইরে স্বাভাবিকভাবেই উনি একজন অত্যন্ত স্বনামধন্য মানুষ। অত্যন্ত বিজ্ঞ মানুষ উনি। এর বাইরে তো অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছে। এর বাইরেও উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, জনগণ যদি আপনাদের সুযোগ দেয়, তাহলে আপনারা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য—এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আমার কিছু চিন্তাভাবনা দেশের মানুষকে নিয়ে, দেশের জনগণকে নিয়ে, দেশকে নিয়ে আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ আমাদের যদি সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমরা কী কী বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করব, সে বিষয়গুলো নিয়ে কিছু কিছু আলোচনা হয়েছে।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের বিষয়টি তো আপনি বললেন, এর বাইরে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে গত এক বছরে যে ভূমিকা রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার, সেটাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
তারেক রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানে ইন্টেরিম, মানে এটা তো ক্ষণস্থায়ী বিষয়। তো খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশ পরিচালনা তো একটি বিশাল বিষয়। আমরা হয়তো ভূখণ্ডের ভিত্তিতে যদি বিবেচনা করি, হয়তো বাংলাদেশকে অনেকে বলবে ছোট দেশ। কিন্তু আমরা যদি জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিবেচনা করি, বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক ভূখণ্ডের চেয়ে বড় দেশ।
ইউকের (যুক্তরাজ্য) জনসংখ্যা ৭ কোটির মতো, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্লাস-মাইনাস ২০ কোটির মতো এখন। কাজেই ইউকের তিন গুণ বড়। এরকম একটি দেশ পরিচালনা করতে হলে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের ম্যান্ডেটসহ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন। বিভিন্ন বিষয় থাকে, ইস্যুজ থাকে, বিভিন্ন বিষয় আছে।
তো এখন নির্বাচনের বাইরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পারফরমেন্স আপনি যেটা বললেন, আমরা সবকিছু বিবেচনা করলে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, হয়তো ওনারা চেষ্টা করেছেন অনেক বিষয়ে। সব ক্ষেত্রে সবাই তো আর সফল হতে পারে না, স্বাভাবিকভাবে ওনাদের লিমিটেশনস কিছু আছে। সেই লিমিটেশনসের মধ্যে ওনারা হয়তো চেষ্টা করেছেন, যতটুকু পেরেছেন হয়তো চেষ্টা করছেন।
এক এগারোর সরকার নিয়ে মূল্যায়ন কী?
বিবিসি বাংলা: আমি একটু পিছনে তাকাতে চাই।
তারেক রহমান: ভাই, আমরা তো সামনে যেতে চাই। আপনি পেছনে কেন যাচ্ছেন? দেশকে সামনে নিতে হবে।
বিবিসি বাংলা: মানে, পেছন থেকেই তো শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হয়। তো পেছনের একটা বিষয়, সেটা হচ্ছে, এক-এগারোর সরকার বা সেনাসমর্থিত সরকারের সেই সময়টা নিয়ে রাজনীতিতে অনেক আলোচনা আছে। সে সময়টাকে ঘিরে আপনার মূল্যায়ন কী?
তারেক রহমান: এক বাক্যে বা সংক্ষেপে যদি বলতে হয়, এক-এগারোর সরকার তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সরকার ছিল।
আমরা দেখেছি, সেই সরকার আসলে কীভাবে দেশের যতটুকু যেমনই হোক বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যতটুকুই রাজনীতি গড়ে উঠেছিল, গণতান্ত্রিক ভিত্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল ভুল-ত্রুটি সবকিছুর ভিতর দিয়েই। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, কীভাবে তারা সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল। দেশকে একটি অন্ধকার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেখেছি যে, খুব সম্ভবত তাদেরই ভিন্ন আরেকটি রূপ; অন্যভাবে দেখেছি আমরা ’ইন দ্য নেম অব ডেমোক্রেসি’।
বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন হয়েছে কতটা
বিবিসি বাংলা: ২০০৪ সালে আমি আপনার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ঢাকায়। সে সময় আপনি বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন। তো বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কতটা পরিবর্তন হয়েছে; ভবিষ্যৎ বিএনপিই বা কেমন হবে?
তারেক রহমান: আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণ, দেশ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব। আমরা দুটো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে খুবই গর্ব করি, অহংকার করি। একটি হচ্ছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প, আরেকটি হচ্ছে প্রবাসীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান—এ দুটোই কিন্তু বিএনপি শুরু করেছিল।
আমরা দেখেছি, বিএনপির সময়ে শুরু হয়েছিল প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়া, একই সাথে গার্মেন্ট শিল্পের প্রসার। এর বাইরেও যদি আমরা দেখি, ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষটা হয়েছিল, পরবর্তীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষপীড়িত একটি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসপূর্ণ করে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ না, অল্প পরিমাণ করে হলেও আমরা কিন্তু সেই সময় বিদেশে খাদ্য রপ্তানি, চাল রপ্তানি করেছিলাম।
আর রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা দেখি, যেখানে একসময় সকল দলকে নিষিদ্ধ করে একটি দল বাকশাল করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি যে, বিএনপির কাঁধে যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে, তখন কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চালু আবার করা হয়েছিল।
কাজেই আপনি বললেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইয়েস, আমরা অতীতে এই ভালো কাজগুলো করেছি। ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়গুলো কনসিডারেশন (বিবেচনায়) রেখেই সামনে এগিয়ে যাব। আমাদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে ভবিষ্যৎ বিএনপির গণতন্ত্রের যে বুনিয়াদ, একটি শক্তিশালী বুনিয়াদ তৈরি করা। জবাবদিহি তৈরি করা।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অভিযোগ সব সময় থাকে। যখন যারা চেয়ারে বসে, জবাবদিহিতার প্রশ্নটা তখন থাকে না। মানে, এড়িয়ে যায়—এ ধরনের একটা অভিযোগ সব সময় ছিল। সব রাজনৈতিক দল বা যারাই সরকারে এসেছে।
তারেক রহমান: দেখুন, অভিযোগ থাকতেই পারে। আমি আগেই তো বলেছি, একটি বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম অভিযোগ থাকতে পারে। এখন অভিযোগ নিয়ে তো আর বলা যাবে না। কিন্তু অভিযোগটা কনসিডারেশনে (বিবেচনায়) অবশ্যই রাখব। আপনি যেহেতু আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমি আপনাকে এটাই বলেছি। আপনি জানতে চেয়েছেন ভবিষ্যৎ কেমন হবে।
আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে যা দেখেছি, বুঝেছি, জেনেছি, আমি আপনার সামনে সেটিই তুলে ধরলাম। অভিযোগ এ দেশেও আছে, কিন্তু আপনি যা জানতে চাইছেন, এটি তো আমি একমাত্র সুযোগ যদি পাই, আমি ইনশআল্লাহ সুযোগ পেলে পরে তখন আস্তে আস্তে জিনিসটি প্রমাণ করা সম্ভব হবে।
হ্যাঁ, এটাও বাস্তবতা। প্রাগমেটিক কথা যেটা, বাস্তব কথা যেটা, আমি সুযোগ পেলে যে সাথে সাথেই বিষয়টি হবে তা না। কারণ, আমি সুযোগ পেলে আপনাকেও বুঝতে হবে। আপনিও কিন্তু দেশ গঠনের একটা পার্ট। কাজেই আপনার মতো এরকম লক্ষকোটি মানুষকে বিষয়টি বুঝতে হবে। এতটুকু বলতে পারি যে, ইয়েস, উই আর কমিটেড। উই উইল ট্রাই আওয়ার বেস্ট টু ডু পারফরম বেস্ট ডু দ্যাট।
বিবিসি বাংলা: জবাবদিহির কথা বলছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলি, গত ১৫ বছর আপনি নির্বাসনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ায়, এটা একটা ভিন্ন পরিস্থিতি। নেতৃত্ব নিয়ে আপনার চিন্তাধারায় কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে? আপনি কী অনুভব করেন, অনুধাবন করেন?
তারেক রহমান: গত ১৭ বছর প্রবাসজীবনে আছি এবং অনেকগুলো বছর আমি বাংলাদেশের সাথে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা টাইম ডিফারেন্স, ডিস্টেন্স ডিফারেন্স তো আছেই। রিচিং ডিফারেন্স তো একটা ডিফিকাল্টিস তো আছেই। এটি একটি বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আমি আমার পরিবার অর্থাৎ, আমার স্ত্রী এবং আমার সন্তানকে এখানে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ তাদের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো এই ডিফিকাল্ট কাজটি করা আমার জন্য আরও ডিফিকাল্ট হতো। ওনাদের সহযোগিতা ছিল, সে জন্য আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।
একই সাথে আমি আবারও ধন্যবাদ দিতে চাই আমার হাজারো-লক্ষ নেতাকর্মীকে। যাঁরা এই ডিফিকাল্টিজের মধ্যে থেকেও আমাকে সহযোগিতা করেছেন দলকে সুসংগঠিত রাখতে, দলকে রাজপথে নিয়ে যেতে শত অত্যাচার, বাধাবিঘ্নের মাঝেও জনগণের কথা তুলে ধরতে, জনগণের দাবির ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে। আপনি জিজ্ঞেস করেছেন মনে হয় যে, এখানে (যুক্তরাজ্যে) থেকে কী কী দেখেছি, শিখেছি বা জেনেছি। আমি মনে করি, এই দেশ থেকে ভালো যা কিছু দেখেছি বা শিখেছি। দেশের নাগরিক হিসেবে এবং যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, হয়তো আমার একটি সুযোগ আছে দেশের জন্য ভালো কিছু করার।
যদি আমি ইনশাআল্লাহ সেই সুযোগ পাই, তাহলে যতটুকু সম্ভব দেশের মানুষের জন্য বা দেশের জন্য কিছু করার, এভাবে বিষয়টিকে আমি বিবেচনা করি।
কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?
বিবিসি বাংলা: কূটনীতির প্রসঙ্গে আসি। বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, তাহলে কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?
তারেক রহমান: গুড কোশ্চেন। বিএনপির মূলনীতি একটাই—সবার আগে বাংলাদেশ। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতি সবার আগে বাংলাদেশ। আমার জনগণ, আমার দেশ, আমার সার্বভৌমত্ব। এটিকে অক্ষুণ্ন রেখে, এর স্বার্থ বিবেচনা করে, এই স্বার্থকে অটুট রেখে বাকি সবকিছু।
বিবিসি বাংলা: এটাকে বৈশ্বিক রাজনীতির একটা প্রভাব বলা যায়? কারণ আপনি যদি বিভিন্ন দেশে দেখেন, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও আমেরিকা ফার্স্ট একটা স্লোগান দিয়ে এসেছিলেন।
তারেক রহমান: না, ওদেরটা ওরা বলেছে, আমি ভাই বাংলাদেশি। আমার কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বড়, আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বড়। কাজেই কে কী বলল...সবার আগে বাংলাদেশ, সিম্পল, কমপ্লিকেট (জটিল) করার কিছু নাই, এটা সিম্পল ব্যাপার।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান কী?
বিবিসি বাংলা: বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে যে সম্পর্ক ছিল, সেটা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। তো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আপনাদের নীতি কী হবে?
তারেক রহমান: আমার মনে হয়, আপনি একটু আগে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেখানে বোধহয় আমি ক্লিয়ার করেছি পুরো ব্যাপারটা। সবার আগে বাংলাদেশ। এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন।
এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। বিষয় তো হচ্ছে, ভাই, বাংলাদেশ আমার কাছে আমার স্বার্থ, আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখব, আমার দেশের স্বার্থ দেখব। ওটাকে আমি রেখে আপহোল্ড করে আমি যা যা করতে পারব, আমি তা-ই করব।
বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের স্বার্থ আপনারা সবার আগে নেবেন, সেটা আপনি পরিষ্কার করেছেন। ভারতের কথা বিশেষভাবে আসছে, যেহেতু সেটি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের তিন পাশেই এই দেশের সীমান্ত রয়েছে। এবং এটি নিয়ে আপনিও জানেন যে, বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তো সম্পর্ক নিয়ে বললামই, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বা কেমন থাকা প্রয়োজন—এ নিয়ে আপনার চিন্তা কী?
তারেক রহমান: অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাই না যে, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নিব না।
বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের স্বার্থের প্রসঙ্গে আপনি বলছেন যে, পানির হিস্যা চাওয়া এবং সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নিয়ে আপনারা সোচ্চার থাকবেন।
তারেক রহমান: না না, আমি উদাহরণ দিয়ে বললাম। দুটো উদাহরণ দিয়ে বোঝালাম আপনাকে যে আমাদের স্ট্যান্ডটা কী হবে। আমরা আমাদের পানির হিস্যা চাই। অর্থাৎ আমার দেশের হিস্যা, মানুষের হিস্যা আমি চাই, হিসাব আমি চাই।
আমার যেটা ন্যায্য, সেটা আমি চাই। অবশ্যই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমি বোঝাতে চেয়েছি যে, আমার মানুষের ওপরে আঘাত আসলে অবশ্যই সেই আঘাতকে এভাবে আমি মেনে নেব না।
বিবিসি বাংলা: একটা বিষয় যদি বলি, ৫ অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবং আপনিও জানেন যে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে গেছেন এবং সেখানে আছেন। ভারতের সাথে একটা সম্পর্কের শীতলতা দেখা গেছে গত এক বছর ধরে। যেমন ধরুন, সেটি যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে, ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম, সেই ক্ষেত্রে কি কোনো পরিবর্তন আপনারা সরকারে এলে হবে বা পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন—এমন কোনো চিন্তা কি আপনাদের আছে?
তারেক রহমান: এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সাথে শীতল থাকবে। সো, আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ও দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নে যা বললেন
বিবিসি বাংলা: সংস্কারের প্রশ্নে আসি। এখন খুব আলোচিত ইস্যু। সংস্কারের কিছু বিষয়ে দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের কিছুটা মতপার্থক্য বা মতবিরোধ হচ্ছে। যেমন—এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা বা দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, এরকম একটা প্রস্তাব এসেছে, যেখানে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। যদি এক ব্যক্তি তিন পদে একই সাথে থাকেন, সেটা স্বৈরতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা তৈরির সুযোগ দেয় কি না?
তারেক রহমান: সকলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এই যে বাংলাদেশে রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, থাকবেন না—এরকম আরও যে বিষয়গুলো আছে, এগুলো বাংলাদেশে যখন স্বৈরাচার ছিল তাদের মুখের ওপরে, তাদের চোখের দিকে চোখ রেখে আমরা বিএনপিই বলেছিলাম।
এখন হয়তো অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন। সেদিন কিন্তু সংস্কারের ’স’-ও তারা বলেননি। তার পরেও সকলের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি বলতে চাই যে, বিএনপি ’নোট অব ডিসেন্ট’ দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে অ্যাগ্রি (সম্মত) করতে হবে সবার সাথে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সাথে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না।
মানে, আমাকে অন্যের সাথে একমত হতে হবে, তাহলে গণতন্ত্র। আমি যদি অন্যের সাথে দ্বিমত করি, তাহলে গণতন্ত্র না। এটি কেমন গণতন্ত্র? কারণ গণতন্ত্রের মানেই তো হচ্ছে, বিভিন্ন মতামত থাকবে। আমরা অনেক ব্যাপারেই একমত হব হয়তো। সকল ব্যাপারে একমত হবো না, কিছু ব্যাপারে হয়তো দ্বিমত থাকতেই পারে। এটাই তো গণতন্ত্র, এটাই তো এসেন্স অব গণতন্ত্র।
আমরা তো কোনো হাইড অ্যান্ড সিক করছি না। আমি যেটা মনে করছি যে ভাই, আমি মনে করছি যেটা আমার দৃষ্টিতে ঠিক না, আমি বলছি ঠিক না।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু দুই বছর আগে ২০২৩ সালে আপনারা ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই ৩১ দফাতেই আপনারা সংস্কারের যেসব বিষয় এনেছেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেছেন। তাহলে এ বিষয়গুলোতে আপত্তি কেন?
তারেক রহমান: না, আমরা যেটাতে বলেছিলাম, আমরা সেখানে এখনো আছি। যতটুকু ভারসাম্য হওয়া উচিত, যে যে বিষয়ে যতটুকু বিবেচনা করা উচিত, আমরা সে বিষয়ের মধ্যে এখনো কমবেশি আছি। আমাদের অবস্থান থেকে তো আমরা অবস্থান পরিবর্তন করিনি।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু মূল যে বিষয়গুলো, যেমন যেটা বড় বিরোধ হিসেবে আসছে, বড় মতপার্থক্য হিসেবে আসছে যে, এক ব্যক্তির তিন পদে একসাথে থাকা, সেখানেই তো আপত্তিটা থাকছে বিএনপির।
তারেক রহমান: না, আমরা তো তখনো বলিনি যে এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবে না। এটা অন্যরা কেউ বলেছে যে, এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবে না। আমরা মনে করি না যে, এটাতে স্বৈরাচারী হওয়ার কোনো কারণ আছে।
আমরা তো দেখেছি, স্বৈরাচারের সময়ও এবং তার আগে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তাদের টু থার্ড মেজরিটি ছিল। টু থার্ড মেজরিটি ২০০৮ সালে তারা নিয়েছিল। তারা ওটাকে চেঞ্জ করে ফেলেছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখেনি।
২০০১ সালে তো বিএনপিরও টু থার্ড মেজরিটি ছিল, বিএনপি তো চেঞ্জ করেনি। যেহেতু জনগণ মনে করে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে; বিএনপি টু থার্ড মেজরিটি থাকার পরেও তো চেঞ্জ করেনি।
কাজেই এক ব্যক্তির হাতে থাকলেই যে স্বৈরাচর হবে তা নয়। এটি নির্ভর করে ব্যক্তি টু ব্যক্তি, শুধু আইন চেঞ্জ করলেই সবকিছু সঠিক হয়ে যাবে না।
৩১ দফা, নাকি জুলাই সনদ, অগ্রাধিকার কী হবে
বিবিসি বাংলা: এই সংস্কারের বিষয়গুলোতে যেখানে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটা জুলাই সনদ প্রণয়নের কথা। সেটাও বাস্তবায়নের উপায়গুলো নিয়ে বা বাস্তবায়নের পথ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটা বিতর্ক আছে। অনেক দল বলছে যে, নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দেওয়া বা বাস্তবায়ন করা। আর বিএনপি বলছে, নির্বাচিত সংসদ সেটা করবে। এই জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী, বিএনপির চিন্তাটা এখন কী?
তারেক রহমান: দেখুন, এখানে আবার আমাকে বলতে হচ্ছে, আমরা কিন্তু কোনো হাইড এন্ড সিক করছি না। যদি আমাদের সেরকম অসৎ উদ্দেশ্য থাকত মনের ভিতরে, বলতাম আরেকটা যে ঠিক আছে, ওকে, অসুবিধা নাই। তার পরে ইনশআল্লাহ আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমরা হয়তো করতাম না। তো আমরা যেটা মনে করছি, সেটাই বলছি।
এখন বিষয় হচ্ছে দেখুন, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ইম্পর্টেন্ট একটি বিষয়। দেখুন, আমরা যদি ইভেন রিসেন্ট যে ঘটনা, নেপালেও যদি দেখি, আপনি দেখেন, ওরা কিন্তু এত কিছুর মধ্যে যাচ্ছে না। ওরা বলছে যে, গুরুত্বপূর্ণ যা বিষয় আছে, সংস্কার বলেন বা বিভিন্ন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যা বিষয় আছে—নির্বাচিত প্রতিনিধি যাঁরা আসবেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি যাঁরা আসবেন, তাঁরা সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তার পরেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবকিছু বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আহ্বান করেছে। এখানে যতটুকু হয়েছে, আমরা বলেছি, এখন যতটুকু হয়েছে, যেগুলো শুধু আইন দিয়ে করলে হয়ে যায়, সেগুলো হয়ে যাক। যেগুলোর সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট লাগবে, সেগুলো আমরা মনে করি যে, নির্বাচিত সংসদ হওয়ার পরে সেখানে গ্রহণ করাটাই ভালো হবে।
কারণ, আপনি যদি নির্বাচিত সংসদের কথা বলেন, অথচ তাকে বাদ দিয়ে যদি আপনি আউট অব দ্য বক্স কিছু করেন এবং এটা যদি রেওয়াজ হয়ে যায়, তাহলে এটা আমরা মনে করি যে, এটা সাংবিধানিকভাবে হোক, আইনগতভাবে হোক বা যে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিবেচনা করেন না কেন, ভবিষ্যতের জন্য এটা একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সে জন্য আমরা মনে করি, যেটা দেশের জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতির একটি কারণ হবে। সে জন্যই আমরা এটার সাথে একমত না।
বিবিসি বাংলা: এখন বিএনপির যেহেতু ৩১ দফা আছে, যদিও যেসব বিষয় আলোচনায় এসেছে, অনেক বিষয়ে মিল আছে। তো বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা সরকার গঠন করে, তখন ৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ—কোনটা অগ্রাধিকার পাবে?
তারেক রহমান: আমরা যেগুলোতে একমত হয়েছি, প্রথমে আমরা সেগুলোর ওপরেই জোর দিব। সেটা আপনি যে নামেই বলেন না কেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সকলে মিলে একমত হয়েছি, আমরা প্রথমে সেগুলোতে ইনশাআল্লাহ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথমে সেগুলোতেই অবশ্যই জোর দিব।
আর, তারপরে আপনি যেটা ৩১ দফার কথা বললেন, অবশ্যই ৩১ দফা আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জনগণের প্রতি। আমরা তো আমাদের ৩১ দফার মধ্যে যেগুলোর এটার সাথে মিলে গিয়েছে, সেগুলো তো আমরা করবই। এর বাইরে যেগুলো থাকবে ৩১ দফায় আছে, সেগুলোও বাস্তবায়ন করব।
কারণ ওটা তো আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। এটাও যেমন পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট, ওটাও আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। এটা আমরা রাজনৈতিক দলগুলো মিলে একত্রিত হয়ে বলেছি। ওটাও আমরা অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েই কিন্তু ৩১ দফা দিয়েছি।
‘বিড়ালটি আমার মেয়ের’
বিবিসি বাংলা: রাজনীতি থেকে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনাকে সম্প্রতি প্রাণী অধিকার রক্ষা নিয়ে বেশ সোচ্চার দেখা গেছে। এ-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে আপনি যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের বাইরে আপনার পোষা বিড়ালের সঙ্গে আপনার নিয়মিত ছবি দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তো এটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কীভাবে?
তারেক রহমান: প্রথমত এখানে একটু ক্লিয়ার করে নেই, বিড়ালটি আমার মেয়ের। ও এখন অবশ্য সবারই হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই ওকে আদর করি।
বিষয়টি হচ্ছে, এরকম শুধু বিড়াল নয়, আমি এবং আমার ভাই যখন ছোট ছিলাম, আমাদের একটি ছোট কুকুরও ছিল। ইভেন, তখন আমাদের বাসায় আম্মা হাঁস-মুরগি পালতেন, ছাগলও ছিল আমাদের বাসায়। উনি ছাগলও কয়েকটি পালতেন।
তো স্বাভাবিকভাবেই আপনি যেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলেন, পোষা কুকুর-বিড়ালই বলেন, বাই দ্য ওয়ে কবুতরও ছিল আমাদের বাসায়। শুধু কবুতর না, আমাদের বাসায় একটি বিরাট বড় খাঁচা ছিল। সেই খাঁচার মধ্যে কিন্তু পাখি ছিল, বিভিন্ন রকমের এবং আবার আরেকটি খাঁচা ছিল, যেটার মধ্যে একটা ময়না ছিল।
ময়নাটা আমরা বরিশাল থেকে এনেছিলাম। ও আবার বরিশালি ভাষায় কথাও বলত। টুকটুক করে মাঝে মাঝে কিছু কিছু কথাও বলত। কাজেই বিষয়টি হঠাৎ করেই না। এই পশুপাখির প্রতি যে বিষয়টি, এটির সাথে আমি কমবেশি ছোটবেলা থেকে জড়িত আছি। হয়তো এটি এখন প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্নভাবে। বাট, এটির সাথে আমি বা আমার পরিবার, আমরা অনেক আগে থেকেই আছি।
কুকুর-বিড়াল ছিল, গরু-ছাগল ছিল, হাঁস-মুরগি ছিল, পাখি ছিল, ময়না ছিল, কবুতর ছিল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা চিন্তা করি, আমাদের আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। আমাদের দায়িত্ব কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি যা কিছু আছে প্রকৃতির, তার প্রতি কিন্তু যত্ন নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটি একটি বিষয়।
আর আমরা যদি মানবিক দৃষ্টিকোণ অথবা আমরা যদি নেচার থেকেও বিষয়টি দেখি, দেখুন, ওরা না থাকলে কিন্তু আমাদের জন্য বেঁচে থাকা কষ্টকর। প্রকৃতি যদি না থাকে, প্রকৃতির ব্যালেন্স যদি না থাকে।
এই আলোচনা শুরু হওয়ার আগে কিন্তু আপনি আমরা তিনজন কিন্তু ওয়েদার নিয়ে কথা বলছিলাম, এই ইংল্যান্ডের বা ইউকের ওয়েদার নিয়ে আমরা আলাপ করছিলাম এবং আমি বলছিলাম যে, আমার এই ১৭ বছর অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ওয়েদার মনে হয় একটু একটু এখানেও চেঞ্জ হয়েছে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে পত্রপত্রিকায় দেখেছি পলিউশন ঢাকা শহরে। নরমালি আমরা জানি যে, একটি দেশের টোটাল অংশের মধ্যে এটলিস্ট ২৫ শতাংশ গ্রীন দরকার, বনায়ন দরকার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আমি যতটুকু জেনেছি, এটি ১২ পার্সেন্টের মতো। হুইচ ইস ভেরি ডেঞ্জারাস।
তো এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি—কীভাবে আমরা বাড়াব। তো যেমন এগুলো আছে, ঠিক একই সাথে এই যে আপনি পশুপাখির কথা বললেন, এ বিষয়গুলো আছে নেচার। নেচারকে যদি আমরা মিনিমাম ঠিক রাখতে না পারি, সেখানে মানুষ হিসেবে কিন্তু আমাদের বসবাস করা খুব কঠিন হয়ে যাবে। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এ বিষয়গুলো বোধহয় করা প্রয়োজন।
সামাজিক মাধ্যমে মিম, কার্টুন কীভাবে দেখেন
বিবিসি বাংলা: রাজনীতিতে যেমন আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা আছে, স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক মাধ্যমেও আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা আছে এবং আপনি যে পোস্টগুলো করেন, সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আপনাকে নিয়ে অনেক মিমও তৈরি হয়, অনেক কার্টুন হয়। যেমন—একটা মিমের কথা যদি আমি বলি, অনেকে শেয়ার করেছিল যে, আপনি আপনার সাথে আমরা জুমে কথা বলছি, আপনি জুমে বক্তব্য দেন। এটা নিয়ে একটা মিম তৈরি হয়েছে যে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, তো এ ধরনের মিমগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?
তারেক রহমান: আমি এনজয় করি বেশ, বেশ আমি এনজয় করি।
বিবিসি বাংলা: আপনি দেখেন এগুলো? আপনার চোখে পড়ে?
তারেক রহমান: হ্যাঁ, চোখে পড়বে না কেন, অবশ্যই চোখে পড়ে। তবে এখানে একটি কথা আছে, যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়টি এল, আমার মনে হয় এ বিষয়ে একটু এড করা উচিত।
দেখুন, সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি বিষয়, আমি নিজেও আছি সোশ্যাল মিডিয়ায় কমবেশি। বহু বহু মানুষ আছেন, লক্ষকোটি মানুষ আছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটি দিয়ে যেমন খুব দ্রুত একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ করা যায়।
আমরা মাঝে মাঝে বলি যে, দেখেন, অনেক সময় অনেক আলোচনায় আসে, সেমিনার-বক্তব্যে আসে যে, ডিনামাইটটা যখন আবিষ্কৃত হয়, ডিনামাইটটা আবিষ্কৃত হয়েছিল আপনার পাহাড় ভেঙে কীভাবে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট তৈরি করা যায়; হয়তো কীভাবে চাষের জমি করা যায়। এরকম লক্ষ্য সামনে রেখেই, উদ্দেশ্য সামনে রেখেই কমবেশি ডিনামাইটের ব্যবহারটা শুরু হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখেছি, এটি মানুষ হত্যার মতো জঘন্য কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই যে, অবশ্যই প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে। যেহেতু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি। প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে তার মতামত প্রকাশ করার।
তবে আমরা যদি সকলে এতটুকু সচেতন হই যে, আমি আমার মত প্রকাশ করলাম, কিন্তু এই মত প্রকাশের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না—এ বিষয়টিকে যদি আমরা বিবেচনায় রাখি, একটি মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হলো কি না, ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না—এসব বিষয় বোধহয় আমাদের বিবেচনায় রাখা উচিত; এটি এক নম্বর।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ার বহুল ব্যবহারের ফলে ডিসইনফরমেশন বা মিসইনফরমেশন বিষয়টিও চলে এসেছে সামনে। এ কথাও চলে এসেছে। একটি জিনিস আমি দেখলাম বা শুনলাম, সাথে সাথেই আমি সেটিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তা না করে আমার মনে হয়, ফ্যাক্ট চেক বলে যেই কথাটি আছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, এটা সব জায়গায় আছে—এ ব্যাপারেও যদি আমরা একটু অ্যালার্ট থাকি সবাই, এ ব্যাপারে যদি একটু সচেতন থাকি যে ঠিক আছে, এটি একটু যাচাইবাছাই করে নিই।
যদি সত্য হয়, অবশ্যই আমার সেখানে মতামত থাকবে। কিন্তু যদি মিথ্যা হয় বিষয়টি, কেন আমি এখানে মতামত দিব? একটি মিথ্যার সাথে আমি কেন নিজেকে সংশ্লিষ্ট করব? একটি খারাপ কিছুর সাথে কেন আমি নিজেকে সংশ্লিষ্ট করব? এটি আমি আমার মতামতটা প্রকাশ করলাম।
মানুষের আস্থার প্রশ্নে যা বললেন
বিবিসি বাংলা: আমরা প্রায় শেষ দিকে চলে এসেছি। আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই যে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন যেটা হয়েছে গত বছরের ৫ আগস্ট। তারপর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য বা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে—এই প্রশ্নে মানুষকে কীভাবে আস্থায় নেবেন?
তারেক রহমান: এই প্রশ্নের উত্তরে যদি একটু এভাবে বলি, স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দল হিসেবে তো আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে। আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু কিছু বলেছি।
ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম যে, দেখুন এই মুহূর্তে মাঠে আমরা যেই রাজনৈতিক দলগুলো আছি, আমরা ধরে নিতে পারি, সেই রাজনৈতিক দলগুলো ইনশআল্লাহ আগামীতে দেশ পরিচালনা করতে পারে। তার মধ্যে বিএনপিরই কিন্তু দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে।
আপনাকে যদি বলি, ধরেন এখন লন্ডন আসবেন। তো আপনি একটা প্লেনে উঠলেন। যে প্লেন চালাবে, সে যদি আপনাকে বলে যে ভাই কিছু মনে করেন না, আমার ঠিক লাইসেন্সটা হয়নি এখনো, তবে আমার মনে হয় আমি চেষ্টা করলে আপনাকে নিয়ে যেতে পারব লন্ডন পর্যন্ত উড়িয়ে। আপনি কি তার সাথে উঠবেন প্লেনে? নিশ্চয়ই আপনি উঠবেন না।
আপনি একজন অভিজ্ঞ ড্রাইভারের সাথে উঠতে পারেন। কিন্তু অভিজ্ঞ ড্রাইভারও গাড়ি হয়তো ঠিকই চালাচ্ছে সেফলি, কিন্তু রাস্তায় তো গর্ত খানাখন্দ থাকবেই, একটু জার্কিং হতেই পারে। জোরে অনেক সময় ব্রেক হতেই পারে, ঝাঁকুনি লাগতেই পারে, কিন্তু অভিজ্ঞ ড্রাইভার আপনাকে মোটামুটি ঠিকভাবে নিয়ে যাবে। নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ সে চেষ্টা করবে। কারণ তার সেই অভিজ্ঞতা আছে।
কাজেই আমরা যদি দেখি যে, ভালো কাজ বা কমিটমেন্ট আপনি যেটা বলেন, বিএনপি করবে কি না। আমরা তো করেছি। হতে পারে আমাদের দ্বারা কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে।
আপনি একটু আগে একটা কথা বলেছিলেন, মানুষ তো অতীত থেকেই শিখে। ইয়েস, আমরাও দেখেছি, আমরাও অতীত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি যে ঠিক আছে এই কাজটি এভাবে করলে হয়তো ভুল হয়, এটি আমরা ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ করব না। বাট আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা ভালো-মন্দ যাচাই করতে পারব।
একই সাথে আমাদের কমিটমেন্ট আছে, যে কমিটমেন্ট দিয়ে আমরা ডেলিভারি করতে পারব এবং আমরা ডেলিভারি করতে চাই।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান
বিবিসি বাংলা: শেষ প্রশ্নটি করি তাহলে আপনাকে এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই। বিগত সরকারের আমলে তাদের একটা বিষয় বড় সমালোচনা ছিল যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। আপনারা যদি ক্ষমতায় আসেন, সে ক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ বা সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়নের বিষয়গুলো যে আর হবে না, সেই নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
তারেক রহমান: জ্ব, ইয়েস পারি। একদম দিতে পারি। আপনি ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পত্রপত্রিকা খুলুন। আমি কারও নাম উল্লেখ করব না, কোনো পত্রিকার কথা উল্লেখ করব না। শুধু খুলে দেখুন কীভাবে অনেক খবর ছাপা হয়েছিল, যার সত্যতা কিন্তু ছিল না, অপপ্রচার ছিল। কিন্তু অপপ্রচারটা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আপনি কি শুনেছেন, আপনি কি আমাকে প্রমাণ দিতে পারবেন, বলতে পারবেন যে বিএনপির সময়, আমি কিন্তু বলতে পারব অনেক অনেক সাংবাদিকের নাম, যাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বৈরাচারের সময় এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইভেন, এখনো অনেকে প্রবাসজীবনে আছেন, এরকম বহু সাংবাদিক।
আমি বলতে পারব, স্বৈরাচারের সময় বহু সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ধমক দেওয়া হতো। বিএনপির সময় এগুলো করা হয়নি, কারণ তখন সংবাদপত্রে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন বিএনপি সরকার সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যদি ওই রকম হতো, তাহলে কিন্তু ওরকম খবর প্রকাশিত হতো না।
অর্থাৎ, বিএনপির সময় যদি অত্যাচার-নির্যাতন থাকত, তাহলে খবরগুলো প্রকাশিত হতো না স্বাভাবিকভাবে, যা হয়নি বিগত সরকারের সময় স্বৈরাচার সরকারের সময়। কাজেই আপনাকে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিএনপির অতীত সরকারের সময় যেরকম সাংবাদিকদের গুম করা হয়নি। সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হয়নি। সাংবাদিকদের দেশ ছেড়ে যেতে হয়নি, বাধ্য হতে হয়নি। ইনশআল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।
বিবিসি বাংলা: তাহলে কি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে—এ ধরনের যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো আপনারা বাতিল করবেন, এটা কি ধরে নেওয়া যায়?
তারেক রহমান: অবশ্যই, আমরা সকলে মিলে বসব, আলোচনা করব। আপনাদের মতো সাংবাদিকসহ যাঁরা আছেন, তাঁদের সাথে আলোচনা করব। আলোচনা করে সেগুলো এরকম কালো আইন যা যা আছে, আমরা আস্তে আস্তে ঠিক করব।
তবে এখানে বোধহয় একটি বিষয় আবার আমাকে উল্লেখ করতে হয়, যেটি আমি সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলেছি। দেখুন, এটি তো সবাইকে মিলে করতে হবে। অপপ্রচারকে তো অবশ্যই সংবাদ হিসেবে তো প্রচার করা ঠিক নয়, তাই না?
আমাদের কাছে আপনাদের যেরকম চাওয়া থাকবে, ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে, যারাই আসুক সরকারে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদেরও অনুরোধ থাকবে আপনাদের প্রতি যে অপপ্রচার সংবাদ হিসেবে যেন প্রচারিত না হয়—এ বিষয়টি একটু সকলকে সচেতন বা খেয়াল রাখতে হবে।
বিবিসি বাংলা: তারেক রহমান, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলার জন্য।
তারেক রহমান: আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমার কথাগুলো দেশের মানুষের সামনে আমি তুলে ধরতে পেরেছি। সেই সুযোগটুকু আপনারা করে দিয়েছেন, তার জন্য আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
বিবিসি বাংলা: এখন বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
তারেক রহমান: বিষয়টি তো রাজনৈতিক। এটি তো কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। আমরা প্রথম থেকে যে কথাটি বলছি, আমরা চাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। অর্থাৎ, অনেক কিছুর মতো বিভিন্ন বিষয় আছে। যেমন—আমরা যদি মূল দুটো বিষয় বলি যে, কিছু সংস্কারের বিষয় আছে, একই সাথে প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বাধীন নির্বাচনের একটি বিষয় আছে।
মূলত কিছু সংস্কারসহ যে সংস্কারগুলো না করলেই নয়, এরকম সংস্কারসহ একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু, স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা প্রত্যাশা করি, ওনারা উনাদের ওপরে যেটা মূল দায়িত্ব, সেটি ওনারা সঠিকভাবে সম্পাদন করবেন। এটাই তো তাঁদের কাছে আমাদের চাওয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে।
আমরা আশা রাখি, প্রত্যাশা করি যে, ওনারা কাজটি সুন্দরভাবে করবেন। স্বাভাবিকভাবে এই কাজের সৌন্দর্য বা কতটুকু ভালো, কতটুকু ভালো বা মন্দভাবে করতে পারছেন, তার ওপরেই মনে হয় সম্পর্কের উষ্ণতা বা শীতলতা যেটাই বলেন, সেটা নির্ভর করবে।
বিবিসি বাংলা: আপনি কয়েক মাস আগে একটি মন্তব্য করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আপনার এই মন্তব্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী? তিনি তখন বলেছিলেন, সন্দেহটা ওনার মনে। অর্থাৎ, আপনার মনে সন্দেহ আছে কি না, সেটা তিনি জানতে চান। আপনার মনে কি সেই সন্দেহ আছে?
তারেক রহমান: দেখুন, আমি যখন কথাটি বলেছিলাম, এই মুহূর্তে আমার যতটুকু মনে পড়ে, সেই সময় পর্যন্ত ওনারা কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক কোনো টাইম ফ্রেম বা কোনো কিছু বলেননি।
রোডম্যাপ বলতে যা বোঝায়, আমরা নরমালি যা বুঝে থাকি, এরকম কিছু বলেননি। এবং সে কারণেই শুধু আমার মনের মধ্যেই নয়, আমরা যদি সেই সময় বিভিন্ন মিডিয়া দেখি, বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দেখি, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে, প্রায় সবার মনের মধ্যেই সন্দেহ ছিল।
আমরা যখন দেখলাম যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ডক্টর ইউনূস, উনি মোটামুটিভাবে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন। এবং পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার উনি ওনার যে সিদ্ধান্ত, সেটির ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারপর থেকেই খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সন্দেহ বহু মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে চলে যেতে ধরেছে।
আমি মনে করি, ওনারা যা বলেছেন, ওনারা যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় থাকবেন, ওনাদের বক্তব্যে, ওনাদের কাজে যত বেশি দৃঢ় থাকবেন, ততই সন্দেহ চলে যাবে আস্তে আস্তে।
বিবিসি বাংলা: সেই সন্দেহ মনে কিছুটা দূরীভূত হয়েছিল লন্ডনে যখন তিনি আপনার সঙ্গে বৈঠক করলেন। তার পরেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা এসেছিল। তো সেই বৈঠকে নির্বাচনের কথা তো হয়েছিল, যেহেতু সেটি পরে এসেছে। এর বাইরে কি আপনাদের মধ্যে আর কোনো কথা হয়েছে? আর কোনো বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা বা সমঝোতা কিছু হয়েছে?
তারেক রহমান: এর বাইরে স্বাভাবিকভাবেই উনি একজন অত্যন্ত স্বনামধন্য মানুষ। অত্যন্ত বিজ্ঞ মানুষ উনি। এর বাইরে তো অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছে। এর বাইরেও উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, জনগণ যদি আপনাদের সুযোগ দেয়, তাহলে আপনারা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য—এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আমার কিছু চিন্তাভাবনা দেশের মানুষকে নিয়ে, দেশের জনগণকে নিয়ে, দেশকে নিয়ে আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ আমাদের যদি সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমরা কী কী বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করব, সে বিষয়গুলো নিয়ে কিছু কিছু আলোচনা হয়েছে।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের বিষয়টি তো আপনি বললেন, এর বাইরে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে গত এক বছরে যে ভূমিকা রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার, সেটাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
তারেক রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানে ইন্টেরিম, মানে এটা তো ক্ষণস্থায়ী বিষয়। তো খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশ পরিচালনা তো একটি বিশাল বিষয়। আমরা হয়তো ভূখণ্ডের ভিত্তিতে যদি বিবেচনা করি, হয়তো বাংলাদেশকে অনেকে বলবে ছোট দেশ। কিন্তু আমরা যদি জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিবেচনা করি, বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক ভূখণ্ডের চেয়ে বড় দেশ।
ইউকের (যুক্তরাজ্য) জনসংখ্যা ৭ কোটির মতো, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্লাস-মাইনাস ২০ কোটির মতো এখন। কাজেই ইউকের তিন গুণ বড়। এরকম একটি দেশ পরিচালনা করতে হলে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের ম্যান্ডেটসহ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন। বিভিন্ন বিষয় থাকে, ইস্যুজ থাকে, বিভিন্ন বিষয় আছে।
তো এখন নির্বাচনের বাইরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পারফরমেন্স আপনি যেটা বললেন, আমরা সবকিছু বিবেচনা করলে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, হয়তো ওনারা চেষ্টা করেছেন অনেক বিষয়ে। সব ক্ষেত্রে সবাই তো আর সফল হতে পারে না, স্বাভাবিকভাবে ওনাদের লিমিটেশনস কিছু আছে। সেই লিমিটেশনসের মধ্যে ওনারা হয়তো চেষ্টা করেছেন, যতটুকু পেরেছেন হয়তো চেষ্টা করছেন।
এক এগারোর সরকার নিয়ে মূল্যায়ন কী?
বিবিসি বাংলা: আমি একটু পিছনে তাকাতে চাই।
তারেক রহমান: ভাই, আমরা তো সামনে যেতে চাই। আপনি পেছনে কেন যাচ্ছেন? দেশকে সামনে নিতে হবে।
বিবিসি বাংলা: মানে, পেছন থেকেই তো শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হয়। তো পেছনের একটা বিষয়, সেটা হচ্ছে, এক-এগারোর সরকার বা সেনাসমর্থিত সরকারের সেই সময়টা নিয়ে রাজনীতিতে অনেক আলোচনা আছে। সে সময়টাকে ঘিরে আপনার মূল্যায়ন কী?
তারেক রহমান: এক বাক্যে বা সংক্ষেপে যদি বলতে হয়, এক-এগারোর সরকার তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সরকার ছিল।
আমরা দেখেছি, সেই সরকার আসলে কীভাবে দেশের যতটুকু যেমনই হোক বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যতটুকুই রাজনীতি গড়ে উঠেছিল, গণতান্ত্রিক ভিত্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল ভুল-ত্রুটি সবকিছুর ভিতর দিয়েই। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, কীভাবে তারা সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল। দেশকে একটি অন্ধকার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেখেছি যে, খুব সম্ভবত তাদেরই ভিন্ন আরেকটি রূপ; অন্যভাবে দেখেছি আমরা ’ইন দ্য নেম অব ডেমোক্রেসি’।
বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন হয়েছে কতটা
বিবিসি বাংলা: ২০০৪ সালে আমি আপনার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ঢাকায়। সে সময় আপনি বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন। তো বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কতটা পরিবর্তন হয়েছে; ভবিষ্যৎ বিএনপিই বা কেমন হবে?
তারেক রহমান: আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণ, দেশ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব। আমরা দুটো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে খুবই গর্ব করি, অহংকার করি। একটি হচ্ছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প, আরেকটি হচ্ছে প্রবাসীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান—এ দুটোই কিন্তু বিএনপি শুরু করেছিল।
আমরা দেখেছি, বিএনপির সময়ে শুরু হয়েছিল প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়া, একই সাথে গার্মেন্ট শিল্পের প্রসার। এর বাইরেও যদি আমরা দেখি, ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষটা হয়েছিল, পরবর্তীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষপীড়িত একটি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসপূর্ণ করে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ না, অল্প পরিমাণ করে হলেও আমরা কিন্তু সেই সময় বিদেশে খাদ্য রপ্তানি, চাল রপ্তানি করেছিলাম।
আর রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা দেখি, যেখানে একসময় সকল দলকে নিষিদ্ধ করে একটি দল বাকশাল করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি যে, বিএনপির কাঁধে যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে, তখন কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চালু আবার করা হয়েছিল।
কাজেই আপনি বললেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইয়েস, আমরা অতীতে এই ভালো কাজগুলো করেছি। ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়গুলো কনসিডারেশন (বিবেচনায়) রেখেই সামনে এগিয়ে যাব। আমাদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে ভবিষ্যৎ বিএনপির গণতন্ত্রের যে বুনিয়াদ, একটি শক্তিশালী বুনিয়াদ তৈরি করা। জবাবদিহি তৈরি করা।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অভিযোগ সব সময় থাকে। যখন যারা চেয়ারে বসে, জবাবদিহিতার প্রশ্নটা তখন থাকে না। মানে, এড়িয়ে যায়—এ ধরনের একটা অভিযোগ সব সময় ছিল। সব রাজনৈতিক দল বা যারাই সরকারে এসেছে।
তারেক রহমান: দেখুন, অভিযোগ থাকতেই পারে। আমি আগেই তো বলেছি, একটি বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম অভিযোগ থাকতে পারে। এখন অভিযোগ নিয়ে তো আর বলা যাবে না। কিন্তু অভিযোগটা কনসিডারেশনে (বিবেচনায়) অবশ্যই রাখব। আপনি যেহেতু আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমি আপনাকে এটাই বলেছি। আপনি জানতে চেয়েছেন ভবিষ্যৎ কেমন হবে।
আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে যা দেখেছি, বুঝেছি, জেনেছি, আমি আপনার সামনে সেটিই তুলে ধরলাম। অভিযোগ এ দেশেও আছে, কিন্তু আপনি যা জানতে চাইছেন, এটি তো আমি একমাত্র সুযোগ যদি পাই, আমি ইনশআল্লাহ সুযোগ পেলে পরে তখন আস্তে আস্তে জিনিসটি প্রমাণ করা সম্ভব হবে।
হ্যাঁ, এটাও বাস্তবতা। প্রাগমেটিক কথা যেটা, বাস্তব কথা যেটা, আমি সুযোগ পেলে যে সাথে সাথেই বিষয়টি হবে তা না। কারণ, আমি সুযোগ পেলে আপনাকেও বুঝতে হবে। আপনিও কিন্তু দেশ গঠনের একটা পার্ট। কাজেই আপনার মতো এরকম লক্ষকোটি মানুষকে বিষয়টি বুঝতে হবে। এতটুকু বলতে পারি যে, ইয়েস, উই আর কমিটেড। উই উইল ট্রাই আওয়ার বেস্ট টু ডু পারফরম বেস্ট ডু দ্যাট।
বিবিসি বাংলা: জবাবদিহির কথা বলছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলি, গত ১৫ বছর আপনি নির্বাসনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ায়, এটা একটা ভিন্ন পরিস্থিতি। নেতৃত্ব নিয়ে আপনার চিন্তাধারায় কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে? আপনি কী অনুভব করেন, অনুধাবন করেন?
তারেক রহমান: গত ১৭ বছর প্রবাসজীবনে আছি এবং অনেকগুলো বছর আমি বাংলাদেশের সাথে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা টাইম ডিফারেন্স, ডিস্টেন্স ডিফারেন্স তো আছেই। রিচিং ডিফারেন্স তো একটা ডিফিকাল্টিস তো আছেই। এটি একটি বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আমি আমার পরিবার অর্থাৎ, আমার স্ত্রী এবং আমার সন্তানকে এখানে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ তাদের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো এই ডিফিকাল্ট কাজটি করা আমার জন্য আরও ডিফিকাল্ট হতো। ওনাদের সহযোগিতা ছিল, সে জন্য আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।
একই সাথে আমি আবারও ধন্যবাদ দিতে চাই আমার হাজারো-লক্ষ নেতাকর্মীকে। যাঁরা এই ডিফিকাল্টিজের মধ্যে থেকেও আমাকে সহযোগিতা করেছেন দলকে সুসংগঠিত রাখতে, দলকে রাজপথে নিয়ে যেতে শত অত্যাচার, বাধাবিঘ্নের মাঝেও জনগণের কথা তুলে ধরতে, জনগণের দাবির ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে। আপনি জিজ্ঞেস করেছেন মনে হয় যে, এখানে (যুক্তরাজ্যে) থেকে কী কী দেখেছি, শিখেছি বা জেনেছি। আমি মনে করি, এই দেশ থেকে ভালো যা কিছু দেখেছি বা শিখেছি। দেশের নাগরিক হিসেবে এবং যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, হয়তো আমার একটি সুযোগ আছে দেশের জন্য ভালো কিছু করার।
যদি আমি ইনশাআল্লাহ সেই সুযোগ পাই, তাহলে যতটুকু সম্ভব দেশের মানুষের জন্য বা দেশের জন্য কিছু করার, এভাবে বিষয়টিকে আমি বিবেচনা করি।
কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?
বিবিসি বাংলা: কূটনীতির প্রসঙ্গে আসি। বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, তাহলে কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?
তারেক রহমান: গুড কোশ্চেন। বিএনপির মূলনীতি একটাই—সবার আগে বাংলাদেশ। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতি সবার আগে বাংলাদেশ। আমার জনগণ, আমার দেশ, আমার সার্বভৌমত্ব। এটিকে অক্ষুণ্ন রেখে, এর স্বার্থ বিবেচনা করে, এই স্বার্থকে অটুট রেখে বাকি সবকিছু।
বিবিসি বাংলা: এটাকে বৈশ্বিক রাজনীতির একটা প্রভাব বলা যায়? কারণ আপনি যদি বিভিন্ন দেশে দেখেন, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও আমেরিকা ফার্স্ট একটা স্লোগান দিয়ে এসেছিলেন।
তারেক রহমান: না, ওদেরটা ওরা বলেছে, আমি ভাই বাংলাদেশি। আমার কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বড়, আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বড়। কাজেই কে কী বলল...সবার আগে বাংলাদেশ, সিম্পল, কমপ্লিকেট (জটিল) করার কিছু নাই, এটা সিম্পল ব্যাপার।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান কী?
বিবিসি বাংলা: বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে যে সম্পর্ক ছিল, সেটা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। তো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আপনাদের নীতি কী হবে?
তারেক রহমান: আমার মনে হয়, আপনি একটু আগে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেখানে বোধহয় আমি ক্লিয়ার করেছি পুরো ব্যাপারটা। সবার আগে বাংলাদেশ। এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন।
এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। বিষয় তো হচ্ছে, ভাই, বাংলাদেশ আমার কাছে আমার স্বার্থ, আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখব, আমার দেশের স্বার্থ দেখব। ওটাকে আমি রেখে আপহোল্ড করে আমি যা যা করতে পারব, আমি তা-ই করব।
বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের স্বার্থ আপনারা সবার আগে নেবেন, সেটা আপনি পরিষ্কার করেছেন। ভারতের কথা বিশেষভাবে আসছে, যেহেতু সেটি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের তিন পাশেই এই দেশের সীমান্ত রয়েছে। এবং এটি নিয়ে আপনিও জানেন যে, বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তো সম্পর্ক নিয়ে বললামই, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বা কেমন থাকা প্রয়োজন—এ নিয়ে আপনার চিন্তা কী?
তারেক রহমান: অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাই না যে, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নিব না।
বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের স্বার্থের প্রসঙ্গে আপনি বলছেন যে, পানির হিস্যা চাওয়া এবং সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নিয়ে আপনারা সোচ্চার থাকবেন।
তারেক রহমান: না না, আমি উদাহরণ দিয়ে বললাম। দুটো উদাহরণ দিয়ে বোঝালাম আপনাকে যে আমাদের স্ট্যান্ডটা কী হবে। আমরা আমাদের পানির হিস্যা চাই। অর্থাৎ আমার দেশের হিস্যা, মানুষের হিস্যা আমি চাই, হিসাব আমি চাই।
আমার যেটা ন্যায্য, সেটা আমি চাই। অবশ্যই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমি বোঝাতে চেয়েছি যে, আমার মানুষের ওপরে আঘাত আসলে অবশ্যই সেই আঘাতকে এভাবে আমি মেনে নেব না।
বিবিসি বাংলা: একটা বিষয় যদি বলি, ৫ অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবং আপনিও জানেন যে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে গেছেন এবং সেখানে আছেন। ভারতের সাথে একটা সম্পর্কের শীতলতা দেখা গেছে গত এক বছর ধরে। যেমন ধরুন, সেটি যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে, ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম, সেই ক্ষেত্রে কি কোনো পরিবর্তন আপনারা সরকারে এলে হবে বা পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন—এমন কোনো চিন্তা কি আপনাদের আছে?
তারেক রহমান: এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সাথে শীতল থাকবে। সো, আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ও দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নে যা বললেন
বিবিসি বাংলা: সংস্কারের প্রশ্নে আসি। এখন খুব আলোচিত ইস্যু। সংস্কারের কিছু বিষয়ে দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের কিছুটা মতপার্থক্য বা মতবিরোধ হচ্ছে। যেমন—এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা বা দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, এরকম একটা প্রস্তাব এসেছে, যেখানে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। যদি এক ব্যক্তি তিন পদে একই সাথে থাকেন, সেটা স্বৈরতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা তৈরির সুযোগ দেয় কি না?
তারেক রহমান: সকলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এই যে বাংলাদেশে রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, থাকবেন না—এরকম আরও যে বিষয়গুলো আছে, এগুলো বাংলাদেশে যখন স্বৈরাচার ছিল তাদের মুখের ওপরে, তাদের চোখের দিকে চোখ রেখে আমরা বিএনপিই বলেছিলাম।
এখন হয়তো অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন। সেদিন কিন্তু সংস্কারের ’স’-ও তারা বলেননি। তার পরেও সকলের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি বলতে চাই যে, বিএনপি ’নোট অব ডিসেন্ট’ দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে অ্যাগ্রি (সম্মত) করতে হবে সবার সাথে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সাথে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না।
মানে, আমাকে অন্যের সাথে একমত হতে হবে, তাহলে গণতন্ত্র। আমি যদি অন্যের সাথে দ্বিমত করি, তাহলে গণতন্ত্র না। এটি কেমন গণতন্ত্র? কারণ গণতন্ত্রের মানেই তো হচ্ছে, বিভিন্ন মতামত থাকবে। আমরা অনেক ব্যাপারেই একমত হব হয়তো। সকল ব্যাপারে একমত হবো না, কিছু ব্যাপারে হয়তো দ্বিমত থাকতেই পারে। এটাই তো গণতন্ত্র, এটাই তো এসেন্স অব গণতন্ত্র।
আমরা তো কোনো হাইড অ্যান্ড সিক করছি না। আমি যেটা মনে করছি যে ভাই, আমি মনে করছি যেটা আমার দৃষ্টিতে ঠিক না, আমি বলছি ঠিক না।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু দুই বছর আগে ২০২৩ সালে আপনারা ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই ৩১ দফাতেই আপনারা সংস্কারের যেসব বিষয় এনেছেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেছেন। তাহলে এ বিষয়গুলোতে আপত্তি কেন?
তারেক রহমান: না, আমরা যেটাতে বলেছিলাম, আমরা সেখানে এখনো আছি। যতটুকু ভারসাম্য হওয়া উচিত, যে যে বিষয়ে যতটুকু বিবেচনা করা উচিত, আমরা সে বিষয়ের মধ্যে এখনো কমবেশি আছি। আমাদের অবস্থান থেকে তো আমরা অবস্থান পরিবর্তন করিনি।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু মূল যে বিষয়গুলো, যেমন যেটা বড় বিরোধ হিসেবে আসছে, বড় মতপার্থক্য হিসেবে আসছে যে, এক ব্যক্তির তিন পদে একসাথে থাকা, সেখানেই তো আপত্তিটা থাকছে বিএনপির।
তারেক রহমান: না, আমরা তো তখনো বলিনি যে এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবে না। এটা অন্যরা কেউ বলেছে যে, এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবে না। আমরা মনে করি না যে, এটাতে স্বৈরাচারী হওয়ার কোনো কারণ আছে।
আমরা তো দেখেছি, স্বৈরাচারের সময়ও এবং তার আগে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তাদের টু থার্ড মেজরিটি ছিল। টু থার্ড মেজরিটি ২০০৮ সালে তারা নিয়েছিল। তারা ওটাকে চেঞ্জ করে ফেলেছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখেনি।
২০০১ সালে তো বিএনপিরও টু থার্ড মেজরিটি ছিল, বিএনপি তো চেঞ্জ করেনি। যেহেতু জনগণ মনে করে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে; বিএনপি টু থার্ড মেজরিটি থাকার পরেও তো চেঞ্জ করেনি।
কাজেই এক ব্যক্তির হাতে থাকলেই যে স্বৈরাচর হবে তা নয়। এটি নির্ভর করে ব্যক্তি টু ব্যক্তি, শুধু আইন চেঞ্জ করলেই সবকিছু সঠিক হয়ে যাবে না।
৩১ দফা, নাকি জুলাই সনদ, অগ্রাধিকার কী হবে
বিবিসি বাংলা: এই সংস্কারের বিষয়গুলোতে যেখানে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটা জুলাই সনদ প্রণয়নের কথা। সেটাও বাস্তবায়নের উপায়গুলো নিয়ে বা বাস্তবায়নের পথ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটা বিতর্ক আছে। অনেক দল বলছে যে, নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দেওয়া বা বাস্তবায়ন করা। আর বিএনপি বলছে, নির্বাচিত সংসদ সেটা করবে। এই জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী, বিএনপির চিন্তাটা এখন কী?
তারেক রহমান: দেখুন, এখানে আবার আমাকে বলতে হচ্ছে, আমরা কিন্তু কোনো হাইড এন্ড সিক করছি না। যদি আমাদের সেরকম অসৎ উদ্দেশ্য থাকত মনের ভিতরে, বলতাম আরেকটা যে ঠিক আছে, ওকে, অসুবিধা নাই। তার পরে ইনশআল্লাহ আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমরা হয়তো করতাম না। তো আমরা যেটা মনে করছি, সেটাই বলছি।
এখন বিষয় হচ্ছে দেখুন, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ইম্পর্টেন্ট একটি বিষয়। দেখুন, আমরা যদি ইভেন রিসেন্ট যে ঘটনা, নেপালেও যদি দেখি, আপনি দেখেন, ওরা কিন্তু এত কিছুর মধ্যে যাচ্ছে না। ওরা বলছে যে, গুরুত্বপূর্ণ যা বিষয় আছে, সংস্কার বলেন বা বিভিন্ন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যা বিষয় আছে—নির্বাচিত প্রতিনিধি যাঁরা আসবেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি যাঁরা আসবেন, তাঁরা সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তার পরেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবকিছু বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আহ্বান করেছে। এখানে যতটুকু হয়েছে, আমরা বলেছি, এখন যতটুকু হয়েছে, যেগুলো শুধু আইন দিয়ে করলে হয়ে যায়, সেগুলো হয়ে যাক। যেগুলোর সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট লাগবে, সেগুলো আমরা মনে করি যে, নির্বাচিত সংসদ হওয়ার পরে সেখানে গ্রহণ করাটাই ভালো হবে।
কারণ, আপনি যদি নির্বাচিত সংসদের কথা বলেন, অথচ তাকে বাদ দিয়ে যদি আপনি আউট অব দ্য বক্স কিছু করেন এবং এটা যদি রেওয়াজ হয়ে যায়, তাহলে এটা আমরা মনে করি যে, এটা সাংবিধানিকভাবে হোক, আইনগতভাবে হোক বা যে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিবেচনা করেন না কেন, ভবিষ্যতের জন্য এটা একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সে জন্য আমরা মনে করি, যেটা দেশের জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতির একটি কারণ হবে। সে জন্যই আমরা এটার সাথে একমত না।
বিবিসি বাংলা: এখন বিএনপির যেহেতু ৩১ দফা আছে, যদিও যেসব বিষয় আলোচনায় এসেছে, অনেক বিষয়ে মিল আছে। তো বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা সরকার গঠন করে, তখন ৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ—কোনটা অগ্রাধিকার পাবে?
তারেক রহমান: আমরা যেগুলোতে একমত হয়েছি, প্রথমে আমরা সেগুলোর ওপরেই জোর দিব। সেটা আপনি যে নামেই বলেন না কেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সকলে মিলে একমত হয়েছি, আমরা প্রথমে সেগুলোতে ইনশাআল্লাহ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথমে সেগুলোতেই অবশ্যই জোর দিব।
আর, তারপরে আপনি যেটা ৩১ দফার কথা বললেন, অবশ্যই ৩১ দফা আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জনগণের প্রতি। আমরা তো আমাদের ৩১ দফার মধ্যে যেগুলোর এটার সাথে মিলে গিয়েছে, সেগুলো তো আমরা করবই। এর বাইরে যেগুলো থাকবে ৩১ দফায় আছে, সেগুলোও বাস্তবায়ন করব।
কারণ ওটা তো আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। এটাও যেমন পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট, ওটাও আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। এটা আমরা রাজনৈতিক দলগুলো মিলে একত্রিত হয়ে বলেছি। ওটাও আমরা অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েই কিন্তু ৩১ দফা দিয়েছি।
‘বিড়ালটি আমার মেয়ের’
বিবিসি বাংলা: রাজনীতি থেকে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। আপনাকে সম্প্রতি প্রাণী অধিকার রক্ষা নিয়ে বেশ সোচ্চার দেখা গেছে। এ-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে আপনি যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের বাইরে আপনার পোষা বিড়ালের সঙ্গে আপনার নিয়মিত ছবি দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তো এটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কীভাবে?
তারেক রহমান: প্রথমত এখানে একটু ক্লিয়ার করে নেই, বিড়ালটি আমার মেয়ের। ও এখন অবশ্য সবারই হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই ওকে আদর করি।
বিষয়টি হচ্ছে, এরকম শুধু বিড়াল নয়, আমি এবং আমার ভাই যখন ছোট ছিলাম, আমাদের একটি ছোট কুকুরও ছিল। ইভেন, তখন আমাদের বাসায় আম্মা হাঁস-মুরগি পালতেন, ছাগলও ছিল আমাদের বাসায়। উনি ছাগলও কয়েকটি পালতেন।
তো স্বাভাবিকভাবেই আপনি যেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলেন, পোষা কুকুর-বিড়ালই বলেন, বাই দ্য ওয়ে কবুতরও ছিল আমাদের বাসায়। শুধু কবুতর না, আমাদের বাসায় একটি বিরাট বড় খাঁচা ছিল। সেই খাঁচার মধ্যে কিন্তু পাখি ছিল, বিভিন্ন রকমের এবং আবার আরেকটি খাঁচা ছিল, যেটার মধ্যে একটা ময়না ছিল।
ময়নাটা আমরা বরিশাল থেকে এনেছিলাম। ও আবার বরিশালি ভাষায় কথাও বলত। টুকটুক করে মাঝে মাঝে কিছু কিছু কথাও বলত। কাজেই বিষয়টি হঠাৎ করেই না। এই পশুপাখির প্রতি যে বিষয়টি, এটির সাথে আমি কমবেশি ছোটবেলা থেকে জড়িত আছি। হয়তো এটি এখন প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্নভাবে। বাট, এটির সাথে আমি বা আমার পরিবার, আমরা অনেক আগে থেকেই আছি।
কুকুর-বিড়াল ছিল, গরু-ছাগল ছিল, হাঁস-মুরগি ছিল, পাখি ছিল, ময়না ছিল, কবুতর ছিল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা চিন্তা করি, আমাদের আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। আমাদের দায়িত্ব কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি যা কিছু আছে প্রকৃতির, তার প্রতি কিন্তু যত্ন নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটি একটি বিষয়।
আর আমরা যদি মানবিক দৃষ্টিকোণ অথবা আমরা যদি নেচার থেকেও বিষয়টি দেখি, দেখুন, ওরা না থাকলে কিন্তু আমাদের জন্য বেঁচে থাকা কষ্টকর। প্রকৃতি যদি না থাকে, প্রকৃতির ব্যালেন্স যদি না থাকে।
এই আলোচনা শুরু হওয়ার আগে কিন্তু আপনি আমরা তিনজন কিন্তু ওয়েদার নিয়ে কথা বলছিলাম, এই ইংল্যান্ডের বা ইউকের ওয়েদার নিয়ে আমরা আলাপ করছিলাম এবং আমি বলছিলাম যে, আমার এই ১৭ বছর অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ওয়েদার মনে হয় একটু একটু এখানেও চেঞ্জ হয়েছে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে পত্রপত্রিকায় দেখেছি পলিউশন ঢাকা শহরে। নরমালি আমরা জানি যে, একটি দেশের টোটাল অংশের মধ্যে এটলিস্ট ২৫ শতাংশ গ্রীন দরকার, বনায়ন দরকার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আমি যতটুকু জেনেছি, এটি ১২ পার্সেন্টের মতো। হুইচ ইস ভেরি ডেঞ্জারাস।
তো এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি—কীভাবে আমরা বাড়াব। তো যেমন এগুলো আছে, ঠিক একই সাথে এই যে আপনি পশুপাখির কথা বললেন, এ বিষয়গুলো আছে নেচার। নেচারকে যদি আমরা মিনিমাম ঠিক রাখতে না পারি, সেখানে মানুষ হিসেবে কিন্তু আমাদের বসবাস করা খুব কঠিন হয়ে যাবে। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এ বিষয়গুলো বোধহয় করা প্রয়োজন।
সামাজিক মাধ্যমে মিম, কার্টুন কীভাবে দেখেন
বিবিসি বাংলা: রাজনীতিতে যেমন আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা আছে, স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক মাধ্যমেও আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা আছে এবং আপনি যে পোস্টগুলো করেন, সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আপনাকে নিয়ে অনেক মিমও তৈরি হয়, অনেক কার্টুন হয়। যেমন—একটা মিমের কথা যদি আমি বলি, অনেকে শেয়ার করেছিল যে, আপনি আপনার সাথে আমরা জুমে কথা বলছি, আপনি জুমে বক্তব্য দেন। এটা নিয়ে একটা মিম তৈরি হয়েছে যে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, তো এ ধরনের মিমগুলো আপনি কীভাবে দেখেন?
তারেক রহমান: আমি এনজয় করি বেশ, বেশ আমি এনজয় করি।
বিবিসি বাংলা: আপনি দেখেন এগুলো? আপনার চোখে পড়ে?
তারেক রহমান: হ্যাঁ, চোখে পড়বে না কেন, অবশ্যই চোখে পড়ে। তবে এখানে একটি কথা আছে, যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়টি এল, আমার মনে হয় এ বিষয়ে একটু এড করা উচিত।
দেখুন, সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি বিষয়, আমি নিজেও আছি সোশ্যাল মিডিয়ায় কমবেশি। বহু বহু মানুষ আছেন, লক্ষকোটি মানুষ আছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটি দিয়ে যেমন খুব দ্রুত একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ করা যায়।
আমরা মাঝে মাঝে বলি যে, দেখেন, অনেক সময় অনেক আলোচনায় আসে, সেমিনার-বক্তব্যে আসে যে, ডিনামাইটটা যখন আবিষ্কৃত হয়, ডিনামাইটটা আবিষ্কৃত হয়েছিল আপনার পাহাড় ভেঙে কীভাবে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট তৈরি করা যায়; হয়তো কীভাবে চাষের জমি করা যায়। এরকম লক্ষ্য সামনে রেখেই, উদ্দেশ্য সামনে রেখেই কমবেশি ডিনামাইটের ব্যবহারটা শুরু হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখেছি, এটি মানুষ হত্যার মতো জঘন্য কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই যে, অবশ্যই প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে। যেহেতু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি। প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে তার মতামত প্রকাশ করার।
তবে আমরা যদি সকলে এতটুকু সচেতন হই যে, আমি আমার মত প্রকাশ করলাম, কিন্তু এই মত প্রকাশের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না—এ বিষয়টিকে যদি আমরা বিবেচনায় রাখি, একটি মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হলো কি না, ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না—এসব বিষয় বোধহয় আমাদের বিবেচনায় রাখা উচিত; এটি এক নম্বর।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ার বহুল ব্যবহারের ফলে ডিসইনফরমেশন বা মিসইনফরমেশন বিষয়টিও চলে এসেছে সামনে। এ কথাও চলে এসেছে। একটি জিনিস আমি দেখলাম বা শুনলাম, সাথে সাথেই আমি সেটিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তা না করে আমার মনে হয়, ফ্যাক্ট চেক বলে যেই কথাটি আছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, এটা সব জায়গায় আছে—এ ব্যাপারেও যদি আমরা একটু অ্যালার্ট থাকি সবাই, এ ব্যাপারে যদি একটু সচেতন থাকি যে ঠিক আছে, এটি একটু যাচাইবাছাই করে নিই।
যদি সত্য হয়, অবশ্যই আমার সেখানে মতামত থাকবে। কিন্তু যদি মিথ্যা হয় বিষয়টি, কেন আমি এখানে মতামত দিব? একটি মিথ্যার সাথে আমি কেন নিজেকে সংশ্লিষ্ট করব? একটি খারাপ কিছুর সাথে কেন আমি নিজেকে সংশ্লিষ্ট করব? এটি আমি আমার মতামতটা প্রকাশ করলাম।
মানুষের আস্থার প্রশ্নে যা বললেন
বিবিসি বাংলা: আমরা প্রায় শেষ দিকে চলে এসেছি। আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই যে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন যেটা হয়েছে গত বছরের ৫ আগস্ট। তারপর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য বা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে—এই প্রশ্নে মানুষকে কীভাবে আস্থায় নেবেন?
তারেক রহমান: এই প্রশ্নের উত্তরে যদি একটু এভাবে বলি, স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দল হিসেবে তো আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে। আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আমি কিছু কিছু বলেছি।
ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম যে, দেখুন এই মুহূর্তে মাঠে আমরা যেই রাজনৈতিক দলগুলো আছি, আমরা ধরে নিতে পারি, সেই রাজনৈতিক দলগুলো ইনশআল্লাহ আগামীতে দেশ পরিচালনা করতে পারে। তার মধ্যে বিএনপিরই কিন্তু দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে।
আপনাকে যদি বলি, ধরেন এখন লন্ডন আসবেন। তো আপনি একটা প্লেনে উঠলেন। যে প্লেন চালাবে, সে যদি আপনাকে বলে যে ভাই কিছু মনে করেন না, আমার ঠিক লাইসেন্সটা হয়নি এখনো, তবে আমার মনে হয় আমি চেষ্টা করলে আপনাকে নিয়ে যেতে পারব লন্ডন পর্যন্ত উড়িয়ে। আপনি কি তার সাথে উঠবেন প্লেনে? নিশ্চয়ই আপনি উঠবেন না।
আপনি একজন অভিজ্ঞ ড্রাইভারের সাথে উঠতে পারেন। কিন্তু অভিজ্ঞ ড্রাইভারও গাড়ি হয়তো ঠিকই চালাচ্ছে সেফলি, কিন্তু রাস্তায় তো গর্ত খানাখন্দ থাকবেই, একটু জার্কিং হতেই পারে। জোরে অনেক সময় ব্রেক হতেই পারে, ঝাঁকুনি লাগতেই পারে, কিন্তু অভিজ্ঞ ড্রাইভার আপনাকে মোটামুটি ঠিকভাবে নিয়ে যাবে। নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ সে চেষ্টা করবে। কারণ তার সেই অভিজ্ঞতা আছে।
কাজেই আমরা যদি দেখি যে, ভালো কাজ বা কমিটমেন্ট আপনি যেটা বলেন, বিএনপি করবে কি না। আমরা তো করেছি। হতে পারে আমাদের দ্বারা কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে।
আপনি একটু আগে একটা কথা বলেছিলেন, মানুষ তো অতীত থেকেই শিখে। ইয়েস, আমরাও দেখেছি, আমরাও অতীত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি যে ঠিক আছে এই কাজটি এভাবে করলে হয়তো ভুল হয়, এটি আমরা ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ করব না। বাট আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা ভালো-মন্দ যাচাই করতে পারব।
একই সাথে আমাদের কমিটমেন্ট আছে, যে কমিটমেন্ট দিয়ে আমরা ডেলিভারি করতে পারব এবং আমরা ডেলিভারি করতে চাই।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান
বিবিসি বাংলা: শেষ প্রশ্নটি করি তাহলে আপনাকে এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই। বিগত সরকারের আমলে তাদের একটা বিষয় বড় সমালোচনা ছিল যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। আপনারা যদি ক্ষমতায় আসেন, সে ক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ বা সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়নের বিষয়গুলো যে আর হবে না, সেই নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
তারেক রহমান: জ্ব, ইয়েস পারি। একদম দিতে পারি। আপনি ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পত্রপত্রিকা খুলুন। আমি কারও নাম উল্লেখ করব না, কোনো পত্রিকার কথা উল্লেখ করব না। শুধু খুলে দেখুন কীভাবে অনেক খবর ছাপা হয়েছিল, যার সত্যতা কিন্তু ছিল না, অপপ্রচার ছিল। কিন্তু অপপ্রচারটা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আপনি কি শুনেছেন, আপনি কি আমাকে প্রমাণ দিতে পারবেন, বলতে পারবেন যে বিএনপির সময়, আমি কিন্তু বলতে পারব অনেক অনেক সাংবাদিকের নাম, যাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বৈরাচারের সময় এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইভেন, এখনো অনেকে প্রবাসজীবনে আছেন, এরকম বহু সাংবাদিক।
আমি বলতে পারব, স্বৈরাচারের সময় বহু সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ধমক দেওয়া হতো। বিএনপির সময় এগুলো করা হয়নি, কারণ তখন সংবাদপত্রে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন বিএনপি সরকার সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যদি ওই রকম হতো, তাহলে কিন্তু ওরকম খবর প্রকাশিত হতো না।
অর্থাৎ, বিএনপির সময় যদি অত্যাচার-নির্যাতন থাকত, তাহলে খবরগুলো প্রকাশিত হতো না স্বাভাবিকভাবে, যা হয়নি বিগত সরকারের সময় স্বৈরাচার সরকারের সময়। কাজেই আপনাকে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিএনপির অতীত সরকারের সময় যেরকম সাংবাদিকদের গুম করা হয়নি। সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হয়নি। সাংবাদিকদের দেশ ছেড়ে যেতে হয়নি, বাধ্য হতে হয়নি। ইনশআল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।
বিবিসি বাংলা: তাহলে কি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে—এ ধরনের যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো আপনারা বাতিল করবেন, এটা কি ধরে নেওয়া যায়?
তারেক রহমান: অবশ্যই, আমরা সকলে মিলে বসব, আলোচনা করব। আপনাদের মতো সাংবাদিকসহ যাঁরা আছেন, তাঁদের সাথে আলোচনা করব। আলোচনা করে সেগুলো এরকম কালো আইন যা যা আছে, আমরা আস্তে আস্তে ঠিক করব।
তবে এখানে বোধহয় একটি বিষয় আবার আমাকে উল্লেখ করতে হয়, যেটি আমি সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলেছি। দেখুন, এটি তো সবাইকে মিলে করতে হবে। অপপ্রচারকে তো অবশ্যই সংবাদ হিসেবে তো প্রচার করা ঠিক নয়, তাই না?
আমাদের কাছে আপনাদের যেরকম চাওয়া থাকবে, ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে, যারাই আসুক সরকারে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদেরও অনুরোধ থাকবে আপনাদের প্রতি যে অপপ্রচার সংবাদ হিসেবে যেন প্রচারিত না হয়—এ বিষয়টি একটু সকলকে সচেতন বা খেয়াল রাখতে হবে।
বিবিসি বাংলা: তারেক রহমান, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলার জন্য।
তারেক রহমান: আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমার কথাগুলো দেশের মানুষের সামনে আমি তুলে ধরতে পেরেছি। সেই সুযোগটুকু আপনারা করে দিয়েছেন, তার জন্য আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি।
১৭ অক্টোবর ২০২১ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে এই কার্যক্রমে যুক্ত। আমরা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মুদারাবা স্কুল স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি, যেখানে অভিভাবকেরা সন্তানদের পক্ষ থেকে হিসাব পরিচালনা করেন। মূল লক্ষ্য হলো শিশু-কিশোরদের সুদমুক্ত অর্থনীতিতে যুক্ত করা এবং ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল...
৯ ঘণ্টা আগেইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) নিয়মিতভাবে স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিশেষ অফারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছে এবং তাদের হিসাব খোলায় উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং জ্ঞান ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি।
৯ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার...
১৬ দিন আগেদীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেছেন তারেক রহমান।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিবিসি বাংলা: তারেক রহমান আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাথে যোগ দেবার জন্য।
তারেক রহমান: আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ, আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বিবিসি বাংলা: আপনি কেমন আছেন? আপনার সময় কেমন যাচ্ছে?
তারেক রহমান: আলহামদুলিল্লাহ, আমি শারীরিকভাবে ভালো আছি। সময় তো স্বাভাবিকভাবে ব্যস্তই যাচ্ছে। ফিজিক্যালি হয়তো আমি এই দেশে আছি, বাট মন-মানসিকতা সবকিছু মিলিয়ে তো আমি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছি।
বিবিসি বাংলা: আমরা এমন একটা সময় আপনার সাথে কথা বলছি, যখন বাংলাদেশ ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল বলা হবে না। ২০২৪ সালে একটি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান হয়েছে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আপনি আপনার অনেক দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, কথা বলেছেন, নিয়মিতই কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের সাথে আপনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি। এত দিন ধরে আপনি কথা বলেননি কেন?
তারেক রহমান: ব্যাপারটা বোধ হয় এ রকম না, ব্যাপারটা বোধয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাস জীবনে, তবে আমার ওপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে; তারপর থেকে আমি গ্রামেগঞ্জে আমার নেতা-কর্মীসহ তাদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, আমি সকলের সাথে কথা বলেছি।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতিমতন একটা আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারত না।
আমি একবার প্রেসক্লাবে কথা বলেছিলাম। তখন পরের দিন দেখলাম যে প্রেসক্লাবে একটি তখনকার যেই প্রেসক্লাবের যারা সদস্য ছিলেন বা কমিটি ছিল, তারা একটি মিটিং ডেকে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা তখন আমাকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি বলা হয়েছিল যে, সে রকম কোনো ব্যক্তিকে তারা প্রেসক্লাবে কথা বলতে দিবে না। এভাবে তারা চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে।
আমি কথা বলেছি, সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পন্থায় আমি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, আমি ইনশা আল্লাহ পৌঁছেছি মানুষের কাছে। কাজেই গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি তা না। আমি কথা বলেছি হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছি আমি থেমে থাকিনি।
দেশে ফেরার প্রশ্নে যা বললেন?
বিবিসি বাংলা: আমি অবশ্য সাক্ষাৎকারের কথা বলছিলাম যে প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি মানে বিশেষ করে গত এক বছরে। বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেছে এবং অনেকের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপনি দেশে এসে সশরীরে দলের নেতৃত্ব দেবেন। গত এক বছরে যে প্রশ্নটা বারবার ঘুরেফিরে এসেছে এবং এখনো আসছে যে আপনি এখনো দেশে ফেরেননি কেন। কেন আপনি এখনো দেশে ফেরেননি?
তারেক রহমান: কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে ওঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশা আল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসব।
বিবিসি বাংলা: সেটা কবে, আমরা কি জানতে পারি?
তারেক রহমান: দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশা আল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের আগে কি তাহলে আপনি দেশে আসবেন, এমন সম্ভাবনা বলা যায়?
তারেক রহমান: রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকব ইনশা আল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: একটা বিষয়, যেটা আপনার দল থেকে, মাঝে দলের নেতাদের কেউ কেউ কখনো কখনো বলেছেন যে একটা নিরাপত্তার শঙ্কার কথা বলেছেন। আপনি না আসার পেছনে, আপনি কি কোনো ধরনের শঙ্কা বোধ করেছেন এর মধ্যে?
তারেক রহমান: বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তো শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।
’কোনো ব্যক্তি নয়, মাস্টারমাইন্ড গণতন্ত্রকামী জনগণ’
বিবিসি বাংলা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে আসি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এটি মোটামুটি সব পক্ষই স্বীকার করেও যে সেই সময়ে আপনার একটা সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আবার আপনার দলের কোনো কোনো নেতা বা সমর্থক তারা এই অভ্যুত্থানে আপনাকে ’একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?
তারেক রহমান: না। আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে ৫ই অগাস্ট যেই আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত, এই আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটি প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে।
এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে।
আমি মনে করি, জুলাই-আগস্ট মাসে এসে জনগণ সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাথে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই সেদিন ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়।
আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা তাঁরা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিণীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি, কৃষক, শ্রমিক, সিএনজিচালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকানমালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টস কর্মী—তাঁরা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে।
এমন অনেক সাংবাদিক, যাঁরা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁরা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারও ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই, না খাটো করে দেখতে চাই না।
আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ়ভাবে সমাজের দলমত-নির্বিশেষে শ্রেণিবিন্যাস নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে।
এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাঁরাই এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল, কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
বিবিসি বাংলা: যখন আন্দোলনটা চলছিল, তখন আন্দোলনে যে ছাত্রনেতৃত্ব ছিল, তাদের সাথে আপনার কতটা যোগাযোগ ছিল? আপনার দলের সাথে তো নিশ্চয়ই যোগাযোগ ছিল, অন্যদের সাথে আপনাদের আপনার কতটা যোগাযোগ ছিল?
তারেক রহমান: স্বাভাবিকভাবে আমি যেহেতু বাইরে থেকে কাজ করছি, আমাকে যোগাযোগটা অনলাইনের মাধ্যমে রাখতে হয়েছে এবং সেই দিনগুলোতে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে টেলিফোন সিস্টেম বা অনলাইন সিস্টেমের কী অবস্থা করেছিল স্বৈরাচার।
আপনি যোগাযোগের যেটি কথা বলেছেন, এই যোগাযোগটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভিন্নভাবে আমাদেরকে করতে হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে করতে হয়েছে। যোগাযোগটা যে খুব স্মুথ সব সময় থেকেছে, তা নয়। প্রত্যেকে সহযোগিতা করেছি আমরা।
বিবিসি বাংলা: ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান, সেটির পরে এটার কৃতিত্ব কার সেটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে, তাতে কি আপনার মনে হয় যে এর ফলে বিভিন্ন পক্ষের যে সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের চেষ্টা, সেটাই একটু বেশি প্রকট হয়েছে এবং এখানে বিএনপির আসলে কোনো দায় আছে কি না?
তারেক রহমান: দেখুন ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ সাধারণত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। বাট আমরা দেখেছি এই আন্দোলনে স্বৈরাচারের এই আন্দোলনে যতটুকু আমার মনে আছে, প্রায় ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে, মারা গিয়েছে।
আমি আগেই বলেছি, আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি যে এই আন্দোলনের ক্রেডিট দলমত-নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নয়।
অনেকে হয়তো অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন, ডিমান্ড করতে পারেন, সেটি তাঁদের অবস্থান।
আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে, আন্দোলন হয়ে গিয়েছে, আন্দোলনের জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। ২০০০-এর মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজারের মতন মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অন্ধ হয়ে গিয়েছেন।
আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে, এখন আমাদের সকলের উচিত হবে রাষ্ট্রসহ সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব, সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। যতটুকু সহযোগিতা তাদেরকে করা যায়, যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো।
নির্বাচন এককভাবে নাকি দলগতভাবে
বিবিসি বাংলা: অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই দেখা গেছে যে বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচন দাবি করা হয়েছে। সরকার গড়িমসি করছে এ ধরনের অভিযোগও বিএনপির নেতারা করে আসছেন। তো এখন দেখা যাচ্ছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং নির্বাচন কমিশন তারা ফেব্রুয়ারিতে একটা নির্বাচনের সময় দিয়েছেন। তো ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে—আপনাদের আস্থা কতটা আছে তাতে?
তারেক রহমান: বিএনপি প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে যত দ্রুত নির্বাচনটি হবে, তত দ্রুত দেশের মধ্যে একটি স্থিতিশীলতা আসবে। দেখুন বাংলাদেশের মানুষ গত ১৭ বছর যাবৎ তাদের রাজনৈতিক অধিকার যেমন তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল।
যার ফলশ্রুতিতে আমরা সমাজে অনেকগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে স্পিলওভার ইফেক্ট বলতে যা বোঝায় অনেকগুলো খারাপ লক্ষণ দেখেছি। বেকার সমস্যা বেড়েছে, দরিদ্রতা বেড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসাব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়েছে।
আমরা সে জন্যই বলেছিলাম যে যত দ্রুত নির্বাচন হবে, যত দ্রুত দেশের মালিক যারা অর্থাৎ জনগণ তাদের কাছে যখন সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তারা যখন সিদ্ধান্ত নেবে, অর্থাৎ দেশের মালিক যখন সিদ্ধান্ত নিবে দেশ কারা কীভাবে পরিচালিত করবে, তত দ্রুত দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
কারণ, প্রকৃতভাবে নির্বাচিত একটি সরকার অবশ্যই জনগণের যে চাওয়া অর্থাৎ, জনগণ যেভাবে চায় সেই বিষয়গুলোকে তারা অ্যাড্রেস করবে। ইয়েস, একটি নির্বাচন হলেই যে সব রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে তা না। সমস্যাগুলোকে যখন আপনি অ্যাড্রেস করবেন খুব স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সমস্যা কমতে শুরু করবে।
আমরা আনন্দিত যে দেরিতে হলেও সরকার জিনিসটি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আমরা ডিসেম্বরের ভিতরে চেয়েছিলাম। উনারা ফেব্রুয়ারির ভিতরে এখন নির্বাচনটি করতে চাইছেন। আমরা আস্থা রাখতে চাই যে সরকার সে ব্যাপারে সব রকম উদ্যোগ পর্যায়ক্রমিকভাবে গ্রহণ করবেন।
বিবিসি বাংলা: এখন যেহেতু আপনারা বলছেন যে আপনারা আস্থা রাখতে চান, সেখানে নির্বাচন নিয়ে আপনার পরিকল্পনাটা কি? এককভাবে বিএনপি নির্বাচন করবে মানে দলগতভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে নির্বাচন করবে?
তারেক রহমান: খুব ট্রিকি কোশ্চেন একটু। দেখুন আমরা প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম কমবেশি একসাথে কাজ করার জন্য। এমনকি আমরা যে ৩১ দফা দিয়েছি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের, এটি প্রথমে ২০১৬ সালে আমরা দিয়েছিলাম শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ভিশন টুয়েন্টি ছিল। যেটা পরবর্তীতে কিছুটা আরেকটু ডেভেলপ করে আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম।
পরবর্তীতে আমরা আমাদের সাথে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের সাথে পরামর্শ করে সকলের মতামত নিয়ে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কারণটি হচ্ছে যে দলগুলোকে আমরা পেয়েছি, আমাদের সাথে রাজপথের আন্দোলনে, আমরা চাই সকলকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সকলের মতামতকে সাথে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই।
বিবিসি বাংলা: সেখানে তাহলে মানে যারা আন্দোলন করেছে তারাই নাকি? মানে মিত্র কারা হবে আসলে কারা সাথে থাকবে আপনাদের নির্বাচনকে সামনে রেখে?
তারেক রহমান: ওই যে বললাম, কমবেশি সকলকে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।
বিএনপির মনোনয়নে এবার ভিন্ন কী হবে
বিবিসি বাংলা: কিন্তু দেখা গেছে, জামায়াতে ইসলামী তারা কিছু দলকে নিয়ে বিএনপিবিরোধী একটি জোট করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেটিকে আপনারা কি উদ্বেগ হিসেবে দেখেন? মানে আপনারা কীভাবে দেখেন সেটা?
তারেক রহমান: দেখুন, কোনো দল বা সমষ্টিগতভাবে কোনো দল যদি বাংলাদেশের যে আইন আছে, বৈধ আইন আছে। বাংলাদেশের যে সংবিধান এখনো যেটি আছে, এই সবকিছুর ভেতরে থেকে অর্থাৎ মানুষের সমর্থন-গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, তারা করতেই পারে। এটাতে তো কোনো সমস্যা বা উদ্বেগের কোনো কারণ আমি দেখি না।
বিবিসি বাংলা: সেখানে যদি তারা একটি আলাদা জোট করে, সেটি কি আপনাদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে?
তারেক রহমান: না, কেন? ইলেকশন হলে তো ইলেকশনে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এতে উদ্বেগের কী আছে? বিএনপি তো আগেও নির্বাচন করেছে। বিভিন্ন সময় বিএনপি নির্বাচন করেছে। কম্পিটিশন করেই বিএনপি নির্বাচন করেছে। প্রতিযোগিতা করেছে। উদ্বেগের কিছু নেই।
বিবিসি বাংলা: মনোনয়নের প্রশ্নে যদি আসি, সেখানে আপনাদের কৌশলটা কী হবে? এর আগে বিভিন্ন সময় নির্বাচনগুলোতে পেশিশক্তির প্রভাব, টাকার প্রভাব, পারিবারিক বিষয় বিবেচনা এই বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ আছে। এবার ভিন্ন কি হবে আসলে?
তারেক রহমান: আপনি যেই বিষয়গুলো বললেন, আমরা কখনোই এইসব বিবেচনায় নিয়ে কখনোই আমার দল নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
আমাদের নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সব সময় কমবেশি, যা ছিল বা ভবিষ্যতে আমরা যেটিকে মূল্যায়ন করব—সেটি হচ্ছে অবশ্যই কোনো একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইব, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সাথে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, উঠাবসা আছে, যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম।
যে ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, তরুণ, নারী, মুরব্বিসহ ছাত্রছাত্রী সবার সাথে যার একটা কমিউনিকেশন আছে। এই ধরনের মানুষকেই আমরা প্রায়োরিটি দিব, খুবই স্বাভাবিক। অর্থাৎ যার প্রতি জনসমর্থন আছে। যে জনসমর্থনকে তার সাথে রাখতে পারে। জনগণের যার প্রতি সমর্থন আছে সে রকম মানুষকে দেখেই আমরা নমিনেশন দেব।
বিবিসি বাংলা: সেখানে তৃণমূলের মতামত কতটা প্রাধান্য পাবে? অভিযোগ আছে যে তৃণমূলের মতামত প্রাধান্য কম পায়?
তারেক রহমান: না, ব্যাপারটা এ রকম না। দেখুন গণতন্ত্রে স্বাভাবিক যেখানেই গণতন্ত্র আছে, সেখানে মতামত থাকতেই পারে। বিভিন্ন রকম মতামত অভিযোগ। হয়তো এক জায়গায় ৫০ জন আছে। ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জন একটি কথা বলছে, ১৫ জন একটি কথা বলছে। বাকিরা আরেকটি কথা বলছে। তাহলে আপনি কি বলবেন যে মতামত নে্য়ও হচ্ছে না? না।
স্বাভাবিকভাবেই যেখানে আমরা মেজরিটির যেটা মতামত পাবো, এলাকার মানুষের কম বেশি। আমরা তো আমাদের মতন করে খোঁজ করছি। সেটি তৃণমূলই হোক বা সেটি সাধারণ মানুষের হোক।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য—আমরা কিন্তু দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না। আমরা নির্বাচন করছি এমন একজন ব্যক্তিকে, যেই শুধু দলেরই সমর্থন নয় বরং দলমত-নির্বিশেষে ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন যার প্রতি আছে।
আমরা এ রকম একজন মানুষকে বের করে আনতে চাইছি। এ রকম একজন মানুষকে আমাদের দলের মনোনয়ন দিতে চাইছি। শুধু দল দিয়ে তো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনে তো সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। বিভিন্ন মানুষের অংশগ্রহণ থাকে।
কাজেই যার সমর্থন আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব, চেষ্টা করছি যার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন আছে। শুধুমাত্র দলীয় সমর্থন নয়, এরকম মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী কি না?
বিবিসি বাংলা: নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনার কাছে জানতে চাই যে আগামী নির্বাচনে আপনার ভূমিকা কী হবে, আপনি কি সরাসরি নির্বাচন করছেন? আপনাকে কি আমরা প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে দেখতে পাব নির্বাচনে?
তারেক রহমান: আমার মনে হয়, আপনি প্রথম দিকে বোধহয় একটা প্রশ্ন করেছেন, আমি ওখানে বলেছিলাম স্বাভাবিক আমি একজন রাজনৈতিক দলের সদস্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি। নির্বাচনের সাথে তো রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক।
কাজেই নির্বাচন যেখানে একটি মানে জনগণের সম্পৃক্ত, এ রকম একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই আমি নিজেকে দূরে থাকতে পারব না। আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই ইনশা আল্লাহ থাকব আমি। আপনি আপনার প্রশ্নের পরের যে অংশটি ছিল, দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তো আপনাকে নিতে হবে।
তারেক রহমান: না না সেটি তো নিব, কেন নিব না? অবশ্যই নিব।
বিবিসি বাংলা: আপনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাহলে?
তারেক রহমান: জ্বি, ইনশা আল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে আমরা তারেক রহমানকে দেখতে পাব সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি?
তারেক রহমান: এটির সিদ্ধান্ত তো বাংলাদেশের জনগণের।
বিবিসি বাংলা: বিএনপির পক্ষ থেকে?
তারেক রহমান: সে ক্ষেত্রে তো এটি দল সিদ্ধান্ত নেবে। দল কিভাবে করবে এটি তো দলের সিদ্ধান্ত।
নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কি হবে?
বিবিসি বাংলা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আপনাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তিনি কি এ নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় থাকবেন? তাকে কি আমরা নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় দেখতে পাবো?
তারেক রহমান: আপনি এমন একজন মানুষের কথা বলেছেন, যেই মানুষটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, যতবার গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে, প্রতিবার উনি অবদান রেখেছেন। সেই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুনরুদ্ধার করার জন্য।
এবারও আপনাদের সকলের চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তার উপরে অত্যাচারের খড়গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু উনি আপোষ করেননি। এরকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন কীভাবে উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো।
আমরা দেখেছিলাম একজন সুস্থ মানুষ গিয়েছেন। কিন্তু যখন বেরিয়ে এসেছেন একজন অসুস্থ মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এ সবগুলোই ঘটনা দেশবাসী জানেন। তারপরেও যে মানুষটির এত বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার।
আমি সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যেই প্রত্যাশিত, জনপ্রত্যাশিত যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, উনার শারীরিক সক্ষমতা যদি এলাও করে উনাকে নিশ্চয়ই উনি কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।
বিবিসি বাংলা: সেটা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে পারে?
তারেক রহমান: এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। আমি মাত্রই বললাম যে উনার শারীরিক বা ফিজিক্যাল এবিলিটির উপরে বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে।
বিবিসি বাংলা: এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন চলে আসে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে। আপনার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তিনি চার দশক বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন আপনি কার্যত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন আপনি। বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতটা থাকবে?
তারেক রহমান: দেখুন বিষয়টিকে আমি একটু তাহলে অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সব রকম সকলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাইছি। দেখুন, একজন চিকিৎসকের সন্তান যখন চিকিৎসক হয় তখন সে ভালোও করে সে খারাপও করে। একজন লয়ারের সন্তানও দেখা যায় যে অনেক সময় বাবা-মায়ের মতন ভালো লয়ার (আইনজীবি) হয় অথবা হয় না।
রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অনেকের সন্তান পলিটিক্সে এসেছে। সবাই কি ভালো করেছে? সবাই ভালো করেনি। কেউ কেউ করেছে কেউ কেউ করতে পারেনি ভালো।
আপনি যদি আমাকে ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে এভাবে আমি বলব যে, দেখুন আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মতন দেশে রাজনীতি যারা করেন বিগত ১৭ বছরে দেখেছি। তার আগেও আমরা দেখেছি রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হন। মিথ্যে মামলার শিকার হন। আমাদের বহু নেতা-কর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জেল জুলুম খেটেছে। ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যেই কয়টা উদাহরণ দিলাম আমি মাত্র।
আপনি কি বলতে পারবেন, এর কোনোটার মধ্যে দিয়ে আমি যাইনি? এর প্রতিটার ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। প্রত্যেকটা স্তর পার করে এসেছি আমি। আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যেই নির্যাতনের চিহ্ন এখনো কখনো কখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি আমি। সবকিছুর ভিতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি।
কাজেই এইজন্য এই কথাগুলো আমি বললাম যে রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে সে এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি এগিয়ে যেতে না পারে, তাহলে সে এগিয়ে যেতে পারবে না। সময় পরিস্থিতি সবকিছু প্রমাণ করে দিবে।
বিবিসি বাংলা: আপনার স্ত্রী বা কন্যা বা আপনার পরিবারে যারা আছেন তারা রাজনীতিতে আসবেন কিনা এটা নিয়ে কিন্তু ব্যাপক আলোচনা আছে। আলোচনা হয় কিন্তু রাজনীতিতে। তো এ ধরনের কি কোনো সম্ভাবনা আছে বা তারা আগ্রহী কি না রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে?
তারেক রহমান: আমি ওই যে বললাম সময় পরিস্থিতি বলে দিবে ওটা।
বিএনপির অগ্রাধিকার
বিবিসি বাংলা: একটু আবার নির্বাচনের দিকে যাই। বিএনপি সর্বশেষ সরকারে ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর প্রায় ১৯ বছর পরে বিএনপির সামনে আবার একটা সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই তখনকার যে বিএনপি আর এখনকার যে বিএনপি এই দুটোর পার্থক্যটা আপনি কোথায় কী বলবেন?
তারেক রহমান: এই ১৯ বছরে আমরা বাংলাদেশ বলি বা পুরো বিশ্ব বলি অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। দুটো বড় বড় জিনিসের বোধহয় পরিবর্তন হয়েছে।
একটি হচ্ছে কোভিডের ভিতর দিয়ে পুরা বিশ্ব গিয়েছে। এই কোভিড বিভিন্নভাবে আমাদের অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা মনোজগত চেঞ্জ করেছে। ঠিক একইভাবে যদি আরেকটি বিষয় আমরা দেখি এই যে আপনার সাথে আমি কথা বলছি অনলাইনে, এই যে আইটি বা সোশ্যাল মিডিয়া এই পুরো বিষয়টা কিন্তু মানুষের মনোজগতকে ভিন্নভাবে ভিন্ন রকম করেছে।
অনেক্ষক্ষেত্রে মনোজগতে একটা প্রভাব বিস্তার করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবে আপনি যেই সময়ের কথা বলেছেন সেই সময় এই বিষয়গুলো হয়তো সেভাবে ছিল না। তো স্বাভাবিকভাবেই এই সবকিছু বিবেচনা করে সামনের দিনগুলোতে আমাদেরকে এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব রেখে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।
আমরা সেভাবে চিন্তাভাবনা করে আমাদের প্ল্যান প্রোগ্রাম বিষয়গুলোকে আমরা সাজাচ্ছি। সেই সময় থেকে ১৯ বছর আগে আমাদের যেসব প্ল্যান প্রোগ্রাম ছিল, তার থেকে কিছুটা পরিবর্তন হবে।
কিন্তু ওই যে বেসিক যে জিনিসটা সেটা হচ্ছে মানুষের বেটারমেন্ট। মানুষের ভালো কিছু করার জন্য মানুষ যাতে আজকে যেমন আছে আগামীকাল যাতে একটু বেটার থাকতে পারে কি, কীভাবে সেটা করা যেতে পারে, কে কোনো শ্রেণি কীভাবে একটু বেটার থাকতে পারে, সেটিই থাকবে আমাদের সবচেয়ে প্রায়োরিটি ইস্যু।
দুর্নীতি প্রশ্নে বিএনপি ভোটারদের আশ্বস্ত করবে কীভাবে
বিবিসি বাংলা: বিগত যখন বিএনপি সরকারে ছিল তখন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল, তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। সরকারে যারা ছিলেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বা সেই সময় যেভাবে দুর্নীতি হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায়। আপনার নিশ্চয় মনে আছে যে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তখন অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি যে আর হবে না এ বিষয়ে আপনি ভোটারদেরকে কিভাবে আশ্বস্ত করবেন?
তারেক রহমান: দেখুন আপনি যে কথাটি বললেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ছিল সেই সময়। আমরা ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরে সরকার নির্বাচনের পর ১০ই অক্টোবর সরকার গঠন করি, সম্ভবত।
এর বোধহয় কিছুদিন পরে একটি সূচক বের হলো টিআইবির। মানে দুই তিন মাস পরে বোধহয় একটি সূচক বের হলো।
নিশ্চয়ই মাত্র নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষে তো ভালোমন্দ কোনো কিছুই তিন মাসে করা সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে সূচকটি হয়েছিল সেটি তার আগে আমাদের আগে যে সরকারটি ছিল তারা যে পাঁচ বছর যা করেছে তার উপর ভিত্তি করেই সেই সূচকটি তারা তৈরি করেছে।
আপনি যদি ২০০১ থেকে ২০০৬ অর্থাৎ বিএনপি সরকার গঠন করার পরে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যখন ক্ষমতা হ্যান্ডওভার করে দিল, আপনি যদি সেই সংস্থা টিএইবি নামক সেই সংস্থাটার রিপোর্টই যদি আপনি দেখেন তাহলে দেখবেন পর্যায়ক্রমিকভাবে, এটি কিন্তু আমার কথা না, এটি তাদের পরিসংখ্যানের কথা-পর্যায়ক্রমিকভাবে কিন্তু নেমে এসেছে।
হ্যাঁ আমি এডমিট করছি পুরাপুরি হয়তো আমরা করতে পারিনি। বাস্তবতা তো বুঝতে হবে। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই এটি মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আস্তে আস্তে করতে হবে। জিনিসটি সময় লাগবে।
আমি এখন যত কথাই বলি না কেন বাস্তবতা হচ্ছে এই বিষয়টি যেহেতু সময় লাগবে আমাদেরকে কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
সেজন্যই আমি ভোটারদেরকে এতটুকু বলতে পারব, আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ যদি আমাদেরকে সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমরা যাতে একটি এমন অবস্থা তৈরি করতে পারি যেখানে কিছুটা হলেও আমরা বহিঃবিশ্বে বিশ্বের অন্য দেশের সামনে কিছুটা হলেও যাতে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি।
চাঁদাবাজি, দখলের মত নানা অভিযোগ নিয়ে যা বললেন
বিবিসি বাংলা: পাঁচই আগস্টের পরে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে চাঁদাবাজি বা দখলের মত নানা অভিযোগ এসেছে। আপনাদের দল থেকে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা ঠিক, আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে এই অভিযোগগুলো কিন্তু বারবার আসছে। তো এটা থামানো যাচ্ছে না কেন?
তারেক রহমান: আপনার প্রতি সম্মান রেখে আপনার সাথে এগ্রিও যেমন করবো, আবার এখানে অন্য একটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাইবো।
এর মধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন যে প্রায় ৭০০০ এর মতন আমাদের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এই ৭০০০ এ সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সাথে জড়িত নয়। এর মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সাথে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এরকম যখন অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে আমরা বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি।
যেমন আমি দুই-একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। যেমন-ধরেন দুই ভাই। কোনো একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পত্তি সহায় সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। এক ভাই বিগত যে স্বৈরাচার পলাতক স্বৈরাচার তাদের কারো সাথে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক।
তার ফলে সে সেই স্বৈরাচারের যে দোসর যার সাথে এই এক ভাইয়ের সম্পর্ক, সে তার ইনফ্লুয়েন্সটি ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তিও জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন পাঁচ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না।
তো অন্য যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি। সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে। এখন এক্সিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিনভাবে বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে সেই ভাই বিএনপি করে। বিএনপির কোনো একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক। চাপিয়ে দিল অভিযোগ তুলে দিল অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এ রকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি।
আবার আরেকটি আমি উদাহরণ দেই যা সত্য, যা বাস্তব। স্বৈরাচারের সময় সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৫০ লাখের বেশি নেতা-কর্মীর নামে বিভিন্ন রকম গায়েবি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের বহু নেতা-কর্মী তাদের ঘর বাড়িতে থাকতে পারতো না। তাদেরকে বিভিন্নভাবে পালিয়ে থাকতে হতো। বিভিন্নভাবে সরে থাকতে হতো। এই সুযোগে স্বৈরাচার তাদের ব্যবসা বাণিজ্য দোকান-পাট ঘর বাড়ি জমি জমা পুকুর দখল করে নিয়েছিল। পাঁচ তারিখে যখন স্বৈরাচার পলাতক হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে-তখন স্বৈরাচারের যারা দখল করেছে তারাও সাথে সাথে পালিয়ে গিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজেদের যেগুলি বৈধ সম্পত্তি, পৈতৃক সম্পত্তি সেগুলো আবার ফিরে পেতে গিয়েছে। তখন আবার কিছু সংখ্যক লোক প্রচার করেছে যে বিএনপির লোকজন দখল করতে গিয়েছে এরকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে।
আপনি যেই কথাটি বললেন সেরকমও কিছু ঘটেছে। সে কারণেই আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটি আমরা পাবলিকলিও করেছি। দেখুন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটেছে যেমন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে।
যতটুকু আমরা জেনেছি, যতটুকু আমরা তদন্তের পরে পেয়েছি, যখন সত্যতা পেয়েছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পুলিশিং করা তো আমাদের কাজ না। রাজনৈতিক দলের কাজ অবশ্যই পুলিশিং করা না।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কখনো বলিনি সরকারকে-যে অমুককে ধরতে পারবে না, তমুককে ধরতে পারবে না, এই করতে পারবে না ওই কথা। আমরা কিন্তু কখনো বলিনি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যাদের কাজ পুলিশিং করা তারা কেন তাদের কাজটি করছে না। তারা কেন তাদের কাজে ব্যর্থ এটি আমাদের প্রশ্ন।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এখানে সরকারের একটা ব্যর্থতা আছে?
তারেক রহমান: অবশ্যই। আমি তো আগেই বলছি পুলিশিং তো রাজনৈতিক দলের কাজ না পুলিশিং করার দায়িত্ব সরকারের।
বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ আমরা ধরে নিতে পারি যে, আপনারা যদি সরকার গঠন করেন সে ক্ষেত্রে আপনার দলের নেতা-কর্মী বা আপনার দলের নামে কোনো চাঁদাবাজি বা দখল এ ধরনের কিছু কেউ সেটা করতে পারবে না, কারণ তখন যেহেতু আপনারা সরকারে থাকবেন?
তারেক রহমান: ইয়েস, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার কাজ করবে। বিএনপি ইনশা আল্লাহ সরকার গঠন করলে আমার দলের কোন নেতা-কর্মী তখনো যদি এ রকম কোনো অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয় আমরা দলের অবস্থান থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিব।
দল তার পক্ষে থাকবে না, দলের অবস্থান এবং দেশের আইন অনুযায়ী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা তাদের কাজ করবে, সিম্পল। এখানে দুইয়ে দুইয়ে চারের মতন ব্যাপার।
’ডাকসুর প্রভাব পড়বে না জাতীয় রাজনীতিতে’
বিবিসি বাংলা: একটু ডাকসু নির্বাচন প্রশ্নে আসি। সাম্প্রতিক সময়ে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ব্যাপক আলোচনা চলছে রাজনীতিতে এখনো। এর ফলাফলে দেখা গেছে যে বিএনপি সমর্থক ছাত্রদলের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়েছে। আপনি কীভাবে দেখেন এই ফলাফলটাকে আসলে?
তারেক রহমান: আমি মনে করি গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি ভালো উদ্যোগ এটি। ভালো সূচনা। এটি গেল এক নম্বর।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে যারা জয়ী হয়েছেন বা এরকম আরো ভবিষ্যতে যারা জয়ী হবেন, তাদের প্রতি শুভেচ্ছা এবং যারা ভবিষ্যতে জয়ী হবেন তাদের প্রতি অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো।
তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে দেখুন একটা অগ্রযাত্রা শুরু হলো, কিন্তু আমরা চাইছিলাম না যে কোনো বিতর্কের মধ্যে এগুলা পড়ুক। আমরা আশা করব যে পরবর্তীতে যেগুলো হবে সেগুলো বিতর্কবিহীন হবে নির্বাচনগুলো।
বিবিসি বাংলা: এই নির্বাচনের ফলাফল, মানে ডাকসুর নির্বাচনের ফলাফল এটা কি জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে? আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনার কি মনে হয়? আপনি কি মনে করেন সেটা?
তারেক রহমান: আমি যেটা দেখলাম বিভিন্ন মিডিয়াতে কিছু ব্যক্তি, যেমন-মান্না ভাই, ওনাকে উনি তো বোধহয় দুবার ভিপি ছিলেন। আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনীতিবিদ।
আমরা যদি উনার বক্তব্য শুনে থাকি বা ধরে থাকি তাহলে তো আমি মনে করি না কোনো কারণ আছে। ছাত্র রাজনীতি ছাত্র রাজনীতির জায়গায়, জাতীয় রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির জায়গায়।
জামায়াতের সম্ভাব্য জোট নিয়ে উদ্বেগ নেই
বিবিসি বাংলা: এখন যে সক্রিয় দলগুলো আছে তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রশ্নে যদি একটু আসি, যে জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে বিএনপির নেতাদের অনেক সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। গত সাম্প্রতিক সময়ে, তো জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আপনার মনোভাবটা কি আসলে?
তারেক রহমান: বিষয়টা হচ্ছে যে দেখুন বাংলাদেশের স্বীকৃত যে নিয়ম, আইন-কানুন আছে, এগুলোর ভিতরে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করে অবশ্যই করতে পারে।
বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কাজেই বিষয়টি আমরা এভাবেই দেখতে চাই।
দেশের যে আইন কানুন আছে তার ভিতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, অবশ্যই সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। এবং আমরা তো চাই সবাই রাজনীতি করুক। বহুদলীয় রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি।
বিবিসি বাংলা: জামায়াতে ইসলামী তো বিএনপির সাথে একসময় মিত্র ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের বিরোধী ভূমিকা নিয়ে কিন্তু বিএনপি নেতারা এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সামনে আনছেন। কিন্তু বিএনপি আবার তাদের সাথে সরকারও গঠন করেছিল একটা সময়?
তারেক রহমান: ২০২৪ সালে স্বৈরাচার যেই হত্যাগুলো করেছে দেশ স্বাধীনের পরে যখন তারা সরকার গঠন করেছিল ক্ষমতায় ছিল তখনও যে সকল লুট তারা করেছে, খুন-গুম তারা করেছে।
বিগত ১৭ বছর গুম খুন যারা করেছে, এর জবাব যে রকম তাদেরকেই দিতে হবে, ঠিক একইভাবে ’৭১ সালে কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের কোনো বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দিবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারবো না। আমারটা আমি দিতে পারবো। অন্যেরটা তো আমি দিতে পারবো না।
যা বললেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে
বিবিসি বাংলা: আপনি জুলাইয়ের সময়ের কথা বলছিলেন। সে সময়ের হত্যাকাণ্ডের কথা বলছিলেন। সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আপনার আপনাদের বা বিএনপির অবস্থানটা কী আসলে?
তারেক রহমান: দেখুন, আমি ১৭ বছর যাবত প্রবাস জীবনে আছি। ওয়ান ইলেভেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যেই শারীরিক নির্যাতন আমার উপরে হয়েছিল তারপরে চিকিৎসার জন্য আমি এই দেশে আসি।
আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম ছোট ভাইকে। আমি যখন এই দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল।
সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে চুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যেই সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে।
আমি আমার পরিবারের যেই কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এটিকে আপনারা কাহিনী বলুন, বা সংগ্রাম বলুন যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনী না, বা আমার পরিবারের কাহিনী না। এরকম কাহিনী বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের।
যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গিয়েছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় জেলের ভিতরে মারা গিয়েছে, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে-এই সকল অন্যায়, এই সকল হত্যা, এই সকল নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে।
এটি প্রতিশোধের কোনো বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিবিসি বাংলা: এখানে একটা বিষয় আলোচনায় এসেছে যে যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারা-না পারার প্রশ্নে বিএনপিরও অনেক নেতা অনেক সময় বলেছেন যেকোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে তারা নন। তো এখন নির্বাচনও সামনে আসছে। ফলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না সে ধরনের একটা প্রশ্নও আসছে। তো সেটা সেই জায়গাটাতে বিএনপির অবস্থানটা কী হতে পারে?
তারেক রহমান: দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এটা আদালতের বিষয় বলে মনে করছেন?
তারেক রহমান: দল হিসেবে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে তাই হবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। তো সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক। যারা জুলুম করেছে তাদের তো বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তিও হতে পারে। সেটি দলও হতে পারে।
বিবিসি বাংলা: আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী মনে করেন? আওয়ামী লীগের কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত নাকি, না?
তারেক রহমান: আমার মনে হয় আপনার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি মনে হয় বলেছিলাম যে আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য।
আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও আমরা বিএনপি যারা করি আমাদের রাজনৈতিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই-যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে-জনগণ তাদেরকে সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।
জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের সিদ্ধান্তের উপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারের এটি প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বটি প্রকাশ হবে মঙ্গলবার ৭ই অক্টোবর বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পাতা ও ইউটিউব চ্যানেলে।
বিবিসি বাংলা: তারেক রহমান আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাথে যোগ দেবার জন্য।
তারেক রহমান: আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ, আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বিবিসি বাংলা: আপনি কেমন আছেন? আপনার সময় কেমন যাচ্ছে?
তারেক রহমান: আলহামদুলিল্লাহ, আমি শারীরিকভাবে ভালো আছি। সময় তো স্বাভাবিকভাবে ব্যস্তই যাচ্ছে। ফিজিক্যালি হয়তো আমি এই দেশে আছি, বাট মন-মানসিকতা সবকিছু মিলিয়ে তো আমি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছি।
বিবিসি বাংলা: আমরা এমন একটা সময় আপনার সাথে কথা বলছি, যখন বাংলাদেশ ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল বলা হবে না। ২০২৪ সালে একটি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান হয়েছে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আপনি আপনার অনেক দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, কথা বলেছেন, নিয়মিতই কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের সাথে আপনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি। এত দিন ধরে আপনি কথা বলেননি কেন?
তারেক রহমান: ব্যাপারটা বোধ হয় এ রকম না, ব্যাপারটা বোধয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাস জীবনে, তবে আমার ওপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে; তারপর থেকে আমি গ্রামেগঞ্জে আমার নেতা-কর্মীসহ তাদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, আমি সকলের সাথে কথা বলেছি।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতিমতন একটা আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারত না।
আমি একবার প্রেসক্লাবে কথা বলেছিলাম। তখন পরের দিন দেখলাম যে প্রেসক্লাবে একটি তখনকার যেই প্রেসক্লাবের যারা সদস্য ছিলেন বা কমিটি ছিল, তারা একটি মিটিং ডেকে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা তখন আমাকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি বলা হয়েছিল যে, সে রকম কোনো ব্যক্তিকে তারা প্রেসক্লাবে কথা বলতে দিবে না। এভাবে তারা চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে।
আমি কথা বলেছি, সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পন্থায় আমি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, আমি ইনশা আল্লাহ পৌঁছেছি মানুষের কাছে। কাজেই গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি তা না। আমি কথা বলেছি হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছি আমি থেমে থাকিনি।
দেশে ফেরার প্রশ্নে যা বললেন?
বিবিসি বাংলা: আমি অবশ্য সাক্ষাৎকারের কথা বলছিলাম যে প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি মানে বিশেষ করে গত এক বছরে। বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেছে এবং অনেকের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপনি দেশে এসে সশরীরে দলের নেতৃত্ব দেবেন। গত এক বছরে যে প্রশ্নটা বারবার ঘুরেফিরে এসেছে এবং এখনো আসছে যে আপনি এখনো দেশে ফেরেননি কেন। কেন আপনি এখনো দেশে ফেরেননি?
তারেক রহমান: কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে ওঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশা আল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসব।
বিবিসি বাংলা: সেটা কবে, আমরা কি জানতে পারি?
তারেক রহমান: দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশা আল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের আগে কি তাহলে আপনি দেশে আসবেন, এমন সম্ভাবনা বলা যায়?
তারেক রহমান: রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকব ইনশা আল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: একটা বিষয়, যেটা আপনার দল থেকে, মাঝে দলের নেতাদের কেউ কেউ কখনো কখনো বলেছেন যে একটা নিরাপত্তার শঙ্কার কথা বলেছেন। আপনি না আসার পেছনে, আপনি কি কোনো ধরনের শঙ্কা বোধ করেছেন এর মধ্যে?
তারেক রহমান: বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তো শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।
’কোনো ব্যক্তি নয়, মাস্টারমাইন্ড গণতন্ত্রকামী জনগণ’
বিবিসি বাংলা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে আসি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এটি মোটামুটি সব পক্ষই স্বীকার করেও যে সেই সময়ে আপনার একটা সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আবার আপনার দলের কোনো কোনো নেতা বা সমর্থক তারা এই অভ্যুত্থানে আপনাকে ’একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?
তারেক রহমান: না। আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে ৫ই অগাস্ট যেই আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত, এই আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটি প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে।
এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে।
আমি মনে করি, জুলাই-আগস্ট মাসে এসে জনগণ সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাথে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই সেদিন ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়।
আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা তাঁরা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিণীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি, কৃষক, শ্রমিক, সিএনজিচালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকানমালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টস কর্মী—তাঁরা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে।
এমন অনেক সাংবাদিক, যাঁরা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁরা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারও ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই, না খাটো করে দেখতে চাই না।
আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ়ভাবে সমাজের দলমত-নির্বিশেষে শ্রেণিবিন্যাস নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে।
এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাঁরাই এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল, কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
বিবিসি বাংলা: যখন আন্দোলনটা চলছিল, তখন আন্দোলনে যে ছাত্রনেতৃত্ব ছিল, তাদের সাথে আপনার কতটা যোগাযোগ ছিল? আপনার দলের সাথে তো নিশ্চয়ই যোগাযোগ ছিল, অন্যদের সাথে আপনাদের আপনার কতটা যোগাযোগ ছিল?
তারেক রহমান: স্বাভাবিকভাবে আমি যেহেতু বাইরে থেকে কাজ করছি, আমাকে যোগাযোগটা অনলাইনের মাধ্যমে রাখতে হয়েছে এবং সেই দিনগুলোতে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে টেলিফোন সিস্টেম বা অনলাইন সিস্টেমের কী অবস্থা করেছিল স্বৈরাচার।
আপনি যোগাযোগের যেটি কথা বলেছেন, এই যোগাযোগটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভিন্নভাবে আমাদেরকে করতে হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে করতে হয়েছে। যোগাযোগটা যে খুব স্মুথ সব সময় থেকেছে, তা নয়। প্রত্যেকে সহযোগিতা করেছি আমরা।
বিবিসি বাংলা: ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান, সেটির পরে এটার কৃতিত্ব কার সেটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে, তাতে কি আপনার মনে হয় যে এর ফলে বিভিন্ন পক্ষের যে সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের চেষ্টা, সেটাই একটু বেশি প্রকট হয়েছে এবং এখানে বিএনপির আসলে কোনো দায় আছে কি না?
তারেক রহমান: দেখুন ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ সাধারণত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। বাট আমরা দেখেছি এই আন্দোলনে স্বৈরাচারের এই আন্দোলনে যতটুকু আমার মনে আছে, প্রায় ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে, মারা গিয়েছে।
আমি আগেই বলেছি, আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি যে এই আন্দোলনের ক্রেডিট দলমত-নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নয়।
অনেকে হয়তো অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন, ডিমান্ড করতে পারেন, সেটি তাঁদের অবস্থান।
আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে, আন্দোলন হয়ে গিয়েছে, আন্দোলনের জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। ২০০০-এর মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজারের মতন মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অন্ধ হয়ে গিয়েছেন।
আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে, এখন আমাদের সকলের উচিত হবে রাষ্ট্রসহ সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব, সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। যতটুকু সহযোগিতা তাদেরকে করা যায়, যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো।
নির্বাচন এককভাবে নাকি দলগতভাবে
বিবিসি বাংলা: অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই দেখা গেছে যে বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচন দাবি করা হয়েছে। সরকার গড়িমসি করছে এ ধরনের অভিযোগও বিএনপির নেতারা করে আসছেন। তো এখন দেখা যাচ্ছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং নির্বাচন কমিশন তারা ফেব্রুয়ারিতে একটা নির্বাচনের সময় দিয়েছেন। তো ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে—আপনাদের আস্থা কতটা আছে তাতে?
তারেক রহমান: বিএনপি প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে যত দ্রুত নির্বাচনটি হবে, তত দ্রুত দেশের মধ্যে একটি স্থিতিশীলতা আসবে। দেখুন বাংলাদেশের মানুষ গত ১৭ বছর যাবৎ তাদের রাজনৈতিক অধিকার যেমন তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল।
যার ফলশ্রুতিতে আমরা সমাজে অনেকগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে স্পিলওভার ইফেক্ট বলতে যা বোঝায় অনেকগুলো খারাপ লক্ষণ দেখেছি। বেকার সমস্যা বেড়েছে, দরিদ্রতা বেড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসাব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়েছে।
আমরা সে জন্যই বলেছিলাম যে যত দ্রুত নির্বাচন হবে, যত দ্রুত দেশের মালিক যারা অর্থাৎ জনগণ তাদের কাছে যখন সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তারা যখন সিদ্ধান্ত নেবে, অর্থাৎ দেশের মালিক যখন সিদ্ধান্ত নিবে দেশ কারা কীভাবে পরিচালিত করবে, তত দ্রুত দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
কারণ, প্রকৃতভাবে নির্বাচিত একটি সরকার অবশ্যই জনগণের যে চাওয়া অর্থাৎ, জনগণ যেভাবে চায় সেই বিষয়গুলোকে তারা অ্যাড্রেস করবে। ইয়েস, একটি নির্বাচন হলেই যে সব রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে তা না। সমস্যাগুলোকে যখন আপনি অ্যাড্রেস করবেন খুব স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সমস্যা কমতে শুরু করবে।
আমরা আনন্দিত যে দেরিতে হলেও সরকার জিনিসটি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আমরা ডিসেম্বরের ভিতরে চেয়েছিলাম। উনারা ফেব্রুয়ারির ভিতরে এখন নির্বাচনটি করতে চাইছেন। আমরা আস্থা রাখতে চাই যে সরকার সে ব্যাপারে সব রকম উদ্যোগ পর্যায়ক্রমিকভাবে গ্রহণ করবেন।
বিবিসি বাংলা: এখন যেহেতু আপনারা বলছেন যে আপনারা আস্থা রাখতে চান, সেখানে নির্বাচন নিয়ে আপনার পরিকল্পনাটা কি? এককভাবে বিএনপি নির্বাচন করবে মানে দলগতভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে নির্বাচন করবে?
তারেক রহমান: খুব ট্রিকি কোশ্চেন একটু। দেখুন আমরা প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম কমবেশি একসাথে কাজ করার জন্য। এমনকি আমরা যে ৩১ দফা দিয়েছি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের, এটি প্রথমে ২০১৬ সালে আমরা দিয়েছিলাম শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ভিশন টুয়েন্টি ছিল। যেটা পরবর্তীতে কিছুটা আরেকটু ডেভেলপ করে আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম।
পরবর্তীতে আমরা আমাদের সাথে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের সাথে পরামর্শ করে সকলের মতামত নিয়ে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কারণটি হচ্ছে যে দলগুলোকে আমরা পেয়েছি, আমাদের সাথে রাজপথের আন্দোলনে, আমরা চাই সকলকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সকলের মতামতকে সাথে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই।
বিবিসি বাংলা: সেখানে তাহলে মানে যারা আন্দোলন করেছে তারাই নাকি? মানে মিত্র কারা হবে আসলে কারা সাথে থাকবে আপনাদের নির্বাচনকে সামনে রেখে?
তারেক রহমান: ওই যে বললাম, কমবেশি সকলকে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।
বিএনপির মনোনয়নে এবার ভিন্ন কী হবে
বিবিসি বাংলা: কিন্তু দেখা গেছে, জামায়াতে ইসলামী তারা কিছু দলকে নিয়ে বিএনপিবিরোধী একটি জোট করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেটিকে আপনারা কি উদ্বেগ হিসেবে দেখেন? মানে আপনারা কীভাবে দেখেন সেটা?
তারেক রহমান: দেখুন, কোনো দল বা সমষ্টিগতভাবে কোনো দল যদি বাংলাদেশের যে আইন আছে, বৈধ আইন আছে। বাংলাদেশের যে সংবিধান এখনো যেটি আছে, এই সবকিছুর ভেতরে থেকে অর্থাৎ মানুষের সমর্থন-গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, তারা করতেই পারে। এটাতে তো কোনো সমস্যা বা উদ্বেগের কোনো কারণ আমি দেখি না।
বিবিসি বাংলা: সেখানে যদি তারা একটি আলাদা জোট করে, সেটি কি আপনাদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে?
তারেক রহমান: না, কেন? ইলেকশন হলে তো ইলেকশনে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এতে উদ্বেগের কী আছে? বিএনপি তো আগেও নির্বাচন করেছে। বিভিন্ন সময় বিএনপি নির্বাচন করেছে। কম্পিটিশন করেই বিএনপি নির্বাচন করেছে। প্রতিযোগিতা করেছে। উদ্বেগের কিছু নেই।
বিবিসি বাংলা: মনোনয়নের প্রশ্নে যদি আসি, সেখানে আপনাদের কৌশলটা কী হবে? এর আগে বিভিন্ন সময় নির্বাচনগুলোতে পেশিশক্তির প্রভাব, টাকার প্রভাব, পারিবারিক বিষয় বিবেচনা এই বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ আছে। এবার ভিন্ন কি হবে আসলে?
তারেক রহমান: আপনি যেই বিষয়গুলো বললেন, আমরা কখনোই এইসব বিবেচনায় নিয়ে কখনোই আমার দল নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
আমাদের নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সব সময় কমবেশি, যা ছিল বা ভবিষ্যতে আমরা যেটিকে মূল্যায়ন করব—সেটি হচ্ছে অবশ্যই কোনো একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইব, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সাথে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, উঠাবসা আছে, যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম।
যে ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, তরুণ, নারী, মুরব্বিসহ ছাত্রছাত্রী সবার সাথে যার একটা কমিউনিকেশন আছে। এই ধরনের মানুষকেই আমরা প্রায়োরিটি দিব, খুবই স্বাভাবিক। অর্থাৎ যার প্রতি জনসমর্থন আছে। যে জনসমর্থনকে তার সাথে রাখতে পারে। জনগণের যার প্রতি সমর্থন আছে সে রকম মানুষকে দেখেই আমরা নমিনেশন দেব।
বিবিসি বাংলা: সেখানে তৃণমূলের মতামত কতটা প্রাধান্য পাবে? অভিযোগ আছে যে তৃণমূলের মতামত প্রাধান্য কম পায়?
তারেক রহমান: না, ব্যাপারটা এ রকম না। দেখুন গণতন্ত্রে স্বাভাবিক যেখানেই গণতন্ত্র আছে, সেখানে মতামত থাকতেই পারে। বিভিন্ন রকম মতামত অভিযোগ। হয়তো এক জায়গায় ৫০ জন আছে। ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জন একটি কথা বলছে, ১৫ জন একটি কথা বলছে। বাকিরা আরেকটি কথা বলছে। তাহলে আপনি কি বলবেন যে মতামত নে্য়ও হচ্ছে না? না।
স্বাভাবিকভাবেই যেখানে আমরা মেজরিটির যেটা মতামত পাবো, এলাকার মানুষের কম বেশি। আমরা তো আমাদের মতন করে খোঁজ করছি। সেটি তৃণমূলই হোক বা সেটি সাধারণ মানুষের হোক।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য—আমরা কিন্তু দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না। আমরা নির্বাচন করছি এমন একজন ব্যক্তিকে, যেই শুধু দলেরই সমর্থন নয় বরং দলমত-নির্বিশেষে ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন যার প্রতি আছে।
আমরা এ রকম একজন মানুষকে বের করে আনতে চাইছি। এ রকম একজন মানুষকে আমাদের দলের মনোনয়ন দিতে চাইছি। শুধু দল দিয়ে তো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনে তো সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। বিভিন্ন মানুষের অংশগ্রহণ থাকে।
কাজেই যার সমর্থন আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব, চেষ্টা করছি যার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন আছে। শুধুমাত্র দলীয় সমর্থন নয়, এরকম মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী কি না?
বিবিসি বাংলা: নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনার কাছে জানতে চাই যে আগামী নির্বাচনে আপনার ভূমিকা কী হবে, আপনি কি সরাসরি নির্বাচন করছেন? আপনাকে কি আমরা প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে দেখতে পাব নির্বাচনে?
তারেক রহমান: আমার মনে হয়, আপনি প্রথম দিকে বোধহয় একটা প্রশ্ন করেছেন, আমি ওখানে বলেছিলাম স্বাভাবিক আমি একজন রাজনৈতিক দলের সদস্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি। নির্বাচনের সাথে তো রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক।
কাজেই নির্বাচন যেখানে একটি মানে জনগণের সম্পৃক্ত, এ রকম একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই আমি নিজেকে দূরে থাকতে পারব না। আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই ইনশা আল্লাহ থাকব আমি। আপনি আপনার প্রশ্নের পরের যে অংশটি ছিল, দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তো আপনাকে নিতে হবে।
তারেক রহমান: না না সেটি তো নিব, কেন নিব না? অবশ্যই নিব।
বিবিসি বাংলা: আপনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাহলে?
তারেক রহমান: জ্বি, ইনশা আল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে আমরা তারেক রহমানকে দেখতে পাব সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি?
তারেক রহমান: এটির সিদ্ধান্ত তো বাংলাদেশের জনগণের।
বিবিসি বাংলা: বিএনপির পক্ষ থেকে?
তারেক রহমান: সে ক্ষেত্রে তো এটি দল সিদ্ধান্ত নেবে। দল কিভাবে করবে এটি তো দলের সিদ্ধান্ত।
নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কি হবে?
বিবিসি বাংলা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আপনাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তিনি কি এ নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় থাকবেন? তাকে কি আমরা নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় দেখতে পাবো?
তারেক রহমান: আপনি এমন একজন মানুষের কথা বলেছেন, যেই মানুষটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, যতবার গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে, প্রতিবার উনি অবদান রেখেছেন। সেই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুনরুদ্ধার করার জন্য।
এবারও আপনাদের সকলের চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তার উপরে অত্যাচারের খড়গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু উনি আপোষ করেননি। এরকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন কীভাবে উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো।
আমরা দেখেছিলাম একজন সুস্থ মানুষ গিয়েছেন। কিন্তু যখন বেরিয়ে এসেছেন একজন অসুস্থ মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এ সবগুলোই ঘটনা দেশবাসী জানেন। তারপরেও যে মানুষটির এত বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার।
আমি সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যেই প্রত্যাশিত, জনপ্রত্যাশিত যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, উনার শারীরিক সক্ষমতা যদি এলাও করে উনাকে নিশ্চয়ই উনি কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।
বিবিসি বাংলা: সেটা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে পারে?
তারেক রহমান: এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। আমি মাত্রই বললাম যে উনার শারীরিক বা ফিজিক্যাল এবিলিটির উপরে বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে।
বিবিসি বাংলা: এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন চলে আসে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে। আপনার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তিনি চার দশক বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন আপনি কার্যত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন আপনি। বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতটা থাকবে?
তারেক রহমান: দেখুন বিষয়টিকে আমি একটু তাহলে অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সব রকম সকলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাইছি। দেখুন, একজন চিকিৎসকের সন্তান যখন চিকিৎসক হয় তখন সে ভালোও করে সে খারাপও করে। একজন লয়ারের সন্তানও দেখা যায় যে অনেক সময় বাবা-মায়ের মতন ভালো লয়ার (আইনজীবি) হয় অথবা হয় না।
রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অনেকের সন্তান পলিটিক্সে এসেছে। সবাই কি ভালো করেছে? সবাই ভালো করেনি। কেউ কেউ করেছে কেউ কেউ করতে পারেনি ভালো।
আপনি যদি আমাকে ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে এভাবে আমি বলব যে, দেখুন আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মতন দেশে রাজনীতি যারা করেন বিগত ১৭ বছরে দেখেছি। তার আগেও আমরা দেখেছি রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হন। মিথ্যে মামলার শিকার হন। আমাদের বহু নেতা-কর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জেল জুলুম খেটেছে। ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যেই কয়টা উদাহরণ দিলাম আমি মাত্র।
আপনি কি বলতে পারবেন, এর কোনোটার মধ্যে দিয়ে আমি যাইনি? এর প্রতিটার ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। প্রত্যেকটা স্তর পার করে এসেছি আমি। আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যেই নির্যাতনের চিহ্ন এখনো কখনো কখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি আমি। সবকিছুর ভিতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি।
কাজেই এইজন্য এই কথাগুলো আমি বললাম যে রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে সে এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি এগিয়ে যেতে না পারে, তাহলে সে এগিয়ে যেতে পারবে না। সময় পরিস্থিতি সবকিছু প্রমাণ করে দিবে।
বিবিসি বাংলা: আপনার স্ত্রী বা কন্যা বা আপনার পরিবারে যারা আছেন তারা রাজনীতিতে আসবেন কিনা এটা নিয়ে কিন্তু ব্যাপক আলোচনা আছে। আলোচনা হয় কিন্তু রাজনীতিতে। তো এ ধরনের কি কোনো সম্ভাবনা আছে বা তারা আগ্রহী কি না রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে?
তারেক রহমান: আমি ওই যে বললাম সময় পরিস্থিতি বলে দিবে ওটা।
বিএনপির অগ্রাধিকার
বিবিসি বাংলা: একটু আবার নির্বাচনের দিকে যাই। বিএনপি সর্বশেষ সরকারে ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর প্রায় ১৯ বছর পরে বিএনপির সামনে আবার একটা সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই তখনকার যে বিএনপি আর এখনকার যে বিএনপি এই দুটোর পার্থক্যটা আপনি কোথায় কী বলবেন?
তারেক রহমান: এই ১৯ বছরে আমরা বাংলাদেশ বলি বা পুরো বিশ্ব বলি অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। দুটো বড় বড় জিনিসের বোধহয় পরিবর্তন হয়েছে।
একটি হচ্ছে কোভিডের ভিতর দিয়ে পুরা বিশ্ব গিয়েছে। এই কোভিড বিভিন্নভাবে আমাদের অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা মনোজগত চেঞ্জ করেছে। ঠিক একইভাবে যদি আরেকটি বিষয় আমরা দেখি এই যে আপনার সাথে আমি কথা বলছি অনলাইনে, এই যে আইটি বা সোশ্যাল মিডিয়া এই পুরো বিষয়টা কিন্তু মানুষের মনোজগতকে ভিন্নভাবে ভিন্ন রকম করেছে।
অনেক্ষক্ষেত্রে মনোজগতে একটা প্রভাব বিস্তার করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবে আপনি যেই সময়ের কথা বলেছেন সেই সময় এই বিষয়গুলো হয়তো সেভাবে ছিল না। তো স্বাভাবিকভাবেই এই সবকিছু বিবেচনা করে সামনের দিনগুলোতে আমাদেরকে এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব রেখে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।
আমরা সেভাবে চিন্তাভাবনা করে আমাদের প্ল্যান প্রোগ্রাম বিষয়গুলোকে আমরা সাজাচ্ছি। সেই সময় থেকে ১৯ বছর আগে আমাদের যেসব প্ল্যান প্রোগ্রাম ছিল, তার থেকে কিছুটা পরিবর্তন হবে।
কিন্তু ওই যে বেসিক যে জিনিসটা সেটা হচ্ছে মানুষের বেটারমেন্ট। মানুষের ভালো কিছু করার জন্য মানুষ যাতে আজকে যেমন আছে আগামীকাল যাতে একটু বেটার থাকতে পারে কি, কীভাবে সেটা করা যেতে পারে, কে কোনো শ্রেণি কীভাবে একটু বেটার থাকতে পারে, সেটিই থাকবে আমাদের সবচেয়ে প্রায়োরিটি ইস্যু।
দুর্নীতি প্রশ্নে বিএনপি ভোটারদের আশ্বস্ত করবে কীভাবে
বিবিসি বাংলা: বিগত যখন বিএনপি সরকারে ছিল তখন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল, তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। সরকারে যারা ছিলেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বা সেই সময় যেভাবে দুর্নীতি হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায়। আপনার নিশ্চয় মনে আছে যে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তখন অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি যে আর হবে না এ বিষয়ে আপনি ভোটারদেরকে কিভাবে আশ্বস্ত করবেন?
তারেক রহমান: দেখুন আপনি যে কথাটি বললেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ছিল সেই সময়। আমরা ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরে সরকার নির্বাচনের পর ১০ই অক্টোবর সরকার গঠন করি, সম্ভবত।
এর বোধহয় কিছুদিন পরে একটি সূচক বের হলো টিআইবির। মানে দুই তিন মাস পরে বোধহয় একটি সূচক বের হলো।
নিশ্চয়ই মাত্র নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষে তো ভালোমন্দ কোনো কিছুই তিন মাসে করা সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে সূচকটি হয়েছিল সেটি তার আগে আমাদের আগে যে সরকারটি ছিল তারা যে পাঁচ বছর যা করেছে তার উপর ভিত্তি করেই সেই সূচকটি তারা তৈরি করেছে।
আপনি যদি ২০০১ থেকে ২০০৬ অর্থাৎ বিএনপি সরকার গঠন করার পরে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যখন ক্ষমতা হ্যান্ডওভার করে দিল, আপনি যদি সেই সংস্থা টিএইবি নামক সেই সংস্থাটার রিপোর্টই যদি আপনি দেখেন তাহলে দেখবেন পর্যায়ক্রমিকভাবে, এটি কিন্তু আমার কথা না, এটি তাদের পরিসংখ্যানের কথা-পর্যায়ক্রমিকভাবে কিন্তু নেমে এসেছে।
হ্যাঁ আমি এডমিট করছি পুরাপুরি হয়তো আমরা করতে পারিনি। বাস্তবতা তো বুঝতে হবে। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই এটি মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আস্তে আস্তে করতে হবে। জিনিসটি সময় লাগবে।
আমি এখন যত কথাই বলি না কেন বাস্তবতা হচ্ছে এই বিষয়টি যেহেতু সময় লাগবে আমাদেরকে কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
সেজন্যই আমি ভোটারদেরকে এতটুকু বলতে পারব, আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ যদি আমাদেরকে সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমরা যাতে একটি এমন অবস্থা তৈরি করতে পারি যেখানে কিছুটা হলেও আমরা বহিঃবিশ্বে বিশ্বের অন্য দেশের সামনে কিছুটা হলেও যাতে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি।
চাঁদাবাজি, দখলের মত নানা অভিযোগ নিয়ে যা বললেন
বিবিসি বাংলা: পাঁচই আগস্টের পরে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে চাঁদাবাজি বা দখলের মত নানা অভিযোগ এসেছে। আপনাদের দল থেকে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা ঠিক, আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে এই অভিযোগগুলো কিন্তু বারবার আসছে। তো এটা থামানো যাচ্ছে না কেন?
তারেক রহমান: আপনার প্রতি সম্মান রেখে আপনার সাথে এগ্রিও যেমন করবো, আবার এখানে অন্য একটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাইবো।
এর মধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন যে প্রায় ৭০০০ এর মতন আমাদের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এই ৭০০০ এ সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সাথে জড়িত নয়। এর মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সাথে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এরকম যখন অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে আমরা বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি।
যেমন আমি দুই-একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। যেমন-ধরেন দুই ভাই। কোনো একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পত্তি সহায় সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। এক ভাই বিগত যে স্বৈরাচার পলাতক স্বৈরাচার তাদের কারো সাথে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক।
তার ফলে সে সেই স্বৈরাচারের যে দোসর যার সাথে এই এক ভাইয়ের সম্পর্ক, সে তার ইনফ্লুয়েন্সটি ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তিও জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন পাঁচ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না।
তো অন্য যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি। সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে। এখন এক্সিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিনভাবে বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে সেই ভাই বিএনপি করে। বিএনপির কোনো একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক। চাপিয়ে দিল অভিযোগ তুলে দিল অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এ রকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি।
আবার আরেকটি আমি উদাহরণ দেই যা সত্য, যা বাস্তব। স্বৈরাচারের সময় সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৫০ লাখের বেশি নেতা-কর্মীর নামে বিভিন্ন রকম গায়েবি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের বহু নেতা-কর্মী তাদের ঘর বাড়িতে থাকতে পারতো না। তাদেরকে বিভিন্নভাবে পালিয়ে থাকতে হতো। বিভিন্নভাবে সরে থাকতে হতো। এই সুযোগে স্বৈরাচার তাদের ব্যবসা বাণিজ্য দোকান-পাট ঘর বাড়ি জমি জমা পুকুর দখল করে নিয়েছিল। পাঁচ তারিখে যখন স্বৈরাচার পলাতক হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে-তখন স্বৈরাচারের যারা দখল করেছে তারাও সাথে সাথে পালিয়ে গিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজেদের যেগুলি বৈধ সম্পত্তি, পৈতৃক সম্পত্তি সেগুলো আবার ফিরে পেতে গিয়েছে। তখন আবার কিছু সংখ্যক লোক প্রচার করেছে যে বিএনপির লোকজন দখল করতে গিয়েছে এরকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে।
আপনি যেই কথাটি বললেন সেরকমও কিছু ঘটেছে। সে কারণেই আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটি আমরা পাবলিকলিও করেছি। দেখুন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটেছে যেমন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে।
যতটুকু আমরা জেনেছি, যতটুকু আমরা তদন্তের পরে পেয়েছি, যখন সত্যতা পেয়েছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পুলিশিং করা তো আমাদের কাজ না। রাজনৈতিক দলের কাজ অবশ্যই পুলিশিং করা না।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কখনো বলিনি সরকারকে-যে অমুককে ধরতে পারবে না, তমুককে ধরতে পারবে না, এই করতে পারবে না ওই কথা। আমরা কিন্তু কখনো বলিনি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যাদের কাজ পুলিশিং করা তারা কেন তাদের কাজটি করছে না। তারা কেন তাদের কাজে ব্যর্থ এটি আমাদের প্রশ্ন।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এখানে সরকারের একটা ব্যর্থতা আছে?
তারেক রহমান: অবশ্যই। আমি তো আগেই বলছি পুলিশিং তো রাজনৈতিক দলের কাজ না পুলিশিং করার দায়িত্ব সরকারের।
বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ আমরা ধরে নিতে পারি যে, আপনারা যদি সরকার গঠন করেন সে ক্ষেত্রে আপনার দলের নেতা-কর্মী বা আপনার দলের নামে কোনো চাঁদাবাজি বা দখল এ ধরনের কিছু কেউ সেটা করতে পারবে না, কারণ তখন যেহেতু আপনারা সরকারে থাকবেন?
তারেক রহমান: ইয়েস, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার কাজ করবে। বিএনপি ইনশা আল্লাহ সরকার গঠন করলে আমার দলের কোন নেতা-কর্মী তখনো যদি এ রকম কোনো অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয় আমরা দলের অবস্থান থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিব।
দল তার পক্ষে থাকবে না, দলের অবস্থান এবং দেশের আইন অনুযায়ী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা তাদের কাজ করবে, সিম্পল। এখানে দুইয়ে দুইয়ে চারের মতন ব্যাপার।
’ডাকসুর প্রভাব পড়বে না জাতীয় রাজনীতিতে’
বিবিসি বাংলা: একটু ডাকসু নির্বাচন প্রশ্নে আসি। সাম্প্রতিক সময়ে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ব্যাপক আলোচনা চলছে রাজনীতিতে এখনো। এর ফলাফলে দেখা গেছে যে বিএনপি সমর্থক ছাত্রদলের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়েছে। আপনি কীভাবে দেখেন এই ফলাফলটাকে আসলে?
তারেক রহমান: আমি মনে করি গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি ভালো উদ্যোগ এটি। ভালো সূচনা। এটি গেল এক নম্বর।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে যারা জয়ী হয়েছেন বা এরকম আরো ভবিষ্যতে যারা জয়ী হবেন, তাদের প্রতি শুভেচ্ছা এবং যারা ভবিষ্যতে জয়ী হবেন তাদের প্রতি অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো।
তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে দেখুন একটা অগ্রযাত্রা শুরু হলো, কিন্তু আমরা চাইছিলাম না যে কোনো বিতর্কের মধ্যে এগুলা পড়ুক। আমরা আশা করব যে পরবর্তীতে যেগুলো হবে সেগুলো বিতর্কবিহীন হবে নির্বাচনগুলো।
বিবিসি বাংলা: এই নির্বাচনের ফলাফল, মানে ডাকসুর নির্বাচনের ফলাফল এটা কি জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে? আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনার কি মনে হয়? আপনি কি মনে করেন সেটা?
তারেক রহমান: আমি যেটা দেখলাম বিভিন্ন মিডিয়াতে কিছু ব্যক্তি, যেমন-মান্না ভাই, ওনাকে উনি তো বোধহয় দুবার ভিপি ছিলেন। আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনীতিবিদ।
আমরা যদি উনার বক্তব্য শুনে থাকি বা ধরে থাকি তাহলে তো আমি মনে করি না কোনো কারণ আছে। ছাত্র রাজনীতি ছাত্র রাজনীতির জায়গায়, জাতীয় রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির জায়গায়।
জামায়াতের সম্ভাব্য জোট নিয়ে উদ্বেগ নেই
বিবিসি বাংলা: এখন যে সক্রিয় দলগুলো আছে তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রশ্নে যদি একটু আসি, যে জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে বিএনপির নেতাদের অনেক সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। গত সাম্প্রতিক সময়ে, তো জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আপনার মনোভাবটা কি আসলে?
তারেক রহমান: বিষয়টা হচ্ছে যে দেখুন বাংলাদেশের স্বীকৃত যে নিয়ম, আইন-কানুন আছে, এগুলোর ভিতরে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করে অবশ্যই করতে পারে।
বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কাজেই বিষয়টি আমরা এভাবেই দেখতে চাই।
দেশের যে আইন কানুন আছে তার ভিতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, অবশ্যই সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। এবং আমরা তো চাই সবাই রাজনীতি করুক। বহুদলীয় রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি।
বিবিসি বাংলা: জামায়াতে ইসলামী তো বিএনপির সাথে একসময় মিত্র ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের বিরোধী ভূমিকা নিয়ে কিন্তু বিএনপি নেতারা এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সামনে আনছেন। কিন্তু বিএনপি আবার তাদের সাথে সরকারও গঠন করেছিল একটা সময়?
তারেক রহমান: ২০২৪ সালে স্বৈরাচার যেই হত্যাগুলো করেছে দেশ স্বাধীনের পরে যখন তারা সরকার গঠন করেছিল ক্ষমতায় ছিল তখনও যে সকল লুট তারা করেছে, খুন-গুম তারা করেছে।
বিগত ১৭ বছর গুম খুন যারা করেছে, এর জবাব যে রকম তাদেরকেই দিতে হবে, ঠিক একইভাবে ’৭১ সালে কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের কোনো বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দিবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারবো না। আমারটা আমি দিতে পারবো। অন্যেরটা তো আমি দিতে পারবো না।
যা বললেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে
বিবিসি বাংলা: আপনি জুলাইয়ের সময়ের কথা বলছিলেন। সে সময়ের হত্যাকাণ্ডের কথা বলছিলেন। সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আপনার আপনাদের বা বিএনপির অবস্থানটা কী আসলে?
তারেক রহমান: দেখুন, আমি ১৭ বছর যাবত প্রবাস জীবনে আছি। ওয়ান ইলেভেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যেই শারীরিক নির্যাতন আমার উপরে হয়েছিল তারপরে চিকিৎসার জন্য আমি এই দেশে আসি।
আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম ছোট ভাইকে। আমি যখন এই দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল।
সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে চুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যেই সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে।
আমি আমার পরিবারের যেই কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এটিকে আপনারা কাহিনী বলুন, বা সংগ্রাম বলুন যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনী না, বা আমার পরিবারের কাহিনী না। এরকম কাহিনী বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের।
যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গিয়েছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় জেলের ভিতরে মারা গিয়েছে, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে-এই সকল অন্যায়, এই সকল হত্যা, এই সকল নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে।
এটি প্রতিশোধের কোনো বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিবিসি বাংলা: এখানে একটা বিষয় আলোচনায় এসেছে যে যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারা-না পারার প্রশ্নে বিএনপিরও অনেক নেতা অনেক সময় বলেছেন যেকোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে তারা নন। তো এখন নির্বাচনও সামনে আসছে। ফলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না সে ধরনের একটা প্রশ্নও আসছে। তো সেটা সেই জায়গাটাতে বিএনপির অবস্থানটা কী হতে পারে?
তারেক রহমান: দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এটা আদালতের বিষয় বলে মনে করছেন?
তারেক রহমান: দল হিসেবে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে তাই হবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। তো সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক। যারা জুলুম করেছে তাদের তো বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তিও হতে পারে। সেটি দলও হতে পারে।
বিবিসি বাংলা: আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী মনে করেন? আওয়ামী লীগের কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত নাকি, না?
তারেক রহমান: আমার মনে হয় আপনার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি মনে হয় বলেছিলাম যে আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য।
আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও আমরা বিএনপি যারা করি আমাদের রাজনৈতিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই-যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে-জনগণ তাদেরকে সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।
জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের সিদ্ধান্তের উপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারের এটি প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বটি প্রকাশ হবে মঙ্গলবার ৭ই অক্টোবর বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পাতা ও ইউটিউব চ্যানেলে।
বিদেশে যখন কাজ করেছি, ফ্যাশন টিভিতে যখন কাজ করেছি, তখন দেখেছি, সব মডেলের উচ্চতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি, সেখানে ৬ ফিট উচ্চতার মডেলও ছিল। তারা যখন হাই হিল পরত, আরও অনেক লম্বা দেখাত। আমিও কিন্তু তাদের সঙ্গে কাজ করেছি।
১৭ অক্টোবর ২০২১ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে এই কার্যক্রমে যুক্ত। আমরা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মুদারাবা স্কুল স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ চালু করেছি, যেখানে অভিভাবকেরা সন্তানদের পক্ষ থেকে হিসাব পরিচালনা করেন। মূল লক্ষ্য হলো শিশু-কিশোরদের সুদমুক্ত অর্থনীতিতে যুক্ত করা এবং ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল...
৯ ঘণ্টা আগেইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) নিয়মিতভাবে স্কুলে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিশেষ অফারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করছে এবং তাদের হিসাব খোলায় উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং জ্ঞান ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি।
৯ ঘণ্টা আগেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।
১৫ দিন আগে