Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল সংকট সামলাতে বিকল্প খুঁজছেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
জি-৭ সম্মেলনস্থলে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
জি-৭ সম্মেলনস্থলে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরানের মধ্যকার চলমান সংঘাত দ্রুত তীব্র হচ্ছে। এরই মধ্যে তিনি জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি ওয়াশিংটনে ফিরেছেন। এর আগে, তিনি ইরানিদের তাদের রাজধানী তেহরান ‘অবিলম্বে খালি করার’ এক আশঙ্কাজনক সতর্কবার্তা জারি করেন।

কানাডায় চলমান শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যেতে হবে।’ এর আগে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির কারণে তিনি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরবেন। ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেন, ‘অবশ্যম্ভাবী কিছু কারণে আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।’

ট্রাম্পের মূলত আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কানাডায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার দুপুরের মধ্যেই তিনি ইঙ্গিত দিতে শুরু করেন যে, তাঁর মনোযোগ অন্য কোথাও এবং তিনি ইরান-ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব বিকল্প বিবেচনা করছেন।

কানাডার কানানাস্কিসের রিসোর্ট শহরে জি-৭ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে হয়, ইরান আলোচনা টেবিলে আছে। তারা একটি চুক্তি করতে চায়। আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কিছু একটা করতে যাচ্ছি।’

এই শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের উপস্থিতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিভেদ তৈরি হয়। জোট নেতারা ইসরায়েল-ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর না করার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিভেদ তৈরি হয়। যদিও নথি প্রস্তুতকারী কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, তাঁকে হয়তো শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর করতে রাজি করানো যেতে পারে।

এর কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ইরানের নাগরিকদের উদ্দেশে তাঁর সতর্কবার্তা জারি করেন। তিনি বলেন, ‘সবাইকে অবিলম্বে তেহরান খালি করতে হবে!’ তবে কেন খালি করতে হবে—এর কারণ বলেননি তিনি।

ট্রাম্পের এই বার্তা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যে তেহরানকে আলোচনার টেবিলে আনতে চাপ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি বলে মনে হচ্ছে। একটি সরকারি সূত্র ও এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প স্টিভ উইটকফসহ তাঁর দলের সদস্যদের যত দ্রুত সম্ভব ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন। উইটকফ ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত। সূত্র দুটি বলছেন, ট্রাম্প জরুরি ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে চাইছেন যে—ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত সমাধানে ইরান কূটনীতিতে কতটা আন্তরিক।

গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর থেকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলে আসছেন, ইরানের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য আলোচনায় বসা। পাশাপাশি তিনি গোপনে তাঁর দলকে ইরান ও মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের লাইন খোলা রাখতে উৎসাহিত করছেন।

জি-৭ সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প তাঁর সমকক্ষদের বলেন, ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অর্জনে আলোচনা চলছে। তিনি ইঙ্গিত দেন, তিনি চান মার্কিন কর্মকর্তারা এ সপ্তাহেই তাদের ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করুক। এক মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, যদিও এখনো কিছুই ঠিক হয়নি, তবে ইসরায়েল ও ইরান সঠিক পথেই এগোচ্ছে। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, ইরান সোমবার দিনের শুরুর দিকে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিল।

তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ট্রাম্প কোন পথে এগোবেন সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেননি ট্রাম্প। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, আরও আরও মার্কিন সামরিক সম্পদ মোতায়েনের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের চেষ্টা করবেন কি না—তা নিয়েও তিনি কিছু বলেননি।

সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ইরান আক্রমণে যোগ দেয়নি। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যালেক্স ফেইফার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘মার্কিন বাহিনী তাদের আত্মরক্ষামূলক অবস্থান বজায় রেখেছে এবং তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা আমেরিকান স্বার্থ রক্ষা করব।’

পারস্য উপসাগর অঞ্চলের একটি দেশের কূটনীতিকের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন রোববার আঞ্চলিক অংশীদারদের জানায় যে, ইরান যদি মার্কিন স্বার্থে আঘাত না করে, তাহলে তারা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে জড়িত হবে না। সোমবার রাত পর্যন্ত এই বার্তায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, ট্রাম্প তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তাদের ওয়াশিংটনের সিচুয়েশন রুমে একত্র হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে একত্র হতে বলেছেন না কি ডিসিতে ফেরার পর উপস্থিত থাকতে বলেছেন, তা জানা যায়নি।

এদিকে, আজ মঙ্গলবার দিনের শুরুর দিকে বেশ কয়েকজন শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ে আসতে দেখা যায়। যাদের মধ্যে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান রেইজিন কেইনও ছিলেন।

এদিকে কানাডায়, মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের ইউরোপীয় সমকক্ষদের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন যে—ট্রাম্প সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানিয়ে জি-৭ নেতাদের বিবৃতিতে যোগ দেবেন না। এটি শীর্ষ সম্মেলন শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সমকক্ষদের সঙ্গে একটি তাৎক্ষণিক বিভেদ তৈরি করেছে।

ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের তৈরি করা খসড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্ৎজ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য চূড়ান্ত করার আশা করেছিলেন।

যৌথ বিবৃতি সম্পর্কে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে শান্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন।’

হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প মনে করেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে যা বলেছেন, তাতে এই মুহূর্তে বিবৃতিতে স্বাক্ষরের কোনো কারণ নেই। বিবৃতিতে বিশ্বনেতাদের মধ্যে ঐক্য প্রদর্শিত হবে কিনা জানতে চাইলে ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অন্য নেতাদের অনুরোধে ট্রাম্পের সম্মেলনে উপস্থিতিই তাঁর ঐক্য প্রদর্শন।

এদিকে, সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করে তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ‘আমি ইরানে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র দেখতে চাই না, এবং আমরা তা নিশ্চিত করার পথে অনেকটাই এগিয়েছি।’

ইসরায়েল মার্কিন সাহায্য ছাড়াই ইরানের পারমাণবিক হুমকি দমন করতে পারবে কি না—জানতে চাইলে ট্রাম্প জবাব দেন, ‘এটা অপ্রাসঙ্গিক। কিছু একটা ঘটবে।’ সোমবার দিনের শুরুতে শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে তার সংঘাত কমাতে চায়।

কার্নির সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি বলেন, ‘তারা (ইরান) কথা বলতে চায়, কিন্তু তাদের আগেই তা করা উচিত ছিল। আমার ৬০ দিন ছিল এবং তাদের ৬০ দিন ছিল। ৬১ তম দিনে আমি বলেছিলাম, আমাদের কোনো চুক্তি হয়নি। তাদের একটি চুক্তি করতে হবে এবং এটি উভয় পক্ষের জন্য বেদনাদায়ক। কিন্তু আমি বলব ইরান এই যুদ্ধে জিতছে না এবং তাদের কথা বলা উচিত এবং খুব দেরি হয়ে যাওয়ার আগে তাদের অবিলম্বে কথা বলা উচিত।’

ট্রাম্প কিছুদিন আগে ইরানকে পারমাণবিক চুক্তি করার জন্য দুই মাসের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন অন্যথায় পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছিলেন। সেই আল্টিমেটামের ৬১ তম দিনে অর্থাৎ শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক নেতারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট সংঘাতে মার্কিন সামরিক জড়িত হবে কি না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সে সম্পর্কে কথা বলতে চাই না।’ যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কী গোয়েন্দা তথ্য দিচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি অস্পষ্ট জবাব দেন।

ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের কাছে স্পষ্ট নয় যে, ইসরায়েলের হামলার মাত্রা ও পরিধি বিবেচনা করে ট্রাম্প কেন আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। কর্মকর্তারা বলেন, ইসরায়েলের ওপর মার্কিন প্রভাব বিবেচনা করে জি-৭ এর অন্যান্য নেতারা জানতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্র কত দিন ধরে সংঘাত চালিয়ে যেতে দেবে অথবা ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন কিনা। কিন্তু ট্রাম্প সেখানেও অস্পষ্ট জবাব দেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নেতানিয়াহু বাংকারে লুকিয়ে, ট্রাম্পের একটি ফোনকলই যথেষ্ট: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মেয়াদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরিকল্পনা সরকারের

ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের সংলাপ ‘বয়কট’ করল জামায়াত

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধে আইন পরিবর্তন করায় জাতিসংঘের উদ্বেগ

ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব নয়, স্বীকার করল ইসরায়েল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত