Ajker Patrika

তাইওয়ানের স্বাধীনতা প্রশ্নে মার্কিন নীতিতে বাঁকবদল, থাকছে না ‘এক চীন’ নীতি!

অনলাইন ডেস্ক
তাইওয়ানের স্বাধীনতা ইস্যুতে পররাষ্ট্র দপ্তরের ভাষায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
তাইওয়ানের স্বাধীনতা ইস্যুতে পররাষ্ট্র দপ্তরের ভাষায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের নীতিগত বিবৃতির ভাষা থেকে ‘আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতা সমর্থন করি না’ শব্দাবলি সরিয়ে নিয়েছে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কী তাহলে তাদের ঘোষিত ‘এক চীন নীতি’ থেকে সরে আসছে। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর চীনও এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তথা স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সাম্প্রতিক ‘তথ্যপত্রে’ তাইওয়ান সম্পর্কিত যে তথ্যাবলি রয়েছে, সেখানে আগে থাকা ‘আমরা তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি না’ এই বাক্যটি আর নেই।

গত বৃহস্পতিবার হালনাগাদ হওয়া তথ্যপত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে তাইওয়ানের অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে আগের ভাষা পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে যেখানে তাইওয়ানের ‘রাষ্ট্র হওয়ার শর্ত নেই’ এই বাক্যাংশ ছিল, সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরিবর্তে নতুন ভাষ্যে বলা হয়েছে, তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে বিরোধ ‘বলপ্রয়োগ থেকে মুক্ত থেকে, উভয় পক্ষের জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য উপায়ে’ সমাধান করা উচিত।

এ ছাড়া, তাইওয়ানের ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি নতুন বাক্য যুক্ত করা হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ওয়েবসাইটের এই পরিবর্তনকে ‘নিয়মিত হালনাগাদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটি একটি সাধারণ হালনাগাদকরণ, যা আমাদের তাইওয়ানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে জানাতে করা হয়েছে।’ ওই মুখপাত্র আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলে, যা চীনের অবস্থানকে স্বীকৃতি দেয় যে, কেবল একটি চীনা সরকার আছে। পাশাপাশি তারা ‘তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা কোনো পক্ষের কাছ থেকে বর্তমান স্থিতাবস্থার একতরফা পরিবর্তনের বিরোধিতা করি। আমরা তাইওয়ান প্রণালি অঞ্চলে সংলাপকে সমর্থন করি এবং আশা করি যে, অঞ্চলটিতে মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণভাবে, বলপ্রয়োগ থেকে মুক্ত থেকে এবং উভয় পক্ষের জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য উপায়ে সমাধান করা হবে।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নথিপত্রে এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সোমবার বলেন, তাইওয়ান সম্পর্কিত ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ‘গুরুতরভাবে পেছনের দিকে চলে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রের তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনকে দমনের ভুল নীতির প্রতি অবিচল আনুগত্যের আরও একটি উদাহরণ। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানাই যে তারা অবিলম্বে তাদের ভুল সংশোধন করুক।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই পরিবর্তনকে গুরুত্বহীন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও এটি চীনের প্রতি ওয়াশিংটনের তাইওয়ান সম্পর্কিত সম্পর্ক নিয়ে একটি বার্তা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন থিংক ট্যাংক ইউএস তাইওয়ান ওয়াচের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়াং কুয়াং-শুন।

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, এটি একটি বেশ সাহসী পদক্ষেপ। তবে এর মানে এই নয় যে, ট্রাম্প প্রশাসন তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করবে বা নীতিগত কোনো বড় পরিবর্তন আনবে। তবে এর মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের শর্ত নির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে এবং চীন এটি একতরফা নির্ধারণ করতে পারবে না।’

ইয়াং আরও বলেন, নতুন ভাষায় বেইজিংয়ের তাইওয়ানের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের কর্মকাণ্ড, যেমন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এবং একই সঙ্গে বিরোধের সমাধান ‘উভয় পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য’ উপায়ে করার কথা বলা হয়েছে।

তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম রিপাবলিক অব চায়না। অঞ্চলটি স্বশাসিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তবে মাত্র কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশই দেশটি সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

আবার তাইপে নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখলেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিং থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেনি। চীন বরাবরই হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, তাইওয়ান যদি স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তাহলে তা যুদ্ধ ডেকে আনবে। ১৯৭৯ সালের তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে আত্মরক্ষায় সহায়তা করতে বাধ্য। তবে আইন অনুযায়ী চীনা আক্রমণ বা অবরোধের ক্ষেত্রে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ বাধ্যতামূলক নয়।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেশ কয়েকবার বলেছেন, চীনা আক্রমণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ানকে রক্ষা করবে’। তবে প্রতিবারই পররাষ্ট্র দপ্তর তাঁর বক্তব্য সংশোধন করেছে। ২০২২ সালের মে মাসে পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের তথ্যপত্র থেকে সাময়িকভাবে তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংক্রান্ত একটি রেফারেন্স সরিয়ে ফেলেছিল। সে সময় বাইডেন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা আবার যুক্ত করা হয়।

রোববার তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র দপ্তরের নতুন ‘ইতিবাচক ও বন্ধুত্বপূর্ণ’ শব্দচয়নকে স্বাগত জানিয়ে একে ‘ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিন চিয়া-লুং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের প্রতি তাদের সমর্থন ও ইতিবাচক অবস্থানের’ জন্য এবং ‘তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতা, তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত অংশীদারত্ব এবং তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক অবস্থানের প্রতি প্রতিশ্রুতির জন্য’ ধন্যবাদ জানান।

লিনের এই বক্তব্যের আগে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। লাই তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক অপরিহার্য অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত