Ajker Patrika

মিশিগানের কিশোরী মা থেকে ‘ঘানার রানি’

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯: ৫৮
Thumbnail image
মাত্র ১৫ বছর বয়সে কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন কেনেডি জনসন। ছবি: সিএনএন

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন কেনেডি জনসন। পঁচিশ বছর পর ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি উত্তর ঘানার তামালেতে একটি বিশাল ভক্ত সমাবেশের সামনে রানির মর্যাদা পান। জীবন তাঁকে যেখানে নিয়ে এসেছে, তা নিয়ে তিনি আজও বিস্মিত।

মঙ্গলবার সিএনএন জানিয়েছে, তামালেতে স্থানীয় আধ্যাত্মিক নেতা ডাকপেমা আবদুল-রাযিক সালিফুর কাছ থেকে ‘জোসিমলি না’ বা ‘বন্ধুত্বের রানি’ উপাধি লাভ করেছিলেন জনসন। এই উপাধি তাঁকে ডাকপেমার এলাকার উন্নয়নের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

১৯৯০-এর দশকে ডেট্রয়েটে একজন কিশোরী মা হিসেবে জীবন শুরু করা জনসনের জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। কিশোরী মায়েদের জন্য তৈরি একটি ফস্টার হোমে কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। এক আত্মীয় তাঁকে ফস্টার হোমে রেখে বলেছিলেন—সন্তান জন্মের পর তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু কেউ আর ফিরে আসেনি। মেয়েকে নিয়ে তাই সম্পূর্ণ একা হয়ে যান জনসন।

সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে জনসন বলেন, ‘আমার শৈশবের অনেক স্বপ্নই আমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কেবল নিজের মধ্যে শক্তি খুঁজে বের করতে হয়েছিল।’

জনসনের কন্যা ডি’কিয়ার বয়স যখন ১১, তখন জনসন তাকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ শুরু করেন। মা-মেয়ে প্রথমে যান বাহামা, তারপর হংকং এবং দক্ষিণ আমেরিকা। বিশ্ব ভ্রমণের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা জন্ম নেয় এবং জনসন ভ্রমণের মুহূর্তগুলো অনলাইনে শেয়ার করা শুরু করেন।

কয়েক বছর পর নিজের ডিএনএ পরীক্ষাও করেন জনসন। তিনি জানতে পারেন, তাঁর সঙ্গে নাইজেরিয়া ও ঘানার ঐতিহ্যের যোগসূত্র রয়েছে। এরপর তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় ভ্রমণ করেন এবং দারুণ এক অভ্যন্তরীণ শান্তি অনুভব করেন। তিনি ঘন ঘন ভ্রমণ শুরু করেন সেখানে।

২০১৮ সালে ‘গ্রিন বুক ট্রাভেল’ নামে একটি ভ্রমণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন জনসন। মূলত আফ্রিকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে বিদেশিদের জন্য ভ্রমণের আয়োজন করে এই সংস্থাটি।

একবার উত্তর ঘানার তামালেতে গেলে স্থানীয় ডাকপেমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় জনসনকে। সেখানেই তাঁকে রানি হিসেবে মনোনীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। চার মাস পর, তামালের একটি উৎসবে জনসনের আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়। ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পোশাক পরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি জনতার অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন।

বন্ধুত্বের রানি হিসেবে জনসনের কাজের মধ্যে রয়েছে তামালেতে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। এখন পর্যন্ত তিনি তার সংস্থা ‘কিথ অ্যান্ড কিন’ এর মাধ্যমে পরিষ্কার পানি, স্যানিটারি পণ্য এবং জুতা সরবরাহ করেছেন। এ ছাড়া এতিমদের জন্যও একটি প্রকল্প নিয়ে তিনি কাজ করছেন।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন কেনেডি জনসন। ছবি: সিএনএন
মাত্র ১৫ বছর বয়সে কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন কেনেডি জনসন। ছবি: সিএনএন

তামালের তরুণেরা তাঁকে ভালোবেসে ‘স্ব্যাগার কুইন’ বলে ডাকে। মূলত জনসনের স্টাইলিশ ফ্যাশন সেন্সের জন্যই এই নামে ডাকা হয় তাঁকে।

জনসনের মেয়ে ডি’কিয়া এখন র‍্যাপার ‘স্টন্না ডিওর’ নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘মায়ের এমন এক যাত্রা দেখা, যেখানে তিনি পরিবারহীন জীবন থেকে লক্ষাধিক মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছেন, সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।’

জনসনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—কিশোরী কেনেডি জনসন আজকের রানি কেনেডিকে দেখে কী ভাবতেন?

জনসন উত্তর দেন, ‘আমার মনে হয়, সে অনুপ্রাণিত হতো। সে বুঝতে পারত, চলতে হবে এবং কখনো হাল ছাড়তে নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত