Ajker Patrika

মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতের কয়েক শ বিলিয়ন ডলার অপচয় কমাবেন মাস্ক, আশা ট্রাম্পের

ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ইলন মাস্ক মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতের অপচয়গুলো ধরিয়ে দেবেন। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ইলন মাস্ক মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতের অপচয়গুলো ধরিয়ে দেবেন। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ ইলন মাস্কের নেতৃত্বে পেন্টাগনের কয়েক শ বিলিয়ন ডলারের প্রতারণা ও অপচয় ধরিয়ে দেবেন। এর ফলে মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতে অপ্রয়োজনীয় কয়েক শ বিলিয়ন ডলার ব্যয় কমবে।

ট্রাম্প গতকাল রোববার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজের সাংবাদিক ব্রেট বেয়ারের সঙ্গে সুপার বৌল উপলক্ষে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারের একটি অংশে ট্রাম্প জানান, তিনি মাস্ককে সরকারি ব্যয় পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন বিভাগ পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি খুব দ্রুতই, হয়তো আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে বলব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে নজর দিতে। তারপর আমি বলব, চলুন সামরিক বাহিনী দেখি। সামরিক খাতে কী ঘটছে, তা খতিয়ে দেখি।’ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সরকারি বিভাগ পেন্টাগন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কয়েক বিলিয়ন, এমনকি কয়েক শ বিলিয়ন ডলারের প্রতারণা ও অপচয় শনাক্ত করব।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেট বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে দেশটির বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের (১ লাখ কোটি) কাছাকাছি। সামরিক খাতে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের বেশির ভাগই বিভিন্ন অস্ত্র নির্মাণ প্রকল্প, প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর পরিচালনা ও কর্মীদের বেতন কাঠামোর মধ্যে পড়ে।

গত বছরের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৮৯৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেন, যা চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাজেটের একটি বড় অংশ অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে অপচয় হয়।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও টেসলা-স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। ট্রাম্প তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে। এর অংশ হিসেবে, মাস্কের নেতৃত্বে ডিওজিই বিভিন্ন সরকারি সংস্থার গোপন নথি ও তথ্যভান্ডারে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে। মাস্কের টিম চাইছে, সরকারি কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে কর্মসংখ্যা, ব্যয় ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করতে।

তবে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক ও সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, এই প্রচেষ্টা আইনবিরুদ্ধ হতে পারে এবং এতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট পার্টি ও সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলো বলছে, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি পেন্টাগনের মতো জটিল ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের জন্য যথেষ্ট দক্ষতা রাখে না। তারা আশঙ্কা করছে, মাস্কের নেতৃত্বাধীন দল অত্যন্ত সংবেদনশীল ও শ্রেণিবদ্ধ সামরিক তথ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

এ ছাড়া মাস্কের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, স্পেসএক্স, টেসলা ও অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে যুক্ত রয়েছে। ফলে তাঁর নিরীক্ষা ও খরচ কমানোর পরিকল্পনায় স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্ন উঠতে পারে।

পেন্টাগনের বাজেট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—উভয় দলই একাধিকবার প্রতিরক্ষা ব্যয়ে অদক্ষতা ও অপচয়ের সমালোচনা করেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ গতকাল রোববার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসির মিট দ্য প্রেসে বলেন, পেন্টাগনের ক্রয় ও নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিশাল সুযোগ’ আছে।

ওয়াল্টজ বলেন, ‘ওখানে সবকিছুর খরচই অনেক বেশি, সময়ও অনেক বেশি লাগে, অথচ সৈন্যদের জন্য যা সরবরাহ করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ খাতে প্রচুর অনিয়ম রয়েছে, যা একেবারে বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার।’

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত রিপাবলিকানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেলেও ডেমোক্র্যাটরা কড়া সমালোচনা করছে। রিপাবলিকানদের দাবি, পেন্টাগনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে মাস্কের মতো সফল উদ্যোক্তার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, প্রতিরক্ষা বিভাগের ক্রয় প্রক্রিয়া দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কার করা জরুরি এবং সামরিক ব্যয় কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।

তবে ডেমোক্র্যাটদের আশঙ্কা, মাস্কের প্রচেষ্টায় জাতীয় নিরাপত্তার তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তিনি নিজেই প্রতিরক্ষা বিভাগের বড় ঠিকাদার, ফলে স্বার্থ সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এমন উদ্যোগ নেওয়া বেআইনি হতে পারে।

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, ইলন মাস্কের নেতৃত্বে পরিচালিত এই নিরীক্ষায় প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বড় ধরনের অপচয় ও প্রতারণা ধরা পড়তে পারে। তবে এটি সরকারি প্রশাসন ও সামরিক খাতের জন্য কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখার নামে মাস্কের দল যদি ‘গোপন তথ্যভান্ডারে অনধিকার প্রবেশ ঘটায়’ তাহলে বিষয়টি কংগ্রেস ও আদালতের বিবেচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যাপক কাটছাঁটের উদ্যোগ পেন্টাগনের কার্যকারিতার ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিষয়টি এখন কেবল রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনা খুঁজতে গিয়েছিল দুই কিশোর, খনি ধসে চাপা পড়ে হলো মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছেলে ইয়ায়াহ জেন্নেহকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা নামিনা জেন্নেহ। ছবি: বিবিসি
ছেলে ইয়ায়াহ জেন্নেহকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা নামিনা জেন্নেহ। ছবি: বিবিসি

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনের এক গ্রামে সাদা কাপড়ে মোড়ানো দুই কিশোরের নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। কাঁদছে সবাই। কেউ বিশ্বাসই করতে চাইছে না, কিশোর দুটি তাদের মাঝে আর নেই।

সিয়েরা লিওনের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রাম নিমবাদু থেকে ঠিক এক দিন আগে সোনার সন্ধানে বেরিয়েছিল ১৬ বছরের মোহামেদ বাঙ্গুরা ও ১৭ বছরের ইয়ায়াহ জেন্নেহ। উদ্দেশ্য, পরিবারের জন্য বাড়তি উপার্জন।

শেষ পর্যন্ত তাদের আর ফেরা হলো না। সোনার জন্য যে গর্ত তারা খুঁড়ছিল, সেটি ধসে তাদের ওপর পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়।

ওই অঞ্চলে গত চার বছরে এ নিয়ে তিনটি খনি দুর্ঘটনা ঘটল, যাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে পাঁচটি শিশু।

এলাকার হেডটিচার ও স্থানীয় কর্মীদের মতে, বাঙ্গুরা ও জেন্নেহর মতো সিয়েরা লিওনের আরও অনেক শিশু স্কুল ফেলে ঝুঁকিপূর্ণ খনিতে সোনা তুলতে যায়। এ প্রবণতা সেখানে ক্রমেই বাড়ছে।

বিবিসি আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সিয়েরা লিয়নের পূর্বাঞ্চল হীরার খনির জন্য বিখ্যাত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হীরার মজুত ফুরিয়ে আসায় সোনা খনন বেড়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা অঞ্চলটিতে স্থানীয় মানুষজন যেখানেই কোনো কিছুর মজুত খুঁজে পায়, সেখানেই খনির কাজ শুরু হয়ে যায়। তা চাষের জমি, পুরোনো কবরস্থান বা নদীর তীর—যাই হোক না কেন।

অঞ্চলটিতে নামীদামি কোনো খনন কোম্পানি নেই বললেই চলে। যেসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে খনি চালানো লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় ছড়িয়ে আছে এসব অনিয়ন্ত্রিত খনি; যার গভীরতা কখনো কখনো ৪ মিটারও (১৩ ফুট) হয়।

আফ্রিকার আরও বহু দেশে এমন খনির দেখা মেলে, যেখান থেকে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়।

নিমবাদুর অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা চাষাবাদ আর ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। বিকল্প কর্মসংস্থান খুব কম। তাই বাড়তি আয়ের সুযোগ লোভনীয় মনে হয় গ্রামবাসীর।

তবে গ্রামের মানুষ এও জানে, এই আয় কখনো কখনো মূল্য দাবি করে। এবার সেই মূল্য দিতে হয়েছে সম্ভাবনাময় দুই কিশোরকে।

ইয়ায়াহ জেন্নেহর মা নামিনা জেন্নেহর স্বামী মারা গেছেন। পাঁচ সন্তানের সংসার চালাতে কিশোর ছেলেটির ওপরই ভরসা ছিল তাঁর।

একসময় এসব খনিতে কাজ করতেন নামিনা। বিবিসির কাছে তিনি স্বীকার করেন, ছেলেকে তিনিই খনির কাজে অভ্যস্ত করেছিলেন। তবে বলেন, ‘ও আমাকে বলেনি, ওই জায়গায় যাবে। জানলে আমি যেতে দিতাম না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে ৪২ দেশের নাগরিকদের দিতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার ৫ বছরের রেকর্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৩
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

মার্কিন কাস্টম অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্ট বা শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা দপ্তর (সিবিপি) গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রস্তাব অনুসারে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ থেকে আসা পর্যটকদের অচিরেই হয়তো বিগত পাঁচ বছর পর্যন্ত তাদের সামাজিক মাধ্যমের ইতিহাস খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের জেরে সেই সব পর্যটকেরা প্রভাবিত হবেন, যারা ভিসা মওকুফ কর্মসূচির যোগ্য। এই কর্মসূচি অনুযায়ী ৪২টি দেশের নাগরিকেরা ইলেকট্রনিক ভ্রমণ অনুমোদন পেলে ভিসা ছাড়াই ৯০ দিন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন।

ফেডারেল রেজিস্ট্রারে মঙ্গলবার পেশ করা একটি নথিতে সিবিপি জানিয়েছে, তারা আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্যের একটি লম্বা তালিকা চাইবে, যার মধ্যে থাকবে সামাজিকমাধ্যম, গত দশ বছরজুড়ে ব্যবহার করা ই–মেইল ঠিকানা এবং বাবা-মা, জীবনসঙ্গী, ভাই-বোন ও সন্তানদের নাম, জন্মতারিখ, বাসস্থান ও জন্মস্থান।

বর্তমানে ভিসা মওকুফ পাওয়া দেশগুলোর আবেদনকারীদের ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথোরাইজেশন কর্মসূচিতে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। তাঁরা ৪০ ডলার দিয়ে একটি ই-মেইল ঠিকানা, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং জরুরি যোগাযোগের তথ্য জমা দেন। এই অনুমোদনের মেয়াদ থাকে দুই বছর।

সিবিপির এই পদক্ষেপ মার্কিন সরকারের পূর্বের অনুরূপ কার্যক্রমের মতোই। সরকার ইতিমধ্যে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য এইচ১–বি ভিসা এবং শিক্ষার্থী ও গবেষক ভিসার আবেদনকারীদের জন্য সামাজিকমাধ্যম পর্যালোচনার ব্যবস্থা চালু করেছে। এ ছাড়া সরকারের একটি নতুন ২৫০ ডলারের ভিসা ইনটিগ্রিটি ফি সংগ্রহের পরিকল্পনা আছে, যা অনেক ভ্রমণকারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, যদিও ভিসা মওকুফ পাওয়া দেশের ভ্রমণকারীরা সেই ফি থেকে ছাড় পাবেন।

ভিসা ইনটিগ্রিটি ফি নিয়ে ট্রাভেল বা পর্যটন শিল্প আপত্তি জানিয়েছে। গত নভেম্বরে ২০ টিরও বেশি পর্যটন ও ভ্রমণ ব্যবসার একটি জোট বিরোধিতা করে একটি চিঠি স্বাক্ষর করে। তাঁদের উদ্বেগের কারণ, এই ফি আরোপের ফলে আগামী বছরের বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইচ্ছুক কোটি কোটি আন্তর্জাতিক পর্যটককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করবে।

এক পর্যটন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে কথা বলেছেন, সিবিপি এই পরিকল্পনা নিয়ে শিল্পের অংশীজনদের কিছু জানায়নি। তিনি একে যাত্রী যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ বাড়াবাড়ি’ বলে অভিহিত করেছেন। নোটিশে সিবিপি জানিয়েছে যে, তারা এই প্রস্তাবের ওপর ৬০ দিনের জন্য জনসাধারণের মন্তব্য গ্রহণ করবে।

যদি এই পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়, তবে সিবিপি কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে পরিবর্তনগুলি কার্যকর করতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে ইমিগ্রেশন আইন সংস্থা ফ্রাগোমেন (Fragomen) . ফ্রাগোমেন-এর অংশীদার বো কুপার সরকারের সামাজিক মাধ্যম পর্যালোচনার নতুন এই পদ্ধতিকে ‘প্যারাডাইম শিফট বা ধারণার আমূল পরিবর্তন’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এর আগে সংস্থাগুলি নির্দিষ্ট তথ্য, যেমন অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যাচাইয়ের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করত।

কুপার বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে অনলাইন আলাপ-আলোচনা দেখা হবে এবং কী ধরনের কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে নিজস্ব বিবেচনা ও নীতির ভিত্তিতে ভ্রমণ বাতিল করা হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘পর্যটন সংখ্যা কেমন থাকে, তা দেখতে বেশ আগ্রহ থাকবে।’

ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠী ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি সোফিয়া কোপ বিবৃতিতে বলেন, সামাজিক মাধ্যমের বাধ্যতামূলক প্রকাশ ও নজরদারি ‘নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী এবং অন্যান্য বাজে লোককে খুঁজে বার করতে এটা কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়নি। তবে এটি নিরপরাধ ভ্রমণকারী এবং তাদের আমেরিকান পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের বাক্‌স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করেছে এবং তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে।’

সিবিপি এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া দেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওর মুখ ও ঠোঁট সুন্দর, মেশিনগানের মতো—প্রেস সেক্রেটারি লেভিট সম্পর্কে ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটের ‘সুন্দর মুখ’ আর ‘ঠোঁট’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এক অর্থনৈতিক কর্মসূচির প্রচারের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সেখানেই এহেন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

খবরে বলা হয়েছে, পেনসিলভানিয়ায় এক জনসভায় ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের অর্থনৈতিক সফলতার কথা বলছিলেন। তখনই মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে তাঁর ২৮ বছর বয়সী প্রেস সেক্রেটারি কত ‘চমৎকার’ তা নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের সুপারস্টার ক্যারোলিনকে পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। সে কি দারুণ না? ক্যারোলিন কি অসাধারণ?’ উল্লসিত জনতাকে তিনি প্রশ্ন করেন।

এরপর তিনি লেভিটের শারীরিক সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রশংসা করতে শুরু করেন। লেভিট তাঁর চেয়ে ৫০ বছরেরও বেশি ছোট। ট্রাম্প বলেন, ‘যখন সে ফক্সের টেলিভিশন চ্যানেলে যায়, সেখানে সে দাপিয়ে বেড়ায়, দাপিয়ে বেড়ায়...সে যখন মঞ্চে ওঠে তাঁর ওই সুন্দর মুখ আর সেই ঠোঁট নিয়ে, যা থামে না, যেন একটা ছোট্ট মেশিনগান।’

ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁর কোনো ভয়ডর নেই...কারণ আমাদের নীতি সঠিক। আমাদের এখানে নারীদের খেলায় পুরুষেরা অংশ নেয় না...আমাদের সবাইকে রূপান্তরকামী হতে বাধ্য করতে হয় না, আর আমাদের উন্মুক্ত সীমান্ত নীতিও নেই যেখান থেকে গোটা বিশ্ব—জেলখানা ও অন্য সব জায়গা থেকে—আমাদের দেশে ঢুকতে পারবে, তাই ওর কাজটা একটু সহজ। আমি তো অন্য পক্ষের প্রেস সেক্রেটারি হতে চাইতাম না।’

এই রিপাবলিকান নেতা আগস্টে নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও লেভিটকে নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সে সময় বলেছিলেন, ‘ওই মুখটা, ওই মস্তিষ্কটা, ওই ঠোঁট, যেভাবে চলে। মনে হয় যেন সে একটা মেশিনগান। আমার মনে হয় না ক্যারোলিনের চেয়ে ভালো প্রেস সেক্রেটারি আর কারও হয়েছে।’

লেভিট ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সহকারী প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছিলেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা লেভিট ৬০ বছর বয়সী রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার নিকোলাস রিক্কিও’র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং তাঁদের নিকো নামে একটি পুত্র সন্তান আছে। কংগ্রেস নির্বাচনে জিততে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি জানুয়ারি মাসে আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন এবং ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেস সেক্রেটারি হন। ট্রাম্পের পঞ্চম প্রেস সেক্রেটারি তিনি এবং তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম প্রেস সেক্রেটারি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোশ্যাল মিডিয়া খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সোশ্যাল মিডিয়া খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত

এইচ-১বি ভিসা প্রার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট যাচাই-বাছাই করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নীতিতে আটকে গেল ভারতের আবেদনকারীদের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট। গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দিয়েছে ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। সেখানে বলা হয়, ভিসা আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারের তারিখ আগামী বছরে পেছানো হয়েছে।

দূতাবাসের বার্তায় আরও বলা হয়, যদি আপনি আপনার ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ইমেইল পেয়ে থাকেন, তবে মিশন ইন্ডিয়া আপনার নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখে নিতে সহায়তা করতে আগ্রহী।’

বার্তায় সতর্ক করে দূতাবাস আরও জানায়, পুনর্নির্ধারণের নোটিফিকেশন পাওয়ার পরও আগের নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হলে দূতাবাস বা কনস্যুলেটে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগে যেসব সাক্ষাৎকার নির্ধারিত ছিল, সেগুলো আগামী বছরের মার্চে নেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কতগুলো অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত হয়েছে, তা জানা যায়নি।

শীর্ষ ব্যবসায়িক অভিবাসন আইন প্রতিষ্ঠানের অ্যাটর্নি স্টিভেন ব্রাউন বলেন, ‘মিশন ইন্ডিয়া যা নিশ্চিত করেছে, তা-ই আমরা শুনছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের কারণে তারা আগামী কয়েক সপ্তাহের বেশ কিছু অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে মার্চে পুনর্নির্ধারণ করেছে।’

এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারী ও এইচ-৪ নির্ভরশীলদের জন্য স্ক্রিনিং ও যাচাই–বাছাইয়ের পরিধি বাড়িয়েছে মার্কিন সরকার। নতুন নির্দেশনায় আবেদনকারীদের সব সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিং ‘পাবলিক’ রাখতে বলা হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বা জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেন কি না তা চিহ্নিত করতে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কর্মকর্তারা তাঁদের অনলাইন উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আবেদনকারীরা আগে থেকেই এমন পর্যবেক্ষণের আওতায় ছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি ভিসার ক্ষেত্রেই জাতীয় নিরাপত্তার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের অন্যতম প্রধান পথ এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নিয়মকানুনের সর্বশেষ আঘাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি। গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন এইচ-১বি ভিসার ওপর একবারের জন্য ১ লাখ ডলারের অতিরিক্ত ফি আরোপ করেন। এর কিছুদিন পর, আফগান বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির গুলিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ১৯টি দেশকে ‘উদ্বেগজনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে আবেদনকারীদের গ্রিন কার্ড, মার্কিন নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত