Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের আনুকূল্য পেতে আরও এক লবিং ফার্ম নিয়োগ মিয়ানমারের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। ছবি: এএফপি
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে ইমেজ উন্নত করতে এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এক মরিয়া প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের জান্তা সরকার আরও একটি লবিং ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ফার্মের মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই ম্যাককিওন গ্রুপ নামের এই ফার্মটি কংগ্রেস ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করবে।

থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ম্যাককিওন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হাওয়ার্ড ডি. ম্যাককিওন ওয়াশিংটনে মিয়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধি থিহা হতুনের সঙ্গে ৬ মাসের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তি অনুসারে, মিয়ানমার প্রতি মাসে ৬০ হাজার ডলার করে ফি দেবে ম্যাককিওন গ্রুপকে। মার্কিন ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে জমা দেওয়া নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ম্যাককিওন গ্রুপ তাদের জমা দেওয়া নথিতে জানিয়েছে, ‘আমরা (মিয়ানমার) দূতাবাস ও মার্কিন সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করব। আমাদের ফোকাস হবে মার্কিন কংগ্রেস এবং প্রশাসন-স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওপর।’ এই চুক্তি চলবে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

ফার্মটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, আন্তর্জাতিক সরকারি সম্পর্ক, বিরল খনিজ/গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, ফেডারেল বাজেট এবং অবকাঠামো ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।

মিয়ানমারে বিপুল পরিমাণ বিরল খনিজ রয়েছে। যার বেশির ভাগই দেশটির উত্তরে কাচিন রাজ্যে, যা চীনের সীমান্তের কাছে। কাচিনের খনিজগুলো জান্তাবিরোধী স্থানীয় এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে আছে। আর উত্তর-পূর্বের খনিজগুলো মূলত ওয়াহ এবং মং লা অঞ্চলে অবস্থিত। এই অঞ্চলগুলো জান্তা সরকারের পক্ষে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। ম্যাককিওন গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি এই খনিজের সঙ্গে সম্পর্কিত কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার নয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এই ধরনের সম্পদের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।

ম্যাককিওন গ্রুপ মিয়ানমারের জান্তা সরকারের নিয়োগ দেওয়া দ্বিতীয় মার্কিন লবিং ফার্ম। এর আগে জুলাইয়ে জান্তা সরকার ওয়াশিংটনভিত্তিক ডিসিআই গ্রুপের সঙ্গে এক বছরের জন্য চুক্তি করে। এর জন্য, মিয়ানমারকে ৩০ লাখ ডলার ফি দিতে হবে। এই ফার্মটিও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে, বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানবিক সহায়তা ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

এর আগে, ২০০২ সালে ডিসিআই গ্রুপকে মিয়ানমারের তৎকালীন সামরিক শাসকেরা ওয়াশিংটনে তাদের ইমেজ উন্নয়নের জন্য নিয়েছিল, কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো মিয়ানমার জান্তা সরকারকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল এবং গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ দমন করায় জান্তা সরকারের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জান্তা সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুইটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই ব্যাংকগুলো রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ম্যাককিওন গ্রুপের নেতৃত্ব ও কর্মীদের কংগ্রেসের শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। ফার্মটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাওয়ার্ড ডি. ম্যাককিওনের পিতা ও প্রতিষ্ঠাতা হাওয়ার্ড বাক ম্যাককিওন এক সময় মার্কিন কংগ্রেসে আর্মড সার্ভিসেস অ্যান্ড এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

ডিসিআই গ্রুপ ও ম্যাককিওন গ্রুপ নিয়োগের আগেও অবশ্য মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্রে লবিং ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। এর শুরু ১৯৯১ সাল থেকে। সে সময় থেকেই মিয়ানমারের সামরিক শাসকেরা বিদেশি লবিং ফার্ম নিয়োগ করার প্রচলন শুরু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল তারা মিয়ানমারে যে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তা থেকে মনোযোগ সরানো এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের নরম, মানবিক ইমেজ তৈরি করা। তবে পূর্ববর্তী সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত